Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চট্টগ্রাম ভ্রমণ

সাহিত্য-সংস্কৃতি ও মুক্তবুদ্ধির চর্চার ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম সবসময়ই অগ্রণী ভূমিকা পালন করে এসেছে। সাহিত্যিক আবুল ফজল থেকে শুরু করে আহমদ ছফাসহ অনেক প্রখ্যাত সাহিত্যিক, সংস্কৃতিমনা ব্যক্তির জন্মস্থান এই চট্টগ্রাম। বাংলা সাহিত্যচর্চায় মধ্যযুগে চট্টগ্রাম সারা বাংলাদেশকে পথ দেখিয়েছে। মাইজভান্ডারী গান, রমেশ শীলের কবিয়াল গান ছাড়াও চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের সম্ভারে বাংলা সাহিত্য হয়েছে সমৃদ্ধ। এমন সাংস্কৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধশালী জনপদ চট্টগ্রামে সাহিত্য-সংস্কৃতির অনেক দিকপালই নানা সময়ে ভ্রমণের উদ্দেশ্যে বা কর্মসূত্রে অবস্থান করে গেছেন।

নজরুলের চট্টগ্রাম ভ্রমণ সম্পর্কে এই প্রজন্ম খুব একটা অবহিত নয়। তেমনি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর চট্টগ্রাম ভ্রমণ করে গেছেন, তা অনেকেরই অজানা। কারণ সেসব স্মৃৃতিচিহ্ন আজ কালের ধুলোয় হারিয়ে গেছে। চট্টগ্রামের সাথে কবিগুরুর সংযোগ, তার চট্টগ্রামে আসা, চট্টগ্রামের সাহিত্য সমাজে এই ব্যাপারে ভূমিকা এবং কবির চট্টগ্রাম ভ্রমণের সেসব হারিয়ে যাওয়া স্মৃতিচিহ্ন নিয়ে সাজানো আজকের এই আয়োজন।

সাহিত্যিক আবুল ফজল; Source:The Daily Star

চট্টগ্রামের সাহিত্য সমাজের সাথে রবীন্দ্রনাথের সম্পর্ক

১৯০৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর চট্টগ্রামে আসেন। তার আগে থেকেই চট্টগ্রামের সাহিত্য সমাজের প্রথিতযশা ব্যক্তিবর্গের সাথে তার যোগাযোগ ছিল। ১৮৭৭ সালে হিন্দু মেলার এক আসরে চট্টগ্রামের খ্যাতিমান কবি নবীন চন্দ্র দাসের সাথে তার পরিচয় ঘটে। নবীন চন্দ্র দাস সেই সময় কালিদাসের ‘রঘুবংশের’ বাংলা অনুবাদের প্রথম খন্ড প্রকাশ করেন। রবীন্দ্রনাথ  ঠাকুর এই অনুবাদের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর; Source:Daily Sun

১৮৯২ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কবি নবীন চন্দ্র দাসকে এক দীর্ঘ প্রশংসাপত্র পাঠান। তাতে বিশ্বকবি লেখেন,

“আমি আপনার লেখা রঘুবংশের বাংলা অনুবাদ পড়ে বেশ পুলকিত হয়েছি। সংস্কৃত ভাষার কবিতা অনুবাদে অনেক সময়ই কবিতার প্রাঞ্জলতা রক্ষা করা বেশ দুরূহ হয়ে পড়ে। ফলে কবিতার প্রাসঙ্গিকতা হারিয়ে যায়। কিন্তু আপনার অনুবাদে মূল কবিতার ভাবার্থ যথাসম্ভব রক্ষা করে তার ভাবরস ও সৌন্দর্যের এতোটুকু বিচ্যুতি ঘটতে দেননি। ”

কবি নবীন চন্দ্র দাস; Source:dailyasianage.com

রঘুবংশের দ্বিতীয় খন্ডের অনুবাদ পড়েও কবিগুরু সমান মুগ্ধ হয়েছিলেন। ১৮৯৫ সালে সাধনা পত্রিকায় এই বইয়ের প্রশংসা করে রবীন্দ্রনাথ একটি দীর্ঘ সাহিত্য সমালোচনা লেখেন। চট্টগ্রামের আরেক অনুজ ‘কবি ভাস্কর’ শশাঙ্ক মোহন সেনের সাথে রবি ঠাকুরের ছিল বেশ হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক। তার লেখা ‘সিন্ধু সঙ্গীত’ পড়েও রবীন্দ্রনাথের বেশ ভালো লাগে। এই কবিতার বই নিয়ে কবিগুরুর মন্তব্য ছিল এরকম,

