Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

মিখিয়েল ডি রুইটার (পর্ব-১৫): দুর্যোগের বছর

[১৪ তম পর্ব পড়ুন]

ডাচ গুপ্তচররা নজর রাখছিল ব্রিটিশ বহরের গতিবিধির উপর। ১৩ মে, ১৬৭২ সালে তাদের থেকে এস্টেট জেনারেলরা জানতে পারলেন- টেমসের কাছে ব্রিটিশ জাহাজ সমবেত হয়েছে। ওদিকে ব্রেশট থেকে ফরাসিরাও আছে পথে। ডি রুইটার ছিলেন উত্তর ফোরল্যান্ডের কাছে, তৎক্ষণাৎ পাল তুলতে চাইলেও বাতাস আর ভারি কুয়াশা তাকে দেরি করিয়ে দেয়। এখানে থাকাকালে দলছুট এক ব্রিটিশ ফ্রিগেট তারা দখল করলেন।

ডি রুইটার অফিসারদের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্তে পৌঁছলেন যে ব্রিটিশরা সম্ভবত ডাউনসের উপকূলে আশ্রয় নিয়েছে, সেখানেই নিশ্চয় ফরাসিরা তাদের সাথে একত্রিত হবে। এস্টেট জেনারেলদের আদেশ স্মরণ করলেন তিনি, যৌথ বহর দেখলে খুব সতর্ক থাকার কথা বলা হয়েছে।

ডি রুইটার ফয়সালা করলেন- ব্রিটিশ আর ফরাসিদের একসাথে হবার সুযোগ দেয়া যাবে না। কিন্তু তিনি যখন যাত্রা করলেন, তখন তীব্র এক ঝড়ে তার পরিকল্পনা বানচাল হয়ে যায়। ওয়াইট দ্বীপের ধারে ঘেঁষে ঠিকই ব্রিটিশ আর ফরাসিরা মিলিত হলো। যৌথ বহরের ভার নিলেন চার্লসের ভাই জেমস, ডিউক অফ ইয়র্ক। মঙ্ক মারা গেছেন দুই বছর আগেই। ব্রিটিশরা তার মতো একজন দক্ষ কমান্ডারের অভাব অনুভব করছিল।

জেমস, ডিউক অফ ইয়র্ক; Image Source: rmg.co.uk

ঝড়ের মুখে ডি রুইটার বাধ্য হলেন আবার উত্তর ফোরল্যান্ড ধরে পিছিয়ে যেতে। গ্যালোপার এলাকার কাছে এসে তারা কয়েকটি ব্রিটিশ জাহাজ দেখতে পান। ভ্যান ঘেন্টকে পাঠানো হল সেগুলোর ব্যবস্থা করতে। তবে ব্রিটিশরা তার মতলব বুঝে চলে গেল শার্নেস দুর্গের অদূরে। সেখানে দুর্গের কামানের ছত্রছায়ায় ঘেন্ট কিছুই করতে পারলেন না।

এদিকে খবর এলো আরেকদল ব্রিটিশ ডানকার্ক বরাবর এগিয়ে যাচ্ছে। ডিউক অফ ইয়র্কের পরিকল্পনা ছিল ফরাসি জাহাজে থাকা সেনাদের নিয়ে নেদারল্যান্ডসে চলে যাওয়া, সেখানে সুবিধাজনক জায়গাতে তাদের নামিয়ে দেয়া যাবে, এরপর তারা স্থল দিয়ে আক্রমণ করতে থাকা অন্যান্য ফরাসি সেনাদলের সাথে যোগদান করবে। তিনি সাফোকের উপকূলে সাউথওল্ডের উপসাগরে (Southwold Bay) নোঙর করলেন, যা সল’বে (Sole bay) নামেই সমধিক পরিচিত। ডি রুইটার উত্তর ফোরল্যান্ড আর ডানকার্ক ঘুরতে ঘুরতেই এই খবর পেয়ে যান। লড়াইয়ের মানসে ছুটে এলেন তিনি।

