Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ট্যাংক ব্যাটল অব শিরোমণি: একাত্তরের যে যুদ্ধকৌশল এখন পাঠ্য বহু দেশে

সম্মুখ স্থলযুদ্ধে সামরিক বাহিনীর অন্যতম অপরিহার্যতা হচ্ছে ব্যাটল ট্যাংক। যুদ্ধের ময়দানে প্রতিপক্ষকে ছিন্নভিন্ন করে এগিয়ে যেতে এক নির্ভরতার প্রতীক ট্যাংক। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে ট্যাংক ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ইতিহাসে অনেকবারই লোহা লক্করের একেকটি ট্যাংক নিজের পরিচয় ছাপিয়ে ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছে, হয়ে উঠেছে কিংবদন্তী এবং পরবর্তী প্রজন্মগুলোর জন্য আদর্শ ও বীরত্বের উদাহরণ।

তবে ইতিহাসের পাতায় যে সব বীরত্ব স্থান পায় তা কিন্তু না। ইতিহাসচর্চার অভাবে বীরত্বের গল্প মুছেও যেতে পারে। পশ্চিমা সিনেমার কল্যাণে ঐতিহাসিক অনেক যুদ্ধ এবং অভাবনীয় কিছু যুদ্ধ কৌশল সম্পর্কে প্রজন্ম জানলেও হয়তো অনেকেই ‘৭১ এর রণাঙ্গনে ঘটে যাওয়া ঐতিহাসিক শিরোমণির ট্যাংক যুদ্ধের কথা জানেন না। আমাদেরই এই যুদ্ধকৌশল বর্তমানে ৩৫ দেশের সামরিক একাডেমিতে পড়ানো হয়। শিরোমণির সেই যুদ্ধ নিয়ে এই লেখাটি।

২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানী হামলার কথা ভেবে যশোরে বেশ শক্ত ঘাঁটি গড়েছিল ব্রিটিশরা। জাপানী বাহিনী বার্মা পর্যন্ত দখল করে নিয়েছিল। ভারতবর্ষ নিজেদের আয়ত্ত্বে রাখতেই পূর্বাঞ্চল জুড়ে ব্যাপক প্রতিরক্ষা গড়ে তোলে ব্রিটিশরা। যশোরের ঘাঁটির প্রতিরক্ষা খুবই শক্ত ছিল। দেশভাগের পর যশোর সেনানিবাস চলে যায় পাকিস্তানের আয়ত্ত্বে। ১৯৫৮ সালে এক গেজেটের মাধ্যমে পূর্ণ সেনানিবাস হয় এটি।

১৯৭১ সালে যশোর সেনানিবাসের নেতৃত্বে ছিল পাকবাহিনীর ৯ম পদাতিক ডিভিশনের ১০৭ তম ব্রিগেড। যুদ্ধের শুরুর দিকে ৩১শে মার্চ মুক্তিবাহিনী ঝটিকা অভিযান চালিয়ে যশোর শহর মুক্ত করতে সমর্থ হয়, যদিও ৬ দিন পরই পাক হানাদারদের তীব্র গোলাবর্ষণে পিছু হটে মুক্তিযোদ্ধারা।

ডিসেম্বর মাস, দেশের প্রায় সব স্থানে গেরিলাদের কাছে মার খেয়ে এশিয়ার তথাকথিত শ্রেষ্ঠ বাহিনীর একেবারেই নাকাল অবস্থা। ভারতীয় বাহিনীর সাথে যৌথবাহিনী গঠন করার পর গেরিলা অভিযানের সাথে সমান তালে নিয়মিত বাহিনীর মতো একটির পর একটি শহর মুক্ত করার পরিকল্পনা করে মুক্তিবাহিনী।

একাত্তরে ভারতীয় সেনবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের সদর দপ্তর ছিল কলকাতায়, যা যশোর থেকে মাত্র ১১০ কিলোমিটার দূরে। গুরুত্ব বুঝেই যশোরে ব্যাপক সেনা সমাবেশ ঘটিয়েছিল পাকবাহিনী। দুর্ভেদ্য এই ঘাঁটিকে গর্ব করে তারা বলতো ‘প্রাচ্যের স্তালিনগ্রাদ’। 

