Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ব্রিটেনের রাজকীয় শোক যাপনের পোশাক

ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে বিগত ৫০০ বছর ধরে শেষকৃত্যানুষ্ঠানে কালো রঙের পোশাকই শোকের প্রতিশব্দ। কখনও শেষকৃত্যানুষ্ঠান, কখনও স্মরণসভা, আবার কখনও প্রিয়জনের প্রস্থানের পরবর্তী নির্দিষ্ট কিছু দিন পোশাকে কালো রঙের আধিক্যই বজায় আছে। বস্তুত অভিজাত সম্প্রদায়ের মানুষদের শোক প্রকাশের মৌলিক উপায় হিসেবে ব্যাপক পরিচিত হলেও ক্রমেই কালো রঙের পোশাক সর্বসাধারণের হয়ে উঠেছে। আর্থসামাজিক গণ্ডির বাইরে গিয়ে আভিজাত্য এবং বিত্ত-বৈভবের যে গরিমা, তাকে অনুকরণ করাই এর কারণ। শোকের পোশাক হিসেবে কালো রঙের একটা সামাজিক তাৎপর্য আছে।

স্পেনের মার্গারিটা টেরেসার গায়ে শোকের পোশাক; Image Source: bellatory.com

মধ্যযুগে স্পেনের ধনাঢ্য ব্যবসায়ীরা কালো মখমল পরিধান করতেন, কারণ তখন কালো রঙের চড়া দাম ছিল। তারা যে বণিক শ্রেণি হিসেবে সামাজিক স্তরবিন্যাসে বিশেষ মর্যাদার অধিকারী, সেটা বোঝাতেই তারা এই পথ বেছে নিতেন। যুক্তরাষ্ট্রে বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে বিটনিকরা কালো রঙের পোশাক পরিধানে অভ্যস্ত ছিল, নিজেদের আলাদা হিসেবে চিত্রায়িত করার উদ্দেশ্যে। প্রচলিত সংস্কৃতির বিরুদ্ধে প্রতি-সংস্কৃতিই ছিল এর একমাত্র উদ্দেশ্য। বিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে গোথ সম্প্রদায়ের সদস্যরাও কালো পরতেন, তবে তারা সকলেই তরুণ প্রজন্মের ছিলেন। 

শোকের পোশাকের রঙ যখন কালো

সাধারণ পোশাকের বাইরে গিয়ে কালো রঙের শুধু শোকের চিহ্ন হয়ে ওঠার গল্পটা ভিন্ন রকম। মধ্যযুগে এর চর্চা শুরু হয়। মৃতদেহ বহন করে নিয়ে যাওয়ার সময় যে শোভাযাত্রা হতো, সেটি চিহ্নিত করাই ছিল এর লক্ষ্য। শেষকৃত্যানুষ্ঠানের সময় মৃতদেহের অব্যবহিত পরেই থাকতেন মৃতের আপনজনরা। শোভাযাত্রার বাকি অংশে যথাক্রমে থাকতেন সামরিক বাহিনীর সদস্য এবং ব্যবসায়ীরা। বিধবা নারীদের তখন বাধ্যতামূলকভাবে কালো পরতে হতো, স্বামী হারানোর বেদনা প্রকাশের অংশ হিসেবে। জাতীয় শোক দিবস কিংবা কোনো গণ্যমান্য ব্যক্তি মারা গেলে তখন অভিজাত সম্প্রদায়ের সদস্যরা কালো রঙের পোশাক পরিধান করতেন একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত

মধ্যযুগের এ সময়টাতে শোকের পোশাকের রঙ হিসেবে কালোকে বেছে নেওয়ার অধিকার আর্থসামাজিক অবস্থানের সাথে পুরোপুরিভাবে সম্পর্কিত ছিল। সামাজিক স্তরবিন্যাসে যারা কেবল উঁচু শ্রেণির লোক, তাদেরই শোকের পোশাক হিসেবে কালোকে বেছে নেওয়ার অধিকার ছিল। এমনকি জাতপাতের ভেদাভেদকে কঠোরভাবে চালু রাখতে এ বিষয়ে সুলিখিত নিয়মেরও প্রচলন করা হয়েছিল। মূলত কালো রঙের মূল্য নাগালের বাইরে থাকার কারণেই আর্থিক দিক থেকে যারা পিছিয়ে ছিলেন, তাদের পক্ষে শোকের এই পোশাক গায়ে চাপানো অসম্ভব ছিল।

