কিছুটা কল্পনা, কিছুটা বাস্তবতা আর কিছুটা পারিপার্শ্বিকতা মিলিয়েই লেখক আর তার লেখনী। আমরা সবসময় লেখনী কিংবা গল্প সম্পর্কে জানতে উদগ্রীব থাকি। কখনো জানতে ইচ্ছা হয় না লেখকের মনের গঠন কিংবা গল্পের অন্তরালে লেখকের গল্পটা কী। তাই আজ চলে যাবো এক লেখকের মনের গহীনে। জে আর. আর. টলকিন আর তার অনবদ্য দুই সৃষ্টি দ্য হবিট এবং দ্য লর্ড অব দ্য রিংস নিয়ে আজকের অণুভ্রমণ। টলকিন কীভাবে প্রতিটি চরিত্রকে প্রাণ দিয়েছেন এবং প্রতিটি গল্পের অনুপ্রেরণাই বা পেয়েছেন কোথা থেকে এমন সব প্রশ্নের উত্তর মিলবে আজকের এই লেখায়।
হবিটন
মিস্টি মাউন্টেন (Misty Mountain), যে পর্বতের ভাঁজে ভাঁজে বিপদ আর রহস্য ওঁতপেতে থাকে। ওপারে দুর্গম আর বিপদসংকুল পাহাড় আর এপারে শায়ার; পাহাড়, নদী আর সবুজে ভরা এক অঞ্চল। শায়ারের ছোট্ট গ্রাম হবিটন। ছিমছাম বলতে যা বোঝায় ঠিক তা-ই। এখানে জীবন বয়ে যায় জীবনের মতোই। নেই কোনো যান্ত্রিকতা কিংবা আধুনিক মানুষের মতো উদ্ভট আর অসামঞ্জস্যপূর্ণ প্রতিযোগিতা। হবিটদের বাস সেখানেই। মাঠের পর মাঠ সবুজ শস্য, গাজর, বাঁধাকপির চাষ। শায়ারের আকাশে বাতাসে তাজা ফসলের ঘ্রাণ। ছোট ছোট নদী, কাঠের ঘ্রাণ, অলস বিকালের তন্দ্রাচ্ছন্নতা সবই হবিটদের রক্তে রক্তে।
টলকিনের কল্পনার হবিটরা আধুনিক যুগের মানুষ না, বরং তারা আধুনিক মানুষ থেকে যোজন যোজন দূরে থাকতেই পছন্দ করে। তাদের মাঝে নেই কোনো অতিরিক্ত ঔৎসুক্য, কখনো জানতে ইচ্ছা হয় না ওপারে (শায়ারের ওপারে) কী আছে, কারা থাকে, কীই বা তাদের হালচাল। তাদের দৌড় হবিটন পেরিয়ে শায়ার পর্যন্তই। কেউ কখনো এর বাইরে পা মাড়ায়নি।
আধুনিকতা বলে কোনো শব্দ হবিটরা জানে না। হবিটরা আকারে গড়পড়তা মানুষের চেয়ে খাটো, তবে বামন নয়। উচ্চতায় ২-৪ ফুটের বেশি নয়। ভোজনরসিক হবিটরা ঘরকুনো স্বভাবের। একজন আদর্শ হবিট মানেই ভোজনরসিক, আরামপ্রিয় আর প্রাত্যহিকতায় বিশ্বাসী। একই সূর্যোদয়, একই হবিট হোল (হবিটদের ঘর), একই প্রতিবেশী আর তাদের জীবনযাত্রা কখনো তাদের একঘেয়ে করে না। বরং প্রতিটা দিন তাদের কাছে আলাদা। একই রং প্রতিদিন তাদের কাছে ভিন্নভাবে ধরা দেয়। একই বাতাসের গুনগুন তাদের মনে একইভাবে আরাম ছড়িয়ে দেয়। প্রাত্যহিকতার কোনো ব্যত্যয় তারা পছন্দ করে না। আর অ্যাডভেঞ্চার? এমন কোনো শব্দই হবিটদের প্রাগৈতিহাসিক অভিধানে নেই।
চিরাচরিত সুখী মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে তারা। এখানে নারী পুরুষ সবাই পরিশ্রম করে। দিনে কমপক্ষে ৫ বার খাবার খাওয়া তাদের দৈনন্দিন রুটিন। খাবার পর কাজ আর কাজের ফাঁকে ফাঁকে বিশ্রাম। প্রায় সব হবিটই বাগান করতে ভালবাসে। সন্ধ্যায় গ্রাম্য সরাইখানায় চলে অফুরন্ত হাসি-ঠাট্টা আর বিয়ারের স্রোত। হাসি গল্প আর আনন্দে মেতে উঠে জীবন। শান্ত, প্রাচীন আর গ্রাম্য জীবন বলতে যা বোঝায় শায়ারের হবিটন তা-ই। এখানকার শিশুরা বেড়ে ওঠে শস্যের মনমাতানো ঘ্রাণে, বেড়ে ওঠে শায়েরের ছোট ছোট নদীর মতো টগবগিয়ে। যন্ত্র বলতে আমরা যা বুঝি সেসবের সাথে পরিচয় নেই তাদের। যন্ত্র বলতে তারা বোঝে হবিটনের দ্য গ্রেট মিল, যেটা মূলত ময়দা তৈরীর কারখানা। এই ছিল টলকিনের কল্পনার হবিটন।
