Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

কেনেডি-ক্রুশ্চেভ সমঝোতা এবং কিউবার স্নায়ুক্ষয়ী মিসাইল দুর্যোগের অবসান

কিউবার মিসাইল দুর্যোগ‘ শিরোনামে প্রকাশিত লেখাটিতে, কিউবায় ক্ষেপণাস্ত্র সংকট শুরু হবার পর থেকে, বিশেষ করে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে অক্টোবরের ২৬ তারিখ পর্যন্ত ঘটনাপ্রবাহ আলোচনা করা হয়েছে। এই সময়টাই ছিল সংকটের সবচেয়ে উত্তেজনাময় সময়। এই পর্বে সংকটের কারণ এবং পরিণতি আলোচনা করা হবে।

দুর্যোগ শুরুর প্রাথমিক কারণ

একটি দূরপাল্লার সোভিয়েত মিসাইল; source: classroom.synonym.com

১৯৬১ সালে কিউবায় যুক্তরাষ্ট্রের ‘বে অব পিগস’ এবং ‘অপারেশন মনগুজ’ ব্যর্থ হবার পর, কিউবা এবং রাশিয়ার কাছে এটা নিশ্চিত হয়ে যায় যে, আরো আক্রমণ আসন্ন। আগুনে ঘি ঢালার মতো প্রভাবকের কাজ করে বার্লিন সংকট। অন্যদিকে, সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র যখন মাত্র ৪০টি (বিভিন্ন উৎসের তথ্য সর্বোচ্চ ৭০টির কথা বলে), তখন আমেরিকার ক্ষেপণাস্ত্র ছিল প্রায় ২০০টি! এই ব্যবধান বেড়ে চলেছিল দ্রুতগতিতে। একইসাথে আমেরিকার ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ছিল উন্নত প্রযুক্তির এবং অধিক নিখুঁত। ফলে সামরিক শক্তির ভারসাম্য ক্রমেই আমেরিকার দিকে চলে যাচ্ছিল এবং পিছিয়ে পড়ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন।

এই ভারসাম্য টিকিয়ে রাখতে সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট নিকিতা ক্রুশ্চেভের মাথায় নতুন বুদ্ধি খেলে গেল। যেহেতু দূরপাল্লার সোভিয়েত ক্ষেপণাস্ত্রগুলো যথেষ্ট নিখুঁত ছিল না, এবং কিউবা আমেরিকার খুবই কাছের একটি রাষ্ট্র, সেহেতু মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রগুলো কিউবায় স্থাপন করলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়! একদিকে মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রগুলো অধিক নিখুঁত ছিল, অন্যদিকে কিউবা থেকে সেগুলো দ্বারা সহজেই যুক্তরাষ্ট্রের আক্রমণের মোকাবিলা করা যাবে। আর কিউবায় যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য আক্রমণ থেকে রক্ষা তো করবেই সেগুলো।

আমেরিকার উপকূল থেকে ১০০ মাইলেরও কম দূরত্বে অবস্থিত কিউবা; source: omniatlas.com

তবে অনেক বিশ্লেষকের মতে, ক্রুশ্চেভের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল বার্লিনকে সোভিয়েত অক্ষে নিয়ে আসা। পূর্ব জার্মানির মতো মার্কিন সমর্থিত পশ্চিম জার্মানিতেও কমিউনিস্ট সরকার গঠনের লক্ষ্যেই এই ক্ষেপণাস্ত্র কিউবায় স্থাপন করা প্রয়োজন ছিল। আর সবশেষ, আরো একটি গৌণ কারণ এর সাথে যুক্ত হতে পারে। সেটি হচ্ছে, ইতালি এবং তুরস্কে যুক্তরাষ্ট্রের স্থাপন করা মাঝারি পাল্লার জুপিটার ক্ষেপণাস্ত্র।

কিউবা-সোভিয়েত চুক্তি এবং দুর্যোগের লক্ষণ

সবদিক বিবেচনা করে কিউবার সাথে চুক্তির দিকে এগোলো রাশিয়া। ১৯৬২ সালে একদল কৃষি বিষয়ক প্রতিনিধির সাথে কিউবা ভ্রমণ করে কয়েকজন ছদ্মবেশী সোভিয়েত উর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তা এবং ক্ষেপণাস্ত্র প্রস্তুতকারী কয়েকজন প্রকৌশলী। তারা ফিদেল ক্যাস্ট্রোর সাথে এক গোপন বৈঠকে মিলিত হন। কিউবায় পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনের পরিকল্পনায় সহজেই সম্মতি জ্ঞাপন করেন ক্যাস্ট্রো, যেহেতু তিনিও আমেরিকার আসন্ন আক্রমণের আশংকা করছিলেন। মে মাসের মাঝে দুই দেশের গোপন সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। জুলাই মাসে শুরু হয় ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনের কাজ।

