Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

প্রুশিয়া থেকে জার্মানি (পর্ব-৪৪): প্রুশিয়ার নতুন প্রধানমন্ত্রী

বিসমার্ক ইউরোপে অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে প্রুশিয়ার মিত্র সন্ধান করতে লাগলেন। ১৮৫৫ সালের গ্রীষ্মে প্যারিসে তৎকালীন ফরাসি সম্রাট তৃতীয় নেপোলিয়নের সাথে বিসমার্ক সাক্ষাৎ করেন। বলাই বাহুল্য, এতে রাজা ফ্রেডেরিক আর তার রক্ষণশীল মন্ত্রীসভা খুব একটা খুশি ছিল না। তাদের চোখে নেপোলিয়ন নামটাই অস্পৃশ্য, বিপ্লবের প্রতিভূ। আর তৃতীয় নেপোলিয়ন তো প্রুশিয়ার অন্যতম শত্রু নেপোলিয়ন বোনাপার্টেরই ভ্রাতুষ্পুত্র। বিসমার্ক সবাইকে আশ্বস্ত করতে চাইলেন এই বলে যে একজন কূটনীতিকের সবার সাথেই যোগাযোগ রক্ষা করা উচিত। অস্ট্রিয়ার সাথে যুদ্ধের সম্ভাবনা তুলে ধরে তিনি ফ্রান্স আর রাশিয়ার সাথে জোট বাঁধার কথাও বললেন। কিন্তু প্রুশিয়ার ক্ষমতাশালীরা তাকে আমলে নিল না।

বিসমার্কের ধাপ্পা

বিসমার্ক যখন প্যারিসে, ফ্রাঙ্কফুর্টে তখন অস্ট্রিয়ার প্রতিনিধি পরিবর্তন হলো। কাউন্ট রথবার্গ অস্ট্রিয়ান প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশ নিয়ে পৌঁছলেন, জার্মানির অন্যান্য রাষ্ট্রগুলোকে দলে ভিড়িয়ে ডায়েটে প্রুশিয়াকে কোণঠাসা করতে হবে। সোজা কথায়, প্রুশিয়া যা বলবে অস্ট্রিয়া ঠিক উল্টো কাজ সমর্থন করবে। এই প্রতিযোগিতায় বিরক্ত বিসমার্ক রথবার্গের সাথে ১৮৫৭ সালের জুনে একান্ত বৈঠকে বসলেন। তিনি জানালেন, নিজ নিজ স্বার্থ অক্ষুন্ন রেখে প্রুশিয়া আর অস্ট্রিয়া সহযোগিতার পথে হাঁটুক এটাই তার চাওয়া। তবে অস্ট্রিয়া যদি সেদিকে যেতে না চায় সমস্যা নেই, তখন যুদ্ধ হবে। রথবার্গ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলেন। তার জানা ছিল বিসমার্কের সাথে ফ্রান্স, রাশিয়া আর সার্ডিনিয়ার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। তাহলে কি তারা অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে লড়াইতে প্রুশিয়াকে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে? নাহলে বিসমার্ক এত সাহস পেলেন কোথা থেকে?

অস্ট্রিয়ানরা যদি বার্লিনে খোঁজ নিত, তাহলে জানতে পারত পুরোটাই বিসমার্কের ধাপ্পাবাজি। তিনি যে রথবার্গকে এই হুমকি দিয়েছেন তা সম্পূর্ণই নিজ উদ্যোগে, তার ঊর্ধ্বতনরা এই বিষয়ে বিন্দুবিসর্গ জানেন না। বিসমার্ক জানতেন অস্ট্রিয়া বার্লিনে কখনোই খোঁজ নেবে না। যদিও অস্ট্রিয়া একটু ধাক্কা খেয়েছিল, তারা ডায়েটে প্রুশিয়ার বিরোধিতা অব্যাহত রাখে। ফলে দিনের পর দিন ধরে শুধু আলোচনাই হচ্ছিল, কার্যকরী কোনো সিদ্ধান্ত আসছিল না। তবে ডায়েটের বাইরে এসময় বিসমার্ক ডেনমার্কের কাছ থেকে হোলস্টেইন আর ল্যুনবার্গের জার্মান কনফেডারেশনে অন্তর্ভুক্তির অনুমোদন আদায় করে নিতে পেরেছিলেন।