“এই বইয়ের মধ্য দিয়ে প্রকৃতির প্রতি মুগ্ধতা এবং এক কবির কাব্য প্রতিভার স্ফুরণ দেখতে পাওয়া যায় ।” ফলে চট্টগ্রামের বিশিষ্ট লেখকদের সাহিত্য সম্পর্কে রবি ঠাকুর বেশ ওয়াকিবহাল ছিলেন। তাদের সাহিত্যকর্মের প্রতি তার ছিল অপার মুগ্ধতা। ফলে সাহিত্যচর্চার মধ্য দিয়ে তাদের সাথে কবিগুরুর একধরনের আত্মিক বন্ধন তখন থেকেই ছিল। আর সেজন্য চট্টগ্রামে আসার ব্যাপারে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বেশ আগ্রহ ছিল।

বিপ্লবীদের ভূমি চট্টগ্রামের কিংবদন্তী মাস্টার দা সূর্য সেন; Source: dailyasianage.com

এই সময়ই চট্টগ্রামের আরেকজন ব্যক্তিত্ব কবিকে চট্টগ্রামে আসার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করেন। তিনি হচ্ছেন কর্মীপুরুষ যামিনীকান্ত সেন। চট্টগ্রাম হিতসাধিনী সভার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি। তার সাথে রবীন্দ্রনাথের বেশ ঘনিষ্ঠতা ছিল। যামিনীকান্ত সেন কলকাতা হাইকোর্টে ওকালতি করতেন। রবীন্দ্রনাথের আহ্বানে ওকালতি পেশা ছেড়ে বিনা বেতনে শান্তিনিকেতনে শিক্ষক পেশায় যোগ দেন তিনি। স্বভাবতই, যামিনীকান্তের প্রতি কবিগুরু কৃতজ্ঞতার বন্ধনে আবদ্ধ ছিলেন। তাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বরিশালের সাহিত্য সম্মেলনে যোগ দেওয়ার কথা জানতে পারার পর থেকেই কবিকে চট্টগ্রামে আনার ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া শুরু হয়। চট্টগ্রামের প্রবীণ জননেতা যাত্রামোহন সেন যামিনীকান্তের মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথকে চট্টগ্রামে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানান।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চট্টগ্রাম ভ্রমণের পটভূমি

ঠাকুর পরিবারের জমিদারী তদারকির কাজে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে একাধিকবার বাংলাদেশ তথা তৎকালীন পূর্ববঙ্গের বিভিন্ন জায়গা যেমন: শিলাইদহ, শাহজাদপুর এবং পতিসরে আসা-যাওয়া করতে হয়েছে। এছাড়াও সাহিত্য সম্মেলন ও  নানা সাংগঠনিক কাজে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে তিনি ভ্রমণ করে গেছেন।  কিন্তু তখনও তার চট্টগ্রামে আসা হয়নি।

ডাচ শিল্পীর আঁকা সেই সময়ের চট্টগ্রাম; Source:wikimedia commons

চট্টগ্রাম সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অনেককাল আগে থেকে ওয়াকিবহাল ছিলেন। কবিগুরুর সহৃদ বাংলা সাহিত্যের অন্যতম লেখক ঠাকুর দাস মুখোপাধ্যায়ের মুখে পাহাড়, সমতলভূমি, নদীবেষ্টিত চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সম্পর্কে কগিুরু প্রথম জানতে পারেন। ঠাকুর দাসের লেখা নানা চিঠিপত্রে চট্টগ্রামের অসাধারণ রূপ বর্ণনা কবিকে চট্টগ্রাম সম্পর্কে আকৃষ্ট করে তোলে। এরপর  আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদের লেখা ‘স্বদেশী আন্দোলন ও মুসলমান সমাজ’ প্রবন্ধে চট্টগ্রামবাসীর অসম্প্রদায়িক চেতনার কথা, স্বদেশপ্রীতি, অসহযোগ আন্দোলন এবং চট্টগ্রামবাসীর অসাধারণ বীরত্বগাথা নিয়ে গান্ধীজী কর্তৃক অভিনন্দন রবীন্দ্রনাথকে চট্টগাম সম্পর্কে  আরো আগ্রহী করে তোলে।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর; Source: newsdoramillaci.wordpress.com

এর মাঝে রবীন্দ্রনাথ জানতে পেরেছিলেন যে চট্টগ্রামের মানুষেরা দেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তোলার জন্য সমাজের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের উজ্জীবিত কর্মমুখর মানুষদের নিয়ে নিজস্ব বেঙ্গল নেভিগেশন কোম্পানি গঠন করতে  সক্ষম হয়েছে এবং শক্তিশালী ব্রিটিশ কোম্পানি মেসার্স এম ডেভিড কোম্পানিকে পরাজিত করে দুটি স্বদেশী জাহাজের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে সমুদ্রপথে মালামাল আনা নেয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

