Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

গুপ্তচর কিম ফিলবি: একজন ডাবল এজেন্টের রোমাঞ্চকর জীবন কাহিনী

কিম ফিলবি শীতল যুদ্ধের সময়কার একজন রহস্যময় গুপ্তচর। তার গুপ্তচর জীবনের কাহিনী গল্প-উপন্যাসে পড়া গোয়েন্দা চরিত্রকেও হার মানায়। তার গোপন জীবনধারা ও কর্মপরিধির যেটুকু জানা যায়, তাতেই তাকে ‘সর্বকালের সেরা গুপ্তচর’ হিসেবে অনেকে অভিহিত করে থাকেন। কিম ফিলবির জন্ম ১ জানুয়ারি, ১৯১২ সালে ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের আম্বালা গ্রামে। তার আসল নাম হ্যারল্ড অ্যাড্রিয়ান রাসেল ফিলবি। তারা বাবা জন ফিলবি ব্রিটিশ উপনিবেশকালে ভারতের সিভিল সার্ভিসে কর্মরত ছিলেন। ছোটবেলা থেকে কিম ফিলবি ছিলেন ভীষণ ডানপিটে। রোমাঞ্চকর নানা কাজে সবসময় নিজেকে ব্যস্ত রাখতে পছন্দ করতেন।

ছোটবেলা থেকেই গোয়েন্দা গল্প তাকে খুব আকর্ষণ করতো। দেশবিদেশের বিখ্যাত সব সাহিত্যিকদের গোয়েন্দা গল্পের গোয়েন্দা চরিত্রগুলোকে বড় আপন মনে হতো তার। রুডইয়ার্ড কিপলিং এর লেখা গোয়েন্দা কাহিনীর নায়ক ‘কিম’ ছিলেন সে সময়ের তার স্বপ্নের নায়ক। কিম এর মতো গুপ্তচর হওয়াই যেন তার জীবনের ধ্যানজ্ঞান। আর তাই পরবর্তীতে কিম নামটি নিয়ে তিনি তার স্বপ্নের নায়কের সাথে একাত্ম হয়ে গিয়েছিলেন। নিজের নতুন পরিচয় দেন কিম ফিলবি।

কিম ফিলবির শৈশবের ছবি; Image Source: my jacob family

কিম ফিলবির বাবা চাকরি থেকে অবসর নিয়ে ভারত থেকে চলে আসেন আরবে। কিমও বাবার সাথে আরবের রুক্ষ মরুময় অঞ্চলগুলোতে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন। কিন্তু সেখানে তার খুব একটা ভাল লাগলো না। ফিরে এলেন ইংল্যান্ডে। ভর্তি হলেন সেখানকার ওয়েস্ট মিনিস্টার স্কুলে। সেখানকার স্কুলের পাঠ শেষ করে ১৯২৮ সালে বৃত্তি পেয়ে ভর্তি হলেন ক্যামব্রিজের ট্রিনিটি কলেজে। বিষয় নিলেন ইতিহাস ও অর্থনীতি। ১৯৩৩ সালে স্নাতক পাশ করলেন।

তিরিশের দশকের সেই সময়টায় সারা বিশ্ব জুড়ে টালমাটাল অবস্থা। সারা পৃথিবীতে অস্থিরতা আর অনিশ্চয়তার পরিবেশ। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়েও তার ঢেউ আছড়ে পড়ছে। এই সময় কিমের পছন্দের এক অর্থনীতি বিভাগের প্রফেসর মরিক ডব ইংল্যান্ডের কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। তার প্রভাবও কিমের ওপর পড়ে। ফলে কিম ক্রমশ ঝুঁকে পড়তে লাগলেন সমাজতান্ত্রিক শক্তির দিকে।

ক্যামব্রিজে থাকার সময় কিম ফিলবির সঙ্গে কয়েকজনের বন্ধুত্ব হয়েছিল। তাদের মধ্যে অ্যালেন বারজেস, ডোনাল্ড ম্যাকলিন ও অ্যান্টনি ব্লান্ট ছিলেন উল্লেখযোগ্য। চারজনের মানসিকতা, স্বপ্ন, লক্ষ্য সবই ছিল এক। কমিউনিস্ট স্টাডি সেন্টার নামে এক রাশিয়ান গ্রন্থাগারে তাদের নিয়মিত আসা যাওয়া ছিল। সেখানে তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা মারতেন। 

