Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

গাঙ্গুবাঈ কাতিয়াবাদী: এশিয়ার বৃহত্তম পতিতালয় কামাথিপুরার সর্দারনী

মায়ানগরী মুম্বাই ছিলো ব্রিটিশদের অত্যন্ত প্রিয় বাণিজ্যিক এলাকা। এই নগরীতে পৃথিবীর সব দেশের লোকজনের আনাগোনা শুরু হয় ব্রিটিশ শাসন পাকাপোক্ত হবার পরেই। জেনে রাখা প্রয়োজন, ব্রিটিশরা ভারতীয় উপমহাদেশের আনাচে কানাচে পতিতালয় গড়ে তুলতে উৎসাহিত করে। কেন উৎসাহিত করেছিলো, সে আলোচনা অন্যত্র করা যাবে।

মুম্বাই নগরীর দক্ষিণ প্রান্তে কামাথিপুরায় বিশাল এলাকা নিয়ে ব্রিটিশ শাসকদের প্রত্যক্ষ মদদে গড়ে উঠেছিলো এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বড় পতিতালয়। এর খদ্দেরদের মধ্যে ছিলো ব্রিটিশ সৈনিক, দেশীয় রাজা-মহারাজা ও সমাজের বিত্তশালী লোকজন। সত্তর ও আশির দশকে কামাথিপুরা ছিলো মুম্বাই মাফিয়াদের একটি প্রিয় আস্তানা। কালের বিবর্তনে কামাথিপুরা আজ এক চরম দারিদ্র‍্যপীড়িত, ঘিঞ্জি এলাকায় রুপ নিয়েছে। ২০১৬ সালের রোজার ঈদে যখন এই লেখক মারাঠি সাংবাদিক বন্ধু রাজেশ শর্মাকে নিয়ে কামাথিপুরায় যান এর বাসিন্দাদের সাথে কথা বলার জন্য; তিনি দেখেন, নি:স্ব ও কপর্দকশূন্য অবস্থায় অল্প কয়েকজন নারী এই দেহ ব্যবসায় জড়িত। সেখানে সবাই বলাবলি করছিলো, আর কিছুদিনের মধ্যেই কামাথিপুরায় আর একজন বাসিন্দাকেও হয়তো পাওয়া যাবে না।

আমাদের আজকের লেখা যাকে নিয়ে, সেই গাঙ্গুবাঈ ছিলেন এই কামাথিপুরার সবার প্রিয় নেত্রী।

গাঙ্গুবাঈ কাতিয়াবাদী; source: naukrinama.com

রুপালী পর্দার স্বপ্ন ছেড়ে কামাথিপুরার কঠিন বাস্তবে

গুজরাট রাজ্যের এক অতিশয় সম্ভ্র্রান্ত ও অভিজাত পরিবারে জন্ম হয় গঙ্গা হরজীবনদাস কাতিয়াবাদীর। সেই চল্লিশের দশকে তাদের পরিবারে মেয়েদের সিনেমা দেখার সুব্যবস্থা ছিলো। হিন্দি সিনেমা দেখে স্কুলের বান্ধবীদের প্রিয় গঙ্গার মন উতলা হয়ে উঠতো বোম্বে নগরীর জন্য। পড়াশোনায় মন বসতো না তার। সে স্বপ্ন দেখতো, সে-ও হবে হিন্দি সিনেমার নায়িকা, নায়কের সাথে গান গাইবে আর নাচবে।

