Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

সাচিকো: পারমাণবিক বোমা হামলা থেকে বেঁচে গিয়েছিল যে মেয়েটি (পর্ব – ৫)

দ্য এন্ড অফ দ্য ওয়ার্ল্ড

আগস্ট ৯, ১৯৪৫

অদ্ভুত, চোখধাঁধানো এক আলো জ্বলে উঠলো আকাশজুড়ে। লাল, নীল, সবুজ- হরেক রকমের রঙ। প্রচণ্ড উত্তপ্ত, কানে তালা লাগিয়ে দেয়া, ঘূর্ণিঝড়ের মতো শক্তিশালী বাতাস ধেয়ে এলো। বিষ্ফোরণের কেন্দ্রস্থলে বিশালাকার এক অগ্নিকুণ্ড জন্ম নিলো, যার তাপমাত্রা ছিলো সূর্যের পৃষ্ঠদেশের চেয়েও বেশি।

Image Source: Pixels

মাটি কেঁপে উঠলো।

সাচিকোকে কে যেন শূন্যের ছুঁড়ে দিলো। পরক্ষণেই আবার সজোরে ভূমিতে আছড়ে পড়লো সে।

পাথরের টুকরা, ভাঙা টাইলস, গাছের শাখা-প্রশাখা, পাতা- সবকিছু তার উপর একে একে পড়তে লাগলো। ক্রমশ এগুলোর নিচে চাপা পড়তে লাগলো সে। নাকে-মুখে ধুলাবালি ঢুকে গিয়েছিল তার। বিষ্ফোরণের কেন্দ্রস্থল থেকে মাত্র ৯০০ মিটার দূরে মাটিতে পড়ে কাঁপতে লাগলো মেয়েটি।

বিধ্বস্ত উরাকামি ক্যাথেড্রাল; Image Source: Wikimedia Commons

বাতাসের তোড়ে বৈদ্যুতিক তারগুলো ছিড়ে গিয়েছিলো, দুমড়ে-মুচড়ে গিয়েছিল রাস্তায় থাকা গাড়িগুলো, কাচ ভেঙে গিয়েছিল জানালার, কব্জা ভেঙে বেরিয়ে এসেছিলো অনেক দরজা, উল্টে পড়েছিলো অনেক ঘরবাড়ি, এবং ভাঙা কাচের টুকরাগুলো বাতাসে বুলেটের মতোই ছুটে যাচ্ছিলো। নাগাসাকি মেডিকেল কলেজ ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল, ভেঙে পড়েছিলো উরাকামি ক্যাথেড্রাল, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো স্যানো মঠও। কর্পূর গাছগুলোর বাকল উঠে গিয়েছিলো, অনেক গাছই উপড়ে গিয়েছিল, আগুনে পুড়ে কালো হয়ে যাওয়া গাছগুলোর দাঁড়িয়ে সাক্ষ্য দিচ্ছিলো, কী ভয়াবহ ঝড়টাই না বয়ে গেছে তাদের উপর দিয়ে। স্যানো মঠের পাথুরে গেটটি ভারসাম্যহীনভাবে, পুড়ে যাওয়া একটি পা নিয়েই দাঁড়িয়ে ছিলো। গান গাইতে থাকা ঘুরঘুরে পোকাগুলোও যেন কোথায় হারিয়ে গেলো।

ওদিকে নাগাসাকির আকাশে, প্রায় ২ মাইল (৩.২ কিলোমিটার) উপরে, ধীরে ধীরে জমাট বাধলো একটি পারমাণবিক মেঘ, যা দেখতে ছিলো অনেকটাই বৃহদাকায় মাশরুমের মতোই।

আগুন চারদিকে ছড়িয়ে গেলো। ছাদের টাইলসগুলো পুড়ে গেলো। ল্যাম্পপোস্টগুলো গলে নুয়ে পড়লো। রাস্তাগুলো ধিকিধিকি করে জ্বলতে থাকলো। রাস্তা বলতে সত্যিকার অর্থে কিছুই রইলো না।

পাক খেতে খেতে সেই আগুনে মেঘটি আরও উপরের দিকে উঠতে লাগলো, যেন এটা জীবন্ত কোনো এক সত্ত্বা।

Image Source: Khan Academy

একসময় এটা পুরো আকাশটাকেই ছেয়ে ফেললো। ধূসররঙা, মোটা কম্বলের মতো ঢেকে দিলো সূর্যটাকে। নাগাসাকির বুকে ভরদুপুরে নেমে এলো রাতের অন্ধকার।

