Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

অভ্রর জন্ম ও মেহদী হাসান নামক এক অদম্য যোদ্ধার এগিয়ে যাবার গল্প

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসের কোনো এক স্থানে ক্যাম্পাসেরই দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া (জুনিয়র-সিনিয়র) ছাত্রের মাঝে কথা হচ্ছিল।

বড় ভাই: কত করে নিবি?

ছোট ভাই: মানে? কীসের কত করে নিবো?

বড় ভাই: আরে, তোর সফটওয়্যারের দাম কত করে রাখবি?

ছোট ভাই: দাম রাখবো কেন? ওটা তো ফ্রি। কোনো টাকা পয়সা দিতে হবে না।

জুনিয়রের কথা শুনে সিনিয়র এবার যারপরনাই অবাক। বলিস কী? বলা ছাড়া আর কোনো কিছুই বের হয়নি তার গলা দিয়ে। ওদিকে জুনিয়রের বরাবরের মতোই স্বাভাবিক উত্তর, “হ্যাঁ। ভাষার জন্য টাকা নেবো কেন?”

সিনিয়রের মুখ থেকে এবার আর কোনো কথা বের হয় না। আক্কেলগুড়ুম হয়ে যায় তার। তিনি মনে মনে ভাবতে থাকেন, কী বলছে এই ছেলে? আর এদিকে আমি মনে মনে আঁকতে থাকি কয়েকজন মানুষের মুখ। মানুষগুলোর সাথে এই জুনিয়র ছেলেটির বেশ মিল খুঁজে পাই। মিল খুঁজে পাই সালাম, রফিক, বরকত আর জব্বারদের সাথে। ভাষাটাকে তারা ঠিক এই ছেলেটির মতো করেই ভালবেসেছিলেন। ভাষার জন্য তাদের ঠিক এতটাই মমত্ববোধ ছিল বুকের বাঁ পাশে। মনে মনে ভাবি, বহুদিন পর বাংলা আরেকজন ভালবাসার মানুষ খুঁজে পেল। স্বার্থের এই জগতে নিঃস্বার্থভাবে ভালবাসার মানুষ খুঁজে পাওয়া খুব দুষ্কর।

৫২’র ভাষা শহীদগণ; Image Source: Zozu.site

মেডিকেল চত্বরে কথোপকথনরত সেদিনের ঐ জুনিয়র ছেলেটির নাম মেহদী হাসান খান। তিনি বাংলা লেখার একটি সফটওয়্যার তৈরি করেছিলেন। সফটওয়্যারটি দিয়ে ইংরেজী অক্ষরে ‘ami vat khai’ টাইপ করলে খুব সহজেই বাংলায় ‘আমি ভাত খাই’ লেখা হয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাইয়ের সাথে মেহদী হাসানের সেই সফটওয়্যার নিয়েই কথা হচ্ছিল।

ঘটনাটি আজ থেকে কয়েক বছর আগের। সেসময় কম্পিউটারে বাংলা লেখা মানে এক ভীষণ যন্ত্রণাসম। এজন্য আবার ইংরেজী টাইপ শেখার মতো বাংলা টাইপ শেখো, তারপর অনুশীলন করো, আস্তে আস্তে আয়ত্বে আনো, তারপর চেষ্টা করে দেখ। আর মেহেদী হাসানের এই সফটওয়্যারটি যেন এই দীর্ঘমেয়াদী ও যন্ত্রণাদায়ক ব্যাপারটির এক নিমিষেই ইতি ঘটিয়ে দিলো। এতটা যেন কেউ আশা করেনি! এ যেন মেঘ না চাইতেই জলের স্পর্শ!

