Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বিশ্বের ইতিহাস পাল্টে দেয়া কয়েকটি গণ আন্দোলন

ইতিহাস সাক্ষী দেয় যে, আন্দোলন-সংগ্রাম ছাড়া শোষিতের আর্তনাদ কখনো থামেনি। এ যেন শোষক এবং শোষিতের সম্পর্ক একই বৃন্তে দুটি কুসুম। বলা হয়, অধিকার এমনি এমনি আসে না, অধিকার আদায় করে নিতে হয়। অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে কেউ কেউ সানন্দে নিজের জীবন বিলিয়ে দেয়, আবার কখনো বা অন্যের জীবন কেড়েও নেয়। ইতিহাসের পাতায় চোখ রাখলেই দেখা যায় সেই অধিকার আদায়ের কতই না বিচিত্র প্রক্রিয়া। কখনো কখনো প্রতিবাদ এতই ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে যে, পাল্টে দেয় একটি দেশের মানচিত্র, বিপ্লব ঘটায় সমাজব্যবস্থায়; প্রভাব বিস্তার করে পুরো বিশ্বে। আমরা আজকে জানব, বিশ্বের এমন ১০টি আন্দোলনের কথা, যা কাঁপিয়ে দিয়েছিল গোটা পৃথিবীকে।

প্রোটেস্ট্যান্ট সংস্কার আন্দোলন, ১৫১৭ 

প্রোটেস্ট্যান্ট সংস্কার একটি ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলন, যা ষোড়শ দশকে পুরো ইউরোপ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে খ্রিস্টধর্মের একটি শাখা তৈরি হয় যার নাম প্রোটেস্ট্যান্টিজম। এটি একটি ধর্মীয় গোষ্ঠী যারা রোমান ক্যাথলিক চার্চ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার জন্য সম্মিলিত হয়।

প্রোটেস্ট্যান্ট সংস্কার আন্দোলনের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছিল পুরো ইউরোপে; Image Source: IECN

জার্মানির উইটেনবার্গে প্রটেস্ট্যান্ট সংস্কার আন্দোলনটি শুরু হয় ১৫১৭ সালের ৩১ অক্টোবর। জার্মান ধর্মযাজক মার্টিন লুথার রচিত একটি দলিল প্রকাশ করেন যেটি ‘ডিসপুটেশন অন দ্য পাওয়ার অফ ইনডালজেন্স’ বা ‘৯৫ থিসিস’ নামে পরিচিত। নথিটি ছিল খ্রিস্টধর্ম সম্পর্কে ৯৫টি ধারণার একটি ধারাবাহিক। এই ধারণাগুলো বিতর্কিত ছিল কারণ তারা ক্যাথলিক চার্চের শিক্ষার সরাসরি বিরোধিতা করেছিলেন। অবশেষে ত্রিশ বছরব্যাপী বিতর্ক শেষে ১৬৪৮ সালে ওয়েস্টফ্যালিয়া শান্তিচুক্তির মধ্য দিয়ে প্রোটেস্ট্যান্ট আন্দোলনের সমাপ্তি হয়।

বোস্টন টি পার্টি, ১৭৭৩

নামটি বোস্টন টি পার্টি হলেও এটি কোনো উৎসব বা পার্টি ছিল না, এটি একটি আন্দোলন যেটির দাবানল আমেরিকার স্বাধীনতার সূচনা করে। সংঘটনের বছর ১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দ। তখনো আমেরিকার অঙ্গরাজ্যগুলো পুরোপুরি ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক। আমেরিকায় চায়ের চাহিদা ছিল তখন ব্যাপক। এমন বিশাল বাজারে ব্রিটিশদের কর্তৃত্ব আরো বেড়ে যায় যখন ব্রিটিশ আইনে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে বিশ্বব্যাপী শুল্কমুক্ত চা বাণিজ্য করার একচেটিয়া অধিকার দেওয়া হয়। আবার যখন আমেরিকার চা-ব্যবসায়ীরা তাদের কাছ থেকে চা কিনতে চাইত তখন ঠিকই কর প্রদান করতে হতো। কিন্তু আমেরিকান চা-ব্যবসায়ীরা এই কর দিতে নারাজ ছিল এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে বর্জন করে।

কর আরোপের প্রতিবাদে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির চা নদীতে ফেলে দিচ্ছে আমেরিকানরা; Image Source: All things liberty

