ইতিহাস কাদের কথা মনে রাখে বলুন তো? জানি, অনেকেই উত্তর দেবেন, "বিজয়ীদের" কিংবা “বিখ্যাত মানুষদের”। উত্তরটা আংশিক সত্য। কেননা, ইতিহাস শুধু বিখ্যাত মানুষদেরই মনে রাখে না, সেই সাথে কুখ্যাত মানুষদেরও মনে রাখে। ইতিহাসের এরকমই একজন কুখ্যাত স্বৈরশাসক খেমাররুজ নেতা পল পট। খেমাররুজ বলতে কম্বোডিয়ার কমিউনিস্ট গেরিলাদের বোঝায়।
খেমাররুজদের সংগঠক এবং নেতা ছিলেন পল পট। তার নেতৃত্বে খেমাররুজরা ১৯৭৫-৭৯ সাল পর্যন্ত কম্বোডিয়ার শাসন ক্ষমতায় ছিল। তাদের শাসনামলের মাত্র চার বছরে তারা কম্বোডিয়ায় যে পরিমাণ গণহত্যা চালায়, তা পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে ঘৃণ্য এবং নৃশংসতম গণহত্যার একটি বলে পরিচিত। সেই কারণে খেমাররুজদের কুখ্যাত নেতা পল পটকে ইতিহাসের অন্যতম ভয়ঙ্কর, নৃশংস হত্যাকারী এক স্বৈরশাসক বললে খুব একটা বাড়িয়ে বলা হয় না।
রাজনীতিতে হাতেখড়ি
‘পল পট’ শব্দটির অর্থ ‘বড় ভাই’। কম্বোডিয়ার কমিউনিস্ট দলের নেতা পল পটের পারিবারিক নাম ছিল সালথ সার (Saloth Sar)। কিন্তু ১৯৭৫ সালে কম্বোডিয়ায় ক্ষমতায় খেমাররুজরা অধিষ্ঠিত হলে তাদের নেতা সালথ সার ‘পল পট’ নামেই পরিচিত হয়ে ওঠেন।
কম্বোডিয়ার কমিউনিস্ট দলের সংগঠক এবং দলনেতা পল পট ১৯২৫ সালে সেই দেশের এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ভাগ্যবান ছিলেন বলা যায়। কৃষক পরিবারে জন্ম হলেও কোন এক দূরসম্পর্কে রাজার পরিবারের সাথে তাদের পারিবারিক যোগসূত্র ছিল। সেই সূত্রেই ছেলেবেলায় কম্বোডিয়ার এক স্বনামধন্য স্কুলে পড়াশোনার সুযোগ পেয়েছিলেন পল পট।
স্কুলের পড়াশোনা শেষ করে কারিগরী বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রী নিতে প্যারিসে যান সালথ সার ওরফে পল পট। সেখানে ছাত্র থাকাকালেই রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয়। ফ্রান্সের কমিউনিস্ট পার্টির সাথে জড়িয়ে পড়েন তিনি। সেসময় রাজনীতিতে তিনি এতটাই আসক্ত হয়ে পড়েন যে, মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও পরীক্ষায় অকৃতকার্য হন। ফলস্বরুপ ফ্রান্সে পড়ালেখার পাট চুকিয়ে দেশে ফিরতে হয় তাকে অল্পদিনের মধ্যেই। ১৯৫৩ সালে পল পট দেশে ফিরে আসেন এবং কমিউনিস্টদের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতে শুরু করেন নিজ দেশ কম্বোডিয়ায়।
খেমাররুজদের উত্থান
ফ্রান্স থেকে ফিরে পল পট কম্বোডিয়ায় ফরাসি সাহিত্যের একজন শিক্ষকের ছদ্মবেশে কমিউনিস্টদের হয়ে কাজ শুরু করেন। তিনি গোপনে তার অনুগত ছাত্রদের বিপ্লবের মন্ত্রে দীক্ষিত করতে থাকেন এবং কম্বোডিয়ার বিদ্রোহী কমিউনিস্ট নেতাদের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ স্থাপন করেন। সেসময় কম্বোডিয়াতে আলাদা তিনটি প্রধান কমিউনিস্ট দলের অস্তিত্ব ছিল, যেগুলোকে একত্রিত করে একটি সমন্বিত কমিউনিস্ট দল গড়ে তোলেন পল পট। অন্য যেসব বামপন্থী দল ছিল সেগুলোকেও এ নতুন দলের সাথে সংযুক্ত করেন তিনি। তার গড়া এ ঐক্যবদ্ধ দলটিই ‘কম্যুনিস্ট পার্টি অফ ক্যাম্পুচিয়া ইন ক্যাম্বোডিয়া’ বা ‘খেমাররুজ’ নামে বিশ্বে পরিচিতি লাভ করে। ১৯৬৩-৮১ সাল পর্যন্ত এই খেমাররুজের জেনারেল সেক্রেটারির দায়িত্বে ছিলেন পল পট।
