'খান' উপাধির সাথে আমাদের প্রায় সবাই পরিচিত। ভারতীয় উপমহাদেশে 'খান' উপাধিকে বেশ আভিজাত্যের প্রতীক বলেই মনে করা হয়। যদিও বর্তমানে 'খান' উপমহাদেশের যেকোনো মুসলিমের নামের শেষেই দেখতে পাওয়া যায়। মজার ব্যাপার হলো, পশ্চিমবঙ্গের অনেক হিন্দু ধর্মাবলম্বী ব্যক্তির নামের শেষেও 'খান' দেখা যায়। বর্তমানে 'খান'-এর সাথে আভিজাত্যের সম্পর্ক না থাকলেও খানদের ইতিহাস কিন্তু বেশ গৌরবান্বিত। যেমন- ভারতীয় উপমহাদেশে মুঘল আমলে শুধু অধিক সম্মানিত ব্যক্তিদেরই 'খান' উপাধিতে ভূষিত করা হত। সেসময় খানদের মধ্যে আবার কয়েকটি শ্রেণী ছিল। যেমন- খান সাহিব, খান বাহাদুর, খান-উল-আযাম, খান উল মুয়াযযাম, খান-উল-আযাম-উল-মুয়াযযাম ইত্যাদি।
খানদের ইতিহাস অনেক পুরোনো ও বিস্তৃত। মূলত খানাত বা খাগানাতের শাসকদেরকে 'খান' নামে ডাকা হত। কথাটি ঘুরিয়ে বললে দাঁড়ায়- খানরা যে অঞ্চল শাসন করত তাকেই খানাত বা খাগানাত বলা হত। খানাত হলো সাম্রাজ্যের একটি বিস্তৃত প্রশাসনিক অঞ্চল। একটি সাম্রাজ্য অনেকগুলো খানাতে বিভক্ত থাকত। সাম্রাজ্যের কেন্দ্রীয় শাসকের পাশাপাশি প্রত্যেকটি খানাতে একজন নির্দিষ্ট শাসক থাকত। খানাতের শাসকগণ আবার সর্বদা কেন্দ্রীয় শাসকের অনুগত থাকত। সহজভাবে বলতে গেলে, এটা ছিল অনেকটা বর্তমানের প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থার মতো।
খানাত বা খাগানাত শাসনব্যবস্থা ঠিক কবে থেকে শুরু হয়েছে এ কথা নিশ্চিত করে বলা যায় না। তবে মঙ্গোল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার অনেক পূর্বেই বেশ কয়েকটি খানাতের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। সেসবের মধ্যে রোরা খানাত ছিল সবচেয়ে প্রাচীন। রোরা খানাত প্রতিষ্ঠিত হয় চতুর্থ শতকের শুরুর দিকে। মূলত মঙ্গোলীয় আদিবাসীদের দ্বারা এই খানাত প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই খানাত স্থায়ী ছিল প্রায় ষষ্ঠ শতাব্দীর শেষভাগ পর্যন্ত। সেসময় গুরতুর্ক বিদ্রোহের মাধ্যমে এই খানাতের বিলুপ্ত হয়। পরবর্তীতে এর মধ্য দিয়েই উত্থান ঘটে তুর্কিদের।
চেঙ্গিস খানের উত্থানের পূর্বে মঙ্গোলরা একক কোনো জাতি ছিল না। একাধিক গোষ্ঠী এবং গোত্রে বিভক্ত থেকে তারা যাযাবর জীবনযাপন করত। পুরো মঙ্গোলীয় স্তেপ জুড়ে তাদের ছোট ছোট অসংখ্য যাযাবর গোষ্ঠী ছিল, যারা সুযোগ পেলেই পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলোতে ছোটখাট হামলা করে বসত। ডাকাতি আর লুটপাটই ছিল তাদের অনাড়ম্বরভাবে বেঁচে থাকার একমাত্র ভরসা।
দশম শতাব্দীর দিকে 'খামাগ' নামে একটি খানাত প্রতিষ্ঠিত হয়। বিস্তৃত মঙ্গোল যাযাবর গোষ্ঠীগুলো তখন অনন, খেরলেন ও তুল নদীর অববাহিকায় বসতি স্থাপন করে। মঙ্গোল যাযাবরদের সমন্বয়ে মঙ্গোলিয়ান স্তেপ জুড়ে বিস্তৃত এই শাসনাঞ্চল খামাগ খানাত নামে পরিচিত ছিল, মঙ্গোলদের ইতিহাসে যা সর্বপ্রথম খানাত।
