Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

সৌদ পরিবারের আদ্যোপান্ত: যাদের নামে আজ ‘সৌদি’ আরবের নাম

প্রায় ছয় শ বছর আগেকার কথা। হেজাজ আর নাজদের মরুর বুকে যখন বেদুইনদের প্রতাপ, তখনো আল মুরায়দি নামের এক লোক ভাবতেও পারেনি একদিন তারই কোনো বংশধরের হাত ধরে এ এলাকা হয়ে উঠবে একটি দেশ, যে দেশের নাম কিনা আবার তারই পরিবারের নামে! কীভাবে একদম শূন্য থেকে দরিদ্র মরুচারী থেকে পৃথিবীর ধনীতম রাষ্ট্রগুলোর একটি হয়ে উঠলো এই সৌদি আরব? এর পেছনে কতটুকু অবদান তরল সোনা নামে খ্যাত তেলের, আর কতটুকুই বা ইসলামের? সৌদ পরিবারের সাথে শুরু হওয়া ওয়াহাবি মুভমেন্টের কী সম্পর্ক? সালাফিই বা কারা? সিংহাসন নিয়ে নাটকীয় খেলা চলতে থাকা এই দেশটির রাজপরিবারের অতীত কেমন ছিল? বর্তমানে কী চলছে? আর, ভবিষ্যতে কোনদিকে মোড় নিচ্ছে এ সিংহাসনের খেলা? সৌদি আরব কি একটা বড় পরিবর্তনের সম্মুখীন? যদি তাই হয়ে থাকে তবে সেটা কি ভালোর দিকে দিকে নাকি খারাপের দিকে? তেলের রিজার্ভ শেষ হয়ে আসা দেশটির ভবিষ্যৎ রক্ষার্থে কী করতে যাচ্ছে এ প্রভাবশালী ধনী পরিবারটি? পর্দার সামনে কি পেছনের সে গল্পগুলো যদি আপনার জানবার আগ্রহ থাকে প্রবল, তবে এ আর্টিকেলটি আপনার জন্যই! সৌদ পরিবারের শূন্য থেকে উত্থান আর ইসলামের কেন্দ্রবিন্দু অধিকার করে সৌদি আরব প্রতিষ্ঠার গল্পটা না হয় জেনে নেয়াই যাক!

বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবের আপেক্ষিক অবস্থান; Source: Wikimedia Commons

আমাদের গল্পের শুরু যাকে নিয়ে তাঁর পুরো নাম মানী’ ইবনে রাবিয়া আল মুরাইদি (مانع بن ربيعة المريدي); তিনিই সৌদ পরিবারের পুরনোতম পূর্বপুরুষ, যার রেকর্ড আমরা পাই। তাদের নিজস্ব বংশতালিকা অনুযায়ী, ইসমাইল (আ) এর বংশধর আদনান এর মাধ্যমে যে বংশগুলো গড়ে ওঠে, তাদেরই মাঝে একটি ছিল বনু বকর ইবনে ওয়াইল বংশ। এদের বনু হানিফা বংশের সদস্য ছিলেন মানী’ ইবনে রাবিয়া। তিনি থাকতেন পূর্ব আরব তীরের কাতিফ নামের শহরের কাছের এক গ্রামে, সে গ্রামের নাম ছিল আল-দুরু। তাঁর গোত্রের নাম ম্রুদাহ। যে সময়ের কথা বলছি সেটা ছিল ১৪৪৬-১৪৪৭ সাল। তাঁর এক আত্মীয় ইবনে দীর তাঁকে আমন্ত্রণ জানান তাঁর সাথে গিয়ে থাকতে। ইবনে দীর ছিলেন তখন অনেকগুলো গ্রাম আর ভূসম্পত্তির (এস্টেট) মালিক বা শাসক, এবং সেরকম চলে আসছে বহুদিন ধরেই। আর এ অঞ্চলটাই আজকের রিয়াদ!

দীরিয়া যেখানে আজ; Source: Wikimedia Commons

যখন মানী’ সেখানে পৌঁছালেন, ইবনে দীর তাঁকে মুলায়বিদ ও গুসায়বা নামের দুটো প্রধান এস্টেট দিয়ে দেন। কাতিফ থেকে তখন পরিবার পরিজনদের নিয়ে আসেন মানী’। ইবনে দীরের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি এ অঞ্চলের নাম দিলেন ‘আল-দীরিয়া’ (الدرعية)। আজকের দিনে, রিয়াদ প্রদেশের জায়গা দীরিয়া, রাজধানী রিয়াদের উত্তর-পশ্চিম কোণে শহরের একটু বাইরেই এর অবস্থান। ২০১০ সালে UNESCO World Heritage Site হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয় এ এলাকাকে।

দীরিয়ার ধ্বংসাবশেষ; Source: Wikimedia Commons

এ পর্যায়ে হেজাজ আর নাজদের পার্থক্যটা পাঠকের জানা দরকার। হেজাজ (اَلْـحِـجَـاز‎) হলো আজকের সোদি আরবের পশ্চিম দিকের অঞ্চলটা, মক্কা, মদিনা, জেদ্দা কিংবা তায়েফ এরই অন্তর্ভুক্ত। এটি পশ্চিম প্রদেশ নামেও পরিচিত। পাঠকদের হিসেবের সুবিধার জন্য বলা, বাংলাদেশের তুলনায় ক্ষেত্রফলের দিক থেকে সৌদি আরব প্রায় ১৪.৫ গুণ বড়

হেজাজ এলাকা; Source: Wikimedia Commons

কিন্তু সৌদি আরবের মধ্যাঞ্চল হলো নাজদ (نجد)। দেশের এক-তৃতীয়াংশ জনগণ এখানেই বাস করে। কাসিম, রিয়াদ, হাইল অঞ্চল এর অন্তর্গত।

নাজদ এলাকা; Source: Wikimedia Commons

নাজদের মরু; Source: Wikimedia Commons

নাজদ অন্য দেশগুলো থেকে, অর্থাৎ সীমানা থেকে বেশ দূরে। বিদেশি আগ্রাসনের মুখে কখনো পড়েনি এ অঞ্চলখানা। এতক্ষণ যে মানী’ ইবনে রাবিয়া আল মুরাইদির কথা বললাম আমরা, তাঁর ম্রুদাহ গোত্র দীরিয়া শাসন করতে লাগলো, এবং সেটি নাজদের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি জনবসতি হয়ে উঠল খুব তাড়াতাড়িই। ওয়াদি (উপত্যকা) হানিফার (وادي حنيفة) তীর জুড়ে গড়ে উঠল তাদের শাসিত অঞ্চল।

আজকের ওয়াদি হানিফা; Source: Wikimedia Commons

কিন্তু এর মাঝেও এ পরিবার তিনটি শাখায় ভাগ হয়ে গেল। এক ভাগ চলে গেল রিয়াদ থেকে ৭৩.৪ কিমি উত্তর-পশ্চিমে দুরমা (ضرما) নামের জায়গায়। আর আলওয়াতবান নামের আরেক শাখা চলে গেল দক্ষিণ ইরাকের যুবায়ের শহরের উদ্দেশ্যে। বাকি রইল পরিবারের আল মিগ্রিন শাখা। আল মিগ্রিন শাসন করে চলল দীরিয়া। পৌনে দু’শ বছর এভাবেই চলে গেল।

