Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

আমেরিকার প্রথম রেজিম চেঞ্জ: আমেরিকান মিশনারীদের হাওয়াই নিয়ন্ত্রণ

গত সোয়াশ’ বছরের ইতিহাসে আমেরিকা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শত শত অভিযান চালিয়েছে, অভ্যুত্থান ঘটানোর চেষ্টা করেছে, বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে অর্থ এবং অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করেছে। এর মধ্যে প্রত্যক্ষভাবে কোনো দেশের সরকারকে উৎখাতের ঘটনাও কম নয়। মার্কিন লেখক, সাংবাদিক ও গবেষক স্টিফেন কিনজারের (Stephen Kinzer) মতে, এখন পর্যন্ত এরকম ঘটনা ঘটেছে মোট ১৪টি, যার শুরু হয়েছিল স্বাধীন রাজ্য হাওয়াইয়ের রানী লিলিউকালানিকে ক্ষমতাচ্যুত করার মধ্য দিয়ে।

এই ১৪টি উৎখাতের ঘটনা নিয়েই স্টিফেন কিনজার ২০০৬ সালে প্রকাশ করেছিলেন তার বিখ্যাত বই Overthrow: America’s Century of Regime Change from Hawaii to Iraq। বইটির প্রথম অধ্যায় অবলম্বনে হাওয়াইয়ের রানীকে ক্ষমতাচ্যুত করার মার্কিন ষড়যন্ত্র নিয়েই আমাদের এই আয়োজন। চার পর্বে সমাপ্ত লেখাটির আজ পড়ুন দ্বিতীয় পর্ব। এ পর্বে রয়েছে আমেরিকার মিশনারীদের হাওয়াইয়ের অর্থনীতি ও রাজনীতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার ইতিহাস। সবগুলো পর্ব পড়ুন এখান থেকে: প্রথম পর্ব, দ্বিতীয় পর্ব, তৃতীয় পর্ব, চতুর্থ পর্ব

Overthrow বইটির প্রচ্ছদ; Image Source: Goodreads

প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ আবিষ্কারের মাত্র এক বছরের মাথায়, ১৭৭৯ সালে স্থানীয় আদিবাসীদের হাতে ক্যাপ্টেন কুকের করুণ মৃত্যু ঘটে। কিন্তু তার মৃত্যুর পরেও তার দেখানো পথ ধরে দ্বীপটিতে ইউরোপিয়ান অভিযাত্রীদের যাতায়াত অব্যাহত থাকে। অভিযাত্রা শেষে ফিরে যাওয়া এসব নাবিকদের মুখ থেকে ছড়িয়ে পড়ে হাওয়াই সম্পর্কিত বিভিন্ন গল্প। এসব গল্পের অনেকগুলো প্রকাশিত হতে থাকে ইউরোপ এবং আমেরিকার বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়।

এরকম একটি গল্প ছিল এক হাওয়াইয়ান এতিম বালকের গল্প, যে নাবিকদের সাথে আমেরিকায় গিয়ে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করে। এই গল্প শুনে আমেরিকার খ্রিস্টান মিশনারীদের মধ্যে ধারণা হয়, হাওয়াই হচ্ছে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করতে উদগ্রীব এক জনগোষ্ঠীর আবাসভূমি। ফলে এসব মিশনারীরা দলে দলে হাওয়াইয়ে গিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করেন। ১৮২০ থেকে ১৮৫০ সালের মধ্যে স্থায়ীভাবে বসবাসের উদ্দেশ্যে হাওয়াইয়ে পাড়ি জমানো এরকম মিশনারীর সংখ্যা ছিল দুই শতাধিক।

হাওয়াইয়ে একটি মিশনারী প্রতিষ্ঠান; Image Source: amdigital.co.uk

হাওয়াইয়ে পা দিয়েই অবশ্য মিশনারীদের ভুল ভাঙে। তারা দেখতে পান, হাওয়াইবাসীদের ধর্ম, বিশ্বাস এবং সমাজব্যবস্থার সাথে ইউরোপ-আমেরিকার আকাশ-পাতাল পার্থক্য। ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য, উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং ব্যক্তিগত সম্পত্তির যেসব ধ্যান-ধারণা ছিল মিশনারীদের সভ্যতার মূল ভিত্তি, হাওয়াইয়ানদের সেসব বিষয়ে কোনো ধারণাই ছিল না। এবং স্বাভাবিকভাবেই রাতারাতি খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণেরও কোনো আগ্রহ তাদের মধ্যে ছিল না।