১৮৯৬ সালে ৪ বছর বয়সে টলকিন মা এবং ভাইয়ের সাথে সেরহোলে পাড়ি জমান। ইংল্যান্ডের বারমিংহাম থেকে ৪ মাইল দূরে তৎকালীন উত্তর ওরসেস্টারশায়ারের ছোট্ট একটি গ্রাম সেরহোল। বাবার চাকরিসূত্র টলকিনরা দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকতেন। সেখানেই টলকিনের জন্ম। দক্ষিণ আফ্রিকার রুক্ষ ও গ্রীষ্মমন্ডলীয় আবহাওয়ায় বেড়ে ওঠা টলকিন সেরহোলের অবারিত বিস্তৃত সবুজ ক্ষেত আর গাছের সারি দেখে অবাক হয়ে যান। ছোট্ট টলকিনের শৈশব কেটে যায় সেসব ফসলী ক্ষেত, নদীর তীর এবং সেরহোলের আশেপাশের জঙ্গলে ভাইয়ের সাথে দুরন্তপনা করে।
তিনি বলেন, আপনি যদি বিলবো ব্যাগিন্সের গ্রাম হবিটন কিংবা শায়ারকে অনুভব করতে চান তাহলে আপনাকে সেরহোলে আসতে হবে। ছোট্ট টলকিন নিজের অজান্তেই ভালবেসে ফেলেন সেরহোলের প্রকৃতিকে, মানুষগুলোকে। এভাবেই ধীরে ধীরে প্রতিটি শিশুর মাঝে দেশপ্রেম জন্মায়।
সেরহোলের মানুষগুলোর জীবনযাত্রা হবিটদের মতোই। শান্ত, নিরবিচ্ছিন্ন। অধিকাংশই কৃষিজীবী। তারা খেতে ভালোবাসে। ভালবাসে খোশগল্পে মেতে উঠতে। ভালবাসে আকন্ঠ বিয়ার পান করে সরাইখানায় পড়ে থাকতে।
ছোটবেলায় টলকিন আর তার ভাইয়ের সবচেয়ে উত্তেজনাকর সময় কাটতো সেরহোল মিলে, যেটাকে তিনি দ্য লর্ড অব দ্য রিংসে ‘দ্য গ্রেট মিল’ বলে অভিহিত করেছেন। ১৭৫৬ সালে কোল নদীর তীরে গড়ে ওঠে এই মিলটি। মূলত ভুট্টা পিষে ময়দা বানানো হতো এই মিলটিতে। টলকিন এবং তার ভাই হিলারি মিলের মালিককে খুব বিরক্ত করতেন। আসলে বিরক্ত করে মজা পেতেন। মিলার টেড স্যান্ডিম্যান ক্ষেপে গিয়ে তাদের খুব বকাঝকা করতেন। এতে আরো মজা পেতেন দুই ভাই। তাই নিয়মিত বিভিন্নভাবে মিলারকে ক্ষেপানোর চেষ্টা করতেন দুজনই।
ধীরে ধীরে টলকিন শৈশব থেকে কৈশোরে পা দিলেন। এদিকে টলকিনের মাতৃভূমি ইংল্যান্ড ধীরে ধীরে হুমকির মুখে পড়ছিল। টলকিন দ্য হবিট এবং দ্য লর্ড অব দ্য রিংস এ বারবার শ্যাডো অর্থাৎ কালো ছায়ার কথা বলেছেন। শায়ারে সুখ-শান্তির দিন শেষ হয়ে আসবে, নেমে আসবে অশুভ কালো ছায়া। গ্রাস করবে পুরো শায়ারকে। তছনছ নয়ে যাবে শায়ারের সবুজ। অজানা আশঙ্কায় কেঁপে উঠে হবিটদের বুক। ফ্রডো ব্যাগিন্স সেই অশুভ শক্তির হাত থেকে থেকে শায়ারকে বাঁচাতে জীবন বাজি রাখে। শায়ারকে পেছনে ফেলে বেরিয়ে পড়ে অজানার উদ্দেশ্যে। ধ্বংস করতে হবে রিংটাকে। লক্ষ্য মাউন্ট ডুম। পৃথিবীর একমাত্র স্থান যেখানে রিংটাকে ধ্বংস করা যাবে।
