Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

মুসলিম সাহিত্য সমাজ: মুক্তচিন্তার পথিকৃতেরা

১৯২৯ সালের ৮ ডিসেম্বর, সন্ধ্যাবেলা; ঢাকার নবাব বাড়িতে বিচারসভা বসেছে। অভিযুক্ত আবুল হুসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রাক্তন শিক্ষক। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ধর্মাবমাননার। আবুল হুসেনকে নিয়ে আসা হয়েছে হুমকির মুখে। বাইশা সমিতির গাড়োয়ানেরা তাঁকে হুমকি দেয় যে, আহসান মঞ্জিলে উপস্থিত না হলে তাঁর মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। গেলেও যে তিনি রেহাই পাবেন, সে সম্ভাবনাও ক্ষীণ। সুতরাং, সম্ভাব্য মৃত্যুর আশংকায় স্ত্রী-পরিজনদের থেকে চিরবিদায় নিয়েই তিনি সভায় উপস্থিত হয়েছেন।

সেকালে নবাব পরিবার ও মুসলিম আলেমদের প্রায় সকলেই ছিলেন উর্দুভাষী। সকলের সুবিধার্থে আবুল হুসেনের লেখা ‘আদেশের নিগ্রহ’ প্রবন্ধটি উর্দুতে অনুবাদ করে সভায় পড়ে শোনানো হল। উর্দুতেই আবুল হুসেনের সাথে চললো তাঁদের প্রশ্নোত্তর পর্ব। নবাব হাবিবুল্লাহ ঘোষণা দিলেন, “আপনি জীবনে আর কখনো কিছু লিখবেন না- এই শর্তে মুচলেকা লিখে দিন, তবেই আপনার দণ্ড শিথিল হতে পারে বা আপনাকে ক্ষমা করা যেতে পারে।” উত্তরে আবুল হুসেন বলেন, “আমি ধর্মীয় বিষয় নিয়ে কিছু লিখব না, কিন্ত অন্যান্য বিষয়ে লিখব- এই শর্তে আমাকে মুক্তি দেওয়া হোক।” শেষ পর্যন্ত তাঁরা ক্ষমাপত্র লিখে দেওয়ার পরিবর্তে আবুল হুসেনকে মুক্তি দিতে রাজি হন। ভোররাত সাড়ে চারটায় আনজুমান অফিসের দুজন সদস্যের পাহারায় তাঁকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়।

ইতিহাস বলে, প্রগতির পথে যাত্রা কখনোই সরল ছিল না। ধর্ম আদালতের চাপে একদিন গ্যালিলিওকেও স্বীকার করতে হয়েছিল, পৃথিবী স্থির। সেদিনও গ্যালিলিও বিড়বিড় করে বলেছিলেন, “তবুও পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘোরে।” আবুল হুসেনের আত্মসম্মানবোধ ছিল প্রখর। আহসান মঞ্জিলের ঘটনার পরদিন, অর্থাৎ ৯ ডিসেম্বরই তিনি মুসলিম সাহিত্য সমাজের সম্পাদকের পদ থেকে ইস্তফা দেন। সমাজের তীব্র প্রতিরোধের পরও যারা পিছপা হয় না, সেই গ্যালিলিও কিংবা আবুল হুসেনের মতো গুটিকয়েক মানুষের চিন্তাধারা আর কর্মই পরিবর্তনের সুফল নিয়ে আসে পুরো সমাজব্যবস্থায়। ‘বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন’ বাঙালি মুসলমানদের ইতিহাসের সেরকম একটি অধ্যায়। ‘মুসলিম সাহিত্য সমাজ’ এর সভ্যরা এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

বাঙালি মুসলিম সমাজকে স্বতন্ত্রভাবে চিন্তা করলে দেখা যাবে, মাত্র শতবর্ষ পূর্বেও এই সমাজ ছিল পশ্চাৎপদ আর জ্ঞানবিমুখ। ব্রিটিশ শাসনাধীন বাংলায় মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও, হিন্দুদের থেকে আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে পিছিয়ে ছিল কয়েকগুণ।