ঠিক তখনই তাদের পরিবারে আগমন ঘটে ২৮ বছরের এক যুবকের, যে কিনা তার পিতার ফার্মে অ্যাকাউন্টেন্ট হিসেবে কাজ করতে এসেছে। গঙ্গা জানতে পারলো, রামলাল নায়েক নামে তামিল এই যুবক অতীতে বোম্বে নগরীতে কাজ করতো। গঙ্গা রামলালকে সামনে পেলেই জিজ্ঞেস করতো বোম্বে নগরী কেমন, সে সিনেমা দেখে কিনা ইত্যাদি। রামলাল বোম্বে নগরী সম্পর্কে তাকে জ্ঞান দেওয়ার চেষ্টা করতো। অচিরেই গঙ্গা রামলালকে জানালো, বোম্বে নগরী দেখার খুব শখ তার। সে নায়িকা হতে চায়। ধীরে ধীরে গঙ্গা রামলালের সাথে ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়লো। তাদের ঘনিষ্ঠতা ভালোবাসায় রুপ নিলো। বাড়ির বাইরে তারা দুজন একান্তে দেখা করতো। রামলাল বললো, গঙ্গাকে কে সে মুম্বাই নিয়ে যাবে। কারণ, সিনেমায় কাজ করে এমন কিছু লোকের সাথে তার পরিচয় আছে, যারা গঙ্গাকে নায়িকা বানাতে সাহায্য করবে।

শত শত বছর ধরে কামাথিপুরার চিত্রটা একই; source: bhindibazaar.asia

একে তো রামলালের সাথে তার গভীর প্রেমের সম্পর্ক, অন্যদিকে সিনেমার নায়িকা তাকে হতেই হবে- এই দুই ইচ্ছাকে মাথায় নিয়ে গঙ্গা মুম্বাই যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে লাগলো। গঙ্গা জানতো, রামলালের সাথে বিয়ে কিংবা ফিল্মের নায়িকা হওয়া- কোনোটাই তার রক্ষণশীল পরিবার মেনে নেবে না। তাই তারা মুম্বাই পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো।

কাতিয়াবাদের ছোট এক মন্দিরে বিয়ে করে গঙ্গা আর রামলাল মুম্বাই পাড়ি দিলো। তারা এখন স্বামী-স্ত্রী। মুম্বাই নগরীতে কয়েকটি দিন স্বপ্নের মতো কাটলো তাদের। গঙ্গা তার মায়ের গহনা এবং কিছু নগদ টাকা চুরি করে সাথে নিয়ে এসেছিলো। টাকাগুলো ফুরিয়ে যেতেই তাদের রোমান্টিক জগতের ইতি ঘটলো।

এবার রামলাল তাকে প্রস্তাব দিল, তুমি আমার এক মাসীর কাছে কয়েকটা দিন থাকো। আমি আরেকটা সস্তা দেখে রুম খুঁজে নেই এই ফাঁকে। আগে তো কোনোদিন রামলাল তাকে মাসীর কথা বলেনি, তাহলে হঠাৎ কেন মাসীর কথা আসলো; ভাবনা উদয় হলো গঙ্গার মনে। তবুও সে রাজি হলো।

কামাথিপুরা; source: petersbigadventure.com

কিছুক্ষণ পর রামলাল একটা ট্যাক্সি ভাড়া করে কথিত সেই মাসীর কাছে গঙ্গাকে নিয়ে গেলো। শীলা মাসী নামক সেই নারীর উগ্র বেশভূষা আর সারাক্ষণ পান চিবানো দেখে গঙ্গার খুব খারাপ লাগলো। যে গলি দিয়ে শীলা মাসীর বাসায় গেলো তারা দুজন, সে গলিতে অজস্র অর্ধনগ্ন মেয়ে দেখে গঙ্গা থমকে দাঁড়ালো। শীলা মাসীর কাছে গঙ্গাকে রেখে রামনায়েক চলে গেলো এখান থেকে। গঙ্গাকে বলে গেল, একটু পরেই সে আসছে।

শীলা মাসী গঙ্গার হাবভাব দেখে টের পেয়ে বললো, “আরে বেটি, মুম্বাইয়ের মেয়েরা এরকম খোলামেলা পোশাক পরেই থাকে। সেদিকে নজর দিয়ো না।”
“এ জায়গার নাম কি?” গঙ্গা প্রশ্ন করলো।
– কামাথিপুরা। তুমি কি এর নাম আগে শুনেছ?
– না।
– এখানেই আমি থাকি। আর ভালো কথা, এখন থেকে তুমিও আমাদের সাথে থাকবে।
– না, এখানে আমি থাকবো না। আমি কালকেই এখান থেকে চলে যাব

গঙ্গা দেখলো, সবাই তার দিকে কৌতুহলী দৃষ্টি নিয়ে তাকাচ্ছে। খুব খারাপ লাগছিলো তার। এ কোন জায়গায় নিয়ে আসলো তাকে রামলাল!