জেমস, ডিউক অফ ইয়র্ক; Image Source: rmg.co.uk

ব্যাটল অব সল’বে

জুন ৭, ১৬৭২।

ভোর পাঁচটার সময় ডি রুইটার শত্রুদের দেখা পেলেন। তিনভাগে সজ্জিত ছিল তারা। ব্লু স্কোয়াড্রন ছিল আর্ল অফ স্যান্ডউইচের অধীন। তারা ভাসছিল উত্তরদিকে, গঠন করেছিল বহরের রিয়ার অংশ। রেড স্কোয়াড্রন স্বয়ং ডিউক অফ ইয়র্কের, তিনি মধ্যভাগে। দক্ষিণে ফরাসি হোয়াইট স্কোয়াড্রন, ভ্যান অংশ। ফরাসিদের নেতা ডি এস্ট্রে (d ’ Estrees)। সব মিলিয়ে ৬৫টি ফরাসি আর ৩৬টি ফরাসি রণতরী। সাথে ২২টি ফায়ারশিপ। 

ওয়েদার গেজ নিয়ে ডি রুইটার অতর্কিতে আক্রমণ চালালেন। সকাল ৭-৮টার সময় তীব্রবেগে ডাচদের ধেয়ে আসতে দেখে হকচকিয়ে গেল শত্রুরা। ডি রুইটার পরিচালনা করছিলেন ডাচ মধ্যভাগ, ঘেন্ট তার ডানে আর ব্যাঙ্কার্ট বামে। প্রত্যেক কম্যান্ডারের উপর নির্দেশ ছিল গোলাবর্ষণ শুরুর সাথে সাথেই দুটি করে ফায়ারশিপ পাঠিয়ে দিতে হবে শত্রুদের দিকে।

এত দ্রুত তারা আক্রমণ করে বসেন যে ব্রিটিশ আর ফরাসিরা ঠিকমতো সজ্জিত হবার সময়ও পায়নি। নোঙর তোলার সময় হাতে নেই, ফলে দ্রুত নোঙরের দড়ি কেটে জাহাজ নড়তে শুরু করল। ততক্ষণে ডাচরা প্রায় ঘাড়ের উপর এসে পড়েছে, ফলে সারিবদ্ধ হবার জন্য ফরাসি-ব্রিটিশ যৌথ বাহিনী পিছিয়ে যেতে চাইল। কোনো এক অজানা কারণে পিছিয়ে যাওয়ার জন্য যৌথ বহরের দুই পক্ষ দুদিকের রাস্তা বেছে নেয়।

ডাচ আক্রমণে দিশেহারা রয়্যাল নেভি; Image Source: artuk.org

ফরাসিরা সরে যায় খোলা সাগরের দিকে, আর ডিউক অব ইয়র্ক তীরের আরো কাছে যেতে থাকেন। লড়াইয়ের পরবর্তী অংশে ফরাসিরা ব্রিটিশদের সাথে অংশ নেয়নি, ফলে ডাচদের সঙ্গে মূলত ডিউক অফ ইয়র্কের লড়াই চলতে থাকে।

ব্যাঙ্কার্ট কয়েকটি জাহাজ নিয়ে ফরাসিদের দুটি জাহাজ ধরে ফেলেন। ডি রুইটার ওদিকে এগিয়ে যান ডিউক অফ ইয়র্কের জাহাজের দিকে। নেতাকে বিপদগ্রস্ত দেখে ইয়র্কের সহায়তায় এগিয়ে আসে ব্লু স্কোয়াড্রনের কিছু জাহাজ। বেলা নয়টায় ইয়র্কের জাহাজের প্রধান মাস্তুল ডি রুইটারের গোলায় ভেঙে পড়ল। বহরের সর্বাধিনায়ক দ্রুত অন্য একটি জাহাজ লন্ডনে গিয়ে ওঠেন। এই সময় রেড স্কোয়াড্রনের সাথেই মূল সংঘর্ষ চলছিল। 

এদিকে ডাচ অফিসার ব্র্যাকেল স্যান্ডউইচের জাহাজ রয়্যাল জেমস’কে আক্রমণ করে বসলেন। ৮০০ লোক আর ১০০ কামানের রয়্যাল জেমসকে ব্র্যাকেলের ৬০ কামান আর মাত্র ৩০০ লোক নিয়ে হামলা করাকে দুঃসাহস বলতেই হবে। ব্র্যাকেল তার লোকজন নিয়ে জাহাজে লাফিয়ে পড়েন, হাতাহাতি যুদ্ধ শুরু হয় রয়্যাল জেমসে’র একাংশে।

