Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

অপারেশন কাহুটা: যখন পাকিস্তানের পারমাণবিক প্রকল্পে হামলা করতে চেয়েছিল ভারত

১৯৭৪ সালের ১৮ মে, রাজস্থানের থর মরুভূমির পোখরান টেস্ট রেঞ্জে পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালায় ভারত। যার সাংকেতিক নাম ছিল ‘স্মাইলিং বুদ্ধ’। ভারতের পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হওয়ার খবর পাকিস্তানের কাছে ছিল একইসাথে অস্বস্তিকর ও উদ্বেগজনক। এ কারণে ভারতের পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হওয়ার এক বছর পর থেকে পারমাণবিক বোমা তৈরির দিকে মনোনিবেশ করে পাকিস্তান। এজন্য পাকিস্তান সরকার তাদের জনগণকে অভুক্ত রাখতেও রাজি ছিল। তবু তাদের যেকোনো মূল্যে পারমাণবিক বোমার অধিকারী হওয়া চাই। পাক প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো বলেছিলেন,

পাকিস্তানীরা প্রয়োজনে ঘাস খাবে, তবু তারা পারমাণবিক বোমা বানাবে।

পারমাণবিক বোমার অধিকারী হওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী ভুট্টো সর্বপ্রথম দেশীয় পারমাণবিক বিজ্ঞানী আবদুল কাদির খানের শরণাপন্ন হন। কাদির তখন নেদারল্যান্ডে আলমেলো ইউরেনিয়াম এনরিচমেন্ট ফ্যাসিলিটিতে কাজ করতেন। পাক প্রধানমন্ত্রী তাকে পাকিস্তানে একই ধরনের প্রকল্প চালু করার জন্য অনুরোধ করেন। আবদুল কাদিরকে প্রথমে পাকিস্তান এটমিক এনার্জি কমিশন (পিএইসি) এর সহকারী প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেন। তখন পিএইসির প্রধান ছিলেন মুনির আহমেদ। কিন্তু মুনির আহমেদের সাথে কাদির খানের চিন্তা-ভাবনার বেশ ফারাক থাকার কারণে সে বছর প্রকল্পের কোনো অগ্রগতি হয়নি।

পাকিস্তানের পরমাণু বিজ্ঞানী আবদুল কাদির খান; Image Source: AFP

কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ভুট্টো পারমাণবিক অস্ত্রের জন্য মরিয়া হয়ে পড়েন। এবং তিনি চাচ্ছিলেন প্রকল্পের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাক। এজন্য তিনি মূল যে সমস্যা তার সমাধানও করে দেন। কাদির খানকে পিএইসির প্রধান হিসেবে বসিয়ে পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদান করেন। কাদির খানকে একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর কাছে জবাবদিহি করার নির্দেশ দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী ভুট্টোর দ্ব্যর্থহীন সমর্থনের পর পাঞ্জাব প্রদেশের রাওয়ালপিন্ডি জেলার কাহুটা শহরে প্রথম ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠা করেন

১৯৭৬ সালের ৩১ জুলাই, কাহুটায় পাকিস্তানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্রকল্পের যাত্রা শুরু হয়। এবং পারমাণবিক বোমা তৈরির জন্য পাঁচ বছর সময় বেঁধে দেওয়া হয়। সেই মোতাবেক দ্রুতগতিতে কাজ চালিয়ে যায় পাকিস্তানের পরমাণু বিজ্ঞানীরা। ১৯৮১ সালের ১ মে, আবদুল কাদির খানের অসামান্য অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য রিসার্চ ল্যাবরেটরির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘ড. এ কিউ খান রিসার্চ ল্যাবরেটরি’। যদিও পাকিস্তান তখনও পারমাণবিক বোমার অধিকারী হতে পারেনি।

