Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

নিষিদ্ধ হওয়া সংখ্যার কথা!

নিষিদ্ধ বই, নিষিদ্ধ চলচ্চিত্র, নিষিদ্ধ চিত্রকর্মের কথা শোনা যায় অহরহই। কিন্তু নিষিদ্ধ সংখ্যার কথা কি কখনো শুনেছেন? শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে, কিন্তু সত্যি সত্যিই বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থানে কিছু সংখ্যাও কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছিল। কখনো এর পেছনে কারণ ছিল স্রেফ কুসংস্কার আবার কখনো নতুন আবিষ্কারকে গ্রহণ না করতে চাওয়ার গোঁড়ামি থেকে। কিংবা কখনো বিপ্লব-বিদ্রোহের ভয়ে ভীত হয়ে। এরকম কিছু নিষিদ্ধ সংখ্যার গল্প নিয়েই আমাদের আজকের আয়োজন।

অমূলদ সংখ্যা

হিপ্যাসাস এবং তার অমূলদ সংখ্যার একটি কার্টুন; Image Source: Twitter

সংখ্যা নিষিদ্ধের সবচেয়ে প্রাচীন ঘটনাটি হল খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকের। গণিতবিদ পিথাগোরাসের গণিতশাস্ত্রের প্রভাবে সে সময় প্রাচীন গ্রীসেের জ্ঞান-বিজ্ঞানের সব শাখায় গণিতের জয়জয়কার চলছিল। উন্মোচিত হচ্ছিল নতুন নতুন সম্ভাবনার দ্বার। সে সময় হিপ্যাসাস নামে আরেক গণিতবিদ নতুন একধরনের সংখ্যার ধারণা আবিষ্কার করেন। তিনি লক্ষ্য করেন, এক একক বিশিষ্ট কোনো বর্গক্ষেত্রের কর্ণকে (√2) কোনো পূর্ণসংখ্যার অনুপাত হিসেবে প্রকাশ করা যায় না।

এ সংখ্যাগুলোকে বর্তমানে অমূলদ সংখ্যা বলা হয়। কিন্তু সে সময়ের পীথাগোরিয়ান গণিতবিদরা তার আবিষ্কৃত নতুন ধারণা গ্রহণ করতে প্রস্তুত ছিল না। তারা এমন একটি নিখুঁত জগত কল্পনা করতেন, যেখানে সবকিছুই সংখ্যার মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা যায়, এবং যেখানে সব সংখ্যাকেই সুনির্দিষ্ট উপায়ে প্রকাশ করা যায়। হিপ্যাসাসের আবিষ্কারকে তারা তাদের দর্শনের প্রতি হুমকি হিসেবে বিবেচনা করেন। ফলে তারা এই সংখ্যাগুলোকে নিষিদ্ধ করেন এবং হিপ্যাসাসকে নির্বাসিত করেন। জনশ্রুতি অনুযায়ী, প্রকৃতিবিরুদ্ধ গণিত আবিষ্কার করার শাস্তি হিসেবে তাকে সমুদ্রের পানিতে ডুবিয়ে হত্যা করা হয়েছিল।

শূন্য (০)

বর্তমানে শূন্য ছাড়া আমরা হিসাব-নিকাশ করার কথা চিন্তাও করতে পারি না, অথচ মধ্যযুগে সমগ্র ইউরোপে যে রোমান সংখ্যা পদ্ধতি ব্যবহৃত হতো, তাতে শূন্যের কোনো অস্তিত্বই ছিল না। তবে একই সময় ভারতে এবং আরবে শূন্যের ব্যবহার প্রচলিত ছিল। ত্রয়োদশ শতাব্দীতে গণিতবিদ ফিবোনাচ্চি মধ্যপ্রাচ্য ভ্রমণের পর আরবদের সংখ্যাপদ্ধতি দ্বারা প্রভাবিত হয়ে শূন্যের বহুবিধ প্রয়োগ এবং অপার সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন

সেটি ছিল ক্রুসেডের সময়। সে সময় যেকোনো আরব ধারণা, এমনকি গণিতকেও সন্দেহের চোখে দেখা হতো এবং বর্জন করা হতো। ফলে ১২৯৯ সালে ইতালির ফ্লোরেন্সে শূন্যের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়, সেই সাথে নিষিদ্ধ করা হয় অন্যান্য আরবি সংখ্যা প্রতীকও। অবশ্য ধর্মীয় কারণ ছাড়া এ নিষেধাজ্ঞার পক্ষে কয়েকটি বাস্তবিক কারণও ছিল। যেকোনো সংখ্যার শেষে কয়েকটি শূন্য বসিয়ে খুব সহজেই তার মান দশ, একশ বা হাজার গুণ পরিবর্তন করে ফেলা সম্ভব ছিল। এছাড়া শূন্যের ব্যবহার শুরু হলে ঋণাত্মক সংখ্যা ব্যবহারের পথও উন্মোচিত হয়ে যেত, যা গ্রহণ করার জন্য সে সময়ের ইউরোপ প্রস্তুত ছিল না।

