Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বর্তমানের কোন কোন দ্রব্য প্রাচীনকালেও ছিল?

বর্তমান যুগে প্রযুক্তির উৎকর্ষেয় এমন কোনো বিস্ময়কর জিনিস নেই, যা দেখা যায় না। তবে এ সবকিছুই কি শুধুমাত্র বর্তমান যুগের অবদান, নাকি পূর্বেও এগুলোর কিছু কিছু জিনিসের অস্তিত্ব ছিলো? চলুন কথা বলা যাক এই হেঁয়ালি নিয়ে।

কৃত্রিম সৌন্দর্যচর্চা ও প্লাস্টিক সার্জারি, খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ সাল

প্রাচীনকালেও রূপ-রঙের খুঁত ঢাকার জন্য বা সৌন্দর্যকে বাড়তিভাবে ফুটিয়ে তুলতে কম পদক্ষেপ নেয়া হতো না! আর তখনকার সেসব কৃত্রিম সৌন্দর্যচর্চা এবং প্লাস্টিক সার্জারিগুলো যে অসফল হতো, তা-ও কিন্তু নয়! উদাহরণ হিসেবে মিশরের কৃত্রিম পদাঙ্গুলির কথা বলা যায়, যেটি শুধু সৌন্দর্যই বাড়াতো তা নয়, বরং অনেক কার্যকরীও ছিলো। অন্য আরেকটি উদাহরণ হলো, প্রাচীন ভারতে খ্রিস্টপূর্ব ৮০০ সালে তারা কপাল বা গালের ত্বক ব্যবহার করে নাকের আকৃতি বিন্যাস করতে পারতো।

প্লাস্টিক সার্জারি হতো সেসময়েও!, Image Source: businessinsider.com

ড্রেন/নর্দমা ব্যবস্থা, খ্রিস্টপূর্ব ২৬০০ সাল

প্রাচীনকালে নর্দমা বা ড্রেন ব্যবস্থার সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতো সিন্ধু উপত্যকার সভ্যতায় থাকা অধিবাসীরা। পাকিস্তানের সিন্ধ রাজ্যের প্রত্নতাত্ত্বিক ভূমি মোহেনজো-দারোতে জনসাধারণের জন্য শৌচাগার ও ড্রেনের ব্যবস্থা ছিলো। এছাড়াও প্রাচীন ব্যাবিলন, কিছু কিছু চীনা শহর যেখানে এটিকে উপস্থাপন করা হয়েছিলো বিশাল এক প্রকৌশল প্রকল্প হিসেবে। আর সেই প্রকল্পের নাম ছিলো ‘ক্লোআকা ম্যাক্সিমা’ (সর্বাধিক নর্দমা), যার অস্তিত্ব আজ অবধি বিদ্যমান রয়েছে।

মোহেনজো-দারোতে জনসাধারণের জন্য শৌচাগার ও ড্রেনের ব্যবস্থা ছিলো, Image Source: Nehaber?

ব্যাটারি, খ্রিস্টপূর্ব ২৫০০ সাল

দ্য বাগদাদ ব্যাটারি হলো সিরামিকের একটি পাত্র, যার অভ্যন্তরে একটি তামার নলের সাথে রয়েছে একটি লোহার দণ্ড। এই ব্যাটারির অবিকল প্রতিরূপও যথার্থভাবে কিছুটা ভোল্টেজ উৎপন্ন করতে সক্ষম। সম্ভবত, প্রাচীন ব্যাবিলনের অধিবাসীরা গ্যালভানাইজিং পদ্ধতি সম্পর্কে জানত। আর সেই উদ্দেশ্যেই এই পাত্রগুলো ব্যবহার করা হতো। যদিও সন্দেহভাজনদের যুক্তি ছিল যে, তারা শুধুমাত্র গোটানো কাগজ বা পার্চমেন্টগুলো সংরক্ষণের জন্য কাজ করেছিল।

এই হলো সেই বাগদাদ ব্যাটারি, Image Source: Historias Reales

অগ্নিবর্ষক, খ্রিস্টপূর্ব ৪২০ সাল

ভয়ঙ্কর ও দুর্দান্ত এই অস্ত্রটির আদিরূপ সর্বপ্রথম ব্যবহার করা হয় ডেলিয়াম যুদ্ধের সময়কালে। প্রাচীন অগ্নিবর্ষক বা ‘গ্রিক ফায়ার’ মূলত ছিলো একটি তামার নল যা তরল জ্বলন্ত মিশ্রণ তৈরির প্রকল্প হিসেবে কাজে লাগানো হতো। সঙ্কুচিত বায়ু বা বড়সড় জাঁতা, যা পরিবেশন করা হতো স্থিতিস্থাপক শক্তি হিসেবে।

এটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করা হয় ডেলিয়াম যুদ্ধের সময়কালে, Image Source: ThatMedia

অ্যালার্ম ঘড়ি, খ্রিস্টপূর্ব ৪০০ সাল

গ্রীসের দার্শনিক প্লেটো এক ধরনের ওয়াটার ক্লক ব্যবহার করতেন যা একটি শব্দ সংকেত নির্গত করতো। এর মাধ্যমে তিনি জানতে পারতেন কখন তার পড়াতে যাবার সময় হয়েছে। পানির শক্তি দ্বারা চালিত এরকম অ্যালার্ম ঘড়িগুলো পরবর্তীতে আরও উন্নতরূপে ব্যবহৃত হতো প্রাচীন রোম ও মধ্যপ্রাচ্যে। যান্ত্রিক তাড়নায় চালিত ঘড়ি যেগুলো দিনের নির্দিষ্ট একটি সময়ে বেজে উঠতো সেগুলোর প্রথম দেখা মেলে চীনে। আর সেটা অষ্টম খ্রিস্টাব্দের কথা! এরপর সেগুলো ধীরে ধীরে চৌদ্দ শতকের দিকে জায়গা করে নেয় ইউরোপীয় অঞ্চলগুলোতে।

গ্রীসের দার্শনিক প্লেটো এক ধরনের ওয়াটার ক্লক ব্যবহার করতেন, Image Source: ThatMedia

রোবট/যন্ত্রমানব, খ্রিস্টপূর্ব ৩২৩ সাল

এককালে রোবট বা যন্ত্রমানবগুলো ছিলো মূলত নারীর গড়ন, আকার-আকৃতিতে উন্নতরুপে প্রস্তুতকৃত, যেগুলো ফারাওদের দ্বীপের বাতিঘরে দেখা যেতো। নিয়মিত নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর তারা পর্যায়ক্রমে ঘণ্টা বাজাতো। রাতের বেলায় তারা জোরে শব্দ করে ভেঁপু বাজাতো। এর মূল উদ্দেশ্য ছিলো নাবিকদের তীর বা কূলের নৈকট্য সম্পর্কে ধারণা দেয়া। এরও অনেক সময় পর, ১৭-১৮ শতকের দিকে পশ্চিম ইউরোপে ‘অটোমেশন’ নামের যন্ত্র বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে। এগুলো আসলে ঘটিকাযন্ত্র কলের প্রক্রিয়ার মতো, যেগুলো দেখতে মানুষ বা পশুর মতো ছিলো এবং এগুলোর ছিলো বিভিন্ন ধরনের কাজ করার সক্ষমতা!

Image Source: Caak.mn

স্বয়ংক্রিয় দরজা, প্রথম শতাব্দী

সে সময়টাতে প্রাচীন গ্রীসে স্বয়ংক্রিয় দরজা সুপরিচিতই ছিলো বলা যায়। সে সময়ে এই দরজাগুলো চালানো হতো ‘হিরোজ ইয়োলিপাইল’ বা ‘হিরোজ ইঞ্জিন’ দিয়ে। আর এই ইয়োলিপাইলই হলো বাষ্পীয় ইঞ্জিনের আদিরূপ। বেদির ওপর আগুন ধরিয়ে তার নিচে পানি ভর্তি পাইপ ধামাচাপা দিয়ে রাখা হতো। আর বাষ্প প্রতিবন্ধক পদ্ধতিকে সক্রিয় করে দরজার সাথে সংযুক্ত করতো। এই পুরো বিষয়টিই একটি মায়া সৃষ্টি করতো যার সুযোগটা ছিলো শুধুমাত্র ধর্মযাজকদের জন্য।

বেদির ওপর আগুন ধরিয়ে তার নিচে পানি ভর্তি পাইপ ধামাচাপা দিয়ে রাখা হতো, Image Source: Nehaber?

ভেন্ডিং মেশিন, প্রথম শতক

ভেন্ডিং মেশিন বা টুকিটাকি জিনিস খুচরা বিক্রির স্বয়ংক্রিয় মেশিনের মাধ্যমে বর্তমান যুগে এমন কোনো জিনিস নেই যা কেনা যায় না। তবে পূর্বে, সম্রাট আলেকজান্ডারের যুগে মানুষজন শুধুমাত্র মন্দিরে নিজেদের হাত ধোয়ার জন্য তাদের কাছে থেকে পবিত্র পানি কিনতে পারতেন। সেই যন্ত্রটিতে একটি মুদ্রা জমা দিলে সেখানে একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কার্যকলাপ শুরু হতো। আর এর মাধ্যমেই সেই ভেন্ডিং মেশিন থেকে ক্রেতারা পানি নিতে পারতেন।

