১২৯৯ সালে উসমানের হাত ধরে পশ্চিম এশিয়ায় যে শিশুরাজ্যের আত্মপ্রকাশ, তার বিস্তার ঘটে তিনটি মহাদেশে। বাগদাদ এবং কর্ডোবা থেকে মুসলিম শাসনব্যবস্থা ক্ষয়ে যাবার কালে অটোম্যানদের পরাশক্তি হিসেবে উত্থান ইউরোপ ও এশিয়াকে দিয়েছে নয়া রাজনৈতিক সমীকরণ। ১৯২২ সালে মোস্তফা কামাল আতাতুর্কের মাধ্যমে সালতানাতের বিলুপ্তি ঘটে। এর পূর্বে অটোম্যানরা দাপিয়ে ফিরেছে পারস্য সীমান্ত থেকে ভিয়েনা পর্যন্ত। নিশ্চিতভাবেই তারা ছিলো সমকালের অন্যান্য রাজন্যবর্গের থেকে অধিকতর সাংগঠনিক, সমরকুশলী এবং কূটনৈতিক। তার চেয়েও বড় কথা- তাদের সাথে ছিলো জেনেসারি বাহিনী। ইউরোপের প্রথম স্থায়ী পেশাদার সামরিক বাহিনী।
যখন জেনেসারি নেই
জেনেসারিদের উত্থান নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে অজস্র উপকথা। প্রকৃত সত্যটা তাই কুয়াশা জড়ানো। অটোম্যান সামরিক ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, গোড়াতে তারা ছিলো আট-দশটা বেলিকদের মতোই। বেলিক বলতে ক্ষুদ্র প্রশাসনিক অঞ্চল বলা যেতে পারে। হতে পারে তা কোনো স্বাধীন রাষ্ট্র কিংবা রাজ্য।
সেই সময় যোদ্ধা বলতে ছিলো পুরোদস্তুর তুর্কি যাযাবর। তীর-ধনুকে সজ্জিত হয়ে থাকা এই যাযাবরদের প্রধান জীবিকা যুদ্ধলব্ধ সম্পত্তি। যদিও সীমান্ত অঞ্চলে দখলকৃত ভূমির উপর বরাদ্দ কর ছিলো প্রায় স্থায়ী। এই কর বা রাজস্ব ব্যবহৃত হতো সৈন্যদের খাওয়া, অস্ত্র কিংবা অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজে। তারপরেও স্বভাবগতভাবেই সৈন্যরা ছিলো বিশৃঙ্খল। বড় শহর দখল বা নিয়ন্ত্রণ করা দূরে থাক। লুটের সময় প্রায়ই তাদের শত্রুমিত্র হুশ থাকতো না। উসমানের পুত্র ওরহান (১২৮১-১৩৬২) এদিকে নজর দেন ভাই আলাউদ্দিন পাশার পরামর্শে। আস্তে আস্তে তিনি যাযাবরদের জায়গায় ভাড়াটে সৈন্য আনেন। যুদ্ধলব্ধ কিংবা লুটের মালের বদলে তাদের দেয়া হতো বেতন। ধর্ম ও রাজনীতির সাথে সম্পর্কহীন এই ভাড়াটে সৈন্যদের বড় অংশ ছিলো বলকান অঞ্চলের খ্রিস্টান। তাদের ভেতর পদাতিকরা ইয়ায়া এবং অশ্বারোহীরা মুসাল্লেম বলে পরিচিতি পায়। বিশেষ করে এই ইয়ায়া বাহিনীই ছিলো জেনেসারিদের পূর্বসূরি।
প্রথমদিকের দিনগুলো
জেনেসারিদের উৎপত্তি নিয়ে প্রায়ই হাজি বেকতাশ নামক জনৈক দরবেশের কথা বলা হয়। ওরহানকে যিনি 'ইয়েনিচারি' বা নতুন সৈন্যদল গঠনের কথা বলেন। এই ইয়েনিচারি থেকেই জেনেসারি নামের উদ্ভব বলে ধরা হয়। সে যা-ই হোক, জেনেসারিদের গোটা ইতিহাসে এই বেকতাশি মতবাদ প্রভাব রেখেছে। এ কথাও সত্য, সেই সময়ে বেশিরভাগ রাজ্যের সৈন্যরা লাল টুপি পড়তো। এদের মধ্যে সাফাভি, খ্রিস্টান, এমনকি আনাতোলিয়ার বেলিকরাও ছিলো। যুদ্ধের মাঠে কিংবা অন্যত্র অটোম্যান সৈন্যকে যেন চিনতে অসুবিধা না হয়, সেজন্য সাদা টুপির পরামর্শ দেন আলি পাশা। বিশেষ বাহিনী হিসেবে জেনেসারিদের আত্মপ্রকাশ এখান থেকেই। ওরহানের মৃত্যুর পর ক্ষমতায় আসা তৃতীয় শাসক মুরাদকে (১৩৬২-৮৯) কৃতিত্ব দেয়াটা হবে বেশি যৌক্তিক। প্রথমদিকে যুদ্ধলব্ধ দাসের এক-পঞ্চমাংশ সুলতান নিজের জন্য পেতেন, যার থেকে শুধুমাত্র সুলতানের অনুগত এক বিশেষ বাহিনী গঠিত হয়। এজন্য অনেক ঐতিহাসিক জেনেসারির প্রতিষ্ঠাতা বলতে মুরাদের নাম আনতে চান।
