শাহজালাল (রহ.)-এর দেশে ট্রেন এসেছে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় একটু দেরিতে। উপমহাদেশে ইতোমধ্যে ২৩,৬৩২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মিত হয়ে গেছে। কিন্তু সিলেটের মাটি তখনও বাষ্পশকটে প্রকম্পিত হলো না। এর প্রধানতম কারণ ছিল সিলেটের দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল এবং আদি নৃগোষ্ঠীদের চোখরাঙানি। একাধিকবার রেলপথ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হলেও পাহাড়ি অঞ্চল বাধা হয়ে দাঁড়ায়। রেলপথ নির্মাণে অত্যধিক ব্যয়ের কারণে বারবার কোম্পানিগুলো সরে আসে তাদের পরিকল্পনা থেকে। অবশেষে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে এ পরিকল্পনা বাস্তবে রূপদান করতে সক্ষম হয়।
ইংল্যান্ড এবং ইউরোপের অন্যান্য দেশে চায়ের চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্রিটিশ কোম্পানিগুলো চীন থেকে চা আমদানি শুরু করে। ১৮৩০ সালে বিভিন্ন কারণে এ আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। তখন কোম্পানির সহযোগিতায় ব্রিটিশ ব্যবসায়ীরা হিমালয়ের দক্ষিণাংশে আসাম, সিলেট ও উত্তরবঙ্গে দার্জিলিং, কুচবিহার, আলীপুর দুয়ার ইত্যাদি অঞ্চলে বৃহৎ পরিসরে চা বাগান স্থাপনের কাজ শুরু করে।
ঐতিহাসিকভাবে সিলেট এবং আসাম চা উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত ছিল। কিন্তু পরিবহন ব্যবস্থা ছিল খুবই নাজুক। সে সময় আসাম ও সিলেটে পণ্য পরিবনের প্রধান বাহন ছিল হাতি। এছাড়া গরুর গাড়ি ও নৌকাতেও পণ্য পরিবহন করা হতো। কিন্তু ধীরগতির এসব বাহনে করে চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত পণ্য পৌঁছাতে সময় লেগে যেত এক সপ্তাহ বা তারও বেশি। ফলে এ অঞ্চলে উৎপাদিত চা শিল্প ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল। যদিও সেসময় চট্টগ্রাম বন্দর অতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। তাই চা, কয়লা, পাট ও কৃষিপণ্য বিশ্ববাজারে রপ্তানির জন্য কলকাতা বন্দরই বেশি যুতসই ছিল।
ব্রিটিশরা মূলত চা শিল্পের কথা মাথায় রেখেই সিলেট ও আসামে রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা করতে থাকে। চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে দ্রুততম যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করা ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য। অনেক বাধা-বিপত্তি মোকাবেলা করে আসাম থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের গুরুভার গ্রহণ করে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে। এই দীর্ঘ রেলপথটি একসাথে নির্মিত হয়নি। প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় ধারাবাহিকভাবে নির্মাণকাজ পরিচালিত হয়েছে।
আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের সংক্ষিপ্ত পরিচয়
