Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

রোমান সংলাপ: কেমন ছিল রোমান সেনার রোমাঞ্চকর জীবন?

‘Imperium sine fine’-ল্যাটিন ভাষায় প্রচলিত এই প্রবাদটির ভাবানুবাদ দাঁড়ায় ‘সীমাহীন সাম্রাজ্য’। অর্থাৎ, যে সাম্রাজ্যের কোনো নির্দিষ্ট সীমানা নেই। যতদূর চোখ যায়, শুধু এই সীমাহীন রাজ্যের ঝাণ্ডা সগৌরবে উড্ডীয়মান দেখা যায়। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, বাস্তবে কি কখনো এরূপ সীমাহীন সাম্রাজ্যের অস্তিত্ব ছিল? নাকি এটি শুধু কবি-সাহিত্যিকদের মনের নিছক কল্পনা? এর উত্তরে বলবো, বাস্তবে কোনো সীমাহীন সাম্রাজ্যের অস্তিত্ব ছিল না। তবে ল্যাটিন সাহিত্যে প্রচলিত এই প্রবাদটির উৎপত্তির পেছনে একটি সাম্রাজ্যের প্রত্যক্ষ অবদান রয়েছে, যার নাম ‘রোমান সাম্রাজ্য’। পৃথিবীর ইতিহাসে আজ পর্যন্ত সবচেয়ে শক্তিশালী সাম্রাজ্যের তালিকায় উচ্চারিত হবে এক কালের পরাক্রমাশীল রোমান সাম্রাজ্যের নাম। প্রায় দুই মিলিয়ন বর্গ মাইল ক্ষেত্র জুড়ে বিস্তৃত এই সাম্রাজ্যের সিংহাসনে আসীন ছিলেন জুলিয়াস সিজার, অগাস্টার সিজারের মতো বিশ্বজয়ী সম্রাট। শক্তিশালী সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পুরস্কার হিসেবে ইতিহাস তাদের অনন্তকাল ধরে মনে রাখবে। যুগের পর যুগ ধরে মানুষ জুলিয়াস সিজারের ইতিহাস জেনে রোমাঞ্চিত হবে। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্রাটদের তালিকায় ভাস্বর থাকবে তার নাম।

কিন্তু সিজার স্তুতির ছদ্মবেশে আড়াল হয়ে থাকবে রোমের প্রতি আত্মনিয়োজিত লাখো নাম না জানা সৈনিকের নাম। সৈনিকদের কথা মনে পড়তেই ট্রয় সিনেমায় আগামেমননের চরিত্রে অভিনয় করা ব্রায়ান কক্সের একটি কালজয়ী উক্তির কথা মনে পড়ে যায়। বীর সৈনিক অ্যাকিলিসের প্রতি তিনি বলেছিলেন, “ইতিহাস শুধু সম্রাটদের মনে রাখে; সৈনিকদের ঠাঁই ইতিহাসের পাতায় নেই।” বিশ্বাস করতে কষ্ট হলেও এটিই তিক্ত বাস্তবতা। যখন রোমান সম্রাটরা নিজ প্রাসাদে আমোদ-প্রমোদে ব্যস্ত ছিলেন, লাখ লাখ সৈনিক তখন গায়ের ঘাম ঝরিয়ে রণক্ষেত্রে রোমান সাম্রাজ্যের বিস্তারে যুদ্ধে রত ছিলো। এক একজন রোমান সৈনিকের শক্তিমত্তা এবং যুদ্ধকৌশলেই প্রমাণিত হতো রোমানদের দাপট। ইতিহাসের পাতায় অবহেলিত সেই রোমান সৈনিকদের সংগ্রামী জীবনের গল্প নিয়ে সাজানো হয়েছে আমাদের আজকের লেখাটি।

পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম বৃহত্তম সাম্রাজ্যের নাম রোম; Source: History

ভর্তি চলছে!