সৈন্য নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ
দেভশিরমে পদ্ধতির মাধ্যমে জেনেসারিতে সৈন্য নিয়োগ দেয়া হতে থাকে ১৩৮০ সাল থেকে। দেভশিরমে মানে Blood Tax বা রক্ত কর। এটি ছিলো অটোম্যান সাম্রাজ্যের অধীনে আনাতোলিয়া ও বলকান অঞ্চলের খ্রিস্টানদের জন্য। ৮-১৮ বছরের ছেলেদের রাষ্ট্রের সেবার জন্য তাদের পরিবার থেকে ধরে আনা হতো। প্রতি ৪০ ঘরের জন্য এক ছেলে। দেভশিরমের স্বর্ণসময়ে প্রতিবার ১,০০০-৩,০০০ তরুণকে নেয়া হতো। মজার ব্যাপার হলো, হাজার বছর আগে রোমান সাম্রাজ্যেও এই প্রথার অস্তিত্ব ছিলো।
অটোম্যান সাম্রাজ্যে ১৬৩৮ সাল পর্যন্ত এই পদ্ধতি চালু ছিলো। দেভশিরমের মাধ্যমে প্রাপ্ত মানবশক্তি নিয়ে কাপিকুলু নামে এক বিশেষ শ্রেণী গড়ে ওঠে। অটোম্যান সমাজের শাসক ও অভিজাত শ্রেণী এই কাপিকুলু। জেনেসারিরা ছিলো এই কাপিকুলু শ্রেণীর অংশ। ধরে আনা বালকদের প্রথমে নির্দিষ্ট কিছু তুর্কি পরিবারে রাখা হয়। এতে করে ধর্ম, ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে প্রাথমিক ধারণা জন্ম নেয়। ব্রুসা, এডির্ন, ইস্তাম্বুল, এবং গালাতায় রাজকীয় স্কুল ছিলো, যেখানে দুই থেকে সাত বছর পর্যন্ত কঠোর শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে আসতে হতো ছাত্রকে। তাদের নিয়ন্ত্রক ছিলো কাপি আগাসি।
শিক্ষকদের দ্বারা ইসলাম সম্পর্কে একটি সাধারণ ধারণা দেয়া হতো। তারপর তুর্কি, আরবি ও ফারসি ভাষা এবং সাহিত্য, অশ্বারোহণ, বর্শা নিক্ষেপ, তীরচালনা, কুস্তি এবং ভারোত্তলন শিক্ষা দেয়া হতো। এক্ষেত্রে সততা, আনুগত্য, আত্মনিয়ন্ত্রণের মতো চারিত্রিক গুণের প্রতি জোর দেয়া হতো।
প্রশিক্ষণ শেষে বাছাই প্রক্রিয়া এবং পদোন্নতির ব্যবস্থা ছিলো। সবচেয়ে দক্ষরা চলে যেতো সুলতানের দরবারে। আর বাকিরা যোগ দিতো কাপিকুলুতে। প্রথমদিকে সাধারণ ডিভিশনে (বাগান পর্যবেক্ষণ বা কাঠ কাটা প্রভৃতি) নেয়া হতো। পরে প্রমোশনের মাধ্যমে বারুদ বা বন্দুকের বিভাগে স্থানান্তর করা হতো। ইউরোপের নাইটদের মতো এই শিক্ষাব্যবস্থাতেও সামরিক দিক প্রাধান্য পেতো বেশি। প্রশিক্ষণ শেষ হলে গঠিত নতুন ইউনিটকে টুপি এবং সনদপত্র দেয়া হতো। উর্ধ্বতন অফিসার তাদের উলদাশ বলে পরিচয় করিয়ে দিতো। পরবর্তীতে জেনেসারি নিয়োগের প্রথায় পরিবর্তন আসে। ১৫৬৮ সালে জেনেসারিদের সন্তানদের নিয়োগ দেয়া হয়। ধীরে ধীরে মুক্ত মানুষ এবং মুসলমানরাও যুক্ত হতে থাকে জেনেসারির সাথে।
জেনেসারিদের ইউনিফর্ম ও অস্ত্র
