Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ধানের বিবর্তন ও পৃথিবীব্যাপী বিস্তার

বুদ্ধিবৃত্তিক বিপ্লব থেকে কৃষি বিপ্লব, কিংবা পরবর্তীতে শিল্প বিপ্লব, মানবসভ্যতার বিবর্তনে প্রতিটি বিপ্লবই চিহ্ন রেখে গেছে নানা ক্ষেত্রে। সৃষ্টির সেরা জীব এই মানুষের ইতিহাসে কোনো বিপ্লবই হুট করে আসেনি, বরং তার পেছনে ছিল সময়ের সাথে আরও উন্নত জীবনযাপনের মানসিকতা এবং অনেক মানুষের পরিশ্রম। আজকে এসব বিপ্লবের মধ্যে অন্যতম কৃষি বিপ্লবের একটা অংশ ধান নিয়ে চলুন জেনে আসি কিছু ইতিকথা। আসলেই কবে থেকে শুরু হলো ধানকে আবাদী ফসলে পরিণত করার চেষ্টা। আর আজকের দিনে এসে মানুষ কতটাই বা সফল হলো কৃষি বিজ্ঞানের উন্নতিতে।

ধান কিংবা ওরাইজা স্যাটিভা (Oryza sativa) প্রথম আবাদী ফসলে পরিণত হয় আজ থেকে প্রায় ১০,০০০ থেকে ১৪,০০০ বছর আগে ওরাইজা রুফিপোগন (Oryza rufipogon) নামে এক জংলি ঘাস প্রজাতি থেকে। ধানের দুটি প্রধান উপপ্রজাতি ইন্ডিকা (ক্রান্তীয় অঞ্চলের ফসল) এবং জাপনিকা (উপ-ক্রান্তীয় এবং নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের ফসল) মূলত ওরাইজা স্যাটিভা থেকেই এসেছে। ধানের আরেকটি প্রজাতি ওরাইজা গ্লাবেরিমা (Oryza glaberrima) অনেক পরে পশ্চিম আফ্রিকায় উৎপত্তি হয় স্বাধীনভাবে এবং সম্প্রতি কিছু গবেষণা দক্ষিণ আমেরিকাতেও স্বাধীনভাবে ধানের চাষযোগ্যকরণের (Domestication) সন্ধান দেয় যে প্রজাতিটি বর্তমানে বিলুপ্ত।

নানা ধরনের ধান (Oryza Sativa)
নানা ধরনের ধান (Oryza Sativa); Image Source: meredithcorp.io

বিজ্ঞানীরা বর্তমানে মনে করেন, এশিয়ার সকল ধানের প্রকরণ, ইন্ডিকা কিংবা জাপনিকা উভয়ই একইসাথে চাষযোগ্য হয়ে ওঠে প্রায় ৮,২০০ থেকে ১৩,৫০০ বছর আগে চীনের পার্ল রিভার ভ্যালি অঞ্চলে। ব্যাপক প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা থেকে জানা যায়- চীনের মধ্য ইয়াংজি নদী এবং হুয়াই নদীর উপরিভাগের তীরেই ওরাইজা স্যাটিভার চাষ শুরু হয়। এ সকল অঞ্চলে প্রায় ৮,০০০ বছর পূর্বের ধানের কিংবা চাষের যন্ত্রপাতির নিদর্শন খুঁজে পাওয়া যায় যা পরবর্তী ২,০০০ বছরে এর আশেপাশের অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।

ইয়াংজি নদী
ইয়াংজি নদীর অববাহিকা; Image Source: petrexgmbh.com

এরপর পশ্চিম ভারত কিংবা আরও দক্ষিণে শ্রীলঙ্কায় ধান খুব দ্রুতই বিস্তার ঘটে। খ্রিস্টপূর্ব ১০০০ সাল থেকেই ধান শ্রীলংকায় প্রধান ফসল হিসেবে চাষ করা হয়। এরপর গ্রীস এবং তার আশেপাশের অন্যান্য ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে প্রায় খ্রিস্টপূর্ব ৩৪৪-৩২৪ অব্দে আলেক্সান্ডার দ্য গ্রেটের ভারত অভিযানের অভিযাত্রিরা ধানের প্রচলন ঘটায়। গ্রীস ও সিসিলি অঞ্চল থেকে ধীরে ধীরে ধান দক্ষিণ ইউরোপ এবং উত্তর আফ্রিকার অল্প কিছু জায়গায় বিস্তার লাভ করে।

