Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

রক্তপিপাসু হিটলারের অভিশপ্ত সেই টেলিফোন

অ্যাডলফ হিটলার ইতিহাসের এক ঘৃণিত নাম। এই একনায়কের নিষ্ঠুর প্রতিহিংসার কারণেই এ পৃথিবীর ইতিহাসে ঘটেছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। সেই যুদ্ধে তার নির্মমতায় রক্তে ভেসে গিয়েছিল পৃথিবীর বিশাল জনপদ। চরম ইহুদি বিদ্বেষী হিটলার হত্যা করেছিল পৃথিবীর প্রায় দুই-পঞ্চমাংশ ইহুদীকে। ১৯৪৩ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানির নাৎসি বাহিনী দ্বারা যে ব্যাপকহারে ইহুদি হত্যা করা হয়েছিল, তা ইতিহাসে হলোকাস্ট নামে পরিচিত। এ হলোকাস্টে ৬০ লাখের উপর ইহুদি হত্যা করা হয়েছে বর্বরচিতভাবে, যা থেকে অবোধ শিশু ও বৃদ্ধরাও রক্ষা পায়নি। তার খুনের বর্ণনা পড়লে এখনো ভয়ে বুক কেঁপে উঠে অনেকের।

অ্যাডলফ হিটলার। ছবি সূত্র: nypost.com

জনশ্রুতি আছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলারের নাৎসি বাহিনীর ভয়াবহতা, লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু, গুপ্তহত্যা এসব কিছুর গোড়াতেই রয়েছে ষড়যন্ত্রকারী এক টেলিফোন। এমনটাই দাবি করছেন ইতিহাসবিদদের একাংশ। এসব ঐতিহাসিকদের মতে, এই টেলিফোনের মাধ্যমেই নাকি একের পর এক নিষ্ঠুরতম সব নির্দেশ দিয়েছিল অ্যাডলফ হিটলার। এ কারণে অনেকেই হিটলারের এই ফোনকে অভিশপ্ত বলে থাকেন।

চলুন তাহলে জেনে নিই কিভাবে হিটলারের এই দূরাভাষ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতো বিভৎসতম এক মহা রণক্ষেত্রে অংশ নিয়েছিল তার কিছু অজানা কাহিনী।

হিটলারের অভিশপ্ত লাল টেলিফোন। ছবি সূত্র: National Post

১৯৩৯ সাল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা বেজে গিয়েছে সারা পৃথিবা জুড়ে। জার্মানি জুড়ে চলছে অ্যাডলফ হিটলারের একনায়কতন্ত্র। সেসময় হিটলার লাল রঙের এক টেলিফোন ব্যবহার করত। দেখতে খুব আহামরি তেমন কিছু নয়। কিন্তু বহু অন্ধকার ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে রয়েছে এই সাদামাটা ফোনটি। শুরুতে টেলিফোনটি কালো রঙের ছিল। পরে এতে লাল রঙের প্রলেপ দেওয়ার পাশাপাশি পেছনের দিকে খোদাই করে লেখা হয় হিটলারের নাম, আর তার সাথেই বসানো হয় নাৎসি বাহিনীর প্রতীক চিহ্ন।

টেলিফোনে খোদাইকৃত হিটলারের নাম। ছবি সূত্র: tempo.com

ফোনটি বানিয়েছিল সেসময়ের স্বনামধন্য সিমেন্স কোম্পানি। যতটুকু জানা যায়, জার্মানির নাৎসিদের সমন্বিত বাহিনী ওয়েহারমাচ্ (Wehrmacht) থেকে এই টেলিফোনটি হিটলারকে উপহার হিসেবে দেয়া হয়।

টেলিফোনটি হিটলার স্বয়ং ব্যবহার করত। যেখানেই যেত, সেখানেই সে এই ফোনটি সঙ্গে নিয়ে যেত। এই ফোনের মাধ্যমেই সে যাবতীয় নির্দেশ প্রদান করত।

টেলিফোনটির পিছনের অংশ। ছবি সূত্র: dailymail.co.uk/

এই টেলিফোনটিকে বলা হচ্ছে ‘ডিভাইস অব ডেসট্রাকশন’ বা ‘ধ্বংসের যন্ত্র’। ইতিহাসবিদদের একাংশের মতে, যুদ্ধকালীন হিটলার লাল রংয়ের একটি ফোনের মাধ্যমে বহু মানুষের মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেছিল।