সাচিকো একটুও নড়াচড়া করতে পারছিলো না। ধ্বংসস্তূপের নিচে থেকে সে কেবল তার বন্ধুদের আর্তচিৎকারই শুনতে পাচ্চিলো, “মা, মা, আমাকে বাঁচাও।

সাচিকোও সাহায্য চেয়ে চিৎকার করতে চাইলো। কিন্তু তার নাক, মুখ, কান আর গলার ভেতরে এত পরিমাণে ধূলাবালি আর ছাই জমে ছিলো যে, গলা দিয়ে টুঁ শব্দটাও বের হলো না। কোনোকিছু যেন তার গলা চেপে ধরেছিলো। কোনোমতে নিঃশ্বাস নিচ্ছিলো সে।

সাচিকোর দম বন্ধ আসছিলো। কতক্ষণ যে সে এই ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে ছিলো, তা সে নিজেও জানে না। হঠাৎ করে কেউ এসে তার গোড়ালিতে চাপ দিলো। গায়ে হাত দিয়ে বুঝতে চাইলো সে বেঁচে আছে কি না। সেই শক্ত হাত দুটো এরপর তার পা ধরে সজোরে টান দিলো। কিন্তু ঘাড়ের ওখানে শক্ত কিছুর কারণে তার মাথাটা আটকেই রইলো।

আবার সেই মানুষটি তার গায়ে হাত দিয়ে বুঝতে চাইলেন অবস্থা। সাচিকোর হাত ধরে টানতে লাগলেন তিনি। আস্তে আস্তে ধূলাবালি, গাছের পাতা আর শাখা-প্রশাখার আড়াল থেকে বের হয়ে আসতে লাগলো মেয়েটির ছোট্ট দেহখানি। পাথরের সাথে চিবুকে ঘষা লাগলো তার। মানুষটি এবার কোমরে ধরে তাকে একটানে বের করে আনলেন। সাচিকোর মাথাটা কেমন যেন করতে লাগলো, গলার ভেতর প্রচণ্ড যন্ত্রণা হতে শুরু করলো। চোখের নিচেও ব্যথা করছিলো। তার সামনে লম্বা মতোন কেউ একজন এসে দাঁড়ালো। আস্তে আস্তে লোকটিকে চিনতে পারলো সাচিকো।

মামা!

সাচিকো”, ঘাড়ের ওখানে তাকে ধরে রেখেছিলেন মামা।

সাচিকো” বলে চিৎকার করে উঠলেন মা। উন্মাদের মতো লাগছিলো তাকে দেখতে, পুরো মুখ জুড়ে ঘাম আর কালিতে মাখামাখি হয়ে ছিলো।

সাচিকো, অন্য বাচ্চারাও কি এখানেই আছে?

সাচিকো উত্তর দিতে চাইলো, কিন্তু তার গলা দিয়ে কোনো শব্দ বেরোলো না। সাথে সাথেই মামা তাকে উল্টো করে ঘুরিয়ে ঘাড়ের পেছন দিকে আঘাত করতে লাগলেন। ক্রমাগত কাশতে লাগলো সে, থুথু ফেলতে লাগলো, দম বন্ধ হয়ে আসতে লাগলো। অনেক কষ্টে কোনোমতে নিঃশ্বাস নিলো সাচিকো।

বিধ্বস্ত স্যানো মঠ; Image Source: CNN

পুরো শহরটাই ধ্বংস হয়ে গেছে। চারদিকে কোনো বাড়ি, কোনো গাছপালাই আর অক্ষত অবস্থায় ছিলো না। কোনো পাতা, কাণ্ড কিংবা ঘাসও আর অবশিষ্ট ছিলো না। টুকরো টুকরো কাগজ আকাশ থেকে পড়তে লাগলো।

মামা আর সময় নষ্ট করলেন না। হাতের বেলচাটা নিয়ে দ্রুতই তিনি সাচিকোর বন্ধুদের ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে উদ্ধার করে আনলেন। একে একে চারজনকেই পাশাপাশি শোয়ানো হলো। তাদের প্রত্যেকের মুখই ময়লা দিয়ে নোংরা হয়ে গিয়েছিল।

চারজনের কেউই আর বেঁচে ছিলো না। হতভম্ব সাচিকো মায়ের ছেঁড়া কিমোনোয় মুখ লুকালো।

মামা হঠাৎ উধাও হয়ে গেলেন। কিছুক্ষণ পর মিসাকে নিয়ে ফিরে এলেন তিনি। মাটিতে বসে অদ্ভুতভাবে আকাশের দিকে তাকিয়েছিল মেয়েটি। এমন অবস্থাতেই মামা তাকে খুঁজে পান। দেখে মনে হচ্ছিলো, মিসা তেমন একটা শারীরিক আঘাত পায়নি। মা তাকে নিজের আরো কাছে নিয়ে আসলেন।

কিন্তু আকি কোথায়? ইচিরো কোথায়? ছোট্ট তোশিই বা কোথায়?

