Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

যেভাবে এলো আজকের অ্যাকশন ক্যামেরা

সর্বপ্রথম কে, কোথায়, কখন অ্যাকশন ক্যামেরা তৈরি করেছিল, তা নিশ্চিত করে বলার তেমন একটা সুযোগ না থাকলেও, হেলমেটের সাথে সংযুক্ত ক্যামেরার মাধ্যমে ফার্স্ট পার্সন ভিউ’তে ফটোগ্রাফি এবং ভিডিওগ্রাফির ইতিহাসটা যে সেই ১৯৬০ দিকে শুরু হয়েছিল, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বর্তমানে প্রায় সবার হাতে হাতে থাকা ছোট আকৃতির ডিজিটাল ক্যামেরাটি তখন অবশ্য বিভিন্ন রকমের একক প্রকল্পে ব্যবহারের জন্য কলা-কৌশলীদের হাতে নির্মিত হতো। সেই সময় ফটোগ্রাফার, ভিডিওগ্রাফারেরা তাদের ফটোগ্রাফ এবং ফিল্মগুলোকে দর্শকদের কাছে আরো ভাবোদ্দীপক এবং অকৃত্রিম করে তুলতে সচরাচর ব্যবহৃত পদ্ধতিতে না গিয়ে স্বতন্ত্র কিছু পদ্ধতির উদ্ভাবন করতেন।

সেসকল উদ্ভাবকের মাঝে ফার্স্ট পার্সন ভিউ নিয়ে কাজ করা প্রথম ব্যক্তি সম্ভবত বব সিনক্লেয়ার। সহকর্মীদের কাছে ‘প্যাসুটিং গড’ খ্যাত মানুষটি ১৯৬১ থেকে ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত প্রচারিত স্কাই-ডাইভিং টিভি সিরিজ ‘রিপকর্ড’ এর দায়িত্ব পাওয়ার পর দর্শকদের কাছে স্কাই-ডাইভারদের আরো বেশি বাস্তব করার লক্ষ্যে ভিডিওগুলোকে ফার্স্ট পার্সন দৃষ্টিকোনে ধারণ করার উপায় খুঁজতে থাকেন। তিনি চাইছিলেন দর্শকরাও যেন স্কাই ডাইভিং জাম্পগুলো অনুভব করতে পারেন। তাদের কাছে যেন পুরো ব্যাপারটা আরো বেশি অকৃত্রিম মনে হয়।

ফাইবারগ্লাস হেলমেটের সাথে ক্যামেরা স্থাপন করে ফার্স্ট পার্সন ভিউ’তে ফুটেজ গ্রহণের প্রাথমিক সমাধান; Image Source: Mark Platt

প্রাথমিক অবস্থায় সমাধান হিসেবে হাতে ক্যামেরা নিয়ে কাজ করার চিন্তা থাকলেও পরে দেখা যায়, এটি স্কাই ডাইভারদের জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ তো বটেই, সেই সাথে প্রচুর কম্পমান এবং বিক্ষেপী ফুটেজ পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তাই তিনি অনেক ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্তে আসেন, হেলমেটের উপর কোনোভাবে যদি ক্যামেরা স্থাপন করা যায়, তাহলে উপরোক্ত সমস্যাগুলো তো থাকছেই না, সেই সাথে স্কাই ডাইভাররা যেভাবে নিচের পৃথিবীকে অবলোকন করেন, দর্শকরাও সেভাবে অবলোকন করার সুযোগ পাবেন।  

হেলমেট ক্যামেরা পরিধানরত অবস্থায় প্যারাসুটিং কালে বব সিনক্লেয়ার; Photo credit: parachutistonline.com

হেলমেটের সাথে ক্যামেরা স্থাপন করে ফার্স্ট পার্সন ভিউতে ফুটেজ নেওয়ার ধারণাটা সিনক্লেয়ারকে নানা ভাবে পরীক্ষা করার সুযোগ দেয়। তিনি তার জাইরো-স্ট্যাবিলাইজড ক্যামেরাগুলো আমেরিকান সকার-হেলমেট, ফাইবারগ্লাস হেলমেটে বিভিন্নভাবে ব্যবহারে করে দর্শকদের জন্য বিভিন্ন ধরনের ফুটেজ ধারণের প্রক্রিয়াটা লম্বা সময় ধরে চালিয়ে যান।