ওদিকে ভ্যান ঘেন্টও এগিয়ে এসেছিলেন সংঘর্ষে অংশ নিতে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে জেমসের গোলায় তিনি নিহত হন। জেমসের উদ্দেশ্যে পাঠানো তিনটি ফায়ারশিপও ডুবিয়ে দেয় ব্রিটিশরা। ওদিকে ব্র্যাকেলকেও তাড়িয়ে দেন স্যান্ডউইচ। কিন্তু এই ফাঁকে চতুর্থ ফায়ারশিপ জেমসের নাগাল পেয়ে গেল। আগুনের লকলকে শিখা গ্রাস করল স্যান্ডউইচের জাহাজকে। তিনি জাহাজের সাথেই ডুবে মারা যান, তার জাহাজের ক্যাপ্টেন আর স্যান্ডউইচের সহকারীকে তুলে নেন ডি রুইটার। 

দাউ দাউ করে জ্বলছে রয়্যাল জেমস; Image Source: artuk.org

এদিকে ঘেন্টের মৃত্যুতে তার দলে কিছুটা বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। ইত্যবসরে ব্লু স্কোয়াড্রন থেকে আরো জাহাক রেড স্কোয়াড্রনের সাহায্যে এগিয়ে আসে। ডাচ কমান্ডার ভ্যান নেস ব্রিটিশ রণতরী রয়্যাল ক্যাথেরিন দখল করে নিলেও অগ্রগামী একটি শত্রু ফায়ারশিপ এড়াতে গিয়ে ক্যাথেরিনকে ছেড়ে দিয়ে বাধ্য হন। ব্রিটিশরা ক্যাথেরিনকে রণক্ষেত্রের বাইরে নিয়ে গেল।

চারিদিকে ধোঁয়া আর জ্বলন্ত ফায়ারশিপের হুমকির মাঝেই চলতে থাকে তুমুল গোলাবর্ষণ। ডাচদের ৯-১০টি ফায়ারশিপ ইতোমধ্যে ডুবে গেছে, জশুয়া নামে একটি রণতরীরও হয়েছে সলিল সমাধি। স্ট্যাভেরেন নামে আরেকটি ডাচ জাহাজ ছিনিয়ে নিয়েছে শত্রুরা।

ডি রুইটার স্যার জন হারম্যানের সাথে গোলা বিনিময় করতে থাকলেন। তিনি প্রতিক্ষা করছিলেন ব্যাঙ্কার্টের জন্য। বিকেলের দিকে হারম্যানের পাঠানো একটি ফায়ারশিপ ফাঁকি দিলেন ডি রুইটার। এরই মধ্যে ভ্যান নেস এবং ঘেন্টের জাহাজগুলো সংগঠিত হয়ে তার সাথে যোগ দিল। এরপরেও ব্রিটিশরা ডাচদের উপর অবিশ্রান্তভাবে কামান দেগেই যাচ্ছিল। অবশেষে সন্ধ্যা নেমে আসতে থাকলে ডি রুইটার দক্ষিণ দিকে সরে যান। এই লড়াই ছিল তার জীবনের অন্যতম কঠিন অভিজ্ঞতা।

পরদিন ওয়েদার গেজ ছিল ব্রিটিশ আর ফরাসিদের পক্ষে। বিকাল চারটার দিকে সবাই যুদ্ধসাজে সজ্জিত হলেও হঠাৎ করেই ঘন কুয়াশায় ছেয়ে গেল চারদিক। সেদিন আর যুদ্ধ হলো না। পরদিন যৌথ বহর খুঁজে পেলেন না ডি রুইটার। তার রসদপত্র ও গোলাবারুদও ফুরিয়ে আসছিল, ফলে তিনি দেশে ফেরত গেলেন। সেখান থেকে ছোট্ট একটি দল পাঠানো হলো শত্রুদের উপর নজরদারি করতে। কর্নেলিস ডি উইট অসুস্থতার জন্য তীরে নেমে গেলেন। শনভেল্ডের (Schooneveld) উপকূলে অবস্থান নেয় ডাচদের মূল বহর।

