Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ইরানিয়ান বিপ্লব: স্বৈরাচারের পতন এবং নতুন ইরানের অভ্যুত্থান

ইতিহাস-ঐতিহ্যে ভরপুর মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরান এমন একটি স্থান, যেখানে গড়ে উঠেছিল পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো এবং প্রাথমিককালের সভ্যতাগুলোর একটি। নানা কারণে মধ্যপ্রাচ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূরাজনৈতিক কেন্দ্র হয়ে ওঠে ইরান। আবার শিয়া-সুন্নি জাতিগত দ্বন্দ্বও বেশ পুরনো।

গেল শতাব্দীর সত্তরের দশকে এই দেশটির ইতিহাসে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে যায়, যা একে আগাগোড়া বদলে দেয়। ১৯৭৮-৮৯ সালে সংঘটিত হওয়া ইতিহাসখ্যাত ‘ইরানিয়ান বিপ্লব’ সেখানকার আড়াই হাজার বছরের পুরনো পারসিক রাজতন্ত্রের অবসান ঘটায়। কারো চোখে সেই বিপ্লব এক নতুন ইরানের জন্ম দিয়েছে যা কি না মসৃণ উন্নয়নের পথে ধাবমান। আবার কারো চোখে নতুন সে ইরান আধুনিকতা থেকে উল্টো যাত্রা শুরু করেছে, উন্নত বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে এর রক্ষণশীল ভাবধারার জন্য। আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় অবশ্য ইরানিয়ান বিপ্লবের ফলাফল নয়, বরং স্বয়ং ইরানিয়ান বিপ্লবের আদ্যোপান্ত নিয়ে।

আগুনের ফুলকি যখন ছড়াতে শুরু করে; image source: chomun.org

ইরানিয়ান বিপ্লবের প্রভাব ও ফলাফল সুদূরপ্রসারী হলেও খালি চোখে দেখতে গেলে এর প্রাথমিক সাফল্য হচ্ছে পাহলভী রাজবংশের শাসন থেকে বেরিয়ে আসা। পাহলভীদের শাসনকাল মূলত দুজন রাজার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। রেজা শাহ এবং তার পুত্র মোহাম্মদ রেজা শাহ। পাহলভীদের আগের ইরান শাসন করেছে কাজার রাজবংশ, তার আগে সাফাভিদ রাজবংশ। এই দুই রাজবংশের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হচ্ছে এজন্য যে এরা ইরানের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দুটি বিষয়ের প্রচলন করেন। সাফাভিদ বংশের প্রথম রাজা প্রথম ইসমাইল ইরানের রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে শিয়া ইসলামের নাম ঘোষণা করেন। আর কিছুকাল পর কাজার রাজবংশ ক্ষমতায় এসে উলামাদেরকে রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রদান করে।

শিয়া আর সুন্নি মুসলিমদের মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। মোটাদাগে প্রধান মতবিরোধ বলা যায় খলিফা নির্ধারণে। সুন্নিদের বিশ্বাস, হযরত আবু বকর (রা) যথার্থই ইসলামের প্রথম খলিফা। কিন্তু শিয়াদের বিশ্বাস, হযরত আলী (রা) ইসলামের প্রথম খলিফা হবার কথা ছিল। বিশ্বাসের এই পার্থক্যে সুন্নিরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। ফলে ঐতিহাসিকভাবেই শিয়ারা কোণঠাসা হয়ে পড়ে এবং নানা কারণে নিজেদের বঞ্চিত ভাবতে থাকে। এই পার্থক্য এজন্য উল্লেখ করতে হচ্ছে যে, অনেক ইতিহাসবিদই মনে করেন, ইরানিয়ান বিপ্লব শিয়াদের সেই ঐতিহাসিক বঞ্চনার বহিঃপ্রকাশ।