খোঁজাখুঁজির সময়টাও আসলে তখন ছিলো না। ধোঁয়া এবং পোড়া রাবারের ঝাঁঝালো গন্ধে ভারী হয়ে গিয়েছিলো সেখানকার পরিবেশ। টেলিফোনের খুঁটি, ঘরবাড়ি থেকে শুরু করে চলার পথে যা কিছু পাচ্ছিলো, সবই সাপের ন্যায় নিজের পেটে চালান করে দিচ্ছিলো আগুন। আগুন খুব দ্রুতই কাছাকাছি চলে আসছিলো। আশেপাশের সবাই জ্বলন্ত এ অগ্নিকুণ্ড থেকে বাঁচার আশায় পাহাড়ের দিকে ছুটছিলো।

Image Source: History

আমার পেছন পেছন আসো”, চিৎকার করে উঠলেন মামা। মিসাকে কাঁধে তুলে নিলেন তিনি। মা এবং মামা দুজনেই মৃত বাচ্চাগুলোকে বয়ে নিয়ে চললেন। তারা সাকামোতো সিমেট্রির মধ্য দিয়েই পাহাড়ের দিকে যেতে থাকলো।

পথ দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন মামা।

খালি পায়ে মামার পিছু পিছু যাচ্ছিলো সাচিকো। বিষ্ফোরণে তার জুতোজোড়া কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। ধোঁয়া এবং ধূলাবালির কারণে ক্রমাগত কাশতে কাশতেই পাহাড় বেয়ে উপরে উঠতে লাগলো সে। একটু পরপরই হোঁচট খাচ্ছিলো মেয়েটি। চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছিলো অশ্রুর ধারা। পায়ের নিচে থাকা মাটির উত্তাপ বাদে আর কিছুই অনুভব করতে পারছিলো না সে।

সবার সারা গায়েই কালি-ঝুলি মাখা ছিলো। অসম্ভব পিপাসার্ত মানুষগুলো ক্লান্তির চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে গিয়েছিলো। মা, সাচিকো, মিসা এবং সাচিকোর মৃত সেই বন্ধুদেরকে পাহাড়ের একপাশে রাখলেন মামা। সাচিকোর মুখমণ্ডল বেয়ে ঘাম গড়িয়ে পড়ছিলো।

তোশি কোথায়?”, চিৎকার করে উঠলেন মা। তিনিও ক্রমাগত কেঁদে চলেছিলেন। মুরগির পেছনে ছোটার সময় তিনি তোশিকে বাগানেই রেখে এসেছিলেন।

এখানে অপেক্ষা করো”, এটুকু বলেই মামা পাহাড় থেকে আবার নামতে লাগলেন।

মা, সাচিকো আর মিসা নিঃসাড়ভাবে বসে রইলো। তাদের সামনে শহরটা দাউদাউ করে জ্বলছিলো।

হঠাৎ করেই কেউ চিৎকার করে উঠলো।

আকি?

হ্যাঁ, আকিই! মায়ের সামনে দাঁড়িয়ে ঘটনার ভয়াবহতায় কাঁপতে লাগলো সে। জানালো, কীভাবে ঘর ভেঙে পড়ার পর ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে বের হয়ে এলো সে, কীভাবে সাকামোতো সিমেট্রির মধ্য দিয়ে আসতে আসতে একসময় তাদের খোঁজ পেলো। মামা, ইচিরো কিংবা তোশি- কাউকেই সে দেখেনি।

ব্যথায় কুঁকড়ে উঠলো আকি। তার ছেঁড়া শার্টের মধ্য দিয়ে ডান কাঁধ এবং পিঠের উপরিভাগ দেখতে পাচ্ছিলো সাচিকো। দুটো জায়গাই পুড়ে গিয়েছিলো।

পেছন থেকে পরিচিত স্বরে আবারও কেউ চিৎকার করে উঠলো।

তাদের সামনে এসে হোঁচট খেলো ইচিরো। ঘুরঘুরে পোকা ধরার জালটা তখনও তার হাতেই ছিলো।

প্রথমে আকি, এরপর ইচিরো; একেবারেই কাকতালীয় ঘটনা!