কীভাবে পাওয়া গেল হিটলারের অভিশপ্ত ফোনটি? তা জানতে ইচ্ছে করছে নিশ্চয়ই। বিবিসি’র সংবাদ ভাষ্যমতে, ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ জয়ের পর সোভিয়েত রাশিয়ার সৈন‌্যরা বার্লিনে হিটলারের ফুয়েরার বাঙ্কার থেকে টেলিফোনটি উদ্ধার করে। যুদ্ধে জার্মানির আত্মসমর্পণের পর টেলিফোনটি মিত্রবাহিনীর একজন ব্রিটিশ সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার স‌্যার র‌্যালফ রেইনারকে উপহার দিয়েছিল রাশিয়া।

হিটলারের তৈরি করা আত্মগোপনের স্থান ফুয়েরার বাঙ্কার। ছবি সূত্র: Wikipedia

ঐতিহাসিকদের তথ্য মতে, ১৯৪৫ সালের জানুয়ারি মাস থেকে এই বাঙ্কারেই ছিল সস্ত্রীক হিটলার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়া পর্যন্ত পরবর্তী সময়ে এই জায়গা হয়ে উঠেছিল হিটলারের প্রধান কর্মক্ষেত্র। বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, এখান থেকেই টেলিফোনের মাধ্যমে অসংখ্য ইহুদীর হত্যার নির্দেশ দিয়েছিল হিটলার। যুদ্ধের নানা পরিকল্পনা সাজানো থেকে শুরু করে সে নিজের শ্যালককে হত্যা করার নির্দেশও দেয় এই টেলিফোনের মাধ্যমে।

অভিশপ্ত সেই রিসিভার। ছবিসূত্র: wjla.com/

কালের আবর্তনে বর্তমানে সেই রিসিভারের রঙ চটে গিয়েছে। এখানে সেখানে কালো অংশ বেরিয়ে এসেছে। তারপরও মনে হয়, লাল রংয়ের ফোনটি যেন কোনো অশনি সংকেত বহন করছে। সম্প্রতি অভিশপ্ত এই টেলিফোনটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিলামে উঠতে চলেছে। ফোনটি নিলাম করছে মেরিল্যান্ডের অকশন হাউজ।

আলেকজান্ডার হিস্টোরিক্যাল অকশনস-এর মালিক বিল পানাগোপুলোস। ছবি সূত্র: www.cecildaily.com

চেসাপেক শহরের আলেকজান্ডার হিস্টোরিক্যাল অকশনস-এর মালিক বিল পানাগোপুলোস সাংবাদিকদের জানান, নাজি বাহিনীর স্বস্তিকা চিহ্ন এবং হিটলারে নাম খোদাই করা লাল রংয়ের এই টেলিফোন সেটটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির আত্মসমর্পণের পরে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সেনারা ব্রিটিশ কর্মকর্তা স্যার র‍্যালফ রেনারকে স্মারক হিসেবে উপহার দিয়েছিল।

ব্রিটিশ কর্মকর্তা স্যার র‍্যালফ রেনার। ছবি সূত্র: www.ethiogrio.com

রেনারের ছেলে এবার সেই ফোনটিকে নিলামে তুলতে চলেছেন। রেনারের  ছেলে রায়ানাল্ফ রেইনার জানান, “এই যন্ত্রটিকে হিটলার যুগের প্রতীক হিসাবে মনে করেননি আমার বাবা। তবে অনেকটা যুদ্ধের এক স্মৃতিচিহ্ন বলেই ধরে নিয়েছিলেন।” এত বছর পর টেলিফোনটি প্রকাশ্যে আসার কথা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, লুটের মালামাল বলে অপবাদ দিতে পারে বলে তার পিতা ভয় করেছিলেন। কারণ স্যার র‍্যালফ রেনার পরবর্তীতে যুক্তরাজ্যের একজন গুরুত্বপূর্ণ পার্লামেন্টিরিয়ান ছিলেন।

র‍্যালফ রেনারের উত্তরাধিকার রায়ানাল্ফ রেইনারের কোলে হিটলারের সেই ফোন। ছবি সূত্র: The Sun

