Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

জ্যাক দ্য রিপারঃ কুখ্যাত এক সিরিয়াল কিলার

“নাম কী তোমার?”

কথাটা শুনে চমকে তাকালো মেরি। সুপুরুষ ভদ্র এক লোক দাঁড়িয়ে, দেখে মনে হচ্ছে খুব তাড়াহুড়ো করে বেরিয়েছে, চুল আচড়াতে ভুলে গেছে, উসকোখুশকো হয়ে আছে তার ঘন কালো চুল।

“কী নাম হলে খুশি হবে তুমি?” হেসে বলল মেরি। “অ্যান। আমার নাম অ্যান।”

লোকটাকে ভালো লেগেছে। এই গভীর রাতে এ এলাকায় এমন কেতাদুরস্ত খদ্দের জুটে যাওয়া সৌভাগ্যের লক্ষণ বটে। লোকটাকে টেনে পাশের গলিতে নিয়ে গেল মেরি। কিন্তু তখনও সে জানতো না তার জীবনপ্রদীপ নিভে যেতে চলেছে।

ভিক্টোরীয় লন্ডনের পুব প্রান্তে, ১৮৮৮ সালের ৩১ আগস্ট শুক্রবার রাত ৩টা বেজে ৪০ মিনিটে লোকজন আবিষ্কার করে মেয়েটির লাশ। নাম মেরি অ্যান নিকোলস। ছুরির তীক্ষ্ণ আঘাতে তার গলা ফেড়ে গেছে, দুবার আঘাত করা হয়েছে সেখানে। আর নিখুঁতভাবে তার তলপেটের নিচ থেকে বড় একটা অংশ কেটে নিয়ে যাওয়া, যেন খুনী একটা স্মৃতি রেখে দিতে চেয়েছিল। ঠিক কীভাবে খুনীর সাথে মেরি-র পরিচয় হয় তা আমরা হয়ত কোনদিনই জানব না, কিন্তু এই খুনের মাধ্যমে শুরু হয় এক সিরিয়াল কিলিং-এর, ১২৯ বছর পরেও আজ সমাধান হয়নি যার। ইতিহাসের কুখ্যাততম সিরিয়াল কিলারের তকমাটা জুটে যায় জ্যাক দ্য রিপারের কপালে, কিন্তু কে ছিল এই জ্যাক দ্য রিপার? চলুন সেই অমীমাংসিত রহস্যে ডুব দিয়ে আসি…

কে ছিল এই জ্যাক দ্য রিপার?

উনিশ শতকের মাঝামাঝি থেকে ব্রিটেনে প্রচুর আইরিশ অভিবাসী অনুপ্রবেশ করা শুরু করে। তখনও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো কেউ না থাকায় এই অভিবাসী অনুপ্রবেশ ছিল অবাধ। ১৮৮২ সালে পূর্ব ইউরোপ থেকে ইহুদীরাও লন্ডনে চলে আসে। ফলে লন্ডনের, বিশেষ করে পূর্ব লন্ডনের জনসংখ্যা ফুলে ফেঁপে ওঠে। আর নিম্নশ্রেণীর লোকের সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে চাকরির সংখ্যা না বাড়ায় অপরাধের পরিমাণ বেড়ে যায় বহুগুণে। ডাকাতি, রাহাজানি আর মাতলামি ছিল অহরহ। মেয়েদের কাজের অভাব ছিল আরও বেশি। কেবল পূর্ব লন্ডনের হোয়াইটচ্যাপেল এলাকাতেই ৬২টি পতিতালয় ছিল আর পতিতার সংখ্যা ছিল ১২০০!

এরকমই এক সময়ে ১৮৮৮ সালে পূর্ব লন্ডনে মেরি অ্যান খুন হয়। খুন হওয়াটা খুব বড় কোনো ঘটনা বলা যায় না তখনের হিসেবে। কিন্তু নিহতের লাশ এভাবে বিকৃত করে দেয়া- এটা অবশ্যই নতুন ছিল। একটা ভীতি চলে আসে জনমনে। কিন্তু এটা যে সিরিয়াল কিলিং হতে পারে সে চিন্তা তখনও মাথায় আসে নি।

এক সপ্তাহ পর, ৮ সেপ্টেম্বর, ১৮৮৮। শনিবার। সেদিন প্রায় একই এলাকায় অ্যানি চ্যাপম্যানের লাশ পাওয়া যায় ভোর সাড়ে পাঁচটায়। পেশায় মেরির মতো সেও ছিল পতিতা। এবারও দু’বার আঘাত করে গলা কাটা হয়। তলপেটের নিচ থেকে পুরোটা ফাঁড়া। ভেতর থেকে জরায়ু কেটে নিয়ে গিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী জানালো, উসকোখুসকো কালো চুলের এক ভদ্রলোককে চ্যাপম্যানের মারা যাবার আধা ঘণ্টা আগেও দেখেছে তার সাথে যেতে।

