Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

রেডিয়াম গার্লস: কফিনের অন্ধকারে আজও দ্যুতি ছড়িয়ে যাচ্ছেন যারা

১৯২৭ সালের ১৫ই অক্টোবর, শরতের এক সকালে নিউ জার্সির রোজডেল সেমেটেরিতে জড়ো হয়েছেন কিছু মানুষ। সারি সারি সমাধি পেরিয়ে তারা হাজির হলেন একটি বিশেষ সমাধিস্তম্ভের সামনে। সেখানে শায়িত মানুষটির নাম অ্যামিলিয়া মলি ম্যাগিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের রেডিয়াম কর্পোরেশন, United States Radium Corporation (USRC) এর এই কর্মচারী গত হয়েছেন পাঁচ বছর আগেই। মৃত্যুর কারণ হিসেবে লেখা হয়েছে সিফিলিস। যদিও এটি মেনে নেয়নি তার পরিবার এবং পরিচিতজনেরা। এর পাঁচ বছর পর মলির কবর খোঁড়া শুরু হলো। মাটির নিচ থেকে উঠানো হলো তার কফিন। মৃত্যুর সময় বন্ধ করে দেওয়া সেই কফিনের ঢাকনা খোলা হলো আবার। সাথে সাথে হতভম্ব হয়ে গেলো উপস্থিত সবাই। খুব মৃদুভাবে, মলির প্রাণহীন দেহ থেকে আলো বিকিরিত হচ্ছে। মলি জ্বলছে। আর এর কারণও বুঝতে বাকি রইলো না কারোরই।

কারখানায় কাজ করছেন রেডিয়াম কন্যারা; Source: cnn.com

সময়টা তখন বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগ। বাজারে তখন আভিজাত্য এবং শৌখিনতার প্রতীক হয়ে এসেছিল এমন কিছু ঘড়ি, যেগুলোর ডায়াল অন্ধকারে জ্বলত। ঘড়িগুলোর এ দীপ্তির জন্য সূর্যালোকে চার্জ দেবারও কোনো প্রয়োজন হতো না! অন্ধকারে এই ঘড়িগুলো যেমন ছিল উপকারী, তেমনই জনপ্রিয়। ঘড়িগুলোর এমন উজ্জ্বলতার পিছনে ছিল এক বিশেষ ধরনের রং, যার বদৌলতেই ঘড়িগুলোর কাঁটা এবং নম্বরগুলো অন্ধকারে জ্বলতো। ব্যাপারটি তখনকার মানুষের কাছে ছিল যেন এক জাদুর মতোই।

এই ধরনের ঘড়ি প্রস্তুতকারী প্রথম কারখানা স্থাপিত হয় ১৯১৬ সালে, নিউ জার্সিতে। মাত্র ৭০ জন নারী কর্মচারী দিয়ে শুরু হওয়া এই কারখানার শ্রমিক পরবর্তীতে কয়েক হাজারে পরিণত হয়, কারখানার সংখ্যাও বাড়ে বহুগুণ। অন্ধকারে জ্বলা এই ঘড়িগুলোর ডায়াল রং করার কাজটি ছিল বেশ সূক্ষ্ম। সূচারুভাবে এই কাজটি সম্পন্ন করার জন্য সেই নারী কর্মচারীদের ঐ বিশেষ রঙে ভেজা তুলির শীর্ষ ঠোঁট দিয়ে সূচালো করার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু যে বিশেষ রং এ কাজের জন্য ব্যবহার করা হতো তার উপাদান ছিল রেডিয়াম নামক একটি তেজষ্ক্রিয় পদার্থ, যেটি আবিষ্কৃত হয়েছিল এর অল্প কয়েক বছর আগে। প্রতিটি তুলির আঁচড়ের সাথে সাথে একটু একটু করে রেডিয়াম গ্রহণ করছিল এই কারখানার নারী কর্মচারীরা। পরবর্তীতে তাদের নাম হয়, ‘রেডিয়াম গার্লস’

সে আমলে রেডিয়াম মিশ্রিত পানি রেডিথর স্বাস্থ্যবর্ধক টনিক হিসেবে সেবন করা হতো; Source: cnn.com