ক্যামব্রিজে পড়ার সময়ে ঘনিষ্ঠ চার বন্ধুর সাথে কিম ফিলবি

এই স্টাডি সেন্টারটা নামেই ছিল গ্রন্থাগার। বরং এটা উঠতি বয়সী ছেলেয়েদেরকে মোটিভেট করার এক চমৎকার স্থান। এই সংস্থার অধিকর্তা স্যামুয়েল কাহান সর্বক্ষণ সেন্টারের চারপাশে ঘুরে বেড়াতেন, যদি কোনও বুদ্ধিদীপ্ত যুবক-যুবতীকে টোপ দিয়ে গুপ্তচর পেশায় আনা যায়। স্বাভাবিকভাবেই ওই চার বন্ধু কাহানের জালে পড়লেন, কারণ তাদের চোখে তখন গুপ্তচর হওয়ার রোমাঞ্চকর নেশা। 

২৩ বছর বয়সে সোভিয়েত ইউনিয়নের গোয়েন্দা বাহিনীতে কিম ফিলবিকে নিয়োগ দেয়া হয়; Image Source: bbc.co.uk

স্নাতক পাশ করে কিম পাড়ি জমান অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায়। তখন দেশটিতে গৃহযুদ্ধ চলছে। এক দিকে সোশ্যালিস্টরা আর অন্যদিকে ফ্যাসিস্টরা। ভিয়েনায় থাকাকালীন সময়ে কম্যুনিস্ট পার্টির একজন একনিষ্ট কর্মী  হিসেবে কিম কমিউনিস্ট রিফিউজিদের নানাভাবে সাহায্য সহযোগিতা করেছিলেন। এ সময় কিমের সাথে পরিচয় হয় অস্ট্রিয়ার কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য লিটজি ফ্রেইডম্যান এর সাথে। লিটজি তখন পালিয়ে আসা কমিউনিস্ট রিফিউজিদের নানাভাবে সাহায্য সহযোগিতা করছিলেন। নিজেও নানা বিপদের মধ্যে পড়তে পড়তে বেঁচে ফিরেছেন। এই সময় তার জীবনে ধুমকেতুর মতো আগমন ঘটলো কিম ফিলবির। ১৯৩৪ সালে কিম ফিলবিকে বিয়ে করেন লিটজি। তবে ভালবাসার চেয়েও লিটজির এই বিয়ে করার মূখ্য উদ্দেশ্য ছিল কিমের ব্রিটিশ পাসপোর্ট। ফলে কিমের সাথে লিটজির অস্ট্রিয়া থেকে ইংল্যান্ডে চলে আসতে খুব বেগ পেতে হয়নি।

তবে লিটজির সাথে কিমের বিয়ে দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। কারণ লিটজি সত্যিকার অর্থে ভালবাসতেন ভিয়েনা বংশদ্ভূত সাংবাদিক এডিথ টুডোর হার্টকে। এডিথ তখন ইংল্যান্ডে সাংবাদিক হিসেবে কাজ করছিলেন। সাংবাদিকের আড়ালে তার আরেকটি পরিচয় ছিল। তিনি তখন রাশিয়ার গুপ্তচর হিসেবে ইংল্যান্ডে কাজ করছিলেন। লিটজি এবং এডিথের উৎসাহেই কিম ফিলবি গুপ্তচরবৃত্তিতে রাশিয়ার হয়ে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ হন।  সোভিয়েত ইউনিয়নের গুপ্তচর সংস্থা কে জি বি-র একজন কর্মী হিসেবে যোগ দেন।

কিম ফিলবির প্রথম স্ত্রী লিটজি ফ্রেইডম্যান; Image Source: spartacus-educational.com