হাওয়াইয়ান আদিবাসীরা পাহাড়-পর্বত, গাছপালা, পশুপাখি, বাতাস, বজ্রপাত, এমনকি শিশির কণারও অমরত্বে বিশ্বাস করত। হানাই নামে তাদের একটি সামাজিক প্রথা ছিল, যেই প্রথা অনুযায়ী শিশুর জন্মের পরপরই তার মা তাকে তুলে দিত আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব কিংবা গোত্রপ্রধানের হাতে। এছাড়াও বহুবিবাহ, অজাচার, শিশুহত্যা, নগ্নতা এবং যৌনতা ছিল তাদের কাছে অত্যন্ত স্বাভাবিক।

হাওয়াইয়ানদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান; Image Source: raremaps.com

খ্রিস্টান মিশনারীদের দৃষ্টিতে এই হাওয়াইবাসীরা ছিল বিশ্বের সবচেয়ে অভিশপ্ত এবং পাপিষ্ঠ জাতি। তারা এই অসভ্য জাতিকে সভ্য করে তোলার এবং ঈশ্বরের অভিশাপ থেকে তাদেরকে রক্ষা করার দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নেন। হাওয়াইয়ে তারা কঠোর ধর্মীয় অনুশাসন চালু করেন। সব ধরনের নাচ-গান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং খেলাধুলা নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু বছরের পর বছর কেটে যাওয়ার পরেও যখন তাদের ধর্মীয় মিশন কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করতে ব্যর্থ হয়, তখন তারা অনেকেই হতাশ হয়ে পড়েন এবং বিকল্প পেশার দিকে ঝুঁকে পড়েন।

এদের মধ্যেই একজন ছিলেন অ্যামোস স্টার কুক (Amos Starr Cooke)। আমেরিকার কানেক্টিকাটে জন্মগ্রহণ করা এই মিশনারী হাওয়াইয়ে পাড়ি জমিয়েছিলেন ১৮৩৭ সালে। সেখানে তিনি হাওয়াইয়ান উচ্চ বংশীয় শিশুদেরকে শিক্ষিত করে তোলার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত কঠোর অনুশাসনের একটি স্কুলের পরিচালক হিসেবে কুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন। কিন্তু হাওয়াইয়ের উৎকর্ষ জমিতে চিনি উৎপাদন করে আমেরিকায় রপ্তানি করার অপার সম্ভাবনার প্রলোভন শীঘ্রই তাকে ধর্মীয় লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করে।

হাওয়াইয়ানদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান; Image Source: tourmaui.com

হাওয়াইয়ান আদিবাসীরা নিজেরাও আখ উৎপাদন করত, কিন্তু তারা সেখান থেকে চিনি পরিশোধন করতে জানত না। ১৮৫১ সালে আরেকজন সাবেক মিশনারী স্যামুয়েল ক্যাসেলের  (Samuel Northrup Castle) সাথে মিলে অ্যামোস স্টার কুক প্রতিষ্ঠা করেন শস্য ও ফলমূল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ক্যাসেল অ্যান্ড কুক (Castle & Cooke), যা পরবর্তীতে বিশ্বের সর্ববৃহৎ চিনি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর একটিতে রূপ নেয়।

বিশাল আকারে শস্য উৎপাদনের জন্য এই সাবেক মিশনারীদের প্রয়োজন ছিল বড় আকারের জমির। কিন্তু জমি ক্রয় করার ব্যাপারটি ছিল একটু জটিল। কারণ হাওয়াইয়ানদের ব্যক্তিগত সম্পত্তির কোনো ধারণা ছিল না। সে সময় হাওয়াইয়ানদের রাজা ছিলেন তৃতীয় কামেহামেহা (Kamehameha III)। ছোটবেলায় তিনি অ্যামোস স্টার কুকের স্কুলেই পড়াশোনা করেছিলেন। ফলে কুক তাকে দিয়ে হাওয়াইয়ানদের জমির মালিকানার বিধানে সংস্কার আনার ব্যবস্থা করেন।

১৮৫৩ সালে তোলা ছবিতে রাজা তৃতীয় কামেহামেহা (মাঝে), রানী কালামা (বামে) এবং রাজপরিবারের অন্যান্য সদস্যরা; Image Source: Bernice P. Bishop Museum

পূর্বে হাওয়াইয়ানদের জমির মালিকানা ছিল সমষ্টিগত। কিন্তু কুকের প্ররোচনায় রাজা কামেহামেহা বড় বড় জমিগুলোকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে ব্যক্তিগত জমি হিসেবে স্থানীয়দের মধ্যে বিতরণ করে দেন এবং অবশিষ্ট অব্যবহৃত জমিগুলোকে রাজকীয় খাস জমি হিসেবে ঘোষণা দেন। এর ফলে কুক এবং তার মতো অন্যান্য মিশনারী খামার মালিক এবং তাদের বংশধরদের পক্ষে বৈধভাবে যত খুশি জমি ক্রয় করার সুযোগ সৃষ্টি হয়। ফলে শীঘ্রই হাওয়াইয়ে নতুন একটি এলিট সম্প্রদায়ের আবির্ভাব ঘটে, যারা দ্বীপটির বড় একটি অংশ এবং অধিকাংশ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করে।