রোমান সংবিধান অনুযায়ী, রোমের মাটিতে জন্ম নেয়া প্রতিটি সন্তান একজন গর্বিত সৈনিক। সাম্রাজ্যের স্বার্থে তারা নিজের জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করতে বাধ্য হবে। তাই বছর জুড়ে রোমান সম্রাটের ফরমান অনুযায়ী বিভিন্ন সময়ে রোমান সেনাবাহিনীতে নতুন সৈনিক ভর্তি নেয়া হয়। রোমান সেনাসদস্য হতে হলে আপনাকে বাধ্যতামূলকভাবে পুরুষ হতে হবে! এই একটিমাত্র যোগ্যতাবলে আপনি পেয়ে যাবেন রোমান সেনাবাহিনীর সম্মানজনক চাকরি। তবে রাজ পরিবারের সেনারক্ষী নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্বল এবং উচ্চতায় খাটো পুরুষদের বাদ দেয়া হয়। একজন রোমান সৈনিক যুদ্ধ কৌশলে অত্যন্ত দক্ষ এবং বিপদের মুখে নির্ভীক হিসেবে সুপরিচিত।

একজন রোমান সৈনিককে বাধ্যতামূলকভাবে পুরুষ হতে হবে; Source: Pinterest

রোমান সেনাসদস্যের জন্ম এবং জাতিসূত্র অনুযায়ী দু’ভাগে ভাগ করা হয়- সাধারণ সেনাদল এবং রোমান লিজিয়ন। সাধারণ সৈনিকদের ক্ষেত্রে রোমের নাগরিকত্ব অর্জন করা বাধ্যতামূলক নয়। যুদ্ধক্ষেত্রে সর্বসম্মুখে যুদ্ধ করার জন্য তাদের ব্যবহার করা হয়। অন্যদিকে রোমান লিজিয়নদের রোমের সেরা বাহিনী হিসেবে অভিহিত করা হয়। একজন সাধারণ সৈনিকের তুলনায় এদের জীবন অত্যন্ত বৈচিত্র্যময়। ১৭ বছরের রোমান তরুণদের কঠোর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে একজন বিজয়ী হিসেবে গড়ে তোলা হয়। প্রতিটি লিজিয়ন প্রায় দশটি কোহর্ট কিংবা দলের সমন্বয়ে গঠিত হয়ে থাকে। বর্তমান যুগের সেনাবাহিনীর মতো রোমান সেনাদেরও বিভিন্ন পদবী দ্বারা সম্মানিত করার বিধান ছিল। পদাতিক, অশ্বারোহী, গোলন্দাজসহ প্রায় চার হাজার সৈনিকের একটি লিজিয়নের অধীনে কর্মরত থাকে। কিন্তু সম্রাট অগাস্টাসের শাসনামলে এই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ছয় হাজারের ঘরে গিয়ে পৌঁছায়। লিজিয়নের সর্বাধিনায়ককে ‘লিজেটাস’ পদবীতে ভূষিত করা হয়।

রোমান সেনার রোজনামচা

সেনাবাহিনীতে যোগদানের পর একজন রোমান সেনাসদস্যকে আরো সাতজন সহযোদ্ধার সাথে একটি কক্ষ ভাগাভাগি করে বাস করতে হয়। সূর্যোদয়ের পূর্বে প্রত্যেক সৈনিককে শয্যাত্যাগ করতে হয়। খুব দ্রুত রোমান উর্দি পরিধান করে সৈনিকরা সকালের নাস্তার উদ্দেশ্যে সেনা ব্লকের শেষ মাথায় নির্দিষ্ট তাঁবুর সামনে শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে অবস্থান করে। সেখানে শুকনো রুটি এবং ঝোলের সাহায্যে হালকা আহার সেরে নেয় তারা। সকালের নাস্তা নিয়ে কারো অভিযোগ থাকলেও সন্ধ্যার গরম গরম রুটির সাথে টাটকা সবজির সমন্বয়ে তৈরি নাস্তার লোভে সবাই চুপ করে থাকে। বিশেষ দিনে সেনাদের জন্য মাংসের ব্যবস্থাও করা হয়।