প্রিন্স রিজেন্ট

১৮৫৭ সালে চতুর্থ ফ্রেডেরিক উইলিয়াম সম্ভবত স্ট্রোক করেন। ফলে তার মানসিক বৈকল্য পরিলক্ষিত হয়। ১৮৫৮ সালের জানুয়ারি থেকে তাই তার ভাই উইলিয়াম রিজেন্ট হিসেব দায়িত্ব নেন। উইলিয়ামের স্ত্রী জার্মানির স্যাক্সা-ওয়েইমারের ডাচেস অগাস্টা, বিসমার্কের চিরকালের শত্রু। বড় ছেলে ক্রাউন প্রিন্স ফ্রেডেরিক উইলিয়াম, যার বিয়ে হয়েছে ইংল্যান্ডের রাজকন্যা ভিক্টোরিয়ার সাথে। মেয়ে লুইসা মারিয়া ব্যাডেনের গ্র্যান্ড ডিউকের ঘরনি।

প্রিন্স রিজেন্ট উইলিয়াম; image source: line.17qq.com

উইলিয়াম ছিলেন লিবারেলদের চক্ষুশূল। কারণ তিনি চলমান শাসনব্যবস্থা সংস্কারের বিপক্ষে এবং রাজার একচ্ছত্র ক্ষমতায় বিশ্বাসী। বিসমার্ক ভেবেছিলেন উইলিয়াম হয়ত তার দৃষ্টিভঙ্গি বুঝবেন। তিনি ১৮৫৮ সালের মার্চে রিজেন্টের সামনে উত্থাপিত রিপোর্টে বলেন যে ফেডারেল ডায়েট অভিন্ন জার্মানির পথে একটি বাধা। জার্মান একত্রীকরণ করতে হবে একে পাশ কাটিয়ে। এজন্য প্রুশিয়ার অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যভাবে অবস্থান নিতে হবে এবং দরকার হলে তাদের সাথে সশস্ত্র সংঘর্ষের মাধ্যমেই পথের কাঁটা উপড়ে ফেলতে হবে। উইলিয়াম বাকি সব কথার সাথে একমত হলেও অস্ট্রিয়ার সাথে যুদ্ধের কথা হজম করতে পারলেন না। তিনি পূর্বসূরির মতোই অস্ট্রিয়ার সাথে সুসম্পর্ক যেকোনো মূল্যে বজায় রাখার সিদ্ধান্ত নেন।

এদিকে অস্ট্রিয়া আর সার্ডিনিয়ার মধ্যে যুদ্ধের ঘণ্টা বাজছে। এই পরিস্থিতিতে জার্মান কনফেডারেশনের সাহায্য অস্ট্রিয়ার দরকার ছিল। বিসমার্কের উপস্থিতিতে প্রুশিয়াকে পাশ কাটিয়ে তাদের পক্ষে তা করা সম্ভব ছিল না। ফলে অস্ট্রিয়া প্রস্তুত ছিল প্রুশিয়ার দাবিদাওয়া মেনে নিতে। কিন্তু উইলিয়াম এই সুযোগ হেলায় হারালেন। বিসমার্কের অস্ট্রিয়া বিরোধী মনোভাবের সূত্র ধরে তাকে পাঠিয়ে দিলেন রাশিয়াতে। ফলে ডায়েটে অস্ট্রিয়া কোন ছাড় না দিয়েই জার্মান কনফেডারেশনের কাছ থেকে সামরিক সাহায্য আদায় করে নেয়।

রাশিয়াতে বিসমার্ক

১৮৫৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ফ্রাঙ্কফুর্টে শেষবারের মতো হাজিরা দিয়ে ৬ মার্চ বিসমার্ক রাশিয়ার রাজধানী সেন্ট পিটার্সবার্গের পথে রওনা হলেন। ক্রিমিয়ান যুদ্ধের সময় তার ভূমিকা রাশিয়া ভুলে যায়নি, ফলে মহাসমাদরে তাকে সেখানে বরণ করা হলো। দ্রুতই রাজপরিবার ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সাথে তার সম্পর্ক তৈরি হয়। জার দ্বিতীয় আলেক্সান্ডার আর পররাষ্ট্রমন্ত্রী গরচাকভের সাথে তার এখানে যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের সৃষ্টি হয়, তা প্রুশিয়ার সাথে রাশিয়ার পরবর্তীতে কয়েক দশকের দৃঢ় মৈত্রীর ভিত্তি স্থাপন করে দেয়।