১৯ শতকের শেষের দিকে আসামের চা উৎপাদনকারীরা রেলপথের দাবি করতে থাকে। এ অঞ্চলে রেলপথ নির্মাণ কঠিন হবে জেনেও জেদ করে বসল বাবু-সাহেবরা। রেলপথ তারা নির্মাণ করেই ছাড়বে। ১৮৬৮-৭৩ সাল পর্যন্ত বাংলা ও আসামের গভর্নরদের মধ্যে এ বিষয়ে একাধিক চিঠি চালাচালি হলেও কোনো লাভ হলো না। এভাবেই কেটে গেল বেশ কয়েক বছর।
সেসময় আসামের নতুন লেফটেন্যান্ট গভর্নর ও প্রধান কমিশনার হিসেবে কমর্ক্ষেত্রে যোগদান করেছেন স্টুয়ার্ট বেইলি। একরোখা এই ব্যক্তি ব্রিটিশ সরকারের কাছে পূর্ব বাংলা থেকে আসাম পর্যন্ত রেলপথ বসানোর জন্য প্রস্তাব করেন। কিন্তু সরকার পূর্ব অভিজ্ঞতার আলোকে এ প্রস্তাবে তেমন গুরুত্ব দিল না। কিন্তু স্টুয়ার্ট বেইলিও দমে যাওয়ার পাত্র নন। তিনি আবারো নতুন করে প্রস্তাব পাঠালেন লন্ডনে। তিনি লিখলেন,
এই অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা বড়ই মানবেতর। বিপুল পরিমাণ সম্পদ থাকা সত্ত্বেও অর্থনীতি অত্যন্ত নাজুক। বাণিজ্যের মসৃণ বিস্তার ও উন্নয়নের ভারসাম্য রক্ষায় আসামের ডিব্রুগড় থেকে পূর্ববঙ্গ পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ করা অত্যন্ত জরুরি।
এবার ব্রিটিশ সরকার বিষয়টি কিছুটা গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করল। ১৮৭৮ সালে সরকার লন্ডনে 'আসাম রেলওয়ে কোম্পানি' নামে একটি কোম্পানি গঠনের লক্ষ্যে শেয়ার বিক্রয়ের আবেদনপত্র ছাড়ে। দুর্ভাগ্যক্রমে, ইংরেজ সরকার এক লাখ টাকা ভর্তুকি দেয়া সত্ত্বেও তেমন শেয়ার বিক্রি হলো না। ফলে সেই রেলওয়ে কোম্পানি গঠনের উদ্যোগ মাঠে মারা যায়।
১৮৮১ সালে এক মজার ঘটনা ঘটল। তৎকালীন লক্ষ্মীপুর জেলার সিভিল সার্জন জন বেরি হোয়াইট সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগে 'আসাম রেলওয়েস অ্যান্ড ট্রেডিং' নামে একটি কোম্পানি খুলে বসলেন। আর এ কোম্পানি ডিব্রুগড় থেকে শাদিয়া পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ করে ফেলল। স্বল্পদৈর্ঘ্যের এই রেলপথ এ অঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক নতুন যুগের সূচনা করে। কোম্পানিটির ব্যাপক সফলতা ব্রিটিশ সরকারকে নতুন করে ভাবতে শেখায়।
১৮৮১ সালে খোদ ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ের চিফ ইঞ্জিনিয়ার সরেজমিনে আসাম যান। ১৮৮১ সাল থেকে ১৮৮৭ পর্যন্ত চলে মাঠ পর্যায়ে জরিপ ও নিরীক্ষা। সেসময় দু'টি রেলপথ নিয়ে ভাবা হয়। প্রথমটি ছিল, আসাম থেকে গারো পাহাড়ের কোল ঘেঁষে ময়মনসিংহ হয়ে ঢাকা পর্যন্ত, দ্বিতীয়টি আসাম থেকে সিলেট হয়ে চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত। শেষমেশ সম্ভাব্য খরচ কম হওয়াতে ও চট্টগ্রাম বন্দরকে যুক্ত করার কথা বিবেচনা করে সরকার চট্টগ্রাম-আসাম রুটকেই প্রাথমিক পছন্দ হিসেবে বেছে নিল।
তার পরিপ্রেক্ষিতেই ১৮৯২ সালে লন্ডনে প্রতিষ্ঠিত হয় আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে। ব্রিটিশ ভারতে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে ছিল অন্যতম প্রধান রেল কোম্পানি। চট্টগ্রামে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের প্রধান কার্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই কোম্পানিটি আসাম ও সিলেটের পাহাড়ি দুর্গম এলাকায় রেলপথ নির্মাণ করতে থাকে।
