Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

যেভাবে সোভিয়েত ইউনিয়ন রোমানিয়ায় আধিপত্য বিস্তার করেছিল

১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানের পর থেকে ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পূর্ব পর্যন্ত পূর্ব ও মধ্য ইউরোপের অধিকাংশ রাষ্ট্র ছিল সোভিয়েত–প্রভাবাধীন। বলা হয়ে থাকে, একটি ‘লৌহ যবনিকা’ (Iron Curtain) সোভিয়েত–প্রভাবাধীন পূর্ব ও মধ্য ইউরোপ থেকে মার্কিন–প্রভাবাধীন পশ্চিম ইউরোপকে পৃথক করে রেখেছিল। পূর্ব ও মধ্য ইউরোপের যে রাষ্ট্রগুলো শেষ পর্যন্ত সোভিয়েত প্রভাব বলয়ের (Soviet sphere of influence) অন্তর্ভুক্ত ছিল, সেগুলো হচ্ছে– পোল্যান্ড, পূর্ব জার্মানি, চেকোস্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরি, বুলগেরিয়া এবং রোমানিয়া। এর বাইরে যুগোস্লাভিয়া ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত এবং আলবেনিয়া ১৯৬১ সাল পর্যন্ত সোভিয়েত প্রভাব বলয়ের অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু এই রাষ্ট্রগুলো কীভাবে সোভিয়েত প্রভাব বলয়ের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল?

কার্যত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে এবং বিশ্বযুদ্ধোত্তর সময়ে এই রাষ্ট্রগুলোর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন ভিন্ন। এজন্য এই রাষ্ট্রগুলোর একেকটিকে নিজস্ব প্রভাব বলয়ে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সোভিয়েত ইউনিয়ন একেক পন্থা অবলম্বন করেছিল। এই নিবন্ধে পূর্ব ইউরোপীয়/বলকান/কৃষ্ণসাগরীয় রাষ্ট্র রোমানিয়ায় সোভিয়েত প্রভাব বিস্তারের প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করা হবে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে ১৯৩৮ সালে ‘রোমানিয়া রাজ্য’ (Kingdom of Romania) ছিল একটি রাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র, এবং একটি জার্মান–বংশোদ্ভূত রাজবংশ রাষ্ট্রটির শাসনক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিল। সেসময় রাষ্ট্রটির আয়তন ছিল ২,৯৫,০৪৯ বর্গ কি.মি., এবং জনসংখ্যা ছিল প্রায় ২ কোটি। জনসংখ্যার প্রায় ৭১.৯% ছিল জাতিগতভাবে রোমানীয়, এবং ধর্মগতভাবে ছিল অর্থোডক্স খ্রিস্টান। রাষ্ট্রটি ছিল মূলত কৃষিপ্রধান, এবং রাজনৈতিকভাবে তারা ছিল প্রধানত পশ্চিমামুখী। এর শাসকশ্রেণি ছিল তীব্রভাবে কমিউনিস্টবিরোধী, কিন্তু রাষ্ট্রটির উত্তরে ও পূর্বে অবস্থিত ছিল বৃহৎ কমিউনিস্ট রাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়ন।

দুই বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়ে রোমানিয়ার মানচিত্র; Source: Wikimedia Commons

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

পঞ্চদশ শতাব্দীতে ‘মোলদাভিয়া’ ও ‘ওয়ালাসিয়া’ (বর্তমান রোমানিয়ার ভূমিতে অবস্থিত দুইটি রাজ্য) ওসমানীয় সাম্রাজ্যের করদ/আশ্রিত রাষ্ট্রে পরিণত হয়, এবং মোটামুটিভাবে ঊনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত এই পরিস্থিতি বজায় ছিল। অষ্টাদশ শতাব্দীতে রাশিয়ার জার পিটার দ্য গ্রেটের সময় থেকে রুশরা এই অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তারের প্রক্রিয়া শুরু করে। ১৮০৬–১৮১২ সালের রুশ–ওসমানীয় যুদ্ধে রুশদের নিকট ওসমানীয় সাম্রাজ্যের পরাজয়ের পর ওসমানীয়রা প্রুথ ও দনেস্তার নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চল রাশিয়ার নিকট হস্তান্তর করে। এই অঞ্চলটির সিংহভাগ ছিল ওসমানীয় আশ্রিত রাষ্ট্র মোলদাভিয়ার পূর্বাঞ্চলের অংশ এবং অবশিষ্টাংশ ছিল সরাসরি ওসমানীয় শাসনাধীন ভূমি। রুশরা এই অঞ্চলটিকে ‘বেসারাবিয়া প্রদেশ’ নামে নিজেদের সাম্রাজ্যভুক্ত করে নেয়, এবং তখন থেকে বেসারাবিয়া রুশ–রোমানীয় সম্পর্কের একটি তীক্ষ্ণ ইস্যুতে পরিণত হয়।