কিউবায় স্থাপন করার জন্য নেয়া হচ্ছে একটি সোভিয়েত ক্ষেপণাস্ত্র; source: dailytrend.mx

“কাকপক্ষীও টের পাবে না”– এরকম গোপনীয়তায় এগিয়ে চললো ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনের কাজ। ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনের ছদ্মবেশী বিশেষজ্ঞদের ‘যন্ত্রনির্মাতা’, ‘কৃষিবিদ’ তকমা দেয়া হয়। আর যেসব স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনের কাজ চলছিল, সে স্থানগুলো কঠোরভাবে ঘেরাও দিয়ে ‘সেঁচ বিষয়ক কাজ’ বলে চালানোর চেষ্টা করে সোভিয়েত এবং কিউবা প্রশাসন। সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে আগত সকল প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি এবং ক্ষেপণাস্ত্রের পরিবহন চলতো রাতের আঁধারে। আর লম্বা লম্বা ক্ষেপণাস্ত্রগুলোকেও কায়দা করে বড় বড় তালগাছ এবং নারিকেল গাছের সারির মাঝে স্থাপন করা হয় যেন সহজে চিহ্নিত করা না যায়। অন্যদিকে, কাজ শুরু হবার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই কিউবায় সোভিয়েত সৈন্যের সংখ্যা ৪৩ হাজারে গিয়ে দাঁড়ায়!

দ্রুত চলতে থাকে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের জন্য প্রয়োজনীয় স্থাপনা নির্মাণের কাজ। ৭ এবং ১৬ সেপ্টেম্বর কিউবা পৌঁছে, মাঝারি পাল্লার আর-১২ ক্ষেপণাস্ত্রের দুটি মজুদ। আর ততদিনে আমেরিকান গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও সন্দেহ করতে শুরু করেছে, কিছু একটা নিশ্চয়ই হচ্ছে কিউবায়! সিআইএ এবং ডিআইএ’র পৃথক পৃথক নজরদারিতে কিউবায় সোভিয়েত মিগ বিমান ও যুদ্ধজাহাজের উপস্থিতির কথা জানানো হয়। শুধু তা-ই নয়, কিউবা থেকে অনেক ক্যাস্ট্রো এবং কমিউনিজম পরিপন্থী কিউবানই যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসিত কিউবানদের সাথে যোগাযোগ রাখতো। তারাও মায়ামিতে কিউবান ও সোভিয়েত সৈন্যদের ‘রহস্যজনক’ কার্যকলাপের সংবাদ পাঠাতে থাকে।

আমেরিকার প্রবেশ এবং দুর্যোগের শুরু

কিউবায় সোভিয়েত ইউনিয়নের ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনের স্থানগুলো সনাক্ত করতে সক্ষম হয় যুক্তরাষ্ট্র; source: darkroom.baltimoresun.com

একসময় কিউবাতে সোভিয়েত ইউনিয়নের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচীর যথার্থ প্রমাণ পেয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্র। শুরু হয় দুই দেশের প্রেসিডেন্টের বাকযুদ্ধ। কথার লড়াইয়ে যোগ দিয়েছিলেন ফিদেল ক্যাস্ট্রো এবং চে গুয়েভারাও। কথার লড়াইয়ের মাঝে চলতে থাকে দুই দেশের পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপ, যা ক্রমেই পরিস্থিতি জটিল থেকে জটিলতর করে তোলে। যুক্তরাষ্ট্রের নৌ অবরোধ, সোভিয়েত মিসাইল লক্ষ্য করে ডেপথ চার্জ নিক্ষেপ, সোভিয়েতদের আকাশসীমা লঙ্ঘন আর ক্যাস্ট্রোর ‘আর্মাগেডন লেটার’, এ সবকিছুর মধ্য দিয়েও চলতে থাকে কূটনৈতিক দর কষাকষি