জেনেসারি বাহিনীর ইউনিফর্ম ছিলো পশমের, যেগুলো তৈরি করতো থেসালোনিকির ইহুদি তাঁতীরা। বর্ক এবং উসকাফ নামে প্রচলিত হ্যাট মূলত তাদের পেছনে দরবেশের প্রভাবকে প্রকাশ করে। উর্ধ্বতন অফিসারদের জ্যাকেটে বিড়াল, শেয়াল, বেজি, কাঠবেড়ালির প্রতীক শোভা পেতো। সাধারণ জেনেসারির বুট ছিলো লাল চামড়ার, যেখানে উচ্চপদস্থদের ছিলো হলুদ চামড়ার। বেল্ট পর্যন্ত পদ অনুযায়ী পরিবর্তিত হতো।
অস্ত্রের প্রসঙ্গে বলতে গেলে, প্রায়শ যুদ্ধ থেকে প্রাপ্ত অস্ত্র পুনরায় ব্যবহার করতো তারা। এছাড়া আমদানি করা হতো ইউরোপ থেকে। অন্যদিকে ইউরোপে ব্যাপক চাহিদা ছিলো অটোম্যান গান-ব্যারেলের। উৎপাদিত হতো তরবারি, বর্শা, বন্দুক, ছুরি, ঢাল প্রভৃতি। প্রথমদিকে জেনেসারিদের প্রধান হাতিয়ার ছিলো তীর, পরে বন্দুক তার স্থান দখল করে। ১৬৪৫-৬৭ এর দিকে, বিশেষ করে ক্রিট বিজয়ের পর পিস্তলের ব্যবহার বেড়ে যায়। ১৭৭০ সালে ফরাসি পণ্ডিত ব্যারন ডি টটকে আমন্ত্রণ জানানো হয় পরামর্শক হিসেবে। বেয়নেটের ব্যবহারসহ বেশ কিছু দিকে সংস্কার আনেন তিনি।
যুদ্ধকৌশল
অটোম্যানদের যুদ্ধকৌশল বছরের পর বছর ধরে বিবর্তিত হয়েছে। জেনেসারিদের অংশগ্রহণে প্রথম বড় অভিযান কারামানিয়ান তুর্কিদের বিরুদ্ধে ১৩৮৯ সালে। এসময় তারা মধ্যভাগে থেকে যুদ্ধের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করে। ১৪০২ সালে আঙ্কারায় (আঙ্গোরার যুদ্ধ) তাদের অবস্থান ছিলো প্রতিরক্ষামূলক। যদিও তৈমুর লংয়ের সাথে এই যুদ্ধে অটোম্যান শক্তি হেরে যায়, তথাপি জেনেসারিরা তাদের যোগ্য হিসেবে প্রমাণ করে। এরপর প্রায় সকল যুদ্ধের ভাগ্য নির্মাতা হিসেবে আবির্ভূত হয় তারা। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে, জয়ের জন্য জেনেসারিদের হস্তক্ষেপ সবথেকে তাৎপর্যপূর্ণ।
যুদ্ধে শত্রুর বেষ্টনী প্রাচীর ভেঙে তারা সামনে এগিয়ে যেতো। আবার শত্রুপক্ষ যখন সীমা ভেঙে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করতো, তখন প্রতিহত করতো প্রবল তোপের সাথে। জেনেসারিদের অংশগ্রহণের আরো দুটি বড় ঘটনা ১৪৫৩ সালের কনস্টান্টিনোপল এবং ১৬৮৩ সালের ভিয়েনা অবরোধ। প্রথমটিতে জেনেসারিদের দেখা গেছে ধীরস্থির, সুশৃঙ্খল এবং অধ্যবসায়ী হিসেবে। ভিয়েনা অবরোধ ব্যর্থ হলেও জেনেসারিদের নিখুঁত বিন্যাস মুগ্ধ করেছে শত্রুপক্ষকে।
সক্ষমতা ও শক্তি
ডেভিড নিকোলের মতে, ১৪৭৫ সালের দিকে জেনেসারির সংখ্যা ছিলো ৬,০০০ এর মতো। কিন্তু ১৫৩০ সালের থেকে ব্যাপকভাবে বাড়তে থাকে। দুর্গ অবরোধ এবং যুদ্ধ পরিচালনায় তাদের অংশগ্রহণ আবশ্যক হয়ে দাঁড়ায়। ইরানের সাফাভিদের সাথে সংঘর্ষ, হাবসবুর্গের সাথে সংঘাত এবং পূর্ব-পশ্চিমে নানা অভিযানের জন্য জেনেসারি বাহিনী অটোম্যান শক্তির মেরুদণ্ড হিসেবে প্রমাণিত হয়। ১৬০৯ সাল নাগাদ তাদের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ৪০,০০০ এ। পরবর্তীতে এই সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পায়। ১৮২৬ সালে দ্বিতীয় মাহমুদের সময় তাদের সংখ্যা দাঁড়ায় ১,৩৫,০০০ এ।
