Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

কারিম খাকিমভ: সোভিয়েত ‘লরেন্স অভ অ‍্যারাবিয়া’র গল্প

আমরা অনেকেই কর্নেল থমাস এডওয়ার্ড লরেন্স বা ‘লরেন্স অভ অ্যারাবিয়া’র সম্পর্কে জানি, যিনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় আরবদের উসমানীয় সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে ইন্ধন যুগিয়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছেন। এই নিবন্ধ যাকে নিয়ে লেখা, তাকে বলা হয় সোভিয়েত ইউনিয়নের ‘লরেন্স অভ অ্যারাবিয়া’।

এই ‘সোভিয়েত লরেন্স অভ অ্যারাবিয়া’ ছিলেন একাধারে একজন রাজনীতিবিদ, কূটনীতিক, সামরিক কমান্ডার, গুপ্তচর এবং আরবি ভাষাবিদ! প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে আরব বিশ্বে সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রভাব বিস্তারে বিশিষ্ট ভূমিকা রেখেছিলেন এই ব্যক্তি।

প্রকৃত নাম ছিল কেরিম গাব্দরেউফ উলিই খেকিমভ। তাতার ভাষা থেকে যেটির রুশ প্রতিরূপ দাঁড়ায়- কারিম আব্দুরউফোভিচ খাকিমভ। তবে এত বড় নামে নয়, বিশ্বজুড়ে তিনি পরিচিতি পেয়েছিলেন সংক্ষেপিত ‘কারিম খাকিমভ’ নামে। আমরা লেখাটিতেও তাকে এই নামেই জানব।

১৮৯২ সালের ২৮ নভেম্বর তদানীন্তন রুশ সাম্রাজ্যের উফা প্রদেশের বেলেবেয়ভস্কি জেলার ইলকুলমিনস্কি ভোলোস্তের দিউসিয়ানোভো গ্রামে তার জন্ম। বর্তমান রাশিয়ার মানচিত্রে জায়গাটির অবস্থান বাশকোর্তোস্তান অঙ্গরাজ্যের বিঝবুলিয়াকস্কি জেলায়।

জাতিগতভাবে তাতার ও ধর্মগতভাবে রক্ষণশীল এক মুসলিম পরিবারে জন্মেছিলেন কারিম খাকিমভ। বাবা গাব্দরেউফ খেকিমভ ছিলেন একজন কৃষক।

খাকিমভ প্রথমে বর্তমান ওরেনবুর্গ অঞ্চলের সাকমারস্কি জেলার কারগালি গ্রামের একটি মাদ্রাসায় এবং পরবর্তীতে উফা শহরের আলিয়া মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেন। এরপর তিনি বর্তমান তাজিকিস্তানের কোনিবোদোম শহরের একটি খনিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯১৭ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে সাইবেরিয়ার তোমস্ক শহরের একটি জিমনেসিয়াম থেকে তিনি স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

ভ্লাদিমির লেনিনের নেতৃত্বে ১৯১৭ সালের অক্টোবর-নভেম্বরে যে বলশেভিক বিপ্লব সংঘটিত হয়, রাশিয়ার অসংখ্য তরুণের মতো খাকিমভও সোৎসাহে এই বিপ্লবকে সক্রিয়ভাবে সমর্থন করেন। ১৯১৮ সালে তিনি ওরেনবুর্গ মুসলিম সামরিক বিপ্লবী সমিতির সদস্য এবং প্রাদেশিক জনশিক্ষা বিষয়ক ‘কমিশার’ নিযুক্ত হন। উল্লেখ্য, সোভিয়েত শাসনামলের প্রথম দিকে মন্ত্রীদের ‘কমিশার’ বলা হতো।

এসময় রাশিয়ায় বলশেভিক এবং বলশেভিক-বিরোধীদের মধ্যে যে রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ হয়, তাতে খাকিমভ একজন বলশেভিক সামরিক কমান্ডার হিসেবে কৃতিত্বের পরিচয় দেন।

