Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

তাস খেলার ইতিহাস: কীভাবে এলো হার্টস, ডায়মন্ড, স্পেইড আর ক্লাবস?

‘তাস’ শব্দটি শুনলেই কেন জানি হাতটা করে নিশপিশ আর মনটা হয় আনচান। এই অনুভূতি আমাদের অনেকেরই অনেকবার হয়েছে, যারা কখনো তাস খেলিনি, তাদেরও! তবে যারা এই খেলার সাথে মোটামুটিভাবে পরিচিত তাদের কাছে শব্দটির তাৎপর্য অন্য মাত্রার। ব্রিজ, ব্রে, টোয়েন্টি নাইন খেলতে না জানলেও রংমিলান্তি খেলতে পারে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। এখন তো আবার কম্পিউটারের সামনে বসলেই নেটবিহীন অবস্থায় কেউ সলিটেয়ার খুলে যখন তখন ঝালিয়ে নেয়া যায় তাস খেলা! মোবাইলেও আছে তাসের খেলার হরেক বাহার। শুধু কি আর খেলা? আছে তাস নিয়ে হরেক রকমের বাহারি জাদু। স্ট্রিট ম্যাজিকের অধিকাংশও তো তাস নিয়েই।

চিত্রঃ কার্ড নিয়ে স্ট্রিট শো

খেলার উপকরণের প্রাচুর্য না থাকার কারণেই বোধহয় এই খেলার জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী। কীইবা লাগে? হাতের কাছে এক প্যাকেট তাস থাকলেই তো হলো। রং-বেরঙের বাহারি বায়ান্নটি তাসের মধ্যে লুকিয়ে আছে যেন চমৎকার কিছু সময় কাটানোর ব্যবস্থা। মাঝে মাঝে তাই খুব জানতে ইচ্ছে হয়, কী করে এলো এই খেলা? কী করে এলো এই ‘রাজা’,’রানী’ আর ‘উজির’ বা ‘গোলামে’  ধারণা?

চিত্রঃ স্পেডের কয়েকটি তাস

তাস খেলার আবিষ্কারের দিকে নজর দিলে দেখা যায় প্রায় ছয়শত বছরেরও আগে পঞ্চদশ শতকে তাস খেলার উদ্ভাবন ঘটে। চীনে প্রথম এই খেলার প্রচলন শুরু হয় বলে ধারণা করা হয়। খ্রিস্টীয় নবম শতকের দিকে ‘শাং’ রাজবংশের প্রথম রাজা ‘টাং’ রাজার রাজত্বকালে অন্তঃপুরবাসী নারীরা তাস খেলে সময় কাটাতেন। তখন খেলার কার্ড হিসেবে পয়সা ও প্লেট ব্যবহার করা হতো।

চিত্রঃ চীন দেশের তাস

চীন থেকে তখন অনেকেই গাধা কিংবা হাতির পিঠে করে মালামাল বিভিন্ন দেশে নিয়ে যেত। বাণিজ্যিক কারণে যারা চীনে আসতো তাদের মাধ্যমে তাস খেলা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। মিশরের ‘মামলুক’ শাসকরা এ খেলার নাম দিয়েছিল ন্যাব, নাইবি অথবা নাইপ। খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ শতকে মামলুকরা প্রথম বায়ান্ন তাস দিয়ে এ খেলার প্রচলন করেছিল বলে জানা যায়। কিন্তু তাদের তাসের প্রতীকগুলো ছিল ভিন্ন ধরনের। তারা এক থেকে দশ নং কার্ডকে কোর্ট কার্ড হিসেবে ধরে ‘কিং’ ‘কুইন’ এবং ‘ভিজির’ চিহ্নিত কার্ড রাখত। ভিজির রুশ শব্দ যার অর্থ হল উজির। মামলুক সম্রাটের কোনো এক উজিরের নাম ছিল নাইয়িব। তিনি এ খেলার অনেক পৃষ্ঠপোষকতা করতেন বলে মিশরে ন্যাব, নাইবি অথবা নাইপ নামে এই খেলার প্রসার ঘটেছিল।