পদোন্নতি ও নিয়মকানুন
প্রতি দুই থেকে আট বছরের মধ্যে পদোন্নতি বা বদলি করা হতো। মাঝে মাঝে আবার নতুন শাসকের সিংহাসনে আগমনের কারণে ঘটতো বদলি। জেনেসারিদের মধ্যে সিনিয়র-জুনিয়র প্রথা মানা হতো কঠোরভাবে। নিয়মিত বাহিনীর প্রধানকে বলা হতো ইয়েনেচারি আগাসি। জেনারেল নিজে সুলতানের কাছ থেকে নির্দেশনা নিয়ে আসতেন। প্রথম মুরাদ ১৬টি মূলনীতি ঠিক করে দিয়েছিলেন। এদের মধ্যে উর্ধ্বতনকে মান্য করা, সামরিক বিধি অনুসরণ করা, খুব বেশি আড়ম্বর কিংবা খুব বেশি অনাড়ম্বর না হওয়া, সাধারণ যোদ্ধার জন্য দাড়ি না রাখা, অবসর গ্রহণের আগে বিয়ে না করা, অন্য কোনো ব্যবসায় জড়িত না হওয়া, মদ না খাওয়া প্রভৃতি মুখ্য।
নিয়ম লঙ্ঘনের জন্য শাস্তি ভোগ করতে হতো। কারাবন্দী থেকে পায়ের তালুতে আঘাত। তারপরেও শাস্তি শেষে উর্ধ্বতন অফিসারের হাতে চুমু খেয়ে ফিরে আসতে হতো শৃঙ্খলায়। মাঝে মাঝে পদাবনতি, নির্বাসন কিংবা মৃত্যুদণ্ডও দেয়া হতো শাস্তি হিশেবে।
বেতন ভাতা ও সুবিধাদি
বছরে তিন থেকে চারবার জেনেসারিদের উলুফে বা বেতন দেয়া হতো। বিশেষ বিশেষ কাজের জন্য ছিলো বোনাসের ব্যবস্থা। পঞ্চদশ শতকের মধ্যভাগে সাধারণ জেনেসারিরা তুলনামূলকভাবে কম টাকা পেতো। তবে তার সাথে তারা পেতো পর্যাপ্ত কাপড়, একজোড়া পাজামা, পশমি কোট, শার্ট এবং তীর-ধনুক কেনার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ। দ্বিতীয় মুহম্মদের সময় মোট রাজস্বের ১৫ অংশ জেনেসারিদের জন্য বরাদ্দ ছিলো। যুদ্ধের মাঠে বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য বিভিন্ন উপাধি দেয়া হতো। যারা মারা যেতো, তাদের গণ্য করা হতো শহীদ হিসেবে। শহীদ পরিবারের ব্যক্তিবর্গ রাষ্ট্রের কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা পেতো। যেমন- সাপ্তাহিক ভাতা, ছেলেদের জন্য ভালো চাকরি এবং মেয়েদের জন্য উপযুক্ত পাত্র।
যুদ্ধের বাইরে জেনেসারি
যুদ্ধ ছাড়া অন্যান্য কাজের মধ্যে ছিলো অস্ত্র নির্মাণ। প্রথমদিকে এদের সংখ্যা খুব অল্প হলেও কালক্রমে বৃদ্ধি পায়। পুরাতন অস্ত্র মেরামত, নতুন অস্ত্র তৈরি এবং তা ইস্যু করা এক ব্যস্ত শাখায় পরিণত হয়। যারা সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতো না, তারা প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি সরবরাহ করতো। শীতের সময় তাদের বিভিন্ন কাজে লিপ্ত করা হতো। প্রাসাদ পাহারা দেয়া এবং পুলিশি দায়িত্ব পালনেও তাদের দেখা যেতো।
এজন্য দেখা যায়, তরবারি প্রস্তুতকারক থেকে শুরু করে হ্যাট প্রস্তুতকারক পর্যন্ত একটি স্থায়ী মর্যাদাময় অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়। অনেকেই নিজেদের জেনেসারি দাবি করে পূর্ণ বেতন দাবি করেও বসতো। সৈন্যরা ওরতা নামে সংগঠিত ছিলো। ওরতাকে তুলনা করা যায় ব্যাটালিয়নের সাথে। অন্য একটি উল্লেখযোগ্য দিক ছিলো মিলিটারি ব্যান্ড। ইউরোপের মধ্যে প্রথম অটোম্যানরাই স্থাপন করে স্থায়ী সামরিক সঙ্গীত সংঘ।