ইউরোপের অভিযাত্রীরা এরপর যখন নতুন নতুন মহাদেশ আবিষ্কার শুরু করে, তাদের আবিষ্কৃত নতুন বিশ্বে ধান বিস্তার লাভ করে। পর্তুগিজরা ব্রাজিলে এবং স্প্যানিশরা মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চলে ওরাইজা স্যাটিভার প্রচলন শুরু করে। ১৬৮৫ সালে সর্বপ্রথম উত্তর আমেরিকায় ধান চাষ শুরু হয় উপকূলীয় নিচু জমি এবং দ্বীপসমূহে। এ অঞ্চল বর্তমানে দক্ষিণ ক্যারোলাইনা নামে পরিচিত। মনে করা হয়, আঠারো শতকের মধ্যভাগে পশ্চিম আফ্রিকা থেকে নিয়ে আসা দাসেরাই ক্যারোলাইনাতে ধান চাষের জটিল পদ্ধতির প্রচলন ঘটায়। দাসদের পরিশ্রমেই ধানের ফলন ক্রমাগত অব্যহত থাকে এবং ২০ শতকের মাঝেই ক্যালিফোর্নিয়ার স্যাক্রোমেন্টো ভ্যালিতে ধান চাষ ছড়িয়ে পড়ে। ক্যালিফোর্নিয়ায় যে সময়ে ধান চাষ শুরু হয়, সেই সময়েই অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসে ধানের সফল প্রচলন শুরু হয়।

বিভিন্ন মহাদেশে ধানের উৎপত্তি 

ধানের আদি উৎপত্তিস্থল এশিয়া মহাদেশ হলেও, আফ্রিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকায় স্বাধীনভাবেই ধানের ভিন্ন দুটি প্রজাতির ডমিস্টিকেশন হয়ে গিয়েছিল। পরবর্তীতে ফলনের দিক থেকে ওরাইজা স্যাটিভা এগিয়ে থাকায় সারাবিশ্বে এরই প্রচলন ঘটে।

এশিয়া মহাদেশ

এশীয় সভ্যতা গড়ে উঠেছিল ধান তথা ওরাইজা স্যাটিভার উপর ভর করে। এই ফসল, যেটি বর্তমানে পৃথিবীর অর্ধেক মানুষের প্রধান খাদ্য, একসময় মানুষকে যাযাবর শিকারি-সংগ্রাহক থেকে বাড়িতে থাকা কৃষকে পরিণত করে। প্রথম শহুরে মানুষ কিংবা সাম্রাজ্য ও রাজবংশ- সবই গড়ে উঠেছিল এই ফসলের চাষকে কেন্দ্র করে। ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের আর্কিওবোটানিস্ট ডোরিয়ান ফুলারের মতে,

অন্যান্য সকল ফসলের তুলনায় ধান সমাজ ও অর্থনীতিকে আরো জনবহুল ও শহরকেন্দ্রিক করে তোলে এবং প্রাকৃতিক ভূচিত্রই পাল্টে দেয়।

ধানের অধিক গুরুত্বের কারণেই এর ইতিহাস নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে। তবুও এশিয়ায় এর প্রথম উৎপত্তি এবং উদ্ভবের সময় নিয়ে বর্তমানে সবাই প্রায় একমত হতে পেরেছে।

নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবর্তনবাদী জিনতত্ত্ববিদ এবং ধানের ডমেস্টিকেশন বিষয়ক অধ্যাপক মাইকেল পুরোগ্যানান বলেন,

