Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

কুখ্যাত ৫ চোরের গল্প

চোর এবং চুরি- দুটো বিষয় নিয়েই আমাদের আতঙ্কের কোনো শেষ নেই। তবে মানব ইতিহাসে এমন কিছু চোরও আছে, যাদের চৌর্যবৃত্তির রোমাঞ্চকর কাহিনীই তাদেরকে ইতিহাসে স্মরণীয় করে রেখেছে। কুখ্যাত এমন ৫ চোরের গল্পই জানানো হবে আজকের এ লেখায়।

১) স্টিফেন ব্লুমবার্গ

‘বইপোকা’ শব্দটির সাথে কমবেশি আমরা অনেকেই পরিচিত। এ শ্রেণীর মানুষেরা যেমন নিয়মিত বই পড়ার অভ্যাস বজায় রাখেন, তেমনি একটি বই পড়া শুরু করলে একেবারে সেই বইয়ের কাহিনীর ভেতরেই যেন তারা ঢুকে যান। সেই সাথে আরেকটি বৈশিষ্ট্যও তাদের অনেকের মাঝে লক্ষ্যণীয়, ভালো কোনো লেখকের নতুন কোনো বই বাজারে আসামাত্র তা তাদের সংগ্রহ করা চাই-ই চাই।

Source: Flavorwire

তবে সেই বইপোকাদেরও ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন স্টিফেন ব্লুমবার্গ। একজন মানুষের বই সংগ্রহের নেশা কোন পর্যায়ে পৌঁছুতে পারে, তার এক উৎকৃষ্ট (কিংবা নিকৃষ্ট) নমুনা বলা যায় এ মানুষটিকে। ১৯৯০ সালে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছিলেন তিনি। তার অপরাধ? বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও লাইব্রেরি থেকে বই চুরি করা! তার চুরিকৃত বইগুলোর বাজারমূল্য শুনলে পিলে চমকে যাবে যে কারোরই। যে পরিমাণ বই তিনি চুরি করেছিলেন সেগুলোর মোট দাম ৫৩ লক্ষ মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। এ ঘটনার পর সবাই তাকে ‘বই দস্যু’ হিসেবে চিনতে শুরু করে। ধারণা করা হয়, বিশ্বের ইতিহাসে তিনিই সবচেয়ে বেশি বই চুরি করেছেন। অবশ্য নিজের বই চুরির বদভ্যাসের পেছনে অদ্ভুত এক যুক্তি দাঁড়া করিয়েছিলেন ব্লুমবার্গ। তিনি বিশ্বাস করতেন, দুর্লভ বই ও গুরুত্বপূর্ণ নানা তথ্য সাধারণ জনগণ যেন হস্তগত করতে না পারে, সেজন্য গোপনে গোপনে ছক কষছে সরকার। এই ছক পেরিয়ে, ‘Think out of the box’ মানসিকতা দেখিয়ে, চুরির মাধ্যমে জনগণের সেবা করতে চেয়েছিলেন তিনি।

বই চুরি করলেও অন্যান্য আদর্শের দিক দিয়ে তিনি আবার ঠিক ছিলেন। সেসব বই বিক্রির বিন্দুমাত্র ইচ্ছাও তার ছিলো না। কারণ এটাকেই তিনি অপরাধ মনে করেছিলেন! বিচারে ব্লুমবার্গ দোষী সাব্যস্ত হন, সাড়ে চার বছরের জেল হয়েছিলো তার। জেল থেকে বেরিয়ে অবশ্য আবারও বই চুরিতেই মেতে উঠেছিলেন তিনি।

২) সোনিয়া দ্য গোল্ডেন হ্যান্ড

উনিশ শতকে রাশিয়ার কুখ্যাত এক চোর ছিলেন সোফিয়া ব্লায়ুভশটাইন। মূলত মূল্যবান নানা রত্ন চুরির জন্যই দিকে দিকে তার নাম ছড়িয়ে পড়ে। লোকে অবশ্য তাকে ‘সোনিয়া দ্য গোল্ডেন হ্যান্ড’ নামেই বেশি চিনতো। সোফিয়ার ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে খুব বেশি একটা তথ্য পাওয়া যায় না। তবে তার নানা চুরির ঘটনা এতটাই অবিশ্বাস্য ছিলো যে সেগুলো ইতিহাসের বুকেই ঠাই করে নিয়েছে।