টলকিন শৈশবে সেই অশুভ ছায়া দেখতে পেয়েছিলেন। দেখেছেন - কীভাবে শিল্প বিপ্লব ইংল্যান্ডের ক্ষেত খামার ধ্বংস করে দিয়েছিলো, কীভাবে ছোট ছোট গ্রামগুলোর শান্তি নষ্ট করে দিয়েছিলো। কীভাবে কলকারখানার দূষিত কালো ধোঁয়া সেরহোলকে গ্রাস করেছিলো। কীভাবে যান্ত্রিকতা আর ক্ষমতার লোভ মানুষকে গ্রাস করেছিলো। টলকিন মনে মনে অনুভব করছিলেন সেরহোল ধীরে ধীরে শহরে রুপান্তরিত হবে। টলকিনের মনে তখন যুদ্ধ। একদিকে সেরহোলের সবুজ গ্রাম আর অন্যদিকে শিল্প বিপ্লবের করাল গ্রাস। এদিকে অর্থ আর ক্ষমতার কালো ছায়া তখন পুরো পৃথিবী জুড়ে। এগিয়ে আসছিলো প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। দেশপ্রেমিক টলকিন যোগ দেন যুদ্ধে। মুখোমুখি হন ইতিহাসের অন্যতম বিভীষিকাময় যুদ্ধের, ব্যাটেল অব সোম। ইংল্যান্ডের সামরিক ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ংকর যুদ্ধ ব্যাটেল অব সোম। যে দুঃস্বপ্ন টলকিনকে আজীবন তাড়া করে ফিরেছিল।
টলকিন অ্যান্ড দ্য গ্রেট ওয়ার
হাজার হাজার সৈন্য অপেক্ষা করছে, কখন আসবে নির্দেশ। কারণ তারা জানে তাদের মাঝে অনেকেই হয়তো আজকের টকটকে রাঙ্গা সূর্যাস্তটা দেখবে না, দেখবে না আগামীর ভোর। অদ্ভুত এক উত্তেজনায় তারা অপেক্ষা করছে পরবর্তী নির্দেশের। চারদিকে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য লাশ। কোনটার খুলি উড়ে গেছে তো কোনোটার হাড়গোড় কুঁকড়ে মুকড়ে পড়ে আছে, কিংবা কোনো লাশ বোমার আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে মাংসের স্তুপে পরিণত হয়েছে।
একমাত্র মাছিরাই আন্দোৎসবে মেতে আছে। এক লাশ থেকে আরেক লাশ, ভোঁ ভোঁ করে উড়ছে। সৈন্যদের কেউ কেউ সেই মাছি তাড়াচ্ছে আর ভাবছে কিছুক্ষণ পর হয়তো তারাও মাছির খাদ্যে পরিণত হবে। হাহ! জীবন কত অদ্ভুত। যাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কিছুক্ষণ আগেও যুদ্ধ করছিলো, কিছুক্ষণ পর তারা পরিণত হয়েছে পোড়া মাংসের স্তুপে কিংবা মাছির খাদ্যে। প্রতিদিন এমনই বাস্তবতার মুখোমুখি হতেন টলকিন। এই গল্প ব্যাটেল আব সোমের। যেখানে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট টলকিন ছিলেন একজন প্রথম সারির যোদ্ধা এবং সিগনাল অফিসার।
টলকিনের ফ্যান্টাসির জগতের প্রতিটা উপাদান তার বাস্তব জীবন থেকে নেয়া। যা তিনি দেখেছেন, যার মধ্য দিয়ে তিনি গিয়েছেন। দ্য লর্ড অব দ্য রিংস এ টলকিন একটি মৃত জলাভূমির (Dead Marshes) কথা বলেন। যেখানে বহুকাল আগে মানুষ, ওরক, ডয়ারফ এবং এলফরা যুদ্ধে মেতে উঠেছিল। সেই যুদ্ধে হাজারো যোদ্ধা মারা যায়। এবং কালের পরাক্রমায় বৃষ্টি বিধৌত সেই যুদ্ধক্ষেত্রটি পানিতে ভরে যায়। আর মৃতদেহগুলো পানিতে ডুবে যায়। কিন্তু সেই মৃতদেহগুলো একদৃষ্টিতে আকাশের দিকে চেয়ে থাকে। কাছে গেলে মনে হয় তারা একদৃষ্টিতে আপনাকে দেখছে। এটা কল্পনা নয় বাস্তবতা। ১৯১৬ সালের শরতে সোমের যুদ্ধক্ষেত্র প্রচন্ড বৃষ্টিপাত এবং বন্যায় ভেসে যায়। আর শেল হোলে (বোমার আঘাতে মাটিতে যে গর্তের সৃষ্টি হয়) স্তুপ হওয়া মৃতদেহগুলো ভাসতে থাকে। সম্ভবত টলকিন ভাবতেন, সেই মৃতদেহগুলো একদৃষ্টিতে তার দিকে চেয়ে আছে।