কৌশলগতভাবে সলবে’র যুদ্ধ ছিল অমীমাংসিত। তবে ডি রুইটার নেদারল্যান্ডসের উপকূলে ডিউক অফ ইয়র্কের সেনা নামানোর পরিকল্পনা বানচাল করে দিয়েছিলেন। তিনি শত্রুর জলসীমায় তাদের যৌথ বহরের বিরুদ্ধে সমানে সমানে লড়াই করে নিরাপদে ফিরেও এসেছেন। এসব কারণে লাভের পাল্লা ডাচদের দিকেই হেলে ছিল।

র‍্যাম্পজার বা দুর্যোগের বছর ( Het Rampjaar/The Disaster Year)

১৬৭২ সাল ডাচ ইতিহাসে র‍্যাম্পজার বা দুর্যোগের বছর হিসেবে কুখ্যাত। যদিও সাগরে ডি রুইটারের অধীনে ডাচ ফ্লিট ব্রিটিশ আর ফরাসি বহরের সাথে পাল্লা দিচ্ছিল, তথাপি স্থলের যুদ্ধে একতরফাভাবে ডাচরা হেরেই যাচ্ছিল। নেদারল্যান্ডস দখল করার মানসে লুইয়ের সাথে চার্লস সেনা সমাবেশ করেছিলেন সেভেন প্রভিন্সেসের সীমান্তে, তাদের সাথে মিলেছে ক্যাথলিক বিশপ দ্বারা শাসিত কোলন আর মান্সটার শহর। বলা হয়, রোমান আমলের পর এত বড় সেনাবাহিনী ততদিন পর্যন্ত ডাচ সীমান্তে জড়ো হয়নি।

মে মাসের শুরুতেই ফরাসিদের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী ঢুকে পড়ল নেদারল্যান্ডসের সীমান্তে। লুইয়ের পরিকল্পনা ছিল ছোট ছোট শহরগুলো পাশ কাটিয়ে বড় শহরগুলো দখল করা। এক মাসের মধ্যেই অনেক শহর ফরাসিদের হাতে চলে যায়। নেদারল্যান্ডসের পূর্বে বিশাল এলাকায় লুইয়ের কর্তৃত্ব কায়েম হয়। সেভেন প্রভিন্সের মধ্যে তিনটি প্রভিন্স প্রায় বেদখল হয়ে গেল।

ডাচ ভূখণ্ডে প্রবেশ করে ফরাসি সেনাবাহিনী; Image Source: rampjaarherdenking.nl

১,২০,০০০ শত্রুসেনা টুরেন আর কন্ডের অধীনে উট্রেখট বরাবর যাত্রা করে। সেখানে ছিল মাত্র ৯,০০০ সৈনিকের প্রতিরক্ষা বাহিনী। ২৩ জুন ১৬৭২ সালে উট্রেখটও ফরাসি নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। আরেক গুরুত্বপূর্ণ শহর নার্ডেন’ও (Naarden) হুমকির মুখে পড়ে। ফরাসিরা এবার নাক ঘোরাল সোজা আমস্টারডাম বরাবর।

স্থলে অব্যাহত পরাজয়ে বিপর্যস্ত এস্টেট জেনারেল প্রধান ডি উইট লুইয়ের সাথে আলোচনায় বসেন। কিন্তু ফরাসি সম্রাটের শর্ত এত কঠিন আর অপমানজনক ছিল যে কোনোভাবেই তা মেনে নেয়া সম্ভব নয়। এদিকে অনেক সাধারণ ডাচ নাগরিক প্রতিরোধ গড়তে একত্রিত হলো।

শত্রুদের ঠেকাতে জুনের ২৪ তারিখ আমস্টারডামের চারদিকের সকল বাঁধ বা ডাইক খুলে দেয়া হয়। তাদের দেখাদেখি আরো শহর একই পথ অনুসরণ করে। তিন দিন ধরে ডাইক খোলা থাকায় পানিতে প্লাবিত হয়ে যাওয়া ভূখণ্ডে ফরাসি অগ্রযাত্রা ব্যাহত হয়। বলা হয়, প্রায় দুই বছর লেগেছিল এই পানি পুরোপুরি নেমে যেতে। 