১৯২১ সালে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর পরই তা পরিণত হয়েছিল মুক্তবুদ্ধি চর্চার কেন্দ্র হিসেবে। ১৯২৬ সালের ১৯ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুসলিম হল (বর্তমান সলিমুল্লাহ মুসলিম হল) ছাত্র-সংসদের অফিস রুমে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘মুসলিম সাহিত্য সমাজ’। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এই বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন। কয়েকজন ছাত্র-শিক্ষক এবং জ্ঞানবোদ্ধার মিলিত প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত হয় মুসলিম সাহিত্য সমাজ। এর মুখপত্র ছিল শিখা পত্রিকা। আবুল হুসেন ছাড়াও শিখা গোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন কাজী আবদুল ওদুদ (১৮৯৪-১৯৭০), কাজী মোতাহার হোসেন (১৮৯৭- ১৯৮১), আবুল ফজল (১৯০৩-১৯৮৩), মোতাহের হোসেন চৌধুরী (১৯০৩-১৯৫৬), আবদুল কাদির (১৯০৬- ১৯৮৪), কাজী আনোয়ারুল কাদির (১৮৮৭-১৯৪৮) প্রমুখ। বাঙালি মুসলমানদের সার্বিক মুক্তির আশায় জ্ঞানচর্চার প্রসারই ছিল এই সমাজের মূল উদ্দেশ্য। জ্ঞান আর মুক্তবুদ্ধির চর্চার মধ্য দিয়ে সাহিত্য সমাজের হাত ধরে শুরু হয় প্রগতির পথে নতুন যাত্রা ‘বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন’।

আবুল হোসেন ছিলেন ওয়াকফ আইনের মূল খসড়ার রচয়িতাও। ১৯৩৮ সালে মাত্র ৪১ বছর বয়সে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন এই ক্ষণজন্মা মানুষটি; Image Source: anandabazar.com

মুসলিম সাহিত্য সমাজের সদস্যরা ছিলেন অসাম্প্রদায়িক এবং যুক্তিবাদী। তাঁরা নিজেদের সময়ের চাইতে এগিয়ে চিন্তা ও বিচার করতেন। শিল্পচর্চা, নারীশিক্ষা, অর্থনীতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে মুসলমানদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে উৎসাহিত করতেন।

“বাঙালি মুসলমানের শিক্ষা সমস্যা” প্রবন্ধে আবুল হুসেন লিখেছেন,

“কেন মুসলমানের এই দুর্গতি? এই প্রশ্নের উত্তর এককথায় দিতে গেলে বলতে হবে আমাদের শিক্ষা নাই- জ্ঞানের সঙ্গে বহুদূর ক্ষতি ও বিরোধ করে বসেছি এবং বিজ্ঞান ও আর্টকে আমাদের শিক্ষা কেন্দ্র হতে গলাধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছি- এই ভয়ে, পাছে তাতে আমাদের ধর্ম নষ্ট হয়। ধর্ম আমাদের এতই নাজুক!”

কাজী আবদুল ওদুদ ও আবুল হুসেন এই সংগঠনের অন্যতম চিন্তক ছিলেন। তাঁদেরকে যথাক্রমে সংগঠনটির মস্তক ও হস্ত বলা হত। কাজী মোতাহার হোসেনকে বলা হত সংগঠনটির হৃদয়।

কাজী মোতাহার হোসেনের “আনন্দ ও মুসলমান গৃহ” প্রবন্ধটি সেই সময় বহু আলোড়ন তোলে। তিনি লিখেছিলেন,

“মুসলমান গান গাইবে না, ছবি আঁকবে না, এককথায় মনোরঞ্জনকর ললিতকলার কোনো সংশ্রবেই থাকবে না। মুসলমান পুরুষেরা কেবল কাজ করবে, আর ঘর শাসন করবে; মেয়েরা কেবল রাঁধবে, বাড়বে, আর ব’সে ব’সে স্বামীর পা টিপে দিবে;- তা’ছাড়া খেলাধুলা, হাসি-তামাসা বা কোনও প্রকার আনন্দ তারা করবে না। সব সময় আদব-কায়দা নিয়ে দুরস্ত হয়ে থাকবে।