১৮২৮–১৮২৯ সালের রুশ–ওসমানীয় যুদ্ধে রুশদের নিকট ওসমানীয়রা আবার পরাজিত হয়, এবং এই যুদ্ধের ফলে মোলদাভিয়া ও ওয়ালাসিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে ওসমানীয় নিয়ন্ত্রণাধীন কিন্তু কার্যত রুশ–নিয়ন্ত্রিত আশ্রিত রাষ্ট্রে পরিণত হয়। ১৮৫৩–১৮৫৬ সালের ক্রিমিয়ান যুদ্ধে ইঙ্গ-ফরাসি-ওসমানীয় জোটের নিকট রাশিয়ার পরাজয়ের পর মোলদাভিয়া ও ওয়ালাসিয়ার ওপর রুশ কর্তৃত্বের অবসান ঘটে, এবং রাশিয়া মোলদাভিয়ার নিকট দক্ষিণ বেসারাবিয়া হস্তান্তর করতে বাধ্য হয়। ১৮৫৯ সালে মোলদাভিয়া ও ওয়ালাসিয়া একত্রিত হয়, এবং ১৮৬৬ সালে ‘রোমানিয়া’ নাম ধারণ করে।

১৮৭৭–১৮৭৮ সালের রুশ–ওসমানীয় যুদ্ধের সময় রোমানিয়া ওসমানীয় সাম্রাজ্যের কাছ থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করে, এবং রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধে যোগ দেয়। যুদ্ধ শেষে রুশরা ওসমানীয়দের কাছ থেকে দখলকৃত উত্তর দব্রুজা অঞ্চল রোমানিয়াকে প্রদান করে, এবং বিনিময়ে দক্ষিণ বেসারাবিয়াকে রাশিয়ার কাছে ফিরিয়ে দিতে রোমানিয়াকে বাধ্য করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ১৯১৬ সালে রোমানিয়া মিত্রপক্ষে যোগদান করে, কিন্তু কেন্দ্রীয় শক্তির (প্রধানত জার্মানি ও অস্ট্রিয়া–হাঙ্গেরি) সৈন্যরা শীঘ্রই রোমানিয়ার অধিকাংশ অঞ্চল দখল করে নেয়, এবং এরপর রোমানিয়ার অবশিষ্টাংশকে রক্ষা করার জন্য রুশ সৈন্যরা দেশটিতে প্রবেশ করে।

১৯১৮ সালে রোমানীয় সৈন্যরা বেসারাবিয়ায় প্রবেশ করছে; Source: Wikimedia Commons

কিন্তু ১৯১৭ সালে রুশ সাম্রাজ্যের পতনের প্রেক্ষাপটে রোমানিয়ায় মোতায়েনকৃত রুশ সশস্ত্রবাহিনীও ভেঙে পড়ে, এবং রুশ সৈন্যরা রোমানিয়া ত্যাগ করে। এরপর রোমানিয়া অত্যন্ত কঠোর শর্তে কেন্দ্রীয় শক্তির সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয়। এদিকে রুশ বিপ্লবের গোলযোগের সুযোগে বেসারাবিয়ায় ‘মোলদাভীয় গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র’ নামক একটি স্বায়ত্তশাসিত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়, যেটি ১৯১৭ সালের ডিসেম্বরে বলশেভিক–নিয়ন্ত্রিত সোভিয়েত রাশিয়া থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। রুশ গৃহযুদ্ধের সুযোগে ১৯১৮ সালের জানুয়ারিতে রোমানিয়া বেসারাবিয়া/মোলদাভিয়ায় আক্রমণ চালায় এবং স্থানীয় বলশেভিকদের পরাজিত করে মার্চের মধ্যে অঞ্চলটি দখল করে নেয়। ১৯১৮ সালের এপ্রিলে রোমানিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে বেসারাবিয়াকে অঙ্গীভূত করে নেয়।

