Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

স্বপ্নাদিদি: দাউদ ইব্রাহীমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণাকারী এক নিরীহ গৃহবধূ

সময়টা আশির দশক। মুম্বাই পুলিশের হেড কনস্টেবল ইব্রাহীম কসকরের ছেলে দাউদের নামে সদাত্রস্ত মায়ানগরী মুম্বাই। ১৯৮৬ সালে দেশ ছাড়া হন দাউদ। তার আস্তানা হয় দুবাইয়ের জুমেরাহ বিচ সংলগ্ন ‘হোয়াইট হাউজ’। দুবাইয়ে থেকেই মুম্বাইয়ের অপরাধ জগতের অঘোষিত সম্রাট তিনি। দাউদের ডি কোম্পানীতে একে একে যোগ দিয়েছেন ছোটা শাকিল, ছোটা রাজন, আবু সালেম, শারদ শেঠীরা। দাউদের নাম শুনলেই চাঁদা দিয়ে দিতো শিল্পপতিরা। মুম্বাই নগরীর প্রতিটা বার থেকে প্রতি রাতে দাউদের নামে টাকা তুলতো তার সাঙ্গপাঙ্গরা। স্বর্ণ চোরাচালান, আবাসন ব্যবসা থেকে চাঁদা আদায়, কন্ট্রাক্ট কিলিং, অস্ত্র সরবরাহ, হুণ্ডি ব্যবসা- সব জায়গা থেকে দাউদ টাকা কামাই করছে প্রকাশ্যেই।

দুবাইয়ে বসেই সে একশ্রেণীর রাজনীতিবিদ ও সরকারি কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে চলে। অপ্রতিদ্বন্দী দাউদকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো তখন কেউ নেই। দাউদ বিরোধী অরুণ গলি মাঝে মাঝে মাথা তোলে, দাউদ বাহিনীর দাবড়ানি খেয়ে আবার ঝিমায়। ঠিক সেই মুহুর্তে দাউদকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে বসেন এক রক্ষণশীল গৃহবধু। দাউদকে দুনিয়া থেকেই সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন এই নারী। তারপর কী হলো? চলুন সেই কাহিনীই জানা যাক।

নারী-পুরুষ যেই হোক না কেন, দাউদের শত্রুর খাতায় নাম উঠলে তার বেঁচে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ হতো; source: youtube.com

প্রতিশোধের আগুন জ্বলে উঠলো আশরাফুন্নেসার চোখে

তিনি ছিলেন খুব সুন্দরী একজন নারী। আশরাফুন্নেসা খাতুন তার নাম, ডাক নাম আশরাফ। প্রেম করে বিয়ে করেন মেহমুদ নামের এক তরুণকে। সুখের সংসার ছিলো তাদের। আশরাফ জানতে পারেননি তার স্বামীর পেশা কী। শুধু দেখতেন, মাঝে মাঝে তার স্বামী দুবাই যাওয়া-আসা করে। একদিন জানতে পারেন, স্বামীর বন্ধুবান্ধবরা তাকে মেহমুদ কালিয়া নামে ডাকে, গায়ের রং কালো হওয়ার কারণে। খুব মন খারাপ করে স্বামীকে বকেছিলেন তিনি, এসব লোকজনের সাথে না মিশতে বলেছিলেন। স্বামী এসব শুনে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। দুবাই একদিন মেহমুদ ফোন করে তার স্ত্রী আশরাফকে। “প্রিয়তমা, আজ সন্ধ্যার আগেই আমি বোম্বে চলে আসব। বিকেল ৪টার মধ্যে এয়ারপোর্টে চলে যেও।” স্বামীকে এয়ারপোর্ট থেকে রিসিভ করবেন, এই আনন্দে আশরাফ কিশোরীদের মতো নাচতে লাগলেন, নির্দিষ্ট সময়ে তিনি এলেন এয়ারপোর্টে এলেন। কিন্তুু স্বামীকে কোথাও দেখলেন না আশরাফুন্নেসা। তিনি দেখলেন, এয়ারপোর্ট ভর্তি শুধু পুলিশ আর পুলিশ। তার মন চমকে উঠলো। তার স্বামীকে কি পুলিশ গ্রেফতার করেছে? আরে না, ওই তো দেখা যাচ্ছে মেহমুদকে। স্বামীকে এক নজর দেখেই আশরাফ তার দিকে দৌড় দিলো। আবার হাওয়া। কোথায় গেলো মেহমুদ? ততক্ষণে গুলির শব্দে প্রকম্পিত এয়ারপোর্ট। কারা গোলাগুলি করছে? কিছুই বুঝতে পারছেন না আশরাফ। একটু পর একজনকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলেন, পুলিশ-সন্ত্রাসী গুলি বিনিময় হচ্ছে। গুলিবিদ্ধ এক সন্ত্রাসীকে মারাত্মক আহত অবস্থায় জেজে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। হায় হায়! তাহলে কি তার প্রিয়তম স্বামীই সন্ত্রাসী? আশরাফ জানতেন, তার স্বামী হয়তো কিছু দুষ্ট লোকের সাথে চলাফেরা করে, তাই বলে গোলাগুলি করার মতো সন্ত্রাসী তো সে অবশ্যই নয়!