ডাইক খুলে পানিতে ভাসিয়ে দেয়া হয় সবকিছু; Image Source: dutchdikes.net

স্থলবাহিনীকে শক্তিশালী করতে এরপর নৌবহর থেকে ২,০০০ লোক নিয়ে আসা হলো। শনভেল্ডের ডি রুইটারের হাতে রয়ে গেল ৪৭টি রণতরী, ১২টি ফ্রিগেট আর ৩০টির মতো ফায়ারশিপ। এস্টেট জেনারেলদের অনুরোধে এই নিয়েই ডি রুইটার বেরোলেন ডাচ উপকূল টহল দিতে।

জুলাই ৩, ১৬৭২।

গৌরবোজ্জ্বল ডাচ রিপাবলিকের ক্ষমতার পটপরিবর্তন হলো। ক্রমাগত পরাজয় এবং ফরাসিদের সাথে আলোচনার চেষ্টা করায় ডি উইটের ব্যাপারে মানুষের বিপুল অসন্তোষ জমে উঠেছিল। একে সফলভাবে কাজে লাগাল অরেঞ্জিস্টরা। যুবক তৃতীয় উইলিয়াম, প্রিন্স অফ অরেঞ্জ নির্বাচিত হলেন স্টাডহোল্ডার। প্রায় দুই দশক ধরে অরেঞ্জ পরিবারকে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখার যে চেষ্টা ডি উইট করে যাচ্ছিলেন, লুই আর চার্লসের কারণে তা মুহূর্তের মধ্যেই তার লাগাম থেকে বেরিয়ে গেল।

তৃতীয় উইলিয়াম, প্রিন্স অব অরেঞ্জ; Image Source: historic-uk.com

ডি উইটের উপর প্রতিশোধ নিতে শত্রুরা একজোট হয়, মিথ্যে অভিযোগে বন্দি করা হয় গ্র্যান্ড পেনশনারের ভাই, কর্নেলিসকে। নৌবহরের সাথে থাকাকালীন তার বিরুদ্ধে নানা অসদাচরণের অভিযোগ উঠল।

ডি উইটের অনুরোধে কর্নেলিসের নির্দোষিতা প্রত্যয়ন করে চিঠি লিখলেন ডি রুইটার, যদিও তিনি জানতেন এজন্য হয়তো ভবিষ্যতে প্রিন্স অব অরেঞ্জ বা তার ক্ষমতাবান সমর্থকদের রোষানলে পড়তে হতে পারে। এই ব্যাপারে পরবর্তীতে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেছিলেন, যত যা-ই হোক, সত্য বলতে তিনি কুণ্ঠিত নন।

তবে নিজের মূল কাজে মনোযোগ হারালেন না ডি রুইটার। রাজনৈতিক ডামাডোলের ভেতরে তাকে প্রথমে টেক্সেলে ফিরিয়ে আনা হয়। সেখান থেকে এমস নদী ধরে কয়েকটি জাহাজ টহল দিয়ে এল। এরপর আবার শনভেল্ডে ফিরে যাবার আদেশ আসে। 

ডি উইটদের পতন

ডি উইটের একটি ভুল ছিল- নৌবাহিনীর ব্যাপারে অতিরিক্ত মনোযোগ দিয়ে সেনাবাহিনীকে সংগঠিত না করা। অরেঞ্জিস্টদের সাথে সমঝোতা করতেও তিনি ব্যর্থ হন। ফলে ফরাসি আগ্রাসনে যখন নেদারল্যান্ডসের পতন সময়ের ব্যাপার মনে হচ্ছিল, তখন সাধারণ মানুষ অরেঞ্জিস্টদের কথাই বিশ্বাস করে ডি উইটের উপর তেতে ওঠে। নেতৃত্বে পরিবর্তনের ডাক দিয়ে তারা প্রিন্স অব অরেঞ্জের ক্ষমতা গ্রহণের দাবি তোলে। এর মাঝে ডি উইট একবার হত্যাচেষ্টা থেকেও ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান।