১৭২০ সাল থেকে ১৭২৫ সাল পর্যন্ত বনু হানিফা গোত্রের সৌদ ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে মুকরিন (سعود بن محمد آل مقرن‎,) ছিলেন দীরিয়ার নেতা। তাঁর পরিবারের নাম ছিল আল মুকরিন। ১৭২৫ সালে তিনি মারা যান। তার নাম থেকেই এ পরিবারের নাম দাঁড়ায় ‘সাউদ’ বা ‘সৌদ’ পরিবার। আল সৌদ। আর সেখান থেকেই আজকের সৌদি আরব। আগে নাম ছিল আল মুকরিন।

প্রথম সৌদি স্টেট বা দীরিয়া আমিরাত (কিংবা বলা যায় সৌদ ডাইনেস্টি বা সৌদ সাম্রাজ্য) প্রতিষ্ঠিত হয় ১৭৪৪ সালে। প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সৌদের পুত্র মুহাম্মাদ (محمد بن سعود)। তিনি কোনো বেদুইন ছিলেন না, অনেকের ভুল ধারণা যে সৌদ বেদুইন ছিলেন। দীরিয়ার নেতা হবার পাশাপাশি তিনি ছিলেন মরুযোদ্ধাও।

গল্পের ঠিক এখানেই দৃশ্যপটে আবির্ভূত হন মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওয়াহাব (محمد بن عبد الوهاب), যার নামে ওয়াহাবি আন্দোলনের নাম। তাঁর জন্ম ১৭০৩ সালে নাজদের উয়ায়না গ্রামের বনু তামিম গোত্রে। আর তার মৃত্যু ১৭৯২ সালে।

উয়ায়না গ্রাম যেখানে; Source: Salafi Aqeedah

ইবনে আব্দুল ওয়াহাব যে এলাকায় থাকতেন তখনও সেখানে ইসলামি শিক্ষা ও ইতিহাস প্রতুল ছিল না। তাই আর আট দশজন মানুষ যতটুকু শিখতেন, তিনিও তাই শিখলেন। এ এলাকায় প্রাধান্য ছিল হাম্বলি মাজহাবের। এখান থেকেই প্রচুর হাম্বলি শাস্ত্রের আলেম বের হন। তার নিজের পরিবারেই হাম্বলি মাজহাবের বিদ্বান ছিলেন অনেকে। তার বাবা সুলায়মান ছিলেন আইনি সহায়ক, আর তাঁর দাদা আব্দুল ওয়াহাব ছিলেন হাম্বলি শাস্ত্রমতে একজন কাজি।

প্রথম জীবনে তিনি কুরআন মুখস্ত করেন এবং হাম্বলি শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। কিন্তু তিনি একটা জিনিস কোনোমতেই মানতে পারলেন না, আর সেটি হলো সুন্নি মুসলিমদের মাঝে প্রচলিত মাজার সংস্কৃতি। তার মতে, মৃত ব্যক্তির এমন কোনো ক্ষমতা নেই যে এত ভক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে মাজার বানিয়ে ফেলতে হবে। এর চেয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে হবে। কিন্তু তার এ দৃষ্টিভঙ্গি কেউ মেনে নেয়নি তার এলাকার। তিনি তাই নাজদ ত্যাগ করলেন, সিদ্ধান্ত নিলেন যে অন্য জায়গাতেও কি এই সংস্কৃতি প্রচলিত কিনা তা দেখবেন।

উয়ায়না গ্রাম ত্যাগ করবার পর তিনি মক্কায় গিয়ে হজ পালন করেন। সেখানে অনেক জায়গা থেকে অনেক স্কলার আসেন, কিন্তু তাদের সাথে কথা বলে তিনি বুঝতে পারলেন যে জিনিস ত্যাগ করতে তিনি গ্রাম ছেড়ে এসেছেন, সেটি বিশ্বজুড়েই ছড়িয়ে পড়েছে। এরপর তিনি মদিনা চলে গেলেন, মদিনা যাবার এ সিদ্ধান্তই তার বাকি জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।

আজকের মদিনা; Source: The Muslim Issue

মদিনায় গিয়ে তারই নাজদ অঞ্চল থেকে আসা এক হাম্বলি শাস্ত্রের আলেমের দেখা পান। নাম তাঁর আব্দুল্লাহ বিন ইব্রাহিম আল নাজদি যিনি কিনা ইবনে তাইমিয়ার লেখার অনুসারী ছিলেন। (ইবনে তাইমিয়া ছিলেন জনপ্রিয় একজন সুন্নি হাম্বলি শাস্ত্রবিদ, একজন ধর্মসংস্কারক এবং আব্দুল কাদের জিলানি (রঃ) প্রতিষ্ঠিত কাদিরিয়া সুফি তুরিকার সদস্য, যদিও বেশ কিছু সুফি ধারণার বিরোধিতা তিনি করেছিলেন; কিন্তু তার মাজারবিরোধী মতবাদের কারণে তিনি ব্যাপক সমালোচিত হন এবং জেলবন্দী হন।)

তো আব্দুল্লাহ বিন ইব্রাহিম তখন ইবনে আব্দুল ওয়াহাবকে পরিচয় করিয়ে দিলেন মুহাম্মাদ হাইয়া আল সিন্ধির সাথে, যিনি কিনা আবার নকশবন্দী সুফি তরিকার সদস্য ছিলেন। তারা দুজন খুব ঘনিষ্ট হয়ে উঠলেন। তিনিও মাজার বিরোধীই ছিলেন। শিক্ষাগ্রহণ শেষে মদিনা ত্যাগ করে ইবনে আব্দুল ওয়াহাব গেলেন আরব উপদ্বীপ ছাড়িয়ে বসরা-তে।

বসরাতে যখন পৌঁছালেন, তখন সেখানে তিনি তরুণ স্কলার হিসেবে পরিচিতি পেয়ে গেলেন। এমনকি তার শিক্ষক মুহাম্মাদ আল-মুজমুই নিজেই তাঁর সন্তানদের ইবনে আব্দুল ওয়াহাবের সাথে পড়াশোনা করতে দিলেন। সেখানে শিয়া স্কলারদের সান্নিধ্যও পেলেন। তিনি অবশ্য তার লেখনিতে শিয়া ও সুফিদের ভুল হিসেবেই উল্লেখ করেছিলেন। কিন্তু এদের চাইতে তিনি শিরকি কাজে লিপ্ত থাকাদের প্রতিই বেশি বিরূপ ছিলেন। এরপর ইবনে আব্দুল ওয়াহাব ফিরে এলেন আরব উপদ্বীপে, থাকলেন নিজের শহরে, এরপর আল-আহসাতে। সবশেষে হুরায়মিলাতে অবস্থান নিলেন, সেখানে তার পিতা বাসা করেছিলেন। সেখানেই তিনি ‘কিতাবুত তাওহিদ’ রচনা করেন।