এবার ফিলবি সম্পূর্ণ নতুন রূপ ধারণ করলেন। নিজের সমাজতান্ত্রিক মতাদর্শকে মুছে ফেলার জন্য অ্যাংলো-জার্মান ফেলোশিপ গ্রহণ করলেন। প্রত্যক্ষ রাজনীতি থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে কাজ করতে শুরু করলেন লন্ডনের বহুল প্রচারিত সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘দ্য টাইমস’ এ। সাংবাদিক হিসেবেও তিনি আশ্চর্য কেরামতি দেখাতে লাগলেন। তখন শুরু হয়েছে স্পেনে গৃহযুদ্ধ। তার লেখার মধ্যে ফুটে উঠতে লাগলো জেনারেল ফ্রাঙ্কোর ফ্যাসিস্ট দলের প্রতি সমর্থন।

এটা ছিল তার গোয়েন্দা পরিচয় আড়ালে রাখার জন্য দারুণ এক চাল। সারা ব্রিটেনে কিম ফিলবি কমিউনিস্ট বিরোধী বলে পরিচিত হয়ে গেলেন। ব্রিটিশরা এই ধরনের লোকই চায়। তার সপ্রতিভ চেহারা, কমিউনিস্টদের প্রতি সোচ্চার বিষোদগার আর রাশিয়ান ভাষায় পারদর্শিতা দেখে ব্রিটেনের গুপ্তচর বিভাগ তাকে শিক্ষানবিশ হিসেবে নিয়োগ করলো।

এখানে ফিলবি গুপ্তচরবৃত্তির নানা পাঠ ও কলাকৌশল শিখতে লাগলেন। কৃতিত্বের সাথে সকল বিষয়ে উত্তীর্ণ হলেন। এই সময় ছোট ছোট অনেক অপারেশনে তিনি সফলতার পরিচয় দেন। ১৯৪১ সালে র‌্যাঙ্ক পেয়ে ব্রিটিশ সিক্রেট ইন্টেলিজেন্স সার্ভিসের বিখ্যাত এমআই-সিক্সে যোগ দেন। ব্রিটিশ গোয়েন্দা বিভাগে তার গুরুত্ব বাড়ার মধ্যে দিয়ে ডাবল এজেন্ট হিসেবেও কিম তার কাজ শুরু করে দেন। এভাবেই শুরু হলো ব্রিটেন, আমেরিকা প্রভৃতি ধনতান্ত্রিক দেশগুলোর প্রতি কিম ফিলবির বিশ্বাসঘাতকতা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি হিটলারের জার্মানির বিরুদ্ধে কার্যক্রমের সমন্বয় সাধন করার জন্য আমেরিকান ও সোভিয়েত গোয়েন্দা সংস্থার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছিলেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশ গোয়েন্দা বাহিনীর কর্মকর্তা হিসেবে কিম ফিলবি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন; Image Source: spartacus-educational.com

শীতল যুদ্ধের সময় ব্রিটেনের হাতে খবর আসতে থাকে ব্রিটিশ গুপ্তচর বিভাগে রাশিয়ার এজেন্ট হিসেবে কাজ করা অনেক গুপ্তচরের তথ্য। খবরটা পাঠিয়েছিলেন তুরস্কে রাশিয়ার কনসাল-জেনারেল কনস্টিন ভলকভ। ব্রিটেনে রাশিয়ার যত গুপ্তচর কাজ করেছেন, তাদের বিস্তারিত বিবরণ তিনি ইংল্যান্ডকে জানাতে রাজি ছিলেন। পরিবর্তে তিনি চেয়েছিলেন কমিউনিস্টদের হাত থেকে মুক্তি আর ব্রিটেনের রাজনৈতিক আশ্রয়। খবরটা পাওয়ার সাথে সাথে ফিলবি তা নিজের কাছে চেপে রেখে কে জি বি-কে জানিয়ে দিলেন। ভলকভ ঘণ্টায়-ঘণ্টায় খবর পাঠাতে লাগলেন তাকে ব্রিটেনে নিয়ে যাওয়ার জন্য। ফিলবি ‘যাচ্ছি’, ‘যাব’ করে গড়িমসি করতে লাগলেন। ইতোমধ্যে ভলকভ অপহৃত হলেন। তারপর থেকে ভলকভকে আর কোনোদিন খুঁজে পাওয়া যায়নি।