তবে খানাতের সবচেয়ে ব্যাপক প্রচলন ও বিস্তার ঘটে মঙ্গোল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর। মঙ্গোল সাম্রাজ্যে খানাতের এর উৎপত্তি ঘটে চেঙ্গিস খানের আপানিজ ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে। আপানিজ ছিল এমন একটি ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে মঙ্গোল সাম্রাজ্যের অধিপতি চেঙ্গিস খানের স্ত্রী, পুত্র, কন্যা এবং দৌহিত্রগণ সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অংশের অংশীদার হয়ে যান। বিস্তৃত সাম্রাজ্যের বিভিন্ন প্রশাসনিক অঞ্চলের শাসনভার দেওয়া হয় একেকজনের হাতে। সাম্রাজ্যের এই প্রত্যেকটি অংশকে তখন খানাত নামে অভিহিত করা হয়। এভাবে মঙ্গোল সাম্রাজ্যে খানাতের ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটে। মঙ্গোল সাম্রাজ্য ছাড়াও আফসারি, তিমুরী, তুর্কি এবং সালাভি সাম্রাজ্যে খানাতের বিস্তার লক্ষ্য করা যায়। চলুন ইতিহাসের বিখ্যাত কয়েকটি খানাত সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
মঙ্গোল খানাত
১২০৬ সালে চেঙ্গিস খানের হাত ধরে মঙ্গোল সাম্রাজ্যের উত্থান ঘটে। এটি ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে দ্রুত বর্ধমানশীল সাম্রাজ্য। প্রতিষ্ঠিত হওয়ার প্রায় একশ বছরের মধ্যেই সমস্ত পূর্ব ও দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া এবং মধ্য ইউরোপ পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করে। পৃথিবীর ইতিহাসে এটি ছিল সর্ববৃহৎ অবিচ্ছিন্ন স্থলবেষ্টিত সাম্রাজ্য, ত্রয়োদশ শতকেই যার আয়তন পৌঁছে যায় প্রায় ২ কোটি ৩০ লক্ষ বর্গ কিলোমিটারে।
চেঙ্গিস খানের পূর্বনাম ছিল তেমুজিন। মূলত, খানাত বা খাগানাত প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মঙ্গোল সাম্রাজ্যের অধিপতি তেমুজিন 'চেঙ্গিস খান' নামে আবির্ভূত হয়। মঙ্গোল সাম্রাজ্যের খানাতগুলোর অধিপতিদের উপাধি ছিল খান। যেহেতু চেঙ্গিস খান ছিলেন সমগ্র মঙ্গোল সাম্রাজ্যের অধিপতি, সেজন্য তার উপাধি ছিল 'খাগান' বা 'খানদের খান'। এটা ছিল অনেকটা পার্সী 'শাহেনশাহ'-এর মতো, যার অর্থও ছিল 'রাজাদের রাজা'। তবে সংক্ষেপে তিনি চেঙ্গিস খান নামেই অধিক পরিচিত। চেঙ্গিস খানের পরবর্তীতে যারা মঙ্গোল সাম্রাজ্যের হাল ধরেন তারাও 'খানদের খান' বা 'মহান খান' উপাধিতে ভূষিত হতেন, যেমন- কুবলাই খান।