এর ফলে সোভিয়েত সরকার রোমানিয়ার ওপর ক্ষিপ্ত হয়, এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় রোমানীয় সরকার কর্তৃক সুরক্ষায় রাখার জন্য রাশিয়ায় প্রেরিত ‘রোমানীয় ট্রেজার’ বাজেয়াপ্ত করে নেয়। ১৯২১ সালে রোমানিয়া ও পোল্যান্ড সোভিয়েত রাশিয়ার বিরুদ্ধে একটি ‘প্রতিরক্ষামূলক আঁতাত’ স্থাপন করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্ব পর্যন্ত সোভিয়েত ইউনিয়ন ও রোমানিয়ার মধ্যেকার সম্পর্ক ছিল শীতল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং রোমানিয়ায় সোভিয়েত প্রভাব বিস্তার

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্ববর্তী বছরগুলোতে রোমানিয়ায় উগ্র ডানপন্থী, উগ্র জাতীয়তাবাদী এবং তীব্র ইহুদিবিদ্বেষী ও কমিউনিস্টবিদ্বেষী চিন্তাধারার বিস্তার ঘটে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে ১৯৩৯ সালের ২৩ আগস্ট জার্মানি ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে একটি অনাক্রমণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, এবং এই চুক্তিটির একটি গোপন ধারা অনুযায়ী জার্মানি বেসারাবিয়ায় সোভিয়েত স্বার্থকে স্বীকৃতি প্রদান করে। সেই মোতাবেক ১৯৪০ সালের ২৬ জুন সোভিয়েত ইউনিয়ন রোমানিয়াকে একটি চরমপত্র প্রদান করে, এবং বেসারাবিয়া ও উত্তর বুকোভিনা থেকে রোমানীয় প্রশাসন ও সশস্ত্রবাহিনীকে প্রত্যাহার করে নেয়ার আহ্বান জানায়। ২৮ জুন সোভিয়েত সৈন্যরা বেসারাবিয়া ও উত্তর বুকোভিনায় প্রবেশ করে, এবং রোমানীয়রা সেখান থেকে নিজেদেরকে প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়।

১৯৪০ সালের জুনে সোভিয়েত সৈন্যদেরকে বেসারাবিয়ার অধিবাসীরা স্বাগত জানাচ্ছে; Source: Wikimedia Commons

বেসারাবিয়া ও উত্তর বুকোভিনা দখলের পূর্বে সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্গত ‘ইউক্রেনীয় সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে’র অভ্যন্তরে ‘মোলদাভীয় স্বায়ত্তশাসিত সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র’ নামক মোলদাভীয়দের জন্য একটি প্রশাসনিক বিভাগ ছিল। বেসারাবিয়া ও উত্তর বুকোভিনা অধিকারের পর সোভিয়েত সরকার মোলদাভীয় স্বায়ত্তশাসিত প্রজাতন্ত্রটিকে দুই ভাগে বিভক্ত করে, এবং এর একাংশ ও রোমানিয়ার কাছ থেকে অধিকৃত অঞ্চলের উত্তর ও দক্ষিণাংশ ইউক্রেনীয় প্রজাতন্ত্রের অন্তর্ভুক্ত করে। অন্যদিকে, রোমানীয়দের কাছ থেকে অধিকৃত অঞ্চলের বাকি অংশকে মোলদাভীয় স্বায়ত্তশাসিত প্রজাতন্ত্রের বাকি অংশের সঙ্গে যুক্ত করা হয়, এবং ‘মোলদাভীয় সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র’ সৃষ্টি করা হয়।

একই সময়ে জার্মানির চাপে রোমানিয়া হাঙ্গেরির নিকট উত্তর ট্রান্সিলভেনিয়া সমর্পণ করতে বাধ্য হয়। বিনা যুদ্ধে এত ভূমি হারানোর ফলে রোমানিয়া তীব্র অসন্তোষ দেখা দেয়, এবং ১৯৪০ সালের সেপ্টেম্বরে রোমানিয়ার রাজা দ্বিতীয় ক্যারল পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। তার ছেলে মাইকেল তার স্থলাভিষিক্ত হন, এবং উগ্র জাতীয়তাবাদী ও কমিউনিস্টবিরোধী জেনারেল ইওন আন্তোনেস্কু রোমানিয়ার প্রধানমন্ত্রী (ও রোমানিয়ার প্রকৃত শাসক) নিযুক্ত হন। আন্তোনেস্কু রোমানিয়ার হারানো ভূমি পুনরুদ্ধারের জন্য জার্মানির সঙ্গে পূর্ণ মৈত্রী স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেন। ফলে ১৯৪০ সালের অক্টোবরে ৫ লক্ষাধিক জার্মান সৈন্য রোমানিয়ায় প্রবেশ করে, এবং নভেম্বরে রোমানিয়া অক্ষশক্তিতে যোগদান করে।

