Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

এলিজাবেথ বাথোরি: ব্লাড কাউন্টেস না ষড়যন্ত্রের শিকার? | পর্ব-২

[১ম পর্ব পড়ুন]

স্বামীর ঘরে এলিজাবেথ

এলিজাবেথের বয়স যখন দশ বছর, তখন থেকেই তার জন্য উপযুক্ত পাত্রের সন্ধান শুরু হয়। সুন্দরী আর বিদুষী এই নারীর পাণিপ্রার্থীর অভাব হবার কথা নয়, তবে সামাজিক অবস্থান ও অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করে বাথোরিরা নাদাসদি (Nadasdy) পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে।  নাদাসদিরা রয়্যাল হাঙ্গেরির সার্ভার (Sarvar) শহরকেন্দ্রিক অভিজাত পরিবার। সার্ভার দুর্গ তাদের বাসভবন। তাদের পরিবারের ছেলে পনের বছরের ফ্রান্সিস নাদাসদির সাথে এলিজাবেথের বিয়ের কথা হলো। ঠিক হয় ছেলে বিশ আর মেয়ে চৌদ্দ বছরে পা দিলে আনুষ্ঠানিকতা সেরে ফেলা হবে।

ফ্রান্সিস নাদাসদি © MNM Budapest

আপাতত এলিজাবেথকে সার্ভারে পাঠিয়ে দেয়া হয়, যাতে তাদের পারিবারিক আদবকেতা শিখে নিতে পারেন তিনি। বড় ছেলের বৌ হিসেবে সম্পত্তির দেখভাল কীভাবে করতে হবে সেই বিষয়েও ট্রেনিং দেয়া হতে থাকে তাকে। সার্ভারে থাকাকালীন এরকম একটি গুজব রটে যে এলিজাবেথ নাকি স্থানীয় এক কৃষকের ছেলের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে গর্ভবতী হয়ে পড়েছেন। তবে নথিপত্রে এমন কিছুর উল্লেখ পাওয়া যায় না।

নাদাসদির  মূল বাসস্থান এই সার্ভার দুর্গে এলিজাবেথের শিক্ষা শুরু হয়; Image Source: wordpress.com

১৫৭৪ সালের ৮ মে ফ্রান্সিস আর এলিজাবেথের চার হাত এক করে দেয়া হয়। ভ্রানোভ আর টুপলো দুর্গে হয় অনুষ্ঠান। তিন দিন ধরে চলে ভুরিভোজ, অংশ নেয় প্রায় ৪,৫০০ অতিথি। বিয়ের পর তৎকালীন নিয়মানুযায়ী নিজের পারিবারিক নাম ধরে রাখেন এলিজাবেথ। তিনি স্বামীর সাথে বসবাস শুরু করেন জেস্থে (Cjesthe, বর্তমান স্লোভাকিয়ার Čachtice গ্রামের পাশে) দুর্গে। বিয়ের উপহার হিসেবে নাদাসদিরা এই দুর্গ নবদম্পতিকে উপহার দিয়েছিল। তার স্বামী কাউন্ট বিধায় তার উপাধি হলো কাউন্টেস।   

এলিজাবেথ স্বামীর সাথে বাস করতে শুরু করেন এই জেস্থে দুর্গ; Image Source: slovakia.travel

ফ্রান্সিস আর বাথোরির ছয় ছেলে-মেয়ের খবর পাওয়া যায়- অ্যানা, ক্যাটালিন, পল, আন্দ্রেস, মিক্লোস আর অরসোলিয়া। মনে করা হয়, এদের সবার জন্ম ১৫৮৫ থেকে ১৬০০ সালের ভেতর; কেবল অ্যানা, ক্যাটালিন আর পলই প্রাপ্তবয়স পর্যন্ত পৌঁছাতে পেরেছিল। 

বিধবা এলিজাবেথ

হাবসবুর্গ অস্ট্রিয়া আর অটোমানদের মধ্যে কিন্তু থেমে থেমে সংঘাত চলছিল, হাঙ্গেরি ছিল তাদের রণক্ষেত্র। ১৫৭৮ সাল থেকে ফ্রান্সিস হাঙ্গেরিয়ান সেনাদলে নাম লেখান। এজন্য প্রায়ই তাকে জেস্থের বাইরে থাকতে হতো, ফলে এলিজাবেথই মূলত সম্পত্তির দেখাশোনা করতেন।

১৫৯১ সালে আরম্ভ হয় পনের বছরের যুদ্ধ (Fifteen years war/ Long Turkish War)। অটোমানরা ভিয়েনা দখলের জোর চেষ্টা শুরু করে। হাঙ্গেরি জড়িয়ে পড়ে হাবসবুর্গদের পক্ষে। ফ্রান্সিস এ সময় অটোমান বন্দীদের উপর নির্যাতনের জন্য কুখ্যাতি অর্জন করেন, তার নাম হয়ে যায় ব্ল্যাক নাইট।

পনের বছরের যুদ্ধে হাবসবুর্গদের পক্ষে লড়াই করেন ফ্রান্সিস © Frans Geffels.