এসময় তিনি ওরেনবুর্গ ফ্রন্টের আক্তোবে অঞ্চলে (বর্তমান কাজাখস্তানের অংশ) বলশেভিক লাল ফৌজের আন্তর্জাতিক পল্টনের ২য় ব্যাটালিয়নের কমান্ডার হিসেবে এবং পরবর্তীতে ১ম পৃথক ভোলগা তাতার রাইফেল ব্রিগেডের রাজনৈতিক বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯২০ সালে বলশেভিক নেতা ও লাল ফৌজের অন্যতম কমান্ডার ভালেরিয়ান কুইবিশেভের সুপারিশে খাকিমভকে সোভিয়েত রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কাজ করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়।

১৯২০-১৯২১ সালে খাকিমভ একই সঙ্গে লাল ফৌজের তুর্কিস্তান ফ্রন্টের রাজনৈতিক বিভাগের উপপ্রধান, তুর্কিস্তান কমিউনিস্ট পার্টির অন্তর্বর্তীকালীন কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক, সোভিয়েত গণপ্রজাতন্ত্রী বুখারায় সোভিয়েত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত এবং বুখারা কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

উল্লেখ্য, ১৮৭৩ সাল থেকে বুখারা আমিরাত রুশ সাম্রাজ্যের একটি আশ্রিত রাষ্ট্র ছিল। ১৯২০ সালে বুখারার বলশেভিকরা বুখারার আমিরকে ক্ষমতাচ্যুত করে ‘সোভিয়েত গণপ্রজাতন্ত্রী বুখারা’ নামে একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে।

এরপর মস্কো কর্তৃক মধ্য এশিয়ায় জাতিসত্তার ভিত্তিতে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার উদ্যোগের ফলাফল হিসেবে ১৯২৫ সালে এই রাষ্ট্রটি বিলুপ্ত হয় এবং এর ভূখণ্ড উজবেক, তাজিক ও তুর্কমেন সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রগুলোর নিকট হস্তান্তর করা হয়।

সোভিয়েত লরেন্স অফ অ্যারাবিয়া “লাল পাশা” কারিম খাকিমভ; Source: Getty Images

১৯২১ সালের অক্টোবর থেকে ১৯২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত খাকিমভ ইরানে প্রথমে সোভিয়েত রাশিয়ার এবং পরবর্তীতে সোভিয়েত ইউনিয়নের কূটনৈতিক প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯১৭ সালের রুশ সাম্রাজ্যের পতনের পর রাশিয়ার বহু সীমান্তবর্তী প্রদেশ কেন্দ্র থেকে বিচ্ছিন্নতা ঘোষণা করেছিল। ‘সোভিয়েত রাশিয়া’ পরবর্তীতে এসব প্রদেশের অনেকগুলোর সঙ্গে একত্রিত হয়ে ‘সোভিয়েত ইউনিয়ন’ গঠন করে।

খাকিমভ প্রথমে বর্তমান উত্তর ইরানের রাজাভি খোরাসান প্রদেশের রাজধানী মাশাদ শহরে এবং পরবর্তীতে গিলান প্রদেশের রাজধানী রেশত শহরে সোভিয়েত কনসাল জেনারেল হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন।

১৯২২ সালের ডিসেম্বরে সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে হিজাজের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন বিষয়ক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ১৯১৬ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে মিত্রশক্তির সমর্থনে মক্কার শরিফ হুসেইন বিন আলী উসমানীয় সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন এবং মিত্রশক্তি তাকে স্বাধীন হিজাজের রাজা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

১৯২৪ সালের ৯ আগস্ট খাকিমভ হিজাজে সোভিয়েত ইউনিয়নের কনসাল জেনারেল ও কূটনৈতিক প্রতিনিধি হিসেবে নিযুক্ত হন। ঐ বছরের ২৪ আগস্ট তিনি জেদ্দায় এসে পৌঁছান। এর কিছু দিন পরেই নজদের সুলতান আব্দুল আজিজ ইবন সৌদ হিজাজ আক্রমণ করেন।

এসময় আরব উপদ্বীপের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে হিজাজ ও নজদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। হিজাজ এবং নজদের মধ্যে কাকে সমর্থন করা উচিত- এই নিয়ে মস্কো প্রাথমিক পর্যায়ে দ্বিধান্বিত ছিল। শেষ পর্যন্ত সোভিয়েত পররাষ্ট্রমন্ত্রী চিচেরিন খাকিমভকে এই মর্মে নির্দেশ পাঠান যে, সোভিয়েত কূটনীতিকদের উচিত হবে এই দ্বন্দ্বে কোনো পক্ষ না নিয়ে নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকা এবং সাধারণভাবে আরবদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের প্রতি সমর্থন জানানো।