১৯৪১ সালের ২২ জুন জার্মানি আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ ঘোষণা ব্যতিরেকে ১৯৩৯ সালে স্বাক্ষরিত অনাক্রমণ চুক্তি ভঙ্গ করে অতর্কিতে সোভিয়েত ইউনিয়নের ওপর আক্রমণ চালায়। জার্মানির পাশাপাশি তাদের মিত্র রোমানিয়া, হাঙ্গেরি, ইতালি, ফিনল্যান্ড, স্লোভাকিয়া ও ক্রোয়েশিয়া এই আক্রমণে যোগদান করে, কিন্তু জার্মানির মিত্রদের মধ্যে এই যুদ্ধের জন্য সবচেয়ে বেশি সৈন্য সরবরাহ করেছিল রোমানিয়া। বিনিময়ে রোমানিয়া বেসারাবিয়া ও উত্তর বুকোভিনা লাভ করে, এবং এর পাশাপাশি দনেস্তার ও বুগ নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলের প্রশাসনিক দায়িত্বও তাদের ওপর প্রদান করা হয়। যুদ্ধ চলাকালে অক্ষশক্তির অন্যান্য সদস্যের মতো রোমানিয়ার দখলদার সৈন্যরাও সোভিয়েত জনসাধারণের বিরুদ্ধে খুন, অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন ও নারী নির্যাতনের মতো অপরাধে লিপ্ত ছিল।

১৯৪৪ সালের সেপ্টেম্বরে যুদ্ধবিরতির পর সোভিয়েত ও রোমানীয় সৈন্যরা করমর্দন করছে; Source: Wikimedia Commons

সুবিখ্যাত স্তালিনগ্রাদের যুদ্ধেও রোমানীয়রা জার্মানির পক্ষে যুদ্ধ করে, এবং ফলশ্রুতিতে সোভিয়েতদের হাতে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়। কেবল এই যুদ্ধেই ১,০৯,০০০ থেকে ১,৫৮,৮৫৪ জন রোমানীয় সৈন্য হতাহত হয়। ১৯৪৩ সালের ডিসেম্বর থেকে ১৯৪৪ সালের এপ্রিলের মধ্যে পরিচালিত ‘নিপার–কার্পেথীয় আক্রমণাভিযানে’র মধ্য দিয়ে সোভিয়েত সৈন্যরা দনেস্তার নদী পর্যন্ত অঞ্চল মুক্ত করে, এবং ১৯৪৪ সালের ২০ থেকে ২৯ আগস্টের মধ্যে পরিচালিত ‘দ্বিতীয় জাসি–কিশিনেভ আক্রমণাভিযানে’র মধ্য দিয়ে তারা ‘মোলদাভীয় সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে’র ভূমি মুক্ত করে ও রোমানিয়ায় প্রবেশ করে।

এ সময় এটি ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল যে, সোভিয়েত সৈন্যরা শীঘ্রই রোমানিয়া দখল করে নেবে, এবং রোমানীয় ভূমিকে শত্রু অঞ্চল হিসেবে গণ্য করা হবে। এই পরিস্থিতিতে রোমানিয়ার রাজা মাইকেল দেশের অভ্যন্তরে একটি অভ্যুত্থান ঘটান। ১৯৪৪ সালের জুনে রোমানিয়ার ৪টি বিরোধী দলের (‘রোমানীয় কমিউনিস্ট দল’, ‘রোমানীয় সামাজিক গণতান্ত্রিক দল’, ‘জাতীয় উদারপন্থী দল’ এবং ‘জাতীয় কৃষক দল’) সমন্বয়ে ‘জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট’ নামক একটি সরকারবিরোধী জোট গঠিত হয়েছিল, এবং এই জোটটি অভ্যুত্থান পরিচালনায় রাজা মাইকেলকে সমর্থন করে। অভ্যুত্থানের ফলে রোমানিয়ার প্রধানমন্ত্রী আন্তোনেস্কু পদত্যাগ করতে বাধ্য হন, এবং জেনারেল কনস্তান্তিন সানাতেস্কু রোমানিয়ার নতুন প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন।