১৪, ৮৮, ১৮

নব্য নাৎসি, সাদা আধিপত্যবাদী এবং অন্যান্য উগ্রপন্থী সন্ত্রাসী সংগঠন কর্তৃক ব্যবহৃত হওয়ার কারণে বিশ্বের বেশ কিছু স্থানে ১৪, ৮৮, ১৮ সহ আরো কিছু সংখ্যার ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা আছে। উদাহরণস্বরূপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডোর গ্রিলি-ইভান্স স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের রাগবি খেলায় অংশগ্রহণ কিংবা উপভোগ করার সময় ১৩, ১৪ এবং ১৮ নম্বর জার্সি পরা নিষেধ

সাদা আধিপত্যবাদী নেতা কার্টিস অ্যালজিয়ারের মুখে ১৪, ৮৮ সহ বিভিন্ন সংখ্যা ও প্রতীকের ট্যাটু; Image Source: dayre.me 

২০০৭ সালে বেলজিয়ামের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বেলজিয়ান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের প্রতি একটি চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেন, যেন গ্যালারিতে দর্শকদের কোনো নাম ছাড়া শুধু ৮৮ এবং ১৮ নম্বর বিশিষ্ট জার্সি পরিধান করার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এমনকি, একটি দাতব্য সংস্থায় ১,৪৮৮ ইউরো দান করায় স্লোভাকিয়ার এক চরম ডানপন্থী দলের নেতা মারিয়ান কোটলেবার বিরুদ্ধে গত বছর আইনি ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছে!

কলোরাডোর স্কুলে ১৩ এবং ১৪ সংখ্যা দুটি স্থানীয় দুটি সন্ত্রাসী সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত হলেও বাস্তবে সাদা আধিপত্যবাদীদের দ্বারা ১৪ সংখ্যাটির ব্যবহার আরো ব্যাপক। ‘দ্য অর্ডার’ নামক যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক একটি সাদা আধিপত্যবাদী সংগঠনের নেতা ডেভিড লেন সর্বপ্রথম তাদের ১৪টি শব্দ বিশিষ্ট দলীয় শ্লোগান বোঝাতে ১৪ তথা ‘ফোর্টিন ওয়ার্ডস’ নামটির প্রচলন করেন। তাদের দলীয় প্রচার-প্রচারণার জন্য ‘ফোর্টিন ওয়ার্ড প্রেস’ নামে একটি প্রকাশনী সংস্থাও চালু ছিল, যা পরর্তীতে বিলুপ্ত হয়ে যায়।

ফোর্টিন ওয়ার্ডসের মূলমন্ত্র; Image Source: orderofodalists.files.wordpress.com

নব্য নাৎসি এবং সাদা আধিপত্যবাদী সংগঠনগুলো ১৪ সংখ্যাটির পাশাপাশি ৮৮ সংখ্যাটিও ব্যবহার করে। তাদের বিভিন্ন প্রচার-প্রচারণায় অনেক সময়ই ১৪/৮৮ বা ১৪৮৮ এর ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। এখানে ৮৮ সংখ্যাটি দ্বারা মূলত হিটলারের আদর্শের বিজয় কামনা করা হয়। ইংরেজিতে ৮ম অক্ষরটি H হওয়ায় ৮৮ দ্বারা HH তথা Heil Hitler বোঝানো হয়। অন্যদিকে ১৮ সংখ্যাটি দ্বারা এ ধরনের সংগঠনগুলো হিটলারকে বুঝিয়ে থাকে, যেখানে ১ দ্বারা A তথা Adolf এবং ৮ দ্বারা H তথা Hitler বোঝানো হয়।

চরম ডানপন্থী সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো সাধারণত সহিংস কর্মকান্ডের ক্ষেত্রে ১৪, ১৮, ৮৮ এ জাতীয় সংখ্যাগুলো ব্যবহার করে থাকে। ২০০৮ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পূর্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসিতে  সাদা আধিপত্যবাদীরা ডেমোক্র্যাট দলের কৃষ্ণাঙ্গ প্রার্থী বারাক ওবামাকে হত্যা প্রচেষ্টার সময় ‘ফোর্টিন ওয়ার্ড’ শ্লোগান দিয়েছিল। ওবামাসহ মোট ৮৮ জন আফ্রিকান আমেরিকান নাগরিককে তারা হত্যা করার পরিকল্পনা ছিল তাদের, যাদের মধ্যে ১৪ জনকে শিরশ্ছেদ করার কথা ছিল।