একবারের কথা, এক স্বর্ণালঙ্কারের দোকানে গিয়ে বেশ দামি কিছু রত্ন পছন্দ করলেন সোফিয়া। এরপর দোকান মালিকের কাছে গিয়ে তিনি বললেন, এগুলো যেন তার বাসায় পার্সেল করে পাঠিয়ে দেয়া হয়। সেখানে তার ডাক্তার স্বামী এগুলোর দাম পরিশোধ করে দেবেন। সরলমনা দোকানী সোফিয়ার কথা মেনে নিলেন। তিনি রত্নগুলো নিয়ে হাজির হলেন সোফিয়ার দেয়া ঠিকানায়।

Source: Wikimedia Commons

সোফিয়া তখন লোকটিকে তার স্বামীর অফিসে অপেক্ষা করতে বললেন, জানালেন হাতের কাজটা শেষ করেই তার স্বামী আসছেন। এটুকু বলে লোকটির হাত থেকে রত্নের থলে নিয়ে যান তিনি। ওদিকে গোপনে গোপনে সোফিয়া আরো আগে থেকেই চাল চেলে রেখেছিলেন। সেই বাড়িটি আসলে ছিলো এক ডাক্তারের। সোফিয়া সেই ডাক্তারের সাথে আগে দেখা করে জানিয়ে রেখেছিলেন, ডায়মন্ড বেচা-কেনা করা তার স্বামীর একরকম নেশার মতো হয়ে গিয়েছে। এ অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য তার স্বামী, যে কিনা কিছুক্ষণের মাঝেই এসে পড়বে, তার চিকিৎসা করাতে ডাক্তারকে অনুরোধ করেন সোফিয়া! দোকানী আসার কিছুক্ষণ পর ডাক্তার সেখানে এসে পৌঁছালেন। তারা দুজনই একে অপরকে সোফিয়ার স্বামী মনে করলেন। এরপর যখন সেই দোকানী রত্নের দাম পরিশোধের ব্যাপারে অনুরোধ করলেন, তখন ডাক্তার লোকটিকে একটি মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেন! ডাক্তার-দোকানীর মধ্যকার ধোঁয়াশা কাটতে খুব বেশি সময় না লাগলেও ততক্ষণে সোফিয়া হাওয়া হয়ে গিয়েছিলেন।

এটা তো গেলো কেবলমাত্র একটি চুরির ঘটনা। মিথ্যা বলা কিংবা ছলনার আশ্রয় ছাড়াও আরো নানা ধরনের কৌশলের আশ্রয় নিতেন তিনি। বড় বড় নখের ফাঁকে মূল্যবান রত্ন লুকিয়ে রাখতেন তিনি, পোশাকের সাথে মেলানো একটি ব্যাগে লুকাতেন রত্ন, কখনো আবার দোকানীর সাথে তিনি আলাপচারিতা চালানোর সময় তার সাথে ছোট একটি বানর রত্ন গলাধঃকরণ করে চুরির কাজটা সেরে দিতো!

৩) জোনাথন ওয়াইল্ড

আঠারো শতকে লন্ডনের অন্যতম সুপরিচিত এক ব্যক্তি ছিলেন জোনাথন ওয়াইল্ড, লোকে যাকে চিনতো ‘Thief-taker General’ হিসেবে।

তৎকালে লন্ডনে বিচিত্র এক নিয়ম প্রচলিত ছিলো। যদি কোনো ব্যক্তি কোনো চোরকে ধরিয়ে দিতে পুলিশকে সহায়তা করতো, তাহলে চুরি যাওয়া অর্থের অর্ধেক পরিমাণ পুরষ্কার হিসেবে পেত সেই লোকটি। সমাজে চুরি কমাতে এর বাসিন্দাদের সক্রিয় করে তুলতে পদ্ধতিটি যে চমৎকার ছিলো, তা তো না বললেও চলে। কিন্তু সমস্যা দেখা দিলো একে ঘিরেও। কারণ বেশ কিছু অতি বুদ্ধিমান মানুষ এটাকেই ব্যবসা বানিয়ে নিলো, যাদের বলা হতো ‘Thief-taker’। এজন্য তারা হয়তো কোনো ডাকাতদলকে ভাড়া করে প্রথমে কোনো অপরাধে লিপ্ত করাতো। এরপর চুরি হয়ে গেলে তারা মালামাল সহ সেই ডাকাতদলকে আবার পুলিশের হাতেই তুলে দিত! ফলে পুরষ্কারটা তার ভাগ্যেই জুটতো।

