Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

যেভাবে আমেরিকার কাছে ‘জ্যাকপট’ আলাস্কাকে বিকিয়েছিলো রাশিয়া

রাশিয়ানদের কাছে তা এক ‘জাতীয় আক্ষেপ’, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তা সৌভাগ্যপ্রসূত অন্যতম ‘সেরা বিনিয়োগ’, ইতিহাসের পাতার এই উল্লেখযোগ্য অংশটির ভূমিকা এমনই। বলছি ১৮৬৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে রাশিয়ার আলাস্কা বিক্রি করে দেবার সে ঘটনাটির কথা। হয়তো আর দশটা স্থল বিনিময় কিংবা বিনিয়োগ চুক্তির মতোই ‘সাধারণ’ এর তালিকায় পড়ে থাকতে পারতো এ ঐতিহাসিক ঘটনা, কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি আলাস্কার স্বর্ণগর্ভারূপটির জন্যই! ‘অপ্রয়োজনীয়’ ভেবে রাশিয়ার বেচে দেওয়া এ অংশটিই পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য হয়ে গেলো জ্যাকপট! রাশিয়ার থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেই ‘জ্যাকপট’ ক্রয়ের ইতিহাস নিয়েই আজকের লেখা।

আলাস্কা যখন রাশিয়ার!

১৭২৫ সালে রাশিয়ান জার পিটার দ্য গ্রেট আলাস্কা উপকূল অনুসন্ধানে ভিতাস বেরিংকে পাঠান। এর আগে থেকেই জার সাম্রাজ্যের আগ্রহভরা দৃষ্টি ছিলো প্রশান্ত মহাসাগরের ওপারের জনবিরল ও প্রাকৃতিক সম্পদে সম্ভাব্য-সমৃদ্ধ আর্কটিক ভূখণ্ডটিতে। ১৭৪১ সালে আলাস্কার দাবি নিয়ে বসে রাশিয়া। আলাস্কার রাজধানী নোভোয়ারখাঙ্গেলস্ক চা, চীনা কাপড়, এমনকি বরফ বাণিজ্যেরও কেন্দ্র ছিলো (যেহেতু তখনো রেফ্রিজারেটর আবিষ্কৃত হয়নি)। রাশিয়ার আগ্রহ মূলত ছিলো আলাস্কার সিন্ধুঘোটকের বহুমূল্য দাঁত ও সি-ওটারের পশমের ব্যবসায়। সে বাণিজ্য মূলত পরিচালনা করতো ব্যবসায়ী, পরিব্রাজক ও উদ্যোক্তাদের নিয়ে গড়ে ওঠা ‘রাশিয়ান-আমেরিকান কোম্পানি’ (RAC), যার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন রাশিয়ার জার প্রথম পল।

১৭৮৪ সালের ৩ আগস্ট আলাস্কায় বসতিস্থাপনের দ্বারা স্থায়ী উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করে রাশিয়ান জারের বণিক দল। এই উপনিবেশের মূল প্রশাসক ছিলেন RAC-এর বিচক্ষণ-বণিক আলেকজান্ডার বারানোভ। বসতিস্থাপনের সাথে সাথে তিনি অর্থোডক্স চার্চ, হাসপাতাল ইত্যাদি স্থাপন করেন এবং জনগণকে আলু ও রুটাবাগা চাষে উদ্বুদ্ধ করেন। দুর্গ ও জাহাজ কারখানা নির্মাণের সাথে সাথে জনগণকে তিনি সম্পৃক্ত করেন চা ও সি-ওটার বাণিজ্যের সম্প্রসারণে। আলাস্কার সাথে এই বণিকের যে কেবল টাকার সম্পর্ক ছিলো তা-ই নয়, তিনি এ অঞ্চলকে ধারণ করতেন হৃদয়ে, বিয়েও করেছিলেন আলাস্কার আদিবাসী আলেউট সম্প্রদায়ের এক মেয়েকে। বারানোভের কৃতিত্বে ফুলেফেঁপে উঠতে লাগলো রাশিয়ার রাজস্ব, প্রায় ১,০০০ শতাংশ মুনাফা অর্জন করে আলাস্কায় RAC-কে তিনি নিয়ে যান অনন্য মাত্রায়।

