Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

কাগজ, মুদ্রণশিল্প এবং মুসলিম সভ্যতার উত্থান-পতনের ইতিহাস

অষ্টম শতাব্দী থেকে শুরু করে ত্রয়োদশ (মতান্তরে পঞ্চদশ-ষোড়শ) শতাব্দী পর্যন্ত সময়কালকে বলা হয় ইসলামের স্বর্ণযুগ। এ সময়ের মধ্যে মুসলিম সভ্যতার সর্বোচ্চ বিকাশ ঘটেছিল। আমেরিকা যখনও আবিষ্কৃতই হয়নি, আর ইউরোপে যখন চলছিল অন্ধকার যুগ, তখন মুসলমানরা সাহিত্য, সংস্কৃতি, দর্শন, প্রকৌশল, চিকিৎসা শাস্ত্রসহ জ্ঞান-বিজ্ঞানের সকল শাখায় নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান চিত্র সম্পূর্ণ বিপরীত। জ্ঞান-বিজ্ঞান, সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রতিটি শাখায় বর্তমানে মুসলমানরা বিশ্বের অন্যান্য জাতির তুলনায় অনেক অনেক পিছিয়ে।

ঠিক কী কারণে মুসলমানদের পতন ঘটেছে, এটা এককথায় ব্যাখ্যা করা সম্ভব না। বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে অনেকে অনেকভাবে এটাকে ব্যাখ্যা করেন। তবে খুব সরলভাবে চিন্তা করলে এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ বিপরীত দুটি মত দেখা যায়। অধিকাংশ ইসলামী চিন্তাবিদ বা আলেম মনে করেন, কেবলমাত্র সঠিকভাবে ইসলামের চর্চা থেকে দূরে সরে যাওয়াই এর মূল কারণ। বিপরীত দিকে খুব বেশি ইসলাম চর্চা করেন না, এমন শিক্ষিত শ্রেণী মনে করেন, কেবলমাত্র জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা থেকে দূরে সরে যাওয়াই এর প্রধান কারণ। কিন্তু এর বাইরে অনেকেই মনে করেন, শুধু ইসলামী শাস্ত্র কিংবা শুধু জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা না, বরং উভয়ের সম্মিলিত চর্চার অভাবই মুসলমানদের পতনের প্রধান কারণ।

ডঃ ইয়াসির ক্বাদি; Image Source: AboutIslam.net

বিষয়টি অত্যন্ত চমৎকারভাবে ব্যাখ্যা করেছেন প্রখ্যাত পাকিস্তানী-আমেরিকান ইসলামিক ধর্মতত্ত্ববিদ ড. ইয়াসির ক্বাদি। ২০১৩ সালে তার এক লেকচারে তিনি ব্যাখ্যা করেন, ইসলামের প্রথম যুগে জাগতিক জ্ঞান-বিজ্ঞানে পারদর্শী না হয়েও শুধুমাত্র ঈমান, আত্মবিশ্বাস এবং চারিত্রিক দৃঢ়তার বলে সাহাবীরা বিশ্ব জয় করতে সক্ষম হয়েছিলেন। কিন্তু তারা কখনোই জ্ঞান-বিজ্ঞানকে দূরে ঠেলে দেননি, অথবা বিজিত অঞ্চলের জ্ঞান-বিজ্ঞানকে অমুসলমানদের আবিষ্কার হিসেবে আখ্যায়িত করে প্রত্যাখ্যান করেননি। বরং উদারতার সাথে সেগুলো গ্রহণ করার উদাহরণ সৃষ্টি করে গিয়েছিলেন, যার ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে আব্বাসীয় শাসনামলে মুসলিম মনীষীরা প্রাচীন গ্রিক, ভারতীয় এবং চীনা শাস্ত্র চর্চা করে নিজেদেরকে উন্নতির চরম শিখরে নিয়ে যেতে পেরেছিলেন।