মানুষ ভাবে এক, হয় আরেক। জেজে হাসপাতালের করিডোরে পৌঁছেই শুনতে পেলেন আশরাফ, গুলিবিদ্ধ সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। তাড়াতাড়ি মর্গে গিয়ে দেখলেন তিনি, গুলিবিদ্ধ লাশটি আর কারো নয়, তারই স্বামীর।

অধিক শোকে পাথর হয়ে গেলো আশরাফ। এ কী হলো তার? সুখের সংসার ভেঙে খানখান হয়ে গেলো নিমিষেই। নাড়িওয়ালি কবরস্থানে লাশ দাফন হলো মেহমুদের। কবরের উপর শুয়ে বেহুঁশের মতো কাঁদতে লাগলেন আশরাফ। কতক্ষণ কেটে গেছে, সে খেয়াল নেই তার।

“মা ,একটু পানি পান করো”- এক বৃদ্ধের ডাক শুনে ফিরে তাকালেন আশরাফ।

বৃদ্ধ বলতে লাগলেন, “তোমার স্বামীকে আমি চিনি। বড় ভালো মানুষ ছিলেন। আমার নাম উসমান। তুমি কি জানো, তোমার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে? তোমার স্বামীর মতো আমারও একজন কমন শত্রু রয়েছে। সে মুম্বাই থাকে না। দুবাইয়ে বসেই সে এই কাজ করেছে।”

– হত্যা করা হয়েছে? আমি যে শুনলাম পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে?

– বন্দুকযুদ্ধ আসলে সাজানো নাটক। মুম্বাই নগরীর অধিকাংশ পুলিশের পেটে চর্বি জমেছে দাউদের টাকায়। পুলিশ অফিসার ইমানুয়েল আমলিককে দিয়ে দাউদ তোমার স্বামীকে হত্যা করে এই এনকাউন্টারের নাটক সাজিয়েছে।

– কিন্তুু আমার স্বামীকে কেন মারবে? অন্য কোনো উপায়ে কি ঝামেলা মেটানো যেতো না?

– আমি সব জানি। তোমার স্বামী ছিলো দাউদের লোক। এবার দুবাই গিয়ে দাউদের সাথে তার বিস্তর ঝগড়া হয়েছে। তাই দাউদ তোমার স্বামীকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিয়েছে।

মুম্বাই নগরীর অধিকাংশ পুলিশের পেটে চর্বি জমেছিল দাউদের টাকায়; source: AP Photo/The Quint

মুহুর্তেই কঠিন হয়ে গেলো আশরাফের মুখ। স্বামী হারানোর শোক রুপান্তরিত হলো প্রতিশোধের আগুনে। বৃদ্ধের সামনেই কবরের মাটি হাতে নিয়ে বললেন তিনি, “আমিও দাউদকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেব। স্বামী হত্যার প্রতিশোধ নিতে যা যা দরকার, আমি সবই করবো।

বৃদ্ধ এবার বললেন, “মা, তুমি যদি প্রতিশোধ নিতে চাও, তাহলে চলো হুসাইন উসতারার কাছে। উসতারা দাউদের একজন ঘনিষ্ঠ লোক ছিলো। তার সাথে মিলেই তোমার প্ল্যান সাজাতে পারো।

আশরাফ উন্মাদিনী হয়ে গেলেন যেন। উসতারার কাছে তার যেতেই হবে। উসমানের কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে তিনি একদিন গেলেন উসতারার বাড়িতে। পরিচয় দিয়ে আলাপ শুরু করলেন আশরাফ।

– আমার নাম আশরাফ। গত সপ্তাহে আমার স্বামী মেহমুদ খুন হয়েছে।

– শুনে খুব মর্মাহত হলাম। জবাব দিলেন উসতারা।

– আমার স্বামীকে যে হত্যা করেছে, তাকে আমি খুন করতে চাই।

– কে আপনার স্বামীকে হত্যা করেছে?

