Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গের ছবি আঁকায় পথিকৃৎ হয়ে আছেন যারা

মেডিকেল শিক্ষাব্যবস্থার অপরিহার্য একটি অংশ হলো চিত্রাঙ্কন। মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গের হুবহু চিত্র আঁকা না জানলে মেডিকেলীয় শিক্ষা কখনো পরিপূর্ণ হয় না। একজন মেডিকেল পড়ুয়া শিক্ষার্থীই কেবল ভালো বলতে পারবে এই ব্যাপারে। আপনি যতই পড়াশোনা করুন, মুখস্থ করুন, ভুল আপনার হবেই, কিন্তু একবার কষ্ট করে একটি চিত্র আঁকতে শিখুন, সেটি আপনার কল্পজগতে খুব সহজেই ঢুকে যাবে। আপনার যখন সেটি স্মরণ করবার প্রয়োজন হবে, তখন দেখবেন কল্পজগতে সূক্ষ্মরূপে উঁকি দিচ্ছে চিত্রটি।

যা-ই হোক, এই লেখার বিষয় মেডিকেলীয় চিত্র সম্পর্কিত নয়। বরং মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গের চিত্র অঙ্কনে যে মানুষেরা পথিকৃৎ এবং স্মরণীয় হয়ে আছেন তাদেরকে নিয়েই সাজানো হয়েছে এই লেখাটি।

লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি

লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি; Source: simonandschuster.com

ফ্লোরেন্সের পশ্চিমে অবস্থিত ক্ষুদ্র এক শহর ‘ভিঞ্চি’-তে জন্মেছিলেন লিওনার্দো। লিওনার্দো যে বাড়িতে জন্মান সেই বাড়িটিকে বর্তমানে যাদুঘর হিসেবে ব্যবহার করা হয়, সেখানেই সংরক্ষিত আছে লিওনার্দো অঙ্কিত বেশ কিছু চিত্র।

লিওনার্দো নামটি যে কেবল ইতালিয়ান রেঁনেসা যুগের একজন গ্র্যান্ড মাস্টার হিসেবে পরিচিত তা নয়, অসাধারণ মেধা আর কৌতূহল নিয়ে জন্মানো মানুষটির নাম জুড়ে রয়েছে একজন ইঞ্জিনিয়ার, আবিষ্কর্তা, স্থাপত্যবিদ এবং অঙ্গসংস্থানবিদ হিসেবে। ছাত্রাবস্থাতেই অন্তত ৩০টির মতো মানবদেহ কাঁটাছেঁড়া করে দেহের বিভিন্ন অংশের স্কেচ করেছিলেন তিনি। মাংসপেশি, টেন্ডন, রক্তনালিসহ আরো অনেক কিছুই স্থান পেয়েছে সেই স্কেচগুলোতে।

মাইকেল অ্যাঞ্জেলো কিংবা রাফায়েলের মতো চিত্রশিল্পীগণও মানবদেহ কাঁটাছেঁড়া করে স্কেচ করেছেন। কিন্তু সেই স্কেচগুলো কেবল ত্বকের নিচে পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিলো। ত্বকের নিচে কেমন দেখা যাচ্ছে সেগুলোই উঠে এসেছে তাদের স্কেচে। লিওনার্দোর স্কেচগুলো দেহের আরো ভেতরের চিত্রসমৃদ্ধ। দেহের বিভিন্ন নরম অঙ্গের বিভিন্ন সেকশন, অঙ্গগুলো কীভাবে দেহে কাজ করেছে সেগুলোও তিনি বর্ণনার চেষ্টা করেছেন। লিওনার্দো কর্তৃক অঙ্কিত সবথেকে সমৃদ্ধ চিত্রগুলো হলো দেহের মাংসপেশির কাজ, পেশিগুলো কীভাবে বিভিন্নভাবে যুক্ত এবং তারা কীভাবে সম্মিলিতভাবে নড়নক্ষম হয়ে উঠে সেই ব্যাপারেও স্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে ছবিতে। পেশির স্কেচ ছাড়াও কঙ্কাল, বিভিন্ন অঙ্গ, এমনকি গর্ভাবস্থায় একজন নারীর জরায়ু কেমন রুপ ধারণ করে সেই দৃশ্যেরও দেখা মিলবে লিওনার্দোর কাজের মাঝে। আর ছবিগুলো যে কেবল একদিক থেকে আঁকা হয়েছে তা-ই নয়, সামনে থেকে, পেছনে থেকে কিংবা পাশ থেকে দেখলে কেমন দেখাবে সেই ছবিও এঁকেছেন লিওনার্দো।