কিন্তু সময়ের সাথে সাথে মুসলমানদের মানসিকতায়ও পরিবর্তন আসতে থাকে। নিজেরা শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করার পর একপর্যায়ে তাদের অনেকের মধ্যে অমুসলমানদের বিভিন্ন আবিষ্কার গ্রহণ করার ব্যাপারে অনীহা সৃষ্টি হতে থাকে। বিভিন্ন অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সামাজিক কারণে মুসলমানদের মধ্যে রক্ষণশীলতা বৃদ্ধি পেতে থাকে। বিভিন্ন আবিষ্কারকে ক্ষতিকর এবং ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার মাধ্যমে এ সময় বাস্তবে মুসলমানরা নিজেদেরই ক্ষতি করতে থাকে। ফলে ইউরোপে যখন রেনেসাঁ বা নবজাগরণ সৃষ্টি হয়, তখন যথাসময়ে যথাযথ প্রযুক্তিকে আলিঙ্গন করতে না পারার কারণে পিছিয়ে পড়তে শুরু করে মুসলমানরা।

৬৪৫ সালের পূর্বে চামড়ার উপর হাতে লেখা কুরআন; Image Source: Wikimedia Commons
চামড়ার উপর হযরত উসমান (রা) কর্তৃক সংকলিত কুরআন; Image Source: Islam City

ইয়াসির ক্বাদির মতে, বিষয়টি সবচেয়ে সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করা যায় মুসলমানদের দ্বারা কাগজ এবং মুদ্রণযন্ত্রের ব্যবহার পর্যালোচনার মাধ্যমে। তার মতে, মুসলিম সভ্যতার বিকাশের পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান কাগজশিল্পের। আর মুসলমানদের পতনের পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ মুদ্রণশিল্পের। কাগজশিল্পকে আলিঙ্গন করে, একে জ্ঞান চর্চার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে মুসলমানরা উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছতে পেরেছিল। কিন্তু পরবর্তীতে মুদ্রণযন্ত্রকে কাফেরদের আবিষ্কার হিসেবে আখ্যায়িত করে এবং ইসলামের জন্য ক্ষতিকর হিসেবে চিহ্নিত করে নিষিদ্ধকরণের মাধ্যমে তারা নিজেদের পতন নিশ্চিত করেছিল, যার মাশুল মুসলমানদেরকে এখনও দিয়ে যেতে হচ্ছে।

কাগজ আবিষ্কৃত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত লেখালেখি করা, তথ্য সংরক্ষণ করা ছিল খুবই কঠিন। খ্রিস্টপূর্ব ২য় শতকের দিকে চীনারা সর্বপ্রথম কাগজ আবিষ্কার করে। ফলে জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়ে যায়। কিন্তু চীনারা কাগজ আবিষ্কারের পদ্ধতি গোপন রেখেছিল। খুবই স্বল্প সংখ্যক দক্ষ কারিগর কাগজ তৈরির পদ্ধতি জানতো। কাগজের ব্যবহারও ছিল সীমিত। অপার সম্ভাবনা সত্ত্বেও চীনারা কাগজকে দৈনন্দিন জীবনে বা রাষ্ট্রীয় আমলাতান্ত্রিক কাজে ব্যবহার করতে শুরু করেনি। তারা প্রথম দিকে ব্যাগ, র‌্যাপিং পেপার, টয়লেট পেপার হিসেবে এবং পরবর্তীতে চিত্রাঙ্কণ ও সাহিত্যচর্চার কাজে কাগজ ব্যবহার করতো।

শিল্পীর আঁকা ছবিতে ‘তালাস নদীর যুদ্ধ’; Image Source: warhistoryonline.com

আবিষ্কারের পর ৮০০ বছর পেরিয়ে গেলেও বিশ্ববাসী কাগজের রহস্য জানতো না। আরব বণিকরা কাগজের অস্তিত্বের কথা জানতো, কিন্তু এর প্রস্তুত প্রণালী জানতো না। অন্যদিক ইউরোপীয়রা কাগজের অস্তিত্বের কথাই জানতো না। কিন্তু ৭৫১ খ্রিস্টাব্দে কিরঘিস্তান-কাজাকস্তান সীমান্তে চীনের হান রাজবংশের সাথে আব্বাসীয় খিলাফতের একটি ছোট যুদ্ধ সংঘটিত হয়। তালাস নদীর যুদ্ধ নামে পরিচিত ঐ যুদ্ধ রাজনৈতিক এবং সামরিক দিক থেকে একেবারেই গুরুত্বহীন হলেও মানব সভ্যতায় এর গুরুত্ব ছিল অকল্পনীয়। এই যুদ্ধে মুসলমানদের হাতে বন্দী হওয়া চীনাদের মধ্যে দুজন অত্যন্ত দক্ষ কারিগর ছিল, যারা কাগজ তৈরির গোপন প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতো।