এ সময় তার অনেক অনুসারী হতে লাগলো। তাকে হত্যার চেষ্টাও চালানো হয়, কিন্তু সেটা ব্যর্থ হয়। কিন্তু সে ঘটনার পর তিনি নিজ গ্রামে ফেরত আসেন। তখন উয়ায়না গ্রামের শাসক ছিলেন উসমান ইবনে মুয়াম্মার। উসমানের রাজনৈতিক মিশনে তিনি সমর্থন দেবেন এই শর্তে যে ইবনে আব্দুল ওয়াহাবের শিক্ষাগুলো প্রচারিত হবে অধিকৃত অঞ্চলজুড়ে। আর সে অঞ্চল হবে ‘নাজদ ও নাজদের বাহিরে যা আছে’।

আজকের সৌদি রাজধানী রিয়াদ; Source: Wall Street Journal

ইবনে আব্দুল ওয়াহাব তার কঠিন সব ধ্যান ধারণা শেয়ার করতে লাগলেন। প্রথমে তিনি উসমানকে রাজি করালেন যে সাহাবী হযরত জায়েদ ইবনে আল খাত্তাব (রাঃ) এর কবর মাটির লেভেলে নামিয়ে আনতে হবে, কারণ, মুসলিম শরিফের হাদিস অনুযায়ী কবর উঁচু করা যাবে না। তাছাড়া স্থানীয়রা রীতিমত পূজো করত সে মাজারের। এরপর তিনি সে গাছগুলো কেটে ফেলতে বলেন যেগুলোকে স্থানীয়রা ‘পবিত্র গাছ’ বলে মানত। মোট কথা, যে কাজগুলো আগে এ এলাকার মানুষ ভাবতেও পারত না, সেগুলোই তিনি করতে বললেন।

তার এরকম ‘উদ্ভট’ কাজ দেখে নাজদের বনি খালিদ গোত্রের প্রধান সুলাইমান ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে ঘুরায়র উয়ায়মা গ্রামের শাসক উসমানকে হুমকি দিলেন। বললেন যে, ইবনে আব্দুল ওয়াহাবকে যদি দেশছাড়া কিংবা হত্যা না করে উসমান তবে কোনো খাজনা আদায়ের অধিকার তার থাকবে না আর। সুতরাং, উসমান ইবনে মুয়াম্মার তাকে দেশত্যাগী করলেন।

সৌদি আরবে নির্মিত হতে যাচ্ছে স্পেস টুরিজম সেন্টার; Source: Virgin Galactic

নির্বাসিত ইবনে আব্দুল ওয়াহাব তখন গেলেন দীরিয়ার শাসক আমাদের সৌদ বংশের নায়ক মুহাম্মাদ ইবনে সৌদের কাছে। এখানেই দু’দিকের কাহিনী মিলে যায় এক বিন্দুতে। উসমানকে যেভাবে আগে রাজি করিয়েছিলেন সেভাবে মুহাম্মাদ ইবনে সৌদকেও রাজি করিয়ে ফেলেন ইবনে আব্দুল ওয়াহাব। তারা একত্রে ইসলামের মূলনীতিতে ফিরিয়ে আনবার পরিকল্পনা করেন নাজদকে। তিনি ইবনে ওয়াহাবকে বললেন, “এ উপদ্বীপ আপনার, শত্রুকে ভয় করবেন না। যদি নাজদের সকলেও আপনাকে বহিষ্কার করে, আমরা তা-ও করব না, আল্লাহর কসম।” এর উত্তরে ইবনে আব্দুল ওয়াহাব বলেন, “আপনি জ্ঞানী মানুষ। আমি চাই আপনি কথা দেন যে আপনি অমুসলিমদের বিরুদ্ধে জিহাদ করবেন। বিনিময়ে আপনি হবেন মুসলিম উম্মাহর ইমাম, আর আমি হব ধর্মীয় বিষয়াদির দেখভালকারী নেতা।” এই বাইয়াহ ১৭৪৪ সালে অনুষ্ঠিত হয় সৌদ পরিবার আর আল আশ-শাইখ পরিবারের মাঝে।

এ চুক্তির মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় প্রথম সৌদি স্টেট বা দীরিয়া (বা, দারিয়া) আমিরাত। সৌদের বাহিনী নাজদ বিজয় করে নেয়, এরপর ধীরে ধীরে তাদের সাম্রাজ্য বাড়তে থাকে, এবং একপর্যায়ে প্রায় বর্তমান সৌদি আরবের মতো এলাকাই তাদের অধিকারে চলে আসে। পথিমধ্যে পৌত্তলিকতার ধাঁচ থাকা প্রচলিত আচারগুলো নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়, আর চালু করা হয় ইবনে আব্দুল ওয়াহাবের প্রচারিত ধর্মীয় শিক্ষাগুলো।

প্রথম সৌদি স্টেটের পতাকা; Source: Wikimedia Commons

ইবনে আব্দুল ওয়াহাবের নামানুসারে এ সংস্কার বা আন্দোলন পরিচিত হয় ওয়াহাবি আন্দোলন বা ওয়াহাবি মুভমেন্ট নামে। তার আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল: মুসলিমদের মূল ইসলামে ফেরত নিয়ে আসা যেমনটা হযরত মুহাম্মদ (সা) ও সাহাবীদের যুগে ছিল। যে প্রচলিত আইনগুলোর মাঝে তিনি ‘শিরক’ কিংবা পৌত্তলিকতার ছোঁয়া পান সেগুলো বাতিল করে ইসলামের নতুন ব্যাখ্যা দাঁড়া করাতে আহ্বান করেন।

‘কিতাবুত তাওহিদ’ রচনায় তার প্রচারিত শিক্ষাগুলো পাওয়া যায় যেখানে তিনি কুরআন ও হাদিস থেকে নানা নীতিমালা উল্লেখ করেন। আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্য কারো কাছে সাহায্য প্রার্থনা যেন করা না হয় (বিশেষত পরলোকগত কারো কাছে) সেটিই ছিল তার আন্দোলনের মূল লক্ষ্য। তিনি ঘোষণা দেন, যদি কেউ আল্লাহ্‌র কাছে চাওয়ার ব্যাপারে মধ্যস্ততাকারী অন্য কোনো জীবিত বা মৃত কাউকে ধরে নেয় তবে সে শিরক করছে। কিন্তু সমসাময়িক অন্য আলেমগণ এত কঠোর অবস্থান নেননি।

ঠিক এ জায়গায় আমরা পরিচিত হব ‘সালাফি’ শব্দের সাথে। সাম্প্রতিক ঘটনাবলি ও জঙ্গিবাদের প্রেক্ষিতে অনেকেরই কাছ থেকেই এ প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে- কী এই সালাফি মুভমেন্ট? ওয়াহাবি কী? কেন সন্ত্রাসবাদের সাথে এর সম্পর্ক?