চট্টগ্রাম সফরের আসার মাত্র কয়েক বছর আগে, রবীন্দ্রনাথ তার আত্মীয়স্বজন এবং বন্ধুবান্ধবদের মাধ্যমে জানতে পারেন যে, সমাজের দরিদ্র মানুষের উপকারের জন্য ‘দ্য হিন্দুস্তান কো-অপারেটিভ ইনস্যুরেন্স সোসাইটি’ নামে একটি বীমা কোম্পানি গঠনের করা হয়েছে। এই কোম্পানীর মাধ্যমে অন্যের মুখাপেক্ষী হওয়া কাটিয়ে সাবলম্বী হয়ে গড়ে ওঠার জন্য যুবকদের মাঝে ঋণ প্রদান করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা-মাতার দুশ্চিন্তা নিরসনের জন্য সহজ শর্তে বীমার ব্যবস্থা রাখাসহ নানামুখী কর্মকাণ্ড রবীন্দ্রনাথকে চট্টগ্রাম সম্পর্কে উৎসাহী করে তোলে।

কবিগুরুর চট্টগ্রামে আগমনের দিন

বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের শাখা খোলা, চট্টগ্রামের কবি সাহিত্যিকদের উৎসাহিত করা এবং সর্বোপরি সুহৃদ যামিনীকান্ত সেনের আমন্ত্রণ রক্ষার জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর চট্টগ্রামে আসার সিদ্ধান্ত নেন। কবিগুরুর এই সফর ছিল মাত্র দুদিনের। বরিশালের বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সভায় অংশগ্রহণ শেষে তিনি চট্টগ্রামের পথে যাত্রা করবেন বলে চট্টগ্রামের অভ্যর্থনা কমিটিকে জানিয়ে দেওয়া হয়। অভ্যর্থনা কমিটির পক্ষ থেকে ত্রিপুরাচরণ চৌধুরী ও কাজেম আলী মাস্টার প্রমুখের উদ্যোগে চট্টগ্রাম রেল স্টেশনটিকে সাজানোর ব্যবস্থা করা হয়।

রেলপথে চট্টগ্রামে কবির আগমন; Source: eastrailindia.tripod.com

চট্টগ্রাম শিক্ষিত সমাজ ও সাহিত্যানুরাগীদের মাঝে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতি ভালোবাসা বরাবরই ছিল। ১৯০৭ সালের ১৭ জুন পূর্ববাংলার বন্দরনগরী চট্টগ্রামে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথম পদার্পণ করেন। দিনটি ছিল সোমবার। কবিগুরুর সফর সঙ্গী হিসেবে ছিলেন ভাইপো সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও বন্ধু কেদারনাথ দাশগুপ্ত। সেদিন ভোরে খুব বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃষ্টি উপেক্ষা করে চট্টগ্রামের অনেক গুণীজন ও সাহিত্যপ্রেমিক কবিকে অভ্যর্থনা জানাতে চট্টগ্রাম স্টেশনে জড়ো হন। চট্টগ্রামের সাহিত্যানুরাগী ও সুশীল সমাজের সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ কবিকে বরণ করে নেন।

চট্টগ্রামের বটতলী রেল স্টেশন; Source: srichinmoy-reflections.com

চট্টগ্রামে কবিগুরুর ব্যস্ততাময় দুটি দিন

কবিগুরুকে স্টেশন থেকে ঘোড়ার গাড়িতে করে যামিনীকান্ত সেনের বাবা কমলাকান্ত সেনের দোতলা বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। কমলাকান্ত সেনের বাড়ির সামনে সেদিন কবিকে দেখতে ও কথা বলতে অনেকেই ভিড় করেন। ১৭ জুন সন্ধ্যায় কবিকে নৈশ ভোজের আমন্ত্রণ জানান নগরীর আইসিএস জজ। কিন্তু তার পরিবর্তে চট্টগ্রামের সুশীল ও নাগরিক সমাজের সাথে বৈঠক করতেই কবি বেশি উৎসাহিত ছিলেন। এজন্য জজের আমন্ত্রণ রক্ষার জন্য কবি তার ভাইপো সুরেন্দ্রনাথকে জজের বাড়িতে পাঠান।