চিত্রঃ প্রাচীন একটি তাস

পঞ্চদশ শতাব্দীতে ইউরোপের দেশগুলোতে তাস খেলা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। আর সাথে সাথে শুরু হয় তাস নিয়ে জুয়া খেলার প্রচলন। এই জুয়া হয়ে ওঠে তখনকার সমাজে বিনোদনের অন্যতম একটি মাধ্যম। এরূপ জুয়া খেলার প্রসারের কারণে ইউরোপীয় সংস্কৃতি মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়ে। তখন ইউরোপীয় শাসকরা আইন করে তাস খেলা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। কিন্তু ইউরোপীয় শাসকদের নিষেধাজ্ঞা খুব বেশি একটা প্রভাব ফেলতে পারেনি সেই সময়। সাউথ আফ্রিকার ‘জোহানবার্গে’র প্রিন্টিং মেশিন আবিষ্কারের ফলে বিপুল পরিমাণে তাস ছাপা হয়। সেসব তাস ইউরোপীয় প্রত্যন্ত অঞ্চলে পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে খেলাটিকে আরো জনপ্রিয় করে তোলা হয়। তাই শেষ পর্যন্ত তাসের ওপর নিষেধাজ্ঞা আর ধোপে টেকেনি। ফলশ্রুতিতে ‘গ্যাম্বলিং’ বা ‘জুয়া’ খেলা অলিখিতভাবে এক ধরনের  স্বীকৃতি পেয়ে যায়।

চিত্রঃ জুয়া খেলায় তাস

ক্রমবর্ধমান সময়ের সাথে সাথে তাসের ইতিহাসের বিবর্তন ঘটতে থাকে। বিভিন্ন দেশে এই খেলার প্রচলন এবং প্রসার ঘটে সমাজ ও সংস্কৃতির ভিন্নতার আঙ্গিকে। ইতালি, স্পেন, জার্মান এবং ফ্রান্স তাস বিবর্তনের অগ্রদূত হিসেবে যোগ্য দাবিদার। ভিন্ন ভিন্ন দেশে ছবি বা প্রতীকের ভিন্নতা বহুলাংশে দৃশ্যমান। বর্তমানে আমরা যে তাস ব্যবহার করছি তা ফ্রান্সের তাসের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। ইংরেজিতে প্রতীকগুলোর নাম হল হার্টস, ডায়মন্ড, স্পেইড আর ক্লাবস। বাংলাতে নামগুলোর পরিবর্তিত রূপ হল হরতন, রুইতন,  ইশকাপন এবং চিরতন।

চিত্রঃ বিভিন্ন প্রতীকের তাস

ঊনবিংশ শতাব্দীর আগ পর্যন্ত এই খেলা রাজপরিবার এবং সৈন্য-সামন্তের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। তবে জার্মানির রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কার্ডের নামেও আসে পরিবর্তন। প্রথম দিকে তাসের প্যাকেটে ৭৮টি তাস থাকত। কিন্তু এতগুলো তাস নিয়ে খেলা জটিল ও কষ্টকর হয়ে ওঠায় তাসের সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়।

Caption

এবার আসা যাক তাসে ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রতীকের উৎপত্তির ব্যাপারে। তাসের চারটি প্রতীক পঞ্চদশ শতকের সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর পরিচয় বহন করে । আবার তাসের ছবিগুলোতে উপস্থাপিত হয়েছে ঐতিহাসিক নানা ব্যক্তিত্বের। প্রথমেই ধরা যাক ডায়মন্ডসের কথা। এটি মূলত ধনী শ্রেণীর প্রতীক। তখনকার সময়ে এরা ছিলো শাসক শ্রেণী। ডায়মন্ডস দিয়ে তাদের ধনদৌলত আর ঐশ্বর্যকে বোঝানো হতো। স্পেডস দিয়ে বোঝানো হতো সৈন্যের প্রতীক। স্পেড শব্দটি এসেছে স্প্যানিশ ‘স্পাডা’ থেকে যার অর্থ তরবারি। হার্টস প্রতীকটির আকার ছিল পান পাতার মতো। পরে ওটা হার্ট বা হৃৎপিণ্ডের আকার পায়। এটা মূলত তখনকার সময়ের পাদ্রীদের প্রতীক। পাদ্রীদের মন পবিত্র ধরে নিয়ে এই প্রতীকের আবির্ভাব। সর্বশেষে ‘ক্লাবস’ যা দ্বারা বোঝানো হতো গরিব মানুষদের। ইংরেজি ক্লাবসের বাংলা হলো ‘মুগুর’। “গরিব শ্রেণীর মানুষের মুগুরই সম্বল” এরকম একটা অর্থ বহন করে এই তাসটি।

Caption

বিভিন্ন প্রতীকের তাসের গায়ে আছে আবার রাজা, রানী এবং উজিরের ছবি। এদেরও রয়েছে অনেক ঐতিহাসিক চরিত্রের প্রতিফলন। এবার দেখব সেইসব চরিত্র যার উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে এই বহুল পরিচিত ছবিগুলো-