১৯২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে নজদের সুলতান ইবন সৌদ মক্কা দখল করে নেন। এরপরই খাকিমভ বুঝতে পারেন যে, এই যুদ্ধে ইবন সৌদই বিজয়ী হবেন। তিনি ইবন সৌদের সঙ্গে দেখা করার জন্য প্রস্তুতি নেন।

এসময় ইবন সৌদ মক্কায় অবস্থান করছিলেন। ১৯২৫ সালের এপ্রিলে ইবন সৌদের সৈন্যরা জেদ্দা অবরোধ করে। তখন খাকিমভ ওমরাহ আদায়ের জন্য মক্কায় যান। মক্কায় খাকিমভ ইবন সৌদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

এটি ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের জন্য বড় একটি কূটনৈতিক বিজয়; কারণ তখন পর্যন্ত কোনো পশ্চিমা কূটনীতিককে ইবন সৌদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার অনুমতি দেয়া হয়নি। মস্কোতে পাঠানো চিঠিতে খাকিমভ জানান যে, ইবন সৌদের সঙ্গে তার আলোচনা আশাতীত সাফল্য অর্জন করেছে এবং হিজাজ ও নজদের মধ্যে মধ্যস্থতা করার সোভিয়েত প্রস্তাবকেও ইবন সৌদ ইতিবাচকভাবে নিয়েছেন।

যদিও শেষ পর্যন্ত এই প্রস্তাব বাস্তবে রূপ নেয়নি, কিন্তু খাকিমভের সবচেয়ে বড় সাফল্য ছিল এটিই যে, তিনি আরব অভিজাত সম্প্রদায়ের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হন, যা তখন পর্যন্ত পশ্চিমা কূটনীতিকদের পক্ষে সম্ভব হয়নি।

ডানদিক থেকে: খাকিমভ, খাকিমভের স্ত্রী খাদিজা এবং শিশুপুত্র শামিল; Source: Wikimedia Commons

১৯২৫ সালের মধ্যে ইবন সৌদ জেদ্দা দখল করে নেন এবং ১৯২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নিজেকে নজদ ও হিজাজ উভয় রাজ্যের বাদশাহ ঘোষণা করেন। ১৯২৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি মস্কো ইবন সৌদকে হিজাজ ও নজদের বাদশাহ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে।

খাকিমভ এই সংবাদ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার ব্যক্তিগত গাড়িতে সোভিয়েত পতাকা উড়িয়ে নিজেই গাড়ি চালিয়ে জেদ্দা থেকে মরুভূমির মধ্যে অবস্থিত ইবন সৌদের বাসস্থানের উদ্দেশ্যে রওনা হন। তখনো যুদ্ধ পুরোপুরি থামেনি এবং খাকিমভের গাড়ি গোলাগুলির মধ্যে পড়েছিল।

এমন অবস্থায় খাকিমভ ইবন সৌদের কাছে পৌঁছে মস্কোর স্বীকৃতিপত্রটি তার হাতে তুলে দেন। এটি ছিল ইবন সৌদের প্রথম আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ। খাকিমভের সাহসিকতা ইবন সৌদকে মুগ্ধ করে এবং তিনি ইবন সৌদের ব্যক্তিগত শ্রদ্ধা ও বন্ধুত্ব অর্জন করেন।

সোভিয়েত ইউনিয়নের স্বীকৃতি লাভের পর ইবন সৌদ চিঠির মাধ্যমে জানান যে, তিনি মস্কোর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করতে আগ্রহী। মস্কো এই প্রস্তাব গ্রহণ করে এবং খাকিমভ নবগঠিত রাষ্ট্রটিতে সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রথম রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত হন।