বাংলা লেখার এই সফটওয়্যারটিই আজকের বাংলা টাইপিস্টদের নিকট অতি পরিচিত নাম অভ্র, যার জন্য আলাদা কিবোর্ড লাগে না, আলাদা করে টাইপিংও শিখতে হয় না। ব্যবহারকারীরা শুধু ইংরেজি অক্ষরে মনের কথাটি লিখছেন আর তা অভ্রের যাদুতে বাংলায় হাসছে। তবে যে অভ্রর সাহায্যে আপনি আজ এত সহজে, এক নিমিষে বাংলা লিখতে পারছেন, সেই অভ্রর জনক মেহদী হাসান কিন্তু তত সহজে কিংবা এক নিমিষে অভ্রকে তৈরি করতে পারেননি। এই সৃষ্টি সাধারণ কোনো সৃষ্টি নয়, তার এই সৃষ্টি ১০টি বছর ধরে রচিত একটি গল্পের নাম।

গল্পের শুরুটা ছিল ঠিক এরকম। তখন ২০০৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাস। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে চলছিল বাঙালির প্রাণের উৎসব বইমেলা। একাডেমি চত্বর জেগে উঠেছিল বাঙালিয়ানার হরেক রকম সাজে সজ্জিত অসংখ্য বইয়ের স্টলে। একাডেমির বাতাসে তখন নতুন বইয়ের ঘ্রাণ। সেবারের সেই বইমেলায় একটি সংগঠন অংশ নিয়েছিল, নাম বাংলা ইনভেনশ থ্রু ওপেন সোর্স, সংক্ষেপে বায়োস। তবে বায়োস বই বিক্রেতা সংস্থা নয়। তারা বইমেলায় এসেছিল একটি প্রদর্শনী করতে। এই সংগঠনের সদস্যরা মেলায় সম্পূর্ণ বাংলায় লোকালাইজ করা একটি লিনাক্স ডিস্ট্রোর প্রদর্শনী করেছিল। এর নাম ছিল বাংলা লিনাক্স।

একুশে বইমেলা; Image Source: British Council

বাংলা লিনাক্সের বিশেষত্ব ছিল, এর সাহায্যে বাংলায় লেখার পাশাপাশি উইন্ডোর টাইটেল, মেনু, ফাইলের নামকরণ সবই বাংলায় করা যায়। এমন সুন্দর ও উপযোগী একটি সিস্টেম সবারই নজর কেড়েছিল। কেননা বাংলা লেখার জন্য তখন যেসব কিবোর্ড প্রচলিত ছিল, সেসব দিয়ে খুব একটা স্বাচ্ছন্দ্যে বাংলা লেখা যেত না। আর তাদের অপারেটিং সিস্টেমটি সম্পূর্ণ বাংলায় ছিল না। এছাড়া এগুলো দিয়ে বাংলায় শুধু টাইপের কাজই চালানো যেত। তো বাংলা লেখার এমন একটা খটমট সময়ে এমন সহজ একটি সিস্টেম সবার নজর কাড়বে এটাই তো স্বাভাবিক। বায়োসও তাই সবার নজর কেড়েছিল।

সেবারের মেলায় বায়োসের ঐ প্রদর্শনীতে দর্শকদের ভিড়ে দাঁড়িয়ে ছিল একজন ক্ষুদে দর্শক। ছেলেটির প্রোগ্রামিংয়ে ছিল ভীষণ আগ্রহ। প্রদর্শনীর অন্যান্য দর্শকদের সাথে তার একটি পার্থক্য ছিল। ঘরে ফেরার সময় আর সবাই যখন মেলার উত্তেজনা নিয়ে ঘরে ফিরেছিল, তখন সে ঘরে ফিরেছিল প্রদর্শনীর বিষয়বস্তুটি স্নায়ুতে বয়ে নিয়ে। সেদিন থেকেই তার মাথায় কাজ করছিল- কীভাবে এমন একটা কিছু বানানো যায়, যা দিয়ে অতি সহজেই সবাই বাংলা লিখতে পারবে। বইমেলার সেই ছোট্ট ছেলেটিই ২০১৪ সালে অভ্র সফটওয়্যারের জনক ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ছাত্র মেহদী হাসান।

বিজয় কিবোর্ড; Image Source: WIPO

মেলা থেকে সেদিন ঘরে ফিরেই মেহদী বায়োসের লিনাক্স নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি শুরু করেন। কিন্তু তার কম্পিউটারে উইন্ডোজ থাকায় ইচ্ছা সত্ত্বেও বাংলা লিনাক্স দিয়ে কাজ করতে পারছিলেন না তিনি। কিন্তু প্রোগ্রামিংয়ে আসক্ত ছেলেটির মনে এই ব্যাপারটি গভীর এক কৌতূহলের সৃষ্টি করেছিল। আর তাই তিনি বাংলা লিনাক্সের ঐ ফন্টটি ইনস্টল করেন। আর এ সময়ই তার চোখে পড়লো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