একই দিনে রোমানিয়া এককভাবে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে এবং পক্ষ পরিবর্তন করে মিত্রশক্তির সঙ্গে যোগদানের ঘোষণা প্রদান করে। কিন্তু সোভিয়েত সৈন্যরা রোমানিয়ার অভ্যন্তরে তাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখে এবং যুদ্ধবন্দি প্রায় ১,৪০,০০০ রোমানীয় সৈন্যকে সাইবেরিয়ায় নির্বাসনে প্রেরণ করে। ১২ সেপ্টেম্বর মিত্রশক্তি রোমানিয়ার যুদ্ধবিরতিকে স্বীকার করে নেয় এবং রোমানিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ বন্ধ করতে সম্মত হয়। ততদিনে রোমানিয়ায় প্রায় ১০ লক্ষ সোভিয়েত সৈন্য অবস্থান করছিল। এ সময় থেকে রোমানীয় সৈন্যরা মিত্রশক্তির পক্ষে যুদ্ধ করে, এবং হাঙ্গেরি ও চেকোস্লোভাকিয়ায় পরিচালিত সোভিয়েত অভিযানে তারা সোভিয়েতদের পক্ষে অংশগ্রহণ করে।

১৯৪৪ সালের অক্টোবরে সোভিয়েত প্রধানমন্ত্রী জোসেফ স্তালিন ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলের মধ্যে হওয়া একটি সমঝোতা অনুযায়ী, ব্রিটেন রোমানিয়াকে সোভিয়েত প্রভাব বলয়ের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। এদিকে সোভিয়েতরা চাচ্ছিল রোমানীয় সরকারে সোভিয়েত–সমর্থিত রোমানীয় কমিউনিস্টদের প্রভাব বৃদ্ধি করতে, এবং এজন্য রোমানীয় কমিউনিস্টরা দাবি করে যে, রোমানিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও যুদ্ধমন্ত্রীর পদ কমিউনিস্টদের দিতে হবে। কিন্তু এ সময় রোমানিয়ায় কমিউনিস্টদের জনপ্রিয়তা ছিল সীমিত, এবং উদারপন্থী ও কৃষক দল রোমানীয় প্রধানমন্ত্রী সানাতেস্কুকে কমিউনিস্টদের প্রতি অতিরিক্ত সহানুভূতিশীল বলে অভিহিত করে। তাদের চাপে ১৯৪৪ সালের ৫ ডিসেম্বর সানাতেস্কু পদত্যাগ করেন, এবং জেনারেল নিকোলাই রাদেস্কু তার স্থলাভিষিক্ত হন।

রোমানিয়ার সর্বশেষ রাজা মাইকেল; Source: Wikimedia Commons

রাদেস্কু ছিলেন কার্যত কমিউনিস্টবিরোধী, এবং তিনি রোমানিয়ায় কমিউনিস্টদের ক্রমবর্ধমান প্রভাব হ্রাস করার চেষ্টা চালান। এ সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ হিসেবে রোমানিয়ার কাছ থেকে প্রায় ৩০ কোটি (বা ৩০০ মিলিয়ন) মার্কিন ডলার দাবি করে, এবং রোমানিয়া থেকে জাতিগত জার্মান অধিবাসীদের বহিষ্কার করার জন্য রোমানীয় সরকারকে আহ্বান জানায়। রাদেস্কু সোভিয়েতদের দাবি পূরণ করতে রাজি হননি। এদিকে ১৯৪৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রোমানীয় কমিউনিস্টরা ও তাদের মিত্র দলগুলো সরকারবিরোধী বিক্ষোভের আয়োজন করে, এবং এই বিক্ষোভে বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ করা হয়। বিক্ষোভের পর রাদেস্কু কমিউনিস্টদের ‘দেশবিহীন ও ঈশ্বরবিহীন বিদেশি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