ভারতীয় আক্রমণের হুমকি

ভারত নিজের পারমাণবিক বোমা তৈরির পর নিশ্চিত ছিল যে পাকিস্তানও এমন পদক্ষেপ নেবে। ফলে ভারতের গোয়েন্দাবাহিনী পাকিস্তানের উপর কঠোর নজরদারি চালায়। ফলে কাহুটা ল্যাবরেটরির কথা ভারতের কাছে বেশি দিন গোপন থাকেনি। এতে করে ল্যাবরেটরির নিরাপত্তা নিয়ে পাকিস্তানের গোয়েন্দারা চিন্তায় পড়ে যান।

আবদুল কাদির খান রিসার্চ ল্যাবরেটরিজ; Image Source: DAWN

পাকিস্তান সরকার কাহুটা ল্যাবরেটরির নিরাপত্তার বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়। ১৯৭৯ সালে এক গোয়েন্দা রিপোর্ট অনুযায়ী ভারত কাহুটায় আক্রমণ করতে পারে বলে গোয়েন্দারা আভাস দেন। তখন পাকিস্তানে সামরিক শাসন চলছিল। জেনারেল জিয়াউল হক তখন কাহুটার নিরাপত্তা নিয়ে বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার মার্শাল আনোয়ার শামীমের সাথে কথা বলেন।

কিন্তু এয়ার মার্শাল জেনারেল জিয়াকে যে তথ্য দেন তা ছিল আঁতকে ওঠার মতো। আনোয়ার শামীমের মতে, ভারতীয় যুদ্ধবিমান মাত্র তিন মিনিটের মধ্যে কাহুটা ল্যাবরেটরির কাছে পৌঁছাতে সক্ষম, যেখানে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর সময় লাগবে আট মিনিট। ফলে তারা কোনো প্রতিরোধ গড়ার আগেই ভারতের যুদ্ধবিমান হামলা চালিয়ে নিজ দেশে ফিরে যেতে পারবে। কারণ কাহুটার অবস্থান ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে।

ভারতের এই হুমকি মোকাবেলার জন্য পাকিস্তানের কাছে একমাত্র পথ ছিল বিমান বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি করা, যাতে ভারতের আক্রমণের শক্ত জবাব দিয়ে ভারতের পারমাণবিক প্রকল্পগুলো ধ্বংস করে দিতে পারে। এজন্য পাকিস্তানের প্রয়োজন ছিল আধুনিক যুদ্ধবিমান ও অস্ত্রশস্ত্র। পাকিস্তানের বিমান বাহিনী তখন চাহিদা হিসেবে মার্কিন যুদ্ধবিমান এফ-১৬ এর কথা তুলে ধরে।

কিন্তু সে সময় পাকিস্তানের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি আধুনিক যুদ্ধবিমান এফ-১৬ পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা ছিল না। তাদের সেই সুযোগ করে দেয় সোভিয়েত ইউনিয়ন। আফগানিস্তানে সোভিয়েত আগ্রাসনের ফলে পাকিস্তান সেখানকার আঞ্চলিক রাজনীতিতে তুরুপের তাসে পরিণত হয়, যার ফলে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ করার উদ্যোগ নেয়। পাকিস্তান এই সুযোগকে পুরোপুরি কাজে লাগায়।

সেনা কর্মকর্তাদের সাথে সেনাশাসক জেনারেল জিয়াউল হক; Image Source: White Star Archives

আফগান যুদ্ধের গুরুত্ব অনুধাবন করে যুক্তরাষ্ট্র প্রথমে পাকিস্তানকে ৪০০ মিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা প্রদান করা প্রস্তাব দেয়। কিন্তু জেনারেল জিয়া তা অতিসামান্য উল্লেখ করে সেই প্রস্তাব প্রত্যাখান করেন। পরবর্তীতে ১৯৮১ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তান সম্মতিতে পৌঁছায়। যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে সামরিক সরঞ্জাম দিতে রাজি হয়। প্রথমে তারা এফ-৫ ইএস এবং ৫-জিএস দিতে চাইলে পাকিস্তান তা প্রত্যাখান করে। পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্র শর্তভিত্তিক পাকিস্তানের কাছে ৪০টি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান বিক্রি করতে রাজি হয়। ১৯৮৩ সালের ১৫ জানুয়ারি তিনটি বিমান নিয়ে প্রথম চালান পাকিস্তানে পৌঁছায়।