মাইক্রোসফট ওয়ার্ড কিবোর্ডের ইনসার্ট ক্যারেক্টার ব্যবহার করে ঐ ফন্টের ক্যরেক্টারগুলো আনা যায় এবং বেশ চমৎকার কাজও করে। তবে সেসময় এটি খুবই যন্ত্রণাদায়ক একটি ব্যাপার ছিল। আরো কষ্টকর ছিল যুক্তাক্ষর লেখা। কিন্তু এরপরও মেহেদীকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি এই ফন্ট। কেননা, এভাবে লেখাটা ছিল বেশ সময়সাপেক্ষ ব্যাপার, যা টাইপকারীর মাঝে বিরক্তির উদ্রেক করে। কিন্তু মেহদী তো বিরক্তি এনে দিতে এই প্রজেক্ট নিয়ে নামেননি। তিনি তো চান বাংলা লেখার এমন একটি সিস্টেম, যার সাহায্যে যে কেউ অনায়াসে বাংলায় লিখে ফেলতে পারবে তার মনের কথাগুলো।

তবে এ পর্যায়ে এসে মেহদী উপলব্ধি করলেন- তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য এখন প্রয়োজন একটি কিবোর্ডের, যা দিয়ে ইউনিকোড দিয়ে খুব সহজেই বাংলা লেখা যাবে। কিন্তু এখানেই সমস্যাটি বাঁধে। মেহদী ভেবেছিলেন, কিবোর্ডটি ইনস্টল করে নামিয়ে নেয়া যাবে। কিন্তু তা আর হয়ে উঠলো না। কেননা, সেটি কোথাও খুঁজে পেলেন না তিনি। তিনি বুঝতে পারলেন, এমন কিবোর্ড পেতে হলে তাকে কিবোর্ড তৈরি করতে হবে। কিন্তু কীভাবে সম্ভব সেটা?

এজন্য তো অনেক সময় ও পরিশ্রমের প্রয়োজন। এত সময় যে মেহদীর ছিল না। কেননা ততদিনে তিনি সেই ছোট ছেলেটি আর নেই। তিনি তখন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাশাস্ত্র নিয়ে পড়ালেখা করছেন। কিন্তু সৃষ্টির নেশা পেয়ে বসেছিল তাকে। এ এক মারাত্মক নেশা। মেহদীর বেলায়ও যেন তা-ই হলো।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল; Image Source: banglanews24.com

ক্লাসে, ক্যাম্পাসে সরব প্রাণোচ্ছ্বল ছেলেটি কেমন যেন উদাস হয়ে গেলো। কারো সাথে আগের মতো মেশে না। নিজের শরীরের প্রতি খেয়াল নেই, ঠিক নেই নাওয়া-খাওয়ার। হোস্টেল রুমের দরজা জানালা বন্ধ করে সারাক্ষণ বসে বসে কী যেন করে! শিক্ষকরা ভাবলেন, উচ্ছন্নে গেল বুঝি ছেলেটা। বন্ধুরা ভাবলো, কী করছে ও? কিন্তু মেহদী জানতেন তিনি কী করছেন। একদিকে পড়াশোনা অন্যদিকে ইউনিকোডভিত্তিক কিবোর্ড বানানোর চেষ্টা। সব সন্দেহ পাশ কাটিয়ে তিনি চলছিলেন তার গতিতে। আর এভাবেই একদিন তিনি তৈরি করে ফেললেন একটি প্রোটোটাইপ।

এই অ্যাপ্লিকেশনটি মেহদী প্রথমে বানিয়েছিলেন মাইক্রোসফটের ডটনেট ফ্রেমওয়ার্ক ব্যবহার করে। কেননা অ্যাপ্লিকেশনটি তিনি বানিয়েছিলেন উইন্ডোজের জন্য। কিন্তু ঝামেলাটা তখন হলো, যখন ভারতে আয়োজিত বাংলা ফন্ট তৈরির একটি প্রতিযোগীতায় মেহদী নিজের তৈরি প্রোটোটাইপটি পাঠালেন। কারণ, মেহদীকে তারা জানালো, তার তৈরি প্রোটোটাইপটি ঘন ঘন ক্র্যাশ হচ্ছে।

