Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

নামিবিয়া গণহত্যা: ইতিহাসকে ধিক্কার দেয়া বিংশ শতাব্দীর প্রথম ‘বিস্মৃত গণহত্যা’

“ছাগলের মাথা থেকে যেভাবে চামড়া ছাড়ানো হয়, কোনো কোনো বন্দী ঠিক সেভাবেই তার সঙ্গী বন্দীদের দেহের চামড়া ছাড়াতো। এরপর তারা সেগুলো পরিষ্কার করতো, খুলি কিংবা হাড়কে প্রস্তুত করা হতো অজ্ঞাত কোনো এক গন্তব্যে পাঠানোর জন্য”

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানদের নারকীয় হত্যাযজ্ঞ বিশ্বের প্রায় সবারই জানা। ইহুদিদের ওপর জার্মান নাৎসি বাহিনীর অত্যাচারের জন্য জার্মানরাও আজ নিজেদেরকে লজ্জিত হিসেবে উপস্থাপণ করে। কিন্তু তাদের আরও একটি লজ্জার অধ্যায় রয়েছে, যা ইতিহাসে প্রায় ম্রিয়মাণ। এই অধ্যায় নিয়ে আলোচনা করতে চান না কেউই, টেবিল চাপড়ে কথা বলতে পারেন খুব কমই। কারণ অধ্যায়টি প্রায় অস্পষ্ট। কিন্তু গুরুত্বের দিক থেকে বিবেচনা করলে এটিই বেশি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। কেননা নাৎসিরা নিজেদের মাটিতে গণহত্যা চালায়। অন্যদিকে এই অধ্যায়টি ঘটেছে জার্মানি থেকে বহু দূরের দেশ আফ্রিকার নামিবিয়াতে।

বিশ্বের ক্ষমতাধর অন্যান্য রাষ্ট্রের মতো নিজেদের দখলদারিত্ব বজায় রাখায় তাগিদে প্রায় লাখখানেক নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে জার্মানি। মূলত তারা এই গণহত্যা চালায় নামিবিয়ার হারারো, সান এবং নামাকুয়া সম্প্রদায়ের মানুষদের ওপর। পানি এবং খাবার বন্ধ করে, শারীরিক নির্যাতন করে, ধর্ষণ করে কিংবা নির্বাসনে পাঠিয়ে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে এসব সম্প্রদায়ের হাজার হাজার নারী, পুরুষ ও শিশুদের। দক্ষিণ-পশ্চিম আফ্রিকার একটি নিরীহ দেশে ইউরোপের একটি প্রভাবশালী দেশের নারকীয় এই হত্যাযজ্ঞ সুকৌশলে চেপে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন ইউরোপের বিখ্যাত ইতিহাসবিদরা। এমনকি ভুক্তভোগী আফ্রিকার কেউই এই বিষয়টি নিয়ে এতদিন কোনো ধরনের উচ্চবাচ্যও করেননি।

দক্ষিণ-পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নামিবিয়া। যার চারপাশে অবস্থান করছে আটলান্টিক মহাসাগর, জাম্বিয়া, অ্যাঙ্গোলা, বোটসোয়ানা এবং দক্ষিণ আফ্রিকা। এই দেশের অর্থনীতি অনেকটাই দক্ষিণ আফ্রিকা নির্ভর। যদিও তাদের মূল অর্থনীতির জায়গা হচ্ছে খনিজ সম্পদ। এছাড়া এখানে কৃষিও বেশ প্রচলিত একটি আয়ের উৎস।

আফ্রিকা ভাগ করে নিচ্ছে ইউরোপের ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলো, অথচ নেই আফ্রিকার কোনো প্রতিনিধি; Image source: monwaih.com

ঊনবিংশ শতকের শেষের দিক। বিশ্বে তখন ইউরোপের শাসন চলছে, চোখরাঙানি দেয়া হচ্ছে সব দেশকে। বলা হয়ে থাকে, ‘একটা সময় ছিলো যখন পৃথিবীর কোথাও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সূর্য অস্ত যেত না’। মূলত উপনিবেশ ধরে রাখার জন্য কিংবা পরিধি বাড়ানোর জন্য তখন ব্রিটিশদের পাশাপাশি পর্তুগিজ, ডাচ কিংবা ওলন্দাজরাও নিজেদের শক্তি জাহির করতো। যদিও ব্রিটিশ ব্যতীত বাকিরা চাইতো তাদের ব্যবসার প্রসার হোক।

