Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

প্রাচীন পারস্যের নারকীয় যত শাস্তি

প্রাচীন পারস্যের জনগণ ন্যায়বিচার বিশ্বাস করতো। যেকোনো অপরাধ করার জন্যই অপরাধীদের জন্য ছিল খুবই কড়া এবং উপযুক্ত শাস্তি। কোনো অপরাধীকেই তার প্রথম অপরাধের ফলে কঠিন শাস্তি দেওয়া হতো না। বরং বিচার করার আগে তার ভালো কাজগুলোও বিবেচনায় আনা হতো। এত কিছু করার পর শুধুমাত্র তাদেরই শাস্তি দেওয়া হতো যাদের কৃতকর্মের জন্য উপযুক্ত শাস্তি আবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

যদি কোনো অপরাধীর পাপের বোঝা যথেষ্ট হতো, পারস্যবাসীরা তার শাস্তি দিতে কোনোরকম কার্পণ্য বোধ করত না। তারা এমন সব অভাবনীয় পদ্ধতির শাস্তির প্রচলন ঘটিয়েছিল যা একইসাথে সৃজনশীল এবং নারকীয়ও বটে! মধ্যযুগের গিলোটিন কিংবা আধুনিক যুগের বুলেটের মতো শাস্তিগুলো মোটেই স্বল্পসময়ের জন্য না, প্রাচীন পারস্যবাসীরা দীর্ঘসময় ধরে অপরাধীদের স্নায়ুতন্ত্রের শেষ সহ্যক্ষমতাও নিংড়ে নেওয়ার জন্য সর্বদা প্রস্তুত ছিল।

চামড়ার চেয়ার এবং একজন সিসামনেস

পারস্যের বিখ্যাত এক বিচারক সিসামনেস ঘুষ নেওয়ার সময় ধরা পড়লে রাজা দারিউস দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লাগলেন। রাজা দারিউসের সভার অন্যান্য ব্যক্তিবর্গরা চিন্তাভাবনা করতে থাকলেন কিভাবে ন্যায়বিচার হতে পারে। পরবর্তী বিচারক যেন ভুল করেও ঘুষ নেওয়ার পথ না মাড়ায় সেজন্য অভাবনীয় এক শাস্তির বিধান প্রবর্তন করলেন তারা।

সিসামনেসকে গলা কেটে জবাই করার পর দারিউস জল্লাদদের আদেশ দিলেন সিসামনেসের দেহের প্রতিটি ইঞ্চি থেকে তার চামড়া আলাদা করে ফেলার জন্য! তারপর এসব টুকরো সেলাই করে জোড়া দিয়ে বানানো হলো চেয়ার! মানুষের চামড়া দিয়ে তৈরি করা এই চেয়ার তৈরি করা হলো পরবর্তী বিচারকদের জন্য, যেন তারা তাদের পূর্ববর্তীদের অপরাধ থেকে শিক্ষা নিতে পারে।

দুর্ভাগ্যজনকভাবে সিসামনেসের চামড়ার চেয়ারে বসা প্রথম ব্যক্তি হলো তারই নিজের ছেলে! বিচারকাজ চালানোর জন্য প্রতিদিনই সিসামনেসের ছেলেকে তার বাবার চামড়া দিয়ে বানানো চেয়ারে বসতে হতো। এভাবেই নিজের সাম্রাজ্যে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করলেন রাজা দারিউস!