পর পর দুটো এমন খুনের পর ভীতি আরো বেশি করে ছড়িয়ে পড়ে পূর্ব লন্ডনের অধিবাসীদের মাঝে।

৩০ সেপ্টেম্বর রবিবার ভোরবেলা এলিজাবেথ স্ট্রাইড আর ক্যাথারিন এডোজ এর লাশ পাওয়া যায়। দুজনকে পাওয়া যায় দু’জায়গায়, এবং দুজনই ছিল পতিতা। অর্থাৎ একই রাত্রে জ্যাক দ্য রিপার দু জায়গায় গিয়ে খুন করে আসে। ক্যাথারিনের গলা ছিল কাটা। তলপেটের নিচ থেকেও কাটা, ভেতরে বাম কিডনি আর জরায়ুর সিংহভাগ কেটে নিয়ে গিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী বলল, এক উসকোখুসকো লোককে ক্যাথারিনের সাথে দেখেছিল।

ক্যাথারিনের সমাধি এখানেই

এলিজাবেথের মৃত্যুটা একটু ভিন্ন। খুবই নিখুঁতভাবে তার প্রধান ধমনী কাঁধের বাম পাশ থেকে কেটে দেয়া হয়েছিল। তবে তলপেটের নিচে কোন আঘাত নেই, সম্ভবত তাড়াহুড়ো করে পালিয়ে যায় খুনী।

এই জোড়া খুনের পর কী পরিমাণ আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে তা কল্পনার বাহিরে। পুলিশ অনেক চেষ্টা করেও কোনো হদিস পেলো না খুনীর।

নভেম্বরের ৯ তারিখ শুক্রবার সকাল পৌনে এগারোটায় মেরি কেলি-র লাশ পাওয়া যায় নিজের রুমে, নিজের বিছানায়। খুব যত্নের সাথে তার গলা কাটবার পর মেরুদণ্ড পর্যন্ত কাটা হয়েছে। তলপেটের নিচে তো কাটা হয়েছেই, ভেতরে কিছুই ছিল না। এমনকি তার হৃৎপিণ্ড পর্যন্ত কেটে নিয়ে গেছে জ্যাক দ্য রিপার। [“রিপ” মানে ছিঁড়ে নিয়ে যায় যে।]

তবে একই এলাকায় এমা স্মিথ আর মার্থা ট্যাব্রাম খুন হলেও তাদের খুন হবার স্টাইলের সাথে জ্যাক দ্য রিপারের স্টাইল না মেলায় তাদের খুনকে সিরিয়াল কিলিং এর অংশ হিসেবে ধরা হয়নি। এবং এ খুন দুটো একটু আগে বলা পাঁচ খুনেরও আগে হয়।

ধারণা করা হয়, এই মেরি কেলির খুনের পর হয়ত জ্যাক দ্য রিপার চলে যায়, বা মারা যায়, কিন্তু হয়তবা খুন করা থামিয়ে দেয়। কিন্তু এটা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। কারণ, ২০ ডিসেম্বর রোজ মাইলেট আর পরবর্তীতে ১৭ জুলাই অ্যালিস ম্যাকেনজির খুনও এই সিরিয়াল কিলিং এর অংশ হতে পারে। তবে তাদের কোনো অঙ্গ চুরি হয়নি বিধায় এটা হয়ত জ্যাক দ্য রিপারের কাজ ছিল না বলা যায়। তবে অ্যালিসের বাম ক্যারোটিড ধমনী নিখুঁতভাবে কাটা ছিল!

এরপর আরো দুটো খুন হয়। একজনের মাথা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে নেয়ার কারণে তাকে শনাক্ত করা যায়নি। অন্যজন ছিল ফ্রান্সিস কোলস, এ মেয়েটির গলাও কাটা হয়, তবে অঙ্গ চুরি করা হয়নি।

এই হলো মোট এগারো খুন যেগুলো সম্ভবত জ্যাক দ্য রিপারের কীর্তি। কিন্তু প্রথমদিকে বলা পাঁচটি খুনকে প্রায় নিশ্চিতভাবেই বলা হয় তার কাজ। এগুলোকে ক্যানোনিকাল ফাইভ বলে। জ্যাক দ্য রিপারের উপর গবেষণাকে “রিপারোলজি” বলা হয়।

এরপরে এমন অবস্থা হলো যে লন্ডনে খুন হলেই মানুষ ধরে নিত, এই বুঝি জ্যাক দ্য রিপার আবার হানা দিল। কিন্তু সত্যি বলতে রিপারের আর কোনো খুন বিশেষজ্ঞরা খুঁজে পায়নি। এর পরেই জ্যাক উধাও হয়ে যায়। ২০০০ মানুষকে জেরা করা হয়, ৩০০ লোককে নিয়ে তদন্ত হয়, ৮০জনকে গ্রেফতার করা হয় রিপার সন্দেহে! কিন্তু আসল রিপার আর ধরে পড়েনি। অমীমাংসিত রয়ে যায় এই কেস।