আভিজাত্যের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিবাদ

অষ্টাদশ শতাব্দীতে পশ্চিম ইউরোপের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি জন্ম দিয়েছিল এক নতুন বণিক শ্রেণির। সামাজিক স্তরবিন্যাসে অর্থের মালিকানায় একটা বড় ধরনের রদবদল ঘটল। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির কারণে পোশাকের রুচির সাথে আভিজাত্যের যে সরাসরি ও নিবিড় সম্পর্ক ছিল, সেটি ধ্বসে যেতে শুরু করল। অর্থের সমাগমের দরুন ব্যবসায়ী মধ্যবিত্ত শ্রেণির উদ্ভব ঘটল এবং তারা ইতোপূর্বে যাদেরকে উচ্চবিত্ত বলে জেনে এসেছিল, তাদের অনুকরণ করা আরম্ভ করল।

শোকের পোশাকে রানী ভিক্টোরিয়া এবং তার সন্তানরা; Image Source: bellatory.com

আভিজাত্যের অংশ হওয়ার এই পরম প্রবণতা এত ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেল যে, পোশাকের রঙে এর স্পষ্ট এবং প্রত্যক্ষ প্রভাব দেখা গেল। অবশ্য মধ্যবিত্তের এ মনোভাবের কারণে তাদেরকে চড়া মূল্যও দিতে হয়েছিল। নব্য সৃষ্ট এই ব্যবসায়ী শ্রেণির সদস্যরা যতদিনে ক্রয়ক্ষমতা পেল, ততদিনে কিন্তু আভিজাত্যের একটি সংজ্ঞা নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল। অর্থাৎ মধ্যবিত্ত এ শ্রেণির হাতে অর্থ এলেও আভিজাত্য সেই অর্থে আসেনি তখনও। আভিজাত্যের সাথে ব্রাহ্মণ্যবাদী চেতনার একটি সাদৃশ্য ছিল। এই পূর্ব নির্ধারিত সংজ্ঞায়নের দরুন যারা বংশপরম্পরায় অভিজাত সমাজের সদস্য ছিলেন, তাদের উত্তরাধিকাররাই শুধু অভিজাত হিসেবে বিবেচিত, স্মরিত, বরিত, সম্মানিত হবেন। অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তনের মাধ্যমে কারও অভিজাত হয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না।

ব্রিটেনে শোকের পোশাকের চল

ইউরোপিয়ান সংস্কৃতিতে শোকের পোশাক হিসেবে কালো রঙের চল কিন্তু একেবারেই নতুন নয়। শতাব্দী জুড়ে শোকাবহ অনুষ্ঠানে কালো পোশাক পরিধানের চর্চা বেশ আগে থেকেই চালু থাকলেও এর জোয়ার এসেছিল ঊনবিংশ শতাব্দীতে রানী ভিক্টোরিয়ার প্রত্যক্ষ প্রভাবে। রানী তার নিজস্ব শৈলীর মাধ্যমে সমাজে একটি মাপকাঠি নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। ১৮৬১ সালে স্বামী মারা যাওয়ার পর তিনি যাবতীয় সকল উজ্জ্বল রঙের পোশাক বিসর্জন দিয়ে কালো রঙের পোশাক পরা শুরু করেন এবং রাজপরিবারের সাথে সংশ্লিষ্টরাও তাকে অনুসরণ করেন। ফলে, সারা দেশ জুড়ে কালো রঙের পোশাকের উৎপাদন, বিপণন, এবং বিতরণে অভাবনীয় পরিবর্তন আসে। 

রানীর মা, রানী, রাজকন্যা মার্গারেট অংশ নিচ্ছেন রাজা ষষ্ঠ জর্জের শেষকৃত্যানুষ্ঠানে; Image Source: tatler.com

 