অসম্ভব মেধাবী একজন চিত্রশিল্পী হিসেবে জ্ঞানের সকল শাখায় নিজের চিত্রাঙ্কনের ক্ষমতা ছড়িয়ে দেবার সাথে সাথে অঙ্গসংস্থানবিদ্যায়ও রয়েছে লিওনার্দোর অসংখ্য ছাপ। জীবদ্দশায় তিনি এসব স্কেচ আলাদা করে জমা করে রেখে দিয়েছিলেন, বই আকারে প্রকাশ করা হয়ে ওঠেনি আর সেগুলো। উত্তরাধিকারসূত্রে সেই স্কেচগুলো হাতে হাতে চালিত হয়ে একসময় গিয়ে পৌঁছায় লন্ডনের উইন্ডসর প্রাসাদে। পরবর্তীতে ১৭৯৬ সালে প্রথমবারের মতো স্কেচগুলো নিয়ে প্রকাশিত হয় বই।

মানুষের মাথার খুলি; Source: bbc.com

বক্ষপিঞ্জর ও পেটের সকল নরম অঙ্গের অবস্থান, পাশেই দেখানো হয়েছে হাত নাড়ানোর সময় পেশি ও হাড়গুলো কীভাবে নড়াচড়া করে; Source: drawingacademy.com

হৃৎপিন্ডের চিত্র; Source: enotes.com

ভিঞ্চি কর্তৃক অঙ্কিত ডান বাহুর বিভিন্ন পেশি, পেশিগুলোর নড়নক্ষমতার বর্ণনাও লিখিতভাবে রয়েছে পাশে; Source: royalcollection.org.uk

অ্যান্ড্রিয়াস ভেসালিয়াস

অ্যান্ড্রিয়াস ভেসালিয়াস; Source: americanhistory.si.edu

চিকিৎসক পরিবারে জন্ম নেয়ার সুবাদে অ্যান্ড্রিয়াস ভেসালিয়াসের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাও সম্পন্ন হয় একজন চিকিৎসক হিসেবেই। লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি কর্তৃক অঙ্কিত স্কেচগুলো যেহেতু ১৭৯৬ সালের আগে পর্যন্ত লুকায়িত ছিলো তার উত্তরসূরীদের মাঝে, সেহেতু সেগুলোর ব্যাপারেও জানা ছিলো না অ্যান্ড্রিয়াসের। তিনি নিজেও কোনো চিত্রশিল্পী ছিলেন না। ইতালির পাদুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সার্জারীর অধ্যাপক থাকাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের সহজে বোঝাতে ধমনী ও শিরার বিস্তারের উপর কিছু চার্ট তৈরি করেছিলেন। সেই চার্টগুলোতে যেসব ছবি ছিলো ওগুলো তিনি নিজেই এঁকেছেন। শিক্ষার্থীদের মাঝে যখন চার্টগুলোর প্রতি চাহিদা তৈরি হয়, তখন তিনি নিজের অঙ্কিত চিত্রগুলোসহ চিত্রশিল্পী জন স্টেফান ভন ক্যালকারকে দিয়ে কঙ্কালতন্ত্রের তিনটি চিত্র আঁকিয়ে নিয়ে সবগুলো একসাথে চার্ট আকারেই প্রকাশ করেন।

কিন্তু অ্যান্ড্রিয়াসকে আজও স্মরণ করা হয় তার অন্য একটি কাজের জন্য। বেশ কয়জন চিত্রশিল্পীকে নিয়োগ দেন তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পন্ন করতে। কাজটি হলো মানবদেহের বাইরের এবং ভেতরের নানান অংশ বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে এঁকে বই আকারে প্রকাশ করা। শত বাঁধা পেরিয়ে অ্যান্ড্রিয়াস তৎকালীন সময়ে অঙ্গসংস্থানবিদ্যার উপর অঙ্কিত কিংবা রচিত তুলনামূলক পূর্ণাঙ্গ একটি বই প্রকাশ করেন, যার নাম দেয়া হয় ‘ভেসালিয়াস ডি হিউম্যানি’। ছাপাখানায় প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতাকে বিবেচনা করেই বইটিকে ধরা হয় আধুনিক অঙ্গসংস্থানবিদ্যার উন্মোচনকারী হিসেবে।