মুসলমানদের মধ্যে সে সময় জ্ঞানী বন্দীদের জন্য সাধারণ বন্দীদের চেয়ে ভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়ার রীতি চালু ছিল। এর আগে ইসলামের প্রথম যুদ্ধেই শিক্ষিত বন্দীদেরকে মুক্তিপণ হিসেবে মদীনার ১০ জন নিরক্ষর ব্যক্তিকে পড়ালেখা শেখানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তারই ধারাবাহিকতায় তালাস নদীর যুদ্ধের পর অন্যান্য বন্দীদের বিরুদ্ধে ভিন্ন ভিন্ন ব্যবস্থা গৃহীত হলেও কাগজ তৈরির প্রক্রিয়া জানা কারিগর দুজনকে বিশেষ প্রহরার মাধ্যমে আব্বাসীয় খিলাফতের তৎকালীন রাজধানী কুফায় প্রেরণের ব্যবস্থা করা হয়। সেখানে তাদের কাছ থেকে মুসলমানরা কাগজ তৈরির প্রক্রিয়া শিখে নেয় এবং ৮০০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো এই গোপন প্রযুক্তি চীনের বাইরে প্রকাশিত হয়ে পড়ে।

চীনাদের কাগজ নির্মাণ পদ্ধতি; Image Source: dkfindout.com
চীনাদের কাগজ নির্মাণ পদ্ধতি; Image Source: Revolution by the Ream

আব্বাসীয় খিলাফতের দ্বিতীয় খলিফা ছিলেন আল-মানসুর। তার শাসনামল স্থায়ী হয়েছিল ৭৫৪ থেকে ৭৭৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে তার নির্দেশে রাষ্ট্রের সকল আমলাতান্ত্রিক কাজকর্মে কাগজের ব্যবহার শুরু হয়। খলিফা হারুন অর-রশিদের সময় আব্বাসীয় খিলাফতের রাজধানী যখন বাগদাদে, তখন ৭৯৪ খ্রিস্টাব্দে সেখানে (মতান্তরে সমরখন্দে) প্রতিষ্ঠিত হয় চীনের বাইরে বিশ্বের প্রথম কাগজের কল। এ সময় আরবিতেও কাগজকে ফারসি শব্দ ‘কাগজ’ অবলম্বনে ‘কাঘাদ’ বলা হতো। ধারণা করা হয়, ফারসি ‘কাগজ’ শব্দটি এসেছিল কাগজের তৎকালীন চীনা নাম ‘গু জি’ থেকে। শীঘ্রই একে একে দামেস্ক, ত্রিপলী (লেবাননন), হামা, মানবিজসহ অন্যান্য শহরেও কাগজের কল প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে।

কাগজের সহজলভ্যতার সাথে সভ্যতার বিকাশের সরাসরি সম্পর্ক আছে। কাগজ তৈরির পদ্ধতি শেখার কয়েক দশকের মধ্যেই মুসলমানরা চীনাদের চেয়েও উন্নত মানের কাগজ তৈরির পদ্ধতি উদ্ভাবন করে। ফলে মুসলিম সাম্রাজ্যে হাতে লেখা বইয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। পূর্বে প্যাপিরাস, চামড়া প্রভৃতির উপর লিখতে হতো বলে বইয়ের আকার হতো বিশাল, যা সংরক্ষণ করা এবং স্থানান্তর করা বেশ কঠিন ছিল। কিন্তু কাগজের বিস্তারের ফলে বই হয়ে উঠতে থাকে সহজে বহনযোগ্য। এ সময় মুসলমানদের হাত ধরেই প্রথম কাগজের তৈরি, মলাট বিশিষ্ট ও একপাশে বাঁধাই করা বই নির্মাণ শুরু হয়। এমনকি এখনও পর্যন্ত আমরা ৫০০ পৃষ্ঠার কাগজের সমষ্টিকে যে ‘রীম’ বলি, সেই শব্দটিও তৎকালীন আরবি শব্দ ‘রিজমা’ থেকে এসেছে।

কাগজের উপর প্রাচীনতম আরবি লেখা, অষ্টম শতকের; Image Source: iosminaret.org
৯৭১ সালে কাগজের উপর লেখা প্রাচীনতম কুরআন; Image Source: iosminaret.org