জেনেসারির বিদ্রোহ ও পতন
নিজের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠলে মানুষ আধিপত্যকামীতে পরিণত হয়। জেনেসারিদের ক্ষেত্রে ঠিক তা-ই ঘটেছিলো। বিভিন্ন যুদ্ধে তারা নিজেদের ভূমিকা বুঝতে পেরে বেঁকে বসলো বিভিন্ন আবদার নিয়ে। নাক গলাতে থাকলো অভ্যন্তরীণ বিষয়ে। ১৪৪৯ সালে তারা প্রথম বিদ্রোহ করে বেতন বৃদ্ধির জন্য। সুলতান তা মেনে নেন। শাসক দ্বিতীয় উসমান পরপর কয়েকটি যুদ্ধে হারের পর জেনেসারি বাহিনীকে ঢেলে সাজানোর চিন্তা করেন। কিন্তু সেই জেনেসারিদের কাছেই বন্দী অবস্থায় নিহত হতে হয় তাকে। জেনেসারিদের ক্ষমতা উত্তরোত্তর লাগামছাড়া হচ্ছিলো। তৃতীয় সেলিম এদিক বুঝতে পেরে নিজামে জাদীদ নামে নতুন বাহিনী গড়ে তোলেন। পরে দ্বিতীয় মাহমুদের সময় বিদ্রোহ করে জেনেসারিরা। কিন্তু ততদিনে জেনেসারি বিরোধী একটা শ্রেণী তৈরি হয়ে গেছে সুলতানের চারপাশে।
প্রচণ্ড সংঘর্ষে ৪,০০০ জেনেসারি মারা যায়। বেঁচে থাকাদের কাউকে বন্দী করা হলো আর কেউ পালিয়ে গেলো। ১৮২৬ সালের শেষের দিকে অবশেষ জেনেসারিদের ধরা হয়। থেসালোনিকি দুর্গে শিরোচ্ছেদে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। জায়গাটির নাম পরে ব্লাড টাওয়ার হিসেবে খ্যাতি পায়। সুলতান আসকারে মানসুরে মুহম্মদীয়া নামে নতুন এক বাহিনী গড়ে তোলেন। এভাবেই একসময়ের অটোম্যান সাম্রাজ্যের মেরুদণ্ড নাটকীয়ভাবে ধসে যায়। যবনিকা ঘটে একসময়ের এশিয়া ও ইউরোপ কাঁপানো শক্তির।
ইতিহাসের চমৎকার সব বিষয়ে রোর বাংলায় লিখতে আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন এই লিঙ্কেঃ roar.media/contribute/
অটোম্যানদের নিয়ে আরও জানতে পড়তে পারেন এই বইগুলোঃ
১) অটোমান সাম্রাজ্যের উত্থান
২) দি অটোমান সেঞ্চুরিস : দ্য রাইজ অ্যান্ড ফল অব দ্য তার্কিশ এম্পায়ার
This article is a brief introduction about Janissaries, the elite infantry unit of Ottoman history and the first standin army in Europe. Over the heartland of west Asia, eastern Europe and north Africa, they become unparalleled in power during the golden age of ottoman empire. Slowly and steadily, they included themselves in administration and other department of the government until 1826 CE, the year of disbandment. This article will emphasis on recruitment of Janissaries and their lifestyle in a nutshel.
References:
1. The Janissaries - David Nicolle Christa Hook
2. Encyclopedia Britannica, Micropaedia, 15th edition, Vol-6, Page- 493
3. The Oxford Encyclopedia of the Modern Islamic World, Oxford Paperback Edition 2001, Vol-2, Page 367
4. Encyclopedia of Islam - E. J. Brill
Featured Image: weloveist.com