জার দ্বিতীয় আলেক্সান্ডার; image source: rbth.com

বিসমার্ক জানতেন বার্লিন থেকে তাকে দূরে সরিয়ে দেয়া হয়েছে রাজার সাথে মতের অমিলের জন্যেই। তবে তিনি হতাশ না হয়ে নতুন প্রুশিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্লাইনিতজকে চিঠি দিলেন। তার পরামর্শ ছিল সার্ডিনিয়ার সাথে লড়াইয়ের ফায়দা নিয়ে অস্ট্রিয়াকে চাপ দিয়ে প্রুশিয়ার অনুকূলে ডায়েটে নানা প্রস্তাব পাশ করিয়ে আনা। অন্যথায় ডায়েট আর কনফেডারেশন বিলুপ্ত ঘোষণা করে জার্মান কনফেডারেট বাহিনীর নেতৃত্ব গ্রহণ করা। তিনি এ-ও বললেন, দক্ষিণ জার্মানি দিয়ে প্রুশিয়ান সৈন্যরা সার্ডিনিয়ার মিত্র ফ্রান্সের সীমান্তে গিয়ে অবস্থান নেবে, যেখান থেকে আগ্রাসনের হুমকি ছিল। উইলিয়াম এবং স্লাইনিতজ তার মতবাদকে উগ্রপন্থী বলে প্রত্যাখ্যান করেন। ফলে অস্ট্রিয়া-সার্ডিনিয়া যুদ্ধের কোনো সুফল প্রুশিয়া নিতে পারল না।

১৮৫৯ সালের ১১ জুলাই ভিলাফ্রাঙ্কাতে চুক্তির মাধ্যমে অস্ট্রিয়া এই সংঘাতে ফ্রান্স আর সার্ডিনিয়ার সামনে পরাজয় স্বীকার করে নেয়। ভেনেশিয়া ছাড়া ইতালির সমস্ত অঞ্চলই তারা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। ফলে ইতালিয়ান একত্রিকরনের পথ সুগম হলো। তবে রোমে ফরাসি সেনাদল থেকে যায় বলে এই নগরী তখনও ইতালিয়ান রাষ্ট্রের অধিকারে ছিল না। এই পরিস্থিতিতে বিসমার্কের চোখে অখণ্ড ইতালি অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে প্রুশিয়ার একটি হাতিয়ার হতে পারে বলে মনে হলো।

একীভূত ইতালির দিকে যাত্রা; image source: conigliofamily.com

১৮৬০ সালে স্লাইনিতজের উত্তরসূরি হিসেবে বিসমার্কের নাম জোরেশোরে আলোচনায় উঠে আসে। কিন্তু সম্ভবত অগাস্টার প্ররোচনায় উইলিয়াম এতে সম্মত ছিলেন না। ফলে স্লাইনিতজ আরেক মেয়াদে দায়িত্ব পেলেন। এর ভেতরেই সামরিক সংস্কার নিয়ে লিবারেল অধ্যুষিত প্রুশিয়ান ডায়েটে রিজেন্টের সাথে সদস্যদের মতানৈক্যের সূচনা হলো।

প্রস্তাবিত সামরিক সংস্কার

বিসমার্কের বন্ধু, জেনারেল ভন রুন ১৮৫৯ সালের ৫ ডিসেম্বর থেকে যুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। তার প্রস্তাবিত সংস্কারে পেশাদার বাহিনীর সংখ্যা ১,৫০,০০০-২,২০,০০০ এ স্থির রেখে প্রতিবছর নাগরিকদের মধ্যে থেকে ৪০,০০০-৬৩,০০০ লোককে প্রশিক্ষণ দেয়ার কথা ছিল, যারা তিন বছর সেনাদায়িত্ব পালন করবে। উইলিয়ামেরও ইচ্ছা ছিল বাধ্যতামূলক সামরিক শিক্ষা নাগরিকদের জন্য কঠিনভাবে প্রয়োগ করবার, যা রুনের পরিকল্পনার অংশ।