সৌদি আরব এবং বৃহত্তর আরব বিশ্বের সঙ্গে নবগঠিত সোভিয়েত রাষ্ট্রের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় খাকিমভের ব্যক্তিগত কৃতিত্ব ছিল অসামান্য। তার প্রখর বুদ্ধিমত্তা, মানুষকে প্রভাবিত করার অপরিসীম ক্ষমতা, আরব বিশ্বের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে গভীর জ্ঞান এবং সর্বোপরি আরবি ভাষার ওপর পরিপূর্ণ দখল তাকে আরবদের মধ্যে জনপ্রিয় করে তুলেছিল। খাকিমভকে আরবরা ডাকত ‘লাল পাশা’ বলে।

কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল একটি একদলীয় সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র যার রাষ্ট্রীয় আদর্শ ছিল মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদ এবং যেখানে নাস্তিকতাকে সরকারিভাবে উৎসাহিত করা হতো। অন্যদিকে, সৌদি আরব আল-সৌদ রাজবংশের অধীনস্থ একটি রাজতান্ত্রিক ধর্মীয় রাষ্ট্র, যারা ওয়াহাববাদের মতো ইসলামের অপেক্ষাকৃত কট্টর একটি ধারাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রণোদিত করতো।

এমতাবস্থায় প্রশ্ন ওঠা খুব স্বাভাবিক, মস্কো আর রিয়াদ তাহলে কেনই বা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল? উত্তরটিও সহজ- Raison d’état; সোজা বাংলায়, রাষ্ট্রীয় স্বার্থ!

মস্কোর দিক থেকে এরকম সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে বেশকিছু কারণ ছিল। প্রথমত, এসময় সদ্যপ্রতিষ্ঠিত সোভিয়েত ইউনিয়ন ব্রিটেনসহ পশ্চিম ইউরোপীয় পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে আদর্শগত ও ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্বে লিপ্ত ছিল। ক্রেমলিনের উদ্দেশ্য ছিল, যেভাবেই হোক মধ্যপ্রাচ্যে সোভিয়েত প্রভাব বিস্তার করে এসব অঞ্চলে ব্রিটেন ও ফ্রান্সের প্রভাব হ্রাস করা।

দ্বিতীয়ত, লেনিনবাদের একটি বিশেষ আদর্শিক অবস্থান ছিল প্রাচ্যের জাতিগুলোর আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের প্রতি সমর্থন প্রদান। ইবন সৌদ কর্তৃক স্বাধীন সৌদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকে মস্কো আরবদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রতিষ্ঠা হিসেবেই দেখছিল।

তৃতীয়ত, ইসলামের কেন্দ্রভূমি মক্কা ও মদিনা সৌদি রাষ্ট্রের অন্তর্গত হওয়ায় আল-সৌদ রাজবংশের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে মুসলিম বিশ্বে সোভিয়েত প্রভাব বিস্তারের সুযোগ সৃষ্টি হবে- এটিও মস্কোর হিসেবে ছিল। বিশেষত, প্রতি বছর মক্কায় এশিয়া ও আফ্রিকার ব্রিটিশ, ফরাসি ও ওলন্দাজ উপনিবেশগুলো থেকে যে লক্ষ লক্ষ মুসলিম হজ করতে আসে, তাদের মধ্যে উপনিবেশবাদ-বিরোধী মতাদর্শ ছড়িয়ে দেওয়ার একটি বড় সুযোগ বলে এটিকে বলশেভিক নেতারা মনে করছিলেন।

অন্যদিকে, ইবন সৌদেরও ‘নাস্তিক’ সোভিয়েতদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার নিজস্ব কিছু কারণ ছিল। প্রথমত, সেসময় মধ্যপ্রাচ্যে প্রধান শক্তি ছিল ব্রিটেন। সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে ইবন সৌদ ব্রিটেন ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে চেয়েছিলেন।

দ্বিতীয়ত, সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে ইবন সৌদ ব্রিটেনের ওপর অত্যধিক নির্ভরতা কমাতে চেয়েছিলেন। উল্লেখ্য, তখনও সৌদি আরবে তেল আবিষ্কৃত হয়নি। তাই তখন সৌদি আরব ছিল নিতান্তই মধ্যপ্রাচ্যের একটি প্রান্তিক রাষ্ট্র।