খেমাররুজদের শক্তিবৃদ্ধি
সংগঠিত হয়ে আত্মপ্রকাশ করার পরে পল পটের অস্ত্রহীন বিশাল খেমাররুজ বাহিনী রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে উগ্রভাবে প্রচার-প্রচারণা শুরু করে। তৎকালীন কম্বোডিয়ার রাজা নরোদম সিহানুক এতে বিরক্ত হয়ে বামপন্থী দলগুলোকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। সেসময় পালিয়ে গিয়ে পল পট যোগ দেন ভিয়েতনামের সীমান্তের কাছে এক গেরিলা ক্যাম্পে। সেখানে থাকতেই তিনি উত্তর ভিয়েতনাম সরকারের সাথে যোগাযোগ করেন এবং খেমাররুজদের শাসনের মূলমন্ত্র নির্ধারণ করেন।
বিপত্তি ঘটে ১৯৬০ সালের দিকে। এসময় কিছু কারণে মতের অমিল হওয়ায় পল পট ভিয়েতনামের সহযোগিতার প্রতি আস্থা হারাতে থাকেন এবং ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়ে তিনি এক নতুন রাজনীতিকে পরিণত হন। একসময়ের মিশুক এবং বন্ধুসুলভ সালথ সার হঠাৎ করেই মানুষজনের সাথে যোগাযোগ কমিয়ে ফেলেন। এ সময়ই একজন কমিউনিস্ট নেতা থেকে তিনি হয়ে উঠতে থাকেন একজন স্বৈরশাসক। নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি তার দলকে ঢেলে সাজান। শহুরে শ্রমজীবী মানুষদের নিয়ে গড়া, প্রচলিত মার্ক্সিস্ট সমাজতান্ত্রিক মতবাদকে প্রত্যাখ্যান করে পল পট গ্রামের গরীব কৃষকশ্রেণীকে নিয়ে ভিন্ন ধরনের এক সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের চিন্তা করেন। এই নতুন সমাজতান্ত্রিক ধারণাই কম্বোডিয়ার জনগণের জন্য উপযোগী বলে তার বিশ্বাস ছিল।
পল পটের এই নতুন খামখেয়ালী নীতি আর ধ্যান-ধারণার কারণে ভিয়েতনাম ও সোভিয়েত ইউনিয়ন তার এবং তার দলের প্রতি বিরাগভাজন হয়, সরিয়ে নেয় সহযোগিতার হাত।
ইতিহাস যদি কম্বোডিয়ার জনগণের প্রতি সহানুভূতিশীল হতো, তবে হয়তো পল পটের কাহিনী এখানেই শেষ হতে পারত। কিন্তু না, ভিয়েতনাম ও সোভিয়েত ইউনিয়ন তার নীতিতে সমর্থন না দিলেও দেশে-বিদেশে ঘটে যাওয়া অনেক ঘটনা খেমাররুজদের ক্ষমতা না কমিয়ে বরং বাড়িয়ে দেয়। পল পট তার শাসিত ছোট্ট কৃষিপ্রধান অঞ্চলের উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণারোপ করেন এবং ধীরে ধীরে নিজের দলের শক্তি বৃদ্ধি করতে থাকেন।
যে ঘটনাগুলো পল পটের খেমাররুজ দলের ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করেছিল তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-