উল্লেখ আছে, ফ্রান্সিস কিছুটা নিষ্ঠুর স্বভাবের ছিলেন। ভৃত্যদের নির্যাতনের নানারকম উপায় বের হতো তার মাথা থেকে। একবার নাকি এক নারী ভৃত্যের গায়ে মধু মাখিয়ে দিয়েছিলেন তিনি, উদ্দেশ্য যাতে পিঁপড়ে কামড়ে তাকে ক্ষতবিক্ষত করে ফেলে। স্ত্রীকেও সঙ্গী করতেন এসব কাজকর্মে। 

তবে ফ্রান্সিসের সবচেয়ে বড় যোগান আসতো যুদ্ধের মাঠ থেকে। বিপুল পণ্যদ্রব্য লুটপাট করে সার্ভারে পাঠিয়ে দিতেন তিনি, ফলে ফুলেফেঁপে উঠতে থাকে তাদের কোষাগার। এই অর্থ থেকে এলিজাবেথ হাবসবুর্গদের ধার দিতেন, বিশেষ করে হাঙ্গেরির রাজা দ্বিতীয় ম্যাথিয়াস বড় অঙ্কের টাকা নেন। এই টাকা ব্যয় হতো সেনাদের খরচ মেটাতে। তবে সময়মতো ধারের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হন ম্যাথিয়াস, ফলে বার বার তাকে তাগাদা দিতে থাকেন ফ্রান্সিস আর এলিজাবেথ।

১৬০৩ সালে অসুস্থ ফ্রান্সিস ঘরে ফিরে আসেন। এক বছর পর ৪ঠা জানুয়ারি মারা যান তিনি। আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়- তার মৃত্যুর কারণ যুদ্ধে পাওয়া আঘাত। তবে স্থানীয়দের মাঝে বলাবলি হতে থাকে- এলিজাবেথই নাকি স্বামীকে বিষ খাইয়েছেন। মৃত্যুর আগে বন্ধু জর্জ থুরজোকে চিঠি লেখেন ফ্রান্সিস, অনুরোধ করেন বিধবা স্ত্রী আর বাচ্চাদের দেখভাল করতে। থুরজো তাকে আশ্বস্ত করেন।

স্বামীর মৃত্যুর জন্য যখন এলিজাবেথ শোকপালনে ব্যস্ত, তখনই মারা যায় তার বড় ভাই। অনেকটা একা হয়ে পড়লেন তিনি। রণক্ষেত্র থেকে মালামাল আসা বন্ধ হয়ে গেছে, যুদ্ধের কারণে ব্যবসাবাণিজ্যও পড়তির দিকে। বার বার চেয়েও ম্যাথিয়াস আর অন্যান্য লোকদের থেকে পাওনা টাকা মিলছে না। ফলে আর্থিক গ্যাঁড়াকলে পড়ে যান তিনি। ভাই মারা যাবার কারণে সেদিক থেকেও কোনো সাহায্যের আশা হারিয়ে যায়, কারণ এর ফলে পারিবারিক সম্পত্তি নিয়মানুযায়ী চলে গেল দূরসম্পর্কের এক পুরুষ আত্মীয়ের কাছে। 

নির্যাতনের অভিযোগ

বলা হয় ১৫৮৫ সাল থেকেই গৃহভৃত্যদের উপর শারীরিক অত্যাচার করতেন এলিজাবেথ। তাদের চিৎকারে নাকি তার মাথাব্যথার উপশম হতো। স্থানীয় অনেক গরিব পরিবারের মেয়েরা দুর্গে কাজ করতো, পান থেকে চুন খসলেই এদের উপর নিজের হাতের সুখ মেটাতেন এলিজাবেথ। আইনও তাকে সেই অনুমতি দিত।

