Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

শের খানের বাংলা অভিযান

১৫২৮ সালে বিহারের লোহানি রাজবংশের সুলতান মুহাম্মদ শাহ-এর ইন্তেকালের পর তার পুত্র সুলতান জালাল উদ্দিন লোহানি বিহারের সিংহাসনে বসেন। কিন্তু বয়সে তরুণ হওয়ায় সুলতানের প্রতিনিধি হিসেবে সুলতানেরই মায়ের অনুরোধে শের খান বিহারের দায়িত্ব নেন। শের খানের এই ক্ষমতাপ্রাপ্তি জালাল উদ্দিন লোহানীর আত্মীয়স্বজনেরা অবশ্য ভালো চোখে দেখেনি। তারা শুরু থেকেই শের খানের বিরোধীতা করতে লাগলো।

এদিকে বিহারের চলমান অস্থিরতার মাঝেই বিহারের জনগণ জালাল উদ্দিনের পরিবর্তে ইব্রাহীম লোদির ভাই মাহমুদ লোদিকে বিহারের মসনদে বসতে আমন্ত্রণ জানায়। মাহমুদ লোদি সানন্দে এসে বিহারের মসনদ দখল করে বসেন। মসনদে বসে তিনি আফগানদের তার অধীনে নিয়ে আসতে শুরু করেন। তার লক্ষ্য হিন্দুস্তান থেকে মুঘলদের তাড়িয়ে লোদি সাম্রাজ্য পুনরুদ্ধার করা।

হিন্দুস্তানে সদ্য প্রতিষ্ঠা পাওয়া মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা বাবর বুঝে ফেললেন আফগানদের আর কিছুদিন সময় দিলে তা হবে মুঘল সাম্রাজ্যের জন্য আত্মঘাতী। ১৫২৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি মাত্র ৩০,০০০ যোদ্ধা নিয়ে বাবর বিহারের দিকে যাত্রা করেন। এদিকে ততদিনে মাহমুদ লোদির বাহিনীর যোদ্ধার সংখ্যা দেড় লাখে গিয়ে ঠেকেছে।

সম্রাট জহির উদ দিন মুহাম্মদ বাবর; Image Source: Wikimedia Commons

বাবর বিহারের দিকে এগিয়ে এলে মাহমুদ লোদির করেকজন আমির বাবরের নিকট আনুগত্য স্বীকার করেন। ফলে আফগানরা হাল ছেড়ে দিতে শুরু করে। মাহমুদ লোদির বাহিনী থেকে বিপুল পরিমাণ সৈন্য দলত্যাগ করে পালিয়ে যায়। এ সময় বিহারের বৈধ উত্তরাধিকারী জালাল উদ্দিন লোহানী আর তার প্রতিনিধি শের খানও বাবরের আনুগত্য স্বীকার করে নেন।

এদিকে উল্লেখযোগ্য কোনো সংঘর্ষ ছাড়াই মাহমুদ লোদি পালিয়ে বাংলায় আশ্রয় নেন। ফলে ঘাঘরার যুদ্ধে চূড়ান্তভাবে বাবরের বিজয় অর্জন হয়। এসময় বার্ষিক কর প্রদানের বিনিময়ে জালাল উদ্দিন লোহানি আবারও বিহারের মসনদে বসার সুযোগ পান। শের খান ফিরে পান তার পুরনো মর্যাদা।

১৫৩০ সালের শুরুর দিকে সুলতান জালাল উদ্দিল লোহানির মা দুদু বিবি মৃত্যুবরণ করলে শের খান বিহারে সর্বেসর্বা হয়ে উঠতে থাকেন। বিহারের অন্যান্য আফগানদের ক্ষোভ ধীরে ধীরে পুঞ্জীভূত হতে থাকে।

এ সময় শের খানের সাথে হাজীপুরের শাসক মখদুম আলমের বেশ সখ্যতা গড়ে উঠে। মখদুম আলম সম্পর্কের দিক থেকে বাংলার সুলতান নুসরত শাহের শ্যালক ছিলেন।

১৫৩২ সালের শেষের দিকে বাংলার সুলতান নুসরত শাহ গুপ্তঘাতকদের হাতে নিহত হন। নুসরত শাহের সাবালক কোনো পুত্র সন্তান না থাকায় তার নাবালক পুত্র ফিরোজ শাহকে মসনদের উত্তরাধিকারী ঘোষণা করা হলো। এই ঘোষণায় বাঁধ সাধলেন নুসরত শাহেরই ভাই আবদুল বদর।