তৃতীয়ত, ইবন সৌদ হিজাজ দখল করে নিলেও হিজাজের, বিশেষত মক্কা ও মদিনার ওপর তার কর্তৃত্ব তখনো সুপ্রতিষ্ঠিত হয়নি। বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায়ের বড় একটি অংশ তখনও তার দখলদারিত্বকে স্বীকৃতি দেয়নি। এমতাবস্থায় সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো একটি বৃহৎ শক্তির সঙ্গে সুসম্পর্ক হিজাজের ওপর তার কর্তৃত্বকে জোরদার করতে পারত।

মক্কা ও মদিনার কর্তৃত্ব নিয়ে যে বিতর্ক চলছিল- সেটির অবসান ঘটানোর জন্য ১৯২৬ সালের এপ্রিলে মক্কায় একটি প্যান-ইসলামি কংগ্রেস ডাকা হয়, যাতে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মুসলিম ধর্মীয় নেতারা অংশ নেন। মস্কো এটিকে আরব উপদ্বীপে তাদের প্রভাব বিস্তারের সুযোগ হিসেবে দেখে এবং ইবন সৌদের পক্ষ সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নেয়।

সোভিয়েত সরকার তাদের ‘ধর্মহীনতা’র আদর্শ উপেক্ষা করে ৬ জন মুসলিম ধর্মীয় নেতাকে এই কংগ্রেসে অংশ নিতে পাঠায়, যারা ৩ কোটি সোভিয়েত মুসলিমের প্রতিনিধিত্ব করছিলেন। তাদের ভোটে ইবন সৌদ উক্ত কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন।

এক্ষেত্রেও খাকিমভ সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। তারই প্রচেষ্টায় একজন সোভিয়েত মুসলিম ধর্মীয় নেতা এই কংগ্রেসের উপ-সভাপতি নির্বাচিত হন। এই কংগ্রেসে মক্কা ও মদিনার ওপর ইবন সৌদের কর্তৃত্ব মুসলিম বিশ্বের বৃহত্তর অংশের স্বীকৃতি লাভ করে।

এভাবে খাকিমভ সোভিয়েত ইউনিয়ন ও সউদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন ও দৃঢ়করণে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। সন্দেহ নেই, খাকিমভের মুসলিম পরিচিতি, তার কূটনৈতিক দক্ষতা এবং ইবন সৌদের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত বন্ধুত্ব সৌদি আরবে মস্কোর প্রভাব বিস্তারের সুযোগ করে দিয়েছিল।

ব্রিটেনের চাপে সৌদি আরবে সোভিয়েত পণ্য প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। খাকিমভের অনুরোধে ইবন সৌদ সেটি তুলে নেন। এর ফলে প্রথম বারের মতো সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে সৌদি আরবের বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপিত হয় এবং কৃষ্ণসাগরীয় সোভিয়েত সমুদ্রবন্দরগুলোর সঙ্গে হিজাজ অঞ্চলের বাণিজ্যিক যোগাযোগ গড়ে ওঠে।

১৯২৯ সাল থেকে সোভিয়েত ইউক্রেনের ওদেসা সমুদ্রবন্দর থেকে নানাবিধ সোভিয়েত পণ্য সৌদি আরবে আসতে শুরু করে। সোভিয়েতরা সৌদি আরবের কেরোসিন ও বেনজিনের বাজারেও প্রবেশ করে, যেটি আগে ব্রিটেনের একচেটিয়া দখলে ছিল।

একই সময়ে সোভিয়েতরা মক্কার হজ যাত্রীদের চিকিৎসা-সেবা নিশ্চিত করার জন্য একদল চিকিৎসাকর্মীও প্রেরণ করে। কিন্তু মক্কার হজ যাত্রীদের মধ্যে উপনিবেশবাদ-বিরোধী বা কমিউনিস্ট প্রচারণা চালানোর সোভিয়েত প্রচেষ্টা বিশেষ সাফল্য লাভ করেনি।