বৈরুতে থাকাকালে কিম ফিলবি; Image Source:  bbc.co.uk

এত কাণ্ডের পরেও ফিলবির ওপর কারও সন্দেহ হলো না। এর পরই তিনি আরেকটা কাণ্ড ঘটিয়ে ফেললেন সব সন্দেহ নিরসনের জন্য। তিনি তার স্ত্রী লিটজির সাথে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করলেন কমিউনিস্ট বলে। আর খবরটা ফলাও করে প্রচারিত হলো। সবচেয়ে মজার কথা, ব্রিটেন তাকে ‘ওবিডিয়েন্ট অব ব্রিটিশ এম্পায়ার’ উপাধিতে ভূষিত করলো। কিন্তু একজন রয়ে গেলেন ব্যতিক্রম। তার নাম জেমস অ্যাঙ্গলেটন। এই ধুরন্ধর অফিসারের চোখে ফিলবির আচার-আচরণ খুব ভাল লাগতো না। তার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় যেন বলছিল যে, কিম ফিলবি বিশ্বাসঘাতক।

জেমস অ্যাঙ্গলেটন, কিম ফিলবি ডাবল এজেন্ট ভূমিকাকে প্রথম সন্দেহ করেন সিআই-এর এই অফিসার; Image Source: The Intercept

১৯৪৬ সালে আলবেনিয়ায় ব্রিটিশ ও আমেরিকান গেরিলা কমিউনিস্ট শাসনের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান করবে বলে কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই অভ্যুত্থান ব্যর্থ হলো। কারণ এই অভ্যুত্থান হওয়ার রিপোর্ট কিম পূর্বেই কেজিবি-র প্রধান কার্যালয়ে পাঠিয়ে দেন। এই অভ্যুত্থান সফল করার জন্য গেরিলাদের সাহায্য করতে স্তেফান বানদেরা নামে একজন ব্রিটিশ গুপ্তচরকে পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু মিউনিখ থেকে আসার সময় কে জি বি-র গুপ্তচররা তাকে খুন করে।

এই ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে সর্বপ্রথম জেমসই বুঝতে পারলেন এর পিছনে নিশ্চয়ই কিম ফিলবি রয়েছে। কিন্তু ফিলবির চরও কম নেই। কথাটা তার কানে ঠিকই পৌঁছে গেল। তিনি বিন্দুমাত্র ভয় পেলেন না। তার কাজ করে চললেন। ১৯৫১ সালে কিম ওয়াশিংটন ডিসিতে এম আই সিক্সের লিয়েজন অফিসার হিসেবে যোগ দেন। ফলে কিমের মাধ্যমে মস্কো বিভিন্ন গোপন তথ্য সরবরাহ করার সুযোগ পায়। এই সময় কিমের কাছে খবর এলো দুই গুপ্তচর, যারা ছিল তার বাল্যবন্ধু এবং তার মতোই ডাবল এজেন্ট হিসেবে কাজ করতো, সেই  বার্জেস ও ম্যাকলিনকে গ্রেফতার করার পরিকল্পনা করছে ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা।

খবর পাওয়া মাত্রই ফিলবি তাদের কাছে খবর পাঠিয়ে রাশিয়া পালিয়ে যাওয়ার পথ তৈরি করে দেন। কিন্তু তিনি নিজে পালালেন না। অবধারিতভাবে তাকে ওয়াশিংটন থেকে লন্ডনে ডেকে পাঠানো হলো জেরা করার জন্য। ফিলবি গোবেচারার মতো মুখ করে হাজির হলেন গোয়েন্দা কার্যালয়ে। তিনি জানতেন যে, ব্রিটিশদের হাতে তার বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ কোনো প্রমাণ কিছু নেই। আরও একটা অস্ত্র ছিল তার হাতে তা হলো কথায় কথায় তোতলানো। সব সময়েই তিনি এইভাবে কথা বলতেন। তাই কোনটা তার দ্বিধাগ্রস্ত জবাব আর কোনটা না, তা ধরা যেতো না। তাই ফিলবির বিরুদ্ধে কিছুই প্রমাণ করা গেলো না। তবু তাকে ওয়াশিংটনের কাজ থেকে সরিয়ে সাংবাদিক গুপ্তচর হিসেবে বৈরুতে পাঠিয়ে দেওয়া হলো। 