ত্রাণকর্তারূপে স্কালি-ফোমিন

১৯৬২ সালের ২৬ অক্টোবর। বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ যখন পারমাণবিক যুদ্ধের ভয়ে কাঁপছে, যখন যুদ্ধের ঘন কালো মেঘে ছেয়ে গেছে আকাশ, তখনও কিন্তু শান্তির সূর্যটা মেঘের আড়ালে জ্বলছে! শুধু মেঘটা কেটে যেতে প্রয়োজন ছিল একটা দমকা হাওয়ার। আর সে হাওয়া এলো এবিসি নিউজের সাংবাদিক জন স্কালি এবং আমেরিকায় বসবাসরত কেজিবি’র ছদ্মবেশী গোয়েন্দা আলেকজান্ডার ফোমিনের কাছে থেকে। সেদিন দুপুরের খাবার খেতে খেতে তারা যুদ্ধের ভয়াবহ পরিণতি নিয়ে আলোচনা করছিলেন। তখন ফোমিন স্কালিকে অনুরোধ করেন, তিনি (স্কালি) যেন তার প্রভাব খাটিয়ে উপর মহলের সাথে যোগাযোগ করেন এবং আমেরিকাকে কূটনৈতিক সমাধানের দিকে নেন। অন্যদিকে, ফোমিন নিশ্চয়তা দেন যে, সোভিয়েত ইউনিয়ন যুদ্ধে জড়াবে না যদি আমেরিকা অবরোধ তুলে নেয় এবং তুরস্ক থেকে ক্ষেপণাস্ত্র সরিয়ে নেয়।

জন স্কালি এবং আলেকজান্ডার ফোমিন; source: archive.is

কালবিলম্ব না করে স্কালি যোগাযোগ করলেন এক্সকমের সাথে। এক্সকমও ইতিবাচক মানসিকতা দেখিয়ে ব্রাজিলের সরকারের সাথে যোগাযোগ করে এবং ব্রাজিলকে অনুরোধ করে তাদের হয়ে ক্যাস্ট্রোর সাথে মধ্যস্থতা করার জন্য। মধ্যস্থতার ব্যাপারটা এরকম হবে যে, আমেরিকা কিউবা আক্রমণ করবে না বা অবরোধও রাখবে না, যদি কিউবা সোভিয়েত ক্ষেপণাস্ত্র ফিরিয়ে দেয়। তবে এহেন নাজুক পরিস্থিতির মধ্যে সবচেয়ে বড় ইতিবাচক কাজটি করেন সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট নিকিতা ক্রুশ্চেভ। তিনি ২৬ অক্টোবর রাতে কেনেডির কাছে একটি চিঠি পাঠান। দীর্ঘ সে চিঠির মূলকথা ছিল এই যে-

“আমরা আমাদের পক্ষ থেকে কিউবাগামী কোনো জাহাজে কোনোপ্রকার অস্ত্রশস্ত্র প্রেরণ করবো না। আপনারা ঘোষণা দেবেন যে, আপনারা কিউবা আক্রমণ করবেন না, কিংবা কিউবায় আক্রমণ করতে অন্য কাউকে প্ররোচিত করবেন না। তাহলে কিউবায় আমাদের সামরিক বাহিনী থাকারও কোনো প্রয়োজন থাকবে না। শুধুমাত্র তখনই এই আসন্ন যুদ্ধ এড়ানো সম্ভব।”

সংকটে নাটকীয় মোড়

এই চিঠির কয়েক ঘন্টা পরই ক্রুশ্চেভ পুনরায় কেনেডিকে চিঠি লেখেন। তবে এই চিঠিতে কিউবা থেকে ক্ষেপণাস্ত্র সরিয়ে ফেলার আগের শর্তগুলোর সাথে আরো একটি শর্ত জুড়ে দেন তিনি। আর সেটি হচ্ছে, ইতালি এবং তুরস্ক থেকে আমেরিকার ক্ষেপণাস্ত্র সরিয়ে নিতে হবে! কয়েক ঘন্টার মধ্যেই এই অবস্থান পরিবর্তনে, ক্রমাগত শান্ত হতে থাকা ঝড়ো বাতাস আবার উল্টো দিকে প্রবাহিত হতে শুরু করে! আর নাটকীয় এই অবস্থান পরিবর্তন, খেপিয়ে তোলে যুক্তরাষ্ট্রকেও। সুর নরম করেও আবার গর্জন?