প্রথমদিকে কেবলমাত্র প্রশাসনিক কাজে এবং কুরআন শরিফের অনুলিপি তৈরি করার কাজে কাগজ ব্যবহৃত হলেও পরবর্তী কয়েক শতকের মধ্যে কাগজের ব্যাপক উৎপাদনের ফলে মুসলিম সমাজে জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চাও বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। মুসলিম মনীষীরা বিভিন্ন ভাষার মূল্যবান সব পান্ডুলিপি কাগজের বইয়ে অনুবাদ করতে শুরু করেন, গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশ করতে শুরু করেন। ফলে এটা মোটেও আশ্চর্যজনক নয় যে, কাগজ শিল্পকে গ্রহণ করার কয়েক দশকের মধ্যেই খলিফা হারুন অর-রশিদের পুত্র আল-মামুনের সময় ৮৩০ সালে বাগদাদে প্রতিষ্ঠিত হয় বিখ্যাত জ্ঞানচর্চাকেন্দ্র বাইতুল হিকমাহ। আর এভাবেই ইউরোপ যখনও অন্ধকার যুগে নিমজ্জিত, তখন কাগজের মতো গুরুত্বপূর্ণ শিল্পকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারার ফলে মুসলমানরা জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিল।  

প্রথমদিকে কেবলমাত্র বাগদাদ এবং দামেস্কে কাগজের কল থাকলেও ধীরে ধীরে অন্যান্য শহরেও কাগজের কল প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে। ৮৫০ সালের দিকে আফ্রিকার সর্বপ্রথম কাগজের কল প্রতিষ্ঠিত হয় মিসরে। মিসর থেকে আরো পশ্চিমে মরক্কো হয়ে একাদশ শতাব্দীতে কাগজ নির্মাণ প্রক্রিয়া পৌঁছে যায় মুসলমানদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত স্পেনে। দ্বাদশ শতকের পূর্বে ইউরোপে কাগজে লেখা কোনো বইয়ের অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। একাদশ শতকে ইউরোপে প্রথম যে কাগজের ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়, তা-ও ছিল মুসলিম নিয়ন্ত্রিত স্পেনের ইয়াতিভা (Xativa) কাগজের কল থেকে আমদানি করা। এ সময় দীর্ঘদিন পর্যন্ত ইউরোপে কাগজ পরিচিত ছিল চার্টা ডেমাস্কেনা (Charta Damascena) নামে, যার অর্থ ছিল দামেস্কীয় কাগজ।

বাগদাদের রাউন্ড সিটি এবং তার মাঝে বাইতুল হিকমাহ্‌’র মডেল; Image Source: Jean Soutif/ Science Photo Library

ইউরোপীয়রা প্রথম কাগজের কলের ব্যবহার করার সুযোগ পায় প্রথম ক্রুসেডের পর মুসলমানদের কাছ থেকে জেরুজালেমসহ আশেপাশের এলাকা দখলে নেওয়ার পর। কিন্তু তখনও তারা কাগজ তৈরি করা শিখতে পারেনি। ১২৪৪ সালে ইউরোপীয়ানরা মুসলমানদেরকে পরাজিত করে স্পেনের ইয়াতিভা পুনরুদ্ধার করে নিলে সেখানে থাকা কাগজের কলটির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ পায় এবং মুসলমান কারিগরদের কাছ থেকে কাগজ নির্মাণের কৌশল শিখে নেয়। কাছাকাছি সময়ে ইতালির নিকটবর্তী সিসিলিও রোমানদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায় এবং সেখানে মুসলমানদের স্থাপিত কাগজের কলটি থেকেও ইতালিয়ানরা কাগজ নির্মাণের কৌশল রপ্ত করে।

এরপরের ইতিহাস ঠিক মুসলমানদের কাগজ শিল্প উন্নয়নেরই বিপরীত ইতিহাস। মুসলমানদের কাছ থেকে কাগজ নির্মাণ শেখার পর ইতালিয়ানরা সেটার আরো উন্নতি সাধন করে। ইতালির নদীগুলোর তীরে স্থাপন করা কাগজের কলগুলোতে নদীর পানির স্রোতের প্রচন্ড শক্তিকে ব্যবহার করে আরো উন্নত মানের কাগজ তৈরি করতে শুরু করে তারা। মাত্র কয়েক দশকের মধ্যেই ইতালিয়ানরা কাগজের গুণগত মানের দিক থেকে মুসলমানদের প্রযুক্তিকে ছাড়িয়ে যেতে শুরু করে। এবং চতুর্দশ শতাব্দীতে তারা কাগজ উৎপাদনে এতই চমৎকারিত্ব অর্জন করে যে, তারা আরব দেশগুলোতে পাল্টা কাগজ রপ্তানি করতে শুরু করে।