ছবিসূত্র: Wikimedia Commons

ছাই এবং শ্বাসরোধ

প্রাচীন পারস্যদেশে নৃশংসভাবে শাস্তি দেওয়ার আরেকটি বিধান ছিলো ছাইয়ের মাধ্যমে শ্বাসরোধ করে মৃত্যুদন্ড এবং এগুলো বরাদ্দ ছিল সবচেয়ে খারাপ অপরাধের জন্য। রাজ্যের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা এবং দেবতাদের বিরুদ্ধাচরণ করা ব্যক্তিদের জন্য শাস্তিটি আসলেই ছিল ভয়াবহ দুঃস্বপ্নের মতো।

অপরাধীদেরকে প্রায় ৭৫ ফুট উঁচু একটি ছাইয়ে ভরা টাওয়ার থেকে নিচে ফেলে দেওয়া হতো। ছাইয়ের স্তূপ অপরাধীর পতন কিছুটা রোধ করলেও দুই-একটা হাড় ভাঙা অসম্ভব কিছু ছিল না। এরপর চাকা ঘুরিয়ে অপরাধীর উপর চাপিয়ে দেওয়া হতো ছাইয়ের বিশাল স্তূপ। আসামীর নাক-গলার ভিতরে কিছুক্ষণের মধ্যেই ছাই ঢুকে যেত এবং শ্বাসরোধ হয়ে মৃত্যুবরণ করত। অপরাধী ব্যক্তির মৃতদেহের অবশেষটুকুও তার পরিবার নিয়ে যেতে পারত না।

ছবিসূত্র: STEP Project Wiki

রোমান সম্রাট এবং গলিত সোনা

রোমান সম্রাট ভ্যালেরিয়ান পার্সিয়ান সৈন্যদের কাছে ধরা পড়ার পর তার জীবন সোজা কোথায় নরকে পরিণত হয়। তৎকালীন পারস্য সম্রাট প্রথম শাপুর ভ্যালেরিয়ানকে নিজের দাস হিসেবে ব্যবহার শুরু করেন এবং যতটা সম্ভব তাকে অপদস্থ করার চেষ্টা করেন।

শাপুর ভ্যালেরিয়ানকে তার বিশাল পার্সিয়ান বাহিনীর সামনে হাত-পা শিকল দিয়ে বাঁধা অবস্থায় হামাগুড়ি দিয়ে হাঁটার আদেশ দিতেন এবং তার সাথে কুকুরের মতো আচরণ করতেন। শাপুর ঘোড়ায় ওঠার আগে ভ্যালেরিয়ান হাত-পায়ের উপর ভর দিয়ে থাকতেন এবং শাপুর তার পিঠের উপর পা রেখে ঘোড়ায় চড়তেন!

শাপুর তার পোষা রোমান সম্রাটের উপর বিরক্ত হয়ে যাওয়ার পর ভ্যালেরিয়ানকে হত্যা করার আদেশ দিলেন। ভ্যালেরিয়ানকে জীবিত অবস্থাতেই গলিত সোনা খাইয়ে দেওয়া হলো; অসহনীয় গরম সোনা ভ্যালেরিয়ানের মুখ, গলা, পাকস্থলী পোড়াতে পোড়াতে নিচে নেমে যেতে থাকে। এরপর ভ্যালেরিয়ানের দেহকে মমিতে রুপান্তরিত করা হলো। খড় আর সোনার মিশেলে ভ্যালেরিয়ানের দেহের মমি বানানো হলো পার্সিয়ান মন্দিরের শোভাবর্ধনকারী বস্তু হিসেবে!

ছবিসূত্র: Smithsonian Magazine

পাথর মেরে হত্যা

দানিয়ুব থেকে সিন্ধু, কাস্পিয়ান থেকে নাইলের বিশাল স্রোত পর্যন্ত বিস্তৃত বিশাল প্রাচীন পারস্য সাম্রাজ্য ন্যায়বিচারকে গুরুত্ব দিলেও সামাজিক অবস্থান উপেক্ষা করে বিচারকার্য চালানোর মতো অবস্থায় ছিল না। যার কারণে রাজপরিবারের অপরাধ উড়ে এসে জুড়ে বসেছিল দাসদের কাঁধে। ঘটনাটাই শোনা যাক।

