Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

মরিচঝাঁপি গণহত্যা: যে অধ্যায় নীরবে ধিক্কার দেয় ভারতীয় উপমহাদেশের মানবতাবাদকে

“পুলিশের সীমাহীন নির্যাতন দ্বীপবাসীদের জীবনযাত্রা ছিন্নভিন্ন করে দেয়। একরাতে, কেউ এসে এখানকার নলকূপে এক বোতল বিষ ঢেলে দেন। পরদিন এই পানি খেয়ে মারা যান ১৩ জন জ্বলজ্যান্ত মানুষ। বাচ্চারা বিভিন্ন রোগের কারণে ইঁদুরের মতো মরছিলো, আর নারীরা পুলিশের হাতে ধর্ষিত হবার ভয়ে ঘর থেকে বের হবার সাহস পেতেন না। ওরা লঞ্চ দিয়ে আঘাত করে আমাদের অনেকগুলো নৌকা ভেঙে ফেলে, অনেকগুলোকে মাঝনদীতেই ডুবিয়ে দেয়”

দলিত শ্রেণির অধিকার নিয়ে, সমাজে তাদের মর্যাদা নিয়ে অনেক বুদ্ধিজীবীই আওয়াজ তোলেন। অনেকেই রাস্তায় মিছিল বের করেন, সভা-সেমিনার করেন। এসব মিছিল-মিটিং করতে গিয়ে তাদেরকে সহ্য করতে হয় শোষকের লেলিয়ে দেয়া বাহিনীর অবর্ণনীয় নির্যাতনের। মানবতার কথা বলতে গিয়ে এমন লাঞ্ছনার শিকার হওয়া বুদ্ধিজীবীরা কি কখনও মানবতার বিরুদ্ধে যেতে পারেন? যাদের হয়ে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করছেন, তাদেরকে মেরে ফেলার মতো কাজ করতে পারেন?

উপমহাদেশের ইতিহাসের একটি অধ্যায়কে এই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হলে উত্তর আসবে ‘হ্যাঁ’।

অধ্যায়টির নাম ‘মরিচঝাঁপি’। যে অধ্যায়টি সফলতার সাথে সমাপ্ত করা হয় ১৯৭৯ সালের ১৬ মে। যার শুরুটা ১৯৭৯ সালের ২৬ জানুয়ারি। ভারতের পবিত্র অখণ্ডতা ভঙ্গকারী, বিদেশী শক্তির দালাল হিসেবে উল্লেখ করে ‘নিচু’ শ্রেণির একদল মানুষকে উচ্ছেদ করার অভিযান চলে এ সময়টাতে। উচ্ছেদ অভিযান শেষ করে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন মানবতার পক্ষে কথা বলা বুদ্ধিজীবীরা। এর পেছনে রক্তারক্তি করান সম্পূর্ণ নিজস্ব উদ্যোগে সাজানো এক গ্রামকে, হত্যা করেন কারো ক্ষতি না করা নিরীহ মানুষদের।

মরিচঝাঁপি মূলত একটি দ্বীপের নাম। বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ পরগণা জেলার একটি দ্বীপ এটি। সুন্দরবনের উত্তরভাগে অবস্থিত ১২৫ বর্গমাইলের একটি দ্বীপ মরিচঝাঁপি। যেখানকার অধিকাংশ জায়গা ছিলো শ্বাপদসংকুল। মানুষের বসবাসের অযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হতো। তবে সেখানে মানুষের বসবাসের ব্যবস্থা করা দুরূহ কোনো কাজ ছিলো না। পরিষ্কার করে বসবাসের যোগ্য করার মতো এলাকা মরিচঝাঁপি। এটি সুন্দরবনের সুন্দরী, গড়ানের বনভূমি, যার এখানে-সেখানে নারকেল গাছ। এখানকার জমি জলকাদা আর শীর্ণকায় উদ্ভিদে ভরা।