ইরানের আইনসভা; image source: irna.ir

১৯৭৯ সালের ইরানিয়ান বিপ্লবের বীজ বোনা হয়ে গিয়েছিল অনেক আগেই। ১৯০৬ সালে কাজার রাজবংশের বিরুদ্ধে ইরানি জনগণের সশস্ত্র বিপ্লব থেকেই জমা হতে শুরু করে ভবিষ্যৎ বিপ্লবের বারুদ। সেবার কাজার রাজবংশকে সংবিধান প্রণয়ন এবং মেনে চলতে বাধ্য করে সেই বিপ্লব। তাছাড়া ১৯০৬ সালের সেই বিপ্লবের আরো দুটি বড় সাফল্য হলো আইনসভা প্রতিষ্ঠা করা এবং রাষ্ট্রধর্ম বহাল রেখেই সংখ্যালঘুদের অধিকার সুসংহত করা। তবে শেষ পর্যন্ত এই বিপ্লবটি একরকম ব্যর্থই হয়েছিল। এর প্রধান কারণ হচ্ছে প্রভাবশালী ও ক্ষমতাবান উলামা সমাজ বিপ্লবের পক্ষ থেকে নিজেদের সমর্থন উঠিয়ে নেয়। তাদেরকে এই সিদ্ধান্ত নিতে প্রভাবিত করে ব্রিটিশরা। কারণ বিপ্লব সফল হলে ইরান শক্তিশালী হয়ে উঠতো এবং পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে তাদের প্রভাব কমে যেত।

image source: mashreghnews.ir

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর মধ্যপ্রাচ্যে তেল আবিষ্কৃত হলে ইউরোপীয় দেশগুলোর মাঝে প্রতিযোগীতা আরো বেড়ে যায়। তেলের বাজার দখল করতে ব্রিটিশরা প্রতিষ্ঠা করে ‘অ্যাংলো ইরানিয়ান অয়েল কোম্পানি’, যা পরবর্তীতে ‘ব্রিটিশ পেট্রোলিয়াম’ হয়। আর এই তেল কোম্পানি চালাতে ব্রিটিশরা গোয়েন্দাবাহিনীর মাধ্যমে ইরানে একটি সামরিক অভ্যুত্থান ঘটায়। তারা সামরিক শাসক রেজা খানকে ক্ষমতায় বসতে সহায়তা করে এই শর্তে যে, ইরানের খনিগুলো থেকে ব্রিটিশদের তেল উত্তোলন করতে দিতে হবে!

যা-ই হোক, সফল এক অভ্যুত্থানের পর ক্ষমতায় বসেই রেজা খান থেকে রেজা শাহ নামে নিজেকে পরিচিত করেন ইরানের সাবেক এই সামরিক শাসক। তখনও মধ্যপ্রাচ্যের এই ভূখণ্ডটি ‘পারস্য’ নামে পরিচিত ছিল। রেজা শাহ একে ইরান নামে নামকরণ করেন এবং পশ্চিমাদের অনুকরণে ধর্মনিরপেক্ষ, আধুনিক এক রাষ্ট্র গঠনে মনোযোগ দেন। অনেকে তাই তাকে ইরানের আতাতুর্ক বলে অভিহিত করেন।

মোহাম্মদ মোসাদ্দেগ; image source: npr.org

কিন্তু যতটা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি রেজা শাহ দিয়েছিলেন, ব্যবহারিক ক্ষেত্রে ততটা উন্নয়ন তিনি করতে পারেননি। উপরন্তু তাকে মানুষ মনে রেখেছে তার উদ্ধত আচরণ আর স্বৈরাচারী শাসনের জন্য। ধীরে ধীরে তার কুশাসনের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে ওঠে এবং একসময় দেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী উলামা সমাজ তার বিপক্ষে চলে যায়। ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়েই পদত্যাগ করেন রেজা শাহ। ক্ষমতায় বসেন তার ছেলে মোহাম্মদ রেজা শাহ। এ সময় ইরানে ব্রিটিশদের প্রভাব কিছুটা কমে আসে। ইরানের শাসন কাঠামোতে জনমতের প্রভাব বৃদ্ধি পায় এবং ইরানের কমিউনিস্ট ভাবধারার রাজনৈতিক দল ‘টুডে পার্টি’ ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। এই দলের মোহাম্মদ মোসাদ্দেগ ১৯৫১ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করে প্রধানমন্ত্রীত্ব পান। তিনি ইরানের শাসন কাঠামো কমিউনিস্ট করার প্রয়াস চালান। এই প্রক্রিয়ার প্রথম পদক্ষেপ ছিল তেলের খনিগুলোকে রাষ্ট্রীয়করণ করা।

