Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

পাউলা হিটলার: বোন হিসেবে অ্যাডলফ হিটলারের বিপরীত ছিলেন যিনি

১৯৩০ সালের কথা, অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনার একটি বীমা কোম্পানির একজন নারী কর্মীকে ছাঁটাই করা হয় হঠাৎ করেই। প্রতিষ্ঠানটির অন্তঃপ্রাণ একজন কর্মী ছিলেন তিনি। কিছুতেই যেন সে বুঝতে পারছিলেন না হঠাৎ কী এমন ঘটে গেল যে, তাকে তড়িঘড়ি করে চাকরিচ্যুত করা হলো।

এই রহস্যের উত্তর অবশ্য লুকিয়ে আছে তার নামের শেষ অংশে। Hiedler- নামের বানানটি জার্মান ভাষায় অনেক ঐতিহ্যবাহী। এই নামের আরেকটি বানান রয়েছে, Hitler- যে নামটি ইতিহাসে আজও ঘৃণাভরে স্মরণ করা হয়।

কিন্তু পাউলা হিটলার তখনও জানতেন না, তার আপন ভাই ইতোমধ্যে দুনিয়ার চোখে একজন রাক্ষসে পরিণত হয়েছে। মূলত একনায়ক হিটলারের নামের সঙ্গে মিল থাকার কারণেই পাউলাকে চাকরিচ্যুত করা হয়।

পাউলা হিটলারের জন্ম ২৬ জানুয়ারি ১৮৯৬ সালে জার্মানির মধ্যবিত্ত একটি পরিবারে। সন্তানদের ভেতর পাউলা ছিলেন সবার ছোট। মাত্র ৬ বছর বয়সে তার বাবা এলোইস মারা গেলে পরিবারের সব দায়দায়িত্ব এসে পড়ে মা ক্লারা হিটলারের উপর।

স্বামীর মৃত্যুর পর ক্লারা পাউলা আর অ্যাডলফকে নিয়ে অস্ট্রিয়ার বাণিজ্যিক শহর লিঞ্জে চলে আসেন। এখানে ছোট একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া করে থাকতে শুরু করেন তারা। স্বামীর জমান পেনশনের টাকা দিয়ে ক্লারা কোনোমতে সংসার চালিয়ে নিচ্ছিলেন, নিজে কোনো চাকরি করতেন না।

 ক্লারা হিটলার; Image Source: scmp.vom

সন্তানদের দেখাশোনা করেই বাকি জীবন কাটিয়ে দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ক্লারা। বাবার মৃত্যুর পর পাউলা এবং অ্যাডলফ তাই মাকেই সবচেয়ে কাছে পেয়েছিল। কিন্তু কয়েক বছরের মাথায় তাদের শেষ আশ্রয়স্থলও তারা হারিয়ে ফেলে।

১৯০৬ সালে ক্লারা নিজের শরীরে ক্যান্সারের অস্তিত্ব খুঁজে পান। কিন্তু তিনি একে তেমন গুরুত্ব দেননি। তাদের পারিবারিক ডাক্তারও নিশ্চিত করেন ক্লারা আসলে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত। তারপর স্বামীর মৃত্যুর মাত্র ৫ বছরের মাথায় ক্লারাও মৃত্যুবরণ করেন।  

পাউলার বয়স তখন মাত্র ১১ বছর। মা মারা যাওয়ার পর ভাইয়ের কর্মকাণ্ড ছোট্ট পাউলা বুঝতে পারছিল না। ইতোমধ্যে হিটলার ভিয়েনা চলে গেলে পাউলা একা হয়ে যায়।

বাবার পেনশনের টাকা থেকে পাউলা খুব সামান্যই পেতেন। বাকি টাকা হিটলার নিজের কাছে রেখে দিত। ভাই-বোনের মাঝে যোগাযোগের একমাত্র উপায় ছিল চিঠি, কিন্তু পাউলা খুব কমই চিঠি লিখতেন ভাইয়ের কাছে। তিনি আসলে জানতেন না, বড় ভাই হিটলার তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে কী ভাবছে। অন্যদিকে হিটলার তখন অন্যকিছু নিয়ে ভাবছিল, অনেক বড় কিছু!