এর প্রতিক্রিয়ায় রোমানীয় কমিউনিস্টরা রাদেস্কুর বিরুদ্ধে তীব্র প্রচারণা যুদ্ধে শুরু করে, এবং রাদেস্কুর নিজের ছেলে নিকু (যে কমিউনিস্ট দলের সদস্য ছিল) একটি খোলা চিঠিতে তার বাবাকে পদত্যাগের আহ্বান জানায়। সোভিয়েত উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রেই ভিশিনস্কি রোমানিয়া সফর করেন এবং রাজা মাইকেলকে জানান যে, রাদেস্কুকে বরখাস্ত না করা হলে রোমানিয়া উত্তর ট্রান্সিলভেনিয়া ফিরে পাবে না। এ সময় রোমানিয়ার মিত্রশক্তিতে যোগদানের পুরস্কারস্বরূপ তাদেরকে ১৯৪০ সালে হাঙ্গেরির কাছে হারানো উত্তর ট্রান্সিলভেনিয়া ফিরিয়ে দেয়ার প্রক্রিয়া চলছিল। এমতাবস্থায় ১৯৪৫ সালের ১ মার্চ মাইকেল বাধ্য হয়ে রাদেস্কুকে বরখাস্ত করেন, এবং ৬ মার্চ পেত্রু গ্রোজা রোমানিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন।

গ্রোজার মন্ত্রিসভা ছিল একটি জোট মন্ত্রিসভা, এবং এটিতে কমিউনিস্ট দলীয় সদস্য ছাড়াও অন্যান্য দলের সদস্যরাও অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু গ্রোজা ছিলেন কমিউনিস্টপন্থী, এবং এই জোট ছিল প্রকৃতপক্ষে একটি ছদ্মাবরণ, কারণ জোটটিকে পর্দার অন্তরালে থেকে কমিউনিস্টরাই নিয়ন্ত্রণ করত। সেসময় যেহেতু রোমানিয়ার কমিউনিস্টদের জনপ্রিয়তা জনসাধারণের একটি নির্দিষ্ট অংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, সেহেতু কমিউনিস্টরা এককভাবে ক্ষমতা অধিকার করে নিজেদের বৈধতা ও গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়নি। এজন্য রোমানীয় কমিউনিস্ট দলের মহাসচিব গর্গে গর্গিউ–দেজ নিজেও গ্রোজার মন্ত্রিসভায় যোগদান করেননি। কিন্তু গ্রোজা মন্ত্রিসভার কৌশলগত দপ্তরগুলো (প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্ট্র ও বিচার) কমিউনিস্টদের নিয়ন্ত্রণে ছিল, ফলে ক্ষমতা কার্যত কমিউনিস্টদেরই করায়ত্ত ছিল।

রোমানীয় প্রধানমন্ত্রী পেত্রু গ্রোজা দেশটিতে সোভিয়েত প্রভাব বিস্তারের পথ উন্মুক্ত করেন; Source: Wikimedia Commons

গ্রোজা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর ১৯৪৫ সালের ১০ মার্চ সোভিয়েত ইউনিয়ন রোমানিয়ার নিকট উত্তর ট্রান্সিলভেনিয়া (প্রায় ৪৫,০০০ বর্গ কি.মি.) হস্তান্তর করে, কিন্তু শর্ত জুড়ে দেয় যে, সেখানকার জাতিগত সংখ্যালঘুদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। মে মাসে ইউরোপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে, কিন্তু সোভিয়েত সৈন্যরা রোমানিয়ায় অবস্থান করতে থাকে।

বিশ্বযুদ্ধোত্তর রোমানিয়ায় নির্বাচন এবং রাজতন্ত্রের অবসান

১৯৪৫ সালের শেষদিকে রাজা মাইকেলের সঙ্গে গ্রোজার মতপার্থক্য দেখা দেয়। মাইকেল একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী গ্রোজাকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানান, কিন্তু গ্রোজা সেই আহ্বান অগ্রাহ্য করে উল্টো রাজার ক্ষমতাকে সীমিত করতে থাকেন। ১৯৪৫ সালের ৮ নভেম্বর রাজা মাইকেলের ‘নামকরণ দিবস’ উপলক্ষে রাজতন্ত্রের সমর্থকরা বিক্ষোভের আয়োজন করে এবং কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়। বিক্ষোভ ক্রমশ দাঙ্গায় রূপ নেয়, এবং রোমানীয় সৈন্যরা বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালালে বেশ কয়েকজন হতাহত হয়, কিন্তু সোভিয়েত সেনা কর্মকর্তারা তাদেরকে নিরস্ত করে। এরপর সোভিয়েত সৈন্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

