Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

সাচিকো: পারমাণবিক বোমা হামলা থেকে বেঁচে গিয়েছিল যে মেয়েটি (পর্ব – ৪)

আনস্পিকেবল সেকেন্ডস

আগস্ট ৯, ১৯৪৫

বিছানায় গড়াগড়ি দিয়ে চোখটা ভালোমতো রগড়ে নিলো সাচিকো। জানালার বাইরে ঘুরঘুরে পোকাগুলো শব্দ করছিলো। অসুস্থ এক বন্ধুর খোঁজ নিতে বাবা তাড়াতাড়িই বের হয়ে গিয়েছিলেন সেদিন। মা রান্নাঘরে কাজ করছিলেন, হাতের তালুতে গমের বল বানাচ্ছিলেন। মাকে কেমন যেন আতঙ্কিত লাগছিলো।

কেউ কি ডিমটা খুঁজে পেয়েছ?

না?

অদ্ভুত!

দু’বছর বয়সী তোশি তার ছোট্ট আঙ্গুলগুলো মুরগির দিকে তাক করলো। মুরগিটা ঘরের ভেতর ঢুকে পড়েছিলো। শব্দ করতে করতে ঠোকরাচ্ছিলো সে।

উবু হয়ে বসে মায়ের দিকে তাকিয়ে আবারও মুরগির দিকে ইশারা করলো সে। তার মুখ জুড়ে ছিলো হাসি, চোখ জুড়ে খেলা করছিলো দুষ্টুমি। মা কিন্তু হাসলেন না, তিনি মুরগিটাকে তাড়িয়ে বাগানে পাঠালেন।

কার্পাস তুলা দিয়ে তৈরি কিমোনোটা ঠিকমতো কোমরে জড়িয়ে দাদীমার গামলা থেকে মা সবার পাতে নাস্তা বেড়ে দিলেন, “বাচ্চারা, আসো, তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও।

কিমোনো পরিহিতা দুই জাপানী নারী; Image Source: Japan-Zone

সকাল ৭টা ৫০ মিনিট। হঠাৎ করে বিকট কোনো একটি শব্দ ঘুরঘুরে পোকাগুলোর কম্পনের আওয়াজকে ম্লান করে দিলো। মা মাথা তুলে চাইলেন।

বাচ্চারা, তাড়াতাড়ি”, এটুকু বলেই মা তোশিকে কোলে তুলে নিলেন। সাচিকো তার হুডটা খুঁজতে দৌড় দিলো। আকি মিসাকে তার হুড খুঁজে দিলো। সাচিকোর হাতটা ধরলো ইচিরো।

থেমে থেমে বাজতে থাকলো সাইরেন।

বিমান হামলা থেকে বাঁচতে এমনই অনেক গুহা তৈরি করা হয়েছিল জাপানে; Image Source: South China Morning Post

সাচিকোর পরিবার আবারও ছুট লাগালো পাহাড়ের বুকে তৈরি সেই গুহাগুলোর দিকে। মাথা নিচু করে গুহার ভেতর ঢুকে স্যাঁতস্যাঁতে মাদুরের উপর বসে রইলো সাচিকো। দূরের ছায়াগুলোর মাঝে সে কেবল তাদের বাড়ির আশেপাশে থাকা চারটি বাচ্চাকে চিনতে পারলো; তিনটি মেয়ে এবং একটি ছেলে।

সকাল ৮টা বেজে ৩০ মিনিট। বিমান হামলার সাইরেন থেমে গেলো। পরিচিত আরেকটি সাইরেন বেজে সবাইকে বুঝিয়ে দিলো, বিপদ কেটে গেছে।

গুহা থেকে বেরিয়ে এলো সবাই, আড়মোড়া ভাংলো। তোশির হাত ধরে রেখেছিলেন মা। মুরগির ডিম খুঁজতে তিনি বেরিয়ে পড়লেন। এক বন্ধুর সাথে ঘুরঘুরে পোকা ধরতে চলে গেলো ইচিরো। রেডিওতে যুদ্ধের সর্বশেষ খবরাখবর জানতে বাড়ির পথে পা বাড়ালো আকি এবং মিসা।

গুহায় থাকা বাচ্চাদের মাঝে বয়সে সবচেয়ে বড় ছিলো দশ বছর বয়সী একটি মেয়ে। সাচিকোর দিকে এগিয়ে এসে সে জানতে চাইলো, “তুমি কি আমাদের সাথে হাড়ি-পাতিল খেলবে?