১. ভিয়েতনাম যুদ্ধের (১৯৫৫-৭৫) সময় আমেরিকা ভিয়েতনাম আক্রমণ করে ফেরার সময় অতিরিক্ত বোমা কম্বোডিয়ার উপর ফেলে যেত সেখানে আত্মগোপনে থাকা ভিয়েতনামী গেরিলাদের ঘাঁটি ধ্বংস ও তাদের উড়োজাহাজের জ্বালানী সাশ্রয়ের উদ্দেশ্যে। ফলে কম্বোডিয়ার গ্রামাঞ্চলের কৃষকেরা বোমার আঘাত থেকে বাঁচার তাগিদে দলে দলে গ্রাম ছেড়ে শহরে আসতে শুরু করে সেসময়। অন্য কোনো উপায় না থাকায় শহরে এসে তারা ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবিকা নির্বাহ করতে থাকে এবং ক্রমেই কম্বোডিয়ার আইনসম্মত বামপন্থী দলগুলোর রাজনীতির প্রতি ঝুঁকতে থাকে।
২. তৎকালীন কম্বোডিয়ার রাজা নরোদম সিহানুক বামপন্থী দলগুলোর প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন না। তিনি কম্বোডিয়ান ডানপন্থী দলকে নির্বাচনে জয়ী করার জন্য বামদের ধরপাকড় শুরু করলে বামপন্থী অনেক নেতা পালিয়ে গিয়ে সালথ সারের খেমাররুজ দলে যোগ দেয়। ফলে খেমাররুজরা দলে ভারী হতে থাকে।
৩. সেসময়ে আবার অন্য এক ঘটনা কম্বোডিয়ার শাসনব্যবস্থায় পরিবর্তন আনে। রাজা সিহানুককে উচ্ছেদ করে সেনাবাহিনী দেশটির ক্ষমতা দখল করে। সেনাবাহিনী কম্বোডিয়ার ক্ষমতায় এসেই ভিন্নমতালম্বীদের দমন-পীড়ন শুরু করে। তারা মার্কিনীদের বোমাবর্ষণ বন্ধ করার বদলে তা আরও ত্বরান্বিত করে। সরকারের ভেতরের দুর্নীতি আর দুঃশাসন সীমা ছাড়িয়ে যেতে থাকে। ওদিকে পালিয়ে গিয়ে রাজা সিহানুক গোপনে ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের উদ্দেশ্যে খেমাররুজদের খেপিয়ে তুলতে থাকেন সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। রাজার মদদ পেয়েই পল পট আত্মগোপন থেকে বেরিয়ে আসেন। রাজা সিহানুকের সাথে মিলে তিনি কম্বোডিয়ার জনগণকে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে খেপিয়ে তোলেন এবং একটি সুখী ও সংঘবদ্ধ কম্বোডিয়া গড়ার ডাক দেন।
কম্বোডিয়ার ক্ষমতায় খেমাররুজ বাহিনী
১৯৭০ সালে খেমাররুজরা কম্বোডিয়ার সীমানা নিয়ন্ত্রণ করার মতো যথেষ্ট শক্তিশালী হয়ে ওঠে। উপরন্তু, ১৯৭৩ সালে সে অঞ্চলে আমেরিকার প্রভাব হ্রাস পেলে খেমাররুজরা প্রকাশ্যেই তাদের কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করে। কম্বোডিয়ার তৎকালীন সামরিক সরকার এত দুর্বল হয়ে পড়েছিল যে, তারা খেমাররুজদের প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হয়।
১৯৭৫ সালের ১৭ এপ্রিল পল পট খেমাররুজদের নিয়ে কম্বোডিয়ার রাজধানী নমপেন দখল করেন। শুরু হয় অস্থিতিশীল কম্বোডিয়ার ইতিহাসের আরও নৃশংস এক অধ্যায়।
পল পটের শাসনামলের ভয়াবহতা
পল পট যখন ক্ষমতা দখল করেন, তখন দেশের মধ্যে চলা যুদ্ধ আর বিশৃঙ্খলায় ধুকছিল লক্ষ লক্ষ মানুষ। দেশের অর্থনীতি ও কৃষিব্যবস্থা ভেঙে পড়েছিল, দেখা দিয়েছিল দুর্ভিক্ষ। যোগাযোগ ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল, প্রতিটি অঞ্চল অরাজকতায় পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছিল।