আনন্দ? কোথায় আনন্দ? কি হবে আনন্দে? মুসলমান তো বেঁচে থাকতে আনন্দ করে না, সে মরে গিয়ে বেহেশতে প্রবেশ করে পেট ভরে খাবে, আর হুরপরীদের নিয়ে অনন্তকাল ধরে আনন্দ করবে। ব্যস! এই তার সান্ত্বনা!

গৃহে যখন আমাদের থাকতেই হবে, তখন আমরা এর সংস্কারে লেগে যাই না কেন? সমাজকে যখন আমরা বাদ দিতে পারি না, তখন একে সরস শোভন এবং আনন্দময় করেই গড়ে তুলি না কেন?”

বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্বরা। বাঁ থেকে উপরে- কাজী মোতাহার হোসেন, কাজী আবদুল ওদুদ। নিচে- আবুল ফজল, কবি আবদুল কাদির এবং মোতাহের হোসেন চৌধুরী; Image Source: bn.banglapedia.org

‘মুসলিম সাহিত্য সমাজ’ এর সভ্যরা যে কেবল মুসলিম ছিলেন, তা নয়। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বিপিনচন্দ্র পাল, চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, রমেশচন্দ্র মজুমদার, মোহিতলাল মজুমদারসহ আরও বহু অমুসলিম মনীষী মুসলিম সাহিত্য সমাজের সভায় অংশ নিয়েছেন এবং ছিলেন শিখার লেখক তালিকায়।

ঢাকায় বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন কল্লোল যুগের সমসাময়িক। ১৯২৭ সাল থেকে টানা পাঁচ বছর সংগঠনটির বার্ষিক মুখপত্র ‘শিখা’ প্রকাশিত হয়। প্রথম বর্ষে এর সম্পাদক ছিলেন আবুল হুসেন, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষে কাজী মোতাহার হোসেন, চতুর্থ বর্ষে মোহাম্মদ আবদুর রশীদ এবং আবুল ফজল ছিলেন সর্বশেষ সংখ্যার সম্পাদক। আবুল ফজল তাঁর লেখায় উল্লেখ করেছেন, শিখায় সম্পাদক হিসেবে যাঁর নামই আসুক না কেন, সম্পাদনার মূল কাজটি আবুল হুসেনই করতেন।

শিখার শিরোদেশে লেখা থাকত বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের বিখ্যাত মটো – ‘জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব।‘ শিখা সম্পর্কে আবুল ফজল লিখেছেন-

“শিখার টাইটেল পৃষ্ঠায় একটি ক্ষুদ্র রেখা চিত্র ছিল, শুনেছি তা-ও এঁকেছিলেন আবুল হোসেন সাহেব। একটি খোলা কোরান শরিফ- মানব বুদ্ধির আলোর স্পর্শে কোরানের বাণী প্রদীপ্ত হয়ে উঠেছে, এই ছিল রেখাচিত্রটির মর্ম। কিন্তু এর একটা কদর্থ বের করতে বিরুদ্ধবাদীদের বেগ পেতে হয়নি। তাঁরা এর অর্থ রটালেন মুসলিম সাহিত্য সমাজের সমর্থকরা কোরানকে পুড়িয়ে ফেলে শুধু মানব বুদ্ধিকেই দাঁড় করাতে চাচ্ছে। বলাই বাহুল্য, গোড়া থেকেই গোঁড়ারা মুসলিম সাহিত্য সমাজের বিরোধী ছিল।”