শীলা মাসী তাকে একটি রুমে নিয়ে গিয়ে বললো- “কাপড়-চোপড় পাল্টাও আর ফ্রেশ হয়ে নাও।”
– না, আমি কাপড়চোপড় পাল্টাবো না। আমি কালকেই এ জায়গা থেকে চলে যাব।
এবার শীলা মাসী বলতে লাগলো- “এসব নাটক আমি আর করতে পারবো না। আমি আর কোনোকিছু লুকাতে পারব না। মনে রেখো, আমি রামলালের মাসী নই। আমি এই কামাথিপুরার পতিতালয় চালাই। এখানকার সব মেয়ে আমার অধীনস্ত।”
একেবারে থ হয়ে গেল গঙ্গা। তবুও সে বললো, “কিন্তুু আমি এখানে কেন থাকবো?”
– রামলাল তোমাকে আমার কাছে ৫০০ রুপির বিনিময়ে বিক্রি করে দিয়েছে। সে আর আসবে না তোমাকে নিতে, আর আমি তোমাকে এখান থেকে যেতে দেব না।
চিৎকার করে উঠল গঙ্গা, “রামলাল আমার সাথে এরকম করতে পারলো! আমি কিছুতেই এখানে থাকবো না।”
– চিৎকার করে কী লাভ বলো গঙ্গা। আমি জানি তুমি খুব ভালো পরিবারের মেয়ে, কিন্তুু তোমার স্বামীই তোমাকে আমাদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। তুমি কি তোমার পরিবারের কাছে আর আশ্রয় পাবে? তোমার এলাকার লোক যদি জানতে পারে, তুমি কামাথিপুরার পতিতালয়ে এসেছিলে, তাহলে কি তোমাকে ভালো চোখে দেখবে কেউ?

কিন্তুু গঙ্গা নাছোড়বান্দা। কয়েকবার পালানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হলো সে। অবশেষে নিয়তির কাছে নিজেকে সমর্পণ করে দিতে বাধ্য হলো সে। যেহেতু এক লম্পটের হাতে পড়ে তার জীবন শেষ হয়ে গেছে, এখন আর কেঁদেকেটে কী লাভ হবে। আর আসলেই তো তার পরিবারের কাছে মুখ দেখাতে পারবে না সে। এক সপ্তাহ পর শীলা মাসীর কাছে গঙ্গা আত্মসমর্পণ করলো। শীলা মাসীর কাছে তার নাম পরিবর্তন করে বললো গাঙ্গু। নিজের এলাকা কাতিয়াবাদী যোগ করে এই গাঙ্গুই হয়ে উঠল কামাথিপুরার ইতিহাসের সবচেয়ে প্রভাবশালী নারী গাঙ্গুবাঈ কাতিয়াবাদী। সিনেমার নায়িকা হতে গিয়ে এক কিশোরীর জায়গা হলো পতিতালয়ের আস্তাকুঁড়ে।

কত নারীর স্বপ্নের সমাধি এই কামাথিপুরা; source: bhindibazaar.asia

গাঙ্গুবাঈ যখন ঘরছাড়া মেয়েদের নিরাপদ আশ্রয়

যেহেতু গাঙ্গুবাঈ ছিলো তুলনামূলকভাবে একটু শিক্ষিত ও অভিজাত পরিবারের সন্তান, অচিরেই কামাথিপুরার অন্য মেয়েরা তাকে সমীহ করতে লাগলো। পতিতালয়ের বাসিন্দাদের মধ্যে নেতা নির্বাচনের জন্য নির্বাচন হতো, যাকে বলা হতো ঘরওয়ালী নির্বাচন। বিপুল সমর্থন নিয়ে গাঙ্গুবাঈ ঘরওয়ালী নির্বাচনে জিতে কামাথিপুরার সর্দারনী বনে গেলো খুব অল্প সময়ের মধ্যেই। স্বয়ং শীলা মাসী গাঙ্গুবাঈকে ভয় পেতে লাগলো।