খাকিমভ সোভিয়েত গুপ্ত পুলিশ ‘ওজিপিইউ’-এর একজন সদস্য ছিলেন; Source: Getty Images

১৯২৮ সালের জুলাই পর্যন্ত খাকিমভ সৌদি আরবে সোভিয়েত রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তাকে মস্কোয় ডেকে পাঠানো হয় এবং নাজির তুরিয়াকুলভ তার স্থলাভিষিক্ত হন। ১৯২৯ সালের জানুয়ারি থেকে ১৯৩১ সাল পর্যন্ত খাকিমভ ইয়েমেনে সোভিয়েত রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একই সময়ে তিনি সোভিয়েত গুপ্ত পুলিশ বাহিনী ‘ওজিপিইউ’-এরও একজন সদস্য ছিলেন।

১৯৩২ সালের মে মাসে সৌদি যুবরাজ ফয়সাল ইবন আব্দুল আজিজ আল-সৌদ মস্কো সফর করেন। এই সফর আয়োজনে খাকিমভ সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন। সোভিয়েত রাষ্ট্রপ্রধান মিখাইল কালিনিন যুবরাজ ফয়সালকে অভিবাদন জানান, কিন্তু সোভিয়েত নেতা জোসেফ স্তালিন যুবরাজকে অভ্যর্থনা জানাতে না আসায় ফয়সাল অসন্তুষ্ট হন। যদিও খাকিমভের প্রত্যুৎপন্নমতিত্বের কারণে মস্কো একটি কূটনৈতিক সঙ্কট থেকে বেঁচে যায়।

সোভিয়েত কর্তৃপক্ষ ফয়সালকে সোভিয়েত শিল্পের বিভিন্ন অর্জন প্রদর্শন করে এবং সোভিয়েত আজারবাইজানের বিকাশমান তেলশিল্প দেখে ফয়সাল মুগ্ধ হন। মস্কো সৌদি আরবের সমস্ত ঋণ মওকুফ করে দেয় এবং সৌদি আরবকে ১০ লক্ষ পাউন্ড সমমূল্যের অর্থনৈতিক সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। বস্তুত যুবরাজ ফয়সালের সোভিয়েত ইউনিয়ন সফর ছিল সোভিয়েত-সৌদি সম্পর্কের শীর্ষ মুহূর্ত।

বামদিক থেকে: সোভিয়েত রাষ্ট্রপ্রধান মিখাইল কালিনিন, খাকিমভ এবং সৌদি যুবরাজ ফয়সাল ইবন আব্দুল আজিজ আল-সৌদ; Source: Russia-Islamic World

এরপর থেকে ধীরে ধীরে দুই পক্ষের সম্পর্ক শীতল হতে শুরু করে। সোভিয়েত ইউনিয়নে জোসেফ স্তালিন এই সময়ে সমস্ত ক্ষমতা নিজের হাতে কেন্দ্রীভূত করতে সক্ষম হন। স্তালিনের নির্দেশে সোভিয়েত ইউনিয়ন জুড়ে ধর্মবিরোধী অভিযান জোরদার হয় এবং ইসলাম ধর্মও এর ব্যতিক্রম ছিল না।

১৯৩২ সালেই সোভিয়েত মুসলিমদের হজে যাওয়া অনানুষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধ করা হয়। অন্যদিকে, ইবন সৌদ মস্কোর অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদানের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন এবং এর পরিবর্তে ব্রিটেনের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা লাভ করেন।

১৯৩২ সাল থেকে ১৯৩৫ সাল পর্যন্ত খাকিমভ মস্কোয় অবস্থিত অল-ইউনিয়ন কমিউনিস্ট পার্টির ‘ইনস্টিটিউট অভ রেড প্রফেসর্স’-এ পড়াশোনা করেন। ১৯৩৫ সালের ৭ ডিসেম্বর তাকে আবার সৌদি আরবে সোভিয়েত রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত করা হয়। সৌদি আরবে পৌঁছে তিনি সোভিয়েত-সৌদি সম্পর্ককে আবার জোরদার করার প্রচেষ্টা চালান।

রিয়াদ এতে উৎসাহী হলেও মস্কোর আর এ ব্যাপারে আগ্রহ ছিল না। বস্তুত স্তালিন প্রথম থেকেই পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে সোভিয়েত প্রভাব বিস্তারের ব্যাপারে অনাগ্রহী ছিলেন এবং ইবন সৌদের সঙ্গে সম্পর্ককে অলাভজনক মনে করতেন।