কুক এবং অন্যান্য চিনি উৎপাদনকারী ব্যবসায়ীদের সামনে তখনও একটি বড় বাধা ছিল। চিনির প্রধান বাজার ছিল তখন আমেরিকা। কিন্তু স্থানীয় চিনি উৎপাদনকারীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য বাইরে থেকে আমদানিকৃত চিনির ওপর উচ্চমাত্রার শুল্ক নির্ধারণ করা ছিল। এই সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে হাওয়াইয়ের মার্কিন বংশোদ্ভূত চিনি আবাদকারী ব্যবসায়ীরা এক অভাবনীয় প্রস্তাব পেশ করে। তারা স্থানীয়দের মতামতের তোয়াক্কা না করেই হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অংশ হিসেবে গ্রহণ করে নেয়ার জন্য ওয়াশিংটনে প্রস্তাব পাঠায়।

হাওয়াইয়ে একটি মিশনারী প্রতিষ্ঠান; Image Source: swaen.com

তখনও পর্যন্ত মার্কিন নীতি নির্ধারকরা বিদেশে কলোনী স্থাপনের কিংবা অন্য দেশ দখলের ব্যাপারে আগ্রহী ছিল না। কিন্তু ধীরে ধীরে নতুন প্রজন্মের ব্যবসায়ী এবং রাজনীতিবিদদের আত্মপ্রকাশের সাথে সাথে আমেরিকা নিজের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশের উপর হস্তক্ষেপের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠতে থাকে। অবশেষে হাওয়াইয়ান-আমেরিকান ব্যবসায়ীদের উদ্যোগে ১৯৭৮ সালে আমেরিকা হাওয়াইয়ের রাজা কালাকাউয়ার (Kalakaua) সাথে রেসিপ্রোসিটি ট্রিটি (Reciprocity Treaty) নামে একটি চুক্তি করে।

রেসিপ্রোসিটি চুক্তির অধীনে হাওয়াইয়ান ব্যবসায়ীরা আমেরিকাতে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার লাভ করে। বিনিময়ে আমেরিকা পায় হাওয়াইয়ে একচ্ছত্রভাবে ব্যবসা এবং সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করার অধিকার। রাজা কালাকাউয়া ছিলেন ব্যবসায়ীদের প্রতি অনুগত। তাদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা লাভের বিনিময়ে তিনি সহজেই এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। বাস্তবে এই চুক্তির মধ্য দিয়েই তিনি হাওয়াইয়ের স্বাধীনতা জলাঞ্জলি দিয়ে দেশটিকে আমেরিকার হাতে তুলে দেয়ার প্রথম পদক্ষেপটি চূড়ান্ত করেন।

১৮৮২ সালে রাজা কালাকাউয়া; Image Source: Hawaii State Archives

ততদিনে স্থানীয় হাওয়াইয়ানদের অনেকেই শিক্ষিত এবং নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠেছিল। রেসিপ্রোসিটি চুক্তির সংবাদে তাদের অনেকেই ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে। তাদের আন্দোলন সহিংস হয়ে উঠতে থাকলে রাজা কালাকাউয়া নিজের সিংহাসন রক্ষা করার জন্য আমেরিকার হস্তক্ষেপ কামনা করেন। আমেরিকানরা স্বাচ্ছন্দ্যে তাকে সাহায্য করতে রাজি হয়। তারা ১৫০ জন মেরিন সেনা পাঠায় কালাকাউয়ার ব্যক্তিগত এবং রাজনৈতিক দেহরক্ষী হিসেবে।

রেসিপ্রোসিটি চুক্তির সুযোগে হাওয়াইয়ের চিনি শিল্প উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি লাভ করতে থাকে। পাঁচ বছরের মধ্যেই হাওয়াইয়ে চাষাবাদে ব্যবহৃত জমির পরিমাণ তিনগুণ বৃদ্ধি পায়। ১৮৭৬ সালে যেখানে হাওয়াই থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চিনি রপ্তানির পরিমাণ ছিল ২১ মিলিয়ন পাউন্ড, সেখানে ১৮৮৩ সালে তা ১১৪ মিলিয়নে এবং ১৮৯০ সালে ২২৫ মিলিয়নে গিয়ে দাঁড়ায়। হাওয়াইয়ের অর্থনীতির নিয়ন্ত্রক শ্বেতাঙ্গ ব্যবসায়ীরা দিনে দিনে আরও ধনী এবং ক্ষমতাবান হয়ে উঠতে থাকে।