৪, ৬, ৮৯

তিয়েনানমেন গণহত্যার একটি ছবি; Image Source: Vision Times

রাজনৈতিক কারণেও অনেক সময় কোনো সংখ্যা নিষিদ্ধ হতে পারে, বিশেষ করে সংখ্যাটি যদি হয়ে থাকে কোনো বিপ্লব, বিদ্রোহ কিংবা বিরোধী দলীয় আদর্শের সাথে জড়িত। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ হচ্ছে চীন। ১৯৮৯ সালের ৪ জুন চীনের তিয়েনানমেন স্কয়ারে ছাত্রদের আন্দোলনের উপর চালানো গণহত্যায় কয়েকশো ছাত্র নিহত হয়েছিল। ঘটনাটি চীনে ‘জুন ফোর্থ ইনসিডেন্ট’ নামে পরিচিত। মানুষ যেন দিবসটি সম্পর্কে বেশি কিছু জানতে না পারে, সেজন্য ২০১২ সাল থেকে শুরু করে কয়েক বছর দিবসটির বার্ষিকীতে চীনের সার্চ ইঞ্জিনগুলোতে ৪, ৬, ৮৯ সংখ্যাগুলো এবং তাদের বিভিন্ন সমন্বয় সার্চ করা নিষিদ্ধ ছিল। একইসাথে সেদিন ‘আজ’, ‘এইদিন’ শব্দগুলোকেও নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।

কম্পিউটার কোড

টেক্সটকে সংখ্যায় রূপান্তর; Image Source: convert.town

কম্পিউটারে সব কিছুই ডিজিট ভিত্তিক, অর্থাৎ 1 এবং 0 এর সমন্বয়ে গঠিত। আমরা যখন কোনো ছবি কম্পিউটারের পর্দায় দেখি, বাস্তবে ছবিটির প্রতিটি বিন্দু এক একটি সংখ্যা দ্বারা গঠিত। ফলে পুরো ছবিটিকেই ইচ্ছে করলে বিশাল বড় একটি সংখ্যার মাধ্যমে প্রকাশ করা সম্ভব। এখন কোনো ডিজিটাল ছবি যদি সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য নিষিদ্ধ হয়, তাহলে আমরা বলতে পারি, ঐ বিশাল সংখ্যাটিও নিষিদ্ধ। 

সরলীকরণের জন্য যদি আমরা ধরে নিই, কোনো দেশের আইনে কম্পিউটারে গোলাপী রং ব্যবহার করা নিষেধ, তাহলে গোলাপী রংয়ের ASCII কোড 255,0,128-ও এক হিসেবে নিষিদ্ধ হিসেবে গণ্য হয়ে যায়। অথবা, যদি কোনো দেশে Heil Hitler শব্দ দুটি লেখা বা প্রচার করা নিষিদ্ধ হয়, তাহলে এর প্রতিটি বর্ণকে ASCII কোডে রূপান্তরিত করলে যে সংখ্যাটি দাঁড়াবে (72,101,105,108,32,72,105,116,108,101,114), সেটিও প্রচার করা নিষিদ্ধ হতে পারে।

ডিভিডির ডিক্রিপশন কী হিসেবে ব্যবহৃত পতাকা; Image Source: Wikimedia Commons

কম্পিউটারে সংখ্যার উপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি প্রথম আলোচনায় আসে ২০০৭ সালে, যখন অবৈধভাবে ডিভিডি কপি করার কাজে ব্যবহৃত একটি ডিক্রিপশন কী, যা মূলত বিশাল একটি সংখ্যা, তা ব্যাপকভাবে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে। সে সময় Motion Picture Association of America এবং Advanced Access Content System Licensing Administrator কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন ওয়েবসাইট এবং ব্লগকে আইনী চিঠি পাঠিয়ে এই সংখ্যাটি সংক্রান্ত সকল পোস্ট মুছে ফেলার নির্দেশ দেয়

কিন্তু ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা একটি সংখ্যাকে নিষিদ্ধের বিষয়টি নিয়ে বিরোধিতা করে এবং ব্যাপক ডিজিটাল বিদ্রোহ গড়ে তোলে। তারা প্রতিবাদের অংশ হিসেবে সংখ্যাটিকে হেক্সাডেসিমাল সংখ্যায় রূপান্তরিত করে তিনটি করে সংখ্যাকে এক একটি গ্রুপে স্থান দেয়, যার ফলে এক একটি গ্রুপ একেকটি রংকে নির্দেশ করে। এরপর রংগুলোকে পাশাপাশি স্থান দেওয়ার মাধ্যমে তারা একটি পতাকা তৈরি করে সেটি ব্যাপকভাবে শেয়ার করতে শুরু করে, যা থেকে খুব সহজেই মূল সংখ্যাটি পুনরুদ্ধার করা যায়। শেষ পর্যন্ত অবশ্য সংখ্যাটি নিষিদ্ধ করার ব্যাপারটি আইনগতভাবে বেশি দূর গড়ায়নি এবং সংখ্যাটি প্রকাশ করার অভিযোগে কারো বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়নি।

ফিচার ইমেজ- Daily Express

Related Articles