এদিকে সভাসদদের প্রচেষ্টায় ফিরোজ শাহ বাংলার মসনদে বসতে সক্ষম হন। তবে তার চাচা আবদুল বদরের সাথে শেষ পর্যন্ত ক্ষমতার লড়াইয়ে টিকে থাকতে পারলেন না। মসনদে বসার মাত্র ৩ মাস পরেই আবদুল বদর নিজের ভাইয়ের ছেলেকে হত্যা করে বাংলার মসনদে বসলেন। মসনদে বসে তিনি গিয়াস উদ্দিন মাহমুদ শাহ উপাধী ধারণ করেন।

১৫১৯ সালের একটি পর্তুগিজ ম্যাপে বাংলা সালতানাত; Image Source: Wikimedia Commons

গিয়াস উদ্দিন মাহমুদ শাহ বাংলার মসনদে আরোহণ করলে হাজীপুরের গভর্নর মখদুম শাহ বিদ্রোহ ঘোষণা করলেন। শের খানও মখদুম শাহকে সমর্থন দান করলেন। ফলে গিয়াস উদ্দিন মাহমুদ শাহ মুঙ্গেরের জেনারেল কুতুব খানকে বিহার বিজয় এবং মখদুম শাহকে দমন করতে বিহারের দিকে প্রেরণ করলেন।

বাংলার এই বাহিনী প্রেরণের কথা জানতে পেরে শের খান আতঙ্কিত হয়ে উঠেন। তিনি সেসময় আসলে কোনো যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। ফলে যেকোনো মূল্যে বাংলার সাথে সন্ধি স্থাপন করতে আগ্রহী ছিলেন তিনি। কিন্তু অপ্রতিরোধ্য বাংলা বাহিনী ক্রমেই তাকে পাত্তা না দিয়ে বিহারের দিকে এগিয়ে যেতে থাকলে শের খানও যুদ্ধের সিদ্ধান্ত নেন। তিনি আফগানদের এটা বোঝাতে সক্ষম হন যে, নিজেদের পিঠ বাঁচাতেই আফগানদের আবারও যুদ্ধে নামতে হবে।

১৫৩৩ সালের শুরুর দিকে কুতুব খানের নেতৃত্বে বাংলার সেনাবাহিনী আর শের খানের নেতৃত্বাধীন আফগান বাহিনী মুখোমুখি হয়। কিন্তু শের খানের দূরদর্শীতা আর কৌশলের ফলে বাংলা বাহিনীর শোচনীয় পরাজয় হয়। বাংলা সেনাবাহিনীর একটি বিশাল সংখ্যক হাতি, ঘোড়া আর অন্যান্য সম্পদ শের খান হস্তগত করতে সক্ষম হন। এছাড়াও বাংলার এক বিস্তীর্ণ ভূখন্ড তিনি নিজের অধীনে নিতে সক্ষম হন। আর যুদ্ধে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি তো হয়ই, এমনকি বাংলার এই বাহিনীর প্রধান কুতুব খান যুদ্ধে নিহত হন।

এদিকে বিভিন্ন কারণেই শুরু থেকেই শের খানের সাথে বিহারের আফগান লোহানিদের একটি দ্বন্দ্ব লেগেই ছিলো। ১৫৩৩ সালের দিকে এই দ্বন্দ্ব তুঙ্গে উঠে। এ সময় বিহারের আফগান লোহানিরা শের খানকে গোপনে হত্যা করার পরিকল্পনা করে।

লোহানিদের সাথে যখন শের খানের দ্বন্দ্বের শুরু, তখন থেকেই শের খান নিজের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা বলয় তৈরি করে নিয়েছিলেন। তিনি তার অশ্বারোহী বাহিনীর প্রায় ৪০০ জন যোদ্ধা পরিবেষ্টিত হয়ে দরবার কক্ষে প্রবেশ করতেন। অর্থাৎ, এই দুর্ভেদ্য নিরাপত্তা বলয় ভেদ করে শের খানকে দরবারে হত্যা করা সম্ভব হবে না।

জালাল উদ্দিন লোহানির আমিররা তাই শের খানকে রাজ প্রাসাদের অভ্যন্তরে ডেকে নিয়ে হত্যা করতে মনস্থির করে। তারা সেভাবেই নিজেদের পরিকল্পনার জাল বিস্তার করতে শুরু করে। কিন্তু সৌভাগ্য কিংবা দুর্ভাগ্য, সে যা-ই হোক না কেন, শের খান এই পরিকল্পনার কথা জেনে যান। তিনি বুঝে ফেলেন চূড়ান্ত আঘাত হানার সময় হয়ে এসেছে।