সকল রোগের মহৌষধ

১৮৯৮ সালে নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী ম্যারি কুরি রেডিয়াম আবিষ্কার করেন। “আমার সুন্দর রেডিয়াম”, বলতেন কুরি, রেডিয়ামের মায়ায় মুগ্ধ ছিলেন খোদ তার আবিষ্কারকই। মানুষের শরীরের টিস্যু ধ্বংস করার ক্ষমতা থাকায় একে ক্যান্সারের চিকিৎসায় কাজে লাগানো হয় অচিরেই। ‘দ্য রেডিয়াম গার্লস’ এর লেখক কেট মুর বলেন,

“যেহেতু ক্যান্সার চিকিৎসায় রেডিয়ামের ব্যবহার সুফল আনে, সেকারণে মানুষের মাঝে একে ‘সর্বরোগের মহৌষধ’ হিসেবে মনে করার চল হয়। আমরা যেভাবে ভিটামিন সেবন করি, ঠিক সেভাবে রেডিয়ামকে বলবর্ধক ঔষধ হিসেবে সেবন করার প্রবণতা দেখা দেয়। রেডিয়াম নিয়ে মানুষের এতটাই আকর্ষণ ছিল।” 

রেডিয়ামের উন্মাদনা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সর্বক্ষেত্রে। নিত্যদিনের ব্যবহার্য বস্তু- টুথপেস্ট, প্রসাধনী, এমনকি খাবার এবং পানীয়তেও ব্যবহার করা হয় রেডিয়াম। এরকম একটি দ্রব্য ছিল রেডিথর, যা মূলত ডিস্টিলড ওয়াটার এবং রেডিয়ামের মিশ্রণ ছাড়া আর কিছুই না। অথচ বিজ্ঞাপনে একে ‘জীবন্মৃতের নিরাময়’ তথা ‘A Cure for the Living Dead’ বা ‘Perpetual Sunshine’ বলে প্রচার করা হতো। বাতের ব্যথা থেকে শুরু করে আর্থ্রাইটিসের চিকিৎসায়ও এটি ব্যবহৃত হতো!

‘স্ট্রেইঞ্জ গ্লো: দ্য স্টোরি অব রেডিয়েশন’ বইয়ের লেখক অধ্যাপক টিমোথি জর্গেনসন বলেন,

“সেই সময় মানুষ জানতো যে, রেডিয়াম থেকে শক্তি বিকিরিত হয়। সে কারণে তারা নিজেদের শরীরে বাড়তি শক্তি যোগ করার মধ্যে কোনো দোষ খুঁজে পায়নি। যেসকল রোগে ব্যক্তির মধ্যে ক্লান্তি দেখা দিত, সেসবের চিকিৎসার জন্য রেডিয়াম দ্বারা প্রস্তুতকৃত দ্রব্য ব্যবহার করা হতো, তা অবসাদ থেকে শুরু করে ধ্বজভঙ্গ– সবখানেই।”

কিন্তু আদতে রেডিয়াম ছিল ভয়ঙ্কর এক তেজষ্ক্রিয় পদার্থ। এবেন বাইয়ার্স নামের একজন ক্রীড়াবিদ, যিনি দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত রেডিয়াম পানি সেবনের জন্য পরিচিত ছিলেন, রেডিয়ামের বিষক্রিয়ায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন ১৯৩২ সালে। মৃত্যুর সময় তার চোয়াল খুলে এসেছিল।