– দুবাই নিবাসী মুম্বাইয়ের ডন দাউদ ইব্রাহীম।

– ওহ আচ্ছা! আপনি দাউদ ইব্রাহীমকে খুন করতে চান?

– হ্যাঁ!

হুসাইন উসতারার খুব হাসতে ইচ্ছে হলো। কিন্তু সে হাসি থামালো খুব কষ্টে। কারণ, মাত্র ৬ দিন হলো মেয়েটি বিধবা হয়েছে। স্বামী হারানোর শোক সইতে না পেরে ভারতের সবচেয়ে দুর্ধর্ষ গ্যাংস্টারকে খতম করার অলীক স্বপ্ন তার থাকতেই পারে।

মুখ সামলে জিজ্ঞেস করলেন উসতারা, “কিন্তুু আমি কি করতে পারি?”

“আমি শুনেছি দাউদ আপনার শত্রু। আপনি অবশ্যই আমাকে পিস্তল চালানো শেখাবেন। আর আমাকে দুবাই নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করবেন। আমি দাউদকে নিজ হাতে হত্যা করবো।” আশরাফুন্নিসার দৃঢ় জবাব।

হুসাইন উসতারা দেখলেন, এ তো ভারী বিপদ! তবুও তাকে বললেন পরদিন দুপুরের পর আসতে।

পরের দিন দুপুরে হুসাইন উসতারা খাবার খাচ্ছিলেন। দরজায় টোকা পড়লো। ভেতরে গেলেন আশরাফ। বললেন, “আজ আমাকে পিস্তল চালানো শেখাতে হবে।

উসতারা লক্ষ্য করলেন, পিস্তল চালানো শেখার জন্য হন্যে হয়ে উঠেছে মেয়েটি। কয়েকদিন যাবত হয়তো ঘুম নেই তার। চোখ দুটো ফোলা ফোলা।

স্বামী হারানোর শোকে ভারতের সবচেয়ে দুর্ধর্ষ এই গ্যাংস্টারকে খতম করার অলীক স্বপ্ন দেখেছিলেন আশরাফুন্নেসা; source: The Quint

পিস্তল চালানোর আগে উসতারা প্রথমেই তাকে শেখালেন পিস্তলের গঠন ও কাজকর্ম। পিস্তলের বিভিন্ন অংশের নাম, গ্রিপ, ট্রিগার, ম্যাগাজিন, ব্যারেল ইত্যাদি। উসতারা শেখাতে লাগলেন, “ট্রিগারে ডান হাত রাখুন এবং নিজেকে আট থেকে দশ মিটার দূরে সরিয়ে নিন।” পিস্তলে গুলি লোড করে উসতারা তার হাতে দিয়ে বললেন, “এবার নিশানায় তাক করুন।” হঠাৎ হাত থেকে পিস্তল পড়ে গেলো। কিন্তুু পরক্ষণেই আবার দ্বিগুণ উৎসাহে আশরাফ হাতে পিস্তল তুলে আগের মতো পজিশন নিলেন। এভাবে টানা দু’মাস চেষ্টা করে পিস্তল চালানো রপ্ত করলেন আশরাফ। এবার তার ইচ্ছে, মোটরবাইক চালানো শিখবেন। তাহলে অবশ্যই বোরখা খুলে সেলোয়ার-কামিজ পড়তে হবে তাকে। আশরাফ বললেন, “মেহমুদ হত্যার প্রতিশোধ নিতে আমার যা যা করা দরকার, সবই করবো।

যেই কথা, সেই কাজ। কয়েকদিনের চেষ্টায় মোটরবাইক চালানো শিখলেন আশরাফ। এই ফাঁকে উসতারা তাকে একটা বুদ্ধি দিলেন। তিনি আশরাফকে বললেন, “তুমি দাউদের চিরশত্রু অরুণ গলির কাছে যেতে পারো। অরুণ গলি তোমাকে সাহায্য করতে পারবে দাউদকে শায়েস্তা করতে।