তখন থেকেই অনেক থিয়োরি ছিল এবং এখনও আছে এই প্রশ্নের উত্তরে, কে জ্যাক দ্য রিপার? এবং সত্যি বলতে, খুব অদ্ভুত কিছু থিয়োরিও ছিল। সবচেয়ে অদ্ভুত সন্দেহটি ছিল, রাণী ভিক্টোরিয়ার নাতি প্রিন্স আলবার্টই বুঝি জ্যাক দ্য রিপার। তিনি কোনো এক পতিতা থেকে সিফিলিসে আক্রান্ত হয়ে প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে পতিতাদের হত্যা করেছেন। তবে আলবার্টের আদৌ সিফিলিস ছিল না, আর খুনের সময় তিনি ছিলেন অন্যত্র, লন্ডনে না। তাই এই গুজব নিছক গুজবই ছিল। এমন আরেকটি গুজবঃ অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ডের লেখক লুইস ক্যারলই রিপার!

স্টিফেন নাইট (১৯৭৫) তার বইতে একটি ষড়যন্ত্র তত্ত্ব দেন, সেটি হলো- প্রিন্স আলবার্ট নিম্ন শ্রেণীর এক মেয়েকে বিবাহ করেন, আর সেই বিবাহের খবর যারা যারা জানতো, তাদেরকে একে একে হত্যা করে ব্রিটিশ রাজপরিবার, যেন এই বিয়ের কথা বাইরের কেউ না জানে। এই হাস্যকর তত্ত্ব দ্রুতই বাতিল হয়ে যায়। তবে এ থিয়োরি থেকে চলচ্চিত্র নির্মিত হয় যার নাম ছিল “From Hell.”

জনি ডেপ অভিনীত “ফ্রম হেল” চলচ্চিত্রের পোস্টার

সে সময়টাতে পুলিশ শত শত চিঠি পেতে লাগল জ্যাক দ্য রিপারকে নিয়ে, সকলেই নিজেদের মতামত কিংবা ভীতির কথা জানিয়ে চিঠি লিখত। প্রথম দিকে পাওয়া কিছু চিঠি ছিল ভয়াবহ, কিন্তু পুলিশ সেগুলোকে ভুয়া বলে উড়িয়ে দেয়। কারণ, সেগুলোতে লিখা ছিল চিঠিপ্রেরক নিজেই খুনী। মূলত এরকমই এক চিঠির নিচে লেখক সাইন করেছিল জ্যাক দ্য রিপার নাম দিয়ে। সেই থেকেই এই নামটি জনপ্রিয় হয়ে যায় বলে বলা হয়। তবে হয়ত পুলিশের ধারণাই ঠিক, এগুলো উড়ো চিঠিই ছিল। জ্যাক দ্য রিপার নামের আগে সে “Leather Apron” আর “Whitechapel Murderer” নামে পরিচিত ছিল।

আগে তার পরিচয় ছিল “লেদার অ্যাপ্রন”

তবে বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে এক মত যে, জ্যাক দ্য রিপার হয়ত পেশায় ডাক্তার ছিল, কারণ সে যে নিখুঁতভাবে খুনগুলো করেছিল, কিংবা অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলো সরিয়েছিল, সেটা একজন ডাক্তার ছাড়া কেউ পারবেন না, যার মানবদেহ নিয়ে খুব ভালো জ্ঞান আছে। যেহেতু খুনের সাথে সাথেই সে উধাও হয়ে যেতে পারত, সুতরাং জ্যাক দ্য রিপার নিশ্চয়ই পূর্ব লন্ডনের হোয়াইটচ্যাপেলের স্থানীয় অধিবাসী ছিল, এজন্যই সে চেনা অলিগলিতে দ্রুত পালিয়ে যেতে পারত। আরেকটি বিষয়, সে কখনও উইকেন্ড ছাড়া খুন করেনি!

রহস্যের প্রতি মানুষের আকর্ষণ বহু পুরনো। তাই জ্যাক দ্য রিপারের রহস্য নিয়েও হয়েছে অসংখ্য মুভি, সিরিজ আর গেইম, লিখা হয়েছে অনেক বই, নির্মাণ করা হয়েছে অনেক ডকুমেন্টারি। তবে রহস্যটা আসলে রহস্যই রয়ে গেছে।

This article is in Bangla language. It's an article about a notorious serial killer named Jack The Ripper. 

Featured Image: imgnooz.com 

Source of Information

1. The Complete History of Jack the Ripper” by Philip Sugden
2. The Complete Jack the Ripper” by Donald Rumbelow
3. Jack the Ripper: The Casebook” by Richard Jones

Related Articles