Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ফ্লাইট ১৯ অন্তর্ধান: বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে রহস্যজনক বিমান নিখোঁজ

ক্যারিবীয় সাগরের এক কল্পিত ত্রিভুজ, বারবার খবরের শীর্ষে এসে মারাত্মক এক রহস্যময় এলাকায় পরিণত হয়েছে। কোনো হদিস না রেখেই নাকি অদ্ভুতভাবে এখানে জাহাজ বা বিমান হারিয়ে যায়। গবেষণা এবং বিজ্ঞানের মতে, এগুলো স্রেফ ক্ষ্যাপাটে প্রকৃতির খেলা। বিভিন্ন সময় বিমান, জাহাজ নিখোঁজ হওয়ার পেছনে যথেষ্ট যুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছে। তবে রহস্যপ্রেমীরা বারবার খুঁজেছেন রহস্যের গন্ধ। বারমুডা ট্রায়াঙ্গল নিয়ে এত বিতর্কের সৃষ্টিই হতো না, যদি একটি বিশেষ ঘটনা না ঘটতো।

বারমুডা ট্রায়াঙ্গল; Image Source: Big Think

অতীতের যে বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে একেবারে কম জাহাজ বা বিমান নিখোঁজ হয়েছে তা কিন্তু নয়, তবে প্রায় সব ঘটনাই ছিল বিচ্ছিন্ন। যোগাযোগ প্রযুক্তির অভাব এবং অতিপ্রাকৃতিক শক্তিতে বিশ্বাসী মানুষ দুর্ঘটনা বা জাহাজ গায়েব হয়ে যাওয়াকে সাধারণ ব্যাপার বলেই মনে করতো। তাছাড়া সামুদ্রিক উত্তাল আবহাওয়া আছেই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বেতার যোগাযোগ এবং দিকনির্দেশনা ব্যবস্থার বেশ উন্নতি ঘটে। তখনকার সব ধরনের বিমান বা জাহাজেই বেতার যোগাযোগের যন্ত্রপাতি ছিল। ফলে অতিপ্রাকৃতিকতার জোর কমে যায়।

বারমুডা ট্রায়াঙ্গল নিয়ে আগে থেকেই একধরনের রহস্যঘেরা কথা শোনা যেত, কিন্তু আধুনিক সময়ে এই বিষয়ে রীতিমতো হৈ চৈ পড়ে যায় যখন একসাথে পাঁচটি বিমান উধাও হয়ে যায়।

ঘটনা ১৯৪৫ সালের ডিসেম্বরের। ফ্লোরিডার ফোর্ড লাউডারডাল নেভাল এভিয়েশন থেকে পাঁচটি গ্রুম্যান এভেঞ্জার আকাশে ওড়ে। সব মিলিয়ে ১৩ জন ক্রু ছিলেন। বিমানগুলো ছিল টর্পেডো বম্বার। বিমানবাহী জাহাজ বা উপকূল থেকে উড়ে প্রতিপক্ষের জাহাজ আক্রমণ করার জন্য এই ধরনের বিমান বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছিল। ফ্লাইট-১৯ সাংকেতিক নামের এই ফ্লাইটটি ছিল নিয়মিত প্রশিক্ষণ ফ্লাইট। ফ্লাইটের দলনেতা ছিলেন চার্লস টেলর, যার ২,৫০০ ঘণ্টা উড্ডয়নের অভিজ্ঞতা ছিল। টেলরের বেশিরভাগ উড্ডয়নই ছিল টর্পেডো বম্বারের সাথে। কিছুদিন আগেই প্রশান্ত অঞ্চল থেকে তিনি প্রশিক্ষণ নিয়ে ফিরেছেন। এয়ারক্র্যাফট ক্যারিয়ার থেকে অসংখ্যবার বিমান উড়িয়ে বোমা ফেলার অভিজ্ঞতা আছে তার।

অন্যদিকে বাকি চারটি বিমানের ক্রুদের গড়ে ৩০০ ঘণ্টার উড্ডয়নের অভিজ্ঞতা ছিল। তাদের মধ্যে অনেকেই ছিল, যারা নিজে ফ্লাইট পরিচালনা করে কখনও ওড়েননি। টেলর মূলত জুনিয়র পাইলটদের প্রশিক্ষক হিসেবে ফ্লাইট ১৯ উড্ডয়ন করেছিলেন।