উপনিবেশ স্থাপনের ক্ষেত্রে আমাদের উপমহাদেশে জার্মানির কথা কখনোই আলোচিত হয়নি। কিন্তু অন্যান্য দেশের মতো তারাও নিজেদের সাম্রাজ্য বিস্তারের লক্ষ্যে শক্তি জাহির করেছে। আফ্রিকা ছিলো তাদের আগ্রহের মূল কেন্দ্রবিন্দু। ১৮৮৪-৮৫ সালের দিকে আফ্রিকাকে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিতে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনাসভা আয়োজন করে ইউরোপের শক্তিশালী দেশগুলো। আলোচনা হয় আফ্রিকার ভূমির ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে। বার্লিন সভায় ছিলো ব্রিটেন, পর্তুগাল, ফ্রান্স, ইতালি এবং জার্মানির মতো দেশগুলো। কিন্তু যাদের নিয়ে এই সভা, সেই আফ্রিকার কোনো প্রতিনিধিই ছিলেন না সেখানে। এই সভার পর আফ্রিকার দক্ষিণ-পশ্চিম অংশ পায় জার্মানি।

আফ্রিকাতে ১৮৮৪ সালে সর্বপ্রথম নিজেদের উপনিবেশ স্থাপন করে জার্মানি। আমাদের উপমহাদেশে ইংরেজরা এসেছিলো ব্যবসায়িক হিসেবে। আফ্রিকাতে জার্মানরা প্রবেশ করলো পাদ্রি হিসেবে। এরপর তারা বেছে নিলো ব্যবসার পথ। শেষে সৈন্যসামন্ত নিয়ে দখল নেওয়া শুরু করলো আফ্রিকার ভূমি। পাদ্রি হয়ে প্রবেশ করার অন্যতম কারণ হলো, সেসব ভূখণ্ডের জাতিদের মধ্যে ধর্মীয় বিভেদের বীজ বোনা।

থিওডর লিওতেইনকে জার্মানদের পক্ষে দক্ষিণ-পশ্চিম আফ্রিকার গভর্নর করে পাঠানো হয়। এটি বর্তমানে নামিবিয়া হিসেবে পরিচিত। শুরুতে রক্তপাতের দিকে যায়নি জার্মানরা। ধর্মীয় সহানুভূতি এবং ব্যবসায়িক কারণ দেখিয়ে স্থানীয়দের নিকট থেকে নামমাত্র মূল্যে জমি কিনতে শুরু করে তারা। যখন বসতি গড়ে তোলা শুরু হয় তখনই স্থানীয়রা বসতির বাসিন্দা জার্মানদের অত্যাচারের শিকার হতে শুরু করেন। ধর্ষিত হতে থাকেন নারীরা।   

গণহত্যা চলার সময় নির্দেশদাতা হিসেবে সেখানে গভর্নর হিসেবে ছিলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল লোথার ভন ত্রোথা; Image source: monwaih.com

তাদের এই অত্যাচারের শিকার হন মূলত হেরেরো সম্প্রদায়ের বাসিন্দারা। তাদের সাথে অন্য একটি গোত্রের দ্বন্দ্বের জেরে শুরুতে তাদেরকে নিজেদের দলে টেনে নেয় জার্মানরা। পরে নিজেদের কাজে ব্যবহার করা হয় হেরেরোদের। শান্তিচুক্তি করা হলেও তা বাতিল করা হয় ১৮৮৮ সালে। ১৮৯৬ সালে আফ্রিকার এই অংশে মহামারিতে মারা যায় অনেক গৃহপালিত পশু। এই সুযোগে এখানকার মানুষের অভাবকে কাজে লাগিয়ে ফের কম দামে উর্বর জমি কিনতে শুরু করে জার্মানরা। এভাবে বাড়তে থাকে তাদের জমির পরিমাণ, আর একইসাথে জ্যামিতিক হারে বাড়তে থাকে দখলদারিত্ব ও শোষণের মাত্রা।