উর্দি পরিহিত এক রোমান সৈনিক; Source: Pinterest

নাস্তার পর দায়িত্বপ্রাপ্ত কয়েকজন সৈনিক বাদে বাকি সবাই প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে ময়দানে প্রত্যাবর্তন করে। দায়িত্বপ্রাপ্ত সৈনিকদের প্রশিক্ষণের বদলে নির্দিষ্ট দিনের জন্য সৈনিকদের বাসস্থানসহ বিভিন্ন স্থানের পরিষ্কার করার দায়িত্ব দেয়া হয়। গোসলখানা, শৌচাগার পরিষ্কার ছাড়াও সৈনিকদের রসদ এবং কাপড়ের যোগান তদারক করার কাজও এরা করে থাকে। তবে দায়িত্বপ্রাপ্তদের মধ্যে সেরা যোদ্ধাদের পুরো লিজিয়ন পাহারা দেয়ার গুরুদায়িত্ব ন্যস্ত করা হয়ে থাকে। যদিও ঘণ্টার পর ঘণ্টা নির্দিষ্ট স্থানে দাঁড়িয়ে চারদিকে কড়া নজর রাখার কাজটি করতে কেউই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না। তবে সৈনিক জীবনের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা হচ্ছে যুদ্ধ। যুদ্ধের জন্য বাকি সৈনিকরা তখন ময়দানে কঠোর পরিশ্রম করছে। তাদের গগনবিদারী রণচিৎকারে পুরো রোমান সাম্রাজ্য তখন নির্ভরতার নিশ্বাস ফেলছে।

সৈনিকের প্রশিক্ষণ শুরু

চাকুরি লাভের পর পরই শুরু হয়ে সৈনিকদের সুশৃঙ্খল জীবন। প্রতিটি সৈনিককে দৈনিক বিশ মাইলের মতো হাঁটতে হয়। এই অনুশীলনের সময় তাদের পিঠে ঝুলিয়ে দেয়া হয় ৮০ পাউন্ড ওজনের ভারি বোঝা। একজন সৈনিককে অবশ্যই সাঁতার কাটা, পর্বতারোহণ, বন উজাড় থেকে শুরু করে সবধরনের কাজের দক্ষতা অর্জন করতে হয়। এমনকি রাস্তাঘাট নির্মাণ এবং মেরামত, পরিখা খনন, দুর্গের দেয়াল নির্মাণ ইত্যাদি কাজের কঠোর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে একজন সৈনিক পূর্ণতা লাভ করে। ইতিহাসে আছে, পশ্চিম ইউরোপের নগরায়নে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে এর উন্নত পথঘাট। যার অধিকাংশই রোমান সৈনিকদের পরিশ্রমের ফসল। ইউরোপের প্রায় ২ লক্ষ ৫০ হাজার মাইল সড়কপথ নির্মিত হয়েছিলো রোমান সেনাদের হাতে।

রোমান লিজিয়নদের সর্বকালের সেরা যোদ্ধাদের মাঝে অন্যতম হিসেবে গণ্য করা হয়; Source: History

রোমান সৈনিকদের প্রশিক্ষণের প্রারম্ভেই জানিয়ে দেয়া হতো কিছু সাধারণ নিয়ম। যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রু শিবিরের সবচেয়ে দুর্ধর্ষ যোদ্ধাদের বধ করার পর তাদের মস্তক ছিন্ন করে প্রদর্শনের নির্দেশ ছিল রোমান সৈনিকদের উপর। এর ফলে যুদ্ধক্ষেত্রে সৈনিকদের উৎসাহ বৃদ্ধি পায় বলে মনে করতো তারা। পদাতিক সৈনিকদের কুচকাওয়াজ এবং দামামার আওয়াজে সর্বদা মুখর থাকতো প্রশিক্ষণ ময়দান। সুদক্ষ যোদ্ধাদের নিকট লিজিয়নরা দীর্ঘমেয়াদি তলোয়ার চালনা এবং বর্শা নিক্ষেপের প্রশিক্ষণ লাভ করতো। এমনকি খালি হাত এবং ভোঁতা অস্ত্রের সাহায্যে কীভাবে শত্রুর মোকাবেলা করতে হয়, তাও শেখানো হতো একজন সৈনিককে। গ্রীষ্মকালে সূর্য ডোবার পূর্ব পর্যন্ত সৈনিকদের প্রশিক্ষণ চলতো। সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে দলনেতার নির্দেশ অনুযায়ী সৈনিকদের বিভিন্ন শহর এবং বন্দরে ভ্রমণের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হতো। এর মাধ্যমে সৈনিকরা দেশের মাটি এবং মানুষকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের সুযোগ লাভ করতো।