স্বরূপে একনায়ক অ্যাডলফ হিটলার; Image source: Daily Mail

পাউলা একসময় ভিয়েনায় যাওয়ার পরিকল্পনা করে। তাই ১৯২০ সালে সবকিছু নিয়ে তিনি ভিয়েনায় চলে যান। সেখানে গিয়ে তিনি ভাইয়ের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে ধারণা পান। হিটলার সেই সময় চিত্রশিল্পী এবং একজন জননেতা হওয়ার স্বপ্ন দেখছিল। এসব নিয়েই হিটলারের ব্যস্ত সময় কাটত।

অন্যদিকে পাউলা একদম নির্ভেজাল একটি জীবন চেয়েছিলেন। সেখানকার ধনী পরিবারগুলোতে গৃহকর্মীর কাজ শুরু করলেন তিনি। যার ধারাবাহিকতায় সেখানকার স্থানীয় জিউয়িশ ডরমিটরিতে কাজ করার সুযোগ হয় তার।

তবে গৃহকর্মীর কাজ বেশিদিন করেননি। এই কাজ ছেড়ে পাউলা বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ব্যক্তিগত সহকারীর চাকরিতে যোগ দিলেন। পুরো ভিয়েনার অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানে পাউলা সহকারী পদে কাজ করেছেন। একসময় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে ভিয়েনার একটি সামরিক হাসপাতালেও ব্যক্তিগত সহকারীর চাকরি করেন তিনি।

রাজনীতির প্রতি পাউলার তেমন কোনো আগ্রহ ছিল না, বিশেষ কোনো দলের প্রতিও সমর্থন ছিল না তার। জিউয়িশ ডরমিটরিতে কাজ করেছিলেন তিনি, কিন্তু সেখানকার বাসিন্দাদের প্রতি তিনি কোনোই ঘৃণা পোষণ করতেন না! তার ভাইয়ের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে পাউলার কোনো সক্রিয় সমর্থন ছিল না, এমনকি কখনও নাৎসি পার্টিতেও যোগ দেননি পাউলা।

পাউলা হিটলারের নাগাল খুব কমই পাওয়া গিয়েছে; Image Source: Deviant Art

তবে ২০০৫ সালে কয়েকজন গবেষক দাবি করেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুর দিকে পাউলা এবং এর্বিন জেকেলিয়াস নামক এক নাৎসি উচ্চপদস্থ অফিসারের মাঝে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। যে অফিসার যুদ্ধের সময়  ৪০০০ এর উপর মানুষকে গ্যাস চেম্বারে নির্যাতন করে হত্যা করেছিলেন বলে জানা যায়। কিন্তু তাদের প্রেমের সম্পর্ক বিয়ে পর্যন্ত গড়াতে পারেনি।

হিটলার জেকেলিয়াসের উপর কোনো একটি কারণে রাগান্বিত হয়ে তাকে দূরবর্তী একটি যুদ্ধক্ষেত্রে  পাঠিয়ে দেন। সেখানে জেকেলিয়াস সোভিয়েত সেনাদের হাতে ধরা পড়ে বন্দী হন। পরে সোভিয়েত ক্যাম্পেই তার মৃত্যু হয়।  

সত্যিকার অর্থে বোন হিসেবে পাউলা তার ভাইয়ের রাজনৈতিক অবস্থান ও কর্মকাণ্ড নিয়ে খুব সামান্যই ওয়াকিবহাল ছিলেন। তবে ১৯৪৬ সালের জুনে মার্কিন সেনাবাহিনীকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পাউলা দাবি করেন, তার ভাই কখনোই এতগুলো মানুষের মৃত্যুর কারণ হতে পারেন না! পাউলার কাছে এমন কর্মকাণ্ড শান্তশিষ্ট হিটলারের সঙ্গে মানানসই নয়!

পরবর্তীতে ২০০৫ সালের একটি জার্নালে দাবি করা হয়, হিটলারের বাবা যেমন তাদের মায়ের উপর নির্যাতন চালাত, হিটলারও তেমনি বোনের ওপর নির্যাতন করত। যদিও পাউলা বিষয়টিকে এভাবে দেখতে নারাজ। তার মতে, হিটলার তার সঙ্গে যা করেছিলেন সেটা তার ভালোর জন্যই।

সঙ্গে এ-ও জানা যায় যে, পাউলা চাকরি হারালে হিটলার নিয়মিত বোনের জন্য টাকা পাঠাতে শুরু করে এবং তার ওপর নজর রাখার ব্যবস্থা করে। হিটলার আত্মহত্যা করার আগপর্যন্ত বোনের জন্য যথেষ্টই সহানুভূতি দেখিয়েছিল।

বোনের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন হিটলার; Image Source: Biography

বিশ্বযুদ্ধের পরপরই আমেরিকান গোয়েন্দাদের হাতে বন্দি হন পাউলা। সেখানে তার কাছে হিটলার সম্পর্কে  জানতে চাওয়া হয়। পাউলা সেখানে দাবি করেন, গত এক দশক ধরে হিটলারের সঙ্গে তার প্রতি বছর দু’একবারই সরাসরি দেখা হয়েছে। তাছাড়া পত্র যোগাযোগও তাদের খুব একটা হয়নি।

বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে পাউলা ভিয়েনায় চলে আসেন এবং জমানো টাকা শেষ হওয়া পর্যন্ত সেখানেই থেকে যান। অবশেষে জীবিকার প্রয়োজনে পাউলা জার্মানির পাহাড়ি একটি এলাকায় চলে আসেন এবং একটি ক্রাফট-শপে চাকরি নেন।

অচেনা এই শহরে এসে পাউলা নিজের নাম বদলানোর প্রয়োজন অনুভব করেন। তাই এই শহরে পাউলা হিটলারের নাম হয়ে যায় পাউলা ওলফ। এই নামে তাকে হিটলার পরিবারের সদস্য হিসেবে কেউ সন্দেহ করবে না। মূলত ওলফ নামটি ছিল অ্যাডলফ হিটলারের ছোটবেলার ডাকনাম। যে মানুষটি পরবর্তীতে ‘ফ্যুয়েরার’ নামে পুরো বিশ্বের কাছে পরিচিতি পান।

পাউলা চাইছিলেন এই শহরে এসে তার অতীতকে ভুলে যেতে, যাতে মানুষ তার পরিচয় নিয়ে উঠেপড়ে না লাগে। সামাজিক কোনো অনুষ্ঠানেও পাউলার তেমন উপস্থিতি ছিল না। হয়তো ভাইয়ের কর্মকাণ্ডের জন্য পাউলা নিজের ভেতর অনুশোচনা লালন করতেন, যে কি না একজন দৈত্যে পরিণত হয়েছিল! কিংবা নিজের অগোছালো অতীত তাকে পীড়া দিত। সবকিছু থেকে গুটিয়ে নিয়ে তিনি নিজেকে একেবারে আড়ালে নিয়ে গেলেন, যেন তার কোনো অস্তিত্বই নেই।  

পাউলা হিটলার প্রথম কোনো টেলিভিশন সাক্ষাতকারে অংশ নেন ১৯৫৯ সালে। একজন ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত জার্মান সাংবাদিক পিটার মর্লি পাউলার সাক্ষাৎকার নেওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন। সেখানে তাকে একজন ভাই হিসেবে অ্যাডলফ হিটলারের সঙ্গে বেড়ে ওঠার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। তাছাড়া নিজের জীবনের নানা অজানা দিকও তুলে ধরেন পাউলা। যদিও হিটলারের রাজনৈতিক জীবন নির্ভর প্রশ্নগুলোর বেশিরভাগই এড়িয়ে গিয়েছেন তিনি। পিটার মর্লির মতে,

পাউলা পুরো সাক্ষাৎকারজুড়ে ভাইকে বাঁচানোর চেষ্টা করে গেছেন, হিটলারের জন্য বোন হিসেবে সর্বোচ্চ সম্মান বজায় ছিল তার। বরং হিটলার এমন নৃশংস হতে পারেন, সেটি তার কাছে কেমন যেন অবিশ্বাস্য মনে হয়!

পাউলা আরও যোগ করেন, হিটলার ছোটবেলা থেকেই নেতৃত্ব দিতে পছন্দ করত। তারা যখন রেড ইন্ডিয়ান সমবয়সী বাচ্চাদের সঙ্গে খেলত তারা, সবাই মিলে দলনেতার ভার হিটলারের হাতে তুলে দিত। তার মতে, অ্যাডলফ হিটলার হঠাৎ করেই নেতা বনে যায়নি, বরং হিটলার জন্ম থেকেই একজন নেতা।

 পাউলার একমাত্র টেলিভিশন সাক্ষাৎকারটি নেন পিটার মর্লি; Image Source:  Telegraph

এটাই ছিল টেলিভিশনে দেওয়া পাউলার প্রথম এবং সর্বশেষ কোনো কথোপকথন। ১৯৬০ সালে ৬৪ বছর বয়সে পাউলা হিটলার মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে মূলত হিটলার পরিবারের মূল বংশের ইতি ঘটে।

এখনো হিটলার পরিবারের অস্তিত্ব রয়েছে। কিন্তু এরা কেউই হিটলারদের সরাসরি বংশের প্রতিনিধিত্ব করেন না। অ্যাডলফ হিটলার যা করে গেছেন, সেটির জন্য পরোক্ষ বংশধরেরাও হয়তো কখনোই নিজেদের পরিচয় দিতে চাইবে না। তারা বরং নিজেদের জন্য আলাদা কোনো পরিচয় তৈরি করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে। এটাই হয়তো একজন হিটলারকে ঘৃণার জন্য যথেষ্ট হবে।   

This Bengali article is about Paula Hitler, younger sister of Adlof Hitler who lead a surprisingly quiet life.

Necessary sources are hyperlinked in the article.

Featured Image: thegloor.com

Related Articles