মোহাম্মাদ শাহ; image source: thefamouspeople.com

কিন্তু মোসাদ্দেগ বেশি দিন ক্ষমতায় থাকতে পারেননি। শিয়া উলামাদের গণঅভ্যুত্থানে ১৯৫৩ সালে ক্ষমতা ছেড়ে দেশ থেকে পলায়নে বাধ্য হন তিনি। অধিকাংশ বিশ্লেষকের মতে, এই অভ্যুত্থানের পেছনে হাত রয়েছে সিআইএ এবং মোসাদের। যা-ই হোক, মোসাদ্দেগের অপসারণ মোহাম্মদ শাহের জন্য আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়ায়। তিনি ধীরে ধীরে ক্ষমতাবৃদ্ধি করতে থাকেন এবং নিজের বাবার পথেই হাঁটেন। ‘৬০ এর দশকেই তিনি কুখ্যাত স্বৈরশাসক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। হিটলারীয় পন্থায় তিনিও একটি গোপন পুলিশ ফোর্স ‘সাভাক’ গঠন করেন, যার প্রধান কাজই ছিল বিরুদ্ধ মত দমন করা। ১৯৭৫ সালে শাহ তার জীবনের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক ভুলটি করেন। তিনি দেশের প্রধান এবং বড় দুই রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত ঘোষণা করে তাদের স্থলে ‘রিসার্জেন্স পার্টি’ প্রতিষ্ঠা করেন।

রিসার্জেন্স পার্টি প্রতিষ্ঠার পরই ইরানের ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ সময়গুলোর একটি শুরু হয়। শাহ হয়ে ওঠেন একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী। রাজনৈতিক নির্যাতন, সংবাদপত্রের উপর কঠোর বিধিনিষেধ, বিরুদ্ধমতকে গলা চেপে ধরা, আইন শৃঙ্খলার সার্বিক অবনতি, রাজনৈতিক হত্যা ও গুম ইত্যাদির মধ্য দিয়ে ইরানি সাধারণ মানুষের মাঝে ত্রাসের রাজত্য কায়েম করেন শাহ। ছোটখাট প্রতিবাদ, আন্দোলন তখনও হচ্ছিল। কিন্তু শাহের স্বৈরাচারী রাষ্ট্রযন্ত্রের সামনে সব আন্দোলন কুঁড়িতেই বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। অনেকে প্রতিবাদ করে কারাবরণ করে। আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ মতামত প্রকাশ করেন যে, শাহের বিরুদ্ধে কোনো আন্দোলন গড়ে ওঠা সম্ভব নয়। অবস্থাদৃষ্টে, শাহ যেন চিরস্থায়ী আসনই পেতে ফেলেছিলেন!