যেহেতু চেঙ্গিস খান মঙ্গোল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন, এজন্য মঙ্গোলরা তাকে জাতির পিতা হিসেবে মান্য করে। মঙ্গোল সাম্রাজ্যের বিজয়াভিযান শুরু হয় চেঙ্গিস খানের আমল থেকেই। সেসময় তিনি চীনা সাম্রাজ্যসমূহ, খোয়ারিজমীয় সাম্রাজ্য, পারস্য এবং পশ্চিম এশিয়ার তুর্কি গোত্রসমূহের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন। মঙ্গোলদের বিধ্বংসী এবং দুর্দমনীয় আক্রমণের সামনে কোনো সাম্রাজ্যই বেশিদিন টিকতে পারেনি। তাদের বিজয়াভিযান পৌঁছে যায় মধ্য ইউরোপ পর্যন্ত। ১২২৭ সালে চেঙ্গিস খানের মৃত্যুর আগপর্যন্ত ২১ বছর ধরে মঙ্গোলরা এশিয়া এবং ইউরোপে মুসলিম গোত্র ও সাম্রাজ্যগুলোতে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায় এবং সমৃদ্ধ করে মঙ্গোলীয় জাতিকে।
চেঙ্গিস খানের মৃত্যুর পরও মঙ্গোলদের বিজয়াভিযান অব্যাহত থাকে। তার উত্তরসূরিরা পোল্যান্ড থেকে কোরিয়া পর্যন্ত এই বিশাল ভূখণ্ড চষে বেড়িয়েছেন। নিজেদের আয়ত্বে নিতে সক্ষম হন আজকের ইরাক, ইরানসহ তৎকালীন আব্বাসীয় সাম্রাজ্যের অধিকাংশ ভূখণ্ড। ১২৫৯ সালে মঙ্গু খানের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে মঙ্গোল সাম্রাজ্যের ভাঙন শুরু হয়। ১২৯০ সালের মধ্যেই বিস্তীর্ণ এই সাম্রাজ্য চার ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। যা ছিল- ইউয়ান সাম্রাজ্য, চাগতাই খানাত, সোনালি সাম্রাজ্য, ইলখানদের এলাকা।
গোল্ডেন হোর্ড
গোল্ডেন হোর্ড মঙ্গোলীয় সাম্রাজ্যের একটি ঐতিহাসিক খানাত। গোল্ডেন হোর্ডকে সোনালী সাম্রাজ্যও বলা হয়ে থাকে। এটি মূলত মঙ্গোলীয় সাম্রাজ্যে প্রতিষ্ঠিত হলেও ত্রয়োদশ শতকে এসে যখন মঙ্গোল সাম্রাজ্যে ভাঙন দেখা দেয়, তখন এটি স্বতন্ত্র স্বাধীন খানাতে পরিণত হয়। তুর্কিদের উত্থানের পর এটি তাদের সাম্রাজ্যের অধীনে চলে যায়। এটি মঙ্গোল সাম্রাজ্যের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত ছিল। গোল্ডেন হোর্ড কিপচাক খানাত বা জোচির উলুস নামেও বেশ পরিচিত।
গোল্ডেন হোর্ডের ধর্মীয় ব্যবস্থা ছিল তেংরিবাদ, অর্থোডক্স খ্রিস্টান এবং তিব্বতীয় বৌদ্ধ। পরবর্তীতে ১৩১৩ সালে এটি তুর্কিদের অধীনে আসলে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৩১৪ সালে এর সর্বোচ্চ আয়তন প্রায় ৬০ লক্ষ বর্গ কিলোমিটারে পৌঁছে যায়। মঙ্গোল সাম্রাজ্যের খানাতগুলোর মধ্যে আয়তনের দিক দিয়ে গোল্ডেন হোর্ড ছিল সবচেয়ে বড়। আজকের সার্বিয়া, জর্জিয়া, বুলগেরিয়া, তুর্কমেনিস্থান, মধ্য ইউরোপের বিস্তৃত অঞ্চল এ শাসনব্যবস্থার অধীনে ছিল। ১২৪২ সাল থেকে ১২৫৬ পর্যন্ত গোল্ডেন হোর্ডের শাসক ছিলেন বাতু খান। তার মৃত্যুর পর তার ভাই বারকা খান গোল্ডেন হোর্ডের শাসক হিসেবে দায়িত্বগ্রহণ করেন। বাতু খান এবং বারকা খান উভয়েই ছিলেন চেঙ্গিস খানের নাতি। মূলত আপানিজ ব্যবস্থার মাধ্যমে এ অঞ্চলের শাসনভারের দায়িত্ব পড়ে বাতুর ওপর।