সালাফি শব্দটা এসেছে সালাফ (سلف) থেকে যা সম্মানজনক ‘আল সালাফ আল সালেহীন’ (السلف الصالح) এর সংক্ষেপ। অর্থ ‘পূণ্যবান পূর্বপুরুষগণ’। সালাফ বলতে বোঝায় নবী (সা) ও তাঁর সাহাবীদের প্রজন্ম, তাঁর পরবর্তী তাবেয়ীদের প্রজন্ম এবং তার পরের তাবা তাবীঈনদের প্রজন্ম- এ তিন প্রজন্মের মুসলিমদের। ধর্মীয় দিক থেকে তিন প্রজন্মের ধারণা এসেছে, বুখারির হাদিস (২৬৫২) থেকে- “সর্বোত্তম প্রজন্ম হলো আমার প্রজন্ম, এরপর আমার পরের প্রজন্ম, এবং এরপর তার পরের প্রজন্ম।” 

সৌদি আরবের কিংডম টাওয়ার; Source: Pinterest

ইবনে আব্দুল ওয়াহাবের ওয়াহাবি মুভমেন্টের সাথে একটি সূক্ষ্ম পার্থক্য রয়েছে সালাফি মুভমেন্টের। সালাফি নীতি অনুযায়ী, প্রথম দিককার মুসলিমগণ নবী (সা) এর অধিকতর নিকটের হওয়ায় তারা কাছ থেকে মূল ইসলামকে দেখেছেন এবং অনৈসলামিক কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থেকেছেন। কিন্তু যত সময় এগিয়ে গিয়েছে, মানবসমাজের অমোঘ নিয়ম অনুযায়ী, ধর্মীয় কাজকর্মের মাঝে মানবসৃষ্ট ও ঈশ্বর-আদিষ্ট-নয় এমন কাজের অনুপ্রবেশ ঘটেছে যাকে অনেকেই ধর্মীয় পূণ্যের কাজ হিসেবেই গণ্য করে। ঠিক এখানেই সালাফি নীতির আপত্তি। কোনো একটি কাজে যেখানে পূণ্যের উল্লেখ পবিত্র গ্রন্থগুলোতে উল্লেখ নেই, সেগুলোকে পূণ্যের মনে করে কাজ চালিয়ে যাওয়ার অর্থ হলো বিশ্বাস করে নেয়া যে এগুলোও স্রষ্টার তরফ থেকে আদিষ্ট; অন্য অর্থে, এটি স্রষ্টার নামে মিথ্যে কথার প্রচার- কারণ মূল গ্রন্থসমূহে (কুরআন/হাদিস) এর উল্লেখ নেই। এই কাজগুলোকে পারিভাষিকভাবে ‘বিদাত’ বলা হয়, বা সহজ কথায়- নবউদ্যোগের অনুপ্রবেশ। সেটি যেমন ভালো কাজ হতে পারে, খারাপও হতে পারে। খারাপ হলে তো কথাই নেই, কিন্তু ভালো হলেও আপত্তি ওখানেই যে- সেটাকে স্রষ্টার আদেশ মনে করা হচ্ছে। সৌদি সালাফি নীতি অনুযায়ী, এগুলো হারাম।

সুফিবাদের ব্যাপারে ইবনে আব্দুল ওয়াহাবের পুত্র আব্দুল্লাহ লিখেছেন তার ‘আল-হাদিয়াহ আল সুনিয়াহ’ লেখনিতে। তিনি সেখানে তাজকিয়ার ব্যাপারেও লিখেছেন।

জেদ্দার উট ভাস্কর্য; Source: Susie of Arabia

সালাফি আর ওয়াহাবির পার্থক্য কী তাহলে? সত্যি বলতে, ওয়াহাবি একটি গালি হিসেবেই ব্যবহৃত হয় বেশি, উপমহাদেশে বিশেষ করে এর প্রচলন সবচেয়ে বেশি। সঙ্গতভাবেই, ওয়াহাবি আন্দোলন ছিল খুবই কঠোর। ইবনে আব্দুল ওয়াহাব যেমন কাফির উপাধি দিয়েছিলেন অনেক মুসলিমকেই, তেমনই ইহুদী-খ্রিস্টানদের প্রতি তার ছিল তীব্র অসন্তুষ্টি। কিন্তু সুন্নি সালাফিজমের উৎপত্তি একটু ভিন্নভাবে। ইবনে তাইমিয়াকে জেলে পুরে দেয়া হয়েছিল সেটা উল্লেখ করা হয়েছে পূর্বে। তার ছাত্র ইবনে কায়্যিমকে নির্বাসন দেয়া হয় ইরাক থেকে এবং পরে আসেন নাজদে। সেটাকে সালাফির শুরু বলা যায়, কিন্তু ইবনে আব্দুল ওয়াহাব এ শিক্ষা থেকে যে মুভমেন্ট শুরু করেন সেটি হলো ওয়াহাবি মুভমেন্ট।

মোদ্দা কথা, সালাফিজমের শুরু ত্রয়োদশ শতকে হলেও ওয়াহাবিজমের শুরু অষ্টাদশ শতকে। সালাফিজম শুরু হয় ইসলামি আলেমের হাত ধরেই, কিন্তু পরে তারা অজনপ্রিয় হয়ে যান প্রচলিত ইসলামি আচারের বিরুদ্ধাচারণ করা হলে। ওয়াহাবিজম যখন ইবনে সৌদের সামরিক অভিযানের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে থাকে, তখন জোরজবরদস্তি ও রাহাজানি দৃষ্ট হয় (তাছাড়া পরবর্তীতে ওয়াহাবী সেনাদের নৃশংস কারবালা আক্রমণও একটি উদাহরণ); কিন্তু সালাফিজমের সূচনায় এমন কিছু ছিল না; বরং ওয়াহাবিজমে যেমন অমুসলিম তো পরের কথা অনেক মুসলিমকেও যেমন মুশরিক ডাকা হতো, সালাফিজমে কোনোদিনই সেটা করা হত না- এটা একটা বড় পার্থক্য। সালাফিজম ইরাকে শুরু, কিন্তু ওয়াহাবিজম শুরু নাজদে। অর্থের পার্থক্য তো শুরুতেই বলা হলো। আর, ওয়াহাবিজম ইবনে সৌদের সহায়তায় সাফল্য পেলেও, সালাফিজম সাফল্য পায়নি সূচনার পর- কারণ হিসেবে বলা যায় সামরিকতার অভাব। ওয়াহাবিজমে কুরআন ও হাদিসের সব কিছুই পুরোপুরি আক্ষরিকভাবে নেয়া হয়, যেখানে সালাফিজমে ব্যাখ্যার সুযোগ থাকে। সালাফি কথাটা গালি হিসেবে ব্যবহৃত না হলেও ওয়াহাবি এককথায় গালি হিসেবেই ব্যবহার করা হয়, তাই ওয়াহাবি মতের অনুসারীরাও নিজেদের সালাফি পরিচয় দিতে পছন্দ করে, আর পার্থক্য সূক্ষ্ম হওয়ায় তফাৎ ধরা যায় না। মজার ব্যাপার, মুসলিম সমাজে ওয়াহাবি কথাটা মতের অমিল হলে গালি হিসেবে যেমন দেয়া হয়, তেমনই ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলে ব্রিটিশ সরকার যেসব আলেমের কথা তাদের বিরুদ্ধে যেত তাদেরকে ওয়াহাবি আলেম বলত। [উনিশ শতকে ভারতীয় উপমহাদেশে সাইয়েদ আহমদ বেরলভীর (১৭৮৬-১৮৩১) আন্দোলনকেও ওয়াহাবি আন্দোলন বলা হয়, যদিও তার সাথে ইবনে আব্দুল ওয়াহাবের সম্পর্ক ছিল না (আহমদ রেজা খান বেরেলভী নয় কিন্তু)। সাইয়েদ আহমদ বেরলভির শিষ্যদের অনেকেই নিজেদেরকে আহলে হাদিস বলতেন, কারণ তারা কোনো নির্ধারিত মাজহাব অনুসরণ না করে কেবল কুরআন ও হাদিস অনুসরণ করতেন। উল্লেখ্য, ব্রিটিশরা তিতুমিরের কর্মকাণ্ড কিংবা ফরায়েজি আন্দোলনকেও ওয়াহাবি আন্দোলন আখ্যায়িত করে।]