স্যামওয়াইজ গ্যামজি, এক বিশ্বস্ত সহযোদ্ধা। টলকিন স্যামকে দেখেছেন নিজের ব্যাটম্যানের ছায়ায়। ব্যাটম্যান, অফিসারদের ছোটখাট ফুটফরমাশ খাটার লোক। কিংবা বলা যায়, অফিসারের বিশ্বস্ত সঙ্গী। যে তার প্রভুর জন্য জীবন বাজি রাখতে পারে। টলকিনদের মতো সামাজিকভাবে উঁচু শ্রেণীর অফিসারের জন্য একজন নিচু শ্রেণীর সৈন্য ব্যাটম্যান হিসেবে নিয়োজিত থাকতো। তাদের কাজই হলো অফিসারের জন্য রান্নাবান্না করা, তাদের কাপড় চোপড় পরিষ্কার থেকে শুরু করে সবধরনের ফুটফরমাশ খাটা। নিত্যকার এই সম্পর্ক আর বিশ্বস্ততা অফিসার আর ব্যাটম্যানের মাঝে দৃঢ় বন্ধন গড়ে তোলে। টলকিন তার ব্যাটম্যানের প্রতি খুবই স্নেহপ্রবণ ছিলেন। তারই আদলে তিনি তৈরি করেন ফ্রডো এবং স্যামের সম্পর্কটিকে।
রিং ট্রিলজিতে দেখা যায়, চার হবিট একসাথে শায়ার ছেড়ে মাউন্ট ডুমের পথে পাড়ি জমায়। যেখানে দুইজন উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে, আর বাকি দুজন কপালের ফেরে তাদের সাথে জুড়ে পড়ে। এরপর তারা ঘটনার আঁকে বাঁকে আলাদা হয়ে যায়। একদিকে ফ্রডো এবং স্যাম মাউন্ট ডুমের পথে অন্যদিকে মেরি এবং পিপিন গহীন ব্ল্যাক ফরেস্টে অ্যান্টদের সাথে। চার জনই নিজেদের জায়গা থেকে যুদ্ধ করে। কিন্তু জানে না কে কোথায় আছে, কেমন আছে, বেঁচে আছে নাকি মারা গেছে। জন গার্থের মতে, এই চার হবিট টলকিনের ছোটবেলার চার বন্ধুর প্রতিনিধিত্ব করে।
যারা যুদ্ধক্ষেত্রে লড়াই করেছেন ইংল্যান্ডকে বাঁচাতে। তারাও জানতেন না তাদের বাকি বন্ধুদের অবস্থা। চার জনই বিভিন্ন ফ্রন্টে যুদ্ধ করে যাচ্ছিলেন। টলকিনের দুই বন্ধু ব্যাটেল অব সোমের ময়দানে প্রাণ হারান। রক্তক্ষয়ী সেই যুদ্ধে ১ লাখ ২০ হাজার ব্রিটিশ এবং কমনওয়েলথ সৈন্য মারা যায়। লেফটেন্যান্ট রবার্ট গিলসন যুদ্ধের প্রথম দিন অর্থাৎ জুলাইয়ের ১ তারিখ মারা যান। তার ৫ মাস পর, নভেম্বরে লেফটেন্যান্ট জেফ্রি স্মিথ মারা যান। শুধুমাত্র টলকিন বেঁচে যান। কারণ যুদ্ধ শুরুর বেশ কিছুদিন পর টলকিন সোমের যুদ্ধে যোগ দেন। সোমের ট্রেঞ্চে ৩ মাস থাকার পর পোশাকের ভাঁজে ভাঁজে জন্মানো উকুনের কামড়ে টলকিন জ্বরে আক্রান্ত হন। এধরনের জ্বরকে ট্রেঞ্চ ফিভার বলা হয়।
ট্রেঞ্চ ফিভারে আক্রান্ত হয়ে টলকিন যখন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তখন দ্য হবিটের কাজ শুরু করেন। যুদ্ধের শেল শক এবং ট্রমা টলকিনকে ঘুমাতে দিত না। তিনি চলে যেতেন শৈশবের সেরহোলে, ঘুরে বেড়াতেন তারই সৃষ্ট ফ্যান্টাসির জগতে। গল্প করতেন শায়ারের বিলবো ব্যাগিন্সের সাথে। শুনতেন তার অ্যাডভেঞ্চারের গল্প। একদিন হঠাতই লিখে ফেলেন। In a hole, there lived a hobbit। অর্থাৎ, একদা একটি গর্তে একটা হবিট বাস করতো। এভাবে চলতে থাকে টলকিনের কলমের ঘোড়া। যুদ্ধের ভয়াবহ স্মৃতি থেকে মুক্তি পেতে টলকিন বেছে নেন লেখালিখির পথ। হয়তো লেখালিখি আর কল্পনার জগত টলকিনকে কিছুটা সময়ের জন্য অন্তত মুক্তি দিতো সেই ভয়াবহ দুঃস্বপ্ন থেকে। কে জানে!