বিগত যুদ্ধ ও অন্যান্য উৎস থেকে শের খান যা সম্পদ অর্জন করেছিলেন, তিনি তা পুরোপুরি কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নেন। তিনি সেনাবাহিনীতে নতুন সৈন্য অন্তর্ভুক্ত করেন। উদার হস্তে তাদের বেতন ভাতা আর জায়গীর দেওয়া শুরু করেন। ফলে শের খান শুধুমাত্র তার প্রতিই অনুগত, এমন বিশাল সংখ্যক সৈন্যের জেনারেল হয়ে যান।

প্রথমেই নিজের শক্তি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে এবার শের খান লোহানিদের ঝাড়ে বংশ সাফ করার পরিকল্পনা হাতে নেন।

তবে শুরুতে তিনি সরাসরি সামরিক সংঘাতে না জড়িয়ে কূটনৈতিক তৎপরতা চালালেন। তিনি জালাল উদ্দিন লোহানিকে বোঝালেন, তার সেনাবাহিনী এখন পরস্পর বিরোধী দুটি দলে বিভক্ত হয়ে আছে। সুতরাং একটি দলকে রাজধানীতে রেখে অন্য দলটিকে নিজেদের জায়গীরে কিছুদিনের জন্য পাঠিয়ে দেয়া হোক।

আর অন্য দলটি নিয়ে শীঘ্রই সুলতান জালাল উদ্দিন লোহানির বাংলার বিরুদ্ধে অভিযানে বের হয়ে যাওয়া প্রয়োজন। কারণ, তিনি খবর পেয়েছেন, বাংলা আবারও বিহার আক্রমণের পাঁয়তারা চালাচ্ছে।

শের খানের এই বক্তব্যে জালাল উদ্দিন লোহানি স্পষ্ট বুঝে গেলেন যে, শের খান আসলে কী করতে চাচ্ছেন! তিনি তার অনুগত আমিরদের নিয়ে আলোচনায় বসলেন। জালালের আমিররা তাদের সীমাবদ্ধতার ব্যাপার খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারলেন। তারা জালাল উদ্দিন লোহানিকে পরামর্শ দিলো,

‘আপনার এখনই উচিত হবে শের খান আর তার সমর্থকদের নিজ নিজ জায়গীরে পাঠিয়ে দেয়া। আর সব ভাবনা ঝেড়ে ফেলে নিঃসঙ্কোচে আপনি বাংলার সুলতানের কাছে আশ্রয় নিন। বাংলায় নিজের জন্য উপযুক্ত এটি ভূমি খুঁজে নিয়ে বাংলার সুলতানকে বিহার উপহার দিয়ে দিন। আপনাকে খুব দ্রুত এটি করতে হবে, অন্য কেউ বিহার আক্রমণ করে জয় করে নেয়ার পূর্বেই’

আমিরদের পরামর্শ শুনে জালাল উদ্দিন লোহানি দ্রুত বাংলার দিকে পালিয়ে গেলেন। তিনি বাংলার সুলতানের দরবারে আশ্রয় নিলেন। বাংলার সুলতান তার সব কথা শুনে একটি বিজ্ঞ সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি কুতুব খানের পুত্র ইব্রাহীম খানের নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী বাহিনী জালাল উদ্দিন লোহানিকে অর্পন করলেন। জালাল উদ্দিন লোহানিকে তিনি বলে দিলেন, যান, নিজের ভূখন্ড নিজে পুনরুদ্ধার করে নিন।

এদিকে জালাল উদ্দিন লোহানির বাংলার দরবারে আশ্রয় নেয়ার ঘটনা জানতে পেরে শের খান ব্যাপক উল্লসিত হন। বিহারের মসনদের প্রভু এখন শুধু মাত্র তিনিই!

তবে শের খান বুঝতে পারলেন, বাংলার যোদ্ধাদের সাথে তাকে অবশ্যই আবারও লড়াইয়ে নামতে হবে। আর তাই তিনি দ্রুত প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন।

হিন্দুস্তানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা যত আফগান ছিলো, তিনি তাদের নিকট বার্তা পাঠালেন। সবাইকে তার অধীনে একত্র হওয়ার আহবান জানালেন। যারাই তার আহবানে সাড়া দিয়ে তার বাহিনীতে ভর্তি হলো, তিনি তাদের প্রতি চরম উদারতা দেখালেন।

শের খান; Image Source: thefamouspeople.com

খুব দ্রুতই শের খান এমন একটি সেনাবাহিনী গঠন করতে সক্ষম হলেন, যারা শুধুমাত্র তার প্রতিই অনুগত। আর তারা তার জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করতে দুবার ভাববে না।