মসজিদে নববী; Source: wallpaperscraft

ওয়াহাবিজমকে সালাফিজমের একটি উপসেট হিসেবেই বিবেচনা করা হয়। আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অফ বৈরুত এর সমাজবিজ্ঞানের প্রফেসর আহমদ মৌসালির ভাষ্যমতে, “নিয়মানুযায়ী, সকল ওয়াহাবিই সালাফি, কিন্তু সকল সালাফিই ওয়াহাবি নয়।” সাধারণত, সহিংস কাণ্ডে জড়িত কাউকে যখন সালাফি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, সম্ভাবনা বেশি এটাই যে সে আসলে ওয়াহাবি ধ্যানধারণায় বেশি বিশ্বাসী। কিন্তু সত্তরের দশকের পর থেকে সালাফি আর ওয়াহাবির পার্থক্য করা দায় হয়ে পড়েছে, তাই এ দুটোকে একই ধরে নেয় বেশিরভাগ মানুষই। বিশ্বাসের দিক থেকে দুটো একই হলেও, প্রায়োগিক দিক থেকে দুটো কিছুটা আলাদা- অর্থাৎ একটি আরেকটি থেকে বেশি সহিংস। ওয়াহাবিজমের সাথে সালাফি জিহাদিস্ট নামটিও চলে আসে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বর্তমানে আক্রমণগুলোর সাথে সাথে সালাফি চিহ্নিতকরণ বেড়ে গেছে, এবং এক্ষেত্রে রুকুর পরে হাত উপরে উঠানোকে শনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য হিসেবে দেখা হয়। আসলে, সালাফিরা এভাবে নামাজ আদায় করলেও, চার মাজহাবের মাঝে শাফিঈ ও হাম্বলি মাজহাবেও এই কাজটি করবার কথা বলা হয়েছে, কিন্তু উপমহাদেশে প্রচলিত হানাফি মাজহাবে করতে মানা করা হয়েছে বিধায় এদেশের মুসলিমদের কাছে এ কাজটি ‘নতুন’ ও ‘ভিন্ন’ উপায়ে নামাজ আদায়।

মসজিদে নববী; Source: Trover

প্রশ্ন জাগতে পারে, বিশ্বজুড়ে সালাফিজম বাড়ছে কেন মুসলিমদের মাঝে? এর কারণ অনেকটাই প্রযুক্তির সাথে জড়িত বলা যায়। আগে প্রযুক্তিগত সুবিধা না থাকায় মূল গ্রন্থগুলো মিলিয়ে কমই দেখতে পারত সাধারণ মুসলিমগণ। কিন্তু এখন হাতের মুঠোয় ইন্টারনেট চলে আসায় কোনো তথ্য চেক করা কোনো কঠিন ব্যাপারই না। তাই কুরআন বলা হোক আর বিশুদ্ধ হাদিস বলা হোক- এই মূল সোর্সগুলোকেই যেহেতু সালাফিরা প্রাধান্য দেয় (পরবর্তী শতাব্দীগুলোর লেখনির পরিবর্তে), এগুলো নেটে সহজেই খুঁজে পাওয়া যায়। আর একটি প্রচলিত বিশ্বাস নবী (সা) বা সাহাবীরা করতেন কিনা আসলেই সেটাও রেফারেন্স মিলিয়ে নেয়া যায়, যেটা আগে কোনোভাবেই সম্ভব ছিল না। তাই শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে সালাফিজম থাকলেও বিস্তৃতিটা এখনই হচ্ছে। এমনকি অনলাইন কিংবা টিভি মিডিয়াতে ইসলাম প্রচারকারী বেশিরভাগ ইসলামি ব্যক্তিত্বই সালাফি মতবাদের অনুসারী, অর্থাৎ মূল গ্রন্থের সাথে রেফারেন্স মিলিয়ে যারা ধর্মপ্রচার করেন।

মসজিদুল হারাম; Source: House of Saud

এটা সত্য যে অনেক সালাফিই বর্তমান বিশ্বে ইসলামের নামে ঘটা আক্রমণগুলোর সমর্থক, কিন্তু সালাফি স্কলাররা এ ‘এক্সট্রিমিজম’-এর বিপরীতেই অবস্থান নেন। যেমন, সালাফি স্কলার মুহাম্মাদ ইবনে সালিহ আল উসাইমিন সুইসাইড বম্বিংকে হারাম বলেছেন। সৌদি আরব সালাফিজমকে স্পন্সর করে বিশ্বজুড়ে। তবে, সালাফি তথা ওয়াহাবি মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে সাম্প্রতিক আক্রমণগুলো সংঘটিত হতে দেখা  যাচ্ছে।

মক্কায় ঢুকবার তোরণ- কুরআন গেট; Source: Pinterest

যা-ই হোক, এবার ফিরে যাওয়া যাক প্রথম সৌদি স্টেটে। ইবনে সৌদের সময় নাজদ অটোম্যান সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল না। মুহাম্মাদ ইবনে সৌদের পর তার পুত্র আব্দুল আজিজ শাসক হয় ১৭৬৫ সালে। ১৮০২ সালের ২১ এপ্রিল আব্দুল আজিজ কারবালা আক্রমণ করে নাজদ থেকে বারো হাজার ওয়াহাবি সেনা নিয়ে। আট ঘণ্টা স্থায়ী এ আক্রমণে তারা হুসাইন (রা) এর কবরের উপরের গম্বুজ ভেঙে ফেলে এবং সেখানে দান করা প্রচুর সম্পদ নিয়ে যায় উট বোঝাই করে। এ আক্রমণে নিহত হন ২,০০০ কিংবা মতান্তরে ৫,০০০ মানুষ। পোড়ানো হয় চল্লিশ হাজার বাড়ি। এর মধ্য দিয়ে ওয়াহাবিজমের সহিংস রূপ প্রকাশ পায়। তৎকালীন ১৮৭২ সালের উসমান ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে বিশর এর ওয়াহাবি বর্ণনায় এই আক্রমণকে শিয়াদের ওপর ‘মুসলিম’ আক্রমণ হিসেবে ডাকা হয়।