প্রেক্ষাপট

ব্রিটিশরা যখন এই উপমহাদেশে ছিলেন, তখন থেকেই তারা এখানকার মানুষদের মনের ভেতর, চেতনায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বীজ বপন করেন। যার পরিণতি খুবই ভয়াবহ হয়। কাছের মানুষদের সাথে ভয়ানক লড়াইয়ের স্বাক্ষী হয় এখানকার মানুষজন। স্বাধীনতা পাওয়ার সময় ভাগ হয়ে যায় শান্তিকামী এই এলাকাটি। এর ফলে এপার বাংলা (বর্তমান বাংলাদেশ) থেকে বহু বাঙালি শরণার্থী হিন্দু পরিবার তাদের প্রিয় আবাস ছেড়ে পাড়ি দেন পশ্চিমবঙ্গে। তাদের মধ্যে যারা উঁচুশ্রেণির এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণির তারা সহজেই আশ্রয় পান কলকাতা এবং পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায়। তাদেরকে সাদরে গ্রহণ করা হয়।

‘মরিচঝাঁপি’ নিয়ে সিনেমা করবেন বৌদ্ধায়ন মুখার্জী; Image source: mahanager 24.7

কিন্তু বিপদে পড়ে যান নিচুশ্রেণির নমঃশূদ্র উদ্বাস্তুরা। ভদ্রলোক বাঙালি উদ্বাস্তুদের কলোনিতে তাদের ঠাঁই হয় না। পরবর্তী সময়ে ‘দণ্ডকারণ্য প্রজেক্ট’ গড়ে উঠলে এদেরকে পাঠানো হয় বাংলা থেকে বহুদূরে দণ্ডকারণ্য, মধ্যপ্রদেশ, উড়িষ্যার মালকানগিরি এবং ভারতের ১৬৪টি দুর্গম প্রান্তে। এরা মূলত হতদরিদ্র কৃষিজীবী, কেউবা মুচি, কেউ কাজ করতেন দিনমজুর হিসেবে। মূলত সমাজের নিচু পেশা হিসেবে অভিধা দেওয়া পেশার সাথে জড়িত ছিলেন তারা।  

দণ্ডকারণ্যের পাথুরে জমি, শুকনো মাটি এবং অসহ্য খরায় তপ্ত বনভূমি বাসের অযোগ্য হয়ে পড়ে। এছাড়াও তাদের অনেককেই এমন সব পাহাড়ি এলাকায় ফেলে আসা হতো, যেখানে ছিলো হিংস্র সব প্রাণীর আনাগোনা। সেখানে থাকতো না সুপেয় জলের ব্যবস্থা। মারা পড়েছেন সেখানকার অনেক বাসিন্দা। এসব মরদেহ ট্রাক দিয়ে নিয়ে ফেলে দেয়া হতো। এই অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে বিনোদ মজুমদার নামের একজন পরবর্তী সময়ে এক সাক্ষাৎকারে বলেন,

“১৯৬৪ এ যখন মানা ক্যাম্পে আসি, একটু জল ছিলো না। সকাল বেলা পানির কলের গোড়ায় কম করে হলেও ৫-৬ টা মার্ডার হয়েছে এক মগ জলের জন্য।” 

সেখান থেকে ১৯৬৪ সালে বেশ কিছু পরিবার কুমিরমারি নামক এলাকা পেরিয়ে প্রথম জনবসতি হিসেবে আশ্রয় নেন মরিচঝাঁপিতে।

এর অনেক আগ থেকেই দেশভাগের পর তাদের অধিকার নিয়ে বেশ জোরালো আওয়াজ তোলেন পশ্চিমবঙ্গের বামপন্থী দলগুলো। এই দলের বুদ্ধিজীবীরা তখন ব্যক্তিগত, সরকারি ও বেসরকারি জমি দখল করে এসব উদ্বাস্তু শরণার্থীদের জন্য বস্তি নির্মাণের পক্ষে আন্দোলন করছেন। মাওবাদী কমিউনিস্ট পার্টি সিপিএমের নেতা জ্যোতি বসুসহ (১৯১৪-২০১০) আরও অনেক নেতা সরকারের নিকট চিঠি দিচ্ছেন। এসব শরণার্থীদের পশ্চিমবঙ্গেই রাখার জন্য তাদের আকুতি। তারা জোর আবেদন জানান যে, সরকারের অভিপ্রায় থাকলে এটি সম্ভব।