আলেকজান্ডার বারানোভ; Source:ahistoryblog.com

ফুরোতে লাগলো ‘রাশিয়ান আলাস্কা’র সুদিন

নর্দার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার ফোর্ট রসকে কেন্দ্র করে কৃষিবলয় গড়ে তুলবার উদ্যোগ নিয়েছিলেন বারানোভ। উদ্দেশ্য, অনুর্বর আলাস্কার জনপ্রয়োজন মেটাতে কৃষিজের উৎপাদন। প্রাকৃতিক নানা প্রতিকূলতার দরুন কৃষিপ্রকল্পের সে উদ্যোগ ফলপ্রসূ হয়নি। বাণিজ্যিক ক্ষতি পোষাতে তাই ১৮৪৪ সালে রাশিয়া ফোর্ট রসকে সীমান্তবাসী আমেরিকানদের কাছে বিক্রি করে বিদায় নেন। ‘গা বাঁচাতে পোশাক বিক্রি’র সেই হলো শুরু!

লেফটেন্যান্ট হ্যাজেমেইস্টার হলেন বারানোভের স্থলাভিষিক্ত। বণিকের বদলে ব্যবসা এলো সামরিক প্রশাসকের হাতে, তিনিও আলাস্কায় সামরিক একনায়কের কায়দাতেই চালাতে লাগলেন ব্যবসা। আদিবাসীদের কাছ থেকে সি-ওটারের পশম অর্ধেক দামে কিনে পকেট ভারি করতেন কোম্পানির প্রশাসক-কর্মকর্তারা। পরবর্তী ২০ বছরের মধ্যে আদিবাসী এস্কিমো ও আলেউটরা শিকার করতে করতে প্রায় শেষই করে ফেললেন সব সি-ওটার। ওদিকে শোষিত আদিবাসীদের ওপর রাশিয়ার দমন-নীতি বিদ্রোহকে আরো পুঞ্জীভূত করছিলো। এমতাবস্থায় ব্যবসায় আসে চরম মন্দা। যে আলাস্কা দু’হাত ভরে এতদিন রাজস্ব দিতো রাশিয়াকে, সেখানে বাৎসরিক ২ লক্ষ রুবল ভর্তুকি দিয়েও ব্যবসা তথা উপনিবেশ রক্ষাই হয়ে পড়লো দায়! কোম্পানিকেও তাই টিকিয়ে রাখা গেলো না!

সি-ওটার; Source:defenders.org

ক্রিমিয়ার যুদ্ধ দিলো নতুন মোড়

ওদিকে ইউরেশিয়ায় সাম্রাজ্যবাদী বলয় তখন দুটো- ব্রিটেন আর রাশিয়া। ১৮৫৩-৫৬ সালব্যাপী ক্রিমিয়ার যুদ্ধে ব্রিটেন তথা ব্রিটেন, ফ্রান্স, অটোমান সাম্রাজ্যের মিত্রশক্তির কাছে জার সাম্রাজ্য তথা রাশিয়ার পরাজয় ঘটে। ৮ লক্ষ রাশিয়ান হতাহত হবার সাথে সাথে রাশিয়ার বিপুল সম্পদহানিও ঘটেছিলো সে যুদ্ধে। তার আগেই অবশ্য রাশিয়াতে শোর ওঠে আলাস্কা বিক্রি করে দেওয়ার! কেন?