Source: Wikimedia Commons

একবার দেনার দায়ে জেলে যেতে হয়েছিলো জোনাথন ওয়াইল্ডকে। সেখানে গিয়েই অন্ধকার জগতের নানা শ্রেণীর মানুষের সাথে পরিচয় ঘটে তার। জেল থেকে বেরোনোর পর এদের সাথেই সখ্যতা গড়ে উঠেছিল ওয়াইল্ডের। তাদেরকে নিয়ে সংঘবদ্ধ এক অপরাধী দল গড়ে তোলে সে, যারা চুরি-ডাকাতির পর মালামাল ওয়াইল্ডের গুদামঘরে এনে জমা করতো। ওদিকে যাদের বাসায় চুরি হতো তারা এসে সাহায্য চাইতো ওয়াইল্ডের কাছে। এ সময় বেশ সতর্কভাবে এগোতে হতো ওয়াইল্ডকে। তিনি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতেন, যদি কেউ চুরি যাওয়া মাল তার কাছে ফেরত দেয় তবে তাকে পুরষ্কৃত করা হবে। এভাবে চোর এবং চুরির শিকার হওয়া ব্যক্তি উভয় পক্ষের সাথেই সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছিল ওয়াইল্ডের।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ওয়াইল্ডকে নজরে রেখেছিলো। পরবর্তীতে তারা আইন করে এই পুরষ্কার দেয়ার নিয়ম বন্ধ করে। অবশ্য বারবার অন্যান্য মাধ্যমের সাহায্য নিয়ে কাজ সেরে ফেলায় ওয়াইল্ডকে হাতেনাতে ধরতে পারছিলো না পুলিশ। শেষপর্যন্ত জ্যাক শেপার্ড নামে এক চোরকে ধরিয়ে দেবার পর পুলিশ তার সম্পর্কে বিস্তারিত নানা তথ্য-প্রমাণ সহ জোগাড়ে সক্ষম হয়। অল্প কিছুদিনের মাঝেই পুলিশের হাতে ধরা পড়তে হয় তাকে, ঝুলতে হয় ফাঁসির দড়িতে।

৪) ডিক টার্পিন

ইতিহাসের অন্যতম কুখ্যাত এক দস্যু বলা হয় ডিক টার্পিনকে। শুরুতে তিনি এক কসাইয়ের দোকানে চাকরি নিয়েছিলেন। পরবর্তীতে নিজেরই এক কসাইঘর খুলে বসেন টার্পিন। খরচ বাঁচাতে একসময় আশেপাশের এলাকা থেকে গরু, ভেড়ার মতো নানা গৃহপালিত পশু চুরি করা শুরু করেন তিনি। কিছুদিনের মাঝে হাতেনাতে ধরাও পড়েন। পরবর্তীতে সেখান থেকে পালিয়ে এসেক্সের আরো ভেতরের গ্রাম্য অঞ্চলে পালিয়ে যান, যোগ দেন গ্রেগরি গ্যাং নামক এক দলে। সেই দলটি মূলত বিভিন্ন জনবিচ্ছিন্ন খামারবাড়িতে আক্রমণ চালাতো। ডিক টার্পিনকে ধরিয়ে দিতে তখন ৫০ পাউন্ড পুরষ্কার ঘোষণা করেন তৎকালীন ইংল্যান্ডের রাজা।

Source: Wikimedia Commons

পরবর্তীতে টার্পিন গিয়ে যোগ দেন ক্যাপ্টেন টম কিন নামক আরেক দস্যুর সাথে। তাদের এলাকা দিয়ে যে-ই যেত, সে-ই তাদের লুটতরাজের শিকার হতো। ফলে একসময় টার্পিনের মাথার দাম গিয়ে ঠেকলো ১৫০ পাউন্ডে। প্রয়োজনে হাত রক্তে রঞ্জিত করতেও কুণ্ঠাবোধ করতেন না টার্পিন। ফলে বেশ ক’টি খুনের সাথেও জড়িয়ে আছে তার নাম।