তৎকালীন চট্টগ্রাম কলেজের আইনের অধ্যাপক ও সাহিত্যিক রজনীরঞ্জন সেনের পার্সিভিল হিলের ‘দ্যা প্যারেড’ এর বাসভবনে নির্ভেজাল আড্ডায় মেতে ওঠেন কবি। এই আড্ডা চলাকালীন স্থানীয় কবি-সাহিত্যিকদের সমর্থনে চট্টগ্রামে সাহিত্য পরিষদ স্থাপনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।

কমলাকান্ত সেনের বাড়িতে কবির থাকার ব্যবস্থা করা হয়; Source: outlookindia.com

চট্টগ্রামের কবি, লেখক, সাহিত্যিক ও বিশিষ্ট নাগরিকগণ এই সভায় উপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যে ছিলেন আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ, নবীন চন্দ্র সেন, পূর্ণ চন্দ্র চৌধুরী, মৌলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী, যাত্রা মোহন সেন, রামচন্দ্র বড়ুয়া, হরিশচন্দ্র দত্ত, আবদুর রহমান দোভাষ, মাহিমচন্দ্র গুহ, কাজেম আলী ও ব্রজ কুমার সেনের (প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য প্রফেসর অনুপম সেনের পিতামহ) মতো চট্টগ্রামের প্রখ্যাত ব্যক্তিবর্গ।

কর্ণফুলি নদীর সৌন্দর্য কবিগুরুকে মুগ্ধ করেছিল; Source: reviewhuts.com

১৯০৭ সালের ১৮ জুন মঙ্গলবার সকালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে চট্টগ্রাম সাহিত্য পরিষদের কয়েকজন কবিকে চট্টগ্রাম শহর দেখাতে নিয়ে যান। কর্ণফুলি নদীর অপরূপ সৌন্দর্য দেখে কবি মুগ্ধ হন। এইসময় কবি জাহাজের কয়েকজন মাঝি-মাল্লারের সাথে কথা বলেন। বিকেলে নগরীর সদরঘাট এলাকায় তখনকার কমলবাবুর থিয়েটার হলে (পরবতীর্তে লায়ন সিনেমা হল) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে সংবর্ধনা দেয়া হয়। সভার শেষদিকে ব্রজমোহন সেনের অনুরোধে শ্রোতাদের উদ্দেশে কবি একটি গান পরিবেশন করেন।

চট্টগ্রামের নাগরিক সম্বর্ধনায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শ্রোতাদের গান গেয়ে শোনান; Source: outlookindia.com

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চট্টগ্রাম ভ্রমণের স্মৃতিচিহ্ন আজ বিলীন

নোবেলজয়ী একমাত্র বাঙালি এই সাহিত্যিক চট্টগ্রাম ভ্রমণের সাথে জড়িয়ে ছিল দুটি ঐতিহাসিক বাড়ি, চট্টগ্রামের প্রথম থিয়েটার হল এবং চট্টগ্রাম পুরাতন রেল স্টেশন। সদরঘাট এলাকার কমলবাবুর থিয়েটার (অধুনালুপ্ত লায়ন সিনেমা হল), চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল পাহাড়ের উত্তর দিকের কমলকান্ত সেনের দ্বিতল বাড়ি এবং নগরীর পার্সিভিল হিলের ‘দি প্যারেড’ নামের বাড়িটিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আতিথেয়তা গ্রহণ করেন। কিন্তু সেসব বাড়ির কোনো অস্তিত্বই আজ আর নেই। রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি বিজড়িত একমাত্র স্থাপনা চট্টগ্রাম বটতলী রেল স্টেশনেও নেই কবির সফরের কোনো স্মৃতি স্মারক।

চট্টগ্রামের জেনারেল হাসপাতালের পাশেই ছিল কমলকান্ত সেনের বাড়ি, যা আজ আর নেই; Source: bdnews24.com

দুর্ভাগা এই বাঙালি জাতি তাদের ঐতিহ্যকে লালন করতে জানে না বলেই রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিঘেরা সেসব স্মৃতি চিহ্ন আজ কালের পরিক্রমায় হারিয়ে গেছে, যা সত্যিই বেদনাদায়ক। সরকারী বেসরকারী পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে আমরা হারিয়ে ফেলেছি এমন অনেক বিখ্যাতদের স্মৃতি চিহ্ন, যা আমাদের সাংস্কৃতিক ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করতে পারতো। এসব স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণের ব্যাপারে যথাযথ উদ্যোগ নেয়ার দাবি চট্টগ্রামের সাহিত্যানুরাগীসহ আপামর জনগণের।

ফিচার ইমেজ– youtube.com

Related Articles