Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

শিল্পের বিকাশ পূর্ববর্তী যুগে ক্যান্সারের প্রকোপ কতটা ছিল?

ক্যান্সার শব্দটি ইদানীং এত বেশি শোনা যাচ্ছে যে বিষয়টি আমাদের কাছে অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। একসময় অন্য কারো পরিবার, অনেক দূরের সম্পর্কের কারো ক্যান্সার হয়েছে এটা শোনা যেত। এখন নিজেদের ঘরেই, নিজের বন্ধুবান্ধব, নিজেরই ক্যান্সার হচ্ছে। ক্যান্সারের কারণ নানা কিছু হতে পারে। তবে আজ যে বিষয় নিয়ে আলোচনা করব সেটি হচ্ছে শিল্পায়নের সাথে ক্যান্সারের প্রকোপের সম্পর্ক আছে কি না?

গবেষণা বলছে, বর্তমানে ব্রিটিশদের অর্ধেকেরও বেশি জনসংখ্যা তাদের জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে অন্তত একবার ক্যান্সারের পরীক্ষা করাচ্ছেন। খুব বেশিদিন হয়নি, এটাই প্রমাণিত সত্য ছিল যে, শিল্পায়ন পূর্ববর্তী যুগে ব্রিটেনের মাত্র ১% অধিবাসীর ক্যান্সার ছিল। তবে সাম্প্রতিক কিছু গবেষণায় কিছুটা ভিন্ন তথ্য মিলছে।

চলতি বছরের মে মাসে অ্যামেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির বিজ্ঞান সাময়িকী ক্যান্সারে এই সম্পর্কিত একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল ক্যান্সারের গতিবিধি এবং প্রকোপের সাথে শিল্পায়ন সত্যিই কতটা জড়িত সেই সম্পর্কে আলোকপাত করা। মানুষের অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, অলস জীবনযাপন, শিল্পায়ন, পরিবেশ দূষণ, জেনেটিক্সসহ নানাবিধ কারণেই যেহেতু ক্যান্সারের হার ক্রমশ বেড়েই চলেছে, তাই শিল্পায়ন পূর্ববর্তী যুগ থেকে আজকের সময় পর্যন্ত ক্যান্সারের প্রাদুর্ভাবের ধারাবাহিকতা কিংবা বিন্যাস কেমন ছিল সেটা জানা জরুরি।

এতে করে ভবিষ্যতে ক্যান্সারের ব্যপকতা সম্পর্কে আরও সুস্পষ্ট এবং যৌক্তিক ধারণা লাভ করা সম্ভব হবে। এই গবেষণাকর্মের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক ছিল যে শিল্পায়ন পূর্ববর্তী যুগের মানুষের মাঝে ক্যান্সারের প্রকোপ নিয়ে এতটা ব্যাপক আকারের কাজ এটাই প্রথম। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, শিল্পায়নের আগে মানুষের বসবাসের ধরন যেমন ছিল তাতে পরবর্তীতে বড় ধরনের একটি পরিবর্তন নিয়ে আসে তামাক ও তামাকজাত দ্রব্যাদির ব্যবহার। ব্রিটেনে ষোড়শ শতাব্দীর দিকে তামাক সেবন শুরু হয় এবং অষ্টাদশ শতাব্দীর সূচনালগ্নে শিল্পায়নভিত্তিক পরিবেশ দূষণ আরম্ভ হয়।

কেমব্রিজ ও নিকটবর্তী এলাকার ৬টি সমাধিক্ষেত্র থেকে সংগ্রহ করা হয় কঙ্কাল; Image Source: nationalgeographic.com

ইউনিভার্সিটি অব কেমব্রিজের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মিচেলের নেতৃত্বে গবেষক দলটি মোট ১৪৩টি কঙ্কালের নমুনা বিশ্লেষণ করে। এই সবগুলো কঙ্কালই কেমব্রিজের নিকটবর্তী ৬টি সমাধিক্ষেত্র থেকে সংগ্রহ করা হয় এবং এদের জীবদ্দশা ছিল ষষ্ঠ থেকে ষোড়শ শতাব্দীর মাঝে। প্রাথমিকভাবে নমুনাগুলোকে খালি চোখে পরীক্ষার পর প্লেইন রেডিওগ্রাফ ও কম্পিউটেড টমোগ্রাফি স্ক্যানের মাধ্যমে ক্যান্সারের উপস্থিতি নির্দেশক লেশন আছে কি না তা বিশ্লেষণ করে দেখা হয়।