কাহুটায় ভারতের হামলার পরিকল্পনা

কাহুটার পারমাণবিক প্রকল্পে পাকিস্তান আসলেই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে কি না সে বিষয়ে প্রথমে নিশ্চিত হতে চেয়েছিল ‘র’। এজন্য তারা কাহুটা ল্যাবরেটরিতে কাজ করা এক পাকিস্তানি বিজ্ঞানীর উপর নজরদারি চালাতে থাকে। একদিন সেই বিজ্ঞানী চুল কাটানোর জন্য সেলুনে যান। চুল কাটানোর পর ‘র’ এর এজেন্টরা সেই বিজ্ঞানীর চুল নিয়ে আসেন। সেই চুল পরবর্তীতে পরীক্ষা করে তারা নিশ্চিত হন যে পাকিস্তান কাহুটায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধের কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল।

১৯৭৫ সালে ভারতের জয়েন্ট ইন্টেলিজেন্স কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী, পাকিস্তানের কাছে প্লুটোনিয়াম-২৩৯ অথবা ইউরেনিয়াম-২৩৫ এর মধ্যে যেকোনো একটির ঘাটতি থাকার কারণে তাদের পক্ষে আগামী আগামী চার বছরের মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্রের মালিক হওয়া সম্ভব না। কিন্তু এর এক বছর পরেই তাদের রিপোর্ট অনুযায়ী জানা যায় যে, পাকিস্তান অল্প সময়ের মধ্যেই পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী হতে সক্ষম।

এফ-১৬ যুদ্ধবিমান © Staff Stg. Michael Battles

তখন ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনী বিকল্প পন্থা নিয়ে ভাবতে শুরু করে। এর মধ্যে সরাসরি পাকিস্তানের পারমাণবিক প্রকল্পে হামলা চালানোর মতো সিদ্ধান্তও ছিল। প্রথমে ‘র’ প্রচুর সংখ্যক এজেন্ট নিয়োগ করে। তাদের মাধ্যমে তারা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করতো। পাশাপাশি বিভিন্ন কূটনীতিক চ্যানেল থেকেও ভারত তথ্য সংগ্রহ করতো। এক্ষেত্রে কানাডা ও রাশিয়া তাদের সাহায্য করেছিল।

এর মধ্যে ১৯৭৭ সালে জেনারেল জিয়াউল হকের চাচাতো ভাই আবদুল ওয়াহিদ জার্মানি থেকে নিউক্লিয়ার ইকুইপমেন্ট কেনার একটি রাস্তা তৈরি করেন। কানাডা ও জার্মানি থেকে প্রযুক্তি নিয়ে পাকিস্তান ইউরেনিয়াম হেক্সাফ্লুরাইড তৈরি করার পদ্ধতি বের করে। এরপর ১৯৮১ সালে ইসলামাবাদ থেকে ভারতীয় দূতাবাসের পাঠানো রিপোর্ট থেকে জানা যায়, পাকিস্তান সে বছরই পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালাতে পারে। এজন্য তারা সিন্ধু, বেলুচিস্তান ও খাইবার পাখতুনওয়ায় মাটির নিচে গোপন সুড়ঙ্গ তৈরি করে, যা রুশ স্যাটেলাইটে ধরা পড়ে।

এর আগে থেকেই ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা পাকিস্তানের পারমাণবিক প্রকল্পে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেছিল। তাদের এই কাজে সহায়তা করতে চেয়েছিল ‘র’ এর পাকিস্তানি এজেন্টরা। ১৯৭৮ সালের শুরুর দিকে কাহুটা নিউক্লিয়ার প্লান্টের ভেতরের সকল তথ্য সরবরাহ করতে চেয়েছিল পাকিস্তানে থাকা ‘র’ এর এজেন্টরা। এর বিনিময়ে তাদের দাবি ছিল মাত্র ১০ হাজার ডলার

