দোলযাত্রা, হোলি এবং অন্যান্য

”রাঙিয়ে দিয়ে যাও যাও যাও গো এবার যাবার আগে 
তোমার আপন রাগে, তোমার গোপন রাগে, 
তোমার তরুণ হাসির অরুণ রাগে, 
অশ্রুজলের করুণ রাগে … 
মেঘের বুকে যেমন মেঘের মন্দ্র জাগে, 
তেমনি আমায় দোল দিয়ে যাও”

রঙ খেলার উৎসব দোলযাত্রা। রঙ, আবির, গুলালে জীবনকে রঙিন করে তোলার নতুন এক আহ্বান দেয় দোল। বৈষ্ণব বিশ্বাসীদের মতানুসারে, ফাল্গুনী পূর্ণিমা তিথিতে বৃন্দাবনের নন্দকাননে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ রাধিকা দেবী এবং তার সখী ও অন্যান্য গোপীর সাথে রঙ খেলায় মেতেছিলেন। এই দিনকে স্মরণ করতেই দোলযাত্রার সূচনা হয়েছিলো। তাই প্রত্যেক বছর ফাগুন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে, প্রচলিত পঞ্জিকা অনুসারে, ১৪তম রাতের পরবর্তী দিনে উদযাপিত হয় দোল। পণ্ডিতদের মতে, রাধাকৃষ্ণের দোলনায় দোল বা দোলায় গমন করা থেকেই ‘দোল’ কথাটির উৎপত্তি। এই দিন রাধা-কৃষ্ণের বিগ্রহ গুলালে স্নান করিয়ে দোলায় চড়িয়ে কীর্তনগান সহকারে সকালেই বেরিয়ে পড়েন ভক্তরা। এরপর শুরু হয় রঙ ছুঁড়াছুঁড়ির পালা। একে অন্যকে কতখানি রাঙিয়ে তুললো, সেই প্রতিযোগিতায় মাতা হয়।

কিন্তু কীভাবে এলো এই উৎসব? অনেকেরই জানা নেই হয়তো সঠিক ইতিহাসটি। দোলযাত্রা বা হোলির সাথে মিশে আছে ধর্মের সব পৌরাণিক কাহিনী এবং লোকবিশ্বাস। আছে বিষ্ণু, দৈত্য, রাধা-কৃষ্ণের প্রেমের নানা পুরাকথা। দোলযাত্রা এবং হোলিকে আমরা একই উৎসব বলে জেনে থাকি। তবে আক্ষরিক অর্থে তাদের ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। স্থানভেদে একেক বিশ্বাসে এবং নানা উপায়ে পালন করা হয় দোল এবং হোলি, কিন্তু মূল সুরটি একই। সামান্য তফাৎটা কোথায়, তাহলে জেনে নেওয়া যাক।

ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, ভারতবর্ষের পূর্বাঞ্চলের প্রাচীন আর্য জাতি সূচনা করেছে রঙ খেলার। আবার এমনটাও জানা যায় যে, খ্রিস্টের জন্মেরও কয়েকশো বছর আগে থেকেই হোলি উদযাপিত হয়ে আসছে এই ধরায়। প্রাচীনকালের পাথরে খোদাই করা ভাস্কর্যে নাকি এই উৎসবের উল্লেখ পাওয়া গিয়েছিল। দোলের কথা লেখা আছে পবিত্র গ্রন্থ বেদ এবং পুরাণেও। ৭০০ শতকের দিকে রাজা হর্ষবর্ধনের সময়ে সংস্কৃত ভাষায় লেখা একটি প্রেমের নাটিকাতে হোলি উৎসবের উল্লেখ পাওয়া যায়। পরে বিভিন্ন মন্দিরের গায়ে খোদাই করা চিত্রকর্মে হোলি খেলার নমুনা বিভিন্নভাবে ফুটে উঠেছে বলে দাবি করেন বিশ্বাসীরা। তাহলে বলতে হয়, হোলি বেশ প্রাচীন একটি উৎসব।  