হাড়ি-পাতিল? অবশ্যই! সাচিকো সানন্দে খেলতে রাজি হয়ে গেলো।

এখানে আমিই সবচেয়ে বড়”, জোরে জোরে বললো সেই মেয়েটি, “তাই আমিই খেলায় ‘মা’ হবো।

জরুরি পানির ট্যাংকির কাছে শরের তৈরি পুরনো এক মাদুরের উপর বাচ্চা তিনটি মেয়ে ও একটি ছেলের সাথে বসে রইলো সাচিকো। তাদের সামনে ছিলো ছাদের বেশ কিছু ভাঙা টাইলস। খেলায় এগুলোই ছিলো তাদের থালা। হাসতে হাসতেই খেলাতে সবার সাথে সময় কেটে যাচ্ছিলো সাচিকোর।

সেদিন সকালে আকাশে সূর্যের দেখা মিলেছিলো কিছুটা দেরি করেই।

ঘুরঘুরে পোকাগুলো শব্দ করতে লাগলো।

মেঘগুলোও বয়ে যেতে লাগলো।

সকাল ৯টা বেজে ৪৫ মিনিট।

… … … …

বক্সকার; Image Source: History of Sorts

বি-২৯ বোমারু বিমান বক্সকারকে নিয়ে কোকুরা শহরের উপর দিয়ে নিরাপদেই উড়ে গেলেন ক্যাপ্টেন সোয়েনী। তখন তার সাথে আরো ছিলো পারমাণবিক বোমা ফ্যাট ম্যান। হিরোশিমার পর পারমাণবিক বোমা হামলার টার্গেট নগরীর তালিকায় ছিলো কোকুরার নাম। বাতাসের বেগ বেড়ে গেলো, শুরু হলো ঘন মেঘের চলাচলও। সোয়েনীর দৃষ্টিসীমাকে অবরুদ্ধ করে দিলো সেই মেঘরাশি।

চার্লস সোয়েনী; Image Source: World War II Database

সোয়েনী কোকুরার উপর দিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো চক্কর দিলেন। জাপানী এন্টিএয়ারক্রাফট গানগুলো থেকে ততক্ষণে গোলাগুলি শুরু হয়ে গিয়েছিলো। সোয়েনী তৃতীয়বারের মতো নগরীটি চক্কর দিলেন। বিমানের ক্রুরা শঙ্কিত হয়ে পড়লো। সকালে উড্ডয়নের সময় ফুয়েল পাম্পটা ঠিকমতো কাজ করছিলো না, আরা তারাও প্রয়োজনের তুলনায় কম তেল নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন এবং সময়ও ফুরিয়ে আসছিলো বেশ দ্রুত।

ফ্যাট ম্যান; Image Source: Wikimedia Commons

দ্রুততার সাথে অবশিষ্ট জ্বালানী নিয়ে একটা হিসাব কষে ফেললেন সোয়েনী। তালিকায় থাকা পরবর্তী নগরী নাগাসাকিতে যাবার মতো পর্যাপ্ত জ্বালানী তখনও তাদের কাছে ছিলো। সেখানে পারমাণবিক বোমাটি নিক্ষেপের পর জরুরি অবতরণের জন্য রেডিওতে সাহায্য চাইতে পারতেন তারা। সোয়েনী প্লেন ঘুরিয়ে নাগাসাকির পথ ধরলেন।

সকাল ১১টা বাজার কয়েক সেকেন্ড পরই বক্সকার নিচের দিকে নামতে শুরু করলো। উপর থেকে নাগাসাকিকেও ঠিকমতো দেখা যাচ্ছিলো না। পুঞ্জ পুঞ্জ মেঘ নগরীটি ঢেকে রেখেছিলো।

Image Source: World Wars

… … … …

বক্সকারের ক্রুরা তীর্যক দৃষ্টিতে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলেন। তাদের টার্গেট ছিলো পোতাশ্রয়ে থাকা মিতসুবিশি শিপইয়ার্ড, কিন্তু উপর থেকে সেটা তারা ঠিকমতো দেখতে পাচ্ছিলেন না। হঠাৎ করেই একখণ্ড মেঘ সরে গেলো। ফলে নাগাসাকির ঘনবসতিপূর্ণ উরাকামি উপত্যকা বক্সকারের ক্রুদের কাছে উন্মুক্ত হয়ে গেলো, যা ছিলো টার্গেট থেকে প্রায় ১ মাইল দূরে। সেখান দিয়ে তাকিয়েই সোল্লাসে চিৎকার করে উঠলেন সোয়েনী, “আমি খুঁজে পেয়েছি, আমি খুঁজে পেয়েছি”। এটুকু বলেই নিশানা ঠিক করে সুইচে চাপ দিলেন তিনি।