রুন স্থানীয় মিলিশয়াদের সংখ্যা কমিয়ে তাদেরকে যুদ্ধ চলাকালে শুধুমাত্র পাহারার কাজে নিয়োজিত রাখার সুপারিশ করেন। তার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তৎকালীন মুদ্রায় প্রায় ৯.৫ মিলিয়ন থেলারের (সাত মিলিয়ন ডলারের মত) বাজেট ১৮৬০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি প্রুশিয়ান ডায়েটে তোলা হলো। প্রুশিয়ান লিবারেল ডায়েট সংস্কারে ইচ্ছুক ছিল, কিন্তু তাদের ভয় অন্য জায়গাতে। অতীত অভিজ্ঞতা বলে বহিঃশত্রুর থেকে ভিন্নমত দমনেই সেনাবাহিনীর ব্যবহার বেশি হয়েছে, যেখানে মিলিশিয়ারা অনেক সময়ে লিবারেলদের পক্ষাবলম্বন করেছে। ফলে তারা দাবি করল মিলিশিয়া এবং সেনাবাহিনীর সংখ্যা আনুপাতিক রাখতে হবে, এবং শর্ত দিল তিন বছরের জায়গায় দুই বছর সেনাদায়িত্ব পালন করবার।

উইলিয়াম ডায়েটের শর্ত নিজের ক্ষমতার প্রতি অপমান হিসেবেই দেখলেন। কারণ সংবিধানে সেনাবাহিনীর বিষয়ে রাজাকেই সর্বময় ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। দুই পক্ষের মতবিরোধে বাজেট আটকে যায়। এরপর আরো কয়েকবার বাজেট উত্থাপন করা হলেও প্রতিবারই লিবারেলদের বিরোধিতার সম্মুখিন হতে হয়। তাদের চিন্তা ছিল চাপ দিয়ে বাজেট পাশের বিনিময়ে রাজার থেকে ডায়েটের ক্ষমতা বাড়িয়ে নেয়া এবং সেই পথ ধরে আস্তে আস্তে প্রুশিয়ান রাজপরিবারের ক্ষমতা কমিয়ে আনা।  

রগেনবাখ প্ল্যান

ডায়েটের সাথে বাকবিতণ্ডার মাঝে উইলিয়াম বিসমার্কের সাথে রগেনবাখ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেন। রগেনবাখ ব্যাডেনের মন্ত্রী ছিলেন। তিনি ক্লাইনডয়েচের আদলে প্রুশিয়ার নেতৃত্বে জার্মান কনফেডারেশনের পুনর্গঠন চিন্তা করেছিলেন, যা অস্ট্রিয়ার সাথে মৈত্রীচুক্তিতে আবদ্ধ থাকবে। বিসমার্ক এতে সন্তুষ্ট ছিলেন না।  তিনি জানতেন ঐক্যবদ্ধ জার্মান শক্তি অস্ট্রিয়া হতে দেবে না।

ফ্রাঞ্জ ভন রগেনবাখ; image source: Wikimedia Commons

অস্ট্রিয়াকে বাদ দিতে বিসমার্ক নতুন প্রস্তাব দিলেন। জার্মান কাস্টমস ইউনিয়ন, যেখানে অস্ট্রিয়া নেই, তারা একটি আলাদা সংসদ তৈরি করবে যেখান থেকে জার্মানির জন্য অর্থনৈতিক নীতিমালা প্রণীত হবে। স্বাভাবিকভাবেই অস্ট্রিয়াকে বাদ দেয়ার এই পরিকল্পনা উইলিয়ামের ভাল লাগেনি। এরই মধ্যে তার ভাইয়ের মৃত্যু হলে ১৮৬১ সালের দোসরা জানুয়ারি তিনি প্রুশিয়ার রাজা প্রথম উইলিয়াম হিসেবে সিংহাসনে বসেন। কনিগসবার্গের অভিষেকে বিসমার্ক তার পাশেই ছিলেন, কিন্তু রাজাকে নিজের পরিকল্পনায় রাজি করাতে পারলেননা।

মন্ত্রীসভায় বিসমার্ক

বার্লিন থেকে ১৮৬১ সালের শেষে বিসমার্ক রাশিয়ায় ফেরত এলেন। সংসদের সাথে সামরিক আর প্রশাসনিক সংস্কার নিয়ে চলমান বিতর্কের জেরে অনেকেই রাজাকে পরামর্শ দেন বিসমার্ককে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করতে, যাদের মধ্যে ভন রুনও ছিলেন। উইলিয়াম এবারো রাজি হলেন না। ১৮৬২ সালের মে মাসে বিসমার্ক নিজে বার্লিনে এসে রাজার সামনে তদবির করেন। কোনো লাভ হলো না, উল্টো রাজা তাকে রাশিয়া থেকে বদলি করে দিলেন প্যারিসে। এখানেও রানী অগাস্টার হাত ছিলে বলে মনে করা হয়। বিসমার্ককে অগাস্টা বার্লিন থেকে দূরে রাখতে চাইছিলেন।  