  • প্রথমত, আলাস্কা আয়তনে বিশাল। যুদ্ধাবস্থায় এর রক্ষণে যে পরিমাণ সেনাশক্তি ব্যয় করতে হবে, সেই খরচের অর্ধেক যোগানটাও দিতে পারে না ‘অনুৎপাদনশীল’ আলাস্কা। কেননা রাশিয়া আলাস্কার ‘খাজানা’র সন্ধান তখনো পায়নি। জনবিরল, সম্পদহীন জায়গার জন্য মূল ভূখণ্ডের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হোক, তা অনেকেই চাচ্ছিলেন না।
  • দ্বিতীয়ত, রাশিয়া ছিলো অর্থ সংকটে। উপরে বলা হয়েছে আলাস্কার জন্য কতটা লোকসান গুনতে হচ্ছিলো রাশিয়াকে। এমতাবস্থায় ‘অনুৎপাদনশীল’ আলাস্কা বিক্রি করে দিলে ক্ষতি তো নেই-ই, বরং উপরিকামাইয়ের সম্ভাবনা আছে।

ক্রিমিয়ার যুদ্ধে যদিও ব্রিটেন আলাস্কা আক্রমণ করেনি, কিন্তু রাশিয়ার ভয়টা রয়েই গেলো। এসবের সাথে যুক্ত হলো আলাস্কার আশপাশের জলসীমায় ব্রিটেনের তিমি শিকারি জাহাজের আনাগোনা। সেই সঙ্গে বাণিজ্যিক ক্ষমতা বিস্তারকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রচ্ছন্ন তৎপরতাও দেখা গেলো। রাশিয়া বুঝে গেলো, না আলাস্কা রেখে খুব লাভ আছে, না আলাস্কা ধরে রাখাও এতটা সহজ! রাশিয়ার ভ্রু কুঞ্চিত হতে হতে যখন কপালে ঠেকবার উপক্রম, তখন তারা সিদ্ধান্ত নিলো যে, “নাহ! আর নয়!” তখনই যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আলাস্কা বিক্রি করে দেবার সিদ্ধান্তে উপনীত হয় জার সাম্রাজ্য।

যুক্তরাষ্ট্রই কেন? কানাডা কেন নয়?

স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রশ্ন পাঠকমনে আসছে যে, আলাস্কা তো কানাডা লাগোয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ড থেকে অনেক দূরে। এমনকি আলাস্কার সাথে কানাডার ২,৪৭৫ কিলোমিটার সীমানাও রয়েছে। তবে কেন রাশিয়া তা কানাডার কাছে বিক্রি না করে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে করার সিদ্ধান্ত নিলো?

প্রথমত, কানাডা তখন ছিলো ব্রিটেনের ঔপনিবেশিক অংশ। নিজ তাগিদে আলাস্কা কিনে নেবে, এমন স্বায়ত্তশাসিত সরকারই তো ছিলো না সেখানে! অন্যদিকে রাশিয়া খুব সচেতনভাবেই চায়নি যে, ক্রিমিয়া যুদ্ধে যাদের কাছে তারা হেরেছে, তাদের কাছেই আলাস্কা বিক্রির নামে ‘রাষ্ট্রীয় সমপর্ণ’-এর দ্বারা সার্বভৌমত্বের গৌরব ক্ষুণ্ণ হোক। শুধু আত্মমর্যাদাবোধের ব্যাপারই নয়, তৎকালীন মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ব্রিটেনকে আলাস্কা দিয়ে দেবার মাধ্যমে সামরিক সুবিধা প্রদানেও নারাজ ছিলো রাশিয়া।

অন্যদিকে ক্রিমিয়া যুদ্ধে কাগজে-কলমে নিরপেক্ষ থাকলেও যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়াকে নানাভাবে নৈতিক সমর্থন যুগিয়েছিলো। সেই সাথে রাশিয়াকে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র-সহায়তাও প্রদানের কথাও প্রচলিত আছে। আবার যুক্তরাষ্ট্র তখনও রাশিয়ার প্রবল প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠেনি আজকের মতো। এই সমস্ত কারণ মিলিয়ে রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের হাতকেই আলাস্কা সঁপে দেবার জন্য ‘নিরাপদ’ ভেবেছিলো।