১৬০১ সাল থেকে অ্যানা ডার্ভুলিয়া (Anna Darvulia) নামে এক মহিলার সান্নিধ্যে আসেন এলিজাবেথ। স্থানীয় লোকেরা তাকে ডাইনী বলে মনে করত। তবে উল্লেখ্য, সেকালে কোনো মহিলার আচার আচরণে কোনো ভিন্নতা দেখলে তাকে সামাজিকভাবে হেয় করার জন্য ডাইনী বা অন্যান্য নেতিবাচক উপাধি দেয়ার চল ছিল।

তবে যা-ই হোক না কেন, দাবি করা হয় অ্যানার সংস্পর্শে এসে এলিজাবেথ আরও বেশি নির্মম হয়ে ওঠেন। অ্যানাই নাকি তাকে নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যার হাতেখড়ি দেন, এছাড়া ঘনিষ্ঠ কয়েকজন কর্মচারীও তাকে সহায়তা করেন। এ সময় কলেরা মহামারী চলতে থাকায় এলিজাবেথের সুবিধেই হয়েছিল, তিনি মৃত ভৃত্যদের কলেরার রোগী বলে চালিয়ে দেন। তবে দুর্গের একের পর এক ভৃত্য কলেরাতে মারা যেতে থাকলে স্থানীয় কর্মকর্তারা সন্দিহান হয়ে পড়লেন।

১৬০০ সালের পর থেকেই দুর্গে এলিজাবেথের অত্যাচারের রোমহর্ষক নানা কাহিনী লোকমুখে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। এর কতটুকু সত্যি আর কতটুকু অতিরঞ্জিত সেই কথা বিচার করা কঠিন, তবে ১৬০২ থেকে ১৬০৪ সালের মধ্যে ইস্তভান ম্যাগারি নামে এক পাদ্রি এলিজাবেথের ব্যাপারে প্রকাশ্যে অভিযোগ আনেন। তিনি নিজের বিকৃত খেয়াল চরিতার্থে মানুষ খুন করছেন বলে ভিয়েনার রাজদরবারেও বার্তা দেন তিনি। ফ্রান্সিস সেসময় জীবিত ছিলেন, তার কাছে স্ত্রীকে নিয়ন্ত্রণের আবেদন জানান পাদ্রি। এলিজাবেথের দোষ প্রমাণে কবরস্থ মৃতদেহ তুলে ময়নাতদন্তের কথাও বলতে থাকেন তিনি। 

যদিও আইন এলিজাবেথের ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি, তারপরেও গুজব আর ম্যাগারির অভিযোগের প্রেক্ষিতে স্থানীয় বাসিন্দারা তার কাছে কাজের জন্য মেয়েদের পাঠানো কমিয়ে দেয়। এর মধ্যে মারা যান অ্যানা। এলিজাবেথের নতুন গুরু হলেন স্থানীয় মহিলা মাজেরোভা (Erzsi Majerová), তাকেও লোকে ডাইনি বলে মনে করত।

১৬০৯ সালে জেস্থেতে একটি স্কুল (gynaeceum) খোলেন এলিজাবেথ, যেখানে অর্থের বিনিময়ে মেয়েদের উঁচু সমাজের আদবকায়দা শেখানো হতো। তার টার্গেট ছিল অবস্থাসম্পন্ন পরিবারগুলো, যারা সমাজের উঁচুশ্রেণীতে উঠতে চায়। এরকম অনেক পরিবারই তাদের মেয়েদের পাঠায়। পরবর্তীতে অভিযোগ করা হয় যে তিন সপ্তাহের মধ্যেই এদের প্রত্যেককে হত্যা করেন এলিজাবেথ। কারো মৃতদেহই ফেরত দেয়া হয়নি।

এলিজাবেথ মেয়েদের আদবকায়দা শেখানোর স্কুল খুলেছিলেন; Image Source: brewminate.com

দরিদ্র কৃষক পরিবারের মেয়েদের মৃত্যু নিয়ে আইনের কোন মাথাব্যথা ছিল না। কিন্তু এই তালিকায় অবস্থাসম্পন্ন ও সম্ভ্রান্ত পরিবারের নাম উঠলে নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হয় সবাই। অভিযোগ পৌঁছে রাজা ম্যাথিয়াসের কান পর্যন্ত। ১৬১০ সালের মার্চে তিনি তদন্তের দায়িত্ব দেন ফ্রান্সিসের সেই বন্ধু, জর্জ থুরজোকে। থুরজো তখন সবেমাত্র হাঙ্গেরির সর্বোচ্চ রাজকীয় কর্মকর্তা বা ‘প্যালাটাইন’ (Palatine) নির্বাচিত হয়েছেন।