বিহারে যখন শের খানের এই উত্থানযুগ চলছে, তখন এদিকে মুঘল সীমানার মাঝে কী কী ঘটছে, তার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নেয়া যাক।

১৫৩০ সালের ২৬ ডিসেম্বরে নশ্বর এ পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে আল্লাহর কাছে চলে যান হিন্দুস্তানের মহান শাসক জহির উদ দিন মুহাম্মদ বাবর।

বাবরের মৃত্যুর পর, ১৫৩০ সালের ৩০ ডিসেম্বর বাবরপুত্র নাসিরুদ্দিন মুহম্মদ হুমায়ুন মুঘল সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় সম্রাট হিসেবে সিংহাসনে আরোহণ করেন। সিংহাসনে আরোহণের সময় উত্তরাধিকারী সূত্রে মুঘল সাম্রাজ্যের ভূখণ্ডগুলোর ভেতরে মধ্য এশিয়ার বলখ, বাদাখশান, কান্দুজ, হিন্দুস্তানের পাঞ্জাব, মুলতান, বিহার, গোয়ালিয়র, ধোলপুর, চান্দেরি, বায়ানা আর বর্তমান ভারতের উত্তর প্রদেশসহ আরও বেশ কিছু ভূখন্ড লাভ করেন।

মুঘল সাম্রাজ্যের মসনদে বসেই হুমায়ুন কালিঞ্জরের বিরুদ্ধে একটি অভিযান প্রেরণ করেন। ১৫৩১ সালে তিনি কালিঞ্জর দুর্গটি অবরোধ করলেন। বুন্দেলখন্ডের শেষ প্রান্তে ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১,২০০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত এই দুর্গটি অত্যন্ত সুরক্ষিত আর শক্তিশালী ছিলো। মূলত দুর্গমতার কারণেই এই দুর্গটি এত সুরক্ষিত ছিলো। ইতোপূর্বে এই দুর্গটি দখল করার চেষ্টা করেছিলেন কুতুব উদ্দিন আইবেক, শামসুদ্দিন ইলতুৎমিশ আর নাসিরুদ্দিন মাহমুদের মতো দিল্লির সুলতানশাহী শাসনামলের শাসকরা। কিন্তু দুর্গমতার জন্য কেউই দুর্গটি দখল করতে পারেননি।

সম্রাট হুমায়ুন; Image Source: Wikimedia Commons

সম্রাট হুমায়ুন যখন কালিঞ্জর অবরোধ করে বসে আছেন, সে সময়েই একটি দুঃসংবাদ এসে পৌছায়। দিল্লির লোদি সালতানাতের শেষ সুলতান ইব্রাহীম লোদির ভাই মাহমুদ লোদি আবারো মুঘলদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য শক্তি সঞ্চয় করছেন। সংবাদটি সত্যিই বিপজ্জনক। হুমায়ুন আফগানদের সক্ষমতা সম্পর্কে বেশ ভালো জানতেন। তিনি জানেন, সংগঠিত হবার মতো প্রয়োজনীয় সুযোগ পেলে তারা মুঘল সাম্রাজ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।

১৮১৪ সালে অঙ্গিত কালিঞ্জর দুর্গের ছবি; Image Source: Wikimedia Commons

তাই তিনি দ্রুত কালিঞ্জর অবরোধ শেষ করতে চাইলেন। অনেক আলাপ আলোচনার পর শেষ পর্যন্ত প্রায় ১২ মণ স্বর্ণ আর হুমায়ুনের অধীনে সামন্ত রাজা হিসেবে থাকার চুক্তিতে রাজপুত এই রাজ্যটি থেকে তিনি অবরোধ তুলে নিয়ে আফগানদের বিরুদ্ধে অগ্রসর হন।

এদিকে সত্যিকার অর্থেই মাহমুদ লোদির নেতৃত্বে আফগানরা মুঘলদের বিরুদ্ধে সংগঠিত হচ্ছিল। মাহমুদ লোদির প্রধান দুই সেনাপতি বিবন খান জালওয়ানী আর শেখ বায়েজীদ কারমালি ব্যক্তিগতভাবে অত্যন্ত দক্ষ যোদ্ধা ছিলেন। সেইসাথে নিজেদের সাহসিকতা আর বীরত্বের জন্য আফগানদের নিকট তারা বেশ সমাদৃতও ছিলেন। মাহমুদ লোদির নেতৃত্বে আফগানরা তাদের প্রথম আঘাতটি হানে জৈনপুরে। জৈনপুরে মুঘল প্রশাসক হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন মুঘল সেনাবাহিনীর দক্ষ জেনারেল জুনায়েদ বারলাস। কিন্তু আফগানদের এই আক্রমণ থেকে তিনি জৈনপুরকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হলেন।