দলনেতা টেলর; Image Source: afindagrave.com

যাত্রা শুরুর পূর্বে বিমানগুলোর জ্বালানী ট্যাংক পুরোপুরি ভর্তি করা হয়েছিল। গ্রাউন্ড ক্রুরাও নিশ্চিত করেছিলেন সব যন্ত্রপাতি ঠিকঠাক আছে।

ফ্লাইট ১৯ এর পরিকল্পনা ছিল ফ্লোরিডা থেকে ৫৬ মাইল পূর্ব থেকে উড়ে যাওয়া, তারপর হেন্স এন্ড চিকেন নামের জায়গায় বোমা ফেলা। বোমা ফেলা শেষে পূর্ব দিকে আরো ৬৭ মাইল এগিয়ে চলা। তারপর উত্তরে ঘুরে ৭৩ মাইল গিয়ে বিমান চালিয়ে বাহামা দ্বীপপুঞ্জের কাছাকাছি আসা। তারপর শেষবারের মতো দিক দক্ষিণ-পশ্চিমে ঘুরিয়ে ঘাঁটিতে ফেরত আসা। বিমানগুলো যখন যাত্রা শুরু করে, তখন আবহাওয়া ছিল একেবারেই পরিষ্কার। ঝড়ের কোনো পূর্বাভাসও ছিল না। টেলর দলনেতা হিসেবে কিছুটা আগে অগ্রসর হতে থাকেন এবং বাকি চারটি বিমান তাকে অনুসরণ করে।

ফ্লাইট ১৯ এর যাত্রাপথ; Image Source: wikimedia commons

ইতিপূর্বে টেলর একই রুটে ১৮ বার উড্ডয়ন করেছিলেন। পূর্বের মতোই তিনি প্রশিক্ষণার্থীদের নিয়ে হেন্স এন্ড চিকেনে পৌঁছে যান এবং বেলা আড়াইটা নাগাদ বোমা বর্ষণের মহড়া শেষ করেন। তখন পর্যন্ত সব ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু উত্তরে ঘোরার পরপরই অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটতে শুরু করে। এক পশলা বৃষ্টি এবং হালকা ঝাঁকুনির পর কম্পাস অচল হয়ে যায়। একটি বিমানের কম্পাস অচল হওয়া তেমন কোনো বিষয় না, কিন্তু অদ্ভুতভাবে পাঁচটি বিমানের কম্পাসই অচল হয়ে যায়। টেলর বুঝতে পারেন যে, তিনি সঠিক পথে নেই এবং সূর্য ডোবার আগেই তাকে ঘাঁটিতে ফেরত যেতে হবে।

এদিকে ফোর্ড লাউডারডালের কন্ট্রোল রুমে দায়িত্ব পালন করছিলেন সিনিয়র কন্সট্রাক্টর লেফটেনেন্ট রবার্ট কক্স। হঠাৎ তিনি শুনতে পেলেন তার অতি পরিচিত সহকর্মী টেলরের গলা। এক মুহূর্তের জন্য বিরক্ত হলেও হঠাৎ করেই তিনি খেয়াল করেন টেলরের গলা ভীষণ ভয়ার্ত।

আমরা গোলকধাঁধায় পড়েছি”- ৩:৪৫ নাগাদ টেলরের কণ্ঠ ভেসে এলো। কক্স তার অবস্থান জানতে চাইলে তিনি জানান, তার দিকনির্ণয়ের কোনো যন্ত্রপাতি কাজ করছে না। কক্স বুঝতে পারলেন, টেলর ইয়ার্কি করার মতো পাইলট না এবং সত্যিই তারা হারিয়ে গেছেন। পশ্চিম দিক ধরে অগ্রসর হলে আরো অদ্ভুত এক উত্তর ভেসে আসে। পশ্চিম দিক কোনটা সেটাই কেউ বুঝতে পারছে না, কারণ বিমানের দুটি কম্পাসই অকেজো হয়ে আছে। দিগন্ত বরাবর কোনো স্থলভূমি বা নিচে সাগরও নাকি দেখতে পাচ্ছে না ফ্লাইট ১৯। কক্স এবার নিজেই ঘাবড়ে গেলেন।