জর্জ থুরজো; Image Source: dka.oszk.hu

অনুসন্ধান ও গ্রেফতার

থুরজো দুজন কর্মকর্তাকে অভিযোগ খতিয়ে দেখতে পাঠালেন। তারা জেস্থের পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে খোঁজখবর নেন। ৩৪ জন লোকের সাথে কথা বলে পাওয়া গেল কেবল ছাড়া ছাড়া কিছু তথ্য, এর সত্যতা নিয়েও প্রশ্ন ছিল। দুর্গের লোকেরা তো অভিযোগ একেবারেই অস্বীকার করে। 

তবে বেশ কয়েকজন গ্রামবাসীর বক্তব্য গুরুত্ব দিয়ে রেকর্ড করা হয়। জ্যানোস প্যালেনিক নামে এক ব্যক্তি জানান, তিনি নিহত মেয়েদের ক্ষতবিক্ষত দেহ দেখেছেন। মাইকেল হরউইথ নামে আরেক লোক, যিনি কিনা দুর্গে একসময় কাজ করতেন, জানান যে এলিজাবেথ পাতালঘরে নেমে যাবার পরে সেখান থেকে নারীকণ্ঠের চিৎকার আর মারপিটের শব্দ শুনতে পেয়েছেন তিনি।

যদিও শক্ত কোনো প্রমাণ কর্মকর্তারা পাননি, তারপরেও তাদের রিপোর্ট থুরজোকে কৌতূহলী করে তোলার মতো যথেষ্ট ছিল। তিনি জেস্থের দুর্গের চার্চ থেকেও একটি চিঠি পান। এই পত্র লিখেছিলেন পাদ্রি জ্যানোস পনিকেনুসজ। জেস্থে আর তার চার্চের সুড়ঙ্গপথে পনেরজন মেয়ের দেহ খুঁজে পাবার কথা জানান তিনি।

থুরজো পড়ে গেলেন বড় সমস্যায়। তাকে অবশ্যই তদন্ত করতে হবে, যা কিনা বাথোরিদের মতো বনেদি পরিবারের জন্য সম্মানজনক কিছু হবে না। উপরন্তু, দোষী প্রমাণিত হলে নিশ্চিতভাবে এলিজাবথের মৃত্যুদণ্ড হবে, যা কিনা শুধু বাথোরি নয়, বরং পুরো অভিজাত সম্প্রদায়ের ব্যাপারেই নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করবে। তাছাড়া, এলিজাবেথের প্রভাবশালী আত্মীয়স্বজনেরাও তাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো সুনজরে দেখবে না।

থুরজো বিষয়টি নিয়ে এলিজাবেথের ছেলে আর দুই জামাইয়ের সাথে কথা বললেন। পল তখনও নাবালক, ফলে তার শিক্ষক ও আইনি অভিভাবক ইম্রে ম্যাগেইরিও এখানে জড়িত ছিলেন। ঠিক হলো তদন্তে যা-ই আসুক না কেন এলিজাবেথকে আদালতে তোলা হবে না, তবে তাকে আটকে রাখা হবে। প্রথমে তাকে আশ্রমে পাঠিয়ে দেয়ার কথা হলেও পরবর্তীতে জনতাকে শান্ত করতে তাকে গৃহবন্দি করে রাখার পক্ষেই একমত হন সবাই। পুরো ব্যাপারটি ঘুরিয়ে দিতে এলিজাবেথের সহযোগীদের বিচারের মুখোমুখি করার সিদ্ধান্ত হয়।  

This is a Bengali language article about Elizabeth Bathroy, popularly known as the Blood Countess. Necessary references are mentioned below.

References

  1. Bledsaw, R.L. (2014). No Blood in the Water: The Legal and Gender Conspiracies Against Countess Elizabeth Bathory in Historical Context.
  2. McNally, Raymond T. (1983). Dracula Was a Woman: In Search of the Blood Countess of Transylvania. New York: McGraw Hill.
  3. Penrose, Valentine (trans. Alexander Trocchi) (2006). The Bloody Countess: Atrocities of Erzsébet Báthory. Solar Books.
  4. Craft K.L. (2009), Infamous Lady: The True Story of Countess Erzsébet Báthory, Lexington 2009.
  5. Bartosiewicz, A. (2018). Elisabeth Báthory – a true story. Przegląd Nauk Historycznych.

Feature Image: artstation.com

Related Articles