জৈনপুরে মুঘলদের বিরুদ্ধে অপ্রত্যাশিত সহজ এই বিজয়ে আফগানরা আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায়। বিজয়ের পর তারা বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ে। এদিকে হুমায়ুন যে তাদের ঘাড়ের উপর নিঃশ্বাস ফেলছে, এই খবর তাদের ছিল না। ফলাফল, খুব সহজেই দৌরার যুদ্ধে আফগানরা পরাজিত হয়ে পিছু হটে। ছত্রভঙ্গ আফগান বাহিনীর একটি বিশাল অংশ শের খানের নেতৃত্বে চুনার দুর্গে আশ্রয় নেয়। দুর্গটি বারানসীর দক্ষিণ-পশ্চিম দিক বরাবর গঙ্গার তীরে অবস্থিত।

ইব্রাহীম লোদির শাসনামলে চুনার দুর্গটির দায়িত্ব পান তাজ খান। সেসময় এই দুর্গে রাজকোষও জমা রাখা হতো। পারিবারিক টানাপোড়নের কারণে তাজ খান তারই এক পুত্রের হাতে নিহত হলে তাজ খানের স্ত্রী লাড মালিক চুনার দুর্গের দায়িত্ব বুঝে নেন।

১৮০৩ সালে অঙ্গিত চুনার দুর্গের একটি চিত্র; Image Source: Wikimedia Commons

কিন্তু নারী হওয়ার কারণে লাড মালিক বেশ ভালোই বুঝতে পারেন, এই যুদ্ধের ডামাডোলে তিনি দুর্গটি অধিকার করে রাখতে পারবেন না। এদিকে শের খান ইতোমধ্যেই চুনার দুর্গের দিকে নজর দিয়েছেন। অবশেষে লাড মালিক শের খানকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন। ১৫৩০ সালের শের খান ১৫০ মণ স্বর্ণ, ৭ মন মুক্তা আর অত্যন্ত দুর্লভ ১৫০টি রত্ন উপহার দিয়ে লাড মালিককে বিয়ে করেন। বিনিময়ে পান চুনার দুর্গের অধিকার। এটি শের খানের বিহারের রাজনীতিতে সর্বেসর্বা হয়ে ওঠার সমকালীন ঘটনা।

এদিকে, চুনার দুর্গে আফগান সেনাদের বিরাট একটি অংশ আশ্রয় নেয়ায় হুমায়ুন সেখানে অবরোধ করেন। কিন্তু দুর্গ অবরোধকালে তিনি সংবাদ পেলেন গুজরাটের বাহাদুর শাহ আগ্রাতে হুমায়ুনের অনুপস্থিতির সুযোগে আগ্রা অভিমুখে অভিযান চালানোর জন্য অগ্রসর হচ্ছে। হুমায়ুন পড়ে গেলেন উভয় সংকটে। তিনি জানেন, তার অনেক সেনাপতি কিংবা সভাসদ এখনো তাকে মন থেকে মেনে নেয়নি। বাহাদুর শাহের অভিযান শুরু হলে তারা দল বদল করতে সময় নেবে না। ফলে দ্রুতই আগ্রার পতন ঘটবে।

চুনার দুর্গের প্রবেশপথের বর্তমান ছবি; Image Source: Wikimedia Commons

কিন্তু এদিকে আফগানদের সুরাহা না করে পিছু হটা মানে শত্রুকে পেছনে মুক্ত করে দিয়ে আসা। অনেক চিন্তা-ভাবনা করে হুমায়ুন শেষ পর্যন্ত আগ্রা রক্ষাকেই গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন। ১৫৩২ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে শের খানের সাথে একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে তিনি চুনার দুর্গ অবরোধ তুলে নিয়ে আগ্রার দিকে অগ্রসর হন। চুক্তির শর্তানুসারে শের খান হুমায়ুনের অধীনস্থ সামন্ত রাজা হিসেবে চুনার দুর্গ নিজের অধিকারে রাখবেন এবং বার্ষিক কর প্রদান করবেন।

রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক দিক থেকে হুমায়ুন যে কিছুটা অপরিপক্ব ছিলেন, তা তার এই সিদ্ধান্ত থেকেই বোঝা যায়। তিনি শের খানকে বিশ্বাস করে চুনার দুর্গ শাসনের অধিকার দিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু তিনি শের খানের উচ্চাকাঙ্ক্ষা কিংবা শক্তি সম্পর্কে কোনো ধারণাই রাখেননি। তার উপর তিনি শের খানকে তার বাহিনী গুছিয়ে নেয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় দিয়ে এসেছেন। শের খান শিকারি বাঘের মতোই সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করছে।