এফ-ওয়ান ড্রাইভার জ্যাকি স্টুয়ার্ট হেলমেটে ফ্লিম ক্যামেরা স্থাপন করে ফার্স্ট পার্সন ভিউ’তে ছবি নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন; Image Source: kottke.org

বব সিনক্লেয়ারের পরপরই বিখ্যাত স্কটিশ এফ-ওয়ান ড্রাইভার জ্যাকি স্টুয়ার্টের নাম উঠে আসবে। তিনি তার ১৯৬৬ সালের বেলজিয়ান গ্র্যান্ড প্রিক্স রেসের প্রস্তুতির সময়কার ড্রাইভিংগুলোতে হেলমেটের সাথে নিকনের ফিল্ম ক্যামেরা স্থাপন করে ফটোগ্রাফির কাজটি করেছিলেন। যদিও হেলমেটের সামনে ফিল্ম ক্যামেরা স্থাপন করে ছবি উঠানোর ব্যাপারটি তেমন একটা আরামদায়ক ছিল না, তবে মানুষ যে সাধারণ অ্যাঙ্গেলে ধারণ করা ফটোগ্রাফ থেকে বাস্তববাদী, নাটুকে ফটোগ্রাফের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠেছিল, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

স্টিভেন ম্যাককুইন ডাক্ট টেপ পেচিয়েই হেলমেটে ক্যামেরা স্থাপনের কাজটি করেছিলেন; Image Source: Kotke.org

পুরো ব্যাপারটিতে আরেকটু মশলা ঢালতেই যেন সত্তরের দশকের জনপ্রিয় আমেরিকান অভিনেতা স্টিভেন ম্যাককুইন ‘Le Mans’ ছবিতে কার রেসিংয়ের সময় ফার্স্ট পার্সন ভিউ’তে ফুটেজ নেওয়ার জন্য হেলমেটের সাথে ডাক্ট টেপ পেচিয়ে ক্যামেরা স্থাপনের ব্যাপারটি সমাধান করেছিলেন।

ক্যাননের Ci-10 এর হাত ধরে নতুন চমক

পুরো ব্যাপারটিতে আরেকটু চমক আসে ১৯৮৫ সালে, যখন ক্যানন এক হাজার ডলার দামের Ci-10 ভিডিও ক্যামেরাটি বাজারে ছাড়ে। আকারে ছোট হওয়ার কারণে এটি সে সময় বেশ আকর্ষণের বিষয়ে পরিণত হয়েছিল। মাত্র ১০২ মি.মি. লম্বা, ৫৩ মি.মি. প্রশস্ত এবং ২৭ মি.মি. পুরুত্বের ক্যামেরাটির ওজন ছিল মাত্র ২৮৯ গ্রাম। ৩.৮ মেগাপিক্সেল এবং ১.৪× অপটিক্যাল জুমের Ci-10 নিয়ে সেসময় নিউ ইয়র্ক টাইমস তাদের একটি রিপোর্টে বলেছিল, “ছোট আকারের কারণে খুব সহজেই এটি নজরদারির ব্যাপারে তদন্তকারীদের সাহায্যে আসবে“। 

নিউ ইয়র্ক টাইমস যা-ই বলুক, ফার্স্ট পার্সন ভিউ, অ্যাকশন ফুটেজের উন্মত্ততার ভিড়ে মিশে যাওয়া ‘এরিয়াল ভিডিও সিস্টেম’ নামক একটি কোম্পানি ক্যাননের ছোট Ci-10 থেকে রিমোটলি মাইক্রোওয়েভ ট্রান্সমিট উপায় খুঁজে বের করে এবং ক্যামেরাটি মাউন্টেনিং মোটর সাইক্লিস্ট ড্রিক গার্সিয়ার হেলমেটে স্থাপন করে দেয়। ইতিহাসে ১৯৮৬ সালের ২৮ জুন ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ফার্স্ট পার্সন ভিউ’তে এবিসি টিভিতে স্পোর্স্ট অ্যাকশন ফুটেজ সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

ড্রিক গার্সিয়ার হেলমেটে স্থাপন করা ক্যাননের Ci-10 ক্যামেরার মাধ্যমে স্পোর্টস অ্যাকশন ফুটেজ প্রথমবারের মতো সরাসরি সম্প্রচার করা হয়; Image by VideoJoe/wikimedia