১৯৪২ সালের ১ জানুয়ারি, আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়। উল্লেখ্য যে, ইতোপূর্বে ১৮৮৪ সালে ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল। তাই ১৯৪২ সালে এসে আসাম বেঙ্গল রেলওয়েও সরকারিকরণ হয়ে যায়। সেসময় কোম্পানিটির নাম পরিবর্তন করে 'আসাম অ্যান্ড বেঙ্গল রেলওয়ে' রাখা হয়।
১৯৪৭ সালে এসে যখন দেশভাগ হয়ে গেল, তখন আসাম অ্যান্ড বেঙ্গল রেলওয়ে বিভক্ত হয়ে পড়ল। কিছু অংশ পড়ল ভারতের মধ্যে, আবার কিছু অংশ পাকিস্তানে। পূর্ব পাকিস্তানে মোট ২৬০৩.৯২ কিলোমিটার রেলপথ নিয়ে কোম্পানিটি ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে নামধারণ করে। আর কোম্পানির মালিকানা চলে যায় পাকিস্তান সরকারের হাতে। ১৯৬১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি, দ্বিতীয় দফা কোম্পানিটির নাম পরিবর্তন করা হয়। নতুন নামকরণ হয় 'পাকিস্তান রেলওয়ে'। ১৯৬২ সালে পুনারায় নাম পরিবর্তন করে 'পাকিস্তান ইস্টার্ন রেলওয়ে' রাখা হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে কোম্পানিটি 'বাংলাদেশ রেলওয়ে' নামে রেল পরিসেবা দিতে থাকে, যা আজও বিদ্যমান।
ওদিকে দেশভাগের পর ভারতীয় অংশটি আসাম রাজ্য ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তরাঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত ছিল। এই বিস্তৃত রেলপথ নিয়ে গঠিত হয় 'আসাম রেলওয়ে'। ১৯৫২ সালে আসাম রেলওয়ের সঙ্গে বোম্বাই, বরোদা অ্যান্ড সেন্ট্রাল ইন্ডিয়া রেলওয়ের ফতেহগড় জেলা ও অবধ তিরহুত রেলওয়ে যুক্ত হয়। এই বিশাল অঞ্চলের রেল পরিসেবা নিয়ে গঠিত হয় ভারতীয় রেলের উত্তর-পূর্ব রেল বিভাগ। ১৯৫৮ সালে এ বিভাগ থেকে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল অঞ্চলটি পৃথক করে একটি আলাদা বিভাগ গঠিত হয়।
আখাউড়া-কুলাউড়া-ছাতক রেল সেকশন
সেসময় সিলেট থেকে কলকাতা পর্যন্ত পৌঁছুতে ১৩ দিন সময় লাগত। চা রপ্তানির জন্য একমাত্র বন্দর হিসেবে কলকাতাকেই গুরুত্ব দেওয়া হতো। এই দীর্ঘ যাত্রা একদিকে যেমন ছিল ব্যয়বহুল, তেমনি ঝুঁকিপূর্ণ। আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের অধীনে নির্মিত প্রথম শাখাটি চট্টগ্রাম-কাছার নামে পরিচিত ছিল।
Image source:Ananth Rupanagudi/Twitter
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া থেকে সুনামগঞ্জের ছাতক পর্যন্ত রেলপথকে সিলেট অঞ্চলের মূল সেকশন হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু দেশভাগের পূর্ব পর্যন্ত মূল সেকশনটি ছিল আখাউড়া থেকে শাহবাজপুর হয়ে বদরপুর পর্যন্ত। দেশভাগে বদরপুর ভারতের মধ্যে পড়লে দেশের প্রান্তিক স্টেশন হয় শাহবাজপুর। সমগ্র রেলপথটিই ছিল মিটারগেজ (১০০০ মিমি)।