সরকারের আশ্বাস পেয়ে ভরসা পান শরণার্থীরা; image source: youtube

১৯৭৪ সালের পর পশ্চিমবঙ্গ থেকে এসব নেতার অনেকেই হাজির হন শরণার্থীদের এসব ক্যাম্পে। তাদেরকে পশ্চিমবঙ্গে ফিরে যাওয়ার আহ্বান করেন। পশ্চিমবঙ্গের জনগণ তাদেরকে সাদরে গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছেন। উদ্বাস্তু নেতা সতীশ মণ্ডল এবং তার সঙ্গীদের বলা হয়, বামরা ক্ষমতায় এলে শরণার্থীদের সুন্দরবনের নিকট একটি সুন্দর জনপদে বসতি স্থাপনের ব্যবস্থা করে দেয়া হবে। অনেকে তখন মরিচঝাঁপির নাম প্রস্তাব করেন। এসব কথা শুনে বড় আশ্বাস পান অবহেলায় থাকা লোকজন।

“সরকার আপনাদের কোনো সহযোগিতা করবে না। আপনারা যদি নিজেদের উদ্যোগে সুন্দরবনে নিজেদের ব্যবস্থা করে নিতে পারেন, করুন। আমার পুলিশ আপনাদের বাধা দেবে না।”

১৯৭৭ সালে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় আসীন হন বামফ্রন্ট। সাথে সাথেই তাদের প্রতিশ্রুতির কথা মনে করিয়ে দেন সতীশ মণ্ডল। কিন্তু তার আবেদনের জবাবে আগের অবস্থান থেকে সরে আসেন জ্যোতি বসু। এই পদক্ষেপ সরকার নিতে পারবে না বলে জানান তিনি। তবে সাহায্য না করলেও বাধা না দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। সরকারের সাহায্য না পেয়ে হতাশ হয়ে যাননি এই শরণার্থীরা। বরং সরকারের আশ্বাসে তারা ১৯৭৮ মার্চে দলে দলে ৩০,০০০ উদ্বাস্তু আশ্রয় নিতে থাকেন মরিচঝাঁপিতে। এর আগে তাদের একটি দল সেখানকার মাটি এবং জল পরীক্ষা করে আসেন।

আদর্শ গ্রাম ‘মরিচঝাঁপি’

সদা পরিশ্রমী এই খেটে খাওয়া মানুষজনের নিজেদের চেষ্টায়, সরকারের সাহায্য ছাড়াই মরিচঝাঁপি হয়ে উঠতে থাকে আদর্শ এক বসতি। নির্মাণ করা হলো স্কুল, হাসপাতাল, দোকানপাট, পানীয় জলের জন্য টিউবওয়েল, মাছ চাষের অভিনব সব পদ্ধতি। মাছ চাষ করে নিজেদের খাদ্যের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি তারা বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ করারও চিন্তা করছিলেন। মাত্র পাঁচ-ছ’মাসের মধ্যে একটি বিস্তীর্ণ এলাকাকে আদর্শ এক জনবসতি হিসেবে গড়ে তোলা হয়। সরকারের তরফ থেকে সাহায্য না পেলেও বিভিন্ন সংস্থা কিংবা গানের জলসা থেকে সামান্য সাহায্য পেতেন তারা। আশা করেছিলেন, তাদের পরিশ্রমের ফলে গড়ে ওঠা এই জনপদটিকে সরকার স্বীকৃতি দেবে।

বিশ্বাসঘাতকতার চিত্র

কিন্তু পহেলা জুলাই, ১৯৭৮ সালে সিপিএমের রাজ্যসভার বৈঠকে তাদেরকে এই জায়গা ছেড়ে দিতে বলা হয়। তারা না ছাড়লে তাদের দেখাদেখি অন্যরাও সেখানে যেতে উৎসাহ পাবে বলে যুক্তি দেয়া হয়। বলা হয়, তাদের দখল করা মরিচঝাঁপি হচ্ছে সুন্দরবন রিজার্ভ ফরেস্টের অংশ। সেখানে তাদের অবস্থান বে-আইনী। কিন্তু মানচিত্র অনুযায়ী তা বে-আইনী ছিলো না। তাদের আশপাশের দ্বীপবাসীদের বলা হতে থাকে যে, মরিচঝাঁপির এসব শরণার্থী তাদের জীবনে বিপর্যয় বয়ে নিয়ে এসেছে। তাদের বিতাড়িত না করলে এই দ্বীপবাসীরা স্বচ্ছন্দে থাকতে পারবেন না।