মুম্বাই আন্ডারওয়ার্ল্ডের পাঠান মাফিয়াদের সর্দার করিম লালাকে রাখি পড়িয়ে ভাই বানিয়ে গাঙ্গুবাঈ নির্বিঘ্নে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করলো কামাথিপুরায়। গাড়ি, বাড়িরও মালিক হয়ে গেলো সে। কিন্তুু এতসবের ভিড়েও গাঙ্গুবাঈয়ের সেই কিশোরী মনটার পরিবর্তন হয়নি। যখনই কোনো নতুন মেয়ে কামাথিপুরায় আসতো, গাঙ্গুবাঈ কখনো তাকে জোর করতেন না। এমনও হয়েছে, কোনো মেয়ে এখানে থাকতে রাজি না হলে গাঙ্গুবাঈ নিজ খরচে তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিতেন।

সেই জাঁকজমক আর নেই; source: jaideepv.blogspot.com

প্রেসিডেন্ট অব কামাথিপুরা!

ষাট ও সত্তর দশক জুড়ে গাঙ্গুবাঈয়ের এই নেতৃত্বে নিরাপদ থেকেছে কামাথিপুরার বাসিন্দারা। গাঙ্গুবাঈ প্রকাশ্যে সমর্থন করতেন পতিতালয়ের প্রয়োজনীয়তাকে। তিনিই কামাথিপুরার বাসিন্দাদের নাগরিক অধিকার আদায়ে আন্দোলন করতেন। একবার মুম্বাই নগরীর বিখ্যাত আজাদ ময়দানে হাজার হাজার দেহকর্মীদের সম্মেলনে তাকে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখার অনুরোধ করা হয়। গাঙ্গুবাঈয়ের অগ্নিঝরা বক্তব্য পুরো ভারত জুড়েই আলোড়ন তুলেছিলো। তাকে পরিচয় দেওয়া হয়েছিলো এই বলে যে, এখন বক্তব্য দেবেন ‘প্রেসিডেন্ট অব কামাথিপুরা’! মাইক হাতে নিয়ে গাঙ্গুবাঈ বলতে লাগলেন,

“ভারতের অনেক শহরের তুলনায় মুম্বাই অনেক নিরাপদ। মহিলাদের যৌন হয়রানির ঘটনা এখানে ঘটে না বললেই চলে। এই কৃতিত্বের পুরো দায়ভার সিটি করপোরেশনের নয়, কামাথিপুরার যৌনপল্লীরও এতে অবদান আছে। দেশের জওয়ান সৈনিকরা যেমন যুদ্ধক্ষেত্রে লড়াই করে আমাদের শান্তির জন্য, ঠিক তেমনি আমরা পতিতালয়ের বাসিন্দারা নিজের সাথে প্রতি মুহুর্তে লড়াই করে চলেছি। কেন সৈনিকেরা পুরস্কৃত হবে, আর পতিতাদের কপালে জুটবে লাঞ্চনা আর অপমান? উত্তর দিন! আমি জানি কারো কাছে এর উত্তর নেই। হায়দারাবাদের মতো প্রাচীনপন্থী নগরে যদি পতিতালয়কে আদর করে ডাকা হয় ‘মেহবুব কি মেহেন্দি’, তাহলে মুম্বাইতে কেন পতিতাদের কপালে জুটবে ঝাঁটার বাড়ি? মনে রাখবেন, আমরা সবাই বাড়িতে টয়লেট রাখি এজন্য যে, বাড়িটার সর্বত্র যাতে দুর্গন্ধ না ছড়ায়। ঠিক তেমনি প্রত্যেক শহরে পতিতালয় দরকার আছে, যাতে করে শহরের পরিবেশ যত্রতত্র নোংরা না হয়।”

পরদিন পুরো ভারতের বহু পত্রিকার হেডলাইনে গাঙ্গুবাঈয়ের ভাষণ প্রকাশিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী নেহেরুর সাথে বৈঠক