আশরাফ এবার অরুণ গলির কাছে গেলেন। সব শুনে অরুণ গলি বললেন, “ঠিক আছে, দাউদবিরোধী লোকদের আমি সাহায্য করবো। কিন্তুু নারী হয়ে তুমি আমার তেমন কোনো উপকার করতে পারবে না। তুমি তোমার মতো চেষ্টা করো।

নিরাশ আশরাফ উসতারার কাছে এসে বললেন, “অরুণ গলি একজন হিন্দু। আমি মুসলমান নারী বলে সে আমাকে বোধহয় বিশ্বাসই করে না। আমার নামটা হিন্দুদের মতো হলে, হয়তো হিন্দুু গ্যাংরা আমাকে সাহায্য করতে পারবে।

তার মানে তুমি কি নাম পাল্টাতে চাও?” উসতারা জিজ্ঞেস করলেন।

আশরাফ উত্তর দিলেন,

“আমিও তা-ই ভাবছি। আমার এমন একটা নাম দরকার, যাতে হিন্দু-মুসলমান সবাই আমাকে তাদের দলের বলে ভাবে। নামটা আমি ঠিক করে ফেলেছি। আমার নাম হবে স্বপ্না। কারণ স্বপ্না নামটি শুনলে হিন্দু-মুসলমান দু’ধর্মেরই মনে হয়। আর মেহমুদ হত্যার প্রতিশোধ নেওয়া আমার একটা স্বপ্ন (হিন্দিতে সাপ্না)। তাই, স্বপ্না নামটাই যথার্থ।”

সেদিন থেকে আশরাফুন্নেসা মুম্বাইয়ের অপরাধজগতে পরিচিত হলেন স্বপ্নাদিদি নামে।

মিশন যখন ইম্পসিবল

অরুণ গলির কাছে নিরাশ হয়ে স্বপ্না এবার উসতারার সাথে মিলে প্ল্যান করলেন, কীভাবে দাউদের অপরাধ সাম্রাজ্যের ক্ষতি করা যায়। পুলিশের সাথে মিলে গেলেন স্বপ্না। ধীরে ধীরে স্বপ্না মিশে গেলেন মুম্বাইয়ের অপরাধজগতের সাথে। একসময় আপাদমস্তক বোরখা পরিহিত মেয়েটি এখন জিন্স, টি শার্ট পড়ে ঘুরে বেড়ায়। নগরীর যে সব বার থেকে প্রতিরাতে চাঁদা তুলতো দাউদের লোকজন, সেখানে গিয়ে স্বপ্না খবর নেন দাউদের লোকজন ও তার কাজকারবার সম্পর্কে। স্বপ্নার কাছ থেকে তথ্য পেয়ে পুলিশ দাউদের কিছু আস্তানা সিলগালা করে দেয়। ধরা পড়ে বহু লোক। উসতারা একদিন বললেন স্বপ্নাকে, “চলো আমরা নেপালে যাই। কারণ, দাউদ যত বেআইনী অস্ত্র ভারতে ঢোকায়, সব আসে নেপাল হয়ে। আমরা যদি দাউদের অস্ত্রের চালান সম্পর্কে পুলিশকে খবর দেই, তাহলে দাউদের মস্ত বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।

সাথে সাথে রাজি হয়ে গেলেন স্বপ্না। যে মেয়ে আগে নিজের স্বামী ছাড়া আর কোনো পুরুষের সাথে কথাও বলেনি ঠিকমতো, সে এখন অন্য পুরুষের সাথে নেপাল যাবে। তার উদ্দেশ্য একটাই, স্বামী হত্যার প্রতিশোধ নেওয়া। নেপালে দাউদের অস্ত্র ব্যবসা দেখাশোনা করে রাম বাহাদুর সিং। উসতারা খবর পেলেন, নেপালে একে-৪৭ এর একটি চালান আসছে খুব শিগগীরই। উসতারা স্বপ্নাকে নিয়ে কাঠমান্ডু চলে গেলেন। তারা দুজন রাম বাহাদুরের লোককে হাত করে সেবার বেশ কয়েকটি একে-৪৭ ছিনিয়ে নেন। পরে ভারতের বাজারে চড়া দামে বিক্রি করে প্রচুর টাকা উপার্জন করেন তারা। এভাবে আরও বেশ কয়েকবার দাউদের অস্ত্র ব্যবসার ক্ষতি করেন তারা। প্রায় চার বছর কেটে যায় এভাবে।

শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ভিভিআইপি গ্যালারিতে দাউদের উপস্থিতি অনিবার্য ছিলো একসময়; source: Studio N News

সময়টা ১৯৯১ সালের দিকে। স্বপ্নাদিদি অপরাধজগতের স্থায়ী বাসিন্দা বনে গেছেন। প্রচুর টাকাপয়সা তার হাতে এসেছে। ইতোমধ্যে উসতারার সাথে তার ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। এক পুলিশকে বিয়ে করলেন স্বপ্নাদিদি। কিন্তুু মনের মধ্যে তার একটাই স্বপ্ন। দাউদকে দুবাই গিয়ে খুন করবেন তিনি। আরব আমিরাতের আরেক মরু শহর শারজাহতে তখন নিয়মিত ক্রিকেট আসর বসতো। স্টেডিয়ামের ভিভিআইপি গ্যালারিতে বসে তখন নিয়মিতই খেলা দেখেন দাউদ ইব্রাহীম। স্বপ্না মুম্বাই নগরীর নাগপাড়া, ডুংরি মহল্লার কিছু মুসলিম তরুণকে যোগাড় করে সব প্ল্যান সাজিয়ে ফেললেন। হকারের বেশে স্বপ্নার লোক ভিভিআইপি গ্যালারিতে ঢুকে হাজার হাজার মানুষের সামনে দাউদকে হত্যা করবে। কয়েক সেকেন্ডের ব্যাপার মাত্র। আত্মঘাতী হামলা যাকে বলে।

কিন্তুু এই ফাঁকে ঘটলো দুটি বিপত্তি। প্রথম বাধাটা সৃষ্টি হলো যখন মুম্বাই নগরীতে দাঙ্গা ও সিরিজ বোমা হামলার মতো ঘটনা ঘটলো। দাউদ হয়ে উঠলো ফেরারী। এরপর আর শারজাহ ক্রিকেট মাঠে বসেনি দাউদ। বসবেই বা কীভাবে, দাউদ তখন পাকিস্তানে চলে যায়। দ্বিতীয় ঝামেলাটা হলো স্বপ্নাদিদির কিছু লোক দাউদের সেকেন্ড ইন কমান্ড ছোটা শাকিলের কাছে সবকিছু বলে দিলো। খবরটা চলে গেলো দাউদের কাছে। স্বয়ং দাউদ ছোটা শাকিলকে নির্দেশ দিলো, স্বপ্নাদিদিকে খুন করতে। অবশেষে আসলো সেই ভয়াল কালো রাত।

১৯৯৪ সালের ঘটনা। স্বপ্নাদিদি তার রুমে শুয়ে আছেন। ছোটা শাকিলের পাঠানো চারজন ঘাতক স্বপ্নাদিদির বাসস্থান নাগপাড়ার হুজরা মহল্লায় ঢুকে পড়ে রাত দশটায়। প্রবল জ্বরে অসুস্থ হয়ে পড়া স্বপ্নাদিদিকে ঘর থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করে হায়েনার দল। তারা গুলি চালিয়ে চলে যেতে পারতো। কিন্তুু তাদেরকে হয়তো অন্যরকম নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।

স্বপ্নাদিদির হত্যাকান্ডের আলামত সংগ্রহে ঘটনাস্থলে ব্যস্ত পুলিশ; source: ishakashyap.blogspot.com

স্বপ্নাদিদির শরীর একটার পর একটা ছুরির আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত করে তোলে তারা। তার গোপনাঙ্গে কমপক্ষে ৩০ বার ছুরিকাঘাত করা হয়। স্বপ্নাদিদি চিৎকার করে সাহায্য চান। ভীতস্ত্রস্ত প্রতিবেশীরা কেউ এগিয়ে আসেনি। ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন স্বপ্নাদিদি। দাউদ সবাইকে বুঝিয়ে দিলো, তার বিরোধিতা করার পরিণাম কত ভয়াবহ হতে পারে।

 

তথ্যসূত্র: Zaidi, S. Hussain. 2011. Mafia Queens of Mumbai. Tranquebar Press, New Delhi. (Page: 93-152)

Related Articles