রেডিয়াম মিশ্রিত রঙের বিজ্ঞাপন; Source: cnn.com

এক ভয়ঙ্কর মন্থর ঘাতক

সেবনের পর রেডিয়াম হয়ে ওঠে অত্যন্ত বিপদজনক। কারণ, এটি অনেকটা ক্যালসিয়ামের মতো আচরণ করে। এর ফলে মানবদেহ একে ক্যালসিয়াম হিসেবে হাড়ের গঠনের কাজে ব্যবহার করে। এর ফলস্বরূপ পরবর্তীতে তেজষ্ক্রিয়তায় হাড়ের ক্ষয়, অস্থি ক্যান্সারের আক্রান্ত হয়। কবে আক্রান্ত হবে তা নির্ভর করতো ব্যক্তির রেডিয়াম গ্রহণের মাত্রার ওপর। আর রেডিয়াম গার্লস তথা রেডিয়াম কন্যাদের বেলায় এই মাত্রা ছিল অনেক বেশি। ঘড়ির ডায়ালে ব্যবহৃত সেই ফ্লুরোসেন্ট রং ছিল রেডিয়ামে প্রস্তুতকৃত দ্রব্যের মধ্যে সবচেয়ে সফল আবিষ্কার। আর সেই রঙে ভেজা তুলি নিজেদের মুখে প্রবেশ করানোর কারণে তেজষ্ক্রিয়তার ভয়ঙ্কর ঝুঁকিতে পড়ে কারখানার সেই কর্মী নারীরা।

কেনই বা তারা এ কাজটি করতে গেলেন? ঘড়ির ডায়ালের উপর নম্বর রং করার এই সূক্ষ কাজ করতে তুলিটির সূঁচালো শীর্ষের প্রয়োজন, আর ঠোঁটের মাঝে দিয়ে সেটি করাটা ছিল সবচেয়ে সহজ উপায়। কিন্তু রেডিয়াম কন্যারা একেবারে অন্ধভাবে এ কাজে জড়িয়ে পড়েননি। কাজের শুরুতেই, রেডিয়াম ক্ষতিকারক কিনা, এ বিষয়ে তারা জানতে চেয়েছিলেন কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে। স্বভাবতই তারা সেই আশঙ্কার কথা উড়িয়ে দেয়। ফলে নিশ্চিন্ত মনে কাজটি শুরু করে দেন রেডিয়াম কন্যারা।

রেডিয়াম সহযোগে চুলের ট্রিটমেন্টের বিজ্ঞাপন; Source: cnn.com

‘চকচক করলেই সোনা হয় না’

যখন অন্ধকারে জ্বলা ঘড়িগুলোর জনপ্রিয়তা তুঙ্গে ওঠে, তখনই মানুষ ধীরে ধীরে রেডিয়ামের কুফল সম্পর্কে জানতে শুরু করে। কিন্তু যেহেতু তখনও রেডিয়ামের বিষক্রিয়ার কোনো লক্ষণ প্রকাশিত হয়নি, সেহেতু রেডিয়াম ঘড়ি উৎপাদন অব্যাহত থেকেছে। মুর বলেন,

“রেডিয়ামের অন্যতম উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এটি ‘স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী’ এমন একটি ভ্রম সৃষ্টি করে, কিন্তু আসলে তা দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি বয়ে আনে। অল্প রেডিয়াম সেবনে রক্ত সঞ্চালন সুগম হলেও তাতে ধীরে ধীরে বিষক্রিয়া ঠিকই ঘটতে থাকে।”

মজার বিষয় হলো, রেডিয়াম কন্যারা মনে করতেন যে, সেই সময়ের সবচেয়ে মূল্যবান পদার্থ নিয়ে কাজ করে তারা আরো সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হচ্ছেন। এক গ্রাম রেডিয়ামের মূল্য তখন যা ছিল, তা আজকের হিসাবে প্রায় ২.২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার! রেডিয়াম তখন ছিল আভিজাত্যের অন্য নাম। আর ‘রেডিয়াম গার্লস’দের বেতন ছিল অনেক বেশি। সমাজে রেডিয়াম কন্যাদের শিল্পীর মর্যাদা দেওয়া হতো। স্বভাবতই অর্থ এবং সম্মানের জন্য দলে দলে নারীরা এই পেশায় যোগ দেন। এর মধ্যে কিশোরীরাও ছিল।

রেডিয়াম ঘড়ির কারখানাগুলোতে কাজ করার সময় এর কিছু কিছু লেগে যেত এই নারীদের চুল এবং পোশাকে। রেডিয়ামের উজ্জ্বলতায় আরো উজ্জ্বল হতেন তারা। অনেকে নিজেদের সবচেয়ে ভালো পোশাক পরে কাজে যেতেন, যাতে সেই উজ্জ্বলতা নিয়ে তারা বিভিন্ন পার্টিতে বেড়াতে যেতে পারতেন। অনেকে নিজেদের রূপ লাবণ্য বাড়াতেও এই পেশায় অংশ নিতেন।