দ্য হবিটের গল্প হাসপাতালে বসে হঠাত শুরু করলেও মিডল আর্থ (Middle Earth) বা মধ্য পৃথিবীর কিছু কাহিনী তিনি আগেই মুখে মুখে রচনা করেছিলেন। সেসব গল্প সন্তানদের ঘুম পাড়ানি গল্প হিসেবে শোনাতেন। চিন্তা করলেন সেসব গল্পকে বাস্তবতায় রূপ দিবেন। কখনো ভাবেননি সেই শিশুতোষ গল্প ডানা মেলবে বিশ্বের সকল দেশের, সকল বয়সী মানুষের মনে। ভাবেননি একুশ শতকে তারই কল্পনা নিয়ে মানুষ রীতিমতো গবেষণাপত্র লেখা শুরু করবে। ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সাধারণ এক লেফটেনেন্ট হয়ে উঠবেন জে আর আর টলকিন।
স্মগ (Smaug)
‘আমার চামড়া বর্মের চেয়ে ১০ গুণ শক্তিশালী, আমার প্রতিটা দাঁত একেকটি তলোয়ার, আমার থাবা বল্লমের চেয়ে শক্তিশালী, আমার পাখা হারিকেন সৃষ্টি করতে পারে আর আমার নিঃশ্বাস মানেই মৃত্যু। এভাবে নিজের পরিচয় দিয়ে বিলবোকে ভয় দেখায় স্মগ। দ্য হবিটের দ্বিতীয় পর্বে বিলবো এবং ডয়ারফের দল ওর্ক, ট্রল এবং বিভিন্ন বিপদ সংকুল জায়গা পেরিয়ে লোনলি মাউন্টেনে (Lonely Mountain) পৌঁছায়। লোনলি মাউন্টেন, যেখানে অজস্র গুপ্তধন আর মূল্যবান ধন সম্পদের মাঝে স্মগ নামের এক ড্রাগনের বাস। নিরিবিলিতে ভালোই দিন কাটছিল তার। কিন্তু তাতে হানা দেয় থোরিন ওকেনশিল্ড।
স্মগকে বিওউলফের ড্রাগনের আদলে সৃষ্টি করেছেন টলকিন। বিওউলফ হলো একটি বীরগাঁথা (মহাকাব্য)। একে অ্যাংলো-স্যাক্সন সাহিত্যের সর্বোচ্চ এবং সবচেয়ে প্রাচীন নিদর্শন ধরা হয়। টলকিন ছিলেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাংলো স্যাক্সনের প্রফেসর। তিনি বিওউলফের কাহিনীর একজন বিশেষজ্ঞও। তার লেখা বিওউলফ: দ্য মনস্টার অ্যান্ড দ্য ক্রিটিক আধুনিক কবিতা পর্যালোচনার মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
স্মগকে খুঁজে পেতে আপনাকে ঘুরে আসতে বিওউলফের কাহিনী থেকে। বিওউলফের কাহিনী মোট ৩ ভাগে বিভক্ত। গল্পের পটভূমি স্ক্যান্ডিনেভিয়া। গল্পের প্রথম অংশে দেখানো হয় গিটস বীর বিওউলফের গ্রেনডেল বধ। দ্বিতীয় অংশে গ্রেনডেলের মা সন্তান হত্যার প্রতিশোধ নিতে আসলে তাকেও বধ করে বিওউলফ। তৃতীয় অংশে বিওউলফ এক গুপ্তধনপ্রেমী ড্রাগনকে বধ করে। ড্রাগন বধের গল্পটা অনেকটা এমন-
অনেক অনেক কাল আগে সুইডেনে এক বুড়ো বাস করতেন। তার পূর্বপুরুষেরা প্রায় ১০০ বছর ধরে দেশ শাসন করেন। বিভিন্ন যুদ্ধ বিগ্রহে অংশ নিয়ে তারা প্রচুর সম্পদ, স্বর্ণরৌপ্য মুদ্রা সহ অনেক মূল্যবান রত্ন সংগ্রহ করেন। কিন্তু তখন তাদের প্রতিপত্তি প্রায় নেই বললেই চলে। এদিকে বুড়োরও বয়স কম হলো না। এত এত মূল্যবান ধন রত্ন কোথায় রাখবেন, কীভাবে রাখবেন তা ভাবতেই তার কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়লো। একদিন ভাবতে ভাবতে তাদের পারিবারিক গোরস্থানে চলে