আখাউড়া থেকে কুলাউড়া, শাহবাজপুর, করিমগঞ্জ হয়ে বদরপুর পর্যন্ত রেলপথ উদ্বোধন করা হয় ১৮৯৬ সালে। পরবর্তী সময়ে ১৯০৩ সালে এই লাইন লামডিং পর্যন্ত বিস্তৃত করা হয়। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে সিলেট শহরে রেলপথ নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন দেখা দেয়। ১৯১২ সালে কুলাউড়াকে জংশন করে একটি লাইন সিলেটে নিয়ে যাওয়ার জন্য পুরোদমে কাজ শুরু হয়। নির্মাণকাজ শেষ হয় ১৯১৫ সালে। সে বছর সিলেটবাসী সর্বপ্রথম ট্রেনের দেখা পায়। ১৯৫৪ সালে প্রয়োজনীয়তার তাগিদে সিলেট-কুলাউড়া লাইনকে বর্ধিত করে ছাতক পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়।
ক্রমবর্ধমান চা শিল্প বিকাশের ফলে সিলেটের বিভিন্ন অঞ্চলে রেলপথ নির্মাণ জরুরি হয়ে পড়ে। এর মধ্যে হবিগঞ্জ ও বাল্লায় রেলপথ নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে। ১৯২৬ সালে শায়েস্তাগঞ্জ থেকে দু'টি রেললাইনের কাজ শুরু হয়ে। ১৯২৮ সালে শায়েস্তাগঞ্জ থেকে হবিগঞ্জ বাজার ও বাল্লা পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ কাজ শেষ হয়। সে বছর এই দু'টি শাখা লাইন উদ্বোধন করা হয়। ফলে শায়েস্তাগঞ্জ জংশনে পরিণত হয়।
টঙ্গী-ভৈরব-আখাউড়া সেকশন
আখাউড়া-বদরপুর রেলপথ নির্মাণে পর এ অঞ্চলের রেলপথ তিনটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। যমুনার পশ্চিমে ব্রডগেজ রেলপথ, যমুনা ও মেঘনার মাঝখানে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথ এবং পূর্বে আখাউড়া-বদরপুর সেকশন। সিলেট ও আসাম থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহের যোগাযোগের ব্যবস্থা ভালো ছিল না। রেলপথ দুই অঞ্চলের মধ্যে রেলসংযোগ ঘটাতে পারলে যোগাযোগ ব্যবস্থার এক আমূল পরিবর্তন সাধিত হবে- এ প্রত্যাশায় আখাউড়া থেকে একটি লাইন ভৈরব হয়ে টঙ্গী পর্যন্ত নিয়ে আসার পরিকল্পনা করা হয়।
কিন্তু মাঝখানে বাদ সাধল মেঘনা। তা-ই বলে কার্যক্রম থেমে থাকল না। ১৯১০ সালে এ পাড়ে টঙ্গী থেকে ভৈরব, আর ওপাড়ে আখাউড়া থেকে আশুগঞ্জ পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণকাজ শুরু হয়ে গেল। রেলপথের নির্মাণকাজ শেষ হলো ১৯১৪ সালে। এই রেলপথ নির্মাণের ফলে সিলেট ও চট্রগ্রামের সাথে ঢাকা-ময়মনসিংহের যোগাযোগ ব্যবস্থা এক নতুন যুগে প্রবেশ করল। যদিও তখন আশুগঞ্জে ট্রেন থেকে নেমে স্টিমারে করে মেঘনা পার হয়ে ভৈরব থেকে আবার ট্রেন ধরতে হতো।
১৯৩৫ সালে এ সমস্যার সমাধান করতে এগিয়ে আসে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে। তারা প্রস্তাব করে, মেঘনা নদীর উপর একটি রেল ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। সম্পূর্ণ ইস্পাত নির্মিত এ ব্রিজের যাবতীয় ব্যয় বহন করে ব্রিটিশ সরকার। নির্মাণকাজ শেষ হলে ১৯৩৭ সালের ৬ ডিসেম্বর, সেতুটি উদ্বোধন করেন তৎকালীন বাংলার প্রধানমন্ত্রী এ.কে. ফজলুল হক। রাজা ষষ্ঠ জর্জের নামানুসারে এই সেতুর নামকরণ করা হয় 'কিং জর্জ ষষ্ঠ ব্রিজ'। দীর্ঘ প্রায় পৌনে এক শতাব্দীর পুরাতন এই সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়লে ২০১৭ সালে মেঘনা নদীর উপর দ্বিতীয় ভৈরব রেল সেতু নির্মাণ করা হয়।