এ ঘটনার পর অটোম্যান খেলাফত সৌদিদেরকে শান্তির জন্য হুমকিস্বরূপ বলে মনে করে। ১৮০৩ সালে এক গুপ্তঘাতকের হাতে মারা যায় আব্দুল আজিজ। এরপর তাঁর পুত্র সৌদের শাসনামলে সৌদি সাম্রাজ্য সবচেয়ে বিস্তৃত হয়। ১৮১৪ সালে সৌদের মৃত্যুর পর তার পুত্র আব্দুল্লাহ ইবন সৌদ মুখোমুখি হন অটোম্যান আক্রমণের। অটোম্যানদের হারানো এলাকা পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত হয় এ অটোম্যান-ওয়াহাবি যুদ্ধ। মিসরীয় বাহিনী আব্দুল্লাহর বাহিনীকে পরাজিত করে ফেলে। দীরিয়ার রাজধানীর পতন হয় ১৮১৮ সালে মিসরীয়দের কাছে। আব্দুল্লাহকে আটক করা হয় এবং শীঘ্রই কনস্টান্টিনোপলে (ইস্তাম্বুলে) অটোম্যানরা তার শিরশ্ছেদ করে। শেষ হয়ে যায় প্রথম সৌদি স্টেট। মিসরীয় বাহিনী দীরিয়া ধ্বংস করে দেয়। আল সৌদ পরিবারের অনেককে বন্দী হিসেবে মিসরে পাঠানো হয়। ধ্বংস হবার আগে দীরিয়া সাম্রাজ্য দেখতে এমন ছিল-

প্রথম সৌদি স্টেট; Source: Wikimedia Commons

১৮২৪ সালে সৌদিরা আবার দীরিয়া এলাকার দখল নিতে সক্ষম হয়। শুরু হয় দ্বিতীয় সৌদি স্টেট। এটা টেকে ১৮৯১ সাল পর্যন্ত।

দ্বিতীয় সৌদি স্টেটের পতাকা; Source: Wikimedia Commons

এর সীমানা বিস্তৃত ছিল প্রথম স্টেট থেকে বেশ কম, নিচে যেমনটা দেখতে পাচ্ছেন-

দ্বিতীয় সৌদি স্টেটের সীমানা; Source: Wikimedia Commons

দ্বিতীয় সৌদি স্টেটের রাজধানী ছিল রিয়াদ। হেজাজ পুনরুদ্ধার করতে পারেনি এ সময় সৌদিরা। আগেরবার ধর্ম নিয়ে অনেক কঠোরতা প্রদর্শন করলেও, এবার ধর্ম নিয়ে তেমন কিছু করেনি তারা। অবশ্য, তখনো তাদের শাসকদের উপাধি ছিল ইমাম। এবং তাদের উপদেশপ্রদানকারী ছিল সালাফি ধর্মীয় স্কলাররা। এ সময় সৌদি পরিবারের নিজেদের মাঝে শুরু হয় কলহ, অন্তর্দ্বন্দ্ব। এর ফলে তাড়াতাড়ি পতন ঘটে দ্বিতীয় সৌদি স্টেটের। একজন বাদে (ফয়সাল ইবনে তুর্কি) সকলেই হয় গৃহযুদ্ধ না হয় গুপ্তহত্যার মাধ্যমে ক্ষমতা হারান।

নাজদ আমিরাতের শেষ শাসক আব্দুল রহমান ইবনে ফয়সাল আল সৌদ ছিলেন ফয়সাল বিন তুর্কির ছোট ছেলে। মুলায়দার যুদ্ধে পরাজিত হয়ে তিনি পূর্ব আরবের আলমুররা বেদুইনদের মাঝে পরিবারসহ নির্বাসনে যান। কিন্তু শীঘ্রই কুয়েতি আমির মুবারাক আল সাবাহের অতিথি হিসেবে তিনি কুয়েতে আশ্রিত হন। ১৯০২ সালে তাঁর পুত্র আব্দুল আজিজ রিয়াদে সৌদি শাসন ফিরিয়ে আনার মিশনে নামেন। তিনি রিয়াদের মাস্মাক দুর্গ দখল করে সেখানের গভর্নরকে হত্যা করেন। তখন মাত্র ২০ বছর বয়সে রিয়াদের শাসক হিসেবে আবির্ভূত হন আব্দুল আজিজ। সৌদ পরিবারের নতুন নেতা হিসেবে তার পরিচয় তখন থেকে হয় ‘ইবনে সৌদ’। পরের তিন দশক তিনি নাজদ থেকে শুরু করে আশপাশের অঞ্চলে সৌদি সাম্রাজ্যে প্রভাব বিস্তৃত করতে শুরু করেন।

১৯৪৫ সালে রুজভেল্টের সাথে ইবনে সৌদ; Source: Wikimedia Commons

তার প্রধান শত্রুরা ছিলেন হাইলের আল রশিদ গোত্র, হেজাজের মক্কার শরিফগণ এবং আল হাসা-র অটোম্যান তুর্কিরা। আবার, প্রয়াত চাচা সৌদ ইবনে ফয়সালের বংশধরদের সাথেও তার লেগে যায়, কারণ তারাও সিংহাসন দাবি করে। আল রশিদরা পায় অটোম্যানদের সমর্থন। তাই আগে অটোম্যান খেলাফতের সমর্থনে থেকে নিজে ‘পাশা’ উপাধি নিলেও পরে তিনি ব্রিটিশদের সাথে মিত্রতা করেন আল রশিদের বিরোধিতা করতে।

১৯১৫ সাল থেকে ১৯২৭ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ইবনে সৌদের অধিকৃত অঞ্চলের নিরাপত্তা দেয় ডারিন চুক্তি অনুযায়ী। ১৯২১ সালে ইবনে রশিদদের পরাজিত করেন ইবনে সৌদ। তিনি তার নতুন অধিকৃত অঞ্চলের নাম দেন নাজদ সালতানাত। ১৯২৬ সালে তিনি হেজাজ জয় করেন। এর কয়েক মাস পর শেষ হয় ব্রিটিশ নিরাপত্তা। পরের পাঁচ বছর তিনি কিংডম অফ হেজাজ এবং কিংডম অফ নাজদ এই দুই রাজ্য পরিচালনা করেন। ১৯৩২ সালের মাঝে সব প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়ে দেন ইবনে সৌদ। সে বছর তিনি প্রতিষ্ঠা করলেন কিংডম অফ সৌদি অ্যারাবিয়া, যা আজকের সৌদি আরব।

