Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

কাচ্চি বিরিয়ানির ইতিকথা

বিয়ে-শাদির মতো গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে হোক কিংবা নিছক কোনো আনন্দ আয়োজন- বাঙালির কাছে কাচ্চি বিরিয়ানির কদর যেন অন্যরকম। আর এই কাচ্চি যদি হয় একদম পুরান ঢাকার আদি ও আসল স্বাদের, তাহলে তো সোনায় সোহাগা! রাস্তার পাশে দোকানে লাল কাপড়ে মোড়া বড় হাঁড়ির দেখা মিললে আর সাথে কাচ্চির সুঘ্রাণ নাকে আসলে ভোজনরসিক বাঙালিকে আর আটকায় কে! পুরান ঢাকার স্থানীয়দের মতো সকালবেলার নাস্তা থেকে শুরু করে দিনের যেকোনো বেলায় কাচ্চি বিরিয়ানি খাওয়ার সুযোগ সবার না থাকলেও, ঢাকায় এলে অন্তত সারাদেশের মানুষ এর স্বাদ নেওয়ার চেষ্টা করেন, আর চেষ্টা করেন বিভিন্ন মশলা সহযোগে নিজেরাই রান্না করে খাওয়ার। কিন্তু একদম আসল স্বাদের কাচ্চির জন্য ঠিক ঠিক মশলাগুলো তো চাই, সেগুলো পাবার উপায় কী? সেটি জানার আগে, কখনো কি চিন্তা করেছেন বাঙালির রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে থাকা এই সুস্বাদু খাবারটির শুরুটা কীভাবে? এত নাম থাকতে কেনই বা ‘কাচ্চি’ ও ‘বিরিয়ানি’-এর মতো শব্দের সংযোগে এই লোভনীয় খাবারটির নামকরণ করা হলো? চলুন জেনে আসা যাক ঐতিহ্যবাহী কাচ্চির ঐতিহ্য নির্মাণের কিছু গল্প।

Image Courtesy: Oliver Kitchen/Zomato

কাচ্চির নামকরণ এবং পাক্কি বিরিয়ানি

বিরিয়ানি শব্দটি এসেছে ফারসি শব্দ ‘বিরিয়ান’ এবং ‘বিরিঞ্জি’ থেকে। ‘বিরিয়ান’ অর্থ রান্নার আগে ভেজে নেওয়া এবং ‘বিরিঞ্জি’ মানে চাল। নামের প্রতিটি অংশের পেছনেই মূলত কারণ এর রন্ধন কৌশলের কোনো না কোনো অংশ। যেমন- বিরিয়ানি রান্না করার আগে সুগন্ধি চাল ঘি দিয়ে ভেজে নিতে হয়, সেজন্যই এই নামকরণ। বিরিয়ানি প্রধানত দুই প্রকার- কাচ্চি এবং পাক্কি।

‘কাচ্চি’ শব্দটির উৎপত্তি উর্দু ‘কাচ্চা’ শব্দ থেকে। বাংলায় ‘কাঁচা’-র প্রতিশব্দ এই ‘কাচ্চা’। কাচ্চি বিরিয়ানিতে সেদ্ধ করা ছাড়াই কাঁচা মাংস সুগন্ধি চালের সাথে মিশিয়ে রান্না করা হয়। হিন্দি এবং উর্দুতেও এই মোগলাই খাবারটি ‘কাচ্চি বিরিয়ানি’ নামেই পরিচিত। কাচ্চি বিরিয়ানিতে টক দই এবং বিভিন্ন মালমশলা দিয়ে মাখানো খাসির মাংসের উপর সুগন্ধি চাল ও আলুর আস্তরণ দেওয়া হয়। তারপর যে হাঁড়িতে রান্না করা হয় তাতে আটা বা ময়দার তাল বা ডোর (Dough) মাধ্যমে ঢাকনা এমনভাবে আটকে দেওয়া হয় যেন ভেতরে বাতাস ঢুকতে না পারে। রান্না করার এই পদ্ধতির নাম ‘দম পোক্ত’। আর কাঁচা মাংস দিয়ে দমে রান্না করা হয় বলেই এর নাম ‘কাচ্চি বিরিয়ানি’। অন্যদিকে, ‘পাক্কি বিরিয়ানি’-এর ‘পাক্কি’ শব্দের অর্থ রান্না বা পাক করা। এক্ষেত্রে বিরিয়ানির মাংস মালমশলা দিয়ে কষিয়ে আগে থেকেই ভেজে সেদ্ধ করে নেওয়া চালের সাথে মিশিয়ে দমে রান্না করা হয়।