ইংরেজদের কাছেও বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল দোল উৎসব। প্রথমদিকে এই উৎসবকে তারা রোমান উৎসব ‘ল্যুপেরক্যালিয়া’ হিসেবেই মনে করেছিল। অনেকে অবশ্য একে গ্রিকদের উৎসব ‘ব্যাকানালিয়া’র সঙ্গেও তুলনা করেছিল।

পুরনো সাহিত্যে, গ্রন্থে অস্তিত্ব পাওয়া যায় হোলির। সপ্তম শতকে রচিত শ্রীকৃষ্ণের ‘রত্নাবলী’, জীমূতবাহনের ‘কালবিবেক’ ও ষোড়শ শতকের ‘রঘুনন্দন’ গ্রন্থেও এই উৎসবের খোঁজ পেয়েছেন পণ্ডিতেরা। 

যেভাবে রঙ সাজানো থাকে দোলে; Source Image: scroll.in

বিষ্ণু কথন ও হোলি

এ গেলো বহুদিন আগের কথা। এবার দেখা যাক, পুরাণে কী বলে? স্কন্ধ পুরাণের ফাল্গুনমাহাত্ম্য গ্রন্থাংশে হোলিকা ও প্রহ্লাদের উপাখ্যান বর্ণিত আছে। দৈত্যরাজা হিরণ্যকশিপুর অমরত্ব লাভ করার ইচ্ছা জাগলো। অমরত্ব বরপ্রাপ্তির জন্য তিনি কঠোর ধ্যানে মগ্ন হলেন। কিন্তু অমরত্ব লাভ কি অত সোজা? তিনি অমর হলেন বটে, তবে পরোক্ষভাবে। যে বর তিনি ধ্যানের মাধ্যমে লাভ করলেন, তা তাকে পাঁচটি বিশেষ ক্ষমতা দান করলো। তাকে কোনো মানুষ হত্যা করতে পারবে না, আবার কোনো প্রাণীও হত্যা করতে পারবে না; তাকে ঘরে হত্যা করা যাবে না, আবার বাইরেও হত্যা করা যাবে না; তাকে দিনে হত্যা করা যাবে না, আবার রাতেও হত্যা করা যাবে না এবং তাকে স্থল, জল বা বায়ু কোথাও হত্যা করা যাবে না। এই বর লাভ করে রাজা হিরণ্যকশিপু অহংকারী ও স্বেচ্ছাচারী  হয়ে উঠলেন। তার অহংকার এমন জায়গায় গিয়ে ঠেকলো যে তিনি নিজেকে দেবতাসম মনে করা শুরু করলেন।

তিনি চাইলেন, মানুষ এখন থেকে তাকে  পূজা করবে এবং কেউ যদি তার আদেশ অমান্য করে তবে তাকে তিনি শাস্তি দেবেন, এমনকি হত্যাও করবেন। কেউ সানন্দে, কেউ ভয়ে তাকে পূজা করলো দেবতাতুল্য ভেবে, কিন্তু তার পুত্রই তার সাথে সম্মত হননি। পুত্র প্রহ্লাদ ছিলেন একজন পরম বিষ্ণুভক্ত। তাই তিনি তার পিতার দেবতা হওয়ার অমূলক ভাবনাকে অস্বীকার করে বিষ্ণু পূজা জারি রাখলেন।  