শিখার পঞ্চম বর্ষের সংখ্যায় মুসলিম সাহিত্য সমাজের জন্য চৌদ্দ পয়েন্টের নিয়মাবলি ছাপা হয়েছিল। সেখানে ‘মুসলিম সাহিত্য সমাজের’ উদ্দেশ্য লেখা ছিল সত্যপ্রীতি ও সাহিত্যচর্চা। এছাড়া বছরে ছয়বার সাধারণ সভা ও একটি বার্ষিক সভা আয়োজনের কথা বলা হয়। শিখায় প্রধানত সাহিত্য সমাজের সভায় পঠিত প্রবন্ধগুলো প্রকাশিত হত।

বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা নারী স্বাধীনতার বিষয়েও ছিলেন সচেতন। সেই ১৯২৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গঠিত হয় ‘এন্টি পর্দা লিগ’ বা ‘পর্দা বিরোধী সংসদ’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মুসলিম ছাত্রী ফজিলাতুন্নেসা জোহা শাড়ি পরে আসতেন ক্লাস করতে।তখন ১৯২৭-২৮ সাল। তাঁকে প্রায়ই ইট-পাটকেলের আঘাতে হেনস্তার শিকার হতে হত। ফজিলা যখন গণিতে এমএ ডিগ্রী পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হন, তখন ‘এন্টি পর্দা লিগ’ এর আয়োজনে শিখা গোষ্ঠীর সদস্যরা তাঁকে সংবর্ধনা দেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মুসলমান ছাত্রী ফজিলাতুন্নেসা জোহা। তিনি প্রথম বাঙালি মুসলমান ছাত্রী হিসেবে উচ্চশিক্ষার্থে স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশে যান; Image Source: bangla.jagoroniya.com

সমাজের রক্ষণশীল শক্তি মুসলিম সাহিত্য সমাজকে বিরোধী শক্তি হিসেবে দেখেছিল। ইসলাম গেল, মুসলিম সমাজ ডুবলো- চারদিক থেকে এরকম প্রতিক্রিয়া আসতে লাগলো। রক্ষণশীল সমাজের কাছে নিগৃহীত হয়েছিলেন কাজী নজরুল ইসলামও। মুসলিম সাহিত্য সমাজের এক সভায় বক্তব্য রাখার সময় তা নিয়ে বিদ্রুপও করলেন।

” আজ আমি দেখছি এখানে মুসলমানের নতুন অভিযান শুরু হয়েছে। আমি এই বার্তা চতুর্দিকে ঘোষণা করে বেড়াব। আর একটা কথা- এতদিন মনে করতাম আমি একাই কাফের, কিন্তু আজ দেখে আমি আশস্ত হলাম যে, মৌলভী আনোয়ারুল কাদির প্রমুখ কতগুলি গুণী ব্যক্তি দেখছি আস্ত কাফের। আমার দল বড় হয়েছে, এর চেয়ে বড় সান্ত্বনা আর আমি চাই না।”

মুসলিম সাহিত্য সমাজ ঢাকার আশরাফতন্ত্রী আলেম, নবাব পরিবার এবং কলকাতার ‘মোহাম্মদী গোষ্ঠী’দের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিল। আবুল হুসেন তাঁর একটি প্রবন্ধে মুসলমানদের জন্য সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে চাকরি সংরক্ষণের বিরোধিতা করেছিলেন। কবি গোলাম মোস্তফা ‘সাপ্তাহিক মোহাম্মদী’-তে ওই বক্তব্যের সমালোচনা করে বলেন মুসলমানদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকার কারণেই আবুল হুসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে পেরেছেন। এই বক্তব্যে অপমানিত হয়ে আবুল হুসেন তাঁর শিক্ষকতার চাকরি ছেড়ে দিয়ে আইন ব্যবসায় যোগ দেন।

অন্যদিকে, স্বয়ং মাওলানা আকরম খাঁ ‘মাসিক মোহাম্মদী’র পর পর চারটি সংখ্যায় কাজী আবদুল ওদুদের লেখার আক্রমণাত্মক সমালোচনা করেছিলেন। ১৯২৮ সালে এই বিতর্কের জেরে কাজী আবদুল ওদুদ ও আবুল হুসেন আলাদা ‘ঘোষণাপত্র’ দিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন। একসময় মুসলিম হলে সাহিত্য সমাজের অধিবেশন বন্ধ করতে হলো। সভা চলল জগন্নাথ হল ও লিটন হলে।