১৯০৩ সালে এসে দেখা যায় নামিবিয়াতে থাকা জার্মানরা সেখানকার হেরেরো সম্প্রদায়ের প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার বর্গকিলোমিটার জায়গা নিজেদের দখলে নিয়ে এসেছে। এখানে তাদের প্রভাব আরও বাড়িয়ে পুরো এলাকা নিজেদের আয়ত্ত্বে আনতে এর ভেতরে রেলপথ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। এই পথটি পুরো জার্মান উপনিবেশে থাকা অঞ্চল জুড়ে নির্মিত করার পরিকল্পনা ছিলো। এরই অংশ হিসেবে তারা স্থানীয়দেরকে ব্যবহার করে। তাদের নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত করে হেরেরোদের দু’ ভাগ করে ফেলার পরিকল্পনা করে। এ তথ্য জানতে পেরে ক্ষোভে ফেটে পড়ে হেরেরোরা।  

এখানে বসতি স্থাপন করা জার্মানরা হেরেরোদের ভুলিয়ে ঋণ নিতে বাধ্য করত। আমাদের উপমহাদেশের মহাজনের মতোই সেই ঋণে থাকতো চড়া সুদ। ফলে কিছুদিন পার হলেই সুদে-আসলে এই টাকার পরিমাণ বহুগুণ হয়ে যেত। সেটি আদায়ের সময় আমাদের এখানকার মহাজনদের মতোই শোধ না করতে পারলে জমি বা অন্য কোনো সম্পত্তি নিয়ে যাওয়া হতো। থাকতো ফাঁকিও। হেরেরোদের ছিলো অনেক গবাদি পশু। ফলে ঋণ শোধ না করতে পেরে তারা এসব পশু দিয়ে দিত।

এদিকে দ্রুত ঋণ আদায়ের জন্য স্থানীয় জার্মানদের তাগাদা দেন গভর্নর। তা না করতে পারলে বসতি স্থাপন করা জার্মানদের সাথে চুক্তি বাতিল করা হবে বলে হুমকি দেয়া হয়। এতে করে জার্মানরা এবার অত্যাচারের অলিখিত ঘোষণা পেয়ে যায়। বাড়তে থাকে জবরদস্তি করে সবকিছু দখলের মাত্রা। দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায় স্থানীয় হেরেরোদের। ভেতরে থাকা চাপা ক্ষোভ তখন বারুদের মতো শক্তি সঞ্চয় করছে। পুঞ্জীভূত এই শক্তি তখন একজন নেতৃত্বের সন্ধান করছে, সাহসের সন্ধান করছে।

শিল্পীর তুলিতে ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের সামান্য আঁচ; Image source: Herero-and-Namaqua-Genocide

সেই সাহসী নেতা ছিলেন স্যামুয়েল মাহেরেতো। তার নেতৃত্বে জার্মানদের বিরুদ্ধে ১৯০৪ সালের জানুয়ারি মাসে প্রথম বিদ্রোহ ঘোষণা করে হেরেরোরা। জানুয়ারি মাসের ১২ তারিখে ১২৩/১২৬ জন জার্মানকে হত্যা করা হয়। এটি ছিলো চরম ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। পরবর্তী বছরে হেরেরোদের সাথে সাথে যুক্ত হয় নামা ও সান সম্প্রদায়। তারাও শুরু করে বিদ্রোহ।

এর কড়া জবাব তৈরী ছিলো জার্মানদের কাছে। কিন্তু জবাবের বৈধতা খুঁজছিলেন তারা। আশ্রয় নিলেন প্রোপাগান্ডার। সবার কাছে পৌঁছে দিলেন একটি ছবি। সে ছবিতে দেখা যায়, জার্মান এক নারীকে পিটিয়ে মেরে ফেলছে হেরেরোরা। নিরীহ এই নারীর ওপর অত্যাচারকে উপজীব্য করে বলা হয়, হেরেরোরা হিংস্র। তাদের হাত থেকে নিরীহ নারী এবং শিশুরাও রক্ষা পাচ্ছে না।

কিন্তু আসলে হেরেরোরা হত্যার সাথে জড়িত হলেও তারা নিরীহ কারও ওপর অত্যাচার করেনি। তাদের হত্যার শিকার হতেন না কোনো নারী কিংবা শিশু।

“যেকোনো হেরেরো তার সাথে অস্ত্র থাকুক বা না থাকুক, তার সাথে কোনো গবাদিপশু থাকুক বা না থাকুক, নির্বিচারে তার ওপর গুলিবর্ষণ করো”