গেলেন। গোরস্থানটি একটি পাহাড়ে পাদদেশে টিলার মতো জায়গায়। হঠাত তার মাথায় একটা বুদ্ধি এলো, ভাবলেন গোরস্থানের পাশের টিলাটায় একটা গর্ত খুঁড়ে গুহা বানিয়ে ধনরত্নগুলো রাখলেই হয়। এদিকে কেউ কখনো আসে না। আর টিলার ভেতরের গুহার সন্ধানও কেউ পাবে না। ব্যস! প্রতিদিন অল্প অল্প করে মূল্যবান সব রত্ন এনে জমাতে লাগলেন সেই গুহায়। যেদিন সব রত্ন তুলে আনা শেষ সেদিন ভাবলেন পরদিন এসে গর্তের মুখটা পাকাপাকিভাবে বন্ধ করে দেবেন। কিন্তু সেই দিন আর তার জীবনে এলো না। সেদিন রাতে বৃদ্ধ মারা গেলেন।
দিন যায়, রাত আসে। একবার এক শীতে একটা ড্রাগন ঠান্ডা থেকে বাঁচতে সেই টিলার কাছে এলো। গুহা দেখে ভেতরে ঢুকে পড়লো। এত অজস্র ধন দৌলত দেখে তো তার চক্ষু চড়াকগাছ! এসব ড্রাগনরা আবার মানুষের চেয়ে ধন সম্পদ বেশি ভালোবাসে। ব্যস! এত মূল্যবান রত্ন পেয়ে ড্রাগন সাহেব গুহাটাকে নিজের ঘর বানিয়ে ফেললেন। প্রায় ৩০০ বছর ধরে এসব রত্ন ড্রাগনের হেফাজতে ছিল। একদিন ড্রাগন যথারীতি খাবারের সন্ধানে বেরিয়ে যায়। আর একটা ছিঁচকে চোর এসে আশ্রয় নিলো সেই গুহায়। আগুন জ্বালতেই সোনা-রুপার আভায় উদ্ভাসিত হয়ে উঠলো গুহা। চোরের আর অভ্যাস যায় কোথায়! অজস্র রত্নরাশি থেকে একটা সোনার কাপ মেরে দিলে তো কেউ টের পাবে না। এই ভেবে সে একটা সোনার কাপ চুরি করে নিয়ে গেলো।
এদিকে ড্রাগন সাহেব ফিরে এসেই গুহায় মানুষের গন্ধ পেলেন। মনে সন্দেহ ঘনীভূত হলো। হিসাব করে দেখলো একটা সোনার কাপ নাই। অনেক খুঁজেও ড্রাগনটা যখন চোরের সন্ধান পেলো না তখন রাগে ক্ষোভে কাছাকাছি সমতলের গ্রামগুলো জ্বালিয়ে দিলো। এদিকে এ খবর শুনে তো রাজা বিওউলফ রেগে গেলেন। গ্রেনডেলের মাকে বধ করার পর বিওউলফ আর কোনো রোমহর্ষক যুদ্ধে জড়াননি। টানা ৫০ বছর গিটস শাসন করে বিওউলফ বৃদ্ধ বয়সে এমন রোমাঞ্চকর অভিযান থেকে নিজেকে দূরে রাখতে চাননি। সেদিন সন্ধ্যায় ১১ জন গিটস বীরকে সাথে নিয়ে বের হন ড্রাগন বধ করতে। এদিকে ক্ষিপ্ত ড্রাগনের আগুনের হল্কা আর আক্রোশে ভয় পেয়ে উইগল্যাফ নামক এক বীর বাদে বাকিরা পালিয়ে যায়। উইগল্যাফ এবং বিওউলফ মিলে কায়দা করে সেই ড্রাগন বধ করেন।
ড্রাগন বধের এই কাহিনীর মিল পাওয়া যায় নর্স মিথলজির সিগার্ড এবং ফাফনিরের কাহিনীর সাথে। যা-ই হোক, আশা করি, বুঝতেই পারছেন টলকিন বিওউলফের বীরত্বগাঁথায় কতটা প্রভাবিত ছিলেন। আসলে লেখক মানেই তিনি যা দেখেন, যা ভাবেন, যা জানেন তার সংমিশ্রণ।
দ্য রিং