ব্রিটিশ বণিকদের বর্জন করা সত্ত্বেও কর আদায় করতে চা বোঝাই করা ব্রিটিশ জাহাজগুলো বোস্টন বন্দরে ভিড়তে থাকে। এর প্রতিবাদে আমেরিকার চা ব্যবসায়ীরা গোপনে তিনটি ব্রিটিশ জাহাজে উঠে প্রায় ৪৫ টন চা নদীতে ফেলে দেয়। এই প্রতিবাদের আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল নিউইয়র্ক পর্যন্ত। বোস্টন টি পার্টির চার বছর পর আমেরিকা তাদের স্বাধীনতা ঘোষণা করে। মূলত এমন অপ্রচলিত প্রতিবাদই আমেরিকায় স্বাধীনতার সূচনা করে। 

বাস্তিল দুর্গের পতন, ১৭৮৯

ফ্রান্সের পূর্বপ্রান্তে অবস্থিত বাস্তিল দুর্গটি বোরবো রাজবংশের স্বৈরতন্ত্রের প্রতীক হিসেবে পরিচিত। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষার্ধে ফ্রান্সে ব্যাপক খাদ্যাভাব দেখা দেয়। মানুষ খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করতে শুরু করে। এদিকে ফ্রান্সের ৯৫ শতাংশ সম্পদ কুক্ষিগত ছিল ৫ শতাংশ মানুষের হাতে। অথচ তারা কোনোরকম রাষ্ট্রীয় কর প্রদান করতো না। পক্ষান্তরে কর প্রদান করতে হতো ৫ শতাংশের মালিকানা থাকা বাকি ৯৫ শতাংশ জনগণকে। যারা কর দিতে পারতো না বা প্রতিবাদ করত তাদেরকে এই বাস্তিল দুর্গে নিক্ষেপ করা হতো। এখানে একবার কেউ ঢুকলে মৃত্যু তার অনিবার্য ছিল।

এরকম অবস্থা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছালে ১৭৮৯ সালের ১৪ জুলাই ফ্রান্সের বিক্ষুব্ধ বুর্জোয়া শ্রেণি, নির্বাচিত প্রতিনিধি ও রক্ষীবাহিনীসহ বিপুল সংখ্যক মানুষ বাস্তিল দুর্গ অভিমুখে রওনা হয়। তারা প্রথমে আলোচনা ও ৭ জন রাজবন্দীকে মুক্তির প্রস্তাব দিলেও দুর্গ প্রধান তাতে রাজি হননি। অতঃপর বিক্ষুব্ধ বিপুল সংখ্যক জনতা বাস্তিল দুর্গ হামলা করতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। দুর্গের সৈন্য ও বিপ্লবীদের পরস্পর হামলায় প্রায় দুই শতাধিক মানুষ হতাহত হয় এবং অবশেষে বাস্তিল দুর্গ ধ্বংস করতে সক্ষম হয়। স্বৈরতন্ত্রের প্রতীক বাস্তিল দুর্গের পতনের মধ্য দিয়ে শিথিল হয় রাজতন্ত্র এবং ফ্রান্সে উদ্ভব ঘটে গণতন্ত্রের। এই দিনটিকে ফ্রান্সের জাতীয় দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়।

৭. মহাত্মা গান্ধীর লবণ সত্যাগ্রহ, ১৯৩০

ঔপনিবেশিক ভারতবর্ষে ব্রিটিশদের একচেটিয়া লবণ নীতিতে কর-প্রদান বিরোধী অহিংস আন্দোলন ছিল মহাত্মা গান্ধীর লবণ সত্যাগ্রহ। এর প্রতিবাদে তিনি নিজের লবণ সংগ্রহের জন্য ভারত মহাসাগর উপকূলের উদ্দেশ্যে পায়ে হেঁটে ২৪ দিনে ২৪১ মাইল পথ যাত্রা করেন। এতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিপুল সংখ্যক মানুষ স্বেচ্ছায় যোগ দেয় গান্ধীজির সাথে। লবণ মিছিলে অংশ নেওয়ায় গান্ধীজীসহ ৬০,০০০-এরও বেশি লোককে কারারুদ্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু ব্রিটিশ সরকার বুঝতে পেরেছিল যে, এই ধরনের প্রতিবাদের সামনে ব্রিটিশ আইন দাঁড়াতে পারবে না। তাই অবশেষে ভাইসরয় ৯ মাসের মধ্যে সমস্ত বন্দীদের মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। যদিও এটি শেষ পর্যন্ত ব্রিটিশদের স্বার্থের পরিবর্তে ভারতীয়দের প্রতি বিশ্ব সহানুভূতির জোয়ারকে পরিণত করেছিল।

