Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

থ্যাংকসগিভিং ডে এর কিছু অজানা দিক

প্রতিবছর নভেম্বরের চতুর্থ কিংবা শেষ বৃহস্পতিবার আমেরিকায় ঘটা করে পালন করা হয় থ্যাংকসগিভিং ডে। কিন্তু এই থ্যাংকসগিভিং ডে এর উৎপত্তিই বা কোথা থেকে? কেনই বা এ দিনটি আমেরিকানরা অনেক উৎসবমুখরভাবে পালন করতে পছন্দ করেন?

এসব অনেকেরই অজানা। তাই থ্যাংকসগিভিং এর এসব অজানা বিষয়  নিয়েই আমাদের আজকের আয়োজন।

প্রথম থ্যাংকসগিভিং ডে 

প্রথম থ্যাংকসগিভিং নিয়ে দুটি মত রয়েছে। একদলের মতে, ১৬২১ সালে সর্বপ্রথম থ্যাংকসগিভিং পালন করা হয়। ১৬২০ সালে মেফ্লাওয়ার নামক একটি ছোট জাহাজ ভেড়ে প্লাইমাউথে। সেই জাহাজে করে ১০২ জন যাত্রী এসেছিলেন প্লাইমাউথে, যাদের অধিকাংশই আমেরিকান। তারা স্থানীয়দের সাথেই বসবাস শুরু করেন। ১৬২১ সালে হুট করে অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি শস্য উৎপন্ন হলে গভর্নর উইলিয়াম ব্র্যাডফোর্ড একটি রাজকীয় ভোজের আয়োজন করেন। আর সেখানেই তিনি আমন্ত্রণ জানান আমেরিকানদের। তবে শুধু ফসলের জন্যই নয়, ধর্মীয় রীতিও ছিল এই ভোজ-আয়োজনে। সেই থেকে আমেরিকানদের মাঝে থ্যাংকসগিভিং শুরু হয়।

নভেম্বরের শেষ বৃহস্পতিবার পালন করা হয় থ্যাংকসগিভিং ডে; Image Credit: Almanac.com

ছুটি ঘোষণা

একটা সময় থ্যাংকসগিভিং ডে শুধু একধরনের উৎসবই ছিল। সরকারিভাবে পালন করা হতো না দিনটি। তবে ১৭৮৯ সালে এসে সর্বপ্রথম এই দিনটিকে ছুটি ঘোষণা করার কথা ওঠে। সেই বছর ২৮ সেপ্টেম্বর ফেডারেল কংগ্রেস যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কাছে দিনটিকে ছুটি ঘোষণা করার আবেদন করে। এর কিছুদিন পরেই তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন ১৭৮৯ সালের ২৬ নভেম্বরকে সরকারিভাবে ‘থ্যাংকসগিভিং ডে’ ঘোষণা করেন।

তবে এরপরেও বিভিন্ন রাষ্ট্রপতির আমলে বিভিন্ন সময়ে পালন করা হতো দিনটিকে। অর্থাৎ, নির্দিষ্ট কোনো দিন ছিল না। অবশেষে আব্রাহাম লিংকন রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর ১৮৬৩ সালে প্রতি নভেম্বরের চতুর্থ বৃহস্পতিবারকে থ্যাংকসগিভিং ডে হিসেবে উদযাপন করার কথা বলেন।

থ্যাংকসগিভিং এর ঐতিহ্য

বর্তমানে ধর্মীয় রীতিনীতির চেয়ে আমেরিকানরা দিনটিকে খাবারদাবার আয়োজনের দিনে রুপান্তর করেছে অনেকটাই। প্রায় ৯০ শতাংশ আমেরিকানই এই দিনে টার্কি রান্না করে থাকে। রোস্ট, কিংবা পুরো ভাজা বা বেকড যেটাই হোক না কেন; থ্যাংকসগিভিং ডে-তে এই পাখির চাহিদা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। এর সাথে ঐতিহ্যগতভাবে আলু ভাজা, কুমড়ার পাই কিংবা ক্র্যানবেরি সসও থাকে মেন্যুতে।