এদিকে সংসদের সাথে রাজার বিবাদ এমন এক পর্যায়ে পৌঁছল যে ১৮৬২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তার রক্ষণশীল মন্ত্রিরাই পরামর্শ দিলেন লিবারেলদের ছাড় দিতে। উইলিয়াম তাদের পরামর্শ গ্রহণ না করলে তারা রাজাকে এই ব্যাপারে আর সহায়তা করবেন না বলেও জানিয়ে দিলেন। একটুও না দমে উইলিয়াম ঘোষণা দিলেন তিনি তাহলে ক্ষমতাই ছেড়ে দেবেন। সেই উদ্দেশ্যে পুত্র ফ্রেডেরিককে ১৭ সেপ্টেম্বর তিনি প্রাসাদে ডেকে পাঠালেন।

পরিস্থিতি দেখে ভন রুন বিসমার্ককে অতিদ্রুত বার্লিনে আসতে টেলিগ্রাম করে দেন। ২০ সেপ্টেম্বর বিসমার্ক বার্লিনে এসে পৌঁছেন। ২১ তারিখ রাজার সাথে সাক্ষাৎ করে রুন তাকে বিসমার্কের নিয়োগ পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করেন। উইলিয়াম ও তার ছেলে বিসমার্কের ব্যাপারে দ্বিধাগ্রস্ত থাকলেও তাদের সামনে কোনো বিকল্পও ছিল না। রাজার পছন্দের সব লোকই চেষ্টা করেও সংসদের সাথে অচলাবস্থা ভাঙতে পারেনি। ফলে ২২ তারিখ রাজা বিসমার্ককে ডেকে পাঠালেন।

বিসমার্ক রাজার প্রতি শর্তহীন আনুগত্যের প্রতিজ্ঞা করেন। তিনি রাজকীয় সকল আদেশ মেনে নেবার অঙ্গীকার করলেন, তবে উইলিয়ামের থেকে এই সম্মতি তিনি আদায় করে নিলেন যে রাজা আদেশ প্রয়োগের পূর্বে বিসমার্ককে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরবার সুযোগ দেবেন। তারপর তিনি যদি আদেশ পরিবর্তন করেন তাহলে ভাল, নাহলেও বিসমার্ক রাজার আদেশ মতই চলবেন। উইলিয়াম অবিলম্বে বিসমার্ককে ক্যাবিনেট চেয়ারম্যান নিযুক্ত করলেন। দুই সপ্তাহ পরে তিনি একাধারে প্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পান। তার উপাধি ছিল মিনিস্টার-প্রেসিডেন্ট।

বিসমার্ক বনাম ডায়েট

১৮৬১ সালের নির্বাচন থেকেই প্রুশিয়াতে রক্ষণশীলদের ভরাডুবি শুরু। ১৮৬২ সালের নির্বাচনের পর দেখা গেল প্রুশিয়ার ডায়েটের নিম্নকক্ষের শতকরা ৮০ ভাগ সদস্যই লিবারেল। এরা বিসমার্কের ঘোরতর শত্রু। এমনকি অনেক রক্ষণশীলও তাকে পছন্দ করত না। ফলে বেশিরভাগই মনে করল বিসমার্কের এই পদ সাময়িক, শিগগিরি তাকে বিদায় নিতে হবে।

বিসমার্ক প্রথমে লিবারেলদের কয়েকজনকে মন্ত্রীর পদ সাধলেন। কিন্তু তাদের দাবি মোতাবেক নাগরিকদের সেনাদায়িত্বের সময় তিন বছর থেকে দুই বছর করতে রাজাকে রাজি করাতে পারলেন না, যদিও তিনি নিজে এই ব্যাপারে একমত ছিলেন। ফলে লিবারেলরা তার মন্ত্রিত্বের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। এরপর সংসদে দাঁড়িয়ে বিসমার্ক রাজকীয় আদেশের বলে ১৮৬২ আর ১৮৬৩ সালের বাজেট দুই-ই প্রত্যাহার করে নেন। বাজেটই যদি না থাকে তাহলে লিবারেলরা সামরিক বরাদ্দ আটকাবে কীভাবে?