মন্ত্রিসভার সাথে রাজা কালাকাউয়া; Image Source: tourmaui.com

আট বছর পর রেসিপ্রোসিটি চুক্তিটির মেয়াদ যখন শেষ হয়ে যায়, তখন আমেরিকার স্থানীয় চিনি উৎপাদনকারীরা এর নবায়নের বিরোধিতা করে। ফলে হাওয়াইয়ান-আমেরিকান ব্যবসায়ীরা রাজা কালাকাউয়াকে চাপ দেয় চুক্তির শর্তে আমেরিকাকে আরও বেশি ছাড় দেওয়ার জন্য। কালাকাউয়া ততদিনে পুরোপুরি ব্যবসায়ীদের মুখাপেক্ষী হয়ে পড়েছিলেন। তিনি নতুন চুক্তিতে হাওয়াইর ওহাউ (Ohau) দ্বীপের পার্ল হারবার আমেরিকাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হন।

দুই বছর পর কালাকাউয়াকে দিয়ে শ্বেতাঙ্গ ব্যবসায়ীরা সংবিধান সংশোধন করিয়ে নিজেদের ক্ষমতা আরও কুক্ষিগত করার ব্যবস্থা করে। অস্ত্রের মুখে এ সংবিধান প্রণয়ন করা হয়েছিল বলে এটি বেয়োনেট কন্সটিটিউশন (Bayonet Constitution) নামে পরিচিত লাভ করে। নতুন সংশোধনীতে আইনসভার সদস্য নির্বাচিত হওয়ার জন্য শিক্ষাগত এবং সম্পত্তিগত যোগ্যতা নির্ধারণ করে দেয়া হয়, যেন হাওয়াইয়ের শ্বেতাঙ্গ নাগরিকরাই আইনসভায় নিয়োগের ক্ষেত্রে বেশি সুযোগ পায়। সকল শ্বেতাঙ্গ অধিবাসীকে, এমনকি নাগরিক নয়, এমন ইউরোপিয়ান ও আমেরিকান অধিবাসীদেরকেও এতে ভোটাধিকার দেয়া হয়।

রেসিপ্রোসিটি চুক্তি প্রণয়নকারী কমিটির সাথে রাজা কালাকাউয়া; Image Source: Wikimedia Commons

এ সংবিধানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি বৈশিষ্ট্য ছিল, এতে রাজার পরিবর্তে মন্ত্রীদের হাতে অধিকাংশ ক্ষমতা ন্যস্ত করা হয় এবং আইনসভার অনুমোদন ছাড়া এককভাবে কোনো মন্ত্রীকে বরখাস্ত করার যে ক্ষমতা রাজার ছিল, সেটা বাতিল করা হয়। নতুন এই সংবিধানের প্রণেতা ছিলেন এক আমেরিকান মিশনারী দম্পতির হাওয়াইয়ে জন্মগ্রহণকারী সন্তান, আইনজীবি লরিন থার্স্টন (Lorrin A. Thurston)। সংবিধান চূড়ান্ত করার পর ব্যবসায়ীরা কালাকাউয়াকে চাপ দিয়ে থার্স্টনকে তার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করেন।

নতুন সংবিধান অনুযায়ী কালাকাউয়া মূলত ক্ষমতাহীন এক পুতুল সম্রাটে পরিণত হন। হাওয়াইয়ের মূল নিয়ন্ত্রণ চলে যায় শ্বেতাঙ্গ এলিট সম্প্রদায়ের হাতে। তারা হয়তো এতেই খুশি থাকতে পারত, কিন্তু ১৮৯১ সালে হঠাৎ যখন কালাকাউয়ার মৃত্যুর পর তার বোন লিলিউকালানি ক্ষমতায় বসেন, তখন তাদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। কারণ লিলিউকালানির কাছে শ্বেতাঙ্গদের চেয়ে স্থানীয়দের স্বার্থই বড় ছিল। ফলে শীঘ্রই তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় হাওয়াইয়ান-আমেরিকান এলিটরা।

রানী লিলিউকালানি এবং তার সাথে আমেরিকানদের সংঘর্ষের ইতিহাস আমরা জানবো এই সিরিজের তৃতীয় পর্বে। সবগুলো পর্ব পড়ুন এখান থেকে: প্রথম পর্ব, দ্বিতীয় পর্ব, তৃতীয় পর্ব, চতুর্থ পর্ব

This article is in Bangla language. It's the 2nd part of a series detailing the history of the overthrow of Hawaiian monarchy by the US.

The series is based on the book "Overthrow: America's Century of Regime Change from Hawaii to Iraq" by Stephen Kinzer.

Featured Image: Wikimedia Commons

Related Articles