হাওয়ায় ভাসতে থাকে বিভিন্ন ‘সংবাদ’। বলা হয়- মরিচঝাঁপিতে একটি আন্তর্জাতিক চক্রান্ত চলছে, সেখানে অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেয়া হয়, তারা সুন্দরবনের গাছ কেটে পরিবেশের ক্ষতি করছে। পত্রিকাগুলোকে বলা হয় সরকারকে সাহায্য করতে।   

মানবতাবাদীদের নিষ্ঠুরতা

কিছুতেই কাজ না হলে ১৯৭৯ সালের জানুয়ারির শেষের দিকে সরাসরি আক্রমণ করে এসব উদ্বাস্তুদের বিতাড়িত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ৩০টি লঞ্চ দিয়ে ঘিরে ফেলা হয় সৌন্দর্যমণ্ডিত এই দ্বীপটি। এসব লঞ্চে অবস্থান করেন সরকারের মোতায়েন করা পুলিশ। বন্ধ করে দেয়া হয় এই দ্বীপের সাথে বাইরের কোনো স্থানের যোগাযোগ। চালানো হয় কাঁদানি গ্যাস, উপড়ে ফেলা হয় দ্বীপবাসীদের বসানো সুপেয় পানির জলের উৎস নলকূপ। যেসব নৌকা দিয়ে দ্বীপবাসীরা বাইরে থেকে খাবার আনতে যান, সেগুলোকে লঞ্চের সাহায্যে মাঝনদীতেই ডুবিয়ে দেয়া হয় কিংবা ভেঙে ফেলা হয়। চলতে থাকে অর্থনৈতিক অবরোধ।  

এভাবেই লঞ্চ দিয়ে অবরোধ করা হয় দ্বীপবাসীদের; Image source: TUBOV.online 

৩১ জানুয়ারি, ১৯৭৯ উদ্বাস্তুদের উদ্দেশ্য করে প্রথম গুলি চালানো হয়। বাসিন্দাদের মতে, ৩৬ জন এই ঘটনায় মারা যান। তৎকালীন বিচারপতি এসব উদ্বাস্তুদের পক্ষে রায় দেন। এতে করে নির্যাতনের পরিমাণ কমলেও দ্বীপটিকে ঘিরে রেখে অচলাবস্থা চালু রাখে সেখানকার পুলিশ।

“ঘাস খেয়েছে মানুষে। শুনেছেন কোনোদিন জীবনে মানুষে ঘাস খায়? ঘাস খেয়েছে!”

কথাগুলো বলেছেন মরিচঝাঁপি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নির্মলেন্দু ঢালী। খাদ্য না পেয়ে ঘাস-লতা-পাতা খেতে থাকে সেখানকার মানুষজন। মানুষের বেঁচে থাকার অন্যতম উপাদান পানিও বন্ধ করে দেয়া হয়। অর্থনৈতিক অবরোধ, ক্ষুৎপিপাসায় ক্লান্ত মরিচঝাঁপির নমঃশূদ্র উদ্বাস্তুরা তাও ঘাস পাতা খেয়ে মাটি কামড়ে পড়ে থাকেন। বর্ষার পানি ধরে রেখে সেখানকার মানুষ সেই পানি দিয়ে তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় কাজ করতেন। কিন্তু তাদের সেই পানিতে রাতে এসে বিষাক্ত দ্রব্য মিশিয়ে দেয়া হয়। এতে করে সেখানকার পানি ব্যবহারকারীরা মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হন। খাদ্য আনতে যাওয়া হলে ২০-৪০ জন যুবককে গুলি করে মারা হয়। শুরু হয় হত্যাযজ্ঞ। বাংলার বিখ্যাত বুদ্ধিজীবী সমাজের কাছে অশিক্ষিত নমঃশূদ্রদের প্রতি চূড়ান্ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তখন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নয়। তারা চিন্তা করছেন, কীভাবে তাদের মদদপুষ্ট সরকার পরেরবার গদি টিকিয়ে রাখবে। গদি টেকাতে এই নমঃশূদ্রদের দরকার নেই। দরকার কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে সমঝোতা রাখা।