ইবনে সৌদ বা কিং আব্দুল আজিজ বিন আব্দুল রহমান; Source: Wikimedia Commons

ছয় ফুট চার কি পাঁচ ইঞ্চির বিশাল এ মানুষটির প্রায় ২২ জন স্ত্রী ছিল নানা সময়ে, ফলে তার অনেক পুত্র কন্যা হয়েছিল। পুত্রের সংখ্যাই ছিল ৪৫! তবে, এক সময়ে একাধারে চারজন করেই স্ত্রী ছিল তার। বিবাহের মাধ্যমে তিনি নানা গোত্রের সাথে সম্পর্ক করেন। এমনকি ইবনে আব্দুল ওয়াহাবের আশ শাইখ পরিবারের সাথেও এভাবে সম্পর্ক হয় তার।

১৯৩৭ সালে দাম্মামের কাছে আবিষ্কৃত হয় তেলের বিশাল রিজার্ভ। আর তেলের কারণে অর্থনৈতিক মোড় ঘুরে যায় সৌদ পরিবারের। ১৯৪৫ সালে আমেরিকার সাথে মিত্রতা করেন তিনি। ১৯৫৩ সালে ইবন সৌদ মারা যান। তিনি আজ সৌদি আরবের ‘প্রতিষ্ঠাতা’ নামে পরিচিত। তার সরাসরি বংশধরগণ ‘হিজ/হার রয়াল হাইনেস’ উপাধি পান। ১৯৯৯ সালে (হিজ্রি পঞ্জিকা অনুসারে) সৌদি আরবের শতবর্ষ পালিত হয়, কারণ ১৯০২ সালে তিনি রিয়াদ অধিকার করেছিলেন।

তাঁর মৃত্যুর পর পুত্র সৌদ বিন আব্দুল আজিজ সিংহাসনে আরোহণ করেন কোনো ঘটনা ছাড়াই। কিন্তু তাঁর বিলাসবহুল জীবনের কারণে ক্রাউন প্রিন্স ফয়সালের সাথে তাঁর দ্বন্দ্ব শুরু হয়। ১৯৬৪ সালে গ্র্যান্ড মুফতির নির্দেশে তাঁকে সিংহাসন ছেড়ে দিতে হয় ফয়সালের কাছে। এ সময় ইবনে সৌদের কয়েক পুত্র মিসর চলে যান, তারা নিজেদের ‘ফ্রি প্রিন্স’ ডাকতেন। যেমন, তালাল ইবনে আব্দুল আজিজ। পরে অবশ্য তাদের ফিরিয়ে আনেন ফয়সাল এবং রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত করেন।

সৌদ ইবনে আব্দুল আজিজ; Source: Wikimedia Commons

১৯৭৫ সালে ভাগ্নের হাতে তিনি নিহত হন। ভাগ্নের নাম ছিল ফয়সাল ইবনে মুসাইদ, তাকে সাথে সাথেই মৃত্যুদণ্ড দিয়ে মেরে ফেলা হয়। পরের রাজা হবার কথা ছিল প্রিন্স মুহাম্মাদের, কিন্তু তিনি আপন ভাই প্রিন্স খালিদকে সিংহাসন দিয়ে দেন। ১৯৮২ সালে হার্ট অ্যাটাকে মারা যান কিং খালিদ, এরপর ফাহাদ রাজা হন। কিং ফাহাদ ছিলেন শক্তিশালী ‘সুদাইরি সেভেন’ এর সবচেয়ে বড়, এই সাতজন ছিলেন ইবনে সৌদের স্ত্রী হাসসা আল সুদাইরির ছেলে। ১৯৮৬ সালে কিং ফাহাদ ‘হিজ ম্যাজেস্টি’ উপাধি বাদ দিয়ে নতুন উপাধি চালু করলেন- ‘কাস্টোডিয়ান অফ টু হলি মস্কস’ না ‘দুই পবিত্র মসজিদের অভিভাবক’। (মক্কা-মদিনার দুই মসজিদ)

কিং ফাহাদ; Source: FindAGrave

১৯৯৫ সালে কিং ফাহাদের স্ট্রোক হবার পর তিনি প্যারালাইজড হয়ে যান। তখন ভারপ্রাপ্ত রাজা হন আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদ। ২০১৫ সালের আগস্টে মারা যান কিং ফাহাদ, সেদিন রাজা হন কিং আব্দুল্লাহ। তিনি সাথে সাথেই ছোট ভাই সুলতান বিন আব্দুল আজিজকে ডিফেন্স মিনিস্টার এবং ‘সেকেন্ড ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টার’ করেন, অর্থাৎ পরবর্তী রাজা তিনিই হবেন।

কিন্তু, ২০০৯ সালের ২৭ মার্চ তিনি ইন্টেরিয়র মিনিস্টার প্রিন্স নায়েফকে ‘সেকেন্ড ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টার’ বলে ঘোষণা দেন, এবং ২৭ অক্টোবর তাকে ক্রাউন প্রিন্স করেন। সুলতান মারা যান  ২০১১ সালের অক্টোবরে নিউ ইয়র্কে। আর, প্রিন্স নায়েফ মারা যান ২০১২ সালের ১৫ জুন জেনেভাতে। ক্রাউন প্রিন্স তখন হলেন সালমান।

কিং আব্দুল্লাহ; Source: Fortune

দীর্ঘকাল অসুখে ভোগার পর নয় বছর শাসন শেষে ২০১৫ সালের ২২ জানুয়ারি নিউমোনিয়ায় মারা যান কিং আব্দুল্লাহ। ভাই ও ক্রাউন প্রিন্স সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদ তখন হন নতুন রাজা।

২০১৫ সালের ২৯ এপ্রিল তিনি মুহাম্মাদ বিন নায়েফ আল সৌদকে ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে ঘোষণা দেন। তিনি ফার্স্ট ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টার হিসেবে কাজ করেছেন, এছাড়াও সৌদি আরবের ইন্টেরিয়র মিনিস্টার ছিলেন, একইসাথে তিনি আব্দুল আজিজের প্রপৌত্র। কিন্তু ২০১৭ সালের ২১ জুন তাকে সব দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয় এবং তার ক্রাউন প্রিন্স উপাধিও কেড়ে নেন কিং সালমান।

কিং সালমান; Source: The Independent

দৃশ্যপটে নতুন রূপে এলেন মুহাম্মাদ বিন সালমান বিন আব্দুল আজিজ আর সৌদ, যাকে এমবিএস (MBS = Mohammad bin Salman) ডাকা হয়। তাঁকে ক্রাউন প্রিন্স ঘোষণা করেন কিং সালমান। একইসাথে তিনি এখন সৌদি আরবের ফার্স্ট ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টার। বলা হয়েছে, তিনিই আসলে বাবা কিং সালমানের রাজক্ষমতার পেছনে আছেন মূল কারিগর হিসেবে। বর্তমান রাজার মৃত্যুর পর তিনিই হবেন সৌদি আরবের রাজা। তার স্ত্রী সারা বিনতে মাশরুর।