সৈনিকদের মাঝে জন্ম নিতো প্রগাঢ় দেশপ্রেম। রোমান লিজিয়নদের নিজস্ব কোহর্টের সাথে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া হলেও সাধারণ সৈনিকদের প্রশিক্ষণ তলোয়ার এবং বর্শা নিক্ষেপের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকতো। সারাদিনের প্রশিক্ষণ শেষে ক্লান্ত সৈনিকরা নির্দিষ্ট স্থানে তাঁবু টানিয়ে বিশ্রাম করতো। কোনো বিশেষ ফরমান ব্যতীত সৈনিকদের দৈনন্দিন কার্যক্রমের পরিবর্তন করা হতো না। একঘেয়েমি জীবনযাপন করা সৈনিকরা কঠোর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে একদিন পূর্ণাঙ্গ সৈনিক হিসেবে গড়ে উঠতো। একজন সৈনিক তার জীবনের সিংহভাগ প্রশিক্ষণের পেছনে ব্যয় করতো। যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণহানির মাধ্যমে তারা রোমান সাম্রাজ্যের প্রতাপকে সমুন্নত রাখতে একবারও কুণ্ঠিত হতো না।

রোমের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সদা প্রস্তুত রোমান সেনাবাহিনী; Source: Pinterest

পদোন্নতি এবং সম্মাননা

একঘেয়ে জীবনযাপন করলেও একজন রোমান সৈনিকের জীবন অত্যন্ত বিচিত্র এবং ঘটনাবহুল। এক একটি যুদ্ধ মানেই একটি নতুন ঘটনার শুরু। অনেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণ হারাতো। তবে যারা ফিরে আসতো, তাদের জীবন সম্পূর্ণ বদলে যেত। ইতিহাসবিদদের মতে, রোমান সৈনিকদের কোনো স্বর্ণমুদ্রা কিংবা অর্থের লোভ ছিল না; বরং তাদের সমস্ত ক্ষুধা ছিল মর্যাদাপূর্ণ স্বীকৃতির প্রতি। তৎকালীন রোমে সামাজিক পরিমণ্ডলে সৈনিকদের আলাদা সম্মানের সাথে সম্বোধন করা হতো। যদি একজন রোমান সৈনিককে প্রশ্ন করা হতো, তার জীবনের উদ্দেশ্য কী? তাহলে সে নির্দ্বিধায় উত্তর দিতো, তার জীবনের উদ্দেশ্য রোমের জন্য প্রাণ বিসর্জন দেয়া। মৃত্যু তার জীবনের প্রধান লক্ষ্য। সেনাবাহিনীতে যোগদানের পূর্বে একজন তরুণ রোমান যুবক এসব শর্ত মেনে নিয়েই তার জীবনকে উৎসর্গ করে দিতো। একজন সৈনিকের যুদ্ধ থেকে ফেরত এসে নিজের পরিবারের সাথে পুনর্মিলিত হওয়ার সম্ভাবনা নিতান্ত কম থাকা সত্ত্বেও তারা হাজার মাইল দূরে পাড়ি দিতো এক মর্যাদাপূর্ণ স্বীকৃতি অর্জনের আশায়।

বীরত্বের পুরস্কার হিসেবে সৈনিকরা বিভিন্ন পদক লাভ করতো; Source: Pavel Spitsyn

প্রতিটি সৈনিককে তার বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ সম্রাট কর্তৃক পদোন্নতি প্রদান করা হতো। একজন লিজিয়ন তার প্রথম পদোন্নতি লাভ করতো ‘দেকানাস‘ নামক পদে। দেকানাস বর্তমান যুগের সার্জেন্টের সমতুল্য। তার অধীনে দশজন সৈনিকের দায়িত্ব প্রদান করা হতো। ধীরে ধীরে দেকানাস থেকে আরো উচ্চ পদে পদোন্নতি লাভ করতো একজন লিজিয়ন। এছাড়া বীর সৈনিকদের সম্মানসূচক পদক প্রদান করা হতো। আরমিলি, টর্ক, ফালিরিসহ বেশ কয়েকটি পদক প্রদানের মাধ্যমে সৈনিকদের উৎসাহিত করা হতো। যুদ্ধক্ষেত্রে সৈনিকরা বাহু কিংবা গলার চাদরের সাথে পদক পরিধান করতো। এর মাধ্যমে একজন সৈনিকের অদম্য স্পৃহা প্রকাশিত হতো।