তবে এজন্য প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের প্রয়োজন ছিল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তখন ভারতে ক্ষমতায় ছিল জনতা পার্টি। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন মোরারজি দেশাই। কিন্তু তিনি ‘র’কে অজানো কারণে অপছন্দ করতেন। ফলে তিনি ‘র’ এর প্রস্তাব প্রত্যাখান করে দেন। এতটুকু করলে যথেষ্টই ছিল। কিন্তু তিনি চরম এক বোকামি করে বসেন। এক টেলিফোন আলাপে পাকিস্তানের শাসক জিয়াউল হককে বলেন, আপনাদের পারমাণবিক প্রকল্পের সকল তথ্যই আমাদের কাছে। ভারত এ সম্পর্কে পুরোপুরি ওয়াকিবহাল।

মোরারজি দেশাই; Image Source: DNA India

জেনারেল জিয়াউল হকের বুঝতে অসু্বিধা হয়নি কারা ভারতকে এসব তথ্য সরবরাহ করছে। তিনি গোয়েন্দা বাহিনীকে ‘র’ এর এজেন্টদের খুঁজে বের করার নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে আইএসআই প্রত্যেক এজেন্টকে খুঁজে বের করে তাদের হত্যা করে। ফলে কাহুটা প্রকল্প সম্পর্কে ‘র’ এর কাছে তথ্য আসা বন্ধ হয়ে যায়।

ভারতের সাথে ইসরায়েলের যোগদান

২০১৫ সালে ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্ট তাদের অনেক কূটনৈতিক গোপন তথ্য উন্মুক্ত করলে সেখানে পাকিস্তানের পরমাণু প্রকল্পের বিভিন্ন তথ্যে উঠে এসেছে। সেখান থেকে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্র সবসময়ই পাকিস্তানে ভারতের হামলার বিপক্ষে ছিল। এক্ষেত্রে তারা পাকিস্তান বিভিন্ন আগাম তথ্য দিয়ে সাহায্য করেছে।

ভারত প্রথমবারের মতো পাকিস্তানে হামলা করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে ১৯৮১ সালে। তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। সে বছরের ৭ জুন, ইরাকের ওসিরাকে নির্মাণাধীন পারমাণবিক প্রকল্পে হামলা করে পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয় ইসরায়েল। ইসরায়েলের ৮টি এফ-১৬টি বিমান তিনটি শত্রু দেশের উপর দিয়ে ৬০০ মাইল উড়ে গিয়ে ইরাকে হামলা চালিয়ে অক্ষত অবস্থায় ফিরে আসে। যা ভারতকে অনুপ্রাণিত করে।

ইসরায়েলের হামলার পর ইরাকের পারমাণবিক প্রকল্প © Ramzi Haider

১৯৮১ সালের জুনে ভারতের বিমান বাহিনী পাকিস্তানে হামলা চালানোর জন্য প্রস্তুতি নেয়াও শুরু করে। তাদের পরিকল্পনা ছিল কাহুটায় আক্রমণ করে পাকিস্তানের পারমাণবিক প্রকল্পকে পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় করে দেবে। কিন্তু একইসাথে তারা এর ফলাফল নিয়ে ভীত ছিল। পাকিস্তানে এ ধরনের হামলা চালানোর অর্থ হলো পাকিস্তানের হামলার মুখে পড়া। পাকিস্তানও যে বিমান হামলা করে ভারতের পারমাণবিক প্রকল্পগুলো ধ্বংস করে দেবে এ বিষয়ে ভারত নিশ্চিত ছিল। তবে ভারত এই পরিকল্পনা থেকে তখনও সরে আসেনি।

আদ্রিয়ান লেভি ও ক্যাথরিন স্কট-ক্লার্কের লেখা ‘ডিসেপশন: পাকিস্তান, দ্য ইউনাইটেড স্টেটস অ্যান্ড দ্য গ্লোবাল কন্সপিরেসি’ বই থেকে জানা যায়, ১৯৮৩ সালে ভারতের সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তারা গোপনে ইসরায়েল সফর করে। তারা এই সফরে ইহুদী দেশটি থেকে কাহুটার এয়ার ডিফেন্স নিষ্ক্রিয় করার জন্য ইসরায়েল থেকে ইলেকট্রনিক যুদ্ধসামগ্রী কেনাকাটা করে।