হোলিকাদহন উৎসব; bookmundi.com

পুত্রের এত বড় স্পর্ধা কিছুতেই মেনে নিতে পারলেন না রাজা। অনেকভাবে চেষ্টা করলেন পুত্রের বিষ্ণুভক্তি দূর করার। কোনোভাবেই যখন পুত্রকে পূজা দিতে রাজি করাতে পারলেন না, তখন রাগে ক্ষোভে পুত্রহত্যার কথা চিন্তা করলেন তিনি। পুত্রকে তো আর নিজ হাতে খুন করা পারেন না, তাই ষড়যন্ত্র শুরু করলেন। হিরণ্যকশিপু শরণাপন্ন হলেন বোন হোলিকার কাছে। হোলিকা বরপ্রাপ্তা ছিলেন। তিনি বর পেয়েছিলেন যে, অগ্নি তাকে বধ করতে পারবে না। হোলিকা তার ভাইপোর কথা বিন্দুমাত্র চিন্তা না করে দাদার সাথে সহমত পোষণ করলো। দুই ভাইবোনের পরিকল্পনা অনুযায়ী, হিরণ্যকশিপু হোলিকার কোলে বালক প্রহ্লাদকে বসিয়ে আগুন ধরিয়ে দিলেন গায়ে। দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে উঠল। এতে মৃত্যু একজনের হলো বটে, তবে প্রহ্লা্দের নয়, হোলিকার। ভগবান বিষ্ণুর কৃপায় প্রহ্লাদ অগ্নিকুণ্ডে বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে হরিনাম করতে করতে অক্ষত অবস্থায় বের হয়ে এলেন কিন্তু হোলিকা প্রাপ্ত বরের অপব্যবহার করায় আগুনে পুড়ে নিঃশেষ হয়ে গেল। এই কাণ্ড দেখে তো দৈত্যরাজ অবাক!

বোন হারানোর শোক ভুলে হিরণ্যকশিপু আরও ক্রোধান্বিত হয়ে উঠলেন। পুত্রকে এবার নিজেই আক্রমণ করতে উদ্যত হলেন। কিন্তু এবারও বিফলে গেলো তার চাল। কেননা ভগবান বিষ্ণু ফের রক্ষা করলেন তার ভক্তকে। এরপর নৃসিংহ রূপে, অর্থাৎ অর্ধমানব-অর্ধসিংহ রূপে; গোধূলি বেলায় যখন না রাত-না দিন; হিরণ্যকশিপুকে বাড়ির দোরগোড়ায়- যা না ঘরের বাইরে, না ভেতরে; নিজের কোলের ওপর নিয়ে, যা জলে-স্থলে-বায়ুতে কোনোখানেই নয়; হিরণ্যকশিপুর নাড়িভুঁড়ি বের করে, থাবা দিয়ে তাকে হত্যা করেন। এর ফলে হিরণ্যকশিপুর লাভ করা বর তাকে বাঁচাতে পারেনি। নিমেষেই তিনি মৃত্যুবরণ করলেন। আর এ সবকিছুই ঘটলো ফাল্গুনী পূর্ণিমার ঠিক পূর্ব দিন।

এর মধ্য দিয়েই অশুভ শক্তির হার হলো এবং শুভশক্তির জয় এলো। এই দিনটিকে স্মরণ করতে ‘হোলিকা দহন’ বা ‘ন্যাড়াপোড়া’ উৎসব পালন করা হয় হোলির ঠিক আগের দিন। হোলিকার এই অগ্নিদগ্ধ হওয়ার কাহিনীই দোলের পূর্বদিনে হোলিকাদহন নামে খ্যাত, যেটাকে বর্তমানে আমরা হোলি বলি।

কৃষ্ণকথন ও দোল উৎসব

ভারতের ব্রজ অঞ্চলে শ্রীকৃষ্ণের বেড়ে ওঠা। কোনো এক বসন্তের পঞ্চম দিনে সেখানেই রাধা ও শ্রী কৃষ্ণের স্বর্গীয় ভালোবাসা রচিত হয়। তাই স্মৃতি হিসেবে দিনটি রঙ পঞ্চমী এবং প্রেমের উৎসব হিসেবে দিনটি উদযাপিত হয়।