মস্তিষ্কের সেরেব্রাম অংশটি ডান ও বাম পাশে পৃথক করা অবস্থায়; Source: gettyimages.com

ত্বকের নিচে থাকা পুরো দেহের চিত্র; Source: nyamcenterforhistory.org

ভেসালিয়াস কর্তৃক রচিত বইটি; Source: facsimilefinder.com

উইলিয়াম হান্টার

উইলিয়াম হান্টার; Source: commons.wikimedia.org

স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো শহরে জন্মেছিলেন উইলিয়াম হান্টার। গ্লাসগোতে পড়াশোনার পাট চুকিয়ে তিনি চলে আসেন লন্ডনে, পড়াশোনা শুরু করেন সেইন্ট জর্জ হাসপাতালে। অঙ্গসংস্থানবিদ্যা পড়ানোর জন্য পরবর্তীতে তিনি লন্ডনে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। মরদেহ কাঁটাছেঁড়া করতে এবং তা থেকে অঙ্গগুলোকে পড়াশোনার উপযোগী করে তুলে রাখতে নিয়োগ দেন ছোট ভাই জন হান্টারকে।

উইলিয়াম হান্টার রয়্যাল সোস্যাইটির একজন সম্মানিত ফেলো নির্বাচিত হবার পর তিনি শুরু করেন তার বিখ্যাত এক বই রচনার কাজ, ১৭৭৪ সালে বাজারে আসে তার বইটি, ‘অ্যানাটমি অব দ্য হিউম্যান গ্র্যাভিড ইউটেরাস’। বইটিতে সংযুক্ত ৩৩টির মতো জীবন্ত ছবি অধ্যয়নকারীদের মাঝে বিশেষভাবে সমদৃত হয়।

বইটিতে মহামূল্যবান এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ এই চিত্রগুলো সংযুক্ত করতে গিয়ে উইলিয়াম হান্টারের বেশ কয়েক বছর লেগে যায়। কেননা গর্ভে থাকা পূর্ণাঙ্গ শিশু সম্বলিত একটি মরদেহ পাওয়া খুবই দুষ্কর ছিলো, সেই সাথে ছাপাখানার অনগ্রসরতা তো ছিলোই।

এই বইটি সমধিক সমাদৃত হবার পর হান্টার কাজ শুরু করেন মানবদেহের সকল অংশের ছবিসম্বলিত একটি পূর্ণাঙ্গ অ্যাটলাস রচনার কাজে। সেই সময়টাতেই রাজপরিবারের লাইব্রেরিয়ান রিচার্ড ডালটন উইন্ডসার প্রাসাদে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি কর্তৃক অঙ্কিত অঙ্গসংস্থানবিদ্যার চিত্রগুলো আবিষ্কার করেন। ধারণা করা হয় যে, ডালটন হয়তোবা সেই চিত্রগুলো উইলিয়াম হান্টারকে দেখিয়ে থাকবেন। কেননা হান্টার রচিত অ্যাটলাস বইতে এমন অনেক প্রমাণ পাওয়া যায় যা দেখে মনে হবে হান্টার ভিঞ্চির চিত্রগুলো থেকে কিছুটা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।

জরায়ুর ভেতরে অবস্থিত জমজ দুই শিশু; Source: rcpilibrary.blogspot.com

গর্ভবতী একটি জরায়ুর বাইরের এবং ভেতরের দৃশ্য; Source: nlm.nih.gov

হেনরি গ্রে

হেনরি গ্রে; Source: wikipedia.org

লন্ডনে জন্ম নেয়া হেনরি গ্রের পড়াশোনাও সম্পন্ন হয় সেইন্ট জর্জ হাসপাতালে। তিনি পড়াশোনা করেন মেডিসিন এবং অ্যানাটমি নিয়ে। মাত্র ২৫ বছর বয়সেই তিনি আপন গুণে আর দক্ষতায় রয়্যাল সোস্যাইটির একজন ফেলো নির্বাচিত হন। সেইন্ট জর্জ হাসপাতালকে কেন্দ্র করেই চলতে থাকে গ্রের উত্থান। প্রথমে শিক্ষার্থী, তারপর একজন ডেমনস্ট্রেটর আর অ্যানাটমি মিউজিয়ামের কিউরেটরের দায়িত্ব সফলভাবে সম্পন্ন করে অবশেষে তিনি হন অ্যানাটমি বিভাগের একজন প্রভাষক।