গান্ধীজী নিজের লবণ সংগ্রহের জন্য ভারত মহাসাগর উপকূলে যাত্রা; Image source: Salt March 90th Anniversary exibition

এই অহিংস প্রতিবাদের ফলে লবণের উপর ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের একচেটিয়া নীতির বিলোপ ঘটে এবং ভারতে ব্রিটিশদের কর্তৃত্ব দুর্বল হয়। যেভাবে বোস্টন টি-পার্টি উপনিবেশগুলোর স্বাধীনতার সূচনা করেছিল, ঠিক সেভাবেই ভারতেও পরাধীনতার শেকল ভাঙার সূচনালগ্নে লবণ সত্যাগ্রহ আন্দোলন বড়সড় ভূমিকা রেখেছিল।

মার্চ অন ওয়াশিংটন, ১৯৬৩

২৮ আগষ্ট, ১৯৬৩ সালে জাতিগত বৈষম্যের প্রতিবাদ করার জন্য এবং কংগ্রেসে মুলতুবি থাকা নাগরিক অধিকার আইনের প্রতি সমর্থনে ওয়াশিংটন ডিসিতে একটি বিশাল রাজনৈতিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এটিই ইতিহাসে ‘ওয়াশিংটন মার্চ’ বা ‘মার্চ অন ওয়াশিংটন’ নামে পরিচিত। এর উদ্দেশ্য ছিল আফ্রিকান আমেরিকানদের নাগরিক ও অর্থনৈতিক অধিকারের পক্ষে কথা বলা। সেদিন লিংকন মেমোরিয়ালের সামনে দাঁড়িয়ে মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র তার ঐতিহাসিক “I have a dream” বক্তব্যটি উপস্থাপন করেন এবং বর্ণবাদ বন্ধের আহ্বান জানান।

ওয়াশিংটন ডি.সি.তে মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র তাঁর বক্তব্য উপস্থাপন করছেন; Image Source: Kentake Page

এই সমাবেশটি আয়োজন করেছিলেন ফিলিপ র‍্যান্ডলফ এবং বায়ার্ড রাস্টিন, যারা নাগরিক অধিকার, শ্রম, এবং ধর্মীয় সংগঠনগুলোর একটি জোট তৈরি করেছিলেন। জোটটি ‘জবস অ্যান্ড ফ্রিডম’-এর ব্যানারে একত্রিত হয়েছিল। সমাবেশটিতে অংশগ্রহণ করেছিল প্রায় আড়াই লক্ষ মানুষ। অনুমান করা হয় যে, ৭৫-৮০% মিছিলকারীই ছিল কালো বর্ণের যারা বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিল। এই মিছিলটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে মানবাধিকারের জন্য সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সমাবেশ।

বার্লিন প্রাচীর, ১৯৮৯

বার্লিন প্রাচীর মূলত সমাজতন্ত্র ও পুঁজিবাদের বিভাজন চিহ্ন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানিকে কার্যত চারটি ভাগ করা হয়। ফ্রান্স, ব্রিটেন, আমেরিকার অধিকৃত পশ্চিম অংশ নিয়ে গঠিত হয় ফেডারেল রিপাবলিক অব জার্মানি। আর সোভিয়েত ইউনিয়নের অধিকৃত পূর্ব অংশ নিয়ে গঠন করা হয় ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব জার্মানি। এদিকে ধীরে ধীরে পশ্চিম জার্মান পুঁজিবাদী রাষ্ট্রে পরিণত হয় এবং বিপুল সমৃদ্ধি অর্জন করে। অন্যদিকে সোভিয়েত অর্থ ব্যবস্থার অনুকরণে গড়ে উঠা পূর্ব জার্মানি অর্থনৈতিক দিক দিয়ে অনেকাংশে পিছিয়ে পড়ে। ফলে পূর্ব জার্মানির জনগণ পশ্চিম জার্মানির দিকে আকৃষ্ট হতে থাকে এবং ব্যাপকহারে অভিবাসন শুরু করে। তাই ১৯৬১ সালে পূর্ব জার্মান সরকার বার্লিনে একটি সীমান্ত প্রাচীর তুলে দেয় এবং কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার ফলে বার্লিনের অনেক পরিবারের সদস্যরা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