“আমি নারী এবং শিশুদের গ্রহণ করি না। তাদেরকে তাদের লোকদের কাছে পাঠিয়ে দাও অথবা গুলি করো”

এভাবেই ফাঁসিতে ঝুলতে বাধ্য করা হতো হেরেরোদের; Image source: countercurrents.org

হেরেরোদের এভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর পর সেখানে নতুন গভর্নর হিসেবে পাঠানো হয় লেফটেন্যান্ট জেনারেল লোথার ভন ত্রোথাকে। জার্মান সম্রাট কাইজার নিজে এই ব্যাপারটিতে হস্তক্ষেপ করেন। হেরেরোতে আসার সময় ত্রোথা তার সাথে নিয়ে আছেন আধুনিক সব অস্ত্রশস্ত্র। আর সাথে আসে প্রায় ১৪ হাজার সৈন্য। এসব সৈন্যরা আসার সাথে সাথেই তাদেরকে ওপরের মন্ত্রগুলো গেলানো হয়। যদিও এ মন্ত্রগুলো পরে সরিয়ে নেন জেনারেলরা।

মূলত ১৯০৪ সালের জুন থেকেই শুরু হয় জার্মানদের পরিকল্পিত পাল্টা আক্রমণ। সেখানকার একটি এলাকা ওয়াটারল্যান্ডে তিন থেকে পাঁচ হাজার হেরেরো সৈন্যদের ঘিরে ফেলে জার্মানরা। শুরু হয় ভয়ানক যুদ্ধ। কিন্তু আধুনিক অস্ত্রের সাথে টিকে থাকতে না পেরে পালাতে বাধ্য হন হেরেরো যোদ্ধারা। সেখানেই মারা যান অনেকে, বাকিদেরকে নিয়ে যাওয়া হয় ক্যাম্পে। পরের মাসেও এমন আক্রমণ হয়। কোণঠাসা করে ফেলা হয় হেরেরোদের।

এসময় হেরেরোদের ওপর অমানবিক নির্যাতনের বর্ণনা করেন জার্মান বাহিনীর পথপ্রদর্শক জ্যান ক্লটি। তিনি বলেন,

“ওয়াটারবার্গে হেরেরোরা যখন পরাজিত হয়, তখন আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম। যুদ্ধের পর হেরেরো নারী, পুরুষ ও শিশুরা জার্মান সেনাদের হাতে ধরা পড়ে। তাদেরকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হচ্ছিলো বা পঙ্গু করে ফেলা হচ্ছিলো। এদের ওপর নির্যাতন শেষে জার্মানরা পলায়নরত হেরেরোদের ধাওয়া করলো। পথে নিরস্ত্র ও একেবারেই সাধারণ হেরেরো লোকজন, যারা কেবল তাদের গবাদি পশু নিয়ে এলাকা ছেড়ে যাচ্ছিলো, তাদেরকে গুলি করে অথবা বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়।”

যারা বেঁচে ছিলেন তাদের কয়েকজনের অবস্থা; Image source: Bundesarchiv-LichterfeldeReichskolonialamt

যারা সেদিন রক্ষা পেয়েছিলেন, তারা সবাই গিয়ে আশ্রয় নেন কাছের মরুভূমি ওমাহেকেতে। কিন্তু সেখান থেকে আর ফেরা হয়নি তাদের। পথরোধ করে অপেক্ষারত থাকেন জার্মান সৈন্যরা। তাদের হাতে থাকা বন্দুক তখন শিকারের অপেক্ষায়। কেননা তারা তখন সরাসরি হত্যা করার জন্য ওপরমহল থেকে সবুজ সংকেত পেয়েছেন। তাদের তখনকার নেতা ত্রোথার আদেশ ছিলো-

“আমি জার্মান সেনাদের মহান জেনারেল এই চিঠি হেরেরো জনগণের প্রতি পাঠাচ্ছি। হেরেরোরা এখন আর জার্মানদের কোনো বিষয় নয়। হেরেরো জাতিকে অবশ্যই এই দেশ ছাড়তে হবে। যদি তারা না ছাড়ে তাহলে কামানের মুখে আমি তাদেরকে এটি করতে বাধ্য করবো। বন্দুকসহ কিংবা বন্দুক ছাড়া যেকোনো অবস্থাতেই কোনো হেরেরোকে জার্মান সীমান্তের মধ্যে পাওয়া গেলেই গুলি করে হত্যা করা হবে।”