বর্তমানে ক্যানন, এরিয়াল ভিডিও সিস্টেম এবং অন্যান্য টেকনিক্যাল টিমের কেউ অবশ্য পুরো সিস্টেমটি কীভাবে কাজ করতো সেই ব্যাপারে কোনো নথিপত্র রাখেনি। তবে, সে সময় Ci-10 সবচাইতে বেশি সহজ সমাধান ছিল।

মার্ক শুল্টজ, প্রথমদিকের অ্যাকশন ক্যামেরার পথিকৃৎ

বব সিনক্লেয়ার, জ্যাকি স্টুয়ার্টের মতো আরো অনেকের নাম প্রাথমিক অবস্থায় উঠে আসলেও অ্যাকশন ক্যামেরার পথিকৃৎ হিসেবে মার্ক শুল্টজের নামটি বেশ ভালোভাবেই ইতিহাসে গেঁথে আছে। কেননা, ফার্স্ট পার্সন ভিউ’তে তার অবদান, আধুনিক অ্যাকশন ক্যামেরার পূর্বে একমাত্র তার করা ভিডিওগুলোই শুধু বর্তমানে পাওয়া যায় এবং ওগুলো নথিভুক্ত অবস্থায় রয়েছে।

মার্ক শুল্টজ এবং তার অ্যাকশন ক্যামেরা; Image Source: 

১৯৮৭ সালে মার্ক এবং তার বান্ধবী প্যাটি মনি ‘দ্য গ্রেট মাউন্টেন বাইকিং ভিডিও’ নামের একটি ভিডিও ডকুমেন্টরি প্রকল্পে হাত দেন। সেই সময় পূর্বে উল্লেখিত সবার মতো মার্কও হেলমেটে ক্যামেরা স্থাপন করে ফার্স্ট পার্সন ভিউ’তে ফুটেজগুলো নিয়েছিলেন। তিনি তার হেলমেটে একটি ভিডিও হোম সিস্টেম (VHS) ক্যামেরা আরসিএ (RCA) ক্যাবলের মাধ্যমে ব্যাকপ্যাকে রাখা ভিসিআরের (VCR) সাথে যুক্ত করে কাজটি করেছিলেন। যদিও এ ধরনের সেটআপ নিয়ে মাউন্টেন বাইকিং বেশ কষ্টসাধ্য ছিল, কিন্তু তিনি পুরো ব্যাপারটি বেশ ভালোভাবেই পরিচালনা করেছিলেন।

ক্রিটারক্যাম

বর্তমানে অনেকেই মজা করে পালিত কুকুর, বিড়ালের পিঠে অ্যাকশন ক্যামেরা বেধে ফুটেজ নিয়ে থাকে। কেউ কেউ আবার একধাপ এগিয়ে ইন্টারনেটে সংযুক্ত অ্যাকশন ক্যামেরা ঈগলের পিঠে বেধে ‘ঈগল-আই ভিউ’ এর মতো অত্যাশ্চর্য ফুটেজ ক্যাপচার করার কাজটিও করে ফেলেছে। ঠিক একই কাজটি হতো ‘ক্রিটারক্যাম’ দিয়ে।

১৯৮৬ সালে ন্যাশনাল জিওগ্রাফির মেরিন বায়োলজিস্ট এবং ভিডিওগ্রাফার গ্রেগ মার্শাল সর্বপ্রথম ক্রিটারক্যামের সাথে বিশ্বকে পরিচয় করিয়ে দেন। ক্রিটারক্যাম মূলত দ্রুত গতিবিধি ধারণ করতে পারে এমন একটি ক্যামেরার সাথে আরো কিছু ইকুইপমেন্টের একটি প্যাকেজ। ক্যামেরাটি কোনো একটি বন্যপ্রাণীর শরীরে এমনভাবে ঝুলিয়ে দেওয়া হতো, যাতে বন্য পশুদের কাছে না গিয়ে, তাদের বিরক্ত না করেও তাদের আচরণবিধির দিকে নজর রাখা যায়, তাদের জগত সম্পর্কে আরো বেশি জানা যায়।

লিপস্টিক আকৃতির ক্যামেরা: দর্শকদের মনে হয় তারাও মাঠে খেলছে

১৯৯১ সাল, চারদিকে হেলমেট ক্যামেরার জয়জয়কার। ঠিক সেই সময় একই আইডিয়া; অর্থাৎ ফার্স্ট পার্সন ভিউ’তে ফুটেজ নেওয়ার ব্যাপারটির উপর ভিত্তি করে ক্রীড়া-প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করা উদ্ভাবকেরা ভাবলো, “কেমন হবে যদি বাড়িতে বসে টেলিভিশনে খেলা দেখতে দেখতেও দর্শকরা মাঠে খেলার অনুভূতি পায়?