শিল্পায়ন পূর্ববর্তী যুগের কঙ্কালেও পাওয়া গেছে ক্যান্সারের উপস্থিতি; Image Source: nationalgeographic.com

সংগৃহীত মোট ১৪৩টি নমুনার মাঝে হাড়ে মেটাস্টেসিসের (ক্যান্সারের ছড়িয়ে পড়া) উপস্থিতি ছিল ৩.৫%, অর্থাৎ সংখ্যার হিসেবে মোট ৫টি নমুনায় ক্যান্সারের অস্তিত্ব ছিল। এই ফলাফল থেকে ধারণা করা যেতে পারে যে, তৎকালীন ব্রিটেনে সব ধরনের ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর হার ছিল ৯%-১৪%, যা ইতোপূর্বে প্রচলিত সত্যের চেয়ে (১%) বহুলাংশে আলাদা। মধ্যযুগীয় ব্রিটেনের অধিবাসীদের উপর করা এই কাজ এই সম্পর্কিত গবেষণায় এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন করেছে। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, বর্তমান ব্রিটেনের সাথে তুলনা করলে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে, মধ্যযুগীয় ব্রিটেনে ক্যান্সারের প্রাদুর্ভাব প্রায় ২৫% সাধারণ ছিল। অর্থাৎ, এতদিন যা ধারণা করা হয়েছিল তার চেয়ে ক্যান্সারের প্রকোপ যথেষ্ট বেশি ছিল।

প্যালিওপ্যাথোলজি (আদিম মানুষের মাঝে রোগশোকের উপস্থিতি সম্পর্কিত বিদ্যা) গবেষণায় এই কাজ সন্দেহাতীতভাবে অনবদ্য এক সংযোজন। তবে অন্যান্য সকল গবেষণাকর্মের মতো এটাও সীমাবদ্ধতার ঊর্ধ্বে নয়। ক্যান্সার নির্ণয়ের ক্ষেত্রে কেবল সিটি স্ক্যান কিংবা এক্সরেই শতভাগ সঠিক ফলাফল দেয় না- সেজন্য দরকার পড়ে রক্ত পরীক্ষার। রক্তে বিভিন্ন বায়োমার্কারের (ক্যান্সার নির্দেশক উপাদান) উপস্থিতির উপর নির্ভর করে আরও জোর দিয়ে বলা যায় যে ক্যান্সার ছিল কি না। লক্ষ্যণীয়, মিচেল ও তার গবেষক দলের কাজে শুধু ইমেজিং প্রযুক্তির (সিটি স্ক্যান ও এক্সরে) ব্যবহার হয়েছে। এই দুটি প্রযুক্তির সাহায্যে হাড়ের মাঝে মেটাস্টেসিস সম্পর্কে মন্তব্য করা গেলেও যেহেতু কঙ্কালের রক্ত পাওয়া সম্ভব নয়, তাই সংগৃহীত নমুনাসমূহে সব ধরনের ক্যান্সারের প্রকোপ ছিল কি না এবং থাকলে সেটা কতটা সে সম্পর্কে আপাতত কোনো উপসংহারে পৌঁছানো যাচ্ছে না।

তীরচিহ্নিত অংশে রয়েছে ক্যান্সারের উপস্থিতি; Image Source: nationalgeographic.com

স্বীকার্য যে, বর্তমানে পরিবেশ দূষণ ও অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা ক্যান্সারের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ার পেছনে যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে। তাহলে প্রশ্ন এসেই যায় যে, শিল্পায়নের আগে অর্থাৎ পরিবেশ দূষণ যখন অত্যধিক মাত্রায় শুরু হয়নি কিংবা মানুষের জীবনধারাও তুলনামূলক স্বাস্থ্যকর ছিল, তখন কেন ক্যান্সারের প্রকোপ এত বেশি ছিল? শিল্পায়নের আগে পরিবেশ দূষণ আজকের মতো এতটা ব্যাপক ছিল না, তবে দূষণ ঠিকই হতো- ভিন্নভাবে। ঘরের অভ্যন্তরে কাঠ এবং কয়লার দহনে যে ধোঁয়া হতো এবং কণাগুলো (particulate) ছড়িয়ে পড়ত, সেগুলোও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ছিল। শিল্পায়ন পূর্ববর্তী যুগেও ব্রিটিশরা মদপান করত। এই যে ধারা (trend) চালু ছিল, সেটাকে আরো উস্কে দেয় তামাকের অনুপ্রবেশ এবং শিল্পকারখানার অবারিত প্রসার।