সাধারণত দুপুরের পর আটলান্টিকের উপকূলে হারিয়ে যাওয়া পাইলটরা সূর্যের দিকে মুখ ঘুরিয়ে বিমান চালাতে থাকেন এবং একসময় স্থলভাগ পেয়ে যান। টেলরের ধারণা ছিল, তিনি ভুল করে মেক্সিকো উপসাগরের দিকে চলে এসেছেন। পশ্চিমে মুখ করে কিছুক্ষণ বিমান চালানোর পর টেলর আবার পূর্বে বিমান ঘুরিয়ে নেন। সম্ভবত একটি বিমান তখন তার আদেশ অমান্য করে পশ্চিমেই চলতে থাকে। শেষ মুহূর্তে টেলর সবগুলো বিমানকে কাছাকছি থাকার নির্দেশ দেন এবং জ্বালানী ১০ গ্যালনের নিচে নামার পর ধীরে ধীরে উচ্চতা কমাতে বলেন। এর পরই রেডিও যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে যায়। বিকাল সাড়ে পাঁচটায় রাডারে শেষবারের মতো এক ঝলক দেখা যায় ফ্লাইট-১৯ কে। যোগাযোগও থেমে যায় একপর্যায়ে।

এদিকে ফ্লাইট ১৯ গায়েব হবার পর জরুরি রেডিও বার্তায় ঐ এলাকায় থাকা সব জাহাজ এবং বিমানকে সতর্ক করা হয়। নিয়মিত টহলে থাকা দুটি বিমান ফ্লাইট ১৯ খুঁজতে বের হয়। এর মধ্যে একটি বিমান কিছুক্ষণ পর নিজেই গায়েব হয়ে যায়। পিবিএম-৫ মডেলের বিমানটিকে ২৯ ডিগ্রি উত্তর ৭৯ ডিগ্রি পশ্চিমে যেতে বলা হয়েছিল। রাত সোয়া নয়টা নাগাদ একই এলাকায় থাকা একটি তেলের ট্যাংকার ১০০ ফুট উঁচুতে একটি বিস্ফোরণ রিপোর্ট করে। ধারণা করা হয়, এটি সেই নিখোঁজ পিবিএম-৫ এর অন্তিম মুহূর্ত।

পত্রিকার শিরোনামে ফ্লাইট ১৯; Image Source: nasflmuseum.com

পরেরদিন ৩০০ জাহাজ এবং বিমান ফ্লাইট ১৯-কে খুঁজতে বের হয়। ৫ দিনে ৩,০০,০০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা একেবারে চষে ফেলা হয়। সম্ভাব্য দুর্ঘটনা ঘটতে পারে এমন স্থানে থাকা সবাইকে জিজ্ঞেস করা হয়। কিন্তু কিছুই পাওয়া যায়নি। নৌবাহিনীর লেফটেনেন্ট ডেভিড হোয়াইট বলেন, তারা স্রেফ গায়েব হয়ে গেছে।

পিবিএম-৫ বিমান; Image Source: wikimedia commons

মার্কিন নৌবাহিনী তদন্ত প্রতিবেদনে ৫০০ পৃষ্ঠার এক রিপোর্ট বের করে। দলনেতা টেলরের পথ ভুল করা বা কম্পাস বিকল হওয়ার সম্ভাব্যতা উল্লেখ করলেও এই অন্তর্ধানের কারণ ‘অজ্ঞাত‘ই বলা আছে।

যৌক্তিকভাবে বিমানগুলো গায়েব হওয়াকে ব্যাখ্যা করতে পারে এমন কোনো পরিপূর্ণ তত্ত্ব দাঁড় করানো যায়নি। ধারণা করা হয়, কোনো কারণে পানিতে অবতরণের পর নিমজ্জিত হয়ে হারিয়ে গেছে বিমানগুলো। আধুনিক গবেষকরা সমুদ্রের তলদেশে সুপ্ত আগ্নেয়গিরির মুখের অস্তিত্ব প্রমাণের কাছাকাছি পৌঁছেছেন। হয়তো এমনই কোনো সুপ্ত গহ্বরে পতিত হয় এই ফ্লাইট। রহস্যপ্রেমীরা টেনে আনেন ভিনগ্রহীদের আগ্রাসন বা টাইম ভরটেক্সের মতো থিওরি। বারমুডা ট্রায়াঙ্গল হয়ে ওঠে রহস্যের চাদরে মোড়া। হয়তো আধুনিক বিজ্ঞান একদিন ব্যাখ্যা দিতে পারবে ফ্লাইট ১৯ অন্তিম যাত্রার রহস্যের।    

This is a Bengali article. The article is about the The Mysterious Disappearance of Flight 19 in Bermuda triangle

Featured Image © history.com

Related Articles