এসময় জার্মানিতে চরম সোভিয়েতবিরোধী হিটলারের উত্থান এবং জাপানের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান সীমান্ত সংঘাতের ব্যাপারে মস্কো অত্যন্ত উদ্বিগ্ন ছিল। তাই মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বিস্তার নিয়ে ব্রিটেনের সঙ্গে নতুন কোনো প্রতিযোগিতায় জড়াতে তারা আগ্রহী ছিল না। ফলে খাকিমভের উদ্যোগ সফলতার মুখ দেখেনি।

১৯৩৭ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খাকিমভ সৌদি আরবে সোভিয়েত রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তাকে একটি নিয়মিত পরিদর্শনের জন্য মস্কোয় ডেকে পাঠানো হয়। এসময় সোভিয়েত ইউনিয়ন জুড়ে স্তালিনের শুদ্ধি অভিযান চলছিল।

গুপ্তচরবৃত্তি, প্রতিবিপ্লবের প্রচেষ্টা বা রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে লক্ষ লক্ষ মানুষকে সোভিয়েত গুপ্ত পুলিশ ‘এনকেভিডি’ গ্রেপ্তার করে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করে বা বাধ্যতামূলক শ্রম শিবিরে প্রেরণ করে। অসংখ্য নিরপরাধ মানুষ এই স্তালিনীয় শুদ্ধি অভিযানের ভুক্তভোগী হন।

এই চলমান শুদ্ধি অভিযানের কথা বাদশাহ ইবন সৌদের অগোচরে ছিল না। তিনি ধারণা করেছিলেন যে, খাকিমভকেও এই শুদ্ধি অভিযানে খতম করে দেওয়ার জন্যই মস্কোয় ডেকে পাঠানো হয়েছে। তিনি খাকিমভকে সৌদি আরবে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রদানের প্রস্তাব দেন। কিন্তু দেশপ্রেমিক খাকিমভ সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেননি। তিনি মস্কোর উদ্দেশ্যে সৌদি আরব ত্যাগ করেন।

মস্কোয় পৌঁছানোর পর সোভিয়েত গুপ্ত পুলিশ এনকেভিডি খাকিমভকে গুপ্তচর সন্দেহে গ্রেপ্তার করে। সৌদি আরবে সোভিয়েত ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করা আরেক কূটনীতিক নাজির তুরিয়াকুলভকেও গ্রেপ্তার করা হয়।

১৯৩৭ সালের অক্টোবরে তুরিয়াকুলভের এবং ১৯৩৮ সালের জানুয়ারিতে খাকিমভের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। মৃত্যুর সময় সোভিয়েত ‘লরেন্স অফ অ্যারাবিয়া’র বয়স ছিল মাত্র ৪৫ বছর।

খাকিমভকে বিনা দোষে মৃত্যুদণ্ড দিয়েই এনকেভিডি ক্ষান্ত হয়নি। খাকিমভের স্ত্রীকেও ৮ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। স্তালিনের মৃত্যুর পর অবশ্য সোভিয়েত সরকার ১৯৫৬ সালে খাকিমভকে নির্দোষ ঘোষণা করে!

মস্কোয় খাকিমভের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার দুই মাস পরেই সৌদি আরবের দাহরানে মার্কিন ভূতাত্ত্বিকরা বিশ্বের সর্ববৃহৎ তেলখনি আবিষ্কার করেন। এর ফলে ১৯৩৮ সালে মস্কো সৌদি আরবে নতুন একজন রাষ্ট্রদূত নিয়োগ করতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। উল্লেখ্য, ১৯৩৭ সালে খাকিমভকে মস্কোয় ডেকে পাঠানোর পর থেকে সৌদি আরবে সোভিয়েত রাষ্ট্রদূতের পদটি ফাঁকা ছিল।

কিন্তু ইবন সৌদ খাকিমভের স্থানে অন্য কাউকে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান। খাকিমভের মৃত্যুদণ্ডের ঘটনায় মস্কোর প্রতি যারপরনাই ক্ষুব্ধ ছিলেন তিনি। তিনি মস্কোকে মুসলিম বিশ্বে বিপ্লব ছড়ানোর দায়ে অভিযুক্ত করেন এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেন।