উইলিয়াম স্টাডহোল্ডার হবার পরে গ্র্যান্ড পেনশনারের পদ অনেকটাই ক্ষমতাহীন হয়ে পড়ে। রিপাবলিক চরিত্র অনেকটা হারিয়ে সীমিত আকারে রাজতন্ত্রের দিকে যাত্রা করে সেভেন প্রভিন্সেস। এদিকে ক্ষমতার পালাবদলকে পুঁজি করে ডি উইটের প্রতিপক্ষরা তার ভাই কর্নেলিসের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় চার্লসের সাথে যোগসাজশে দেশবিরোধী চক্রান্তের অভিযোগ আনে। প্রিন্স অব অরেঞ্জকে হত্যার ষড়যন্ত্রে তিনি জড়িত বলে দবি করে অরেঞ্জিস্টরা।

কর্নেলিসকে হেগের জেলখানায় অন্তরীন রাখা হয়। সেখানে স্বীকারোক্তি আদায়ে চালানো হয় অকথ্য নির্যাতন, যা তৎকালীন আইনে বৈধ। ডি রুইটারের চিঠিও এতে কোনো প্রভাব ফেলেনি। কর্ণেলিস যখন কোনোমতেই দোষ স্বীকার করলেন না, তখন তাকে নির্বাসনে পাঠানোর কথা জানিয়ে দেয়া হলো।

ইতোমধ্যে আগস্টের ৪ তারিখে পদত্যাগ করেন ডি উইট। ভাইকে নির্বাসনে যাবার প্রস্তুতিতে সাহায্য করতে ২০ আগস্ট জেলখানায় হাজির হন তিনি। সেখানে দুই ভাইয়ের উপর হামলা চালায় উত্তেজিত জনতা। জেলখানার সব রক্ষী হঠাৎ উধাও হয়ে গেলে জনতা দুই ভাইকে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যায় বাইরে, সেখানে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয় তাদের।

উত্তেজিত জনতার হাতে নির্মমভাবে নিহত হন ডি উইট ভ্রাতৃদ্বয়; Image Source: jhna.org

উন্মত্ত জনতা তাদের কাপড়চোপড়ও ছিড়ে ফেলে, এরপর নগ্ন মৃতদেহ দুটো উল্টো করে ঝুলিয়ে দিয়ে নৃশংসভাবে ছিন্নভিন্ন করল। বলা হয়, তাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নাকি কেউ কেউ নিয়ে গিয়ে রান্না করে খেয়েছিল!   

অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন, ডি উইট ভ্রাতৃদ্বয়ের হত্যাকারীরা ছিল উত্তেজিত জনতার বেশে অরেঞ্জিস্টদের অর্থ খাওয়া দুর্বৃত্ত। তাদের এই কাজই দেয়া হয়েছিল, না হলে জেলখানার রক্ষীরা একসাথে সবাই কীভাবে হাওয়া হয়ে গেল? তাছাড়া, উত্তেজিত জনতা যেভাবে পুরো কাজ সেরেছিল, তাতে অনেকেই সুশৃঙ্খল পরিকল্পনার ছাপ খুঁজে পান।

উইলিয়ামের দিকেও অনেকে আঙুল তোলেন এজন্য যে তিনি হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে শাস্তি দেয়ার কোনো গরজ দেখাননি। তবে নেদারল্যান্ডসকে বহু ঝঞ্ঝাবিক্ষুদ্ধ সময় পার করে আনা ডি উইটের এই সমাপ্তি কাম্য ছিল না। ইতিহাসে একজন তুখোড় রাজনীতিবিদ ও দক্ষ প্রশাসক হিসেবে তার নাম উজ্জ্বল হয়ে আছে। ডি উইট ভাইদের নৃশংস হত্যা ডাচ ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়।

This is a Bengali language article about the intrepid Dutch Admiral, Michiel De Ruyter. The article describes the De Ruyter’s lie and achievements. Necessary references are mentioned below.

References

  1. Douglas, P. Michiel De Ruyter, Held van Nederland. New Netherland Institute.
  2. Grinnell-Milne, G.(1896). Life of Lieut.-Admiral de Ruyter. London: K. Paul, Trench, Trübner & Company.
  3. Curtler, W. T. (1967). Iron vs. gold : a study of the three Anglo-Dutch wars, 1652-1674. Master's Theses. Paper 262.
  4. Michiel Adriaanszoon De Ruyter. Encyclopedia Britannica

Feature Image: aronson.com

Related Articles