নিলাম কোম্পানি থেকে বলা হয়, জার্মানির আত্মসমর্পনের পর রাশিয়ানরা র‍্যালফ রেনারকে ওই বাঙ্কারে যাওয়ার সুযোগ দেন। তারা হিটলারের স্ত্রী ইভা ব্রাউনের ব্যবহৃত কালো রংয়ের ফোনটি রেনারের হাতে তুলে দেওয়ার প্রস্তাব করে। কিন্তু ব্রিটিশ কর্মকর্তার জবাব ছিল যে তার লাল রং পছন্দ। তাই তিনি হিটলারের ফোনটিই নিতে চান।

আমেরিকার মেরিল্যান্ডের ‘আলেকজান্ডার হিস্টোরিক্যাল অকশন্স’ এই ব্যাকেলাইট ফোনটিকে ‘হিটলারের মোবাইল যন্ত্র যা ধ্বংস বয়ে আনতো’ বলে মন্তব্য করছে। শুধু তাই নয়, এটাই সর্বকালের সর্ববৃহৎ অস্ত্র যা গোটা বিশ্বকে এক দারুণ পরিণতির দিকে নিয়ে যাচ্ছিল বলে তারা অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

এই অকশন হাউজ থেকে জানানো হয়েছে, ফোনটির বিড প্রাইস হবে ১ লক্ষ মার্কিন ডলার। তারা আশা করছে, নিলামে হিটলারের এই লাল টেলিফোনটির দর অন্তত ২ লক্ষ থেকে ৩ লক্ষ ডলার পর্যন্ত উঠতে পারে। তবে রেনারের ছেলে ও নিলামকারী প্রতিষ্ঠান মনে করে, এটি জাদুঘরে ঠাঁই পেলে ভালো হবে। এর মাধ্যমে হিটলারের বর্বরতা সম্পর্কে মানুষ আরও জানতে পারবে। সর্বশেষ যে তথ্য পাওয়া গেছে তাতে জানা যায়, ফোনটি যতো দামে বিক্রি হতে পারে বলে ধারণা করা হয়েছিলো শেষ পর্যন্ত তার চেয়েও কম দামে বিক্রি হয়েছে।

এক ক্রেতা সরাসরি নিলামে অংশ না নিয়ে ফোনে মাধ্যমেই যোগাযোগ করে নিলামে অংশ নিয়েছিলেন। নিলামে তিনি ২ লাখ ৪৩ হাজার মার্কিন ডলারে টেলিফোনটি কিনে নেন। বাংলাদেশি টাকায় এর পরিমান প্রায় দুই কোটি টাকা। তবে যিনি এই টেলিফোনটি ক্রয় করেছেন তার পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।

ইতিহাসের মৃত্যু নেই। কোনো না কোনো সময় সে সবকিছুকে উপেক্ষা করে পুরনো স্মৃতিকে নাড়িয়ে দেয়। এত বছর পর হিটলারের সেই টেলিফোন আমাদেরকে আবার মনে করিয়ে দিচ্ছে হিটলারে বিভৎস সব কাহিনী যা একদা কালের ধুলোয় চাপা পড়েছিল। হিটলারের সেই টেলিফোন পুরনো সেই ইতিহাসকে উস্কে দিল, যে ইতিহাস লক্ষ লক্ষ মানুষের রক্তে লেখা এক ক্ষমতা পিপাসু, লোভী, একনায়কের জেদের মর্মান্তিক ইতিহাস।

এ সিরিজের আগের পর্ব:

বিশ্ব ইতিহাসে অবিশ্বাস্য জালিয়াতি: হিটলারের জাল ডায়েরি

 

The article is written in Bangla language. It is about the notorious red telephone of hitler.

References:

1) bbc.com/bengali/news-39027551
2) nypost.com/2017/02/01/hitlers-death-phone-is-up-for-auction/
3) foxnews.com/science/2017/02/20/hitlers-red-phone-powerful-wartime
4) telegraph.co.uk/news/2017/02/18/hitlers-personal-telephone
5) thesun.co.uk/news/2752345/the-telephone-hitler-used-to-scream/

Featured Image: nypost.com

Related Articles