মঙ্গোলদের মধ্যে ১২৫২ সালে সর্বপ্রথম বারকা খান ইসলাম গ্রহণ করেন। সেসময় তিনি ছিলেন সর-জেকে। সেখানে তার সাথে বোখারার একটি কাফেলার সাক্ষাৎ হয়। মূলত এই কাফেলাটি ছিল একটি মুসলিম ব্যবসায়িক ক্যারাভান। সেসময় বারকা খান তাদের ধর্মীয় রীতিনীতি দেখে বেশ আগ্রহী হয়ে ওঠেন। পরে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। ধারণা করা হয়, বারকা খানের ইসলাম গ্রহণের মধ্য দিয়েই 'খান' উপাধিটি মুসলমানদের মধ্যে ব্যাপকভাবে বিস্তৃতি লাভ করে। এজন্য গোল্ডেন হোর্ডের শাসক হিসেবে বারকা খান দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই এ অঞ্চলে ইসলামী শাসনের ছায়া পড়তে থাকে। 'খান' উপাধি ছড়িয়ে পড়তে থাকে তুর্কিদের মধ্যেও।
এরপর ১২৬৬ সাল থেকে ১২৮০ সাল পর্যন্ত গোল্ডেন হোর্ড শাসন করেন বাতু খানের নাতি মেনগু-তৈমুর। কারণ বারকা খানের কোনো পুত্রসন্তান ছিল না। পরবর্তীতে বিভিন্ন উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে এটি অটোমান সাম্রাজ্যের অধীনে চলে আসে।
চাগতাই খানাত
আপানিজ ব্যবস্থা স্থাপনের পর চাগতাই খানাতের শাসনভারের দায়িত্ব পড়ে চেঙ্গিস খানের দ্বিতীয় পুত্র চাগতাই খানের উপর। চাগতাই খানের মৃত্যুর পর তার পরবর্তী বংশধর এই খানাত শাসন করে। ১৯৫৯ সালে মঙ্গোল সাম্রাজ্যের ভাঙনের পর এটি একটি স্বতন্ত্র খানাতে পরিণত হয়। ১৩০৪ সালে এসে চাগতাই খানাত ইউয়ান রাজবংশের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। ১৪ শতাব্দীতে এই খানাতের এক প্রান্ত ছিল আমু দরিয়া, অপরপ্রান্ত আলতাই পর্বতমালা। এ সময় এর সর্বোচ্চ আয়তন ছিল প্রায় ৩২ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার।
চৌদ্দশ শতাব্দীর শেষ ভাগে এসে চাগতাই খানাত দু'ভাগে ভাগ হয়ে যায়। এসময় চাগতাই খানাতের পশ্চিমাংশ পশ্চিম খানাত নামে এবং পূর্বাংশ মোগলিস্তান নামে পরিচিতি পায়। পশ্চিম সাম্রাজ্যের বিলুপ্তি ঘটে ১৩৭০ সালে। অপরদিকে পূর্ব সাম্রাজ্য টিকে থাকে সপ্তদশ শতাব্দীর শেষাংশ পর্যন্ত। ১৬৮০ সালে আফাক খোজার অংশে পরিণত হওয়ার মাধ্যমে এর বিলুপ্তি ঘটে। গোল্ডেন হোর্ডের ন্যায় এই সাম্রাজ্যও প্রথমে তেংরিবাদে প্রভাবিত ছিল। দুটি সাম্রাজ্যই পতনের মধ্য দিয়ে ইসলামী শাসনের অধীনে চলে আসে।
আজকের চীন, কাজাখস্তান, উজবেকিস্তান, তুর্কমিনিস্তান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, মঙ্গোলিয়া এবং ভারতের বেশ কিছু অংশ জুড়ে এই খানাত বিস্তৃত ছিল।
ইলখানাত
ইলখানাত শাসন করতো চেঙ্গিস খানের নাতি হালাকু খানের পরিবার। আপানিজ ব্যবস্থা স্থাপনের পর এই অঞ্চল শাসনের দায়িত্ব পড়ে হালাকু খানের উপর। ইলখানাত প্রতিষ্ঠিত হয় ১২৫৬ সালে। প্রতিষ্ঠাকালে এর ভিত্তিভূমি ছিল বর্তমানের ইরান। ১৩১০ সালে এর সর্বোচ্চ বিস্তৃতির সময় আয়তন ছিল প্রায় ৩৮ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার। ইলখানাতের বিস্তৃতি ছিল পূর্বের আব্বাসীয় খেলাফত ও খোয়ারিজমীয় রাজ্যের অঞ্চল জুড়ে। এ সময় হালাকু খানের আক্রমণের মধ্য দিয়ে খোয়ারিজমীয় রাজবংশের পতন ঘটে। তার আক্রমণের দীর্ঘ প্রায় ২০০ বছর পরেও নৃশংসতার ছাপ স্পষ্ট ছিল বাগদাদসহ ইরাক-ইরানের মুসলিম অধ্যুষিত শহরগুলোতে।