হেনরি গ্রের মাস্টারপিস বইটি প্রকাশিত হয় ১৮৫৮ সালে, ‘অ্যানাটমি: ডেস্ক্রিপ্টিভ অ্যান্ড সার্জিক্যাল’। বইটিতে গ্রে নিজেই পূর্ণাঙ্গ মানবদেহ নিয়ে বিশদ বর্ণনা করেন। আর বর্ণনার পাশাপাশি তাতে ৩৬৩টি চিত্র এঁকে অবদান রাখেন হেনরি ভ্যানডাইক কার্টার নাম্নী অপর এক চিকিৎসক এবং চিত্রশিল্পী। কার্টার আর গ্রে দুজনেই একসাথে সেইন্ট জর্জে কাজ করেছেন, তখন থেকেই পরিচয়। উইলিয়াম হান্টারের ভাই জন হান্টার কর্তৃক সংগৃহীত অঙ্গগুলো সংরক্ষিত ছিলো হান্টারিয়ান মিউজিয়ামে। সেই মিউজিয়াম খুশিমতো কাজ করবার সুযোগ পেয়ে গেছিলেন কার্টার। এই সুযোগটিকেই কাজে লাগিয়েছিলেন তিনি গ্রের মাস্টারপিসে অবদান রাখার জন্যে।

হেনরি গ্রে কর্তৃক রচিত বইটিকে এখনও, এত বছর পরেও চিকিৎসাবিজ্ঞানের একটি প্রাথমিক বই হিসেবে পড়ানো হয়। শুধু যে পড়ানো হয় তা-ই নয়, অ্যানাটমির সকল বইয়ের গুরু মানা হয় হেনরি গ্রে রচিত বই ‘গ্রে’স অ্যানাটমি’-কে। মাত্র ৩৩ বছর বয়সে স্মল পক্সে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন গ্রে। কার্টার যতদিন বেঁচে ছিলেন, বোম্বেতে অ্যানাটমির শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। গ্রে যদিও কোনো চিত্রশিল্পী নন, কার্টার অঙ্কিত চিত্রগুলো জীবন্তরূপে মানুষের মাঝে সমধিক গৃহীত হয়েছে কেবলমাত্র গ্রের অসাধারণ বইটির জন্যই। দেড়শো বছর পরেও এখনো বইটির নতুন নতুন সংস্করণ প্রকাশিত হয়। ভাবতেই অবাক লাগে, তাই না? একটি বই কতটা স্বয়ংসম্পূর্ণ হলে এমনটি হওয়া সম্ভব!

গ্রে’স অ্যানাটমির মলাট; Source: amazon.in

হেনরি কার্টার অঙ্কিত প্লীহার ভেতরের গঠন; Source: arstechnica.com

হেনরি কার্টার অঙ্কিত মস্তিষ্কে রক্তপ্রদানকারী ধমনীর ছবি, ধমনীগুলো মিলে একটি লুপের মতো তৈরি করে রেখেছে, একে বলা হয় Circle of Willis; Source: wikipedia.org

হেনরি কার্টার অঙ্কিত বক্ষপিঞ্জরের নরম অঙ্গগুলোর ছবি; Source: radiopaedia.org

হেনরি কার্টার অঙ্কিত পায়ের হাড়গুলোর ছবি; Source: pinterest.com

ফ্র্যাংক এইচ নেটার

ফ্র্যাংক এইচ নেটার; Source: medicalart.johnshopkins.edu

ফ্র্যাংক এইচ নেটার, ইলাস্ট্রেশনের কাজ করবার এক পর্যায়ে; Source: note9.info

লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি পরবর্তী সময়ে প্রথমবারের মতো চিকিৎসাবিজ্ঞানে প্রবেশ করলেন অসাধারণ এক চিত্রশিল্পী। একজন ভালো মানের চিত্রশিল্পী হবার পাশাপাশি তিনি ছিলেন একজন চিকিৎসক। ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকতে পছন্দ করতেন তিনি, স্বপ্ন দেখতেন একজন বড় মাপের চিত্রশিল্পী হবার। হয়তো আমরা কখনো মেডিকেল বিষয়ক চিত্র তার কাছ থেকে পেতাম না যদি না তার পরিবার তাকে জোর করে চিকিৎসাশাস্ত্র পড়তে পাঠাতো। চিত্রশিল্পী হবার স্বপ্ন নিয়েই তিনি প্রথমে পড়াশোনা করেন ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব ডিজাইন অ্যান্ড আর্ট স্টুডেন্টস লিগে। পরিবারের চাপে চিত্রশিল্পী হবার পাট চুকিয়ে প্রবেশ করতে হয় নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যাল মেডিকেল কলেজে।