ইশকাপন বা স্পেড

রাজা ডেভিডকে কিং অফ স্পেডস বলা হয় যিনি ছিলেন দৈত্যাকৃতি ফিলিস্তাইন যোদ্ধা গোলিয়াথের হত্যাকারী। বাইবেল অনুযায়ী ডেভিড ছিলেন যিশু খ্রিস্টের পূর্বপুরুষ।  এই বিখ্যাত রাজা কখনোই কোনো আবেগের বশবর্তী হয়ে কোন সিদ্ধান্ত নিতেন না। তিনি সব সময় বিচার-বুদ্ধি দিয়ে বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করতেন। এই তাসের রানী হলেন গ্রিক যুদ্ধ দেবী প্যালাস, যিনি দুই হাতে ধরে আছেন তরবারি ও ফুল। জ্যাকের ছবিটি ফ্রান্সের একটি জনপ্রিয় কাব্যিক চরিত্র।

হার্টস বা হরতন

৮০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে বিখ্যাত রাজা শার্লেমেন বা চার্লস ইউরোপের প্রায় অর্ধেকের মতো জয় করে ফেলেন। তাসে এই রাজাকে দেখা যায় তলোয়ার নিজের মাথায় ঠেকিয়ে নিজেকে হত্যা করতে উদ্যত হয়েছেন। তাই অনেকে এই রাজাকে আত্মঘাতী রাজাও বলে থাকেন। আরও একটি মজার বিষয় হল তাসের রাজাদের মধ্যে একমাত্র হার্টসের রাজারই কোন গোঁফ নেই। হার্টসের জ্যাক হলো লা হিরে যিনি ফ্রান্সের সামরিক বাহিনীর সেনাপতি ছিলেন।

ডায়মন্ডস বা রুইতন

রাজা জুলিয়াস সিজারের নাম কে না শুনেছে? রোম সাম্রাজ্যের উত্থানে এই প্রভাবশালী শাসকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। কিং অব ডায়মন্ডস হলেন মূলত রোমের এই বিখ্যাত শাসক, রাজনীতিবিদ এবং সাহিত্যিক। তিনি খুবই দক্ষতার সাথে রোমের রাজনীতি দীর্ঘসময় ধরে নিয়ন্ত্রণ করে গেছেন। আরো একটি মজার বিষয় হলো, তাসের রাজাদের মধ্যে সব রাজারই মুখ স্পষ্ট দেখা গেলেও একমাত্র রুইতনের রাজারই মুখ অর্ধেক দেখা যায়। কুইন অব ডায়মন্ডস হলেন তারই স্ত্রী রাচেল। গ্রীক এবং রোমান পুরাণ অনুযায়ী “ট্রয়ের” বিখ্যাত যোদ্ধা ছিলেন হেক্টর আর তাকে স্মরণ করেই ডায়মন্ডসের জ্যাক।

ক্লাবস বা চিরতন

গ্রিসের মেসিডোনিয়ার সম্রাট আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের নাম শোনেননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়াও দুষ্কর। ৩২৩ খ্রিস্টপূর্বের দিকে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট পৃথিবীর প্রায় পুরোটাই দখল করে বসেন। আর কিং অব ক্লাবসের কিং হলেন এই দিগ্বিজয়ী রাজা। কুইন অব ক্লাবস হলেন একমাত্র ইংরেজ মহিলা যিনি আর কেউ নন ব্রিটিশ রানী প্রথম এলিজাবেথ। তার গোলাম হলেন রাউন্ড টেবিলের বিখ্যাত নাইট, স্যার ল্যান্স লট।

চিত্রঃ পূর্বে ব্যবহৃত তাসের বিভিন্ন প্রতীক

তাস নিয়ে খেলার সময় হয়তো এতো ধরনের কথা আমাদের মাথায় খেলে না। তাসেরও যে রয়েছে ইতিহাস সে সম্পর্কে জানা বা অজানা যাই হোক না কেন তাস খেলায় তেমন প্রভাব পড়ে বলে মনে হয় না। তা সত্ত্বেও এর কিছুটা যদি জানা থাকে সেটা বিশেষ মন্দ নয়, খেলতে খেলতে নাহয় এবার তাসের আড্ডা ভরে উঠুক ইতিহাসে!

 

This article is in Bangla language. It's about 

Featured Image:

Source:

১। https://en.wikipedia.org/wiki/Playing_card

২। https://bn.wikipedia.org/wiki/তাস

৩। http://houseofplayingcards.com/playing-card-history

৪। http://archive.samakal.net/তাসের ইতিহাস

৫। http://www.famousnews24.com/others/articles/তাসের চার রাজার কাহিনী

Related Articles