পাশাপাশি ভারতকে এফ-১৬ ও মিগ-২৩ যুদ্ধবিমানের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করে ইসরায়েল। ১৯৮৩ সালের মাঝামাঝিতে হামলার বিষয়ে বিমান বাহিনীকে আরো চিন্তা করার কথা বলেন ইন্দিরা। পরবর্তীতে সেবছর হামলা করার পরিকল্পনা থেকে ভারত সরে আসে। কারণ ভিয়েনায় এক আন্তর্জাতিক বৈঠকে পাকিস্তানের পরমাণু বিজ্ঞানী মুনির আহমেদ খান ভারতের অ্যাটমিক এনার্জির প্রতিনিধি রাজা রাম্মানাকে হামলার প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে সে বিষয়ে কড়া হুশিয়ারি দেন।

পাকিস্তানের কাহুটা পারমাণবিক প্রকল্প; Image Source: BCCL

পরের বছর সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে পাকিস্তানে হামলা করার আবারে পরিকল্পনা করে ভারত। এবার তারা এর সাথে ইসরায়েলকে যুক্ত করে। ভারত ও ইসরায়েলের স্বার্থ একই মেরুতে এসে মিলে গিয়েছিল। ইসরায়েল কখনোই পাকিস্তানের হাতে পারমাণবিক অস্ত্র দেখতে চায়নি। কারণ তাদের কাছে এই বোমা ছিল ‘ইসলামিক বোমা’, যা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার হতে পারে।

এই পরিকল্পনায় হামলায় নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়ে ইসরায়েল সম্মত হয়। পাশাপাশি তারা ভারতের বিমান বাহিনীকে পরামর্শ দিতেও রাজি হয়। তাদের এই পরিকল্পনা অনুযায়ী ইসরায়েলের যুদ্ধবিমান গুজরাটের জামনগর থেকে উড়ে গিয়ে পাকিস্তানে হামলা করে পরে উত্তর ভারতের কোথাও পুনরায় জ্বালানি ভর্তি করে নিজ দেশে ফিরে যাবে। ১৯৮৪ সালের মার্চে ইন্দিরা গান্ধী এই হামলার পরিকল্পনায় সম্মতিও জানান। এবং সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র দুবার পাকিস্তানকে হামলার বিষয়ে সতর্কও করে। শেষ পর্যন্ত ইন্দিরা গান্ধী হামলার পরিকল্পনা থেকে সরে দাঁড়ান।

ইন্দিরা গান্ধী; Image Source: Bettmann Archive

ইন্দিরা গান্ধীর সরে দাঁড়ানোর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ ছিল। ফলে কয়েকবার কাহুটায় হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেও ভারতের পক্ষে তা করা সম্ভব হয়নি। এর পেছনে অবশ্য বড় কারণ ছিল পাকিস্তানের সম্ভাব্য পাল্টা আক্রমণের ভয়। ভারত তখন সর্বাত্মক যুদ্ধে জড়াতে রাজি ছিল না।

তবে এক্ষেত্রে পাকিস্তানের এফ-১৬ যুদ্ধবিমান বড় প্রভাবক ছিল। যার ফলে অপারেশন কাহুটা পাকিস্তানকে পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হতে কোনো বাধা দিতে পারেনি। তবে পাকিস্তানের এই প্রকল্পকে ধীরগতিসম্পন্ন করে দিয়েছিল। পরবর্তীতে ১৯৯৮ সালের ২৮ মে, পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালায় পাকিস্তান, যার মধ্য দিয়ে চিরশত্রু ভারতের সাথে অস্ত্রশস্ত্রের বিরাট এক ব্যবধান দূর করতে সক্ষম হয় তারা।

This article is in Bangla language. It is about Operation Kahuta of RAW.

Necessary  references have been hyperlinked. 

Featured Image Source: Google Maps

Related Articles