কিন্তু স্থানীয়রা তাদের নিজের ভূমি ছেড়ে যাবেন কোথায়? তাই সেই মরুভূমিতেই অবস্থান করতে থাকেন তারা। এর মধ্যে তাদের আবাসের ভেতরেও শুরু হয় ষড়যন্ত্র। এমনিতেই মরুতে থাকে না পানি। এই সুযোগে অবস্থানরত হেরেরো ও অন্য সম্প্রদায়ের লোকেরা কয়েকটি কূপ থেকে যে অল্প পরিমাণ পানি পেতেন, সেগুলোতে মিশিয়ে দেয়া হয় বিষ। ১৯০৭ সালের মার্চের ৩১ তারিখ পর্যন্ত এক এক করে প্রায় ৬৫ থেকে ৮০ হাজার হেরেরো সম্প্রদায়ের এবং ১০ হাজার নামা ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষ মারা যান। সবাই জার্মান বাহিনীর এই হত্যার শিকার হয়ে।

শুধু হত্যাযজ্ঞই নয়, এদের মাথার খুলি নিয়ে পরীক্ষাগারে ব্যবহার করা হতো। এমনকি যারা বন্দী ছিলেন তাদের দেহে বিভিন্ন পরীক্ষা করে ফল জানা হতো। ব্যবহার করা হতো গিনিপিগের মতো।

মানুষ মেরে তাদের খুলি নিয়ে পরীক্ষণ চালাতে বাক্সবন্দী করা হচ্ছে খুলি; Image source: spiegel.de

অবশেষে যুদ্ধ সমাপ্ত করে জার্মানি। মরুতে টিকে থাকা বাকিরা পালিয়ে যান অন্য সাম্রাজ্যে। অন্যদের বন্দী করে নিয়ে যাওয়া হয় ক্যাম্পে। ব্যবহার করা হয় নিজেদের সুবিধার্থে কিংবা নির্যাতন করে মেরে ফেলা হয়। অর্থাৎ গোটা একটা জাতি ও আরেকটি জাতির কিছু অংশ বিলীন করে দেয়া হয় বিংশ শতাব্দীর প্রথম এই গণহত্যায়। মূলত হেরেরোদের নিশ্চিহ্ন করে দেয়াই ছিলো মূল উদ্দেশ্য। ভয়ানক এই হত্যাযজ্ঞ শেষে এক বার্তায় ত্রোথা লিখেন,

“আমি এই আফ্রিকান উপজাতিদের খুব ভালো করেই চিনি। এরা একেবারেই অসভ্য ও সহিংস। এই সহিংসতা দমনে ভয়ঙ্কর পদক্ষেপ গ্রহণের নীতি আমার আগেও ছিলো এখনও আছে, যদিও তা নির্মম হয়। আমি রক্তের নদী আর অর্থের স্রোত বইয়ে বিদ্রোহী উপজাতিদের ধ্বংস করে দিয়েছি আর এই পরিশোধনের মাধ্যমেই বেরিয়ে আসতে পারে নতুন কিছু।”

এই ঘটনা নিয়ে তেমনভাবে ক্ষমা চায়নি জার্মানি। হেরেরো এবং নামাদের সেই জায়গাটিতেই বর্তমান নামিবিয়া অবস্থিত। কয়েক বছর আগে জার্মানি এই হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে ক্ষমা চাওয়া ও ক্ষতিপূরণ দেয়ার পক্ষে সম্মত হয়। কিন্তু ক্ষতিপূরণের পরিমাণ কত হতে পারে বা কাগজে-কলমে এ ব্যাপারে কী তথ্য আসবে, এ নিয়ে চলছে মামলা। এটি চলছে নিউইয়র্কের একটি আদালতে। চলাকালীন এই মামলা নিয়ে একজনের মন্তব্য এমন,

“নিউইয়র্কে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের একটি জাদুঘরের কাছে কিছু হাড় এবং খুলি বিক্রি করে জার্মানি। ঐতিহাসিক প্রয়োজনে এগুলো বিক্রি হয় এখানে। কিন্তু এই হাড়গুলো সেই গণহত্যায় নিহত কারো হবে। এই হাড়গুলো এখন সুবিচার দাবি করছে।”

Related Articles