সাহসী এবং যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় কিম ফিলবি ছিলেন এক অনন্য চরিত্র; Image Source: Pinterest

সদা সতর্ক ফিলবি এবারই একটা মারাত্মক ভুল করে বসলেন। তিনি ভেবেছিলেন, ব্রিটিশরা আর তাকে হয়তো ঘাঁটাবে না। কিন্তু তিনি আঁচ করতে পারেননি যে, নিকোলাস এলিয়ট নামে একজন গুপ্তচরকে তার পিছনে ফেউয়ের মতো লাগিয়ে রাখা হয়েছে। এলিয়ট কিছুদিনের  মধ্যে ফিলবির বিরুদ্ধে বেশ কিছু তথ্য জোগাড় করে পাঠিয়ে দিলেন ব্রিটেনে। 

১৯৬৩ সালে ফিলবি ও তার তৃতীয় স্ত্রী একটি হোটেলের ভোজসভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত ছিলেন। সেখানেই ফিলবিকে গ্রেফতার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ফিলবি বিষয়টি আঁচ করতে পারলেন। তখন তার গাড়ি হোটেলের প্রায় কাছাকাছি। মুহূর্তের মধ্যে তিনি পালানোর ছক কষে ফেললেন। হোটেলের গাড়িটাকে পার্ক করে স্ত্রীকে সিগারেট কিনতে যাচ্ছেন বলে সেই যে উধাও হলেন, তার আর খোঁজ পাওয়া গেল না। কিছুদিন পরে সারা বিশ্বের পত্রিকার পাতায় এক খবর বেরোল যে ফিলবিকে মস্কোতে রাশিয়ার সর্বোচ্চ সরকারি সম্মান ‘অর্ডার অব লেনিন’ উপাধিতে ভূষিত করা হবে। ব্রিটিশ এবং আমেরিকান গুপ্তচর মহল স্তম্ভিত হয়ে গেলো। লন্ডন থেকে মস্কো তিনি কীভাবে সকলের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে গেলেন, তা আজও রহস্যাবৃত।

বিভিন্ন সময়ে ইংল্যান্ড এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে পুরস্কৃত হওয়া কিম ফিলবি; Image Source: theguardian.com

১৯৬৮ সালে প্রকাশিত তার স্মৃতিকথা ‘My Silent War: The Soviet Master Spy’s Own Story’ তে কিম ফিলবি স্বীকার করেন যে, ১৯৩০ সাল থেকেই তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করতে শুরু করেন। কারণ তিনি বিশ্বাস করতেন যে, পশ্চিমা গণতান্ত্রিক শক্তিগুলো হিটলারকে থামাতে পারবে না। তাই সোভিয়েত ইউনিয়নসহ সমাজতান্ত্রিক শক্তিগুলোর প্রতি তার সম্পূর্ণ আনুগত্য ছিল পুরোপুরি। শীতলযুদ্ধের সময়ও তা ছিল অটুট।  

ব্রিটিশ ও আমেরিকানদের কাছে ফিলবি একজন বিশ্বাসঘাতক আর রাশিয়ানদের কাছে একজন আদর্শবান মানুষ। ১৯৮৮ সালে মস্কোতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তখন তার বয়স ছিল ৭৬। কেউ তাকে পাষণ্ড, হৃদয়হীন বলেন, আবার কেউ তাকে বাস্তব বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তি বলেন। বিভিন্ন জনের কাছে তিনি যেভাবেই পরিচিত পান না কেন, কিম ফিলবির গুপ্তচরবৃত্তি এবং তার ক্ষুরধার বুদ্ধিবৃত্তির কথা ইতিহাসে ঠিকই লেখা হয়ে থাকবে। 

 ফিচার ইমেজ- The Independent

Related Articles