১৯২৯ সালের কথা। টলকিন তখন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাংলো-স্যাক্সনের প্রফেসর। মরটিমার হুইলার নামক এক প্রত্নতত্ত্ববিদ তখন লিডনি পার্কে সদ্য আবিষ্কৃত একটি খোঁড়াখুঁড়িতে ব্যস্ত। পার্কের ডোয়ার্ফস হিল (Dwarfs Hill) নামক পাহাড়ের পাদদেশের একটি রোমান মন্দিরে চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। হুইলার সেই রোমান মন্দিরে একটি অভিশপ্ত ট্যাবলেট (যেখানে দেবতাদের উদ্দেশ্য করে কারো প্রতি কোনো অভিশাপ দেওয়া হয়) পান। সেই ট্যাবলেটের লেখার মর্মোদ্ধার করার জন্য তিনি টলকিনকে আমন্ত্রণ জানান। টলকিন ট্যাবলেটের অভিশাপ বাণীর মর্মোদ্ধার করলেন। সেই অভিশাপ বাণী ছিল কেল্ট দেবতা নডেনকে উদ্দেশ্য করে। অনেকটা এমন –
দেবতা নডেনকে আর্জি জানাই। সিলভিয়ানাস একটা রিং হারিয়েছে, যার অর্ধেকটা (সমমূল্যের সম্পদ) দেবতা নডেনের নামে উৎসর্গ করা হয়েছিল। সেনিসিয়ানাস যতদিন না রিংটা নডেনের মন্দিরে ফিরিয়ে দিচ্ছে ততদিন সেনিসিয়াস নামধারী সকলের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটতে থাকবে।
তাহলে সিলিভিয়ানাস নামক কোনো এক ব্রিটিশ রোমান একটি মূল্যবান রিং হারিয়েছিলেন। আর সেনিসিয়ানাসদের কেউ একজন রিংটা চুরি করেছে। রিং চোর সেনিসিয়ানাস সম্ভবত সেই রিং ফেরত দেয়নি কারণ রিংটি পাওয়া যায় আরো দূরে সিলচেস্টারশায়ারের এক কৃষকের জমিতে, ১৭৮৫ সালে। সেই কৃষক রিংটি দ্য ভাইনে বসবাসরত সম্ভ্রান্ত চ্যুট পরিবারের কাছে বিক্রি করে দেন। এরপর থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত রিংটি দ্য ভাইন হাউজের মিউজিয়ামে সংরক্ষিত ছিল। আর দশটা রিং থেকে এই রিংটি আলাদা।
খ্রিস্টিয় চার শতকে এই রিংটি তৈরি হয়। আকারে সাধারণ রিং থেকে বড়। ১ ইঞ্চি ব্যসের এই স্বর্ণের রিংটির ওজন ১২ গ্রাম। খালি আঙ্গুলে এই রিং কখনোই কারো আঙ্গুলে আঁটবে না, শুধুমাত্র হাতে মোটা গ্লাভস পরলেই এই রিং পরা সম্ভব। রিঙের ফ্রেমে দেবী ভেনাসের একটি প্রতিকৃতি আছে। আর পুরো রিং জুড়ে লেখা ‘ঈশ্বরের বাস’। দ্য হবিটের ৫ নাম্বার অধ্যায়ে এমন একটা রিং এর কথা পাওয়া যায়।
গলামের গুহায় বিলবো ব্যাগিন্স অনেক দূর থেকে একটা চকচকে জিনিস দেখতে পায়। ‘পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর জিনিস; সবচেয়ে সুন্দর আর সবচেয়ে রহস্যময়’ এভাবেই সেই রিং এর উপমা দেয়া হয়। ‘The one ring to rule them all’ যার ক্ষমতা অসীম। দ্য লর্ড অব দ্য রিংস এ দেখানো হয়, এক রিং এর জন্য কীভাবে পুরো মধ্য পৃথিবী ধংসের মুখে পড়েছিল। এখানে রিং দ্বারা মানুষের ক্ষমতা লোলুপতাকে বোঝানো হয়েছে। ধারণা করা হয়, টলকিনের দ্য ওয়ান রিং এর ধারণা সিলভিয়ানাসের অভিশপ্ত রিং থেকে এসেছে। দ্য হবিট এর কাজ শুরুর প্রায় ২ বছর আগে টলকিন সিলভিয়ানাসের রিং আর নডেনের মন্দিরে পাওয়া অভিশপ্ত ট্যাবলেটের সম্পর্ক নিয়ে বিস্তর গবেষণা করেছিলেন।
রোহান