১৫৩৪ সালের মার্চ মাসের দিকে শের শাহ তার বিশাল আফগান বাহিনী নিয়ে বিহারকে পেছনে রেখে বাংলার সীমান্ত বরাবর ছাউনি ফেলেন। তার সাথে যত বিশাল আর শক্তিশালী বাহিনীই থাকুক না কেন, তিনি তার সত্যিকারের দুর্বলতা জানতেন। তিনি জানতেন সম্মুখ লড়াইয়ে তার এই বাহিনী বাংলা বাহিনীর সামনে খড়কুটোর মতো উড়ে যাবে। আর তাই তিনি একটি যুদ্ধে যতগুলো সুবিধা কাজে লাগানো সম্ভব, তা কাজে লাগাতে শুরু করলেন।

বর্তমান স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র ‘বাংলাদেশ’ এবং ভারতের ‘বিহার’ রাজ্য; Map Source: Google Maps

প্রথমেই তিনি তার অবস্থানগত সুবিধা অর্জন করতে চাইছিলেন। শের খান বাংলা সীমান্তে অবস্থান নিয়ে খুব দ্রুতই তার অবস্থানের সামনে উঁচু মাটির বাঁধ তৈরি করলেন। এই মাটির বাঁধার আড়ালে বাংলা বাহিনীর আক্রমণের সময় তারা সেনারা নিরাপদে থাকবে।

এদিকে ইব্রাহীম খানের নেতৃত্বাধীন বাংলা বাহিনী যখন শের খানের মুখোমুখি হলো, তখন তারা কিছুটা অবাক হলো এই উঁচু মাটির প্রাচীর দেখে। তবে নিজ শক্তির অহমিকায় তিনি কিছুটা খাটো করে দেখেছিলেন শের খানকে। এটা তিনি বেশ ভালো বুঝতে পারেন, যখন আক্রমণের সময় মাটির প্রাচীরের কারণে শের খানে যোদ্ধাদের গায়ে তার বাহিনী কোনো আঁচরই বসাতে পারছিলো না।

ইব্রাহীম খান বাংলা দরবারে আরও সেনা সহায়তা চেয়ে পত্র পাঠালে শের খান বুঝতে পারেন, এবারই সঠিক সময় গর্ত ছেড়ে বেড়িয়ে আসার। তিনি ইব্রাহীম খানকে পত্র লিখলেন,

‘আপনি বার বার আমাকে আহবান জানিয়েছেন পরিখা ত্যাগ করে খোলা প্রান্তরে আপনার মুখোমুখি হওয়ার জন্য, যাতে আমরা পরস্পরের শক্তি পরীক্ষা করতে পারি। তবে আমি উদ্দেশ্যমূলকভাবেই এতদিন ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করে ছিলাম, যদি আপনি শান্তি স্থাপনে আগ্রহী হন এই আশাতে।

তবে যদি আপনার সেই আশা না থাকে, তাহলে চলুন আমরা এবার আমরা খোলা প্রান্তরের একে অপরের মুখোমুখি হই। আগামীকাল সকালে আপনার যোদ্ধাদের উন্মুক্ত প্রান্তরের সমবেত করুন।’

স্পষ্টটই এটা ছিলো শের খানের পক্ষ থেকে সরাসরি যুদ্ধের আহবান।

ইব্রাহীম খান শের খানকে সংক্ষেপে জানিয়ে দিলেন,

‘আপনার যত জন সৈন্য আছে, আগামীকাল সকালের জন্য সবাইকে সমবেত করুন।’

বাংলার বিরুদ্ধে এই যুদ্ধে শের খানের যুদ্ধ পরিকল্পনা বেশ উন্নত ছিলো, এটা বলাই বাহুল্য। তিনি জানতেন, বাংলা বাহিনীতে সাথে পদাতিক আর অশ্বারোহী ছাড়াও বিপুল সংখ্যক হাতি আর কামান আছে। শের খান চাচ্ছিলেন আক্রমণ শুরু হওয়া মাত্রই পদাতিক আর গোলন্দাজ বাহিনী থেকে বাংলার অশ্বারোহীদের পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে দিতে। এতে বাংলার বাহিনী দ্রুত বিশৃঙ্ক্ষল হয়ে পড়বে।

শের খান যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে যুদ্ধের আগের রাতে দূরের একটি টিলার আড়ালে কিছু যোদ্ধা মোতায়েন করে রেখে আসেন।