পাকবাহিনী নিশ্চিত ছিল, ভারতীয় বাহিনীর সাথে যৌথ হামলা যশোরেই প্রথম আসবে। বেনাপোল-যশোর, কৃষ্ণনগর-দর্শনা-চুয়াডাঙ্গা, মুর্শিদাবাদ-রাজাপুর-কুষ্টিয়া- এই তিনটি জায়গা ধরে দুর্ভেদ্য প্রতিরক্ষা লাইন বানিয়েছিল তারা। বেশিরভাগ সময়ই পাকিস্তানীরা বড় শহরে ঢোকার হাইওয়েকে কেন্দ্র করে প্রতিরক্ষা লাইন সাজাতো। এবং প্রতিবারই তাদের বোকা বানিয়ে বিকল্প রাস্তা ধরে এগিয়ে যেত মুক্তিবাহিনী। আর্ট অফ ওয়্যারের খেলায় যুদ্ধ শুরুর আগেই পিছিয়ে যেত পাক বাহিনী। এদিকে বয়রা এবং কপোতাক্ষ নদ পার হয়ে মুক্তিবাহিনী পৌঁছে যায় যশোর সেনানিবাসের ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে। ২১শে নভেম্বর থেকে ৬ই ডিসেম্বর এখানে সংঘটিত হয় ভয়াবহ যুদ্ধ, গরিবপুরের যুদ্ধ নামেই পরিচিত।

৭ই ডিসেম্বর মিত্রবাহিনী যশোর ঘাঁটি দখল করতে অগ্রসর হয়। কিন্তু তারা আবিস্কার করে এক খালি ঘাঁটি। 

যশোর দখলের পর খুলনার পথে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট; Image credit: unknown 

কড়া প্রতিরক্ষায় ঘেরা যশোর ঘাঁটি দখলে প্রচুর রক্তপাতের আশঙ্কা ছিল মুক্তিবাহিনীর। যৌথবাহিনীকে অন্তত ২ সপ্তাহ ভালোমতো ঠেকিয়ে রাখার অস্ত্র ছিল সেখানে, আশেপাশের সব অঞ্চলেও এখান থেকেই অস্ত্র সরবারাহ করা হতো। কিন্তু যশোর সেনানিবাস প্রায় বিনা বাঁধায়ই মুক্তিবাহিনীর দখলে চলে আসে, যশোর মুক্ত করতে গিয়ে পরিত্যক্ত এক ঘাঁটি আবিষ্কার করে যৌথবাহিনী। পাকবাহিনী পিছু হটেছে। গরিবপুরে পরাজিত হবার পর পাকবাহিনীর মনোবল ভেঙে গিয়েছিল। খবর পাওয়া গেল, পিছু হটে খুলনার শিরোমণিতে অবস্থান নিয়েছে তারা। এরকম সুসজ্জিত ব্যূহ ছেড়ে পিছু হটার কারণ ছিল ৩টি

প্রথমত, ১০৭ ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার হায়াতের ধারণা ছিল, ৭ম নৌবহর কিছুদিনের মধ্যেই এসে পড়বে এবং রূপসা পশুর নদী দিয়ে মার্কিন মেরিন এবং উভচর বাহিনী এসে তাদের উদ্ধার করে নিয়ে যাবে। তাই নদীর কাছাকাছি অবস্থান করা ভালো।

দ্বিতীয়ত, শিল্পে উন্নত এই স্থানে প্রতিরক্ষামূলক অবস্থান নেয়ার জন্য প্রচুর জায়গা ছিল। স্তালিনগ্রাদ যুদ্ধে হিটলারের বাহিনী যখন শহরের দ্বারপ্রান্তে, তখন রেড আর্মি শহরের প্রত্যেকটি পাকা বাড়িতে প্রতিরক্ষামূলক অবস্থান নিয়েছিল এবং সফলভাবে হিটলারের বাহিনীকে ঠেকিয়েও দিয়েছিল। পাকবাহিনীও প্রত্যেকটি পাকা স্থাপনা ব্যবহার করে ডিফেন্সিভ অবস্থানে যায়

