Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

‘স্লিপিং বিউটি’ মমি রোসালিয়া

পৃথিবীর বুকে বিভিন্ন ধরনের অবাক করা ঘটনা ঘটে প্রতিনিয়ত। বিজ্ঞানীরা তাদের জ্ঞান এবং সূত্র সমাধানের মাধ্যমে অনেক অলৌকিক ঘটনার বাস্তবিক কারণ খুঁজে বের করেন। তা সত্ত্বেও পৃথিবীতে এমন সব ঘটনার প্রমাণ রয়েছে যার ব্যাখ্যা বিজ্ঞানীদের কাছে আজ পর্যন্ত অধরা রয়ে গেছে। কিন্তু তাই বলে বিজ্ঞান থেমে নেই। সব রহস্যের এক ধরনের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিতে বিজ্ঞান সবসময় সচেষ্ট।

আজ সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা নয়, বরং অন্য এক ধরনের গল্প করবো যেটা বেশ কিছুদিন আগে পর্যন্ত সাধারণ মানুষের কাছে একটি অলৌকিক ঘটনা ছিল। যার ব্যাখ্যা অনেক দিন মানুষের ধ্যান-জ্ঞান এর আড়ালে ছিল এবং একে নিয়ে অনেক ধরনের রটনাও লোক মুখে প্রচলিত ছিল। যার কথা বলছি সেটা হলো একটি মমি, যার নাম ‘সিসিলির মমি’। মমি সম্পর্কে আমরা অল্প-বিস্তর সবাই জানি। কিন্তু এই মমি অনেককাল পর্যন্ত জীবন্ত মমি বলে আখ্যায়িত ছিল মানুষের কাছে।

ইতালির সিসিলিতে রক্ষিত রোসালিয়ার মমি

সময়টা ১৩ ডিসেম্বর, ১৯১৩। ইতালির পালের্মো শহরের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের জেনারেল মারিও লোম্বার্দের ঘরে জন্ম হয় এক ফুটফুটে মেয়ের। তার নাম রাখা হয় রোসালিয়া লোম্বার্দো। বাবা-মা’র খুব আদরের সন্তান ছিলো সে। খুব যত্নে কাটে শিশুটির প্রথম দু’বছর। কিন্তু একসময় নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত হয় শিশুটি। অনেক চেষ্টা করার পরও আর সুস্থ হয়ে উঠতে পারে নি মেয়েটি। সবাইকে কাঁদিয়ে ১৯২০ সালের ডিসেম্বর ৬ তারিখ শিশুটি মারা যায়। রোসালিয়ার মৃত্যু কোনোভাবেই যেন মেনে নিতে পারছিলেন না তার বাবা-মা। চোখের আড়াল করতে চাইছিলেন না কোনোমতে। কী করেই বা পারবে? মারিও লোম্বার্দের একমাত্র চোখের মণি যে ছিল সে!

রোসালিয়া লোম্বার্দের মা-বাবা

অনেক চিন্তা করে রোসালিয়ার মৃতদেহ মমি করার অনুমতি চেয়ে রাজ্যের গভর্নরের কাছে চিঠি লিখেন মারিও লোম্বার্দ, পেয়েও যান অনুমতি। মেয়েটির মমি করার জন্য ডাক পড়ে সেই সময়কার বিখ্যাত ট্যাক্সিডামির্স্ট আলফ্রেদো সালাফিয়ার। তাকে অনুরোধ করা হয় রোসালিয়ার মৃতদেহ সংরক্ষণ উপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য।

আলফ্রেদো সালাফিয়া

রোসালিয়াকে যে পদ্ধতিতে মমি করে হয় সেটাও খুব ব্যতিক্রমী ছিল। কারণ সারা বিশ্বে যত মমি আছে, সেগুলো প্রাকৃতিকভাবে শুকিয়ে সংরক্ষিত করা হয়। কিন্তু রোসালিয়ার মৃতদেহ সংরক্ষণ করা হয় কৃত্রিমভাবে। ২০০৯ সালের পিওমবিনো মাসকালি হাতে লেখা একটা পান্ডুলিপি পান। সেখানে মমি তৈরির উপাদান হিসেবে গ্লিসারিন, জিঙ্ক সালফেট, ক্লোরাইড, স্যালিসাইক্লিক অ্যাসিডের কথা উল্লেখ আছে, যার মাধ্যমে এই মমিটি এমনভাবে সংরক্ষণ করা হয় যাতে বহু বছর ধরে সেটি অক্ষত থাকে।