চীন থেকে মুসলিম সাম্রাজ্য হয়ে যেভাবে কাগজ ইউরোপে পৌঁছেছে; Image Source: V. Schniepp

এ সময় থেকেই মুসলমানদের জ্ঞান-বিজ্ঞানে অগ্রগতির হার ক্রমশ শ্লথ হয়ে আসতে থাকে। ইউরোপীয়ানদের উন্নতি প্রযুক্তি এবং স্বল্পমূল্যের কাগজের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পরে তাদের শত শত কাগজের কল বন্ধ হয়ে যেতে থাকে। এ সময় অধিকাংশ আরবি বই লেখা হতো ইতালি থেকে আমদানিকৃত কাগজে। এ সময় বাধ্য হয়ে অনেকে কুরআন শরিফসহ বিভিন্ন ধর্মীয় বইও ইতালিয়ান কাগজের কাগজের উপর লিখতে শুরু করে। কিন্তু এসব কাগজে খ্রিস্টানদের ক্রসচিহ্নের জলছাপ থাকায় তা মুসলমানদের মধ্যে হীনমন্যতা, এবং খ্রিস্টানদের আবিষ্কারের প্রতি বিরূপ মনোভাবের সৃষ্টি করতে থাকে।

ইবনে বতুতার বর্ণনা থেকে জানা যায়, চতুর্দশ শতকে শুধুমাত্র মরক্কোর ফেজ শহরেই প্রায় ৪০০টি কাগজের কল ছিল। কিন্তু একের পর এক বন্ধ হতে হতে সপ্তদশ শতকের দিকে বিশাল মুসলিম সাম্রাজ্যে আর বাণিজ্যিকভাবে কাগজ উৎপাদন করার মতো একটি কাগজের কলও অবশিষ্ট ছিল না। কিছু ব্যক্তিগত কাগজের কল অবশ্য ছিল, কিন্তু সেগুলো ছিল নিছকই ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য। বিপরীত দিকে এ সময় ইউরোপ ছাড়িয়ে কাগজ নির্মাণ শিল্প পৌঁছে যায় নতুন আবিষ্কৃত আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। কাগজের সহজলভ্যতায় ইউরোপে জ্ঞান চর্চা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে। ইউরোপ প্রবেশ করে রেনেসাঁ বা নবজাগরণে।

ভেনিস থেকে আমদানিকৃত কাগজের উপর লেখা ১৩৪০ সালের কুরআন; Image Source: iosminaret.org

কিন্তু ঠিক নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে যে ঘটনাটি মুসলিম সভ্যতার সাথে ইউরোপীয় সভ্যতার অগ্রযাত্রার ব্যবধানের সূচনা করে দেয়, সেটি হচ্ছে প্রিন্টিং প্রেস বা মুদ্রণযন্ত্রের আবিষ্কার। যদিও এর আগেও কাঠের তৈরি মুদ্রণযন্ত্রের ব্যবহারের প্রমাণ আছে, কিন্তু সত্যিকার অর্থে ধাতব টাইপের হরফের মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে বই প্রকাশের উপযোগী মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কার করেন ইওহানেস গুটেনবার্গ। ১৪৩৯ সালে তিনি এবং তার বন্ধু অ্যান্দ্রিয়াস ড্রিটজেন মিলে প্রথম প্রিন্টিং প্রেস নির্মাণ করেন। মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কার ছিল কাগজশিল্পের বিকাশেরই একটি ধারাবাহিকতা। অ্যান্দ্রিয়াস ড্রিটজেন নিজেও ছিলেন একটি কাগজ কলের মালিক।

মুদ্রণযন্ত্রের আবিষ্কার ছিল একটি বৈপ্লবিক ঘটনা। ইউরোপের নবজাগরণের পেছনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এটি। মাত্র কয়েক দশকের মধ্যেই সমগ্র ইউরোপে প্রিন্টিং প্রেস প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে। মাত্র একশ বছরের মধ্যে অন্তত তিনশটি ইউরোপীয় শহরে মুদ্রণযন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এগুলো থেকে অন্তত দুই কোটি কপি বই প্রকাশিত হয়। স্বাভাবিকভাবেই ইউরোপ এ সময় জ্ঞানে-বিজ্ঞানে অন্য সবাইকে ছাড়িয়ে যেতে শুরু করে। নিউটন, গ্যালিলিও, দান্তেদের আবির্ভাব ঘটতে থাকে। গড়ে উঠতে থাকে ভবিষ্যত পৃথিবীর নেতৃত্ব দেওয়ার উপযোগী  এক নতুন শিক্ষিত জাতি।