এরপর যে প্রশ্ন আসে তা হচ্ছে ক্যান্সার গবেষণায় এই কাজ কেন অনন্য? একটি কাল্পনিক বাস্তবতার কথা ভাবা যাক। আলোচনার খাতিরে ধরে নেওয়া যাক এই কাজ গবেষকরা করেননি। তাহলে আমাদের হাতে কী কী তথ্য থাকছে? শুধু বর্তমানের তথ্য, তাই তো? অন্যভাবে বলতে হলে, আমাদের কাছে ক্যান্সারের প্রাদুর্ভাব সম্পর্কিত তথ্যগুলো তখনকারই যখন শিল্পায়ন ক্রমবিকাশমান। তাহলে কী দাঁড়াচ্ছে? শিল্পায়ন বা আরও সুনির্দিষ্টভাবে বললে তামাক ও তামাকজাত দ্রব্যাদি, অ্যালকোহল, যানবাহনের কালো ধোঁয়া, কলকারখানার বর্জ্য পদার্থ ইত্যাদির ক্রমবর্ধমান ব্যবহার কিংবা নিঃসরণ ক্যান্সারের প্রকোপকে কতটা বিবর্ধিত করে দিয়েছে, সেটার চালচিত্র আমাদের কাছে থাকছে না। শিল্পায়ন পূর্ববর্তী যুগ এবং শিল্পায়ন পরবর্তী- এই দুয়ের মাঝের যে অন্তর্বর্তীকালীন সময়, সে সময়ের পরিসংখ্যান আমাদের কাছে থাকলে কেবল তখনই আমাদের পক্ষে সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে একটি গঠনমূলক মন্তব্য করা সম্ভব হবে। এই দুটি যুগের তুলনামূলক যে চিত্র, সেটাকে অধিকতর নিরপেক্ষ ও যথাযথ করতে পারাই এই গবেষণার সবচেয়ে বড় অবদান।

Image courtesy: Wikimedia Commons

 

গবেষণাটির আরও একটি অবদান হচ্ছে- এটি গবেষক এবং চিকিৎসকদের একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ করতে সক্ষম করে তুলবে। শিল্পায়নভিত্তিক দূষণ (যানবাহন, কারখানার ধোঁয়া, বর্জ্য, তামাক), শিল্পায়নের সাথে সম্পর্কিত নয় এমন দূষণ (সীসা, গৃহস্থালির ধোঁয়া, বিভিন্ন অণুজীব, সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি) ইত্যাদি সম্পর্কে পৃথকভাবে মন্তব্য করা বর্তমানে সম্ভব হবে, কেননা এখন শিল্পায়নের বিকাশ পরবর্তী চিত্রের পাশাপাশি শিল্পায়নের আগের বাস্তবতাও গবেষকদের কাছে বর্তমান। এতে যে সুবিধা হবে তা হলো- ক্যান্সারের প্রকোপ বৃদ্ধিতে কোন প্যারামিটারের ভূমিকা সুনির্দিষ্টভাবে কত, সেটি বোঝা যাবে এবং সেই অনুযায়ী নীতি নির্ধারকদের কাছে চিকিৎসক, গবেষকরা বিভিন্ন প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করতে পারবেন।

দূষণই ক্যান্সারের একমাত্র কারণ তা নয়। শিল্পায়নের দরুন বৃদ্ধিপ্রাপ্ত দূষণ নানাভাবে ক্যান্সারের হারকে বাড়িয়ে দিয়েছে, তবে পৃথিবী দূষণমুক্ত হলেই ক্যান্সারমুক্ত হবে না। বয়স, লিঙ্গ, মিউটেশন, এপিজেনেটিক্স নানাভাবে ক্যান্সারের জন্য দায়ী। তবে এসব নিয়ে যেহেতু ইতোমধ্যে নানা ধরনের পরীক্ষা চলছে, তাই এর পাশাপাশি প্যালিওপ্যাথোলজি ও বায়োআর্কিওলজি সম্পর্কিত গবেষণাগুলো ক্যান্সার গবেষণায় নতুন মাত্রা যোগ করবে নিঃসন্দেহে।

This article is in Bangla. This article is about the existence of cancer in pre-industrial Europe. All the references are hyperlinked within the article.

Feature Image: Bayer Pharmaceuticals

Related Articles