সালতানাত ই বাঙ্গালাহ-এর সময় চীনসহ বহির্বিশ্বের অন্যান্য সাম্রাজ্যের সাথেও বাংলার বেশ ভালো যোগাযোগ ছিলো। ১৪১৪ সালে ইলিয়াস শাহী বংশের সুলতান সাইফ উদ্দিন হামজা শাহ তার একটি পোষা জিরাফ মিং রাজবংশের সম্রাট ইয়ংগেলকে পারস্পরিক সুসম্পর্কের নিদর্শনসরূপ উপহার পাঠিয়েছিলেন; Image Source: Wikimedia Commons

শের খান বাংলার সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ দুর্বলতা জানতেন। তিনি জানতেন, ইব্রাহীম খানের পিতা কুতুব খান তার বাহিনীর হাতেই মৃত্যুবরণ করেছিলেন। ইব্রাহীম খান তাই যেকোনো মূল্যে পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নিতে চাইবে। আর এই তীব্র আবেগের কারণেই তিনি ভুল করে ফেলবেন।

সেই হিসেবে শের খানের পরিকল্পনা খুবই সহজ ছিলো। আক্রমণের শুরুতে সামান্য বাঁধা দিয়ে তার বাহিনী পিছু হটবে। এবং হঠাৎ করেই আক্রমণকারী বাহিনী পিছু হটা শুরু করবে। ইব্রাহীম খান ধরে নিবেন আফগানরা পালিয়ে যাচ্ছে। তাদের পিছু নেওয়ার জন্য তিনি অশ্বারোহী বাহিনীকে পাঠিয়ে দিবেন।

অশ্বারোহী বাহিনী পদাতিক আর গোলন্দাজ বাহিনী থেকে যথেষ্ট দূরত্বে চলে আসলে শের খানের অশ্বারোহী বাহিনী টিলার পেছন থেকে এগিয়ে এসে বাংলার সেনাবাহিনীর পদাতিক আর গোলন্দাজদের ঘিরে ফেলে হত্যা করবে।

আর শের খানের বাহিনীর অন্য অংশের দায়িত্ব থাকবে বাংলার অশ্বারোহীদের ধ্বংস করে দেয়া।

পরের দিন সকালে যুদ্ধ শুরু হলো। যুদ্ধ যেন শের খানের পরিকল্পনা মতোই এগুলো। যুদ্ধ শুরুর কিছুক্ষণ পর শের খানের বাহিনী পালিয়ে যাওয়ার ভান করে পিছু হটে আসলে বাংলার অশ্বারোহীরা গোলন্দাজ আর পদাতিকদের ছেড়ে সামনে এগিয়ে আসে। এই সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন শের খান। তার বাহিনীর অশ্বারোহীরা টিলার আড়াল ছেড়ে বেড়িয়ে এসে বাংলার পদাতিক আর গোলন্দাজদের ঘিরে ফেলে। অন্যদিকে শের খানের পালিয়ে যাওয়ার ভান করা যোদ্ধারা বাংলার অশ্বারোহীদের উপর তীব্র আঘাত হানে।

মুহূর্তেই যুদ্ধক্ষেত্রের অবস্থা পাল্টে যায়। বাংলার সেনাবাহিনীর যোদ্ধারা শের খানের এই তীব্র আক্রমণ সহ্য করতে না পেরে যুদ্ধক্ষেত্র ত্যাগ করতে শুরু করেন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত ইব্রাহীম খান তার অনুগত যোদ্ধাদের নিয়ে আফগানদের মোকাবেলা করতে থাকেন।

এ যুদ্ধে বিজয়ের ফলে শের খান নতুন করে বাংলার বিস্তীর্ণ ভূখন্ড দখল করার পাশাপাশি পেয়েছিলেন বাংলার বাহিনীর পরিত্যাক্ত বিপুল সংখ্যক হাতি, ঘোড়া আর অন্যান্য সম্পদ, যা তাকে পরবর্তীতে আরও শক্তিশালী করে তুলতে সাহায্য করেছিলো।

অন্যদিকে, বাংলার বাহিনীর এ শোচনীয় পরাজয়ের পর বিহারের বৈধ সুলতান জালাল উদ্দিন লোহানি পুনরায় বাংলার দরবারে আশ্রয় নেন।

তথ্যসূত্র

১। তারিখ-ই-শের শাহ; মূল: আব্বাস সারওয়ানী, অনুবাদ গ্রন্থের নাম: শের শাহ, অনুবাদক: সাদিয়া আফরোজ, সমতট প্রকাশনী, প্রথম প্রকাশ: ফেব্রুয়ারী ২০১৫