ক্রাউন প্রিন্স মুহাম্মাদ বিন সালমান; Source: Majalla

১৯৩৮ সালে যখন তেলখনি আবিষ্কৃত হলো তখন আব্দুল আজিজের সাম্রাজ্য বিস্তার নতুন উদ্যম পেল। এর আগ পর্যন্ত সৌদি আরবের প্রধান উপার্জন ছিল হজ থেকে আয়, বিশের দশকে প্রতি বছর এক লাখ লোক হজ করতে যেতেন। ১৯৩৯ এর শেষ দিক থেকে সৌদি আরব তেল রপ্তানি শুরু করল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বেশিরভাগ তেল মিত্রবাহিনীর কাছে বিক্রি করা হয়। ১৯৩৯ থেকে ১৯৫৩ সালের মাঝে তেল থেকে উপার্জন ৭ মিলিয়ন ডলার থেকে ২০০ মিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়। তখন থেকে সৌদি আরবের মূল আয় হলো এই তেল রপ্তানি।

বর্তমানে সৌদি শাসন যে আসলে প্রিন্স মুহাম্মাদই করছেন সেটা সকলেই ধরে নিয়েছেন। ২০১৭ সালের নভেম্বরে ক্রাউন প্রিন্স অনেকজন প্রভাবশালী প্রিন্সকে দুর্নীতির অভিযোগে বন্দী করেন রিয়াদের রিৎজ-কার্ল্টন বিলাসবহুল হোটেলে। কেউ বলেন এটা আসলেই দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপ, কেউ বা আবার বলেন এটা মূলত সিংহাসনে আরোহণের পথ সুগম করতে প্রিন্স মুহাম্মাদের একটি চাল।

মক্কার ক্লক টাওয়ার; Source: Pinterest

আধুনিক সৌদি রাষ্ট্রের ইতিহাস, অর্থাৎ গত ৫০ কি ১০০ বছরের ইতিহাস লিখতে গেলেও সেটি আলাদা পোস্ট হবে, তাই আমরা কেবল সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠার ইতিহাস হিসেবেই এ পোস্ট রাখছি কেবল। এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে সৌদি আরবের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে রয়েছে অনেক অভিযোগ। এর মাঝে রয়েছে নারী অধিকারের সীমাবদ্ধতা, মানবাধিকার লংঘন ইত্যাদি। এক্ষেত্রে প্রিন্স মুহাম্মাদের সিংহাসনে আসন্ন আরোহণকে অনেকে যেমন প্রগতিশীল বলছেন, তেমনই ইসলামিস্টগণ একে দেখছেন মূল ইসলাম থেকে সরে আসা হিসেবে। তবে সৌদি পরিবার নিজে ইসলামের জন্য এত কিছু করেছে নাকি নিজেদের সৌদ সাম্রাজ্য প্রসার আর টিকিয়ে রাখবার জন্য করেছে তা বিতর্কের বিষয়।

গত বছর ৮৩ মিলিয়ন মুসলিম হজ করতে গিয়েছে সৌদি আরবে, ৬০ মিলিয়নের বেশি গিয়েছে উমরাহ করতে। হজ থেকে গত বছর আয় হয় ১২ বিলিয়ন ডলার। আরব নিউজের ভাষ্যমতে, আসছে পাঁচ বছরে ২০২২ সাল পর্যন্ত হজ ও উমরাহ থেকে সৌদি আরবের আয় হবে প্রায় ১৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তেল থেকে সরে এসে পর্যটনের উপর তাই গুরুত্ব দিচ্ছে সৌদি।

হজের সময় আরাফাতে কয়েক বছর আগে; Source: YouTube

ধর্মীয় দিক বিবেচনা করলে, সুন্নি ইসলাম সৌদি আরবের প্রধান ধর্ম- সুন্নি ইসলামের সালাফি ভার্সন। ৭৫-৯০% হলো সুন্নি আর বাকিরা শিয়া। তাছাড়া ১৫ লক্ষের মতো খ্রিস্টান কর্মরত আছে সেখানে, তবে নাগরিক হিসেবে না। একই কথা হিন্দুদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। Pew Research Center এর তথ্য অনুযায়ী, সেখানে ৩৯০০০০ এর মতন হিন্দু কর্মী রয়েছেন।

প্রিন্স মুহাম্মাদ ধর্মীয় পুলিশের ক্ষমতা হ্রাস করেছেন, নারীর ড্রাইভিং সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে দিয়েছেন; তাছাড়া সৌদি পাবলিক কনসার্টে নারী সংগীতশিল্পী গান গেয়েছেন, নারী প্রবেশাধিকার সংবলিত প্রথম স্টেডিয়াম ও কর্মক্ষেত্রে নারীর সংখ্যাবৃদ্ধি ক্রাউন প্রিন্স মুহাম্মাদের অধীনেই হচ্ছে। এগুলোর কারণে আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসিত হলেও তিনি অভিযুক্ত ও নিন্দিত হয়েছেন মানবাধিকারকর্মী আটক, ইয়েমেনে হস্তক্ষেপ, কাতার ও লেবাননের সাথে সম্পর্কের অবনতি, আত্মীয়দের গ্রেফতার এবং নানা সালাফি আলেমের গ্রেফতারের কারণে। তিনি সৌদি আরবের আধুনিকায়নের জন্য ভিশন ২০৩০ প্রস্তাব করেছেন যার মাধ্যমে অনেক অর্থনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় পরিবর্তন আসবে। উল্লেখ্য, সৌদ পরিবারের রয়েছে নিজস্ব ওয়েবসাইট: House of Saud.

প্রথম ফিমেল কনসার্ট; Source: Youtube

এ লেখায় আমরা চেষ্টা করেছি সৌদি আরবের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ইতিহাস নিয়ে ধারণা সংক্ষেপে ও নিরপেক্ষভাবে দেবার। বিশেষ করে যারা আগে থেকে এ ব্যাপারে ধারণা কম রাখতেন তাদের জন্য প্রাথমিক ধারণা হিসেবে লেখাটি বেশি উপযোগী। ২ কোটি ৮৭ লক্ষ মানুষের সৌদি আরব বিশ্বজুড়ে বিলিয়নের বেশি মুসলিমের কাছে পবিত্র এক ভূমি মক্কার মসজিদুল হারাম, মদিনার মসজিদে নববী এবং ইসলামের শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা) এর স্মৃতি হিসেবে। কিন্তু সে দেশটির সিংহাসন নিয়ে কাড়াকাড়ি যেন আরেক অধ্যায়। দেখা যাক সৌদি আরবের ভবিষ্যৎ কোন দিকে মোড় নেয়।

বর্তমান সৌদি পতাকা; Source: Wallpaper Abyss

ফিচার ইমেজ: Edited by Roar

Related Articles