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নেহেরুর সাথে গাঙ্গুবাঈয়ের সাক্ষাত ছিলো অত্যন্ত চমকপ্রদ ঘটনা। কামাথিপুরা সংলগ্ন একটি বালিকা বিদ্যালয় ছিলো। ষাটের দশকে বালিকা বিদ্যালয়ের অভিভাবকবৃন্দ এই পতিতালয় উচ্ছেদের জন্য তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলেন। গাঙ্গুবাঈয়ের নেতৃত্বে কামাথিপুরার বাসিন্দারা রাস্তায় নামে তাদের জীবিকা টিকিয়ে রাখার জন্য। তাদের যুক্তি ছিলো, কামাথিপুরা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার বহু পরে বিদ্যালয় হয়েছে। প্রতিষ্ঠাতারা তখন কেন এখানে বিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন? এখন কিছুতেই পতিতালয় উচ্ছেদ করা যাবে না। দরকার হলে বিদ্যালয় উচ্ছেদ হবে।

মুম্বাইয়ের একপাশে আলো, অন্যপাশে আঁধার; source: bhindibazaar.asia

এই টালমাটাল পরিস্থিতিতে নেহেরুর সাথে সাক্ষাতের আবেদন করে তাদের দাবি দাওয়া পেশ করতে উদ্যত হন গাঙ্গুবাঈ। নিজের ব্ল্যাক বেন্টলি গাড়িতে করে নেহেরুর মুখোমুখি হন তিনি নয়াদিল্লীতে। গাঙ্গুবাঈয়ের বাচনভঙ্গি দেখে মুগ্ধ নেহেরু তাকে বললেন,

“কেন তুমি এই নোংরা কাজের সাথে জড়িয়ে আছ? তুমি কি এসব থেকে বেরিয়ে এসে একটা ভালো কিছু করতে পারো না?”

গাঙ্গুবাঈ উত্তর দিলেন,

“আমি এ কাজ ছাড়তে রাজি আছি যদি আপনি আমাকে বিয়ে করে স্ত্রীর মর্যাদা দেন। এর চেয়ে ভালো নিশ্চয়ই আর কিছু হতে পারে না?”

ভয়ানক ক্রুদ্ধ হয়ে নেহেরু তাকে বললেন,

“তোমার সাহস তো কম না? আমার সামনে এসব কথা বলো?”

বিনীত গাঙ্গুবাঈ উত্তর দিলেন,

“রাগ করবেন না প্রধানমন্ত্রীজী, আমি শুধু আপনার প্রতিক্রিয়াটা দেখতে চেয়েছিলাম। এখন বুঝলেন তো, উপদেশ দেওয়া কতো সহজ, আর উপদেশ বাস্তবায়ন করা কত কঠিন!”

মিটিং সফল হলো। পতিতালয় উচ্ছেদ হলো না। স্কুল অন্যত্র সরে গেলো।

আজ কামাথিপুরার সেই জৌলুশ নেই। নেই কুখ্যাত মাফিয়াদের আনাগোনা। তাই বলে কি দেহব্যবসা থেমে গেছে মুম্বাইয়ে? কখনোই না। কলকাতার মিডিয়ার ভাষায়, বদ্ধ পতিতালয় পরিবর্তিত হয়ে গেছে মধুচক্র, এসকর্ট সার্ভিস, রুম ডেলিভারি ইত্যাদি বাহারি নামে।

চলছে জীবন কামাথিপুরায়; source: jaideepv.blogspot.com

আর নেই গাঙ্গুবাঈ কাতিয়াবাদী। সত্তর দশকের শেষে তিনি মারা যান। তবে কামাথিপুরার যে মুষ্টিমেয় কিছু বাসিন্দা আছে, তাদের ঘরে ঘরে আছে গাঙ্গুবাইয়ের প্রতিকৃতি। তিনশো বছর যাবত কত মেয়ের চোখের জলে ভিজলো কামাথিপুরার অলিগলি, কে তার খবর রাখে? কিন্তুু গাঙ্গুবাঈ অম্লান।

ফিচার ইমেজ- indiatimes.com

Related Articles