ইতালির সিসিলি অঞ্চলের পালের্মো শহরে অবস্থিত কেটাকম্বে দেই কাপুচিনি সমাধিতে হাজার হাজার মমির সঙ্গে রাখা হয় ছোট্ট রোসালিয়ার মমিকে। সেই সময় ‘কাপুচিনি’ সমাধিটি ছিল অন্যান্য যেকোনো সমাধিস্থল থেকে আলাদা। এখানে শুধুমাত্র সংরক্ষিত মৃতদেহগুলো রাখা হত। রোসালিয়ার মৃতদেহ ছিল সেই সময়কার সবচাইতে নিখুঁত এবং নজরকাড়া মমি।

কাপুচিনি সমাধিতে রক্ষিত রোসালিয়ার মমি

রোজ রাতে রোসালিয়ার মমিকে দেখতে যেতেন তার বাবা। মেয়ের মমিতে হাত দিয়ে বসে বসে কাঁদতেন তিনি। এভাবে কেটে যায় অনেকদিন। একদিন হঠাৎ মারিওর মনে হয় রোসালিয়া তার দিকে চেয়ে আছে এবং একটু সময় পরপর চোখের পাতা পড়ছে! একটুক্ষণ পর ঘটনাটা আরও সত্য মনে হলো। সাথে সাথে মারিও চিৎকার করতে লাগল তার মেয়ে বেঁচে আছে মনে করে।

সমাধির পরিচালকগণ সকলেই এসেই দেখতে পেল সেই অপার বিস্ময়। আসলেই রোসালিয়ার চোখের দিকে কিছুক্ষণ তাকালে মনে হয় শিশুটির চোখের পাতা খুলছে বন্ধ হচ্ছে। সকলেই বিশ্বাস করতে লাগলো আসলেই রোসালিয়া বেঁচে আছে। অনেকে দাবি করতে শুরু করেন, মমি ভেঙে রোসালিয়াকে উদ্ধার করা হোক। কিন্তু ধর্মীয় অনুশাসনের কাছে সেই দাবি যে টেকে নি তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু অনেকদিন ধরে এই ঘটনা অলৌকিক হয়ে মানুষের মনে গেঁথে থাকে।

সবার নজরে পড়ে যে আর পাঁচটা মমির থেকে রোসালিয়ারটা একেবারে আলাদা। রোসালিয়ার নিষ্পাপ নীল চোখে ধরা পড়ে আবেগ, কান্না-হাসি। এ যেন অপার্থিব এক আবেগ যার সাথে মিশে আছে স্বর্গীয় অনুভূতি।

বাক্সবন্দি রোসালিয়ার মমি

এই মমির নাম রাখা হয় ‘স্লিপিং বিউটি’। ইতালিতে এই শিশু মমিটি পর্যটকদের আকর্ষণের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়ায়। স্লিপিং বিউটির চোখের টানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসে হাজার হাজার পর্যটক। অনেকেই বিশ্বাস করতে শুরু করেন বাবার ভালোবাসায় ফের বেঁচে ফিরেছে রোসালিয়া। পর্যটকদেরও বিস্ময়ের শেষ থাকে না। ইতালির সিসিলির এ শিশু মমির কাণ্ড দেখে সবাই তাজ্জব বনে যায়।