কম্বোডিয়ার সেই ভয়ঙ্কর অবস্থা আরও বেশি ভয়াবহ হয়ে উঠেছিল পল পটের শাসনামলে। তিনি ক্ষমতায় এসেই দেশ থেকে সব বিদেশিদের তাড়ানোর নির্দেশ দেন, নির্দেশ দেন শহর ফাঁকা করার। ডাক্তার, উকিল, সাংবাদিক, এবং অন্যান্য বুদ্ধিজীবীদের গুলি করে মারা হয়। যারাই খেমাররুজদের শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে দ্বিমত পোষণ করেছে, তাদেরই নৃশংসভাবে হত্যা করেছে পল পটের বাহিনী। পল পট তার নেতৃত্বে নতুন এক দেশ ‘ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কম্পুচিয়া’ সৃষ্টি করেন, যেখানে আধুনিক সমাজের সব উপাদান বর্জন করে তিনি এক বর্বর শাসনের সূচনা করেন। তিনি তার দেশে “ইয়ার জিরো” বা ”শূন্য বছর” ঘোষণা করেন। তিনি ঘোষণা করেন, তার দেশ শূন্য বছর থেকে আবার যাত্রা শুরু করবে।
কম্বোডিয়াকে পল পট কৃষিনির্ভর ‘ইউটোপিয়া’ রাষ্ট্রে রুপান্তরের মিশনে নামেন। তার শাসনামলে শহরের সকল অ্যাপার্টমেন্ট ফাঁকা করে ফেলা হয়, গাড়িগুলো দুমড়ে-মুচড়ে ফেলা হয় এবং লক্ষ লক্ষ মানুষকে শহর ছেড়ে গ্রামে যেতে বাধ্য করা হয়। গ্রামে গিয়ে সকলকে যৌথ কৃষি খামারে অমানুষিক পরিশ্রম করতে বাধ্য করা হয়। ১২-১৪ ঘন্টা কৃষিখামারে কাজ বাধ্যতামূলক করা হয়। পল পটের গঠিত বাহিনী ‘আঙ্কা’র দেশ শাসনের প্রধান ভাবাদর্শ ছিল একটি কৃষিভিত্তিক সমাজ গঠন। এ লক্ষ্যেই খেমাররুজরা এভাবে দেশ পরিচালনা করতে শুরু করে।
খেমাররুজদের দলীয় ভাবাদর্শ অনুসারে, সকল বিদেশী প্রভাবই খারাপ। তাদের মতে, সকল আধুনিক অনুষঙ্গই জাতিকে দুর্বল করে দেয়। তারা বিশ্বাস করত, কম্পুচিয়ার মুক্তির একমাত্র পথ, নিজস্বতা ও অমানুষিক পরিশ্রম।
পলপটের দল আঙ্কা, তাদের সকল নীতিই বন্দুকের মুখে জোর করে বাস্তবায়ন করত। আঙ্কার সদস্যরা ছোট ছোট অপরাধে বা শুধুমাত্র ভিন্ন মতাবলম্বী হবার কারণেও মানুষকে অমানুষিক নির্যাতন করে হত্যা করত। এ দলের ১২-১৪ বছর বয়সী কালো পোশাক পরিহিত যোদ্ধাদের দ্বারাই বেশিরভাগ হত্যা সংঘটিত হতো। তারা মানুষদের মুখে নীল প্লাস্টিকের ব্যাগ গুজে দম আটকে, অথবা মাটি খোড়ার বেলচা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করত। গোলা-বারুদের সরবরাহ কম ছিল বলে তাদের হত্যাযজ্ঞের প্রধান পন্থা ছিল পানিতে ডুবিয়ে বা কুপিয়ে হত্যা।
পল পটের শাসনামলে পুরো কম্বোডিয়াতে সৃষ্টি হয়েছিল অসংখ্য গণকবর ও বদ্ধভূমি। সে দেশে এখন পর্যন্ত সেসময়ের ২০,০০০ গণকবরের সন্ধান মিলেছে। বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা যায়, খেমাররুজদের শাসনামলে মৃতের সংখ্যা ছিল আনুমানিক ১৭ লক্ষ থেকে ২২ লক্ষ, যার প্রায় অর্ধেকই খেমাররুজ সেনাদের হাতে নৃশংসভাবে খুন হয়েছিল। অবশ্য সংস্থাভেদে মৃতের সংখ্যা নিয়ে ভিন্নমত আছে।