তৃতীয়ত, শিরোমণি আগে থেকেই হানাদারদের ভালো চেনাজানা ছিল এবং বেশ কয়েকটি নদীবেষ্টিত এই স্থানের ভৌগলিক সুবিধা ভালোই ছিল।

পাক বাহিনীর অবস্থান; Image source: defencejournal.com

৭-১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত শিরোমণির প্রত্যেকটি বাড়িতে নিজেদের অবস্থান শক্ত করে খানসেনারা। ইস্টার্ন গেট, আলীম জুট মিল, অফিল জুট মিল, আটরা, গিলাতলা প্রত্যেকটি এলাকাকে দুর্গে রূপান্তরিত করা হয়। মশিয়াতিতে কয়েক গজ পর পর বাংকার এবং মাইন ফিল্ড সৃষ্টি করা হয় আক্রমণ প্রতিহত করতে। কেবল ফ্যাক্টরিতে সদর দপ্তর স্থাপন করে পাকিস্তানিরা। এক ইঞ্চি এলাকাও নিজেদের বন্দুকের আওতার বাইরে রাখেনি তারা।

শিরোমণিতে পাকিস্তানী বাহিনীর শক্তিমত্তা নিম্নরুপ:

১) ৩২টি শেরম্যান ট্যাংক
২) ২টি এম ২৪ চাফি ট্যাংক (প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে)
৩) ১৫০ আর্টিলারি (যেটাকে পাকিস্তান ১৫টি বলে প্রচার করে)
৪) ৪০০ কমান্ডো  
৫) নিয়মিত পদাতিক বাহিনী (প্রায় ৫ হাজার সৈন্য)
৬) ১৫০ রাজাকার

তার উপর কয়েক গজ পর পর বাঙ্কার, ট্রেঞ্চ, মাইন ফিল্ড, ক্যামোফ্লোজ- সব মিলিয়ে শিরোমণি দুর্ভেদ্য হয়ে ওঠে।

১০-১২ তারিখ ফুলতলায় পাক বাহিনীর অবস্থান দখলে একের পর এক হামলা চালায় যৌথবাহিনী। ভৈরব নদী পার হওয়ায় চেষ্টা করলেও সেটা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তবে চারদিকের সব অবস্থানে সেনা জোরদার করে ঘিরে ফেলা হয় পাকবাহিনীকে।

বাস্তবে ১২ তারিখ পর্যন্ত পাকবাহিনীর কৌশলের কাছে যৌথবাহিনী সাময়িক পরাজিত হয়েছিল। যৌথবাহিনী পাকবাহিনীর মূল অবস্থান মনে করে বারবার স্ক্রিনিং পজিশনে (প্রতিপক্ষকে ধোঁকা দিতে মূল প্রতিরক্ষা লাইনের সামনে আরেকটি অবস্থান, এতে প্রতিপক্ষ সহজে মূল লাইন খুঁজে পায় না এবং মূল লাইন প্রস্তুত হতে পারে) হামলা করে যাচ্ছিল। প্রচুর সেনা হতাহত হলেও পাকবাহিনী স্ক্রিনিং পজিশন ধরে রাখে।

১৩ তারিখ থেকে শিরোমণি গোলাগুলিতে কেঁপে ওঠে। কিন্তু পাকসেনাদের অবস্থানের তেমন কোনো ক্ষতি করা যাচ্ছিল না। এয়ার সাপোর্ট চেয়ে খবর পাঠানো হয়। দুদিন ধরে চলে ভারতীয় বিমানের বিরামহীন বোমা হামলা। দুদিন পরে হানাদারদের সাড়াশব্দ একেবারেই কমে যায়। মিত্রবাহিনী ধরে নেয়, পাক বাহিনী হয়তো পিছু হটেছে অথবা ব্যাপক বোমাবর্ষণে মৃতপ্রায় অবস্থায় পড়ে আছে, কিন্তু মুক্তিবাহিনীর সূত্র এবং যুদ্ধ পরিস্থিতি বিশ্লেষণ ভিন্ন কিছু বলছিল।

এদিন রাজপুত রেজিমেন্ট এসে যুদ্ধে যোগ দেয়। ভারতীয় ইঞ্জিনিয়ারিং ডিভিশন ভৈরব নদীর উপর একটি ভাসমান ব্রিজ নির্মাণ করে। আশেপাশের এলাকা থেকে বাড়তি মুক্তিযোদ্ধারা এসে ব্যারাকপুর, সিদ্দিপাশা, লাকোহাটি, ধূলগ্রামে অবস্থান নেয়।