বার্লিন প্রাচীর টপকে পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করছে পূর্ব বার্লিনের নাগরিকরা; Image Source: lithub.com

তবুও পূর্ব বার্লিনের জনগণ কাঁটাতার ভেদ করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা, প্রাচীর টপকেও কেউ কেউ অভিবাসন করতে উদ্যত হয়। পরবর্তীতে, বার্লিন প্রাচীর নিয়ে গণআন্দোলন শুরু হলে ৯ নভেম্বর ১৯৮৯ পূর্ব জার্মান সরকার বাধ্য হয়ে ঘোষণা দেয় দুই দেশের ভ্রমণে আর কোনো নিষেধাজ্ঞা থাকবে না, যখন খুশি তখন সীমান্ত অতিক্রম করতে পারে। সেই রাতেই উচ্ছ্বসিত জনতা বার্লিন প্রাচীরকে ঘিরে ফেলে। কেউ কেউ অবাধে পশ্চিম বার্লিনে প্রবেশ করে। আবার কেউ কেউ হাতুড়ি শাবল দিয়ে প্রাচীর ভাঙতে শুরু করে দেয়। অবশেষে বার্লিন প্রাচীর ভেঙে ফেলার মধ্য দিয়ে কাঁটাতারে আবদ্ধ মানুষগুলো পরিবারকে কাছে ফিরে পায় এবং আবারো দুই দেশ একত্রিত হয়।

ইরাক যুদ্ধবিরোধী প্রতিবাদ, ২০০৩

২০০৩ সালে একটি অন্যায় যুদ্ধ থেকে বিশ্বকে রক্ষা করতে সারা বিশ্বে ৬০ মিলিয়ন মানুষ রাস্তায় নেমেছিল। ইরাক যুদ্ধবিরোধী প্রতিবাদটি মূলত যুদ্ধবিরোধী কিছু সংগঠন দ্বারা শুরু হয়েছিল। আরব দেশগুলোতে রাষ্ট্র কর্তৃক এই বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়। ইউরোপে প্রতিবাদকারীদের সবচেয়ে বড় সমাবেশ হয় রোমে যেখানে তিন মিলিয়ন মানুষ একত্র হয়। এটি ‘গিনেস বুক অফ রেকর্ডস’-এ সর্বকালের সবচেয়ে বড় যুদ্ধবিরোধী সমাবেশ হিসাবে তালিকাভুক্ত রয়েছে।

অরেঞ্জ বিপ্লব, ২০০৪

গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে বিপ্লব হয়েছে কিন্তু রক্তপাত হয়নি— এ যেন এক অভাবনীয় ব্যাপার। তেমনটিই ঘটেছে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত সাবেক সদস্য রাষ্ট্র ইউক্রেনে। ২০০৪ সালে ইউক্রেনে একটি গণতান্ত্রিক বিপ্লব সংগঠিত হয় যেটি ‘অরেঞ্জ বিপ্লব’ নামে খ্যাত। মূলত ইউক্রেন নব্বইয়ের দশকে স্বাধীনতা ঘোষণার পরপরই ভেঙে পড়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন জোট। তবুও সমাজতান্ত্রিক মতাদর্শে বিশ্বাসী হওয়ায় তখনও দেশটির রাজনীতিতে রাশিয়ার অলিখিত প্রভাব বজায় ছিল।

২০০৪ সালের ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়াপন্থী প্রার্থী ইয়ানুকোভিচকে ঘিরে নানান অনিয়ম, কারচুপি এবং দুর্নীতির অভিযোগ আনে দেশটির নির্বাচন পরিচালনাকারী সংস্থাসহ পরিদর্শনকারী বৈদেশিক সংগঠনগুলো। অন্যদিকে বিরোধীদলের প্রার্থী ভিক্টর ইউসেচনকোর সমর্থনে রাস্তায় নেমে পড়ে ইউক্রেনের জনগণ। ২২ নভেম্বর, ২০০৪ থেকে শুরু হয়ে ২৩ জানুয়ারি ২০০৫ পর্যন্ত এই বিপ্লবটি স্থায়ী ছিল। পরবর্তীতে গণবিদ্রোহ ঠেকাতে এবং দেশটিতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে ইউসেচনকোকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণার মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটে অরেঞ্জ বিপ্লবের।