১২৯৫ সালে ইলখানাত শাসনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন মাহমুদ গাজান। তার হাত ধরেই ইলখানাতে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তী ইলখানাতের সকল শাসকই ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত ছিলেন। ১৩৫৩ সালের দিকে এসে ইলখানাতের পতন ঘটে। ইরান থেকে উৎপত্তি হয়ে আজারবাইজান, আর্মেনিয়া, আফগানিস্থান, তুর্কমেনিস্তান, পাকিস্তান, ইরাক, জর্জিয়া, সিরিয়া, তাজাকিস্থান এবং রাশিয়ার বেশ কিছু অঞ্চল জুড়ে ইলখানাত বিস্তৃত ছিল।
মঙ্গোল পরবর্তী সাম্রাজ্যগুলোতে খানাত ব্যবস্থার ব্যাপক প্রচলন ঘটে। এর মধ্যে তুর্কি সাম্রাজ্যে সবচেয়ে বেশি খানাতের প্রচলন দেখা যায়। ১৭ শতাব্দীতে এসে রাশিয়া, মধ্য এশিয়া এবং চীনে অনেকগুলো খানাত প্রতিষ্ঠিত হয়। যেমন- ১৬৩০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় কালমিক খানাত। কালমিক খানাত ভলগা নদীর নিম্নভূমির পাড় ধরে রাশিয়া থেকে কাজাখস্তান পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। ১৬৩৪ সালে চীনের জিনজিয়াং, কিরগিস্তান, পূর্ব কাজাখস্তান ও মঙ্গোলীয়ার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে প্রতিষ্ঠিত হয় জুঙ্গার খানাত। এরপর ১৬৪২ সালে গুশি খানের হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হয় গুশুত খানাত।
অধিকাংশ তুর্কি খানাত মুসলিমরা শাসন করত। চীনের উইঘুর থেকে শুরু করে আজকের তুরস্ক পর্যন্ত এই বিশাল ভূখণ্ডে অনেকগুলো তুর্কি খানাত প্রতিষ্ঠিত হয়। মঙ্গোল সাম্রাজ্যের পতনের পর থেকেই তুর্কিদের উত্থান ঘটতে থাকে। উল্লেখ্যযোগ্য তুর্কি খানাতগুলো হলো পশ্চিম তুর্কি খাগানাত, পূর্ব তুর্কি খাগানাত, উইঘুর খাগানাত, কিরগিজ খাগানাত, কারা-খানী খাগানাত, খাজার খাগানাত, তুর্গেশ খাগানাত, কিপচাক খানাত, কিউমানিয়া, পেচেনেগস ইত্যাদি।
মঙ্গোল সাম্রাজ্য থেকে যেমন খানাত ব্যবস্থার বিস্তৃতি ঘটেছিল, তেমনি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল খান উপাধিও। ঠিক একইভাবে মঙ্গোল সাম্রাজ্যের খানাতগুলো যেমন পরবর্তীতে মুসলিম শাসনের অধীনে চলে আসে, তেমনই খান উপাধিও ছড়িয়ে পড়ে মুসলিম সমাজে। খানাত ছিল মূলত সাম্রাজ্য পরিচালনার এক অভূতপূর্ব শাসনব্যবস্থা। আজকের আধুনিক প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা খানাত হিসেবে গড়ে ওঠে সেই দ্বাদশ শতাব্দীর গোড়াতেই। চেঙ্গিস খানের হাত ধরে এই ব্যবস্থার বিস্তৃতি ঘটলেও পরবর্তী মুসলিম রাজ্যগুলোতেও খানাত এক অভূতপূর্ব শাসনব্যবস্থা হিসেবে অবিস্মরণীয় হয়ে আছে।
This is a Bengali article discussing about different Khanates throughout history. References have been hyperlinked inside.
Featured Image: Getty Image