‘কিং অফ কিংস’ উপাধি নেওয়া দ্বিতীয় আরতেজেরজিস-এর মা ছিলেন প্যারিসাতিস। প্যারিসাতিস তার ছেলের প্রধান স্ত্রী স্তাতেইরাকে চরমভাবে ঘৃণা করতেন। দুজন দুজনকে এতটাই ঘৃণা করতেন যে সামনাসামনি খুন করার সুযোগ থাকলে হয়তো তা-ই করে ফেলতেন। এবং আরতেজেরজিসকে দুদিকেই তাল মিলিয়ে চলতে হতো।

তিনি তার মা ও স্ত্রী দুজনকে একইসাথে খাবার খেতে ডাকতেন এবং খাবারের একই টুকরো সমান দুইভাগ করে খাওয়ার নির্দেশ দিতেন। এত কিছু করার পরও শেষরক্ষা হয়নি। প্যারিসাতিসের নির্দেশে তার এক দাস ছুরির এক পাশে বিষ লাগিয়ে রাখেন। বিষ মাখানো মাংস খাওয়ার পর প্রিয়তমা স্ত্রী মারা যাওয়ায় আরতেজেরজিস মারাত্মক রেগে যান। কিন্তু তার এই রাগ তার মায়ের উপর ফলাতে যাওয়ার সুযোগ ছিল না। ফলে তার পুরোটাই গিয়ে পড়ে খাবার পরিবেশনকারী দাসদের উপর। তিনি একে একে সবার উপর নিপীড়ন চালাতে থাকেন এবং অবশেষে পেয়ে যান তার মাংস কাটা ব্যক্তিকে। জীবিত অবস্থাতেই তার মাথা পাথর মেরে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। প্যারিসাতিস মৃত্যুদণ্ড থেকে বেঁচে গেলেও তাকে নির্বাসনে পাঠানো হয়।

ছবিসূত্র: 123RS

পোকার আক্রমণ

কোনো জীবন্ত মানুষকে একগাদা ক্ষুধার্ত পোকার সামনে ফেলে রাখলে কেমন হবে? অমানবিক আর নিষ্ঠুর এই নির্যাতন শুধুমাত্র রাজার ব্যক্তিগতভাবে অপছন্দকারী ব্যক্তির উপরই প্রয়োগ করা হতো।

প্রথমে ঐ ব্যক্তিকে সম্পূর্ণভাবে নগ্ন করে ফেলা হতো এবং ফাঁকা গাছের গুড়ির মধ্যে রেখে দেওয়া হতো; রৌদ্রতপ্ত দিনের আলোতে হাত-পা এবং মাথাটুকু শুধু বাইরে থাকত। এরপর তাকে জোর করে খাওয়ানো হতো দুধ আর মধু; যতক্ষণ না পর্যন্ত তার শরীরে ডায়রিয়ার লক্ষণ দেখা যায় এবং এভাবেই তার মল-মূত্রের উপরেই তাকে শুইয়ে রাখা হতো। এরপর তার দেহের অনাবৃত জায়গাগুলোতে মধু লাগিয়ে পোকামাকড়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হতো। ছারপোকা, তেলাপোকার আক্রমণে ধীরে ধীরে তার দেহ থেকে মাংস অদৃশ্য হওয়ার সাথে সাথে ভিমরুল আর মৌমাছির হুলের আঘাততো রয়েছেই।

এভাবে যতটা ধীরে সম্ভব তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হতো। কিছুদিনের মধ্যেই আক্রান্ত ব্যক্তির মাংস পচা শুরু হয়ে যেত এবং দুর্গন্ধ ছড়াত। যার উপর এই পদ্ধতিটি প্রথম প্রয়োগ করা হয়েছিল, সে প্রায় ১৭ দিন নরকযন্ত্রণা ভোগ করার পর পাড়ি জমিয়েছিল পরপারের উদ্দেশ্যে