ইচিরোর চোখ জুড়ে ছিলো ভয়ের ছাপ। ছুটে আসা ধারালো বস্তু মাথায় লেগে ঘুরঘুরে পোকা ধরতে থাকা অবস্থাতেই তার সামনে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে তার বন্ধু। ইচিরো তখনই দৌড়ে বাড়ির দিকে ছুটে গিয়েছিলো। কিন্তু পুরো বাড়িটাই ভেঙে পড়েছে। ভেতরে কেউ ছিলো না।

Image Source: International Campaign to Abolish Nuclear Weapons

মা, সাচিকো, মিসা, আকি এবং ইচিরো একসাথে বসে রইলো। সকলেই ভয় ও দুশ্চিন্তায় কাঁপছিলো। সেই সাথে অপেক্ষা করছিলো মামার ফিরে আসার জন্য। পাহাড়ের পাশে দাঁড়িয়ে মানুষজন মা, বাবা, ভাই, বোনের নাম ধরে জোরে জোরে ডাকছিলো। পালাতে বদ্ধপরিকর মানুষগুলো হাত এবং হাঁটুতে ভর দিয়ে হলেও এগোচ্ছিলো। অনেকের চুলই আগুনে পুড়ে গিয়েছিল। কয়েকজনের পিঠ পুড়ে কালো হয়ে গিয়েছিল। কয়েকজনের মুখ কুমড়ার মতো ফুলে গিয়েছিল। কারো কারো হাত তাদের সামনেই ঝুলে ছিল, চামড়া ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। কাতর স্বরে তারা কেবলই বলছিল, “দয়া করে আমাকে সাহায্য করো।

কী হয়েছে?

কেউ জানে না।

মামা ফিরে এলেন।

সাচিকো পেছনের দিকে সরে গেলো।

মা তার মুখটা হাত দিয়ে ঢেকে ফেললেন।

তোশিকে কোলে নিয়ে মামা স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে রইলেন। তার মাথা এফোঁড়-ওফোঁড় করে একটি কাঠের টুকরা চলে গিয়েছে।

মা ধীরে ধীরে তার মৃত সন্তানের দিকে এগিয়ে গেলেন। ধূলায় ধূসরিত সন্তানের গাল নিজের গালে চেপে ধরলেন।

একসময় ধূলোমাখা গোধূলি নেমে এলো।

ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় কেটে গেলো।

হঠাৎ করে আরো একটা পরিচিত গলার স্বর ভেসে আসলো; বাবার গলা।

আরো একটি কাকতালীয় ঘটনা। এ ছাড়া এটাকে আর কী-ই বা বলা যায়?

পোতাশ্রয়ের কাছে এক অসুস্থ বন্ধুকে দেখতে গিয়েছিলেন বাবা। বিষ্ফোরণের পর যত দ্রুত সম্ভব তিনি বাড়ির পথ ধরেন। ৩ মাইলের মতো পথ হেঁটে আসায় ঘণ্টাখানেক সময় লেগে গিয়েছিল। মায়ের কোলে মৃত তোশিকে দেখে তিনি থমকে গেলেন। নিষ্পলক চোখে নিজের মৃত সন্তানের দিকে চেয়ে রইলেন তিনি।

দূরের আগুনের লেলিহান শিখা থেকে ক্রমাগত শব্দ ভেসে আসছিলো।

পাহাড়গুলোর আহতদের দিয়ে ভরে গিয়েছিল।

Image Source: Sachiko – A Nagasaki Bomb Survivors Story

মা আর তোশির দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিলেন বাবা, তাকালেন মামার দিকে। এখানে থাকাটা ঠিক হবে না। তাদেরকে দ্রুতই সাকামোতো সিমেট্রিতে ফিরে যেতে হবে। তারা (মৃতরা) সেখানেই নিরাপদে থাকবে। এরপরই পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন বাবা এবং মামা।

বন্ধুদের নিশ্চল দেহের দিকে একনজর চাইলো সাচিকো। সেদিন সকালেও তারা সবাই মিলে হাড়ি-পাতিল খেলেছিলো!

এই সিরিজের পূর্ববর্তী পর্বসমূহ

১) পর্ব – ১

২) পর্ব – ২

৩) পর্ব – ৩

৪) পর্ব – ৪

 

This article is in Bangla language. It describes the story of Sachiko, a hibakusha from nagasaki. Necessary references have been hyperlinked inside.

Reference Book

1. Sachiko - A Nagasaki Bomb Survivors Story by Caren Stelson

Feature Image: History

Related Articles