ছাত্রাবস্থা থেকে শুরু করে কর্মজীবনের শুরুর দিকের প্রতিটি ধাপে তিনি প্রমাণ পেয়েছেন যে, তার ধারালো ব্লেডটির পরিবর্তে মানুষের উপকারে তার রঙ-তুলির ব্রাশটিই অধিক উপকারী। ছাত্রাবস্থা থেকেই শিক্ষকদের সুবিধার্থে মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গের ছবি এঁকে দিতে তিনি সমধিক পরিচিত ছিলেন। সবকিছু ভেবে নিয়েই তিনি হুট করে রোগী দেখা বন্ধ করে মন দেন ছবি আঁকাতে। শুরু করেন চিকিৎসাশাস্ত্রের বিভিন্ন ছবি অঙ্কনের কাজ।

অপর চারজন ব্যক্তির চেয়ে নেটারের এই চিত্রাঙ্কনে অধিক সুযোগ ছিলো, কেননা নেটারই একমাত্র ব্যক্তি যিনি চিকিৎসক হবার পাশাপাশি একজন সুদক্ষ চিত্রশিল্পী। তাছাড়া চিকিৎসাবিজ্ঞানের পাশাপাশি ছাপাখানাও উন্নত হয়ে গেছে ততদিনে। সবদিক থেকেই নেটারের ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়াতে তিনিই তৈরি করলেন প্রথমবারের মতো পূর্ণাঙ্গ এক অ্যাটলাস, অ্যাটলাস অব হিউম্যান অ্যানাটমি। এতে স্থান পেয়েছে মানবদেহের প্রতিটি অংশের পৃথক চিত্র; প্রতিটি নরম অঙ্গ, রক্তসংবহনতন্ত্র, স্নায়ুতন্ত্র, লসিকাতন্ত্রসহ শরীরের সকল তন্ত্রের ছবি রয়েছে পৃথক পৃথকভাবে। ভাগ্য যেমন সুপ্রসন্ন ছিলো, নেটার কাজটিও করেছেন তেমনি ভাবেই।

এই সেই বিখ্যাত বই, ফ্র্যাংক এইচ নেটার রচিত অ্যাটলাস অব হিউম্যান অ্যানাটমি, যা পুরো পৃথিবীর চিকিৎসাশাস্ত্রের প্রাথমিক বইগুলোর একটি; Source: ivi.md

নেটারের অঙ্কিত মানুষের মাথার খুলি ; Source: muvag.info

ছবিটিতে প্রদর্শিত হচ্ছে মানুষের মাথা ও গলার পাশে যেসকল পেশি ও নার্ভ রয়েছে তা; Source: muvag.info

বক্ষপিঞ্জরের নরম অঙ্গগুলো; Source: lchsreunion.info

ছবিটি হৃৎপিন্ডের সামনের অর্ধেক কর্তিত অবস্থায় ভেতরের সবকিছু প্রদর্শন করছে; Source: muvag.info

পায়ের হাড় ও হাড়গুলো যেসব লিগামেন্ট দিয়ে যুক্ত থাকে; Source: winkbooks.net

নেটারের এই অ্যাটলাস এখনো চিকিৎসাবিজ্ঞানের একটি অবিসংবাদিত বই হিসেবে পড়ানো হয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানে ভর্তি হওয়া প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া হয় বইটি। এটি এতটাই স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি বই যে, পুরো পৃথিবীতে একযুগে পড়ানো হয় নেটার রচিত বইটিকে। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ কপি মুদ্রিত হয়, আসে নতুন সংস্করণ, রঙিন এই চিত্রগুলো ছাড়া যেন চিকিৎসাশাস্ত্র অসম্পূর্ণই থেকে যেতো। বইটি যে শুধু প্রথম বর্ষ ব্যবহার করে তা নয়, একজন চিকিৎসকের সারাজীবনই নির্ভর করতে হয় এর উপর, শুরুটা যে একে দিয়েই!

ফিচার ইমেজ: note9.info

Related Articles