রোহানের রাইডারদের (ঘোড়সওয়ার) ধারণাটা অ্যাংলো-স্যাক্সনদের থেকে এসেছে কিনা সেটা নিয়ে মোটামুটি একটা তর্ক চালু আছে। অনেক বিশেষজ্ঞ রোহানকে অ্যাংলো- স্যাক্সন ইংল্যান্ডের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী রাজ্য মার্সিয়ার সাথে তুলনা করেছেন। মার্সিয়া, এখনকার ইংলিশ মিডল্যান্ড যেখানে টলকিন তার যৌবনের অনেকটা সময় কাটিয়েছেন। কেউবা বলেন, রোহানের রাইডারদের নামগুলো মার্সিয়ান উপভাষা থেকে নেয়া। টলকিন মূলত একজন ভাষাবিদ ছিলেন। মার্সিয়ার উপভাষা নিয়ে যারা গবেষণা করেছেন তাদের মধ্যে টলকিন অন্যতম। ওল্ড ইংলিশ বা অ্যাংলো স্যাক্সন ভাষা নিয়ে টলকিনের বিশেষ দুর্বলতা ছিল। টলকিন শুধু গবেষণা করেই থেমে থাকেননি মার্সিয়ান উপভাষাকে তুলে এনেছেন তার লেখনীতে, স্থান দিয়েছেন তার ফ্যান্টাসির জগতে। রোহানের ভাষাকে সাজিয়েছেন সেই আদলে। এছাড়া রোহানের কয়েকজন রাজার নাম দিয়েছেন মার্সিয়ার রাজবংশের রাজাদের নামে।
এবার চলে যাবো হবিটনে। মাথায় বিশাল একটি তির্যক ক্যাপ, ক্যাপ পেরিয়ে ঘাড়সম লম্বা ছাই রঙা চুল, ঠোঁটে পাইপ, চোখের দৃষ্টি সুদূরে বিস্তৃত আর গায়ে ভারী আলখাল্লা চাপানো এক উদ্ভট ভদ্রলোককে একদিন হবিটনে দেখা যায়। দেখা যায় বিলবো ব্যাগিন্সের ঘরের দরজায় একটা লাঠি দিয়ে আঘাত করতে, দেখা যায় বিলবোর শান্তি আর আরামপ্রিয়তা নষ্ট করতে। হবিটনের লোকজন তাকে বাঁকা চোখে দেখলেও শিশুরা তাকে খুব ভালবাসে। এক জাদুকর যে মধ্য পৃথিবীকে (Middle Earth) সরনের (Sauron) অশুভ শক্তি থেকে মুক্ত করতে চায়। গ্যানডেলফ দ্য গ্রে, সেই জাদুকর যে পরবর্তীতে হয়ে ওঠে গ্যানডেলফ দ্য হোয়াইট। টলকিন গ্যানডেলফকে খুঁজে পান পোয়েটিক এড্ডার প্রথম কবিতা ভলুস্পা এ। পোয়েটিক এড্ডা (Poetic Edda) হলো আইসল্যান্ডিক পান্ডুলিপির কাব্য। শুধু তাই নয়, টলকিন ডোয়ার্ফ এবং এলফদেরও খুঁজে পান পোয়েটিক এবং প্রস এড্ডার (Pros Edda) মাঝে।
লেখক মানেই তার পারিপার্শ্বিকতা, বাস্তবতা, তিনি যা ভাবেন, যা জানেন এবং যা দেখেন। সব কিছুই তার লেখায় উঠে আসে। টলকিনও তার ভিন্ন নন। তবে নিজের ধ্যান জ্ঞান আর ফ্যান্টাসির জগতকে এক করে টলকিন যেভাবে অ্যাংলো-স্যাক্সন ভাষা, নর্ডিক, জার্মানিক, ফিনিশ মিথলজিকে তুলে ধরেছেন সেটা খুব কম লেখনীতে দেখা যায়। আর এখানেই টলকিনের বিশেষত্ব। টলকিনের ফ্যান্টাসির জগত আমাদের কল্পনার চেয়েও বড়। অসংখ্য চরিত্র এবং পটভূমি নিয়ে টলকিন বিশেষজ্ঞরা বিশ্লেষণ এবং গবেষণা করে যাচ্ছেন। তার খুবই ক্ষুদ্র অংশ এখানে উপস্থাপিত হয়েছে। আশা করি, ভবিষ্যতে মিডেল আর্থের কাহিনী, এলফ এবং অন্যান্য চরিত্রের পাশাপাশি তাদের মিথলজিক্যাল ইতিহাস নিয়ে আবারো ফিরে আসবো।
This is a bengali article. The article is about the inspiration of JRR Tolkien of creating The Hobbit and The Lord of the Rings. All the sources are hyperlinked into the article.
Featured Image Source: Official Page of J R. R. Tolkien