বেশ কিছু খাতে বাস্তবিকই উন্নয়ন করেন শাহ; image source: thereviewatnyu.com

রিসার্জেন্স পার্টি গঠনের পূর্বেও শাহের আচরণ যথেষ্টই স্বেচ্ছাচারী ছিল। তথাপি ইরানের বেশ কিছু খাতে কার্যকরী উন্নয়ন করতে সক্ষম হন তিনি। বিশেষ করে শিক্ষা এবং অবকাঠামো খাত। ১৯৭৫ সালে ইরানের তেল রপ্তানির আয় ২০ বিলিয়ন ডলার স্পর্শ করে, যা ১০ বছর আগেও ছিল মাত্র ৫৫৫ মিলিয়ন ডলার। তবে উন্নয়নের ফিরিস্তি দিলেও, শাহ সরকার কার্যত জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে ধীরে ধীরে। অবকাঠামোগত উন্নয়নের ফাঁকে মানবসম্পদ উন্নয়ন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং বেকারত্ব সমস্যার মতো গুরুতর ব্যাপারগুলো অবহেলিত হয়। ফলে ব্যাপক পরিমাণ বেকার তরুণের মনে ক্ষোভ জমতে থাকে। অন্যদিকে পরিসংখ্যানগতভাবে ইরানের অর্থনীতির চাকাকে বেশ জোরেশোরে ঘুরছে বলে দাবি করে শাহ সরকার, যদিও মূল্যস্ফীতি, দুর্নীতি, অর্থ পাচার ইত্যাদির কারণে অর্থনীতি ঝিমিয়ে যাচ্ছিল। আর এসবের বিরুদ্ধে সবচেয়ে উচ্চকণ্ঠে প্রতিবাদ শুরু করেন শিয়া মুসলিমদের একজন প্রভাবশালী উলামা আয়াতুল্লাহ খোমেনি।

অতিমাত্রায় আধুনিকায়ন ইরানের কৃষ্টি-কালচারের সাথে সাংঘর্ষিক বলে আওয়াজ তোলেন খোমেনি। ইরানে ইসলামের অনুশাসন দুর্বল হয়ে যাচ্ছে, নারীরা বেপরোয়া হচ্ছে, সামাজিক কাঠামো ভেঙে পড়ছে, নৈতিক অবক্ষয় ঘটছে- এরকম অভিযোগ তুলে শাহের বিরুদ্ধে জনমত গড়তে থাকেন খোমেনি। সরাসরি ধর্মের সাথে জড়িত অভিযোগের বিরুদ্ধে শাহও খুব একটা উচ্চবাচ্য করতে পারছিলেন না, পাছে গণআন্দোলন না গড়ে ওঠে সে ভয়ে। কিন্তু ইরানিয়ান বিপ্লবের সাথে এর সম্পর্ক খুব কমই। মানুষ একটি ধর্মীয় রাষ্ট্র গঠনের জন্য রাস্তায় নামেনি। বরং রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক, আইনগত এবং জনগণের প্রতি শাসকদের অবহেলাই সর্বসাধারণকে রাস্তায় নামায়। ধর্মীয় কারণ সেখানে একটি ছোট্ট প্রভাবক ছিল মাত্র। কিন্তু তারপরেও অনেক ইতিহাসবিদ এই বিপ্লবকে শিয়া মুসলিমদের ধর্মীয় বিপ্লব বলে আখ্যা দেন। এর অবশ্য একটি কারণ রয়েছে।

আয়াতুল্লাহ খোমেনি; image source: document.no

ইরানিয়ান বিপ্লব আক্ষরিক অর্থে ৭ জানুয়ারি ১৯৭৮ সালেই শুরু হয়ে যায়। সেদিন কোনো এক সরকারপন্থী পত্রিকা খোমেনিকে ব্রিটিশদের গুপ্তচর বলে অভিহিত করে। আর তাতে ক্ষিপ্ত হয়ে খোমেনির কিছু সংখ্যক অনুসারী রাস্তায় নামে। উল্লেখ্য, খোমেনি তখন দেশের বাইরে। সেদিন রাস্তায় নামা মানুষের সংখ্যা নিতান্তই কম ছিল। কিন্তু ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে ব্যর্থ হওয়া শাহও অন্যান্য স্বৈরাচারী শাসকদের মতো বন্দুককেই সমাধান হিসেবে বেছে নেন। গুটিকয়েক মানুষের আন্দোলনকে গুলি করে, লাঠিপেটা করে দমন করা হয়। সেদিন বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারী নিহত হন, আহত হন আরো অনেকে। আর এই ঘটনার উত্তাপ পুরো দেশে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে। প্রথমেই সবাই রাস্তায় না নেমে গেলেও জনমত পুরোপুরি শাহের বিপক্ষে চলে যায়। ধীরে ধীরে আন্দোলনে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। সরকারি নির্দেশনায় পুলিশের গুলিও চলতে থাকে, মরতে থাকে প্রতিবাদী মানুষ, বাড়তে থাকে আপামর জনগণের ক্ষোভ এবং রাস্তায় মিছিলের আয়তন।