পরবর্তী বছরে কমিউনিস্ট–নিয়ন্ত্রিত সরকার রোমানিয়ায় নিজেদের প্রভাব বিস্তারের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে। তারা যুদ্ধকালীন যেসব ব্যক্তি রোমানীয় সরকার, হাঙ্গেরি ও জার্মানির সঙ্গে সহযোগিতায় লিপ্ত ছিল, তাদেরকে সরকারের প্রতিটি স্তর থেকে অপসারণ করে। জনসাধারণের সমর্থন আদায়ের উদ্দেশ্য তারা ভূমি সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ করে এবং প্রথমবারের মতো রোমানীয় নারীদের ভোটাধিকার প্রদান করে। একই সঙ্গে তারা কমিউনিস্টবিরোধী প্রচারমাধ্যম, সংগঠন ও দলগুলোর বিরুদ্ধে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে, এবং তাদের কার্যকলাপের পরিধিকে ব্যাপকভাবে সংকুচিত করে ফেলে। একইসঙ্গে তারা রোমানীয় জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপকভাবে কমিউনিস্ট আদর্শ প্রচার করতে থাকে। এসব পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে তাদের জনপ্রিয়তা আগের তুলনায় বৃদ্ধি পায়।

১৯৪৬ সালের নির্বাচনের পর রোমানীয় কমিউনিস্ট দলের মহাসচিব গর্গে গর্গিউ–দেজ জনগণের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিচ্ছেন; Source: Wikimedia Commons

১৯৪৬ সালের ১৯ নভেম্বর রোমানিয়ায় আইনসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, এবং রোমানীয় সরকারের প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী, এই নির্বাচনে কমিউনিস্ট–নিয়ন্ত্রিত ‘গণতান্ত্রিক দলসমূহের জোট’ ও তাদের সহযোগী দলগুলো ৬৯.৮% ভোট লাভ করে বিজয়ী হয়। রোমানীয় আইনসভার ৪১৪টি আসনের মধ্যে ৩৪৭টি কমিউনিস্টরা ও তাদের মিত্ররা লাভ করে। কিন্তু নির্বাচনে পরাজিত দলগুলো দাবি করে, রোমানীয় সরকার নির্বাচনের ক্ষেত্রে কারচুপি ও অনিয়মের আশ্র‍য় নিয়েছে। ইতোমধ্যেই সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে পশ্চিমা বিশ্বের দ্বন্দ্ব শুরু হয়ে গিয়েছিল, এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন এই নির্বাচনের ফলাফলকে স্বীকৃতি প্রদান করেনি। ইতিহাসবিদদের মতে, এই নির্বাচনে রোমানীয় কমিউনিস্টরা প্রকৃতপক্ষে ৪৮% ভোট লাভ করেছিল।

যাই হোক, এই নির্বাচনের পর রোমানিয়ায় কমিউনিস্টদের পূর্ণ আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। সরকার তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল, পুলিশ ও সশস্ত্রবাহিনী তাদের নিয়ন্ত্রণাধীনে ছিল, এবং তাদেরকে সহায়তা করার জন্য কয়েক লক্ষ সোভিয়েত সৈন্য তো ছিলই। ফলে রোমানিয়া সুদৃঢ়ভাবেই সোভিয়েত প্রভাব বলয়ের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়েছিল। এদিকে গ্রোজার সঙ্গে রাজা মাইকেলের মতবিরোধ ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। গ্রোজার কমিউনিস্ট–নিয়ন্ত্রিত সরকার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুদ্ধাপরাধের জন্য দায়ী রোমানীদের বিচারের সম্মুখীন করে এবং সোভিয়েত প্রধানমন্ত্রী স্তালিনকে রোমানিয়ার ‘সম্মানসূচক নাগরিকত্ব’ প্রদান করে। রাজা মাইকেল উভয় পদক্ষেপেরই বিরুদ্ধে ছিলেন, এবং কমিউনিস্টরা তাকে ক্রমশ প্রচ্ছন্ন হুমকি হিসেবে বিবেচনা করতে থাকে।