এশিয়া মহাদেশের প্রায় সবগুলো অঞ্চলকেই ধানের উৎপত্তিস্থল হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হয়েছে।

এশিয়ায় ধানের ইতিহাস অনুসন্ধান— মানব সভ্যতার সন্ধিক্ষণ আমাদের সামনে তুলে ধরতে এবং বিজ্ঞানীদের ভবিষ্যতে ধানের উন্নতিতে কাজ করার জন্য আরো নতুন তথ্য দিতে সক্ষম। অত্যাধুনিক বংশগতিবিদ্যা এবং নতুন প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার ক্রমশ এই জটিল ইতিহাসকে আমাদের সামনে পরিষ্কারভাবে তুলে ধরতে পারছে।

হান রাজবংশের প্রায় ২,০০০ বছর আগের ঐতিহাসিক নথি থেকে জানা যায়, ধানের দুই ধরনের প্রজাতি সম্পর্কে— কেং এবং শিয়াং। এ দুটো বর্তমানে যথাক্রমে জাপনিকা (ছোট দানাদার) ও ইন্ডিকা (বড় দানাদার) নামে পরিচিত। ২০১১ সালে পুরোগ্যানান ও তার সহকর্মীদের গবেষণা থেকে বেরিয়ে আসে এক অগ্রগণ্য তত্ত্ব, যেখানে বলা হয়- চীনে সর্বপ্রথম জাপনিকা উপপ্রজাতির ডমেস্টিকেশন ঘটে এশিয়াতে। সেখান থেকেই জাপনিকা উপপ্রজাতি এশিয়াতে আসে, যেখানে প্রথম যুগের ভারতীয় কৃষকদের মাধ্যমে সংকরীকরণে তৈরি হয় ইন্ডিকা উপপ্রজাতির। পরিশেষে বলা যায়, খুব সম্ভবত চীনেই ধানের প্রথম যুগের জাপনিকা উপপ্রজাতিটি এশিয়ায় ধানের বিপ্লবের মূলধন যুগিয়েছিল।

শিল্পির তুলিতে প্রাচীন চাইনিজ কৃষকদের ধান চাষ
শিল্পীর তুলিতে প্রাচীন চীনা কৃষকদের ধান চাষ; Image Source: Mary Evans Picture Library/Grosvenor Prints

ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম ধানের অস্তিত্বের সন্ধান মেলে খ্রিস্টপূর্ব ৭০০০-৬০০০ সালে ইন্দো-গাঙ্গেও সমভূমিতে। যদিও অধিকাংশ বিজ্ঞানী মনে করেন, সিন্ধু সভ্যতায় ধানের প্রচলন প্রথম শুরু হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০-২৫০০ অব্দে। এখনও আসাম ও নেপালে তারই ধারাবাহিকতায় বহুবর্ষজীবী ধানের চাষ করা হয়। দক্ষিণ ভারতে খ্রিস্টপূর্ব ১৪০০ সালে উত্তর ভারতের পরে ধানের প্রচলন শুরু হয়। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে আরও পশ্চিমে ধান চাষ এবং রান্নার পদ্ধতি ছড়িয়ে পড়তে থাকে।

এছাড়াও, ধান তথা ওরাইজা স্যাটিভা চাষের চিহ্ন পাওয়া যায়— ইরানের সুসা অঞ্চলের এক গোরস্থানে। এটি প্রায় দুই হাজার বছরের পুরাতন, এবং দক্ষিণ এশিয়ায় ধানের ডমেস্টিকেশনের সাক্ষ্য বহন করে। বর্তমানে এশিয়ার কৃষকরাই সারা পৃথিবীর প্রায় ৯২% ধানের যোগান দিয়ে থাকেন।  