প্রতিদিনই প্রতিবাদের স্বর উঁচু হতে থাকে, তথাপি ঘুম ভাঙে না শাহ সরকারের। দেশজুড়ে মানুষ যখন দমন পীড়নের প্রতি ধিক্কার জানাচ্ছে, তখন এই আন্দোলনকে ব্রিটেনের গোয়েন্দা সংস্থা ও মোসাদের ষড়যন্ত্র বলে অভিহিত করে আরো কঠোর হবার মনোভাব প্রকাশ করেন শাহ। আর এভাবে শাহ নিজেই ছোট একটি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে বৃহৎ গণআন্দোলনে পরিণত করেন! আর একসময় ক্ষুব্ধ জনতার সামনে পরাজয় স্বীকার করে বন্দুক, বেয়নেট আর শাহের অহম। আন্দোলন শুরুর মাত্র এক বছরের মাথায়, ১৬ জানুয়ারি ১৯৭৯ সালে দেশ ত্যাগ করেন শাহ। তিনি আমেরিকায় রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণ করেন। এর সাথে ইরানে বিলুপ্ত হয় আড়াই সহস্রাব্দের পারস্য রাজতন্ত্র।

ইরানিয়ান বিপ্লবের এই ধারা ইতিহাসের অন্যান্য সকল বিপ্লবের সাথেই সামঞ্জস্যপূর্ণ। ফরাসি, রুশ কিংবা আমেরিকান বিপ্লব, প্রতিটির ইতিহাসই বলে যে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকে সর্বদা গণঅসন্তোষে রূপ দেয় শাসকরাই। খোমেনির অল্প কিছু সমর্থকের আন্দোলনে গুলি চালিয়ে সেই চিরাচরিত ভুলটিই করেছিল শাহের সরকার। ফলে সাধারণ মানুষের সামনে মনে জমানো ক্ষোভ প্রকাশের একটি সুযোগ চলে আসে। তারা ধর্মীয় রাষ্ট্রের জন্য লড়াই না করলেও সরকারি পীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়, দেশের সার্বিক অবস্থা নিয়ে তাদের হতাশার বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। আর এসবের পরিণতি একটি সফল বিপ্লব।

ছোট একটি আন্দোলন যখন গণজোয়ারে রূপ নেয়; image source: document.no

ইরানিয়ান বিপ্লবের পর ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন আয়াতুল্লাহ খোমেনি। তিনি ‘ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরান’ এর জন্য গণভোটের ব্যবস্থা করেন এবং মানুষ পক্ষে ভোট প্রদান করে। নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী বাছাই করার প্রক্রিয়া অনুমোদন করে তিনি ইরানকে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা দেন। যদিও আক্ষরিক অর্থে ইরান গণতান্ত্রিক নয়। ইরানের মূল আইন হবে ইসলামি শরিয়া অনুযায়ী এবং যেকোনো সিদ্ধান্ত গৃহীত হবার পরও সর্বোচ্চ নেতা খোমেনি সেটি পরিবর্তন করতে পারবেন।

যা-ই হোক, আমাদের আলোচনার বিষয় ছিল ইরানিয়ান বিপ্লব, যা ইরানের গণমানুষের স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে মুক্তির আন্দোলন। এই বিপ্লব ধর্মীয় না হলেও কাকতালীয়ভাবে এর সূচনাটা ধর্মীয় কারণেই হয়, যে কারণে অনেকে একে ধর্মীয় বিপ্লব মনে করেন। তবে সব মিলিয়ে, পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে সফল এবং বৈপ্লবিক ঘটনাগুলোর একটি হিসেবেই স্মরণীয় হয়ে থাকবে ইরানিয়ান বিপ্লব।

ফিচার ছবি: muckrock.com

Related Articles