মেহদী আন্দাজ করতে পারলেন ঘটনাটা কী। তবে দমে গেলেন না। বরং এবার তিনি যেটা করলেন তা হলো, তিনি ডটনেট বাদ দিয়ে ক্ল্যাসিক ভিজু্য়্যালের ওপর ভিত্তি করে আবার প্রোটোটাইপ তৈরি করলেন। এবার তিনি বুঝতে পারলেন, ক্র্যাশের ঝামেলাটা আর নেই। আর এভাবেই তৈরি হলো অভ্রর বর্তমান ফ্রেমওয়ার্ক। এবার যেন স্বার্থক হলো তার সেই বইমেলায় বায়োসের তৈরি ফন্ট দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে শুরু করা দীর্ঘযাত্রা।

অভ্র কিবোর্ড; Image Source: সচলায়তন

মেহেদীর মস্তিষ্ক প্রসূত অভ্রর ওয়েবসাইটটির নাম ওমিক্রন ল্যাব। অভ্র ও ওমিক্রন ল্যাব মূলত একই বয়সী। কেননা, অভ্রর সাথেই তো ওমিক্রন ল্যাবের জন্ম। অভ্রর এই অফিসিয়াল সাইট ওমিক্রন ল্যাব কিন্তু আপনা আপনিই দাঁড়িয়ে যায়নি। একে দাঁড় করানোটা ছিল তার জন্য আরেকটি চ্যালেঞ্জ। সাইটটিকে সবার নিকট গ্রহণযোগ্য করে তুলতে এবং কেউ যেন না ভাবে সাইটটি কোনো প্রফেশনাল সাইট না- সেদিকে মেহদী ছিলেন সচেষ্ট। আর এজন্য কম কষ্ট করতে হয়নি তাকে।

নাওয়া-খাওয়া, পড়ালেখা ভুলে সারাক্ষণ তাকে লেগে থাকতে হয়েছে সাইটটির পেছনে। সাইটটির প্রতি মনোযোগ দিতে গিয়ে সবকিছুতে অমনোযোগী হয়ে পড়েছিলেন তিনি। এই এলেমেলো জীবনযাপন কারো চোখ এড়ালো না। সবাই ভাবলো, ছেলেটা বোধহয় উচ্ছন্নে গেল। শিক্ষকগণ তো একসময় তাকে বলেই বসলেন মেডিকেল ছেড়ে দিতে। কিন্তু মেহদীর তো তখন এসবে কান দেয়ার সময় নেই। তিনি তখন ব্যস্ত সাইটে নিয়মিত আপডেট দিতে, ম্যানুয়াল লিখতে, ভার্সন নম্বর বাড়াতে আর ইউজারদের প্রশ্নের উত্তর দিতে। আর এভাবেই আস্তে আস্তে অভ্র পৌঁছে যায় ইউজারদের নিকট। এর স্বীকৃতি স্বরূপ তাকে নিয়ে প্রতিবেদন করে কম্পিউটার টুমরো নামের একটি মাসিক ম্যাগাজিন। এই স্বীকৃতি মেহেদিকে এতটাই আনন্দ দেয় যে, তিনি বুঝতে পারেন তিনি এমন কিছু একটা করেছেন যা অবশ্যই প্রশংসার দাবীদার।

বেসিস পুরষ্কার গ্রহণ করছে অভ্র টিম; Image Source: আমাদের প্রযুক্তি 

অভ্র নিয়ে যাত্রাটা মেহদী একা শুরু করলেও শেষ অবধি কিন্তু তাকে একা পথ চলতে হয়নি। চলার পথে তিনি সাথে পেয়েছিলেন দেশি-বিদেশি বেশ কিছু স্বপ্নবাজকে। আর তাদের নিয়েই তিনি তৈরি করেছিলেন অভ্র টিম। এদের মধ্যে রয়েছেন অভ্রর ম্যাক ভার্সন প্রস্তুতকারী রিফাত উন নবী, অভ্রর কালপুরুষ ও সিয়াম রুপালী ফন্টের জনক সিয়াম, অভ্রর বর্তমান ওয়েবসাইট ও লিনাক্স ভার্সন প্রস্তুতকারী সারিম, ভারতের নিপন এবং মেহদীর সহধর্মিনী সুমাইয়া নাজমুনসহ আরো অনেককে।