১৪ তারিখ মুক্তিবাহিনীর মতামতকে অগ্রাহ্য করে কেবল ফ্যাক্টরির দিকে যাত্রা শুরু করে মেজর মাহেন্দ্র সিং এবং মেজর গনির কমান্ডে একটি দল। ২৮টি গাড়ির বহর বাদামতলায় প্রবেশ করা মাত্রই অ্যামবুশের ফাঁদে পড়ে। ২৬টি গাড়িই ধ্বংস হয়ে যায়। মেজর মাহেন্দ্র সিং পালিয়ে আসলেও নিহত হয় ২৫০-৩০০ জন সেনা। তীব্র বিমান হামলার জবাব না দিয়ে ১০৭তম ব্রিগেড মাটি কামড়ে শিরোমণিতে পড়ে ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা সেদিন ট্রাকে বোঝাই ভারতীয় সেনাদের লাশ নিয়ে যেতে দেখেছিলেন।

১৫ তারিখ পর্যন্ত পাকবাহিনী তাদের যোগাযোগ দপ্তর (শান্তি বাহিনীর সভাপতি নুরুল হুদার বাড়ি), অন্তত ৪টি ট্যাংক, রাজাকার ক্যাম্প, পোস্ট অফিস (অস্ত্রাগার) ও গোলাবারুদের কয়েকটি ট্রাক হারায়।

১৫ তারিখও সারাদিন থেকে থেমে যুদ্ধ চলে। ব্যাপক হতাহতের পর আর মিত্রবাহিনী যুদ্ধের মূল কমান্ড তাদের হাতে রাখেনি। মুক্তিবাহিনীর নেতৃত্ব দেয়া মেজর মঞ্জুরের (পরে ব্রিগেডিয়ার) কাছে তা হস্তান্তর করা হয়। মেজর মঞ্জুর তার কোমরের বেল্ট খুলে টেবিলে রাখেন এবং যুদ্ধ জয় না করে ফিরবেন না বলে পণ করেন। কিছু সূত্র অনুযায়ী, তিনি তার স্ত্রীর কাছে একটি চিঠি লিখে গিয়েছিলেন। এদিন পর্যন্ত যৌথবাহিনী বড় সাফল্য দেখাতে না পারলেও পাকবাহিনী বেশ কিছু খণ্ডযুদ্ধের ফলে নিজেদের অবস্থান ছোট করে শিরোমণির মধ্যে নিয়ে আসে।

ভারতীয় বাহিনী; image source: marciaunderwood.com

১৬ তারিখ ঢাকায় নিয়াজি আত্মসমর্পণ করলেও ব্রিগেডিয়ার হায়াত যুদ্ধ চালিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নেন। সর্বাত্মক যুদ্ধের পরিকল্পনা করেন মেজর মঞ্জুর। ৭ ভাগে ভাগ করে চারদিক থেকে পাকবাহিনীর অবস্থানে হামলা করার পরিকল্পনা হয়। যুদ্ধের ভয়াবহতায় ভারতীয় কর্মকর্তারা কিছু দূরে অবস্থান নেন। 

মেজর হুদার নেতৃত্বে শিরোমণির ডানের মুক্তিবাহিনী কলামকে পেছনে দ্বিতীয় প্রতিরক্ষার দায়িত্ব দেয়া হয়। ফ্রন্ট লাইনের ভারতীয় সেনাদের ডানে প্রতিরক্ষামূলক অবস্থানে নিয়োজিত করা হয়। বামের ২টি এবং পেছনের ৩টি কমান্ডো কলামকে আনা হয় ফ্রন্ট লাইনে। সংকেত পাবার সাথে সাথেই মূল সড়কের নিচে ঘাপটি মেরে থাকা  পিটি ৭৬ ট্যাংক দুটি ক্ষিপ্রগতিতে এগিয়ে যেতে শুরু করে। ট্যাংকের পেছনে মেজর মঞ্জুরসহ ছিলেন ১২ জন কমান্ডো। আরো ৬টি ট্যাংক ডানের বেত গাছের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানী হানাদারদের ফ্রন্ট লাইনের উপর আছড়ে পড়ে। কুয়াশার মধ্যে মুক্তিবাহিনীর এই দলটি পাক ব্যূহে হারিয়ে যায়। মেজর হুদা  দ্বিতীয় লাইনকে আগ্রসর হতে নির্দেশ দেন। পেছন থেকে শুরু হয় মিত্রবাহিনীর আর্টিলারি হামলা।