অতীতের নব-প্রবর্তকদের প্রতি সমাজ সর্বদাই সহানুভূতিশীল। কিন্তু সমসাময়িক নব চিন্তাধারার প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি থাকে রূঢ়; Image Source: quotefancy.com

মুসলিম সাহিত্য সমাজের সদস্যরা ঢাকার বাইরে ছড়িয়ে পড়লে এর কার্যক্রম ক্রমান্বয়ে স্থির হয়ে পড়ে। নেতৃস্থানীয়দের মধ্যে কেবল কাজী মোতাহের হোসেনই ঢাকায় ছিলেন এবং দীর্ঘকাল নিজ লেখনীর মাধ্যমে সাহিত্য সমাজের আদর্শ ধরে গেছেন। কার্যবিবরণী অনুযায়ী, মুসলিম সাহিত্য সমাজের সর্বশেষ সভাটি ছিল ১৯৩৮ সালে; সেটি ছিল সংগঠনটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা আবুল হুসেনের মৃত্যু পরবর্তী এক অনাড়ম্বর শোকসভা।

মুসলিম সাহিত্য সমাজ বাঙালি মুসলমানদের চিন্তা-মননশীলতাকে ধাক্কা দিয়েছিল। শিক্ষিত মধ্যবিত্ত তরুণেরা এর সান্নিধ্যে এসে নতুন করে জগতকে দেখতে শুরু করে। পরবর্তীকালে, বাংলাদেশের বহু চিন্তাশীল লেখক ও বুদ্ধিজীবী বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন তারা প্রভাবিত হয়েছেন। তাঁদের লেখা ও গবেষণা এই আন্দোলনের অনুসন্ধান করেছেন।

দুঃখজনক হলেও সত্য, আমরা আজ ইতিহাস ও বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা সম্পর্কে উদাসীন। আজকের দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শিক্ষাঙ্গনকে মুক্তবুদ্ধি চর্চার কেন্দ্রে পরিণত না করতে পারার দায় আমাদের ছাত্র ও শিক্ষক উভয়েরই। যে সমাজে ৯০ শতাংশ মুসলিম, সেখানে ইসলাম ও মুক্তবুদ্ধির চর্চাকে পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করলে সমাজ কী করে অগ্রগামী হবে? জ্ঞানচর্চা, যুক্তিতর্ক, নারীশিক্ষা ব্যতীত এই যুগে উন্নয়ন অসম্ভব। আমাদের সমাজের বর্তমান যে দুর্দশা, সেখানে আর্থিক অস্বচ্ছলতার পাশাপাশি বুদ্ধিবৃত্তিক দীনতার ছাপও সর্বত্র প্রকট। যুক্তি-তর্ক, সংশয়, জিজ্ঞাসা, আত্মসমালোচনা ব্যতীত মুক্তি আর কল্যাণের আশা করাটা এখানে বৃথা। কারণ, জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট হয়েই রবে। মুক্তি সেখানে অসম্ভব।

This is a Bangla article. It is about Muslim Literary Society and it's pioneers.

Reference books are mentioned below:

1. বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন ও উত্তরকাল

লেখক: আবুল কাসেম ফজলুল হক

প্রকাশক: জাগৃতি প্রকাশনী

প্রকাশকাল: ২০০৮

2. নির্বাচিত প্রবন্ধ: আবুল ফজল

সম্পাদনা: মাহবুবুল হক

প্রকাশক: সময় প্রকাশন

প্রকাশকাল: ২০০১

3. প্রবন্ধ সংগ্রহ: কাজী মোতাহার হোসেন

সম্পাদনা: আবুল আহসান চৌধুরী

প্রকাশক: নবযুগ প্রকাশনী

প্রকাশকাল: ২০০৭

Feature Image: INSEAD Knowledge

Related Articles