গ্রেস ফ্রেইয়ার, যে সাহসী রেডিয়াম কন্যা প্রথম এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন; Source: thehorrorzine.com

রেডিয়াম চোয়াল

‘২০ এর দশকের শুরুর দিকে রেডিয়াম কন্যাদের অনেকের মাঝে তেজষ্ক্রিয় বিষক্রিয়ার লক্ষণ প্রকাশ পেতে শুরু করে। যেমন- দাঁতে ব্যথা, অবসাদ ইত্যাদি। রেডিয়াম বিষক্রিয়ায় প্রথম মৃত্যু ঘটে ১৯২২ সালে। মারা যান ২২ বছর বয়সী অ্যামিলিয়া মলি ম্যাগিয়া। শুরুতে যার কথা বলা হয়েছিল, সেই মলি। মৃত্যুর কারণ হিসেবে সিফিলিসকে দায়ী করা হলেও আদতে তিনি যে সমস্যায় ভুগছিলেন তার নাম হলো ‘রেডিয়াম চোয়াল’ (Radium Jaw)। তার নিচের চোয়ালের হাড় এতটাই ভঙ্গুর হয়ে গিয়েছিল যে, ডাক্তার সেটি ধরে টান দেওয়া মাত্রই তা খুলে এসেছিল! মুর এ বিষয়ে বলেন,

“রেডিয়ামের কারণে সেই নারীদের হাড় ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছিল। একপর্যায়ে জীবদ্দশাতেই রেডিয়ামের কারণে তাদের চোয়ালের হাড়ে রীতিমত ফুটো তৈরি হয়। এতটাই প্রাণসংহারী হয়ে উঠেছিল তা।”

অনেকের দাঁত পচে যেতে শুরু করে, ডাক্তার সেই দাঁত ফেলে দিলেও দেখা যেত যে, সেই ফেলে দেওয়া দাঁতের স্থানটি আলসারে আক্রান্ত হতো। অনেকে স্পর্শ করা মাত্রই তাদের হাড় ভেঙে যেতো, চামড়া ফেটে যেতো। অধিকাংশেরেক ই মৃত্যু হতো শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে তীব্র রক্তপাতের কারণে। কিন্তু এসব ঘটনার পরও কোম্পানিগুলোর এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে আরোও দুই বছর সময় লেগে যায়, কেননা কারখানার কর্মচারীর প্রাণের চেয়ে তাদের কাছে ব্যবসার মুনাফার মূল্যটাই ছিল যে বেশি!

আরেকটি বিষয় ছিল। রেডিয়ামের ভয়াবহতাকে অধিকাংশই মেনে নিতে পারেনি যে এসব কিছু সত্যিই রেডিয়ামের কারণে হচ্ছে কিনা। তাছাড়া রেডিয়াম বিষক্রিয়ার যেসব লক্ষণ দেখা যাচ্ছিল, সেগুলো দেখতে অন্যান্য রোগের (যক্ষ্মা, ডিপথেরিয়া, এনজাইনা ইত্যাদি) মতো ছিল বিধায় একে ঠিকমতো শনাক্ত করা যাচ্ছিল না।

আদালতে শুয়ে রেডিয়াম কন্যাদের কিভাবে কাজ করতে হয় তার বর্ণনা দিচ্ছেন আরেক রেডিয়াম কন্যা ক্যাথরিন ডনোহিউ; Source: pinterest.com

১৯২৫ সালে গ্রেস ফ্রেইয়ার নামের এক নারী ভাবলেন, এভাবে আর চলতে পারে না। গ্রেস ছিলেন নিউজার্সির সেই প্রথম রেডিয়াম ঘড়ি কোম্পানির একজন কর্মচারী। কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি, কিন্তু তার সাথে লড়তে রাজি হবেন এমন একজন আইনজীবীকে পেতে তার আরো দুই বছর সময় লাগে। লিওনার্ড গ্রসমান নামের একজন আইনজীবী তাকে বিনামূল্যে সহায়তা করতে এগিয়ে আসেন। এরপর লিওনার্ড এবং ক্যাথরিন ডনোহিউ সহ চার জন রেডিয়াম কন্যাকে সাথে নিয়ে সেসব কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন গ্রেস। গোটা পৃথিবীর সংবাদমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে রেডিয়ামের ভয়াবহতার কথা।