Image Courtesy: Traveler Base

কাচ্চি বিরিয়ানির ইতিহাস

তাজিকিস্তান এবং উজবেকিস্তানের চাঘতাই জাতির মানুষদের মাধ্যমেই এই খাবারের প্রচলন শুরু। শীতপ্রধান এসব অঞ্চলের বাসিন্দাদের লাল মাংস, বিশেষ করে ভেড়ার মাংস বেশ পছন্দের। লাল মাংসের সাথে চাল ও বিভিন্ন উপাদান, যেমন- মাখন, গোলমরিচ, লবণ, এলাচ এবং স্থানীয় মশলা জয়ফল ব্যবহার করে তারা একটি বিশেষ খাবার প্রস্তুত করতে শেখে। আর এভাবেই যাত্রা শুরু কাচ্চি বিরিয়ানির। ধারণা করা হয়, ১৩৯৮ সালে ভারতবর্ষে তুর্কী-মোঙ্গল সেনাপতি তৈমুর লংয়ের আগমনের সাথে সাথে এই বিরিয়ানিরও আগমন ঘটে। তৈমুরের সেনাবাহিনীর জন্য পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করার তাগিদে চাল, বিভিন্ন মসলা এবং যে মাংস যখন সহজলভ্য তা একটি হাড়িতে ভর্তি করা হতো। তারপর গনগনে গরম একটা গর্তে হাঁড়িটি চাপা দিয়ে দমে রান্না করা হতো এই খাবার।

Image Courtesy: Grand Nawab/Tripadvisor

 

ইতিহাসের পাতায় ভারতবর্ষে বিরিয়ানির আগমনের পেছনে যেসকল গল্প রয়েছে সেগুলোর মধ্যে মুঘল সম্রাজ্ঞী মমতাজ মহলের গল্পটিই সবচেয়ে পরিচিত। শোনা যায় যে, একবার সম্রাজ্ঞী ব্যারাকে গিয়ে সৈন্যদের শোচনীয় অবস্থা দেখতে পান। তাদের দুর্বল ও ভগ্ন স্বাস্থ্য মমতাজকে চিন্তিত করে তোলে। তিনি সৈন্যদের জন্য নিয়োজিত বাবুর্চিকে ডেকে চাল ও মাংস দিয়ে এমন একটি খাবার প্রস্তুতের নির্দেশ দিলেন, যা তাদের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাবে। নির্দেশ অনুসারে একটি বিশাল হাঁড়িতে চাল, মাংস এবং হরেক রকমের মসলা দিয়ে অল্প আঁচে ও দমে কয়েক ঘণ্টা রান্না করে তৈরি হয় একটি বিশেষ খাবার, তথা বিরিয়ানি। রান্নার পদ্ধতি (দম পোক্ত) এবং কাঁচা মাংসের ব্যবহারে উল্লেখ্য ঘটনা দুটি বিরিয়ানি বা পাক্কি বিরিয়ানির চেয়ে কাচ্চি বিরিয়ানির আগমনের গল্পই বলা চলে। পরবর্তীতে মুঘল সুবেদারদের সাথে আসা রাঁধুনিদের মাধ্যমে ঢাকা শহরে খুব অল্প সময়ে এই বিরিয়ানির খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে।

কাচ্চি বিরিয়ানির বিশেষত্ব

এই বিরিয়ানির মূল বিশেষত্বই হলো এর রান্না করার কৌশলে। উল্লেখিত ‘দম পোক্ত’ পদ্ধতিতে বা দমে রেখে অল্প আঁচে রান্না করায় কাচ্চি বিরিয়ানি সকলের নিকট মুখরোচক হয়ে উঠে। কারণ এক্ষেত্রে মাংস আর সুগন্ধি চাল নিজস্ব ভাপেই রান্না হতে থাকে। ফলে সব উপাদানের স্বাদ ও গন্ধ সুরক্ষিত থাকে। এখানে দম দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় কয়লা। তাজাকিস্তান ও উজবেকিস্তানের এই খাবারটিতে ব্যবহৃত মালমশলা ভারতবর্ষে এসে কিছুটা পরিবর্তিত হয়। তবে তা এই বিরিয়ানিকে আরো সুস্বাদু করে তুলেছে। এখানে মাখনের পরিবর্তে ব্যবহার করা শুরু হয় গাওয়া ঘি, আর কাঁচা মাংস মাখানোর মালমশলায় যুক্ত হয় জাফরান, কিশমিশ, জয়ত্রী, দারুচিনির মতো সুগন্ধি মশলা। তাছাড়া কেওড়াজল ও গোলাপজলের মতো সুগন্ধি এবং অন্যান্য মশলা তো আছেই।