আরব বসন্ত, ২০১০

একবিংশ শতাব্দীতে পুরো মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের বসন্তের যে ছোঁয়া লেগেছিল সেটিকেই সাংবাদিকরা অভিহিত করেছে আরব বসন্ত নামে। আরব বসন্ত মূলত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে স্বৈরাচার বিরোধী গণতন্ত্রের লড়াই ছিল। যার সূচনা হয়েছিল ২০১০ সালে তিউনিসিয়ায় এক যুবকের স্বেচ্ছায় শরীরে আগুন দিয়ে আত্মাহুতির মধ্য দিয়ে। এরই সূত্র ধরে শুরু ধূমায়িত অসন্তোষের চূড়ান্ত প্রক্রিয়া গণবিপ্লব।

পুরো মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে আরব বসন্তের স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে পড়েছিল; Image Source: Spiked

এরপর মিশর, লিবিয়া, সিরিয়া ইয়েমেনসহ বিভিন্ন দেশে এর ব্যাপকতা ছড়িয়ে পড়েছিল। উত্তেজনা ছিল পুরো বিশ্বে। গণবিদ্রোহের এই ঢেউ আঘাত করেছিল পুরো মধ্যপ্রাচ্যে। ভীত কাঁপিয়ে দিয়েছিল স্বৈরশাসকের। অতঃপর তিউনিসিয়ায় ২০১১ সালের ১৪ জানুয়ারি সংগঠিত হওয়া বিপ্লব থেকে পতন ঘটে জেন এল আবেদিন বেন আলির শাসনের। তারপর মিশরের প্রেসিডেন্ট মুবারক, জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ, ইয়েমেনের শাসক আলি আবদুল্লাহর শাসনের অবসান ঘটাতে বাধ্য হয়। বিপ্লবে নিহত হন লিবিয়ার শাসক মুয়াম্মার  গাদ্দাফি। এতে করে অবসান ঘটে গাদ্দাফির ৪২ বছরের শাসনামল। এভাবেই আরব বসন্ত পুরো মধ্যপ্রাচ্যে স্বৈরাচারী গদিতে আঘান হেনেছিল।

ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার, ২০১৩

ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার হল একটি মানবাধিকার  আন্দোলন যা কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি সহিংসতা এবং জাতিগত বর্ণবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে। ২০১৩ সালে আফ্রিকান-আমেরিকান কিশোরী ট্রেভন মার্টিন হত্যার রায়ে জর্জ জিম্মারম্যানকে খালাস দেওয়ায় এই আন্দোলনের সূচনা হয়। জিম্মারম্যান ফ্লোরিডায় ১৭ বছর বয়সী এই কৃষ্ণাঙ্গ তরুণীকে দেখে সন্দেহভাজন দাবি করে হত্যা করে। হত্যার পর যখন দেখা যায় তরুণীটি নির্দোষ তখন ক্ষোভে ফেটে পড়ে সচেতন নাগরিকরা। তখন #BlackLivesMatter হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক সাড়া ফেলে। সেই থেকে ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলনের সূত্রপাত।

হোয়াইট হাউজের সামনে বিক্ষোভকারীদের অবস্থান; Image Source: CNN

এরপর ২০১৪ সালে আরো দু’জন কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিককে হত্যা করলে আন্দোলনটি আমেরিকায় জাতীয়ভাবে ব্যাপকতা লাভ করে। রাস্তায় নেমে আসে বিক্ষোভকারীরা। সর্বশেষ ২০২০ সালে ২০মে পুলিশ কর্তৃক নির্যাতনে কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিক জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু হলে আন্দোলনটি পুরো বিশ্বকে নাড়িয়ে দেয়। সারা বিশ্বব্যাপী এই হ্যাশট্যাগটি ব্যবহার করে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।

This is Bangla article about prominent protests in the world that changed the history'. Necessary sources are hyperlinked within the article.

Feature Image: Mining.com

Related Articles