খাবারদাবারের বাইরেও বেশ কয়েক ধরনের অনুষ্ঠান পালন করে আমেরিকানরা। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে থ্যাংকসগিভিং প্যারেড। ১৯২৪ সাল থেকে চালু হওয়া এই প্যারেড যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও লম্বা প্যারেড। প্রায় ২-৩ মিলিয়ন মানুষ প্রত্যক্ষভাবে এই প্যারেড দেখে থাকে। প্রায় আড়াই মাইল ব্যাপ্তির এই প্যারেডে বড় বড় বেলুনসহ তারকাদের বিভিন্ন প্রতিকৃতিও প্রদর্শন করা হয়। টেলিভিশন চ্যানেলগুলোও সরাসরি সম্প্রচার করে থাকে এই প্যারেডটি। 

থ্যাংকসগিভিং ডে উপলক্ষ্যে হওয়া বিশালাকার প্যারেড; Image Credit© Walter Kelleher/ NY Daily News Arcgive via Getty Image

থ্যাংকসগিভিং-এর আরেকটি ঐতিহ্য হচ্ছে যে, প্রতিবছর এই দিনে আমেরিকান ফুটবলে ডেট্রয়েট লায়ন্স ম্যাচ খেলে থাকে। টিভি সেটের সামনে বসে লাখ লাখ মানুষ এই ম্যাচ উপভোগ করে থাকে। ১৯৩৪ সালে সর্বপ্রথম থ্যাংকসগিভিং ডে-তে চ্যাম্পিয়ন শিকাগো বিয়ার্সের মুখোমুখি হয়েছিল ডেট্রয়েট লায়ন্স। সেইবার ম্যাচটি হেরে গেলেও প্রতি থ্যাংকসগিভিং ডেতেই ম্যাচ খেলে থাকে ডেট্রয়েটের দলটি। শুধুমাত্র ১৯৩৯ ও ১৯৪৪ সাল বাদে প্রতিবছরই এই দিনে মাঠে নেমেছিল তারা।

থ্যাংকসগিভিং-এর দিন পরিবর্তন

আব্রাহাম লিংকনের পর প্রতিবছর শেষ বৃহস্পতিবারই পালন করা হতো এই দিনটিকে। কিন্তু ১৯৩৯ সালে শেষ বৃহস্পতিবার পড়েছিল মাসের শেষ দিনে। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট চিন্তা করে দেখলেন যে, এতে করে ক্রিসমাসের কেনাকাটার জন্য লোকজন সময় পাবে কম। তাতে করে অর্থনৈতিকভাবে সমস্যায় পড়তে পারে তার সরকার। তাই রুজভেল্ট উত্থাপন করেন দ্বিতীয় বৃহস্পতিবার থ্যাংকসগিভিং ডে পালন করার কথা। কিন্তু এতে ৩২টি অঙ্গরাজ্য সায় দিলেও অপর ১৬টি অঙ্গরাজ্য আগের দিনের পক্ষেই থেকে যায়। ফলে পর পর দুই বছর দুই ভিন্ন দিনে পালন করা হয় এই দিনটি।

তবে ১৯৪১ সালের ৬ অক্টোবর কংগ্রেস একটি নির্দিষ্ট দিনই ঠিক করে ছুটি ঘোষণা করে। আর দিনটি করা হয় আব্রাহাম লিংকনের মতো নভেম্বরের শেষ বৃহস্পতিবার।

থ্যাংকসগিভিং ডে’র জনক ধরা হয় আব্রাহাম লিংকনকে; Image Credit: Mental Floss

থ্যাংকসগিভিং নিয়ে বিতর্ক

কিছু কিছু ইতিহাসবিদের মতে, থ্যাংকসগিভিং ডে আদতে ১৬২১ সালে শুরু হয়নি। এর প্রচলন আরো ৫৬ বছর আগে ১৫৬৫ সালে। বলা হয়ে থাকে, ১৫৬৫ সালে স্প্যানিশ দর্শনার্থী পেদ্রো মেনেন্দেজ স্থানীয় তিমুকা গোত্রকে ফ্লোরিডার সেইন্ট অগাস্টিনে ডিনারের জন্য আমন্ত্রণ জানায়। এর কারণ ছিল স্পেন থেকে পেদ্রো ও তার দলের সফলভাবে এখানে আগমনের জন্য ঈশ্বরের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে এই ডিনারের আয়োজন করেন তিনি। সেই থেকে এই প্রথার প্রচলন। বিখ্যাত ইতিহাসবিদ মাইকেল গ্যাননও এই ঘটনাকেই সত্যি বলে আখ্যায়িত করেছেন। তবে শুধু দিন নিয়েই নয়, বিতর্ক আছে আরেকটি কারণেও।