সংকটের প্রথমদিকে ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচীর কথা অস্বীকার করে কেনেডিকে ক্রুশ্চেভের একটি চিঠি; source: enotes.com

এক্সকমের সদস্যরা মত দিলেন, ক্রুশ্চেভের এই দাবি কোনোভাবেই মানা যাবে না। কিউবা আক্রমণ করেই ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করা হবে! তবে কেনেডি মাথা ঠান্ডা রেখেই কাজ করতে চাইলেন। এক্সকম, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ম্যাকনামার এবং যৌথবাহিনীর প্রধানরা, সকলেই আক্রমণের মত দিলে কেনেডি বাধ সাধতে পারলেন না। তবে ক্রুশ্চেভের প্রথম চিঠির শর্ত অনুযায়ী একটি চিঠি পাঠিয়ে দিলেন এই আশায় যে, ক্রুশ্চেভ রাজি হয়ে যাবেন। এই চিঠিতে কেনেডি কেবল, ক্রুশ্চেভের প্রথম চিঠির শর্তগুলো পূরণের কথা উল্লেখ করেন।

কেনেডির সম্মতি

(বাঁয়ে) নিকিতা ক্রুশ্চেভ এবং (ডানে) জন এফ কেনেডি; source: pri.org

বলা বাহুল্য, এই চিঠির কোনো প্রত্যুত্তরের আশা মার্কিন প্রশাসন করেনি। তারা কেবল আনুষ্ঠানিকতা পূরণের লক্ষ্যে এই চিঠিটি প্রেরণ করেছিল। তাই এর সমানতালে চলতে থাকে বিমান হামলার পরিকল্পনা। ২৬-২৭ অক্টোবর রাশিয়ার আকাশে মার্কিন ইউ-২ বিমানের ঢুকে পড়া এবং মার্কিন বাহিনীর সোভিয়েত সাবমেরিন লক্ষ্য করে ডেপথ চার্জ নিক্ষেপ প্রবল উত্তেজনার সৃষ্টি করে। তবে উত্তেজনার মধ্যেই সাধারণের চোখের আড়ালে দর কষাকষি চলতে থাকে। ক্রুশ্চেভ এবং কেনেডি, উভয়েই অনুধাবন করতে পারছিলেন আসন্ন যুদ্ধের ভয়াবহতা। তাই গোপনে তারা শান্তি প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখেন। শেষতক, কেনেডি সোভিয়েত ইউনিয়নের দ্বিতীয় দফার শর্তেও রাজি হয়ে যান। তাছাড়া যুদ্ধ এড়ানোর আর কোনো উপায়ও ছিল না। অনেক জটিলতার পর যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে একটি গোপন চুক্তিতে রাজি হয়।

তুরস্কে আমেরিকার জুপিটার মিসাইল; source: launiusr.wordpress.com

চুক্তিতে সংকট অবসানের দ্রুততম সময়ের মধ্যে তুরস্ক এবং ইতালি থেকে ক্ষেপণাস্ত্র সরিয়ে নিতে রাজি হয় আমেরিকা। তবে এ ব্যাপারটি প্রাথমিকভাবে গোপন রাখার শর্ত দেয়া হয়। আর সোভিয়েত ইউনিয়ন কিউবা থেকে সরিয়ে নেবে নিজেদের ক্ষেপণাস্ত্র। পরদিন সকাল ৯টায় মস্কো রেডিওতে সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট নিকিতা ক্রুশ্চেভের ছোট্ট বক্তৃতা প্রচার করা হয়, যেখানে ক্রুশ্চেভ কিউবা থেকে নিজেদের মিসাইল সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত জানান। আর তুরস্ক থেকে আমেরিকার ক্ষেপণাস্ত্র সরিয়ে নেয়ার ব্যাপারটি গোপন চুক্তির অংশ হওয়ায়, এ ব্যাপারে কোনো কথা বলেননি তিনি। অন্যদিকে, কেনেডিও কিউবার উপর দেয়া নৌ অবরোধ তুলে নেয়ার ঘোষণা দেন। তবে সোভিয়েত ক্ষেপণাস্ত্র সরিয়ে নেয়া পর্যন্ত নৌ অবরোধ চলবে বলে উল্লেখ করেন। আর এরই সাথে পুরো বিশ্ব স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। পারমাণবিক যুদ্ধের ভয় তখন পুরোপুরি কেটে গেছে।