শিশুর মমিটিকে ‘স্লিপিং বিউটি’ বলার পেছনে মূল কারণ ছিল এর চোখ মেলা ও বন্ধ করা। চোখ খোলা অবস্থায় তার নীল চোখ স্পষ্ট দেখা যায়। যুগ যুগ ধরে শিশু রোসালিয়ার এই চোখ খোলা-বন্ধ করা এক ধরনের রহস্য হয়ে ছিল, যার সমাধান উদঘাটন করা সম্ভব হয় নি।  অবশেষে কয়েক বছর আগে ২০০৯ সালে এই রহস্যের সমাধান জনসম্মুখে আসে।

তার এই চোখ খোলা বন্ধ করার রহস্য উদঘাটন করেন নৃতত্ত্ববিদ এবং সমাধিস্থলের তত্ত্বাবধায়ক দারিও পিওমবিনো মাসকালি। তার মতে, “It is an optical illusion produced by the light that filters through the side windows, which during the day is subject to change”

রোসালিয়ার মমি পরীক্ষারত নৃতত্ত্ববিদ

অর্থাৎ এটা শুধুমাত্র আমাদের দৃষ্টিবিভ্রম ছাড়া অন্য কিছু নয়। এটি ঘটার মূল কারণ পাশের জানালা থেকে আসা আলো যা রোসালিয়ার দেহ সংরক্ষণকারী কাঁচে প্রতিসরিত হয়। দারিও প্রথম ব্যাপারটি লক্ষ্য করেন। তার ধারণাটি প্রমাণ করার জন্য তিনি মমির বাক্সটির জায়গা পরিবর্তন করেন। তখন তিনি রোসালিয়ার চোখ অন্য যেকোনো সময়ের চাইতে অনেক বেশি স্পষ্ট এবং পরিষ্কার দেখতে পান। তিনি অনুধাবন করতে পারেন যে, রোসালিয়ার চোখ আসলে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ ছিল না।

২০০৯ সালে রোসালিয়ার এই চোখ খোলা-বন্ধ করার রহস্য উম্মোচনের আগে সকলেই বিশ্বাস করতো যে, প্রতিদিন কোনো একটি নির্দিষ্ট সময় রোসালিয়ার আত্মা ফিরে আসে তার মৃতদেহতে। আর তখনই চোখ খুলে তাকাতো রোসেলিয়া। কিন্তু বিশ্বাস যেখানে শেষ হয়, সেখানেই থাবা বসায় যুক্তি। যুক্তি আর বিজ্ঞানের কাছে কুসংস্কার হার মেনেছে বারবার। সময়ের বিবর্তনে যুগ যুগ প্রতিক্ষার পর আবিষ্কার হলো রোসেলিয়ার চোখ খোলা বন্ধের আসল রহস্য। রহস্য তো আসলে অলৌকিক কিছু নয়। মানুষের ভ্রান্ত বিশ্বাসের উপর ভর করেই এতদিনের সকল জল্পনা কল্পনা। আসলে এ তো শুধু মানুষের দৃষ্টিভ্রম ছাড়া অন্য কিছু নয়।

ঘুমন্ত রোসালিয়ার মুখ

কিন্তু এত কিছুর পরও অনেক মানুষই আজ অবধি এই সত্য স্বীকার করতে নারাজ। অনেকের মতেই শুধুমাত্র আলোর প্রতিসরণের কারণে চোখ খোলা-বন্ধের কারসাজি কীভাবে সম্ভব? বৈজ্ঞানিক যুক্তি যত শক্তিশালীই হোক না কেনো, স্পর্শকাতরতার দিক থেকে মমির চোখ খোলা ও বন্ধের পেছনে এই যুক্তি অনেকের কাছেই দুর্বল। এখনো অনেকেই বিশ্বাস করেন, বাবার অকৃত্রিম ভালবাসার টানে আজো বেঁচে আছে রোসালিয়া। আর তাই এখনো এই মমি সম্পর্কে মানুষের আগ্রহের কমতি নেই।

This article is in Bangla language. It's about the mystrious mummy of Rosalia Lombardo, also known as The Sleeping Beauty.

References:

1) owlcation.com/humanities/RosaliaLombardo
2) io9.gizmodo.com/why-does-this-mummy-appear-to-open-and-close-her-eyes-1593924806

Featured Image: taringa.net

Related Articles