৫) জিয়ান্নি ডি ভ্যালোইস-সেইন্ট-রেমি

জিয়ান্নি ডি ভ্যালোইস-সেইন্ট-রেমি সবসময়ই চাইতেন বিত্তবৈভবের প্রাচুর্যে তার জীবনটা ভরে উঠুক। তবুও অভাব কেন যেন তার পিছু ছাড়ছিলো না। আর এ নিয়ে তার হাপিত্যেশেরও কোনো অন্ত ছিলো না। একসময় বিয়ে হলো জিয়ান্নির। তিনি ভেবেছিলেন, বিয়ের পর হয়তো অর্থের জন্য দীর্ঘদিনের হাহাকার কাটবে তার। কিন্তু না, তখনও কাঙ্ক্ষিত সচ্ছলতা ধরা দিলো না তার জীবনে। এবার তাই ভিন্ন পথে হাঁটবার পরিকল্পনা করলেন তিনি, আইনবিরুদ্ধ এক পথ।

জিয়ান্নি জানতেন, রানী মেরি অ্যান্টোইনেট (ফরাসি বিদ্রোহের পূর্বে ফ্রান্সের সর্বশেষ রানী) এর সাথে সম্পর্ক খুব একটা ভালো যাচ্ছিলো না কার্ডিনাল ডি রোহানের। এ সুযোগটাকেই কাজে লাগালেন তিনি, প্রেমের ফাঁদে ফেললেন রোহানকে। সম্পর্কের একপর্যায়ে জিয়ান্নি জানালেন, মেরির সাথে তার কথা হয়েছে। কিছু কাজ করলে রোহান আবারও মেরির মন জয় করতে পারবেন। সহজ-সরল রোহান জিয়ান্নির ছলনা বুঝতে পারেন নি। তিনি তার অভিনয়কে সত্য বলেই ধরে নিলেন।

Source: Bibliotheque National de France

জিয়ান্নির পরিকল্পনা কতটা গোছানো ছিলো তা ভাবলেও অবাক হতে হয়। রোহানের ধারণা পাকাপোক্ত করতে তিনি রানীর নাম দিয়ে বেশ কিছু চিঠি জালিয়াতি করেছিলেন। এমনকি একবার মেরির মতো দেখতে এক পতিতাকেও সাজিয়ে এনেছিলেন তিনি, দুজনের সাক্ষাতের ব্যবস্থা করেছিলেন রাতের আঁধারে। অন্ধকারে সেই পতিতাকে মেরি ভেবে ভুল করেছিলেন রোহান। তিনি ভাবলেন, আসলেই বুঝি রানী তার শয্যাসঙ্গিনী হতে এসেছেন, সত্যিই বুঝি রানীর সাথে তার সম্পর্ক জোড়া লেগে যাচ্ছে।

প্রেমাবেগে উদ্বেলিত রোহান রানীকে উপহার দিতে চাইলেন। রানীর জন্য উপহার বলে কথা, সেটা তো যেনতেন জিনিস হলে চলবে না। তাই তিনি কিনে আনলেন ডায়মন্ডের তৈরি নেকলেস, যেটির বর্তমান বাজারমূল্য দশ লক্ষ ইউএস ডলারের কম হবে না (৮ কোটি ২১ লক্ষ টাকার কাছাকাছি)। মজার ব্যাপার হলো, রোহানের কাছ থেকে এই উপহার নিয়ে যায় নিজেকে রানীর ভৃত্য বলে পরিচয় দেয়া এক লোক। সেই লোকটি আর কেউ নন, স্বয়ং জিয়ান্নির স্বামী! ছদ্মবেশ ধরে নেকলেসটি হাতিয়ে সটকে পড়েন তারা। পরবর্তীতে জানা যায় যে, সেই নেকলেসটি আসলে রাজা পঞ্চদশ লুইয়ের উপপত্নীর জন্য বানানো হয়েছিলো।

জিয়ান্নি অবশ্য ধরা পড়েছিলেন। কিন্তু পুরুষের ছদ্মবেশ ধরে জেলখানা থেকে পালিয়েও যান তিনি। বাকি জীবনটা তিনি লন্ডনেই কাটিয়ে দিয়েছিলেন বলে জানা যায়।

ফিচার ইমেজ- HDWallSource.com

Related Articles