ইতালির ফ্যাবিয়ানো কাগজের কলে যেভাবে কাগজ তৈরি করা হতো; Image Source: Revolution by the Ream
ত্রয়োদশ শতকের ইতালির ফ্যাবিয়ানো কাগজের কলের ধ্বংসাবশেষ; Image Source: historyofinformation.com

অন্যদিকে মুসলিম সমাজের অবস্থা ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত। গুটেনবার্গের মুদ্রণযন্ত্রের আবিষ্কারের ২০-৩০ বছরের মধ্যে অটোমান সুলতানদের কাছে এর সংবাদ পৌঁছাতে শুরু করে। কিন্তু এর অমিত সম্ভাবনা তারা বুঝতে পারেননি। বরং একদিকে তাদের মধ্যে অমুসলিমদের আবিষ্কার হিসেবে এর প্রভাব নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয়, অন্যদিকে মুদ্রণযন্ত্রের প্রসার ঘটলে সরকারিভাবে নিযুক্ত হাজার হাজার পুস্তক লেখক এবং ক্যালিগ্রাফার বেকার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়। ফলে তৎকালীন ওলামারা প্রিন্টিং প্রেসকে অনৈসলামিক হিসেবে মত দেন এবং ১৪৮৩ সালে অটোমান সুলতান দ্বিতীয় বায়োজিদ সমগ্র মুসলিম সাম্রাজ্যে প্রিন্টিং প্রেসের ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। শুধু প্রিন্টিং প্রেসই না, একইসাথে মুদ্রিত বইয়ের আমদানিও নিষিদ্ধ করা হয়। শুরু হয় মুসলিম সভ্যতার দুঃখজনক পতন।

১৪৯২ সালে গ্রানাডার পতনের পর বিপুল সংখ্যক ইহুদী অটোমান সাম্রাজ্যের কেন্দ্রে প্রবেশ করে। এদের মধ্যে অনেকেই ছিল শিক্ষাদীক্ষায় বেশ অগ্রসর এবং গ্রানাডার মুদ্রণশিল্পের সাথে জড়িত। সুলতানের কাছে তারা যখন আবেদন করে, তখন সুলতান শুধুমাত্র ইহুদীদেরকে প্রিন্টিং প্রেস ব্যবহারের অনুমতি দেন। তবে শর্ত ছিল, তারা শুধুমাত্র তাদের নিজেদের জন্য বই প্রকাশ করতে পারবে, কোনো মুসলমানের কাছে বই বিক্রি করতে পারবে না। ফলে এটা মোটেও আশ্চর্যজনক না যে, অটোমান শাসনামলে ইহুদীরাই সবচেয়ে শিক্ষিত জাতি ছিল এবং সরকারি উচ্চপদে চাকরির সুযোগ পেয়েছিল।

পঞ্চদশ শতকে ইউরোপে প্রিন্টিং প্রেসের বিস্তার; Image Source: Wikimedia Commons
মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কারের পর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা; Image Source: Wikimedia Commons

সে সময়ের মুসলিম আলেমদের অনেকের ধারণা ছিল, কুরআন শরিফসহ অন্যান্য ধর্মীয় বই হাতে লেখার সময় যেরকম ওজু করে, পবিত্র অবস্থায়, যত্ন দিয়ে লেখা হতো, প্রিন্টিং প্রেসের মাধ্যমে তা সম্ভব না হওয়ায় ধর্মের অবমাননা হবে। ফলে তারা প্রিন্টিং প্রেসকে হারাম ঘোষণা করেন। মুসলমানদের মুদ্রণ শিল্পে প্রবেশের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতাটি সৃষ্টি হয় ১৫১৫ সালে, যখন সুলতান প্রথম সালিম নির্দেশ জারি করেন, যেকোনো মুসলমানের কাছে প্রিন্টিং প্রেস পাওয়া গেলে তার শাস্তি হবে মৃত্যুদন্ড। ফলে ইউরোপে যখন প্রায় প্রতিটি ঘরে বই পড়া নিয়মিত অভ্যাস হিসেবে গড়ে উঠছিল, তখনও সমগ্র মুসলিম সাম্রাজ্যের অধিকাংশ নাগরিক একটি মুদ্রিত বই চোখে দেখারও সুযোগ পাচ্ছিলো না।