খেমাররুজদের পতন
পল পট তার দেশের মানুষদের মধ্যে ভিয়েতনাম বিরোধী মানসিকতাকে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতার শক্ত ভিত গড়েছিলেন। কম্বোডিয়ার সকল দুর্ভোগের জন্য তিনি ভিয়েতনামের বিশ্বাসঘাতকতাকে দায়ী করতেন।
১৯৭৫ সালের দিকে ভিয়েতনাম আমেরিকান সেনাবাহিনীকে পিছু হঠতে বাধ্য করে এবং একটি শক্তিশালী সেনাবাহিনী গড়ে তুলতে সমর্থ হয়। আমেরিকাকে বিদায় করার পরে ভিয়েতনাম ১৯৭৯ সালের দিকে কম্বোডিয়া আক্রমণ করে। ভিয়েতনামী বাহিনী সেসময় খেমাররুজদের ক্ষমতা থেকে সরিয়ে জঙ্গলের ক্যাম্পে আত্মগোপনে যেতে বাধ্য করে। পল পট পালিয়ে যান এবং আত্মগোপন করেন। হাজার হাজার ক্ষুধার্ত মানুষ কম্বোডিয়া থেকে পালিয়ে থাইল্যান্ডের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়। এরই সাথে খেমাররুজদের ভয়াবহ শাসনামলের সমাপ্তি হয়।
ভিয়েতনামী সেনাবাহিনীর আক্রমণে যদিও খেমাররুজদের মূল বাহিনী গুড়িয়ে যায় ১৯৮০ সালের দিকেই, তবু তারা কিন্তু নিশ্চিহ্ন হয়নি। এরপরও ১৫ বছর ধরে কম্বোডিয়ার পশ্চিমাঞ্চলের দুর্গম বনে খেমাররুজদের অবশিষ্টাংশকে পুনর্গঠিত করে নেতৃত্ব দেন তাদের নেতা পল পট।
পল পটের পরিসমাপ্তি
নব্বইযের দশকের মাঝামাঝি সময়ে কম্বোডিয়ার নবগঠিত সরকার খেমাররুজদের নিশ্চিহ্ন করতে সর্বশক্তি নিয়োগ করে। ধীরে ধীরে খেমাররুজদের সংখ্যা আরও কমতে থাকে এবং পল পটের কাছের বন্ধুদের অনেকেই মারা যায় অথবা আত্মসমর্পণ করে। ১৯৯৬ সালে পল পট খেমাররুজদের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন এবং নিজের সৈন্যদের দ্বারাই অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। কম্বোডিয়ার আদালত তার অনুপস্থিতিতেই তার মৃত্যুদন্ডাদেশ দেয়। খেমাররুজরাও তার লোকদেখানো বিচার করে এবং তাকে যাবজ্জীবন গৃহবন্দীত্বের সাজা প্রদান করে।
১৯৯৮ সালে খেমাররুজরা পল পটকে কম্বোডিয়ান সরকারের কাছে হস্তান্তর করতে সম্মত হয়। সম্ভবত এ কারণেই ৭২ বছর বয়সী খেমাররুজদের পরাজিত, বন্দী নেতা পল পট আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। মৃত্যুর পর কম্বোডিয়ার সরকার তার মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করতে চাইলে খেমাররুজরা তাতে বাধা দেয়। তারা পল পটের মৃতদেহ পুড়িয়ে সে ছাই ছড়িয়ে দেয় উত্তর কম্বোডিয়ার বনাঞ্চলে, যেখানে প্রায় ২০ বছর ধরে পল পট তার বাহিনীকে টিকিয়ে রেখেছিলেন। তার মৃত্যুর মধ্য দিয়েই শেষ হয় কুখ্যাত এক স্বৈরশাসকের জীবনের আখ্যান।
This Bangla article is about the Cambodian dictator Pol Pot who ruled Cambodia from 1975-1979. To learn more, please visit the hyperlinks inside the article.