প্রায় পাঁচমাস অবরুদ্ধ করে রাখার পরেও যখন দ্বীপবাসী জীবন বিসর্জন দিয়েও টিকে আছেন, তখন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়- সরাসরি এই দ্বীপে আক্রমণ করে তাদের বিতাড়িত করা হবে। ১৩ই মে, ১৯৭৯ সালে শুরু হয় চূড়ান্ত আক্রমণ। জ্বালিয়ে দেয়া হয় বাসিন্দাদের কুঁড়েঘর। জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয় অনেককে। গ্রেফতার করা হয় সেখানকার যুবকদের। আর নারীরা শিকার হন গণধর্ষণের। যারা নৌকা নিয়ে পালাচ্ছিলেন, তাদের নৌকা ডুবিয়ে দিয়ে হত্যা করা হয়। কমপক্ষে ১০০-১৫০ জনকে মেরে ফেলে দেওয়া হয় নদীর জলে। তিনদিন ধরে তাণ্ডব চালানোর পর ১৬ই মে, ১৯৭৯ মরিচঝাঁপি উদ্বাস্তুশূন্য হয়।

সরকারি হিসেবে, সেখানে মোট নিহতের সংখ্যা মাত্র দু’জন। বিভিন্ন হিসেবে দেখা যায়, মৃতের সংখ্যা প্রায় দেড়শজন। কিন্তু তুষার ভট্টাচার্যের ডকুমেন্টারি ‘মরিচঝাঁপি ১৯৭৮-৭৯: টর্চার্ড হিউম্যানিটি’তে দেখানো হয়-

  • অনাহারে মৃত শিশুর সংখ্যা ৯৪ জন
  • বিনা চিকিৎসায় মৃত শিশুর সংখ্যা ১৭৭ জন
  • ধর্ষণের শিকার নারীর সংখ্যা ২৪ জন
  • মৃতের সংখ্যা ২৩৯ জন।

দণ্ডকারণ্য থেকে যারা এসে চমৎকার এক জনপদ তৈরি করেছিলেন, তাদের মধ্যে ১২ শতাংশ আর ফিরে যেতে পারেননি। এখানেই মরে গেছেন, পুড়ে গেছেন কিংবা আশেপাশের কোথাও আশ্রয় নিয়েছেন। নারীরা আশেপাশের এলাকার পতিতা হিসেবে কাজ শুরু করেছেন। ফিরে আসা অনেকে বসতি স্থাপন করেছেন অনিরাপদ রেললাইনের পাশের খুপরিতে। বাপ-দাদাদের মতোই আজও তাদের অনেকেই সমাজের চোখে নিচু পেশায় জড়িত।

আর তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা ভুলে গেছেন ইতিহাসের নীরব এক কালো অধ্যায়কে, যে অধ্যায়ের কারণে তারা হতে পারেন প্রশ্নবিদ্ধ। ক্ষমতায় গিয়েও মানবতাবাদীদের এহেন আচরণ মানুষের মননের বহুরূপিতা প্রমাণ করে। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য তখন মানবতাকে বলি দিতে হয়, যে মানবতাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে এসেছেন এতকাল!

This article is about Marichjhapi Massacre. Marichjhapi is a place near to the Sundarbans. 'Lower class' people who went to west bengle for shelter, started living their life. But the then government tortured them and took them away. 

Feature Image source: makingindiaonline.in

Reference: 

1. From the website, scroll.in 

article Title: 'We were attacked thrice': A survivor's story of the Left Front government's siege of Marichjhapi

2. Documentary title MARICHJHANPI 1978-79: Tortured Humanity 

Related Articles