Image Courtesy: Nish Kitchen

 

কাচ্চি বিরিয়ানির প্রচলিত পদ্ধতিতে জাফরান একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তবে আজকাল বিভিন্ন দোকানে জাফরানের অতিরিক্ত মূল্যের কারণে অনেক সময়ই এই উপাদানটি কাচ্চিতে ব্যবহৃত হয় না। এ কারণে স্বাদে যে ঘাটতি হয় তা পূরণ করতে না পারলেও, রঙের কমতি পূরণ করা হয় ফুড কালার দিয়ে। সাধারণ বিরিয়ানির তুলনায় কাচ্চি বিরিয়ানির স্বাদ একদিকে আলাদা ও তৃপ্তিকর হলেও, অন্যদিকে এর প্রস্তুত প্রণালি বেশ জটিল। সঠিক পরিমাণের মসলা ও তাপের অভাবে দমে রান্না হওয়া এই বিরিয়ানির মাংস কাঁচা থেকে যাতে পারে কিংবা স্বাদে হয়ে যেতে পারে নানান হেরফের।

ঢাকাইয়া কাচ্চি বিরিয়ানি

বর্তমানে ঢাকার বিখ্যাত ও ঐতিহ্যবাহী খাবারের তালিকার অন্তর্ভুক্ত ‘ঢাকাইয়া কাচ্চি’। ১৯৩৯ সালে ঢাকায় কাচ্চি বিরিয়ানির যাত্রা শুরু। মাত্র এক হাঁড়ি বিরিয়ানি নিয়ে শুরু হওয়া ব্যবসা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এর অতুলনীয় স্বাদ এবং ভালো মানের কারণে প্রসারিত হয়। বর্তমানে পুরান ঢাকায় গেলেই দেখা মিলবে কাচ্চি বিরিয়ানির সারি সারি দোকানের। স্বাদে, গুণে, মানে কোনটা যে বেশি ভালো তা বলা কষ্টকর। প্রতিটি দোকানের বিরিয়ানিরই কোনো না কোনো বিশেষত্ব রয়েছে। কোথাও বিরিয়ানিতে ঘি বা মাখনের পরিবর্তে ব্যবহৃত হয় শুধুই সরিষার তেল, আবার কোথাও খাসির বদলে গরুর মাংস দিয়ে বানানো হয় এই কাচ্চি বিরিয়ানি। সকালে-দুপুরে-রাতে সর্বক্ষণই জমজমাট পুরান ঢাকার কাচ্চি বিরিয়ানির দোকানগুলো। আসল কাচ্চির স্বাদ নিতে ঢাকার বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ ছুটে আসে এখানে। প্রায় ৪০০ বছর ধরে বাংলায় রাজত্ব করা মুঘল খাদ্য ভাণ্ডারের এই সুস্বাদু খাবারটির ব্যবসায়িক বিশাল বাজার দেখতে এবং এর অতুলনীয় স্বাদ উপভোগ করতে আপনিও ঘুরে আসতে পারেন পুরান ঢাকায়। 

Image Courtesy: ACI Pure

দূরত্বের কারণে প্রতিবার পুরান ঢাকায় গিয়ে এই বিরিয়ানির স্বাদ নেয়া যেমন সম্ভব হয় না, তেমনই ঢাকাইয়া কাচ্চি বিরিয়ানি বাড়িতে তৈরি করাও বেশ ঝামেলা। অনেকেই বাড়িতে এই বিরিয়ানি তৈরি করেন, কিন্তু স্বাদের হিসেব মেলাতে পারেন না। এর মূল কারণ হলো, ঢাকাইয়া কাচ্চির স্বাদ নির্ভর করে এর সিক্রেট রেসিপির উপর। কাচ্চি বিরিয়ানিপ্রেমীদের এই সমস্যা সমাধানেই এসিআই পিওর ফুডস টেস্ট অব বাংলাদেশ প্রোডাক্ট রেঞ্জের মধ্যে নিয়ে এসেছে ‘ঢাকাইয়া কাচ্চি বিরিয়ানি।‘ এখন এসিআই পিওর  ঢাকাইয়া কাচ্চি বিরিয়ানি মশলা দিয়ে খুব সহজে বাড়িতে বসেই তৈরি করতে পারবেন ঐতিহ্যবাহী পুরান ঢাকার স্বাদের ‘ঢাকাইয়া কাচ্চি বিরিয়ানি’।

Related Articles