সংকটের অবসান

কিউবা ছাড়ছে ক্ষেপণাস্ত্র বোঝাই সোভিয়েত জাহাজ; source: allworldwars.com

নভেম্বর মাসের ২ তারিখ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট কেনেডি জাতির উদ্দেশে এক ভাষণে সোভিয়েত ইউনিয়নের ক্ষেপণাস্ত্র সরিয়ে নেয়ার ব্যাপারটি জানান এবং দ্রুতই অবরোধ শেষ করা হবে বলে আশ্বাস দেন। ৫ থেকে ৯ নভেম্বরের মধ্যে সব সোভিয়েত ক্ষেপণাস্ত্র জাহাজে নিয়ে কিউবা ত্যাগ করে সোভিয়েত সৈন্যরা। ১০ নভেম্বর নৌ অবরোধ তুলে নেয় যুক্তরাষ্ট্র। আর গোপন চুক্তি অনুসারে তুরস্ক আর ইতালি থেকে নিজেদের ক্ষেপণাস্ত্রও সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু করে তারা। ১৯৬৩ সালের এপ্রিলের মধ্যে তুরস্ক থেকে নিজেদের সব ক্ষেপণাস্ত্র সরিয়ে নেয় যুক্তরাষ্ট্র। ইতালি থেকেও দ্রুতই সরিয়ে নেয়া হয় সেগুলো।

এই গোপন সমঝোতা চুক্তির বাহ্যিক প্রভাব ছিল ক্রুশ্চেভ এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের জন্য অপমানজনক। কারণ বিশ্ব তখনও জানতো না যে যুক্তরাষ্ট্রও তুরস্ক থেকে তাদের ক্ষেপণাস্ত্র সরিয়ে নিচ্ছে। ফলে, অবস্থাদৃষ্টে বিশ্লেষকরা ক্রুশ্চেভকে পরাজিত আখ্যা দেন। বিশ্বজুড়ে গুঞ্জন ওঠে যে, দুই সুপারপাওয়ারের লড়াইয়ে বিজয়ী আমেরিকা! বিশ্বরাজনীতিতে হঠাৎ করে প্ররাক্রমশালী সোভিয়েত ইউনিয়নের নাম চলে যায় ‘হারু পার্টি’র তালিকায়! এর পরোক্ষ প্রভাবেই দেড় বছরের মাথায় ক্ষমতা হারাতে হয় ক্রুশ্চেভকে। অন্যদিকে, কিউবার সাথেও সম্পর্কের চিড় ধরে সোভিয়েত ইউনিয়নের। কেবল ক্রুশ্চেভ আর কেনেডি মিলে এই সিদ্ধান্ত নেয়ায় মনঃক্ষুণ্ণ হন ফিদেল ক্যাস্ট্রো। কেননা, যুক্তরাষ্ট্রের গুয়ানতানামো সামরিক ঘাটি নিয়ে কিছু বলেনি সোভিয়েত ইউনিয়ন। অথচ এই সামরিক ঘাঁটিও কিউবার জন্য হুমকিস্বরূপ ছিল।

source: zeedikay.deviantart.com

কিউবান ক্ষেপণাস্ত্র সংকটের ফলাফলই হচ্ছে ওয়াশিংটন এবং মস্কোর মাঝে হটলাইন স্থাপন, যেন ভবিষ্যতে এ ধরনের নাজুক পরিস্থিতিতে দুই দেশের প্রধানেরা সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন এবং সমস্যার সমাধান করতে পারেন। আর বিশ্বব্যাপী মার্কিন বাহিনীর সামরিক সতর্কতা ডেফকন-২ থেকে ডেফকন-৪’ এ নামিয়ে আনা হয়। এর মধ্য দিয়ে পুরোপুরি স্তিমিত হয় শ্বাসরুদ্ধকর কিউবান ক্ষেপণাস্ত্র সংকট। এই সংকটাবস্থা নিয়ে পরবর্তীতে বহু চলচ্চিত্র এবং ডকুমেন্টারি নির্মিত হয়েছে। আরো নির্মিত হয়েছে ‘কল অব ডিউটি: ব্লাক অপস’ এর মতো বিখ্যাত ভিডিও গেম। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তীকালে দীর্ঘ সময় ধরে চলা স্নায়ুযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে, কিউবার ক্ষেপণাস্ত্র সংকটই ছিল দুই বিশ্বশক্তির মধ্যে সবচেয়ে উত্তপ্ত অবস্থা। সৌভাগ্যক্রমে, উভয় দেশের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের কূটনৈতিক দক্ষতা বিশ্বকে পারমাণবিক যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।

ফিচার ছবি: youtube.com

Related Articles