আবার আরও একটি পুরাণ আছে রাধা-কৃষ্ণকে নিয়ে। ব্রজ অঞ্চলে হোলি কে ‘ফাগ্বাহ’ বলা হয় এবং এক্ষেত্রে হোলিকাদহনের হোলিকাকে বলা হয় ‘পুতনা’। কৃষ্ণের মামা, রাজা কংস তার শিশু ভাগ্নে কৃষ্ণকে নিজের জীবনের জন্য বিপদ বলে মনে করতেন। তাই কংস রাক্ষসী পুতনাকে নারীর বেশে কৃষ্ণকে হত্যা করতে নিয়োজিত করেন। তারা পরিকল্পনা করেন যে পুতনা রাক্ষসী কৃষ্ণকে স্তন্যপান করাতে গিয়ে বিষ প্রয়োগ করে কৃষ্ণকে মেরে ফেলবে। কিন্তু শিশু কৃষ্ণ রাক্ষসী পুতনার বিষাক্ত দুধ পান করে ফেললেও তার মৃত্যু হয় না, বরং বিষপানে তার গায়ের বর্ণ ঘন নীল হয়ে যায়, আর ওদিকে কাজ সম্পন্ন করেই পুতনা দ্রুত পালিয়ে যায় (মতান্তরে, পুতনার মৃত্যু ঘটে)।

হোলি বা ফাগ্বাহ উদযাপনের আগের রাতে পুতনার দহন উদযাপিত হয় ঠিক হোলিকাদহনের মতোই।

শিল্পীর চোখে রাধা-কৃষ্ণের দোল উৎসব; Source image: pininterest.com

হিন্দু পুরাণ অনুসারে, কৃষ্ণ তার যৌবনে হতাশ ছিলেন নিজের শ্যাম বর্ণের কারণে। তিনি চিন্তিত ছিলেন যে উজ্জ্বল বর্ণের রাধা ও অন্যান্য গোপীরা তার এই বর্ণের কারণে তাকে অপছন্দ করবে এবং তার কাছে ঘেঁষবে না। পুত্রকে হতাশার হাত থেকে উদ্ধার করতে মা যশোদা পুত্রের গায়ে আবির ছুঁয়ে দিলেন। তারপর বললেন, এবার এই আবির রাধার মুখে-গায়ে ছোঁয়াতে। এর ফলে কৃষ্ণ আর রাধাতে কোনো তফাত থাকবে না। কৃষ্ণও মায়ের আজ্ঞা পালন করেন, রাধার গায়ে আবির ছোঁয়ান এবং এরপরই তাদের মধ্যে প্রেম হয়। রাধা-কৃষ্ণের এই রঙ নিয়ে খেলাই হোলি বা দোলযাত্রা হিসেবে পালিত হয়।

তবে রাধা-কৃষ্ণকে নিয়ে হোলির যে বর্ণনাটি বেশি প্রচলিত, তা ভিন্ন। একদিন বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণ, রাধা এবং তার সখীদের সাথে খেলা করছিলেন। এমন সময় রাধা এক বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন। শ্রীকৃষ্ণ এ অবস্থা বুঝে রাধাকে সখীদের সামনে লজ্জার হাত থেকে বাঁচাতে গিয়ে আবির খেলা শুরু করেন। সেই ঘটনা থেকেই দোল খেলার উৎপত্তি। বৈষ্ণব বিশ্বাসীদের কাছে এটাই দোল উৎসবের প্রধান কারণ। এ কারণে দোলযাত্রার দিন এ মতের বিশ্বাসীরা রাধাকৃষ্ণের বিগ্রহ আবিরে রাঙিয়ে দোলায় চড়িয়ে নগর কীর্তনে বের হন। এ সময় পরস্পর তারা রং খেলে আনন্দে মেতে ওঠেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও শান্তিনিকেতনের বসন্তোৎসব

        ”ওরে গৃহবাসী 

খোল্‌, দ্বার খোল্‌, লাগল যে দোল
স্থলে জলে বনতলে লাগল যে দোল
দ্বার খোল্‌, দ্বার খোল্‌।