২। ভারত উপমহাদেশের ইতিহাস (মধ্যযুগ: মোগল পর্ব), এ কে এম শাহনাওয়াজ, প্রতীক প্রকাশনা সংস্থা, ৩য় সংস্করণ (২০১৫), প্রথম প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ২০০২

৩। মোগল সাম্রাজ্যের সোনালী অধ্যায়, সাহাদত হোসেন খান, আফসার ব্রাদার্স, ২য় মুদ্রণ (২০১৫), প্রথম প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ২০১৩

৪। হুমায়ুননামা, মূল: গুলবদন বেগম, অনুবাদ: এ কে এম শাহনাওয়াজ, জ্ঞানকোষ প্রকাশনী, প্রকাশকাল: জানুয়ারী ২০১৬

৫। রিয়াজ-উস-সালাতীন, মূল লেখক: গোলাম হোসায়ন সলীম, অনুবাদ গ্রন্থের নাম: বাংলার ইতিহাস, অনুবাদক: আকবরউদ্দীন, অবসর প্রকাশনী, প্রথম প্রকাশ ফেব্রুয়ারী ২০০৮

এই সিরিজের আগের পর্বসমূহ

১। প্রাক-মুঘল যুগে হিন্দুস্তানের রাজনৈতিক অবস্থা || ২। তরাইনের যুদ্ধ: হিন্দুস্তানের ইতিহাস পাল্টে দেওয়া দুই যুদ্ধ || ৩। দিল্লী সালতানাতের ইতিকথা: দাস শাসনামল || ৪। রাজিয়া সুলতানা: ভারতবর্ষের প্রথম নারী শাসক || ৫। দিল্লি সালতানাতের ইতিকথা: খিলজী শাসনামল || ৬। দিল্লি সালতানাতের ইতিকথা: তুঘলক শাসনামল || ৭। দিল্লি সালতানাতের ইতিকথা: তৈমুরের হিন্দুস্তান আক্রমণ ও সৈয়দ রাজবংশের শাসন || ৮। দিল্লী সালতানাতের ইতিকথা: লোদী সাম্রাজ্য || ৯। রাজকীয় মুঘল সেনাবাহিনীর গঠন এবং গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস || ১০। রাজকীয় মুঘল সেনাবাহিনীর ব্যবহৃত কিছু অস্ত্রশস্ত্র || ১১। জহির উদ-দিন মুহাম্মদ বাবুর: ‘একজন’ বাঘের উত্থান || ১২। বাদশাহ বাবরের কাবুলের দিনগুলো || ১৩। বাদশাহ বাবর: হিন্দুস্তানের পথে || ১৪। বাদশাহ বাবরের হিন্দুস্তান অভিযান: চূড়ান্ত লড়াইয়ের প্রস্তুতি || ১৫। মুঘল সাম্রাজ্যের উত্থান: হিন্দুস্তানে বাবরের চূড়ান্ত লড়াই || ১৬। খানুয়ার যুদ্ধ: মুঘল বনাম রাজপুত সংঘাত || ১৭। ঘাঘরার যুদ্ধ: মুঘল বনাম আফগান লড়াই || ১৮। কেমন ছিল সম্রাট বাবরের হিন্দুস্তানের দিনগুলো? || ১৯। মুঘল সম্রাট বাবরের মৃত্যু: মুঘল সাম্রাজ্য এবং হিন্দুস্তানের উজ্জ্বল এক নক্ষত্রের অকাল পতন || ২০। সিংহাসনের ষড়যন্ত্র পেরিয়ে মুঘল সম্রাট হুমায়ুনের অভিষেক || ২১। মুঘল সাম্রাজ্যের নতুন দিগন্ত: সম্রাট হুমায়ুনের ঘটনাবহুল শাসনামল ||  ২২। দিল্লি সালতানাত থেকে মুজাফফরি সালতানাত: প্রাক-মুঘল শাসনামলে গুজরাটের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস || ২৩। মুঘল সম্রাট হুমায়ুনের গুজরাট অভিযানের প্রেক্ষাপট || ২৪। সম্রাট হুমায়ুনের গুজরাট অভিযান: সুলতান বাহাদুর শাহের পলায়ন || ২৫। সম্রাট হুমায়ুনের গুজরাট অভিযান ও গুজরাটের পতন || ২৬। গুজরাট থেকে মুঘলদের পলায়ন: মুঘল সাম্রাজ্যের চরম লজ্জাজনক একটি পরিণতি || ২৭। শের খান: হিন্দুস্তানের এক নতুন বাঘের উত্থানের গল্প

ফিচার ইমেজ: Pinterest

Related Articles