মুদ্রা জমা দিলে সেখানে একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কার্যকলাপ শুরু হতো, Image Source: ThatMedia

রোদ চশমা, দশম শতাব্দী

ধারণা করা হয়, এই বস্তুটি উদ্ভাবন করে ইনুইত গোষ্ঠী (এরা আর্কটিক অঞ্চল; গ্রিনল্যান্ড, কানাডা ও আলাস্কায় বসবাসকারী সম সংস্কৃতিমনা আদিবাসী গোষ্ঠী)। মূলত তারা তাদের চোখকে ‘তুষার অন্ধত্ব’ থেকে রক্ষা করার জন্য সেই বস্তুটি ব্যবহার করতো। তাদের সেই রোদ চশমাগুলো কিন্তু প্রকৃত কাঁচের তৈরি ছিলো না। সেগুলো সিন্ধুঘোটকের দাঁত থেকে তৈরি কালো বা রঙিন চশমা, যেগুলো ছিলো সরু এবং লম্বালম্বিভাবে কাটা। গ্লাস সহকারে প্রথম রোদ চশমা (প্রকৃতপক্ষে ধোঁয়াটে স্ফটিক) পরবর্তীতে বারো শতাব্দীতে চায়নায় দেখা যায়। এগুলো সূর্যের আলো থেকে চোখকে রক্ষা করার চেয়ে পরিধানকারীর মুখভঙ্গি আড়াল করা বা লুকিয়ে রাখার জন্য বেশি ব্যবহার করা হতো।

মূলত চোখকে ‘তুষার অন্ধত্ব’ থেকে রক্ষা করার জন্য ব্যবহার করতো; Image Source: Ofpof

কম্পিউটার, খ্রিষ্টপূর্ব ১০০ সাল

দ্য ‘অ্যান্টিকিথেরা মেকানিজম’-কে (প্রাচীন গ্রীসের এনালগ কম্পিউটার) বিবেচনা করা হয় ‘প্রাচীন কম্পিউটার’ হিসেবে। প্রাচীনকালের সেই কম্পিউটারটি মহাজাগতিক তারকামণ্ডলীর গতিপথ চিহ্নিত করতে পারতো। এছাড়াও এটি সৌর এবং চন্দ্রগ্রহণ অনুমান করতেও সক্ষম ছিলো। অলিম্পিক গেমস শুরু হওয়ার সময়ও এর মাধ্যমে বের করা হতো। ছবিতে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার কেন্দ্রস্তম্ভে থাকা মেয়েটি যে জিনিসটি হাতে নিয়ে আছে, সেটি বর্তমান যুগের ল্যাপটপের মতো দেখতে। এই বস্তুটি বিভিন্ন ষড়যন্ত্র তত্ত্বের ইন্ধন হিসেবে ব্যাপকভাবে কাজ করেছে। অবশ্যই খ্রিস্টপূর্ব ১০০ সালে কোনো ল্যাপটপ ছিলো না। সেই বস্তুটি সম্ভবত সামান্য একটি গয়নার বাক্স বা মোমের চাকতি।

মেয়েটির হাতের বস্তুটি বর্তমান যুগের ল্যাপটপের মতো দেখতে; Image Source: indianexpress.com

প্রাচীন স্পেসস্যুট

স্পেনের উত্তর-পশ্চিমের শহর সালামানকার তিনশো বছরের পুরনো নিউ ক্যাথেড্রালের বহির্ভাগে সাজানো মহাকাশ অভিযাত্রীটি বেশ কৌতূহলোদ্দীপক! এটি দেখেই চট করে মাথায় খেয়াল আসতে পারে যে, সত্যিই কি আমাদের পূর্বপুরুষেরা মহাকাশ যাত্রায় যেতেন এবং আদৌ কি ভিনগ্রহী প্রাণীদের সাথে তাদের কোনো সংযোগ ছিলো কিনা! আসলে মহাকাশ অভিযাত্রীর এই মূর্ত প্রতীকটি ১৯৯২ সালে ক্যাথেড্রাল পুনরায় প্রতিষ্ঠা করার সময় স্থাপন করা হয়েছিলো। এটি ছিলো কেবল কোনো ব্যক্তির ঠাট্টা-বিদ্রুপের বহিঃপ্রকাশ। ঠিক যেমনটি আরেক প্রতীক ফনকে (রোমান পুরাণে বর্ণিত ছাগলের শিং ও লেজযুক্ত গ্রাম্য দেবতা) দেখা যায় আইসক্রিম হাতে।

নিউ ক্যাথেড্রালের বহির্ভাগে সাজানো মহাকাশ অভিযাত্রী; Image Source: Ofpof

ফিচার ইমেজ- Tutt’Art

Related Articles