রাঙা হাসি রাশি রাশি অশোক পলাশে
রাঙা নেশা মেঘে মেশা প্রভাত-আকাশে
নবীন পাতায় লাগে রাঙা হিল্লোল
দ্বার খোল্‌, দ্বার খোল্‌।

বেণুবন মর্মরে দখিন বাতাসে
প্রজাপতি দোলে ঘাসে ঘাসে

মৌমাছি ফিরে যাচি ফুলের দখিন
পাখায় বাজায় তার ভিখারির বীণা
মাধবীবিতানে বায়ু গন্ধে বিভোল
দ্বার খোল্‌, দ্বার খোল্‌।।

রাঙা আকাশ, অশোক পলাশ ফুল আর মৌমাছ প্রজাপতির ওড়াওড়ি জানান দেয় বসন্তের আগমনের। সাথে উৎসবের আমেজ যোগ করে দেয় দোলযাত্রা। তাই আর ঘরে থাকা যায় কি? এমন আনন্দঘন দিনে একে অন্যের সাথে সোহাগ-সম্প্রীতি গড়ে তুলবে, এই তো স্বাভাবিক। তাই রবীন্দ্রনাথ গানের কথায় ডাক দিচ্ছেন গৃহবাসীদের এই সৌন্দর্য অবলোকনের, এই দোল উৎসব পালনের। গানের কথায় স্পষ্ট দোলের বৈশিষ্ট্য এবং বসন্তের আগমনী বার্তা।

শান্তিনিকেতনের বসন্তোৎসব; Source Image: prthomalo.com (Bhashkor Mukharjee)

পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার বোলপুর শহরে অবস্থিত শান্তিনিকেতন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার জীবনের দ্বিতীয়ার্ধের অধিকাংশ সময় ব্যয় করেন তার পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত এই শান্তিনিকেতনের আশ্রমে। এখানে বসেই বিশ্বকবি তার অসংখ্য সাহিত্যকর্ম সৃষ্টি করে গেছেন। প্রথম দিকে শান্তিনিকেতনে নাচ-গান ইত্যাদি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বরণ করে নেওয়া হতো বসন্তকে। পরপবর্তীতে দোলযাত্রা যেহেতু বসন্তে উদযাপিত হয়, তাই দোল ও বসন্তবরণ একইসাথে বসন্তোৎসব হিসেবে ধুমধাম করে উদযাপন করা শুরু হলো শান্তিনিকেতনে। ১৯২৫ সালে রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং উদ্বোধন করে যান এই উৎসবের। এছাড়া দোলের পূর্ব রাতে হোলিকাদহনের মতোই ‘বহ্নি উৎসব’ পালন করা হয়।  

বর্তমানে রবীন্দ্রনাথের ‘ওরে গৃহবাসী’ গানের মাধ্যমেই সূচনা হয় বসন্তোৎসবের এবং দিনভর চলে রঙ খেলা ও নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।    

শ্রী চৈতন্য দেব ও গৌড়পূর্ণিমা

ফাল্গুনের এই পূর্ণিমা তিথিতেই শ্রী চৈতন্য দেবের জন্ম হয়, তাই একে গৌড়পূর্ণিমা নামেও অভিহিত করা হয়। তাই বৈষ্ণব সমাজে দোলের সাথে সাথে গৌড়পূর্ণিমাও বিশেষ তাৎপর্যের সাথে পালিত হয়।

শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (১৪৮৬– ১৫৩৪) পশ্চিমবঙ্গের নদীয়ায় নবদ্বীপে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ছিলেন একজন হিন্দু সন্ন্যাসী এবং ষোড়শ শতাব্দীর বিশিষ্ট বাঙালি ধর্ম ও সমাজ সংস্কারক। তিনি মূলত রাধা ও কৃষ্ণ রূপে ঈশ্বরের পূজা প্রচার করতেন। ‘হরে কৃষ্ণ’ মহামন্ত্রটি তিনিই জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন।