যেই ভাবা, সেই কাজ। আইডিয়াটি বাস্তবায়ন হলো ৯/১৬ ইঞ্চি ব্যাসের লিপস্টিক আকৃতির ক্যামেরার সাহায্যে। লম্বায় ২ ইঞ্চি আকারের ক্যামেরাটি রিডেলের VSR-3 হেলমেটের মধ্যে খেলোয়াড়দের ডান কানের জায়গায় স্থাপন করা হতো। হেলমেটের পেছনের দিকে সম্ভাব্য ১/৮ – ৩/১৬ ইঞ্চি পুরুত্বের একটি অ্যান্টেনা সংযুক্ত ছিল, যেটি সরাসরি প্রোডাকশন ট্রাকগুলোতে সরাসরি ফুটেজ প্রেরণ করতো। ব্যাটারি, ট্রান্সমিটার স্থাপনের কাজটিও হয়েছিল খেলোয়াড়দের জার্সির কাঁধের প্যাডে, যার কারণে ক্যাবল আনপ্লাগ করা, নিরাপদে হেলমেট খোলার জন্য খেলোয়াড়দের দ্বিতীয় ব্যক্তির সাহায্যের প্রয়োজন হতো। 

আমেরিকান-ফুটবল খেলোয়ারদের হেলমেটে লিপস্টিক আকৃতির ক্যামেরা; Image Source:  worldleagueofamericanfootball.com

যদিও পুরো ব্যাপারটি বেশ আকর্ষণীয় ছিল, কিন্তু প্রতি ইউনিট ক্যামেরার জন্য গুণতে হতো প্রায় বিশ হাজার ডলার। তাই প্রোডাক্টটি প্রাথমিক অবস্থা থেকে সর্বস্তরে জনপ্রিয়তা পায়নি। বর্তমানে অবশ্য প্যানাসনিকের HX-A1 সহ বেশ কয়েকটি কোম্পানি লিপস্টিক আকৃতির ক্যামেরা তৈরি করে থাকে।

গোপ্রো: সমস্যার সবচাইতে ব্যবহারযোগ্য সমাধান

বেশ কয়েক যুগ ধরে ফার্স্ট পার্সন ভিউ’তে অ্যাকশন ফুটেজ ক্যাপচারের যে প্রক্রিয়া চলে আসছিল, তার সবচাইতে ব্যবহারযোগ্য, সহজ সমাধানটি এসেছিল ২০০২ সালে নিক ওডম্যানের হাত ধরে। বর্তমানে পৃথিবীব্যাপী সবচাইতে বেশি জনপ্রিয় ‘গোপ্রো (GoPro)’ নামের কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা-প্রধানের কাছে পুরো আইডিয়াও এসেছিল হঠাৎ করেই, ইন্দোনেশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ার উপকূলবর্তী এলাকায় ঘুরতে ঘুরতে। একটি ৩৫ মি.মি. রেঞ্জের ক্যামেরা হাতের তালুতে রাবার দিয়ে বেধে সার্ফিং করার সময় ছবি তুলতে তুলতেই নিকের মনে হয়েছিল, কেমন হবে যদি ক্যামেরাগুলো ওয়াটারপ্রুফ হয় এবং সহজেই সার্ফারদের শরীরের আটকে রাখা যায়? দামে বেশি হওয়ায় সে সময় শুধুমাত্র প্রফেশনাল ফটোগ্রাফারদেরই ওয়াটারপ্রুফ ক্যামেরা ব্যবহারের সামর্থ্য ছিল। তাই নিকের লক্ষ্য ছিল ক্যামেরার মূল্যসীমা যাতে সর্বস্তরের জনগণের সামর্থ্যের মধ্যে থাকে।