Image Source: Wikimedia Commons

নাগাসাকির উদ্দেশ্যে ধেয়ে গেলো ফ্যাট ম্যান।

… … … …

সকাল ১১টা বেজে ১ মিনিট। দশ বছর বয়সী মেয়েটি হঠাৎ করেই ভয়ে পাথরের মতো জমে গেলো। “টেকি (শত্রুপক্ষের বিমান)” বলে চিৎকার করে উঠলো সে।

সাথে সাথেই মাদুরের উপর উপুর হয়ে গেলো সাচিকো; কানগুলো ঢেকে এবং চোখগুলো বুজে রইলো সে। এটা কি কোনো খেলা ছিলো?

সকাল ১১টা বেজে ২ মিনিট। ফ্যাট ম্যান বিষ্ফোরণের অত্যুজ্জ্বল আলোতে, প্রচণ্ড শব্দে, ভয়াবহ বিষ্ফোরণে প্রকম্পিত হয়ে উঠলো পুরো নাগাসাকি নগরী।

Image Source: Business Insider

সেদিনের রাশি রাশি মেঘই আসলে নাগাসাকিবাসীকে বিশাল বড় ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছিল। নির্ধারিত লক্ষ্য বরাবর ফেলতে না পেরে পাইলট বোমাটি নিক্ষেপ করেছিলেন উরাকামি উপত্যকায়, যার আশেপাশে থাকা পর্বতমালা সতর্ক প্রহরীর ন্যায় বুক আগলে রক্ষা করেছিল তার সন্তানদের।

লিটল বয়ের তাণ্ডবে হিরোশিমার যেখানে ৯২ ভাগই ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল, সেখানে এর থেকেও শক্তিশালী ফ্যাট ম্যানের প্রভাবে নাগাসাকির ধ্বংসের হারটা কমই ছিলো, মাত্র ৬০ শতাংশ।

মিতসুবিশি সমরাস্ত্র কারখানাও এতে ভালোই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বোমা হামলার প্রভাবে ৩৫-৪০ হাজার মানুষ তৎক্ষণাৎ মারা যায়, যাদের মাঝে ছিলো ২৩,২০০-২৮,২০০ জাপানী শ্রমিক, ২ হাজারের মতো কোরীয় দাস-শ্রমিক এবং ১৫০ জন জাপানী সেনা।

বিধ্বস্ত নাগাসাকি; Image Source: Hiroshima and Nagasaki Remembered

জ্বালানীস্বল্পতার ফলে অকিনাওয়ার রানওয়ে পর্যন্ত বক্সকারকে নিতে এবং পরবর্তীতে সেটাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশ ঝুঁকিই নিতে হয়েছিল বক্সকারের ক্রুদের।

এ কথা অনস্বীকার্য যে, চার্লস সোয়েনীর মিশনকে পুরোপুরিভাবে সফল বলার জো নেই। কারণ, তিনি টার্গেট মিস করায় আগেরবারের থেকে ক্ষমতাধর বোমা দিয়েও ধ্বংসের মাত্রা বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়নি। স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টি মার্কিন সামরিক কর্মকর্তাদের একইসাথে হতাশ এবং ক্ষুব্ধ করে তুলেছিল। জেনারেল কার্টিস লিমে’র (চিফ অফ স্টাফ, স্ট্রাটেজিক এয়ার ফোর্স) সাথে গুয়ামে দেখা করেন কর্নেল টিবেটস এবং মেজর সোয়েনী। সেখানে সোয়েনীকে কটাক্ষ করেই লিমে বলেন, “তুমি সবকিছুই ভণ্ডুল করে দিলে, তাই না?” জবাবে কিছুই বলেননি সোয়েনী। পরক্ষণেই টিবেটসের দিকে ফিরে লিমে আবার বলেছিলেন, এ বিষয়ে অধিকতর তদন্তে আসলে কোনো লাভই হবে না। তাই এটা নিয়ে জল আর বেশি দূর গড়ায়নি।

বক্সকারের ককপিটে সোয়েনি; Image Source: Sachiko – A Nagasaki Bomb Survivors Story

এই সিরিজের পূর্ববর্তী পর্বসমূহ

১) পর্ব – ১

২) পর্ব – ২

৩) পর্ব – ৩

This article is in Bangla language. It describes the story of Sachiko, a hibakusha from nagasaki. Necessary references have been hyperlinked inside.

Reference Book

1. Sachiko - A Nagasaki Bomb Survivors Story by Caren Stelson

Feature Image: itv.com

Related Articles