কামদেবের প্রত্যাবর্তনে রঙ খেলা

বৈষ্ণবধর্ম ছাড়া শৈব ও শাক্তধর্মেও হোলি উৎসবের রেওয়াজ ছিল। হোলি নিয়ে শিব ও কামদেবের একটি গল্পও প্রচলিত আছে। শিব ছিলেন কঠিন ধ্যানে মগ্ন। তার ধ্যান ভাঙতে এবং স্বামীরূপে শিবকে পাওয়ার জন্য বসন্ত পঞ্চমীর দিন পার্বতী প্রেমের দেবতা কামদেব এবং প্রেমের দেবী রতির সাহায্য প্রার্থনা করেন। কামদেব এবং তার স্ত্রী রতি পার্বতীকে সাহায্য করবেন বলে ঠিক করেন। কিন্তু শিব তখন যোগাসনে গভীর ধ্যানে নিমগ্ন হয়ে আছেন। এই ধ্যান ভাঙা খুব কঠিন! কিন্তু পার্বতীর কথা ভেবে কামদেব ও রতি শিবের দিকে তীর ছোঁড়েন। ধ্যানে এই বিঘ্ন ঘটবার কারণে শিব তার তৃতীয় চক্ষু খোলেন এবং সেই চক্ষুর তেজোদ্দীপ্ত চাহনিতে কামদেব দগ্ধ হয়ে ছাইয়ে পরিণত হন। স্বামী হারিয়ে রতি কষ্টে ভেঙে পড়ে। পরবর্তীতে শিব পার্বতীকে বিয়ে না করে, রতির সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। বিবাহের একপর্যায়ে রতি শিবের কাছে তার স্বামীর প্রাণভিক্ষা চান। শিব সম্মত হয়ে কামদেবকে ফিরিয়ে দেন কিন্তু একটু ভিন্নভাবে তার অবতার হয়।

প্রেমের দেবতার এই ফিরে আসাকে বসন্ত পঞ্চমী উৎসবের চল্লিশ দিন পর হোলি উদযাপিত হয়। দক্ষিণ ভারতে এই কাহিনী অনুসরণ করেই রঙ খেলা পালন করতে দেখা যায়।

রঙ খেলায় মাতোয়ারা প্রবীণ-নবীনেরা; Source Image; factsbd.com

দোল উৎসব যেমন প্রাচীন, তেমনই প্রধান একটি উৎসব হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে। হিন্দু অধ্যুষিত যেকোনো স্থানেই বড় পরিসরে রঙ খেলা হয়ে থাকে। তাই ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এর হরেক নাম লক্ষ্য করা যায়। যেমন- গুজরাটে ধুলেতি, উত্তর প্রদেশে লাঠ মার হোলি, উত্তরখণ্ডে কুমায়নি হোলি, বিহারে ফাগুয়া, ওড়িশায় দোলা, গোয়ায় শিগমো, মণিপুরে ইয়াওসাং, কেরালায় উক্কুলি এবং নেপালে ফাগু।

প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও দোল বা হোলির তাৎপর্য লক্ষ্যণীয়। লিঙ্গ ও ধর্ম নির্বিশেষে সব মানুষই সামিল হতে পারে এই আনন্দঘন উৎসবে। যে কাউকেই রঙ খেলার মতো অন্যতম উৎসবটি আকৃষ্ট করবে। তাই এই সময়ে দেখা যায় প্রচুর মানুষের সমাগম হয়। যেকোনো প্রকার বৈষম্য ভুলে নিরপেক্ষভাবে রঙে, গানে, নতুনে মেতে ওঠে সকলে।

This article is writen in bangla language. It is about a renowned hindu festival, holi. 

Featured Image: Source Image: Chitrakalaartgallery.com 

Necessary References are hyperlinked below-

১) দোলযাত্রা ।। হোলি - সববাংলায়

২) দোলযাত্রা - Wikiwand

 

৩) The Legend of Radha-Krishna - Holi Festival

Related Articles