১৯২৮ সালে রেডিয়াম কন্যাদের পক্ষে রায় দেয় আদালত, জিতে যান রেডিয়াম কন্যারা। সেই সাথে আদালতের এ রায় স্থাপন করে পেশাগত ঝুঁকি আইনের মাইলফলক। ততদিনে রেডিয়ামের ক্ষতি সম্পর্কে সাধারণ মানুষ সচেতন হয়ে যায়। ঠোঁটে তুলি স্পর্শ করার কৌশলের স্থলে কারখানার কর্মচারীদের নিরাপদ কর্মক্ষেত্র নিশ্চিতকরণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা শুরু হয়। পরবর্তীতে আরো অনেক নারী এগিয়ে আসেন এবং তাদের কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আদালতের দ্বারস্থ হন। রেডিয়াম কোম্পানিগুলোও আপিলের আবেদন করতে থাকে। কিন্তু ১৯৩৯ সালে সুপ্রিম কোর্ট আপিলের সর্বশেষ আবেদনটি খারিজ করে।

রেডিয়ামের তেজষ্ক্রিয়তায় বেঁচে যাওয়াদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। প্রাণ হারানো ব্যক্তিদের মৃত্যুর কারণ সংশোধিত করে নথিভুক্ত করা হয়। রেডিয়াম যুক্ত খাদ্য এবং পানীয় বাজারে নিষিদ্ধ করা হয়। ধীরে ধীরে রেডিয়াম রঙের ব্যবহার উঠে যেতে থাকে এবং ১৯৬৮ সালের পর তা ঘড়িতে ব্যবহার বন্ধ হয়ে যায়।

১৯২৮ সালে রেডিয়াম কন্যাদের পক্ষে আদালতের রায় শোনার পর উচ্ছ্বসিত এক রেডিয়াম কন্যা; Source: pinterest.com

ইতিহাসের পাতায় রেডিয়াম গার্লস

রেডিয়াম তেজস্ক্রিয়তায় ভুক্তভোগী রেডিয়াম কন্যাদের সঠিক সংখ্যা আজও নির্ধারণ করা যায়নি। ধারণা করা হয়, তাদের সংখ্যা কয়েক হাজারেরও বেশি। অনেকের ক্ষেত্রে তেজষ্ক্রিয়তার লক্ষণ দেখা গেছে বেশ কয়েক বছর পর। রেডিয়াম কন্যারা যে ভয়াবহতা ও যাতনার ভেতর দিয়ে গেছেন তার ফল হিসেবেই এসেছে তৎকালীন শ্রম অধিকার আইনের সংশোধন। তাদের মাধ্যমে তেজষ্ক্রিয়তা বিষয়ক অনেক অজানা জ্ঞান লাভ করাও সম্ভব হয়েছে। কেট মুর বলেন,

“রেডিয়াম কন্যাদের অনেকেই পঞ্চাশের দশকে বৈজ্ঞানিক গবেষণা এমনকি বিভিন্ন পরীক্ষার বিষয় হতে রাজি হয়েছিলেন। আজ মানবদেহের ভেতর তেজষ্ক্রিয়তার প্রভাব সম্পর্কে আমরা যা জানি তার জন্য আমরা ‘রেডিয়াম গার্লস’-এর কাছে ঋণী।”

রেডিয়াম কন্যাদের ত্যাগের অবদান ভোগ করেছে তাদের পরবর্তী প্রজন্ম। একই সাথে মুনাফালোভী কোম্পানির স্বার্থের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর শিক্ষা দিয়ে গেছেন গ্রেস ফ্রেইয়ার। রেডিয়ামের অর্ধজীবন প্রায় ১৬০০ বছর, অর্থাৎ প্রায় শত বছর পরও রেডিয়াম কন্যাদের শরীরে আজও রেডিয়াম আছে, থাকবে। কফিনের অন্ধকারে তারা জ্বলতে থাকবেন, আরো বহুকাল ধরে।

ফিচার ইমেজ: Daily Herald Archive/SSPL/Getty Images

Related Articles