১৯৪৭ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি মিত্রপক্ষ ও রোমানিয়ার মধ্যে ‘প্যারিস শান্তিচুক্তি’ স্বাক্ষরিত হয়। এর মধ্য দিয়ে রোমানিয়া ১৯৪১ সালের ১ জানুয়ারিতে তাদের যে সীমানা ছিল, সেই পরিমাণ ভূমি লাভ করে। এর ফলে বেসারাবিয়া ও উত্তর বুকোভিনা স্থায়ীভাবে সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত হয়। কিন্তু রোমানীয়রা আনুষ্ঠানিকভাবে হাঙ্গেরির কাছ থেকে উত্তর ট্রান্সিলভেনিয়া ফিরে পায়। এর পাশাপাশি রোমানিয়া সোভিয়েত ইউনিয়নের দাবি অনুযায়ী তাদেরকে ৩০ কোটি মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ দিতেও সম্মত হয়।

১৯৭৮ সালে রোমানীয় রাষ্ট্রপতি নিকোলাই চওসেস্কু খেমার রুজ–শাসিত কম্বোডিয়া সফর করেন। চীনা–সোভিয়েত দ্বন্দ্বে খেমার রুজ চীনের পক্ষে ছিল, কিন্তু তবুও চওসেস্কু তাদের সাথে যোগাযোগ রেখেছিলেন; Source: Wikimedia Commons

১৯৪৭ সালের ৩০ ডিসেম্বর রাজা মাইকেল সিনাইয়ায় অবস্থিত তার প্রাসাদে নববর্ষ উদযাপনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এসময় তাকে প্রধানমন্ত্রী গ্রোজা ‘জরুরি আলোচনা’র জন্য রাজধানী বুখারেস্টে ডেকে পাঠান। মাইকেল বুখারেস্টে তার রাজপ্রাসাদে পৌঁছে দেখতে পান যে, সৈন্যরা সেটিকে ঘিরে রেখেছে। মাইকেলের পরবর্তী ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি প্রাসাদের ভেতরে প্রবেশের পর গ্রোজা এবং রোমানীয় কমিউনিস্ট দলের মহাসচিত গর্গে গর্গিউ–দেজ তাকে পদত্যাগ করার জন্য চাপ দেন, এবং তাকে একটি পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেন। অবশ্য অন্য একটি ভাষ্যমতে, সোভিয়েত উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রেই ভিশিনস্কির সঙ্গে আলোচনার পর মাইকেল পদত্যাগ করতে রাজি হন, এবং বিনিময়ে তাকে তার সম্পত্তি রোমানিয়ার বাইরে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ প্রদান করা হয়।

প্রকৃত ঘটনা যা-ই হোক, ১৯৪৭ সালের ৩০ ডিসেম্বর রোমানিয়ার রাজা মাইকেল পদত্যাগ করেন, এবং একই দিনে রোমানীয় কমিউনিস্টরা রোমানিয়াকে একটি ‘গণপ্রজাতন্ত্র’ (People’s Republic) ঘোষণা করে। রোমানিয়ার নতুন নামকরণ করা হয় ‘গণপ্রজাতন্ত্রী রোমানিয়া’ (People’s Republic of Romania)। ১৯৪৮ সালের ৩ জানুয়ারি প্রাক্তন রাজা মাইকেল সপরিবারে দেশত্যাগ করেন। এর মধ্য দিয়ে রোমানিয়ার ওপর পরিপূর্ণ সোভিয়েত/কমিউনিস্ট নিয়ন্ত্রণ স্থাপিত হয়।

রোমানিয়া সোভিয়েত–নেতৃত্বাধীন ‘ওয়ারশ চুক্তি’ সামরিক জোট ও ‘পারস্পরিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা পরিষদ’ অর্থনৈতিক জোটের সদস্য হয়, এবং স্নায়ুযুদ্ধের বাকি সময় জুড়ে তারা সোভিয়েত প্রভাব বলয়েই অবস্থান করে। ১৯৫৮ সালে রোমানিয়া থেকে সোভিয়েত সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়া হয়, এবং এরপর থেকে রোমানিয়া তুলনামূলকভাবে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করতে থাকে। কিন্তু সামগ্রিকভাবে তারা সোভিয়েত বলয়েরই একটি সদস্য হিসেবে ছিল।

১৯৮৯ সালের ডিসেম্বরে একটি রক্তাক্ত বিপ্লব/অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে রোমানিয়ার কমিউনিস্ট সরকারের পতন ঘটে, এবং দেশটির ওপর সোভিয়েত প্রভাবের আনুষ্ঠানিক অবসান ঘটে।

Related Articles