এই নিষেধাজ্ঞার কারণে বিশ্বের প্রথম মুদ্রিত কুরআন শরিফটিও মুসলমানদের দ্বারা মুদ্রিত হয়নি। প্রথম কুরআন শরিফ প্রিন্ট করে ইতালিয়ানরা, ১৫৩৭ সালে ইতালির ভেনিসে। দ্বিতীয় কুরআন শরিফ মুদ্রিত হয় ১৬৯৪ সালে জার্মানীর হামবুর্গে। তৃতীয়টি মুদ্রিত হয় রাশিয়াতে। ১৫৮৭ সালে অটোমান সুলতান তৃতীয় মাহমুদ ইউরোপ থেকে আমদানিকৃত আরবি, ফারসি এবং তুর্কি ভাষায় মুদ্রিত বই মুসলমানদের কাছে বিক্রয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেন। কিন্তু মুসলিম সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরে মুদ্রণযন্ত্র প্রতিষ্ঠার উপর নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকে আরো প্রায় আড়াইশো বছর পর্যন্ত, যত দিনে প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা নয় কোটি ছাড়িয়ে গেছে এবং মুদ্রণযন্ত্র পৌঁছে গেছে মহাসাগর পাড়ি দিয়ে হাইতি, তাহিতির মতো দুর্গম অঞ্চলেও।

বারমুডায় অবস্থিত গুটেনবার্গের প্রিন্টিং প্রেসের অনুলিপি; Image Source: Wikimedia Commons
গুটেনবার্গের প্রিন্টিং প্রেসের মডেল; Image Source:howitworksdaily.com

মুসলমানদের মুদ্রণযন্ত্রের ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল হয় ১৭২৭ সালে। সে সময় ইবরাহিম মুতাফাররেকা নামে এক ধর্মান্তরিত হাঙ্গেরিয়ান মুসলমান অটোমান সাম্রাজ্যের উচ্চপদে চাকরিরত ছিলেন। ছোটকালে ইউরোপে থাকার কারণে তিনি প্রিন্টিং প্রেসের গুরুত্ব বেশ ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। ফলে ১৭২৬ সালে তিনি ‘ওয়াসিলাত আত্‌তিবা’আ’ তথা ‘মুদ্রণের উপকারিতা’ নামে একটি পুস্তিকা রচনা করেন। এই পুস্তিকায় তিনি যুক্তি তুলে ধরেন, মুসলমানরা যে ইউরোপের তুলনায় সব দিক থেকে পিছিয়ে পড়ছে, তার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে প্রিন্টিং প্রেস প্রযুক্তিকে বর্জন করা।

তখনও পর্যন্ত প্রিন্টিং প্রেসের ব্যবহার শাস্তিযোগ্য অপরাধ ছিল। কাজেই ইবরাহিম মুতাফাররেকা তার পুস্তিকাটি রচনা করেছিলেন হাতে লিখে। এর পান্ডুলিপিটি তিনি তুলে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী ইবরাহিম পাশার হাতে। ইবরাহিম পাশা সেটি পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেছিলেন সুলতান তৃতীয় আহমেদের কাছে। ইবরাহিম মুতাফাররেকার যুক্তি দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সুলতান তৎকালীন গ্র্যান্ড মুফতির কাছে ফতোয়া চান। এবং এর ফলে ১৭২৭ সালে, গুটেনবার্গের মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কারের ২৮৮ বছর পর, মুসলমানরা সর্বপ্রথম মুদ্রণযন্ত্র ব্যবহার করার অনুমতি পায়। তবে এতেও শর্ত ছিল, কোনো ধর্মীয় বই প্রকাশ করা যাবে না, আরবি হরফ ব্যবহার করা যাবে না, এবং বই প্রকাশের আগে সরকারের অনুমতি নিতে হবে।