শিল্পীর তুলিতে প্রথম থ্যাংকসগিভিং ডে; Image Credit: Pinterest

অনেক স্থানীয় আমেরিকানই মনে করেন, স্কুলে বাচ্চাদের কাছে থ্যাংকসগিভিং ডে-কে উপস্থাপন করা হচ্ছে অন্যভাবে। তাদের মতে, এই দিনটিকে উপস্থাপন করা হচ্ছে আগন্তুকদের সাথে স্থানীয়দের ভালো সম্পর্কের উদাহরণ হিসেবে। কিন্তু অনেকবারই স্থানীয়দের সাথে হাতাহাতিতে লিপ্ত হয়েছে ইউরোপ থেকে আসা আগন্তুকেরা। সেটি থ্যাংকসগিভিং দিয়ে অনেকটা ধামাচাপাই দেওয়া হয়।

প্রথম থ্যাংকসগিভিং মেন্যু

বর্তমানে থ্যাংকসগিভিং মেন্যুতে টার্কিই প্রধান মেন্যু হিসেবে দেখা যায় টেবিলে। কিন্তু একেবারে প্রথম থ্যাংকসগিভিং-এ টার্কির অস্তিত্বই ছিল না। ১৬২১ সালে প্রথম থ্যাংকসগিভিংয়ে স্থানীয় আমেরিকানরা ৫টি হরিণ জবাই করেছিল, যাতে করে তারা ইংলিশদের বদান্যতার সৌজন্যস্বরুপ কিছু দিতে পারে। তাই বলা যায়, প্রথম থ্যাংকসগিভিং ডে-এর ডিনার মেন্যুতে টার্কির বদলে ছিল হরিণের মাংসই।

টার্কিই বর্তমানে প্রধান মেন্যু হিসেবে ব্যবহৃত হয়; Image Credit: Graphics art/Getty Image

রাষ্ট্রপতির টার্কি মুক্তি

প্রতিবছর থ্যাংকসগিভিং ডে শেষে রাষ্ট্রপতি নিজ হাতে একটি টার্কি মুক্ত করে দেন। সর্বপ্রথম এই রীতি প্রচলন করেন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ। ১৯৮৯ সাল থেকে সর্বপ্রথম এই প্রথা চালু হয়। মূলত প্রতিদিন এই দিনকে ঘিরে প্রচুর টার্কি হত্যার জন্যে প্রাণী অধিকার সংরক্ষণ সংস্থাগুলো এই প্রথা চালুর জন্য জোর দাবি জানায়। সেই হেতু ধরেই বুশ এই কাজকে উন্নীত করেন।

তবে ১৯৮৯ সালে নিয়মিত হওয়ার আগেও আব্রাহাম লিংকন ও একবার টার্কি মুক্ত করেছিলেন। হোয়াইট হাউজের মতে সেই সময় লিংকনের ছেলে টেড তাদের পরিবারের জন্য আনা টার্কিটিকে মুক্ত করে দেওয়ার জন্য তাঁর বাবার কাছে আবদার জানান। ছেলের কথা মতো সেবার টার্কিটি মুক্ত করে দেন আব্রাহাম লিংকন। তবে তখনো নিয়মিতভাবে এই প্রথা চালু হয়নি।    

নিজ হাতে টার্কি মুক্ত করছেন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান; Image Credit© Drick Halstead/The life images collection/Getty Image

ইতিহাসের চমৎকার, জানা-অজানা সব বিষয় নিয়ে আমাদের সাথে লিখতে আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন এই লিঙ্কে: https://roar.media/contribute/

This Bangla article is about some unknown facts of Thanksgiving day. Necessary references are hyperlinked in the article. 

Feature Image© Erin Russel/Eater Austin

Related Articles