সামনে তখন ২৫টি ট্যাংক, কয়েকশ মর্টার। শত শত গোলা নিক্ষেপের মধ্যেই পাকবাহিনীর প্রতিরক্ষা লাইনে ঢুকে গেছে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা। নিজেদের ট্যাংকের পেছন থেকে বেরিয়ে আসে মুক্তিযোদ্ধারা। তীব্র গোলাগুলির মধ্যেই ট্যাংকের উপরে উঠে স্টেনগান দিয়ে গুলি করতে থাকে ড্রাইভার-গানারদের। হ্যাচ খোলা পেলে গ্রেনেড ছুড়ে মারা হচ্ছে। গোলায় গাছ উপড়ে পড়ছে। বিস্ময়ের ঘোর কাটতেই ব্রিগেডিয়ার হায়াত আবিস্কার করলেন, তার ফ্রন্ট লাইনে থাকা ট্যাংক বাহিনী স্তব্ধ হয়ে গেছে। পিছু হটে পাক বাহিনী। একজন মুক্তি কমান্ডো দৌড়ে এসে খবর দেন, “খানেরা ভেগে যাচ্ছে”। “জয় বাংলা” ধ্বনি তুলে মুক্তিবাহিনীর কলাম সামনে এগিয়ে যেতে থাকে। সাথে মিত্রবাহিনীর বাকি ট্যাংকও প্রতিরক্ষামূলক অবস্থান থেকে বেরিয়ে এসে আক্রমণ করতে থাকে। ভোরে আবার বিমান হামলা শুরু হলে পাকবাহিনী বুঝে যায়, ফ্রন্ট লাইন ভেঙে পড়েছে, এবার আর বিমান হামলা থেকে রক্ষা নেই।

১৭ই ডিসেম্বর সকালে নিরস্ত্র অবস্থায় কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা বিসিক রোডে পাকবাহিনীর সাথে কথা বলতে যান। দুপুরে আনুমানিক ৩,৭০০ জন পাক সেনা আত্মসমর্পণ করে। মেজর মঞ্জুর তাদের ব্যাজ খুলে ফেলার নির্দেশ দেন। মুক্ত হয় খুলনা। পাক সেনারা নিজেদের কুকীর্তির জন্য নিজেদের গালমন্দ করতে থাকে।

পাক বাহিনীর আত্মসমর্পণ; Image source: AP

স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, বিসিক শিল্প নগরীর ৪ কিলোমিটার এলাকা ঘিরে কোনো বাড়ি অক্ষত ছিল না। সমরবিদদের মতে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর একই যুদ্ধক্ষেত্রে ট্যাংক, আর্টিলারি, পদাতিক এবং হাতাহাতি যুদ্ধ শিরোমণি ছাড়া অন্য কোথাও সংঘটিত হয়নি। এই যুদ্ধের কৌশল ভারত, পোল্যান্ডসহ ৩৫টি দেশের সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা কলেজে পড়ানো হয়।

This article is in Bangla language. It's about tank battle of shiromoni,1971.

References:

১। ট্যাংক ব্যাটল অফ শিরোমণি; গাজী সাইফুল হাসান 
২। স্বাধীনতার দুর্জয় অভিযান; স. ম. বাবর আলী
৩। The battle of Khulna; defencejournal.com
৪। মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান (৭ম খণ্ড); সেনাবাহিনীর শিক্ষা পরিদফতর-এশিয়ান পাবলিকেশন্সের পক্ষে
৫। মুক্তিযুদ্ধের হৃদয়ে মম; মুসা সাদিক
৬। মুক্তিযুদ্ধে খুলনা; মোল্লা আমির হোসেন

Featured Image: AP 

Related Articles