ময়মনসিংহ-গৌরিপুর-ভৈরব সেকশন
টঙ্গী-আখাউড়া রেলপথ নির্মাণের পর ঢাকার সাথে সিলেট, চট্টগ্রামের দ্রুততম যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপিত হয়। ব্যবসা-বাণিজ্য এবং চা ভিত্তিক অর্থনীতি এক নতুন গতি পায়। এরই ধারাবাহিকতায় প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় ময়মনসিংহের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করার। এ কাজের জন্য এগিয়ে আসে ময়মনসিংহ-ভৈরববাজার রেলওয়ে কোম্পানি। ১৯১২ সালে কোম্পানিটি পুরোদমে কাজ শুরু করে দেয়।
এ কোম্পানি মোট চারটি লাইন নিয়ে একসাথে কাজ শুরু করে। সেগুলো হলো, ময়মনসিংহ-গৌরিপুর, গৌরিপুর-ভৈরববাজার, গৌরিপুর-নেত্রকোনা-মোহনগঞ্জ এবং শ্যামগঞ্জ-জারিয়া-ঝঞ্চাইল। ধারাবাহিকভাবে এই সেকশনগুলো কাজ ১৯১২ থেকে ১৯১৮ এর মধ্যে সমাপ্ত হয়। পাটশিল্পের জন্য বিখ্যাত ময়মনসিংহ অঞ্চলে এই রেলপথ নিমার্ণের ফলে চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে সরসরি রেল যোগাযোগ তৈরি হয়। ফলে এ অঞ্চলের জীবনযাত্রা এবং অর্থনীতিতেও এর হাওয়া লাগে।
ইস্টার্ন বেঙ্গলের পর আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে বাংলাদেশে রেলপথ নির্মাণের জন্য সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিল। আসাম বেঙ্গল নির্মিত রেলপথ ছিল মিটার গেজ (১০০০ মিমি)। দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হচ্ছে, প্রায় ১৩০ বছর পরে এসে আজও সিলেট, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহে এই সরু রেলপথ বিদ্যমান। ফলে প্রায়ই খবরে শোনা যায় লাইনচ্যুতির কথা।
এই রেল ট্র্যাকগুলো বর্তমানে গতিশীল ট্রেন চলাচলের জন্য উপযোগী নয়। বিগত প্রায় দেড় শতকে এগুলোর তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি, বরং লাইনগুলো- বিশেষ করে আখাউড়া-সিলেট রেল সেকশনটির অবস্থা এখন খুবই নাজুক। গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে ঝূঁকিপূর্ণ সেকশনগুলোর মধ্যে একটি। বুলেট ট্রেন নয়, বরং গুরুত্বপূর্ণ এই সেকশনগুলোতে ব্রডগেজ ডাবল লাইন রেলপথ নির্মাণই একটা সুন্দর সমাধান হতে পারে।
এই সিরিজের পূর্ববর্তী অন্যান্য পর্বগুলো পড়তে ক্লিক করুন নিচের লিঙ্কে:
১. ভারতবর্ষে রেলওয়ের আগমণ-১ম পর্ব
২. প্রথম যেদিন রেল এলো বাংলায়-২য় পর্ব
৩. বিহার দুর্ভিক্ষ ও সাঁড়া-পার্বতীপুর-শিলিগুড়ি রেল সেকশন-৩য় পর্ব
৪. যশোর-খুলনায় রেল যুগের সূচনা এবং রূপসা-বাগেরহাট সেকশন-৪র্থ পর্ব
৫. উত্তরবঙ্গে যেভাবে ছড়িয়ে পড়ল রেলপথ-৫ম পর্ব
This is a Bengali article. It is the 9th part of the series 'History of Railway in Bangladesh'. Here the history of railways in Sylhet and Assam region is described.
Necessary references have been hyperlinked inside the article.
Featured Image: bdnews24.com