এর ফলে তেলসমৃদ্ধ সৌদি আরব পুরোপুরি মস্কোর বলয়ের বাইরে চলে যায় এবং প্রথমে ব্রিটেন ও পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবাধীন হয়ে পড়ে। ১৯৯০ সালের আগে মস্কোর সঙ্গে সৌদি আরবের কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনর্স্থাপিত হয়নি।

যদি স্তালিন সৌদি আরবকে এতটা উপেক্ষা না করতেন এবং বিশেষত যদি খাকিমভকে মৃত্যুদণ্ড না দিতেন, সেক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবের তেল এবং রাজনীতির ওপর একচেটিয়া প্রভাব বিস্তারের সুযোগ পেত না। সেক্ষেত্রে স্নায়ুযুদ্ধের ইতিহাস অনেকটাই ভিন্ন হতে পারত।

১৯৩৮ সালে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার পর থেকেই সৌদি আরব আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরোধিতা করেছে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের নানাবিধ কারণের মধ্যে প্রধান কারণ ছিল দুইটি। প্রথমত, ১৯৮০-এর দশকে তেলের দাম দ্রুত হ্রাস পাচ্ছিল, অথচ তেলই ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস। দ্বিতীয়ত, আফগান যুদ্ধের কারণে বিপুল অর্থ ও জনবলের লোকসান গুনতে হয়েছিল তাদের।

আর এই দুই ক্ষেত্রেই সৌদি আরবের প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবে সৌদি আরবই ১৯৮০-এর দশকে অন্যান্য তেলসমৃদ্ধ আরব রাষ্ট্রের সঙ্গে মিলে তেলের দাম কমিয়ে দিয়েছিল এবং আফগান যুদ্ধে সোভিয়েত-বিরোধী আফগান মিলিট্যান্টদের অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহের সিংহভাগ ব্যয়ও বহন করেছিল। যদি খাকিমভকে সোভিয়েত-সৌদি সম্পর্ককে আবার জোরদার করার সুযোগ দেওয়া হতো, তাহলে হয়ত স্নায়ুযুদ্ধে সৌদি আরব এতটা সোভিয়েতবিরোধী ভূমিকায় অবতীর্ণ হতো না।

দিউসিয়ানোভোয় অবস্থিত কারিম খাকিমভের স্মৃতিস্তম্ভ; Source: Wikimedia Commons

স্তালিন-পরবর্তী সোভিয়েত নেতৃবৃন্দ ঠিকই অনুধাবন করতে পেরেছিলেন খাকিমভের অবদানের গুরুত্ব। ১৯৭৯ সালে খাকিমভের জন্মস্থান দিউসিয়ানোভোর তার স্মৃতি রক্ষার্থে একটি জাদুঘর নির্মিত হয়। বর্তমান রাশিয়ার উফা ও ওরেনবুর্গ এবং উজবেকিস্তানের সমরখন্দ ও বুখারায় একটি করে রাস্তার নামকরণ করা হয়েছে খাকিমভের নামে।

২০১৫ সালে রুশ ফেডারেশনের বাশকোর্তোস্তান প্রজাতন্ত্রের সরকার মহাসমারোহে খাকিমভের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করে। বাশকোর্তোস্তানের রাষ্ট্রপ্রধানের নির্দেশে বর্তমানে প্রতি বছর ‘খাকিমভ রিডিংস’-এর আয়োজন করা হয়, যাতে দেশি-বিদেশি পণ্ডিতরা অংশগ্রহণ করেন।

২০১৯ সালে বাশকোর্তোস্তানের রাজধানী উফা শহরে খাকিমভের উদ্দেশ্যে একটি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করা হয়। সোভিয়েত ‘লরেন্স অফ অ্যারাবিয়া’ জীবিত থাকতে হয়তো যথোপযুক্ত সম্মান পাননি, কিন্তু তাঁর দেশবাসী ঠিকই তার অবদানকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছে।

 

This is a Bangla article and it is about the Soviet diplomat Karim Khakimov, known as 'Soviet's Lawrence of Arababia'.

Necessary references are hyperlinked inside the article.

Featured Image: Wikimedia Commons

Related Articles