১৫৩৭ সালে ভেনিসে প্রথম মুদ্রিত কুরআন শরিফ; Image Source: euppublishing.com

প্রাথমিক নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর অটোমান সাম্রাজ্যের বিভিন্ন প্রদেশে বেশ কিছু মুদ্রণযন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু সরকারিভাবে প্রথম প্রিন্টিং প্রেসের ব্যবহার হতে সময় লাগে আরো প্রায় একশ বছর। এর আগেই অবশ্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে যায়। ১৭৯৮ সালে নেপোলিয়ান বোনাপার্টে মিসর আক্রমণ করে বসেন। কিন্তু সৈন্য-সামন্ত ছাড়াও তিনি তার সাথে জাহাজে করে নিয়ে গিয়েছিলেন স্থপতি, গণিতবিদ, প্রকৌশলী, শিল্পী, সাহিত্যিকসহ মোট ১৬৭ জন পন্ডিত ব্যক্তিকে। এবং সেই জাহাজে তাদের সাথে ছিল একটি প্রিন্টিং প্রেস। নেপোলিয়ানের এই প্রিন্টিং প্রেসের মাধ্যমেই মিসরে প্রথম আরবি ভাষায় মুদ্রণকার্য শুরু হয়।

নেপোলিয়ান অবশ্য বেশি দিন মিসর শাসন করতে পারেননি। ১৮০১ সালে যখন তিনি মিসর ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হন, তখন তার স্থাপিত প্রিন্টিং প্রেসটি মিসরে রয়ে যায়। নেপোলিয়ানকে পরাজিত করার মধ্য দিয়ে উত্থান ঘটে আধুনিক মিসরের প্রতিষ্ঠাতা হিসবে পরিচিত মোহাম্মদ আলি পাশার। যদিও কাগজে-কলমে তিনি অটোমান সালতানাতের অধীনে ছিলেন, কিন্তু কার্যত তার শাসনামল ছিল অনেকটাই স্বায়ত্ত্বশাসিত। এবং এ সময় অটোমান সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত মিসরে অবাধে প্রিন্টিং প্রেসের বিকাশ ঘটতে থাকে। এখনও যে মিসর অন্য অনেক আরব দেশের তুলনায় শিল্প-সাহিত্যে এবং জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় এগিয়ে, তার অনেকগুলো কারণের মধ্যে এটিও একটি।

ইবরাহিম মুতাফাররেকা এবং তার প্রথম প্রিন্টিং প্রেস; Image Source: kalemisidergisi.com

অটোমান সাম্রাজ্যেও ধীরে ধীরে অবস্থার উন্নতি হতে থাকে। ১৭২৭ সালে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হলেও ইস্তাম্বুলে প্রথম মুদ্রিত সরকারি গ্যাজেট প্রকাশিত হয় ১৮৩১ সালে। আর ১৮৪০ সালে প্রকাশিত হয় প্রথম তুর্কি ভাষার পত্রিকা। মোটামুটি ১৮৭০ সালের মধ্যে প্রায় সব ধরনের নিষেধাজ্ঞা উঠে গিয়ে স্বাধীনভাবে সব ধরনের ধর্মীয় এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানের বই প্রকাশের সুযোগ লাভ করে মুসলমানরা। কিন্তু ততদিনে অনেক, অনেক দেরি হয়ে গেছে। এর মাত্র অর্ধশত বছরের মধ্যেই, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে অটোমান খিলাফত কার্যত বাতিল হয়ে যায় এবং মুসলিম রাষ্ট্রগুলো ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়।

যে কাগজ শিল্পকে আলিঙ্গনের মাধ্যমে মুসলমানরা একদিন নিজেদেরকে জ্ঞান-বিজ্ঞানের সকল শাখায় শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছিল, সেই কাগজেরই পরবর্তী প্রজন্মের প্রযুক্তি মুদ্রণযন্ত্রকে বর্জন করার কারণে তারা পিছিয়ে ছিটকে পড়েছিল আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের সবগুলো শাখা থেকে। একটা নতুন প্রযুক্তিকে গ্রহণ করার সিদ্ধান্তের জন্য ২৯০ বছর বিশাল একটা সময়। মুদ্রণযন্ত্রের মতো বৈপ্লবিক আবিষ্কারকে এত দীর্ঘ সময় দূরে সরিয়ে রাখার সিদ্ধান্তটি ছিল মুসলমানদের জন্য মারাত্মক ভুল একটি সিদ্ধান্ত, যে ভুলের খেসারত মুসলমানরা হয়তো দিয়ে চলছে আজও।

ফিচার ইমেজ- squarespace.com

Related Articles