ডায়েটের কয়েকজন সদস্যের সাথে বিসমার্ক © Hulton Archive/Getty Images

বিসমার্ক ৩০ সেপ্টেম্বর ঘোষণা দিলেন হয় রাজার কথামত সামরিক সংস্কার হবে, নাহলে কোনো বাজেট ছাড়াই তিনি শাসন চালাবেন। চাপে পড়ে ডায়েটের উচ্চকক্ষ রাজার পছন্দমতো ১৮৬২ আর ১৮৬৩ সালের বাজেট মেনে নেয়, কিন্তু নিম্নকক্ষ ১৮৬২ সালের বাজেট মানলেও সেখান থেকে সামরিক বরাদ্দ কেটে দেয়। ফলে অক্টোবরের ১৩ তারিখ উইলিয়াম ডায়েট ভেঙে দিয়ে জরুরি অবস্থা জারি করেন।

১৮৬৩ সালে আবার ডায়েটের অধিবেশন বসল। কিন্তু অচলাবস্থা কাটল না। এসময় বিসমার্ক দেশজুড়ে লিবারেল বিরোধী প্রচারনা শুরু করেন। সংবাদপত্রগুলোকে তাদের সমর্থনে কিছু না লিখতে সতর্ক করা হয়। বিসমার্কের কার্যক্রম তুমুলভাবে সমালোচিত হলেও তিনি তোয়াক্কা করলেন না। তবে কোনো লাভ হলো না, ১৮৬৩ সালের ২৮ অক্টোবরের নতুন নির্বাচনে আগের মতোই লিবারেলদের জয়জয়কার। বিসমার্ক পাত্তা দিলেন না। তার আদেশে কর আদায় এবং টাকা খরচ হতে লাগল ডায়েটের কোনো অনুমোদন না নিয়েই। সাধারণ মানুষও এতে কোনো গা করল না।

নির্বাচনে রক্ষণশীলদের পরাজয়ের পেছনে বিসমার্ক মূল কারণ হিসেবে দেখেছিলেন ভোটাধিকারের অপরিপক্ক প্রয়োগকে। তখন পর্যন্ত তিন সামাজিক শ্রেণী ব্যবস্থায় প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়, সকল নাগরিকদের ভোটে নয়। ফলে বিসমার্ক প্রুশিয়ান সব প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের ভোটাধিকারের পক্ষে ছিলেন, যা এমনকি উদারপন্থী  রক্ষণশীলরাও মানতে পারছিলেন না। বিসমার্ক ধরে নিয়েছিলেন সংখ্যাগরিষ্ঠ গ্রামাঞ্চলের মানুষ রাজার অনুগত এবং তারা তাদের মতো করে ভোট দিতে পারলে রক্ষণশীল দল বিজয়ী হবে। এই ধারণা খুব যে ভুল তা বলা যাবে না।

একইসাথে বিসমার্ক আরেকটি পরিবর্তন লক্ষ্য করেছিলেন। প্রুশিয়ার জাঙ্কার শ্রেণী আগের তুলনায় অধিক সমৃদ্ধশালী হয়ে উঠছিল। তাদের সামাজিক প্রভাব লিবারেলদের ক্রমেই ছাড়িয়ে যাচ্ছিল। তবে এই দুই ফ্যাক্টর কাজে লাগাতে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন, যা বিসমার্কের হাতে এখন নেই। তাই ১৮৬৪ সালের জানুয়ারিতে তিনি মনোযোগ দিলেন বহিঃশত্রুর জুজু দেখিয়ে কোনভাবে ডায়েটের সাথে অচলাবস্থা কাটানো যায় কিনা। স্লেশউইগ-হোলস্টেইন থালায় সাজিয়ে ডেনমার্ক তাকে সময়োপযোগী উপহার দিয়ে বসল।

This is a Bengali language article about the rise and eventual downfall of Prussia and how it led to a unified Germany. Necessary references are mentioned below.

  1. Kent, George O. (1978). Bismarck and His Times. Southern Illinois University Press.
  2. Otto von Bismarck. Encyclopedia Britannica.
  3. Abbott, J. S. C. (1882). The history of Prussia. New York, Dodd, Mead, and company

Feature image: Hulton Archive/Getty Images

Related Articles