১৯৩৮ সালে রাজ পরিবারের প্রথম ফ্রান্স ভ্রমণের আগে স্ট্র্যাথমোরের কাউন্টেস (রানী এলিজাবেথের মা) মারা যান। পরবর্তী তিন সপ্তাহের জন্য আদালত শোক পালন হবে ঘোষণা দিলে রাজ পরিবারের ফ্রান্স ভ্রমণ স্থগিত হয়ে যায়। এতে রানীর গ্রীষ্মকালীন ভ্রমণের জন্য পূর্ব নির্ধারিত সকল রঙিন পোশাক (রঙে উজ্জ্বল এবং ফুলেল নকশার) তখনকার শোকাবহ পরিস্থিতির সাথে বেমানান হয়ে পড়ে। জুন-জুলাইয়ের সে সময়টাতে উষ্ণ আবহাওয়ার জন্য কালো রঙের পোশাক পরাটাও সম্ভবপর ছিল না।

বাধ্য হয়েই রানীর পোশাকের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকা নরম্যান হার্টনেল একটি বিকল্প নিয়ে এলেন। তিনি স্কটল্যান্ডের রানী ম্যারির অভিরুচির সাথে সাদৃশ্য রেখে পোশাকে সাদা রঙের আধিক্যের প্রস্তাব করেন এবং সেটিই সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, রানী ভিক্টোরিয়াকেও সমাহিত করা হয়েছিল সাদা পোশাকেই। হার্টনেলের অসাধারণ একাগ্রতা ও নৈপুণ্যে দু’ সপ্তাহের মাঝেই রানীর অত্যাসন্ন ভ্রমণসূচির জন্য ৩০টি সাদা পোশাক প্রস্তুত হয়ে যায়।

১৯৮২ সালে রাজকন্যা গ্রেস অভ মোনাকোর শেষকৃত্যানুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন রাজকন্যা ডায়ানা; Image Source: tatler.com

১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাজা ষষ্ঠ জর্জ মারা যান। রানী এলিজাবেথ এবং প্রিন্স ফিলিপ তখন ব্যক্তিগত সময় কাটানোর জন্য কেনিয়াতে অবস্থান করছিলেন। মর্মান্তিক এই স্বজন হারানোর সংবাদে তারা রয়্যাল জেটে করে তাৎক্ষণিকভাবে ব্রিটেনে ফেরত চলে আসেন। রানী যখন অবকাশ যাপনের জন্য কেনিয়ার উদ্দেশে পাড়ি জমান, তখনও তিনি এরকমটি ভাবেননি। ব্রিটেনে ফেরত আসার পর যাতে তার পোশাক একেবারেই বেমানান না লাগে, তাই তিনি বিমানেই কালো রঙের একটি পোশাক পরে ফেলেন, শোকের আবহের সাথে সঙ্গতি রেখে। সে সময় থেকেই রাজ পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের জন্য যেকোনো ভ্রমণের সময় সাথে একটি শোকের পোশাক রাখার পরামর্শ দেওয়া শুরু হয়।

রানী ভিক্টোরিয়ার শোক পালনের যে চিরকালীন ভাবনা, সেটি রাজপরিবারের সদস্যদের জন্য এক পর্যায়ে বোঝা হয়ে পড়ে। সময়ের সাথে সাথে কমবেশি সকলের মাঝেই এ বিষয়ে ছোটখাটো অস্বস্তির জন্ম হলেও রাজ পরিবারের কঠোর নিয়মতান্ত্রিকতার দরুন এর প্রতিবাদ করার সুযোগ কারোই ছিল না। এই ধারায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসে রানী আলেকজান্দ্রার আমলে, রানী ভিক্টোরিয়া এবং তার জ্যেষ্ঠ পুত্র মৃতুবরণ করলে। শোক পালনের ক্ষেত্রে রানী আলেকজান্দ্রা ছিলেন মধ্যপন্থাবলম্বী। পূর্ণ কালো বা সাদা রঙের বদলে তিনি পরা শুরু করেন শিফন কাপড়ের হালকা হলুদ বা ধূসর রঙের পোশাক। এতে করে একদিকে উজ্জ্বল রঙ বা জমকালো নকশা যেমন এড়ানো যেত, সেইসাথে শোকের আবহও বিদ্যমান থাকত। 

This article is written in Bangla. It is about the history of British mourning dress.

All the necessary references are hyperlinked within the article.

Featured Image: edition.cnn.com

Related Articles