অপরাধ করলে শাস্তি পেতেই হবে

রোমান সম্রাটরা বিশ্বাস করতেন, রোমের প্রতিপত্তিকে দীর্ঘস্থায়ী করতে হলে সুশৃঙ্খল এবং কঠোর নিয়মানুবর্তী সেনাবাহিনীর বিকল্প নেই। কিন্তু সবকিছুর উপরে সম্রাট সৈনিকদের আনুগত্যকে প্রাধান্য দিতেন। তাই ভীতু, দেশদ্রোহী কিংবা দুর্বল সৈনিকদের জন্য কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করে হয়েছিলো। বছরের সব মাসেই সৈনিকদের প্রশিক্ষণ অব্যাহত থাকতো। শীতকাল কিংবা গ্রীষ্মকালের অজুহাতে কোনো ধরনের ছাড় দিতে নারাজ ছিলেন দলনেতারা। প্রশিক্ষণ চলাকালীন কোনো সৈনিক ঘুমিয়ে পড়লে তার জন্য শাস্তি থাকতো মৃত্যুদণ্ড! বিশ্বাসঘাতকতা করলে সেঞ্চুরিয়ন রেজিমেন্টের সৈনিকদের বেত্রাঘাতসহ মৃত্যুদণ্ডের আদেশ বহাল ছিল। যুদ্ধক্ষেত্রে ভীরুতা প্রদর্শনের অভিযোগ পাওয়া গেলে পুরো কোহর্টকে শাস্তি ভোগ করতে হতো। এই সম্পর্কে একটি ঘটনা বলা যাক।

অপরাধ করলে একজন সৈনিককে বিভিন্ন উপায়ে শাস্তি প্রদান করা হতো; Source: Science Square

একবার রোমে গ্লাডিয়েটর যোদ্ধারা বিদ্রোহ করে বসলো। স্পার্টাকাস নামক এক গ্লাডিয়েটর ক্রীতদাসের নেতৃত্বে রোমের বিভিন্ন অঞ্চলের দাসরা এই বিদ্রোহে অংশগ্রহণ করলো। তৎকালীন রোমান লিজিয়নের অধিনায়ক ছিলেন মার্কাস লিসিনিয়াস ক্রেসাস। তিনি বিদ্রোহের সংবাদ লাভের পর বেশ কয়েকদিন মৌনতা অবলম্বন করেছিলেন। সেই সময় লিজিয়নের এক কনিষ্ঠ কমান্ডার ক্রেসাসের অনুমতি ব্যতিরেকে এক কোহর্ট সৈনিক নিয়ে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অভিযান করেন এবং শোচনীয়ভাবে পরাজিত হন। ক্রেসাসের মতো দাম্ভিক অধিনায়ক এই অপমান সহ্য করতে পারলেন না। তিনি সমগ্র কোহর্টকে ভীরুতার অপরাধে কঠিন শাস্তি প্রদানের অভিপ্রায় করেন। সম্রাটের অনুমতি সাপেক্ষে শেষপর্যন্ত পুরো কোহর্টের এক-দশমাংশ সৈনিককে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়। এমনকি তাদের নিজস্ব কোহর্টের সামনেই এই দণ্ড কার্যকরের আদেশ দেয়া হয়।

বেলা শেষের গল্প

প্রায় ২৫ বছরের দীর্ঘ সৈনিক জীবন শেষে একজন সৈনিককে সম্মানজনক অবসর প্রদান করা হয়। দুই দশকের সঙ্গী এবং প্রিয় বর্শা-তলোয়ারকে বিদায় জানিয়ে সে তার পরিবারের কাছে ফিরে যায়। সম্রাটের ফরমান অনুযায়ী একজন অবসরপ্রাপ্ত সৈনিককে নির্দিষ্ট পরিমাণ জমি প্রদান করা হয়। তার পরবর্তী জীবন কাটে নতুন সংসারে প্রিয়জনদের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে। আয়ের উৎস হিসেবে সে বেছে নেয় কৃষিকাজকে। গোধূলির মরা আলোয় বসে সে স্মৃতি রোমন্থন করে অতীত জীবনের। তখন তার চোখের সামনে জীবন্ত হয়ে উঠে রোমান সৈনিকদের রণচিৎকার। যা ধীরে ধীরে রূপান্তরিত হয় এক বুনো জয়োল্লাসে। তবে এতকিছুর পরেও একটি কিন্তু থেকে যায়। বেলা শেষের গল্পের শুভ সমাপ্তি লাভের জন্য তাকে অবশ্যই ২৫ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে হবে। যার সম্ভাবনা নিতান্তই কম!

২৫ বছরের সৈনিক জীবন শেষে সম্রাট প্রদত্ত জমিতে শেষ জীবন সুখে কাটানোর স্বপ্নে বিভোর থাকে প্রতিটি সৈনিক; Source: Tohad

ফিচার ইমেজ: getwallpapers.com

Related Articles