অবশেষে রাশিয়ার প্রস্তাব ও বিক্রি

ক্রিমিয়া যুদ্ধের বছর তিনেক পর ১৮৫৯ সালে রাশিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আলাস্কা বিক্রির প্রস্তাব উত্থাপন করে। কিন্তু সিদ্ধান্ত জানাবার মতো অবস্থায় ছিলো না যুক্তরাষ্ট্র, কেননা গৃহযুদ্ধে তারা নিজেরাই তখন ধুঁকছিলো। যুক্তরাষ্ট্রের কালক্ষেপণের সাথে সাথে রাশিয়াও প্রস্তাবে আনে সুবিধামতো শর্তারোপ। অবশেষে গৃহযুদ্ধ অবসানের দুই বছর পর ১৮৬৭ সালের ৩০ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অব দ্য স্টেট (পররাষ্ট্রমন্ত্রী) উইলিয়াম সেওয়ার্ড রাশিয়ার প্রস্তাব লুফে নেন। রাশিয়ার শর্ত মেনে নিয়েই সেওয়ার্ড ওয়াশিংটনে রাশিয়ার মন্ত্রী এদুওয়ার্দ দ্য স্তেকলের উপস্থিতিতে চুক্তি সাক্ষর করেন এবং ৭২ লক্ষ মার্কিন ডলারের বিনিময়ে ৫,১৮,৮০০ বর্গ কিলোমিটারের সুবিশাল আলাস্কা  কিনে নেন।

সেই ৭২ লাখের চেক!; Source:rbth.com

৯ এপ্রিল সিনেট কর্তৃক সে চুক্তিকে বৈধতা দেওয়া হলে ২৮ মে মার্কিন প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জনসন উক্ত চুক্তি দস্তখত করেন। অতঃপর সে বছরের ১৮ অক্টোবর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আলাস্কা হয়ে যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূ-পরিসীমার অংশ। এরই মাধ্যমে উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় অংশে রাশিয়ার একাধিপত্য ক্ষুণ্ণ হয় এবং উক্ত অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী প্রবেশের দরুণ এশিয়া-প্যাসিফিকের ক্ষমতা অনেকটাই যুক্তরাষ্ট্রে কেন্দ্রীভূত হয়।

আলাস্কা কিনে নেবার বিল; Source:nytimes.com

অযতনের আলাস্কাই বনে গেলো জ্যাকপট

কিনে নেবার পরের প্রায় তিনটি দশক অবধিও যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঐ অর্থে মনযোগই দেয়নি আলাস্কার ব্যাপারে। কখনো সেনাবাহিনী, কখনো নৌবাহিনী, কখনো কেন্দ্রীয় সরকারের রাজস্ব বিভাগ এর তত্ত্বাবধানে থাকলেও, ঐ অর্থে সংগঠিত কোনো সরকার ব্যবস্থায় তা কখনোই চালিত হয়নি। এমনকি প্রথম প্রশাসক মেজর জেনারেল জেফারসন ডেভিস ছিলেন গৃহযুদ্ধের পরাজিত পক্ষের কমান্ডার, তাই তার সঙ্গে তৎকালীন প্রেসিডেন্টের কোনো সংযোগই ছিলো না। বুঝতেই পারছেন কতটা অযত্নে-অবহেলায় পড়ে ছিলো আলাস্কা! অনেকেই মনে করছিলো, এত টাকা দিয়ে আলাস্কা কেনা সেওয়ার্ডের মুর্খামি ছাড়া অন্য কিছুই নয়!

এসবের মধ্যেই ১৮৯৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া তথা বিশ্ববাসীর জন্য আসে বিরাট এক চমক। আলাস্কার ইয়ুকুনে আবিষ্কৃত হয় স্বর্ণের খনি! এরপর একে একে অসংখ্য সোনার উৎস আবিষ্কৃত হতে থাকলে আলাস্কা তখন পরিণত হয় ‘ক্লনডাইক স্বর্ণক্ষেত্র’র প্রবেশদ্বারে! ওদিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আলাস্কার সামরিক কৌশলগত উপযোগিতাও প্রমাণিত হয়। সেওয়ার্ডের দূরদর্শিতা বিশ্ববাসী টের পেলো বহুদিন পর! যা-ই হোক, ১৯৫৯ সালের ৩ জানুয়ারি আলাস্কাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণাঙ্গ প্রদেশ ঘোষণা করা হয়। এই প্রদেশের জনগণ অবশ্য ১৮ অক্টোবরকেই ‘আলাস্কা দিবস’ হিসেবে পালন করেন।

ইয়ুকুনের সফল খনিশ্রমিকেরা; Source:history.howstuffworks.com

রাশিয়া কী বলছে?