মেহদী সেদিন তার ক্যাম্পাসের বড় ভাইকে বলেছিলেন, “ভাষার জন্য টাকা নেবো কেন?” তিনি শেষ পর্যন্ত সত্যিই কোনো অর্থ নেননি। তিনি সত্যিই ভাষাকে উন্মুক্ত করে দিয়েছেন সবার জন্য। ২০০৭ সালে অভ্র কিবোর্ড পোর্টালটি তিনি বিনামূল্যে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে উন্মুক্ত করে দেন। আর এর মাধ্যমেই বাংলা ভাষা উন্মুক্ত হয়ে পড়ে তথ্য প্রযুক্তিতে। তারপরের গল্প তো সবারই জানা।

অভ্র আজ ব্যবহৃত হচ্ছে সরকারি অফিস আদালতগুলোতে। এমনকি নির্বাচন কমিশনও তাদের প্রয়োজনীয় কাজ সারতে ব্যবহার করছে অভ্র, যা রাষ্ট্রকে কোটি কোটি টাকা খরচ থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। কিন্তু প্রচারবিমুখ মেহদীর পরিবর্তে কোনো চাওয়া নেই। কেননা তিনি এটাই তো চেয়েছিলেন। আর তাই তো তার স্লোগানই ছিল- ‘ভাষা হোক উন্মুক্ত’। অভ্রর আভিধানিক অর্থ আকাশ। আর মেহেদীর তৈরি এই আকাশে বাংলা ভাষা যেন আজ সত্যিই উন্মুক্ত।

বাংলা ভাষাভাষীদের জন্য মেহদী হাসান খানের যুগান্তকারী সফটওয়্যার অভ্র বাংলা ভাষাকে দিয়েছে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মেও হেসে-খেলে বেড়ানোর সুযোগ। শুধু তা-ই নয়, এই অভ্র রাষ্ট্রকেও করেছে লাভবান। অথচ আশ্চর্য হলেও সত্য, এর বিনিময়ে রাষ্ট্র তাকে আজ অবধি কোনো স্বীকৃতি দেয়নি। তবে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি না পেলেও মেহদীর ঝুলিতে জমা হয়েছে বেশ কিছু সম্মাননা। অভ্র কিবোর্ডকে মাইক্রোসফটের অনলাইন সংগ্রহশালায় ইন্ডিক ভাষাসমূহের সমাধানের তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

অভ্রকে বাংলা কিবোর্ড রিসোর্স হিসেবে ইউনিকোড সংস্থার ওয়েবসাইটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া বাংলা তথ্য প্রযুক্তিতে বিশেষ অবদানের জন্য অভ্র টিমকে বেসিস বাংলা থেকে দেওয়া হয় স্পেশাল কন্ট্রিবিউশন অ্যাওয়ার্ড। পরবর্তীতে ২০১৬ সালে মেহদী হাসান টপ টেন আউটস্ট্যান্ডিং ইয়ং পার্সনস পুরষ্কারে ভূষিত হন।

মেহদী হাসান; Image Source: Sangbad Pratidin

ব্যক্তিগত জীবনে এক সন্তানের জনক এই নিভৃতচারী সফটওয়্যার ডেভেলপার। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আছেন নিজের মতো। তবে হ্যাঁ, শিক্ষকদের ভবিষ্যদ্বাণী ভুল প্রমাণিত করে চিকিৎসাশাস্ত্রে ভাল ফল নিয়ে উত্তীর্ণ হলেও চিকিৎসাকে আর পেশা হিসেবে নেননি তিনি। প্রোগ্রামিংয়ের নেশাটা তার এখনও রয়ে গেছে আগের মতোই। আর তাই পেশা হিসেবে নিয়েছেন সেটাকেই। আছেন নিজের মতো, নিভৃতচারী জীবন কাটাচ্ছেন ভাষাকে উন্মুক্তকারী এক স্বীকৃতি না পাওয়া ভাষা সৈনিক।

This article is written in bengali langauage.It describes about Ovro. Sources of information are hyperlinked inside the article.

Featured Image: Mehdi Hasan Khan

Related Articles