প্রাথমিক অবস্থায় নিক একটি ‘কব্জি বন্ধনী’ নিয়ে কাজ করেন, যেটি খুব সহজেই যেকোনো ক্যামেরাকে হাতের কব্জির সাথে আটকে রাখতে সক্ষম। কিন্তু সার্ফিংয়ের মতো কঠিন কীর্তিকলাপকালে প্রায় অধিকাংশ ক্যামেরাই ভেঙে যেত। তাই তার দরকার ছিল এমন একটি ক্যামেরা খুঁজে বের করা যেটি খুব সহজেই কব্জির সাথে আটকানো যায় এবং সার্ফিংকালে সহজে ব্যবহারযোগ্য। প্রায় দুই বছর নানা দিকের জল ঘেঁটে তিনি অবশেষে এমন একটি চীনা কোম্পানির সন্ধান পান, যেটি তার প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী ক্যামেরা তৈরি করে দিতে সক্ষম। ২০০৪ সালে ‘গোপ্রো হিরো ০০০১’ ক্যামেরাটি বাজারে আসে। আর এভাবেই নিক ওডম্যানের হাত ধরে অ্যাকশন ক্যামেরার নতুন যুগের সূচনা হয়।

‘গোপ্রো হিরো ০০০১’ অ্যাকশন ক্যামেরার প্রোটোটাইপ হাতে নিক ওডম্যান; Image by GoPro

সে সময় ক্যামেরাটিতে আজকের গোপ্রোর মতো এত ফাংশনালিটি তো দূরের কথা, ভিডিও ফুটেজ নেওয়ার সক্ষমতাও ছিল না। ৩৫ মি.মি. কোডাক ফিল্মের ক্যামেরাটির সাথে একটি ওয়াটারপ্রুফ কেস এবং কব্জি বন্ধনী দেওয়া হতো। মাত্র ২০০ গ্রামের ক্যামেরাটি পানির নিচে সর্বোচ্চ ১২ ফুটের মতো কভারেজ দিত, রঙিন এবং সাদা-কালো যেকোনো ধরনের ৩৫ মি.মি. ফিল্ম ব্যবহার করা যেত এতে। মাত্র ২০ ডলারের মূল্যসীমার কারণে প্রায় সর্বস্তরের মানুষের কাছে এটি বেশ জনপ্রিয় ছিল।

২০০৬ সালে ‘গোপ্রো ডিজিটাল হিরো’ বাজারে আসে। সর্বোচ্চ ১০ সেকেন্ডের রেকর্ডিং করার সক্ষমতা সহ ০.৩ মেগাপিক্সেলের অ্যাকশন ক্যামটিতে ছিল ৩২ মেগাবাইট ইন্টারনাল স্টোরেজ। আর সবচাইতে আকর্ষণীয় ব্যাপারটি ছিল ১০ সেকেন্ডের সেলফ-টাইমারের ফিচারটি। এর পরের বছরেই, ২০০৭ সালে আনলিমিটেড ব্যপ্তিকালের ভিডিও রেকর্ডিংয়ের সক্ষমতা নিয়ে ‘ডিজিটাল হিরো ৩’ বাজারে আসে এবং হঠাৎ করেই অ্যাকশন ক্যামেরার ধারণায় পরিবর্তন এনে দেয়।

প্রথম গোপ্রো অ্যাকশন ক্যামেরা; Image Source: nofilmschool.com

বর্তমানে গোপ্রোর বাতলে দেওয়া পথ ধরে প্রযুক্তি-পণ্য নিয়ে কাজ করা বড় বড় কোম্পানিগুলো অ্যাকশন ক্যামেরা তৈরির দিকে ঝুঁকছে। গ্রাহকদের সন্তুষ্টির উপর দৃষ্টি রেখে এমন সব ফিচার নিয়ে হাজির হচ্ছে, যা এক যুগ আগেও কল্পনাও করা যেত না। তবে মাউন্টেন বাইকিং, উত্তাল সমুদ্রে সার্ফিং, শুধুমাত্র প্যারাসুটের উপর নির্ভর করে হাজার হাজার মিটার উপর থেকে লাফ দেওয়ার সময় ধারণকৃত রক্ত হিম করা ভিডিও ফুটেজগুলো হয়তো কখনোই পাওয়া যেত, যদি না বব সিনক্লেয়ার, জ্যাকি স্টুয়ার্ট, মার্ক শুল্টজ কিংবা নিক ওডম্যানের মতো উদ্ভাবনী মানুষগুলো নিজেদের সমস্যাগুলো সমাধানের কাজে মাঠে না নামতেন।

ফিচার ছবি: TechRadar

Related Articles