আফ্রিকা মহাদেশ

আফ্রিকান ধান প্রায় ৩,৫০০ বছর ধরে চাষ করা হচ্ছে। খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০-৮০০ অব্দে ওরাইজা গ্লাবেরিমা নামক আফ্রিকান প্রজাতি নিগার নদীর ব-দ্বীপ অঞ্চলে চাষাবাদ শুরু হয় এবং ধীরে ধীরে সেনেগাল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। যদিও এটি এর মূল অঞ্চল থেকে খুব বেশি ছড়িয়ে পড়েনি। এমনকি এশিয়ান ধানের পূর্ব আফ্রিকায় প্রচলন শুরু হওয়ার পরে আফ্রিকান ধানের চাষাবাদ কমে যেতে থাকে এবং ধীরে ধীরে পশ্চিম আফ্রিকায় এশিয়ান ধান ছড়িয়ে পড়ে। আফ্রিকান ধান আফ্রিকার মানুষকে ১২০৩ সালের দুর্ভিক্ষ থেকে রক্ষা করেছিল। 

আফ্রিকান ধান গাছ (Oryza glaberrima), Gbedin গ্রাম, Nimba County
এশীয় ধানের ছড়া – Oryza sativa (বামে) এবং আফ্রিকান ধানের ছড়া – Oryza glaberrima (ডানে); Image Source: oxfordre.com

টাকসনের অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রজনন বিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ রড উইংয়ের নেতৃত্বে একটি দল আফ্রিকান ধানের জিনোম সিকোয়েন্স প্রকাশ করে এবং আফ্রিকান আবাদী ধানের খুব কাছের জংলী প্রজাতি ওরাইজা বারথির ২০টি ডমেস্টিক স্ট্রেইন ও ৯৪টি ভ্যারাইটি নিয়েও গবেষণা ফল প্রকাশ করেন। তাদের গবেষণার ফলাফল থেকে পশ্চিম আফ্রিকার নিগার নদীর কাছে ধানটির একবারই ডমেস্টিকেশনের প্রমাণ মেলে। উইংয়ের মতে, যদিও এশিয়া ও আফ্রিকায় মানুষ হাজার বছরের ব্যবধানে স্বাধীনভাবে ধানের ডমেস্টিকেশন করেছিল, কিন্তু তারা মোটামুটি একইভাবেই ধানের জিনের পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়।

দক্ষিণ আমেরিকা

বন্য ফসল হিসেবে ধানের অনন্য দিক হচ্ছে এটি স্বাধীনভাবেই এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপে ডমেস্টিকেটেড হয়েছিল। নতুন বিশ্বের তথা আমেরিকার ধানের প্রজাতি, যা ৪০০০ বছর আগে আবির্ভূত হয়, ইউরোপীয়দের আগমনের পরে বিলুপ্তির শিকার হয়। কিন্তু এই প্রজাতির জিনগত বৈশিষ্ট্যগুলো রক্ষা করা গেলে, তা পরবর্তীতে ওরাইজা স্যাটিভার উন্নতিতে ব্যবহারের সুযোগ থাকত।

মন্টে ক্যাস্টেলোতে উদ্ধার করা ফাইটোলিথ মরফোটাইপের মাইক্রফটোগ্রাফ
মন্টে ক্যাস্টেলোতে উদ্ধার করা ফাইটোলিথ মরফোটাইপের মাইক্রোফটোগ্রাফ; Image Source: researchgate.com

ইংল্যান্ডের এক্সটেরর ইউনিভার্সিটির উদ্ভিদপ্রত্নতত্ত্ববিদ জন ইরিয়ার্টের নেতৃত্বে একটি দল ব্রাজিলের দক্ষিণ-পশ্চিম আমাজন বেসিনের মন্টে ক্যাস্টেলো নামক খাত থেকে প্রাপ্ত ৩২০টি ধানের ফাইটোলিথ নিয়ে গবেষণা ফল প্রকাশ করে।

ইরিয়ার্টের দল মনে করে, দক্ষিণ আমেরিকায় ধান চাষের উদ্ভব হয় আজ থেকে ৬,০০০-৪,০০০ বছর আগে। মন্টে ক্যাস্টেলোতে বৃষ্টিপাত বৃদ্ধির জন্য নিচু ভূমি বৃদ্ধি পাওয়া এবং বার্ষিক বন্যা বেড়ে যাওয়াই ছিল কারণ। এ ধরনের পরিবেশে অন্যান্য ফসলের তুলনায় ধানের ফলন বেশি হয়। ফলে সে সময়ের কৃষকরা বুনো ধানের চাষ বাড়িয়ে দেয়। ফলে ধানের ডমেস্টিকেশন ঘটতে থাকে। যদিও তারা তখন ভুট্টার মতো অন্যান্য ফসলও ফলাত। 