ছবিসূত্র: Sputnik International

তৃতীয় মৃত্যু

বীরেরা মরে একবার, কাপুরুষেরা মরে বারবার‘ প্রবাদটি পার্সিয়ানদের ক্ষেত্রে অকাট্য সত্যি এবং তারা বিশ্বাসও করত কিছু মানুষ একবারের চেয়েও বেশিবার মৃত্যুযন্ত্রণা ভোগ করার অবস্থায় এসেছে। এজন্য শাস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে তিন সংখ্যাটি বেশ ভালোভাবেই মেনে চলা হতো এবং এটি পরিচিত ছিল ‘দ্য ট্রিপল ডেথ’ নামে।

প্রাচীন পারস্য সাম্রাজ্যের অধিপতিদের মধ্যে অন্যতম বিখ্যাত রাজা সাইরাস দ্য গ্রেটের স্ত্রীকে রাগিয়ে দেয়ার জন্য এক খোজার উপর নেমে আসে ভয়াবহ ট্রিপল ডেথ। প্রথমে তার অক্ষিকোটর থেকে সাঁড়াশি দিয়ে চোখ বের করে আনা হয়। চোখের ব্যথা কমে যাওয়ার পরে তার শরীরের চামড়া ছিলে ফেলা হয় এবং শেষমেশ কাঠের উপর বেঁধে হাত-পায়ের উপর পেরেক ঢুকিয়ে মেরে ফেলা হয়

সাইরাসের ছেলেকে মেরে ফেলার মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে নায়ক হওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে ট্রিপল ডেথের খড়গ নেমে আসে এক সৈন্যের উপর। সাইরাসের স্ত্রী প্রথমে তাকে ১০ দিন ক্যাথেরিন হুইলে টান টান করে ঝুলিয়ে রাখেন; এরপর চোখ খুলে নিয়ে গলিত কাঁসা শরীরের উপর ঢেলে তাকে হত্যা করেন!

সন্তান ভক্ষক

গল্পটা এক সেনাপতির; নাম তার হারপাগাস। যদিও কাহিনীটি গুজব বলে উড়িয়ে দেওয়া হয়, তবুও জিনিসটি একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

রাজা আসতাগিয়েস একবার স্বপ্নে দেখেন তার নাতি সিংহাসন থেকে তাকে ছুঁড়ে ফেলে দিবে; এ কারণে তিনি তার সেনাপতি হারপাগাসকে আদেশ দেন বাচ্চাটিকে জঙ্গলে ফেলে দিয়ে আসতে। হারপাগাস দয়াপরবশ হয়ে তা করেননি, বরং এক মেষপালকের উপর বাচ্চাটির দায়িত্ব দিয়ে আসেন। যখন পারস্যরাজ তার আদেশ অমান্য করার ব্যাপারটি জানতে পারলেন, তখন হারপাগাসের কপাল পোড়া শুরু হলো। হারপাগাসের ছেলেকে ধরে এনে তাকে জবাই করা হলো। তারপর তার শরীর টুকরো টুকরো করে তেলে ভেজে হারপাগাসের সামনে পরিবেশন করা হলো। হারপাগাস তখনও জানতেন না যে তিনি তার ছেলের মাংস খাচ্ছেন। এমনকি তার ছেলে যে মৃত সেটাই জানতেন না। তিনি খাওয়া শুরু করলে আসতাগিয়েস তার ছেলের কাটা মাথা তার মুখের সামনে ধরে বলেছিলেন, “তুমি কি জানো তুমি কোন জন্তুর মাংস এইমাত্র খেলে?”

হারপাগাস জানতেন প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করলে তার পরিণতি তার ছেলের চেয়ে ব্যতিক্রম কিছু হবে না। নিজের কান্না আটকিয়ে আসতাগিয়েসের আক্রোশ থেকে বাঁচতে বলেই ফেললেন, “রাজা যা করেছেন, ভালোই করেছেন!” তারপর রাজার কাছে অনুরোধ করে ছেলের মৃতদেহের বাকি অংশটুকু নিয়ে দাফন করলেন!

ছবিসূত্র: Wikimedia Commons

ফিচার ইমেজ: Wikimedia Commons

Related Articles