স্বর্ণসমৃদ্ধ অঞ্চলটি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রকে কেবল কাঁড়ি কাঁড়ি রাজস্বই দিচ্ছে না, বরং তাকে যুক্তরাষ্ট্র আক্ষরিক ও দাপ্তরিকভাবেই পরিণত করেছে ‘মিলিটারি ডিস্ট্রিক্ট’-এ। এ নিয়ে রাশিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্টের প্রতিক্রিয়া কী? ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক আর্কটিক ফোরামে আলাস্কা সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে স্থিতিশীলতা বিঘ্নকারী হিসেবে অভিযুক্ত করে বলেন,

“যুক্তরাষ্ট্র আলাস্কায় তাদের মিসাইল সিস্টেম গড়ে তুলছে। এটা আর তাদের অভ্যন্তরীণ ইস্যু হয়ে নেই, কেননা এটা বিশ্ব-নিরাপত্তার প্রশ্ন।”

২০১৪ সালে ইউক্রেন থেকে ক্রিমিয়া দখল করে নেয় রাশিয়া। সেই ক্রিমিয়ার প্রধানমন্ত্রী সার্গেই আকসিয়োনোভও গত বছর ‘আলাস্কা বিক্রি’র দেড়শ বছর পুর্তির অনুষ্ঠানে আক্ষেপ করে বলেছেন,

“আজ আলাস্কা রাশিয়ার হলে পুরো বিশ্বের ভূ-রাজনৈতিক চিত্রটা অন্যরকম হতে পারতো।”

দূরদর্শী ক্রয়কারী উইলিয়াম সেওয়ার্ডের নামানুসারে আলাস্কার এই বন্দরটির নাম ‘সেওয়ার্ড’; Source: history.howstuffworks.com

বর্তমান প্রেক্ষাপটে ক্রিমিয়ার আদলে আলাস্কা পুনর্দখলের ব্যাপারে জনরায় না থাকলেও আলাস্কা বিক্রি প্রসঙ্গে রাশিয়ার প্রবল অনুতাপ সহজেই টের পাওয়া যায়। রাশিয়ার ডানপন্থী জাতীয়তাবাদীরা তো সরাসরি জার সম্রাটদের পারলে শূলেই চড়িয়ে দেন এমন সিদ্ধান্তের জন্য। কেননা আর্কটিকে একক রাশিয়ার প্রাধান্য বিস্তারের সমস্ত সম্ভাবনা আলাস্কা বিক্রির সাথেই মিলিয়ে গেছে, সেই সঙ্গে স্বর্ণ ও তেলখনি তো খোয়া গেছেই!

শুরুর দিকে রাশিয়ার জনগণ এই বিক্রিকে সাধুবাদ জানালেও পরবর্তীতে আলাস্কায় স্বর্ণখনি আবিষ্কারের পর ভুল ভাঙে তাদের। এই ভুল স্বীকারে অবশ্য রাশিয়ার গণমাধ্যম পর্যন্ত ‘ইগো’ দেখায় না, যে কারণে মস্কো টাইমসের মতো পত্রিকায়ও প্রকাশিত হয় “Five Reasons Why Russia Should Never Have Sold Alaska to the U.S.” শিরোনামে নিবন্ধ! যদিও পাঠপূর্বক একে একটু হালকা মেজাজের রসাত্মক নিবন্ধই মনে হয়, কেননা সেখানে ‘কারণ’ হিসেবে আলাস্কার টাটকা বাঁধাকপি, রাশিয়ার পুরুষের আকাল, আলাস্কার সুন্দর দ্বীপ, সমৃদ্ধ জাদুঘরের কথা বলা হয়েছে। তাতে কী? আক্ষেপ তো আর আড়াল হচ্ছে না, তাই না?

ফিচার ইমেজ: businessinsider.com

Related Articles