পৃথিবীজুড়ে ধানের বিস্তার

ধানের উৎপত্তি ঘটে চীনের ইয়াংজি নদীর তীরে। প্রত্নত্তত্ববিদেরা চীনের সাংসান নামক এলাকায় ধানের কিছু অংশ খুঁজে পান। যদিও ধানের দানাটি অনেক আগেই খাওয়া হয়ে গিয়েছে কিংবা ধানের গাছটি অনেক আগেই নষ্ট হয়ে গেছে, কিন্তু ফাইটোলিথ (শক্ত ও আণুবীক্ষণিক সিলিকার অংশ যা উদ্ভিদ তার প্রতিরক্ষার জন্য কোষের মধ্যে তৈরি করে) নামের ধানের একটি ক্ষুদ্র অংশ হাজার বছর পরেও এখনো রয়ে গেছে। সাংসানে পাওয়া ফাইটোলিথের বিশেষ প্যাটার্ন প্রমাণ করে— সাংসানের লোকেরা ধান শুধু সংগ্রহই করত না, বরং তারা ধানের চাষ করত আজ থেকে প্রায় ১০ হাজার বছর আগে।

একটি ফাইটোলিথ এবং সাংসান সাইট যেখানে এটি আবিষ্কৃত হয়েছিল
একটি ফাইটোলিথ এবং সাংসান সাইট যেখানে এটি আবিষ্কৃত হয়েছিল; Image Source: cdn.theatlantic.com

এরপর মধ্যপ্রাচ্যেও ধানের বিস্তার ঘটে। দক্ষিণ ইরাকের কিছু এলাকায় ধানের চাষ হতো এবং ইসলামের প্রসারের সাথে সাথে ধানের চাষ আরো উত্তরে নিসিবিন, কাস্পিয়ান সাগরের দক্ষিণ তীর থেকে মুসলিম বিশ্বের বাইরে ভোলগা অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তার লাভ করে। মিশরে ধানের চাষ হতো নীল নদের তীরে। ফিলিস্তিনের জর্ডান ভ্যালি অঞ্চলেও ধান চাষ হত।

ইউরোপে ধানের প্রচলন করে মুররা, যখন তারা দশম শতকে আইবেরিয়ান উপদ্বীপে ধানের প্রচলন ঘটান। ভ্যালেন্সিয়া ও মাজোর্কাতেও ধান চাষের প্রমাণ মেলে। মুসলিমরা সিসিলি অঞ্চলে ধানের প্রচলন ঘটায় এবং ১৫ শতকের পরে ইতালি ও ফ্রান্সে ধান চাষের প্রচলন শুরু হয়। বলকানদের মাঝে ধানের পরিচয় ঘটায় উসমানীরা।

আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়া মহাদেশে ধান তথা ওরাইজা স্যাটিভার প্রচলন ঘটায় ইউরোপীয় উপনিবেশিক শক্তি। ধীরে ধীরে যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ায় ধান চাষ ও প্রক্রিয়াকরণের উন্নত প্রযুক্তির আবিষ্কার ধানের ফলন আরও কয়েকগুন বাড়িয়ে দেয়।সাং নামে একজন বিজ্ঞানী বলেন,

“There is great potential in those ancient cultivars.”

অর্থাৎ ধানকে আবাদি ফসলে পরিণত করার ক্ষেত্রে সেই প্রাচীন যুগের কৃষকদের অবদান ছিল অনস্বীকার্য। তাদের হাত ধরেই ক্রমে ধান হয়ে ওঠে আজকের পৃথিবীর অর্ধেক মানুষের প্রধান খাদ্য।

Related Articles